তোর_জন্য #sumaiya_moni #পার্টঃ০৩+৪

0
473

#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ০৩+৪

~~আপনি!!!

~জ্বি বেবি। তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারি বলো?তাইতো তোমার কাছে চলে আসছি।
সামনে এগোতে এগোতে কথাগুলো বললো রাহুল

রাহুল হলো মিস হাফ প্যান্ট ওরফে রিয়ার ভাই।
আমার প্রতি তার বরাবরের মতোই একটা কুনজর আছে শকুনের মতো। আমায় দেখলে হয়তো হাত ধরার চেষ্টা করবে, অথবা বাজে কথা বলবে।
যদি রোহানা আন্টি ও তার বোনের কাছে কিছু বলতে যাই উল্টা আমাকে কথা শুনাবে, ভয় দেখাবে।
আজকে!! হয়তো রাহুলের জন্য আমার শেষ দিনও হতে পারে।

আমিঃ প্লিজ ভাইয়া, কাছে আসবেননা। আমি আপনার বোনের মতো(মিনতি করে)

রাহুলঃ চুপ কর! সব বোন হলে বউ কে হবে?
আর শোন তোর এমন আকুতি-মিনতিতে আমার কিছু আসবে যাবেনা। কত মেয়ের সংস্পর্শে ছিলাম, তারপরে ছুড়ে ফেলে দিছি।
তুমি ভয় পেয়োনা তোমাকে ,,,,,,,,
বাকি কথা বলতে পারলোনা রাহুল ভাইয়া। তার আগেই একটা শব্দ আসলো।

~আমি শব্দটা অনুভব করলাম, কই থেকে আসলো। তাই ভয়ে ভয়ে সামনে তাকালাম, তাকিয়ে দেখি রাহুল ভাইয়া আমার থেকে অনেকদূরে দাঁড়িয়ে আছে। গালে হাত দিয়ে, রাগে লাল টমেটোর মতো হচ্ছে।
তার সামনে!!! আদ্রিয়ান ভাইয়া দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।
আমার বুঝতে বাকি নেই আর, রাহুল ভাইয়া ওভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন!আর শব্দটাই বা কেন হইছিলো!
আদ্রিয়ান ভাইয়ার সিগারেটের ধোঁয়ায় আমার কাশি শুরু হয়ে গেলো। সাথে সাথে আদ্রিয়ান ভাইয়া সিগারেট পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেললো। এবং রাহুল ভাইয়ার দিকে এমনভাবে তাকাইছে মনে হচ্ছে তাকে ওই চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
আদ্রিয়ান ভাইয়ার বর্তমানের এই রূপ দেখে রিতীমত ভয় লাগছে।
কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়া আমার দিকে একবারের জন্যও তাকালেননা।

কিছুক্ষনের মধ্যেই স্টোর রুমে সবাই উপস্থিত হলো।

রোহানা আন্টিঃ কি হচ্ছে এখানে! আদ্রিয়ান ভাইয়াকে দেখে আন্টি খানিকটা চমকে গেলেন। সাথে ভয়ও পেলেন।
আআআদ্রিয়ানন!! এখানে কি করছিস বাবা?

আদ্রিয়ানঃ আমারও একই প্রশ্ন, রুমের অভাব হইছে অনেক(রেগে)?? মনি এখানে কি করছে?

রোহানা আন্টি, আদ্রিয়ান ভাইয়ার কথাটা ঠিকভাবে হজম করতে পারলোনা। তিনি থতমত খেয়ে বললেন,,,,
এই মেয়ের মতিগতি বুঝিনা। দেখ এই রুমে আসছে হয়তো এই আকামের জন্যই। এখানে আসলে তো কেউ কিছু দেখবেনা।

আদ্রিয়ান ঃ আচ্ছা মা! তোমার মনে হচ্ছেনা? তুমি একটু বেশিই বলে যাচ্ছো।
আর কতো ভালোমানুষি দেখাবে!!

রোহানা আন্টিঃ তুই কি বলছিস বাবা!(ন্যাকা কান্না করে)। এই মেয়েটার জন্য আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস!

আদ্রিয়ান ঃ সমস্যাই তো

চলবে

#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ০৪

রিয়া এসে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো সবার সামনে। কি বেহায়া মেয়ে।
আদ্রিয়ান!!! তিনিও বা কম কিসে।দুটোই বদের হাড্ডি।

রিয়াঃ তুমি কিছু ওরে কিছু করোনি তো বেবী(ন্যাকা কান্না করে)

আদ্রিয়ান ঃ নাহ। মাথা খারাপ নাকি!! (রিয়াকে সরিয়ে)
সবাই একসাথে পাগল হইছো?(চেঁচিয়ে)।এখানে এত হট্টগোল কিসের শুনি??(রেগে)

~আদ্রিয়ানের চেঁচানো দেখে সবাই চুপচাপ চলে গেলো।
সবাই জানে আদ্রিয়ান রেগে গেলে কি করতে পারে।
রিয়া!!সবাই গেলেও রিয়া যে চলে যাবার মেয়ে নয়,,, এটা আদ্রিয়ান ভালোভাবেই জানে।
তাই রিয়াকে ঠিক রাখতে,,,,,
~~চলো রিয়া বেবী,,ছাঁদ থেকে ঘুরে আসি। এখানে ভালোলাগছে না।
রিয়ার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে!!

আদ্রিয়ানের এমন আচরনে রিয়া ১৪০ ভোল্টের শকড খেল।আদ্রিয়ান এত ভালোভাবে কথা বলছে রিয়ার সাথে!
রিয়াতো খুশিতে নাচানাচি শুরু করে দিছে।

আদ্রিয়ানের মনের মধ্যে কি চলছে তা শুধুমাত্র আশিক(আদ্রিয়ানের বেষ্ট ফ্রেন্ড ) ছাড়া কেউ জানেনা।

রিয়ার সাথে এমন ভালোভাবে আচরণ করতে দেখে আশিক হাসলো একটু। কিন্তু পরক্ষণেই মনির দিকে তাকানোর পরে আশিকের হাসি মুখে মেঘ জমে গেলো।

~বনু!!(আমাকে উদ্দেশ্য করে)

~~আদ্রিয়ান ভাইয়ার এরকম পরিবর্তন দেখে খুব কষ্ট লাগছে।
আচ্ছা! ছোট সময়ের কথা কি তার মনে নেই!
একটু আগে কি শুধুমাত্র দয়া দেখিয়েছে!! নাকি অন্যকিছু!
দয়া দেখানো ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই মনে হচ্ছনা।
তাহলে মিস. হাফ প্যান্টের সাথে ঢেইঢেই করে নাচতে নাচতে যেতনা।
কিন্তু একটা কথা ভেবে ভালোই লাগছে,,,সবার সাথে সাথে আমার চোখও স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। এখন আগের মতো আর চোখের পানি ঝরাতেই চাইছেনা।
এসব ভাবছি তাই আশিক ভাইয়ার কথা ভালোভাবে খেয়াল করিনি।

আশিকঃ হ্যালো!!! এত কি ভাবছো?( তুড়ি দিয়ে)

আমিঃ কককই কিছুনা ভাইয়া।

আশিকঃ বুঝাই যাচ্ছে।
ভাইয়ার কাছে কিছু লুকানো যায়না। ভাইয়ারা এমনিতেই বুঝে নেয় তার বোন ভালো আছে কিনা।
কখনো কষ্ট পেলে নিজের মধ্যে রাখতে নেই। তাহলে কষ্ট দ্বিগুণ বেড়ে যায়৷ তারথেকে কারো কাছে শেয়ার করবা,,,দেখবা তোমার কষ্ট অনেকটা কমে গেছে।
বলেই আশিক ভাইয়া চলে গেলো।
!
!
আমার কষ্ট শেয়ার করার মতো কাউকে দেখছিনা।শুধু শুধু কষ্ট শেয়ার করার মত মানুষ খুঁজে আরও কষ্ট বাড়াতে চাইনা।
তার থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতেই হবে।
এই নরকের মধ্যে আর থাকতে ইচ্ছা করছেনা।
ভাবতে ভাবতে স্টোর রুমের দিকেই আসলাম। এটাই তো একমাত্র আমার থাকার জায়গা।কিন্তু কিছুক্ষন আগের কথা মনে পড়তেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
আদ্রিয়ান ভাইয়া না থাকলে এতক্ষনে হয়তো প্রতিটি খবরের চ্যানেলে হেড-লাইনে আমার কথাটাই থাকতো।
বড়বড় খবরের কাগজেও আমার নামটাই বড় অক্ষরে ছাপানো হতো।
রুমে যাওয়ার পড়ে আবারো শকড আমি,,,,,,,,,,
আদ্রিয়ান ভাইয়া!!!
সে তো রিয়ার সাথে ছিলো,,আমার রুমে কি করছে!
আমি দড়জা পর্যন্ত এসেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমার ঘোর কাটছেনা, ভাইয়াকে সব জায়গায় কারনে-অকারনে দেখি।কখনো স্বপ্ন, কখনো কল্পনা।
ইদানীং বুঝতে পারছি আমার একটা অসুখ হইছে,,,,, যার নাম আদ্রিয়ান অসুখ।
যে কল্পনাতেও আসছে,আর বাস্তবেও আসছে।
কখনো ভালবাসে, আবার কখনো অবহেলা করে যায়।
আমার সমস্ত ঘোর কাটিয়ে আদ্রিয়ান ভাইয়া আমাকে হেচঁকা টান দিয়ে রুমের ভিতরে নিয়ে দড়জা লাগিয়ে দিল।
এভাবে টান দেয়ার কারনে আমি এসে আদ্রিয়ান ভাইয়ার বুকে ঝেঁকে পড়লাম।
আদ্রিয়ান ভাইয়া!!সে আমাকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো। এই বুঝি পালিয়ে যাবো এই বাহুডোর থেকে।
হঠাৎ মনে হলো, আকাশে মেঘ জমে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই ছোট ছোট বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমার কপাল বেয়ে পড়ছে।
আমিও সেই ভালোবাসাময় পানি অনুসরণ করতে লাগলাম।
একি!!! আদ্রিয়ান ভাইয়া কান্না করছে!
ছেলেরাও বুঝি কান্না করতে পারে! একদম মেয়ে-মেয়ে লাগে।
কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়া কান্না করাতে ভাইয়াকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে,,,পুরাই বাচ্চাদের মতো।
কিন্তু কষ্ট ছাড়া ছেলেরা কান্না করতে পারেনা।আদ্রিয়ান ভাইয়ার এত কষ্ট কিসের?
ওই মিস. হাফ প্যান্ট রিয়ার সাথে ঝগড়া হয়নিতো!! একটু আগে ভাইয়াতো ভালোই ছিল।তাহলে হঠাৎ এত কষ্ট কীসের??
আশিক ভাইয়া তো বললো,, কষ্ট সবার সাথে শেয়ার করতে হয়, তাহলে নাকি কষ্ট কমে যায়।
আদ্রিয়ান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলে কি বলবে আমায়?? নাকি ধমক দিবে।
ধমক দিলে দিবে আমার কি! আজকে একদিনই হয়তো অবহেলা পাবো। তারপর তো চলেই যাবো। তার থেকে আদ্রিয়ান ভাইয়ার কষ্টের কারনটা জেনে যাওয়াই ভালো।
তাই আমিও অন্যকিছু না ভেবে ভাইয়ার চোখের পানি মোছার জন্য পা উঁচু করে দাড়ালাম।
আদ্রিয়ান ভাইয়া এতটা লম্বা! যার জন্য পা উঁচু করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
চোখের পানি মুছে দেয়ার সাথে সাথেই,,,আমার সমস্ত চিন্তাভাবনার বিসর্জন দিয়ে ভাইয়া আমার দুইগালে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে ধরলো,,,,,,,,,,,,
~~~আমায় ছেড়ে পালানোর বুদ্ধি চলছে??(মুখ গোমড়া করে)

আমি বরাবরের মতোই শকড। আদ্রিয়ান ভাইয়ার মাথা ঠিক আছে তো!!
আমি চলে গেলে তার কিছু হবে কেন! সবার ভালো হবার কথা।
সত্যিই কি আমি তাকে ছেড়ে পালিয়ে থাকতে পারবো!!
স্মৃতি তো তাড়া করবেই।শুধু মানুষটিকে সামনে দেখবোনা।
এটা তো নিজে নিজে ভাবছিলাম, কারো সাথে শেয়ার তো করিনি।
আদ্রিয়ান ভাইয়া কিভাবে জানতে পারলো!!

~~কথা বলছিস না কেন! খুব বড় হয়ে গেছো তাইনা!!
এক পা বাহিরে দিয়ে দেখ না পা ভেঙে ঘরে রেখে দিব।
কথাগুলো বলে আমাকে কোনো পরোয়া না করেই হনহন করে চলে গেলো।

আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।কি হচ্ছে আমার সাথে, আমি কি সারাদিনই দিবাস্বপ্ন দেখে কাটিয়ে দিচ্ছি সময়টা!!

#ফ্লাশব্যাক

রিয়ার সাথে আদ্রিয়ানের তেমন কোনো ভালো সম্পর্ক নেই বললেই চলে।
এয়ারপোর্ট থেকেই সবাইকে দেখানোর জন্য আদ্রিয়ান রিয়ার এতটা কাছে ঘেষে থাকছে।

আদ্রিয়ান কেনই বা এমনটা করবে!!সবাইকে দেখিয়ে রিয়ার কাছে থাকা কি আদ্রিয়ানের জন্য খুবই জরুরী!!!

রিয়ার তো কোনো কথাই নাই। আদ্রিয়ানকে পেলেই হইছে, তাতে আদ্রিয়ান যত বকাঝকা করুক না কেন!! তবুও আদ্রিয়ান এর কাছাকাছি ঘেঁষে থাকবেই।

কিছুক্ষন আগে যখন ছাদে নিয়ে গেলো সবার সামনে থেকে,,,,

আদ্রিয়ান ঃ তোরে কয়বার বলছি, এভাবে আমাকে যখন তখন জড়িয়ে ধরবিনা। কথা কি কানে যায় না??(রেগে)
সারাক্ষন এত বেবি বেবি করছিস কেন!
আমাকে দেখে কি ছোট একটা বাচ্চা মনে হয় তোর!(রেগে)
শোন, একটা কথা তোকে হাজার বার বলতে হবে কেন! আমি তোর ভাই হই। খালাতো ভাই,,,,তাই নিজের ভাইয়ের চোখেই দেখিস আমায়।

আর শোন,,, তোর সাথে এভাবে কথা বলছি আমি। যদি তুই আর আমি ছাড়া বাইরের কেউ জানতে পারে, তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।

~আদ্রিয়ানের কথাগুলো শুনে রিয়া রেগেমেগে চলে গেলো।

কিছুক্ষন পরে আশিক ছাদে এসে বললো,,,,,,,,,,,,
আদ্রিয়ান!!

~হুম।

~ভাই যা করছিস ভালোভাবে ভেবে করিস,আর তাড়াতাড়ি।
এমন কিছু করতে যাস না, যার জন্য কারো কোনো ক্ষতি হোক অথবা কেউ কষ্ট পায় এমনকিছু।

আদ্রিয়ান ঃ কি বুঝাতে চাচ্ছিস!
ভালোভাবে বল।

আশিকঃ কিছুনা।
আমি কিছু বললে হয়তো খারাপ লাগবে। তুই বুদ্ধিমান,, নিজে খুজে নিস।

তখনই আদ্রিয়ানের একটা ভয় হলো।যার জন্য স্টোর রুমে গেলো।

#বর্তমান

আদ্রিয়ান ড্রয়িংরুমে গেলো, সেখানে সবাই বসে আছে।
মাসুদ সাহেব টিভি দেখছেন।
রোহানা, তার বোন বসে আছেন।
রাহুল তখনই বাড়ি থেকে চলে যায়। রিয়া মুখ গোমড়া করে ওর মায়ের কাঁধে মাথা দিয়ে আছে।
আদ্রিয়ানের ফুফু রান্না করছেন। কতমানুষের রান্না একা সামলাচ্ছেন। এখান থেকে ভালো খাবার নিতে পারবে ছেলেটার জন্য তাই।

আদ্রিয়ান যেয়ে চুপচাপ সোফায় বসলো।
আদ্রিয়ানের বন্ধুরা আশিক, নিবিড়, এনা ওরাও আছে।

হঠাৎই মাসুদ সাহেবের হাত থেকে টিভির রিমোট পড়ে গেলো।
রিমোট পড়ার শব্দে সবার মনযোগ মাসুদ সাহেবের দিকে গেল। অতঃপর টিভির দিকে চোখ দিতেই মুহুর্তের মধ্যেই নিরবতার ছায়া নেমে আসছে,,,,,,,,,,,,,।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here