নিশীভাতি #৪৫তম_পর্ব

0
531

#নিশীভাতি
#৪৫তম_পর্ব

“তোমাকে কাছে পাবার আবেদন জানাতে ডেকেছি”

ফাইজানের নির্লজ্জ ভাষ্যে দৃষ্টি নত হল হুমায়রার। কথাগুলো গলবিল অবধি আটকে গেলো। শুভ্র মুখশ্রী রক্তিম হয়ে উঠলো নিমিষেই। লাজুক বধুর লজ্জায় ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি উঁকি দিলো ফাইজানের। এক মুহূর্ত নষ্ট না করেই সেই লালচে গালে চুমু খেলো। মাতাল স্পর্শ ঘন হলো। উষ্ণ স্পর্শের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো কিশোরী। নরম ওষ্ঠজোড়ায় আঙ্গুল স্পর্শ করতেই মাথা ঠেকালো হুমায়রার কাঁধে। উষ্ণ নিঃশ্বাস চামড়া চিরে যাচ্ছে। বুকের উপরের ওড়ণা খানা অবহেলায় ফেলে দিলো মাটিতে। তারপর মুখগুজলো তার বক্ষস্থলে। হাতের বাঁধন দৃঢ় হলো। ফাইজানের অস্বাভাবিক আচারণে হুমায়রা বিস্মিত হলো। তার শরীর কাঁপছে ঈষৎ। হুমায়রা কিছু শুধাবার আগেই সে ভরাট গলায় বললো,
“আমি কল্পনাও করতে পারছি না, চামেলীর জায়গায় তুমি থাকলে কি হত? আমি হয়তো পাগল হয়ে যেতাম। পরদিন পত্রিকায় লেখা হতো, প্রাক্তন এমপি ফাইজান ইকবাল ভোটের টেনশনে পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু তারা তো জানতো না, সে তার বউয়ের চিন্তায় পাগল হয়ে গেছে”
“আপনি আমার চিন্তায় পাগল হয়ে যেতেন?”

হুমায়রার প্রশ্নে মুখ তুলে চাইলো ফাইজান। বাচ্চাদের মতো শুধালো,
“বিশ্বাস হয় না?”
“উহু”
“পাষন্ডী”
“আমি না সেটা আপনি। অনুভূতিহীন পাষন্ড”
“কিন্তু এই পাষন্ড তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি। এতোটাই এখনো বিশ্বাস হয় না?”

হুমায়রা মৃদু হাসলো। আলতো হাতে স্পর্শ করলো ফাইজানের মুখশ্রী। ফাইজানকে অবাক করে তার কপালে ছোঁয়ালো নরম অধরজোড়া। হুমায়রার এমন কাজে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলো। তার বিস্ময় আকাশ ছুঁলো যখন ব্যঘ্র হুমায়রা তার ওষ্ঠদ্বয়ে নিজের দখল জমালো। উষ্ণ রক্তের শিহরণ বিস্তৃত হলো শরীর জুড়ে। অব্যক্ত মাদকতায় নিজেকে হারালো ফাইজান।শিরায় শিরায় প্রেম নামক অপদার্থ শব্দটি মিশে গেলো নির্লজ্জভাবে। ডান হাত চলে গেলো হুমায়রার ঘন কেশের ভেতর। শক্ত আলিঙ্গনে আবদ্ধ হুমায়রাকে আরোও নিবিড়ভাবে আকড়ে ধরলো। মুহূর্তটা নেশাতুর। শীতল বাতাসের স্পর্শে উড়ছে হুমায়রার অবিন্যস্ত কেশ। পেলব শরীর কাঁপছে শিহরণে। তবুও কি মারাত্মক সাহাসী পদক্ষেপ! মায়াবিনীর মুখশ্রী জুড়ে প্রেমাসক্ত আভা। পুরুষালী সত্ত্বা সেই আভায় মত্ত হলো বিশ্রীভাবে। চিৎকার করে বললো,
“এই মানবীকে চাই, পুরোদস্তর চাই”

চিকন, নরম ঠোঁটজোড়ার সুধা পান করা যখন শেষ হলো তখন খেয়াল করলো কিশোরী কাঁপছে এখনো। টলমলে চোখজোড়ায় নোনাজোল। মৃদু স্বরে বললো,
“আমারো ভয় হয়, হারানোর ভয় আমাকেও গ্রাস করে”

মেয়েটি আদুরে মুখখানার ফ্যালফ্যালিয়ে চেয়ে রইলো ফাইজান। হুমায়রা কাঁদছে। তাও তার জন্য। এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভূত হলো। কি অদ্ভুত এই চেতনা। প্রফুল্ল স্বরে শুধালো,
“তুমি কাঁদছো কেনো হুমায়রা?”
“কেউ যদি আপনার ক্ষতি করে? শত্রুর তো অভাব নেই!”

অশ্রুসিক্ত চোখজোড়ায় চুমু খেলো ফাইজান। গাঢ় স্বরে বললো,
“আমি খুব খারাপ মানুষ, আমার জন্য কেঁদো না”

হুমায়রার কান্নার বেগ বাড়লো। তার অশ্রু গুলো শুষে নিলো ফাইজান। আঁদরের স্রোত বাড়লো। নিস্তব্ধ রজনীতে হুমায়রাকে পাবার নিষিদ্ধ আকাঙ্খারা হানা দিলো মস্তিষ্কে। যৌবনের আদিম খেলায় মত্ত হলো তারা। ভালোবাসার কালবৈশাখীর ঝড় আছড়ে পড়লো তৃষিত হৃদয়জোড়ায়। নখের আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত হলো ফাইজানের নগ্ন পিঠ। আজ হুমায়রাও নিজেকে সমর্পণ করলো তার প্রিয়তমের নিকট। রাত ঘন হলো সেই সাথে হৃদয়ের প্রাচীরের দ্বিধাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হলো প্রেমের আঘাতে।

******

শিশিরবিন্দুতে রোদের ঝলক প্রতিবিম্বিত হচ্ছে। ঘুমন্ত কিশোরী ফাইজানের বুকে কবুতরের ছানার মতো ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। ফাইজান নির্নিমেষ চোখে তার পানে চেয়ে রইলো। তারপর স্মরণ হলো যুদ্ধের শঙখধ্বনি বেজে গেছে। এখন প্রস্থান করতে হবে। গাঢ় চুম্বন আঁকলো ঘুমন্ত হুমায়রার কপালে। ফিসফিসিয়ে বললো,
“তোমাকে ছেড়ে যাবার ইচ্ছে নেই তবুও নিষ্ঠুর আমাকে যেতে হচ্ছে। কথা দিলাম এই রিক্ততা আবার পুষিয়ে দিবো”

হুমায়রার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন পাশের স্থানটি ফাঁকা, শীতল। বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো। মানুষটি আবার তাকে একা ফেলে চলে গেছে।

*****

বিকেলের শেষ প্রহরে ভোট প্রদান অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটলো। ফাইজান ভোট দিতে গিয়েছিলো দশটা নাগাদ। ছেলেপুলেরা সব কেন্দ্রের বাহিরে কর্মরত। তাদের শানিত নজর তক্কে তক্কে আসে। ভোট গণনা শুরু হবে। শেষ মুহূর্তেই সব এলোমেলো হয়ে যায়। ফাইজান যখন ভোট দানে এসেছিলো ঠিক সেই মুহূর্তে কেতাব চৌধুরীও প্রবেশ করেছিলো। ফাইজান তাকে দেখে সালাম দিলো। কিন্তু বরাবরের মতো সেই সালামকে অগ্রাহ্য করলো সে। প্রবীন শানিত নয়ন একনজর দেখলো। তারপর পাশেই থুথু ফেললো। ফাইজানকে অপমান করার নোংরা চেষ্টা। ফাইজানের হাসি পেলো। এমন কাজ হরহামেশাই তিনি করেন। ফাইজান নিজ থেকেই শুধালো,
“কেমন আছেন?”

শ্লেষ্মামিশ্রিত কন্ঠে কেতাব চৌধুরী উত্তর দিলেন,
“আমার ভালো থাকা কি তোমার সহ্য হবে?”
“ছিঃছিঃ, আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আপনার ভালো থাকা আমার কাম্য”
“ন্যাকমি চু*** না”

কেতাব চৌধুরীর মুখের ভাষা খুব বাজে। তবুও ফাইজানের মুখে শান্ত হাসি। ভৎসনার স্বরে বলল,
“চাচা, বয়স হয়েছে। এতো মেজাজ ভালো না শরীরের পক্ষে। হার্ট এট্যাক হয়ে যেতে পারে। আপনার উচিত প্রাণ খুলে হাসা। হাসা কিন্তু একপ্রকার ব্যায়াম”

ফাইজানের কথাটা শেষ হবার পূর্বেই তিনি মুখ ব্যাংচি কেটে চলে গেলেন। ফাইজানের চোখজোড়া হাসছে। নাদিমকে সে শীতল স্বরে বললো,
“এবার ছাড় দিবি না। বাকিটুকু সামলে নিবো”

******

ভোট গণণার শেষ মুহূর্ত। টানটান উত্তেজনা। কেতাব চৌধুরীর লোকেরা প্রস্তুত ব্যালোট চুরি করার জন্য। নির্বাচন কমিশনারের একটি অফিসারকে টাকা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ভোট চুরিকরা প্রয়োজন। কারণ ভোটের ফারাক আকাশ পাতাল। ফাইজানের ছেলেরা তখন অন্যমনস্ক। চা সিগারেটের গোলে গল্প করছে। অমনি অতর্কিতে আক্রমণ করে বসলো। সুযোগ বুঝে ভেতরে চলে গেলো কেতাব চৌধুরীর লোকেরা। একে একে সিল দেওয়া শুরু হলো। তখন ই ভরাট গলা কানে এলো,
“ইউ আর আন্ডার এরেস্ট”

পেছনে পুলিশের লোক। অথচ সকলের কাছে টাকা পৌছেছে। ব্যালোট চুরি এবং জালিয়াতি ভোটের জন্য গ্রেফতার হলো দশজন। বাকিরা পালালো দ্বিতীয় দরজা দিয়ে। নির্বাচন কমিশনের অফিসারও ধরা খেলো।

ফাইজান তখন অলস ভঙ্গিতে চা খাচ্ছে। তার সম্মুখে ফরিদ বসে আছে। কর্কশ ধ্বনিতে ফোনটা বাজছে। নাদিম ফোন করেছে। ফোনটা ধরতেই সে বললো,
“ফাইজান ভাই কাজ শেষ”

ফাইজানের ঠোঁটে জয়ের হাসি। ফরিদ বিস্মিত স্বরে শুধালো,
“হাসছো কেনো?”
“একটু টিভিটা চালাও তো”

টিভি চালাতেই নিউজের হেডলাইন হলো এই গ্রেফতার। ফরিদ মিহি স্বরে বললো,
“চাল ভালো চেলেছো বলতে হবে”
“বুড়োভামটার সাহস বেড়েছিলো”
“নতুন এমপি সাহেব ভাষণ রেডি?”
“তিন সপ্তাহ আগ থেকেই”

ফরিদ হাসলো। ফাইজানের মস্তিষ্ক বোঝা খুব জটিল। এই পরিকল্পনাটা ফরিদকে সে জানায় নি। ওদিকে গ্রামের একটি কেন্দ্রেও কেতাব চৌধুরী জিতলো না। একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফাইজান বিজয়ী হলো। ফাইজান ভেতরে হাক দিলো,
“এমপি সাহেবা। এমপি সাহেবা”

হুমায়রা ভেতর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বিস্মিত স্বরে বললো,
“আমাকে ডাকছেন”
“আজ্ঞে”
“বলুন?”
“আপনার স্বামী জয়ে করেছে। সেই উপলক্ষে আজ ভুড়িভোজ হবে। রান্নাটা কিন্তু তুমি করবে”

হুমায়রা অবাক স্বরে বললো,
“ঘোষণা তো হয় নি”
“কিন্তু তোমার বর ই জিতবে”

হুমায়রা কথা বাড়ালো না। সে ভেতরে চলে গেলো। ফরিদ তখন বললো,
“থানার ছেলেটার কি হবে?”
“সাক্ষী দিলে বেঁচে যাবে নয়তো জেলে কখন কি হয় কে জানে”

ফরিদ থমকে গেলো। কিছুক্ষণ পূর্বের নরম মানুষটি কোথাও যেনো হারিয়ে গেলো। ফাইজানকে বোঝা সত্যি দায়।

******

ইলহার মুখখানা রক্তশূন্য। অকস্মাৎ খবরে কিছুটা নড়বড়ে হয়ে আছে ভেতরতা। খবরটি অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু আনন্দটা ঠিক উপলদ্ধি করতে পারছে না ইলহা। হয়তো প্রস্তুত ছিলো না তাই। তার হাতে একটি রিপোর্ট, সে মা হতে চলেছে…….

চলবে

(যারা MOITHI30 এর অফারটি লুফে নিতে পারেন নি, তাদের জানাচ্ছি বইটই এ আমার সকল ই-বুকের উপর চলছে ১০% ছাড়। BOIMELA2024 প্রোমোকোড ব্যবহারে আমার যেকোনো ই-বুকে পেয়ে যাবেন ১০% ছাড়। অফারটি সীমিত সময়ের জন্য)

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here