#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ০৮
বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠলো।
ফুফু!! সে এখনও বসে আছে!! এতরাত হইছে এখনও ঘুমায়নি!!
আমি অনুশোচনায় ভুগছি, সবাইকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করা কি ঠিক হলো আদ্রিয়ান ভাইয়ার!! তারমধ্যে ফুফু এখনও জেগে আছে। হঠাৎ এভাবে লাইট জ্বলে উঠলে যে কেউ ভয় পাবে। আর আমরা যে কাজ করে আসছি,,,তাতে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক।
এখন ফুফুর মনে অনেক প্রশ্ন জাগতেই পারে, এত রাতে আমায় বা আমাদের নিয়ে কোথায় গেছিল। তাও আবার আমি শাড়ি পড়া আদ্রিয়ান ভাইয়া পাঞ্জাবি পড়া। বউ ও কনে সাজে আছি।
বাহ! কি সুন্দর ব্যাপার হচ্ছে!!
মধ্যরাতে লুকিয়ে বিয়ে করে আবার বাসায়ও ফিরে আসছি!!
তারজন্য যে কেউই কথা শুনাতে পারে। কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়া হঠাৎ এমন করবে কেন!! তারজন্য তো রিয়া আছে,,,কি হচ্ছে কিছুই বুঝিনা আমি। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এবারও আমার ভাবনায় পানি ঢেলে ফুফু বরনডালা নিয়ে সামনে এগোলো।
নতুন বিবাহিত দম্পতিকে বরন করে ঘরে উঠালো। ফুফুকে সালাম করলাম, ঠিক যেমন নতুন বউ করে। আমিও তো নতুন বউ আজকে বিয়ে হইছে। কিন্তু সবাই মেনে নিবে তো আমাদের!!
ফুফুঃ সারাজীবন দুজন-দুজনের পাশে থাকবি। কোনো বাঁধা যেন দুজনকে আলাদা করতে না পারে।
আর শোন! এখন যে যার রুমে যা তারাতারি। একটু পরেই আযান দিবে।
তাই কেউ যেন কিছুনা বুঝতে পারে। তাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে। তোরা তো কেউ অবুঝ না। কি যে যাচ্ছে এই পরিবারের উপর দিয়ে, কিছুই বুঝতে পারিনা।
আদ্রিয়ান ঃ হুম
আমি কিছু বললাম না। ফুফুর কথামতো স্টোর রুমে আসছি।
আমিতো পালাতে চেয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ এমনকিছু হবে ভাবতেই কেমন একটা অনুভুতি লাগে।
আশ্রিতা থেকে শশুড় বাড়ি!! হুহ,,,,!
একটু পরর আযান দিল। নামাজ আদায় করেই শুইলাম।কিন্তু ঘুম আসবে তো!!
কোনো ঘুমের চিহ্নমাত্র নাই।শুধু আজকের দিনে ফেলে আসা সময়গুলো ভাবছি।
আদ্রিয়ান ভাইয়ার পাগলামোগুলো।
কখন ঘুমিয়ে গেলাম নিজেই জানিনা। হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভাঙলো। রোহানা আন্টি!! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১০ টা বাজে। এত বেলা পর্যন্ত আমি ঘুমাইছি!! নিশ্চয় রোহানা আন্টি এখন বকাঝকা করবে। আমি তার দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিললাম। এমনভাবে তাকিয়ে আছে, মনে হয় আমাদের বিয়ের কথাটা জানতে পেরেছে।
কিন্তু রোহানা আন্টি আমাকে ভুল প্রমান করলেন। তিনি এসে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখলেন। জ্বর আছে কিনা। তারপর মাথাটা বুকে নিয়ে বললেন,,,,
রোহানা আন্টি ঃ শরীর খারাপ লাগছে!!
তুই তো এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস না।
আমিঃ (তার এত ভালো ব্যবহার দেখে আমি শকড। সত্যি দেখছি! নাকি ঘুমের মধ্যে দেখছি। তিনি আবারও বললেন,,,,,)
রোহানা আন্টিঃ কিরে কি ভাবছিস!!
দেখ মা! আমি তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করি। পারলে ক্ষমা করে দিস আমায়। হয়তো আমার পাপের শাস্তি আমি পেয়েছি(কথাটা বলা মাত্রি আন্টির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো)
আন্টি কান্না করছে!! কিসের শাস্তি পাইছে!! কি কষ্ট তার!
আমি আন্টির বুক থেকে মাথাটা তুলে তার দিকে তাকালাম ভালোভাবে।
একি!! আন্টি তো সত্যি সত্যিই কান্না করছে।
আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আন্টি আমার কথার কোনো সারাশব্দ দিলনা। আপনমনে কান্না করে যাচ্ছে।
আন্টির কষ্ট!! আন্টিকে তো কখনোই কান্না করতে দেখিনি। তাহলে এখন কি হইছে এমন।
পরক্ষনেই আন্টি হাসলো। আশ্চর্য! আন্টিকেও নিশ্চয় তার ছেলের মতো কোনো জিনে ধরছে। তার ছেলে তো কেমন বজ্জাতের মত কান্ড করছে।
আর আন্টি হঠাৎ কান্না করছে, আবার হাসছে।
কি হচ্ছে! কিছুই বুঝিনা।
এবার আন্টির কথাশুনে আমারই কান্না পাচ্ছে। আমি শকড। ভয়ে ঢোক গিলছি বারবার। এখন নিশ্চয় আমাকে অনেক বকবেন আন্টি।
কিন্তু তিনি আমাকে আবারও ভুল প্রমাণিত করলেন।
তিনি একটা বক্স বের করে আমার সামনে ধরলেন।
আমি প্রশ্নসূচক ভাবে তার দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে কোনো পড়োয়া না করে, বক্সটি খুললেন।
আমার একটা মাত্র ছেলের বউ। ভালোভাবে তো বরন করতে পারলাম না। আপাতত এটুকু দিয়ে চালিয়ে দেই। রাগ করিস না মা।
আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। আন্টি কিভাবে জানলো!! তাছাড়া বিন্দুমাত্র রাগ নেই তার মধ্যে। না আছে কোনো অহংকার।
তিনি আবারও আমাকে কিছু না বলতে দিয়ে,,,আমার গলায় একটা স্বর্নের লকেট পড়িয়ে দিলেন,নাকে নাকফুল।
আমি হতভম্ব হয়ে আছি। আন্টি এসব কি করছে!
রোহানা আন্টি ঃ বিয়ে হলে মেয়েদের একটু-আধটু স্বর্ন ব্যবহার করতে হয়।
কিন্তু আমাদের কি ভাগ্য(বলেই মন খারাপ করলেন। চোখে পানি টলমল করছে)
আমার একমাত্র ছেলের বউ তুই। আমারতো কোনো মেয়ে নেই। আমার ছেলের বউই আমার মেয়ে হয়ে থাকবে।
কিন্তু আমার কি কপাল(মন খারাপ করে)
ভালোভাবে কিছুই করতে পারলাম না। এমনকি কখনো তোর জন্য কিছু করতে পারি কিনা জানিনা।
আর আমি যে এগুলো পড়িয়ে দিলাম, খুলে রাখিস। কেউ যেন দেখতে না পায়৷ তাহলে অনেক জবাবদিহি দিতে হবে।
আন্টির কথাই তো শেষ কথা হতো বাড়িতে৷ তাহলে আন্টি এতটা নরম হয়ে গেছেন। এখন কার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে কিন্তু আন্টিকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেয় না।
আন্টি আবারও আমাকে জরিয়ে ধরলেন। আর বললেন,,,
কখনো যদি আমার কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমার ছেলেটাকে দেখে রাখিস।
তার কথাটা শুনে আমার কলিজায় মোচড় দিল। আন্টির কিছু হবে! কি হবে!
আমি আন্টির বুকে মাথা দিয়ে আছি।
মায়ের আদর!! কতোবছর আগে পাইছি। কিন্তু আজকে আবারও মায়ের আদর পাচ্ছি। সময়টা এখানেই থেমে থাকতে পারতো।
কিন্তু সময় তো থেমে থাকার নয়। স্রোতের মতোই গতিশীল।
হঠাৎ মনে হলো আরও দুইটা জোড়ালো হাত আমাকে জরিয়ে আছে।
মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি, ঠিকই ভাবছি।
আদ্রিয়ান ভাইয়া!! আমায় ও আন্টিকে জরিয়ে ধরে আছেন।
আমি তারাতারি নিজেকে ছাড়ালাম।
আন্টি মুচকি হেসে চলে গেলেন।
আমার অনেক রাগ হলো, এই বজ্জাতটি না আসলে হয়তো আন্টি এখন যেত না। ভালোই তো ছিলাম তার কাছে, মায়ের আদর পাচ্ছিলাম। কিন্তু সব গোলমেলে করে দিলো।
আন্টি যাওয়া মাত্রই আদ্রিয়ান ভাইয়া দড়জা লাগিয়ে দিল।
আমি ভয়ে ঢোক গিললাম। এমনিতেই রাগ উঠছিল এখন ভয়। পুরাই বেহাল অবস্থা আমার।
করুন চোখে তাকিয়ে বললাম,,,,
~আদ্রিয়ান ভাইয়া! দড়জা বন্ধ করলেন কেন!
একি! আমি কি এমন কথা বলছি! যার জন্য আদ্রিয়ান ভাইয়া,,,, আমার থেকেও করুন অবস্থায় তাকিয়ে আছে।
তার এমন বোকাবোকা চাহনি দেখে আমার বেশ ভালোই লাগছে। পুরা হাবাগোবার মতো। ভাজা মাছও উল্টিয়ে খেতে জানেনা এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন।
#চলবে