আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে #লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী (২৫)

0
635

#আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে
#লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী
(২৫)

মেঘ ভ*য়ে ভ*য়ে ফোন এগিয়ে দিলো আবিরের দিকে। ফোন হাতে নিতেই আবিরের চোখে পরলো ফোনে গান বাজতেছে,

“কি নে*শা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে পুনরায় ফোনে মনোযোগ দিলো। কয়েক মুহুর্ত পর অষ্টাদশীর ফোনে ছবিসহ নিজের নাম (Amar Abir❤️ Vai)
দেখে হুট করেই বিষম খেয়ে উঠলো আবির। কাশতে কাশতে বিছানার পাশে বসে পরেছে।

মেঘ আঁতকে উঠে শুধালো,
“কি হয়ছে আবির ভাই? ”

মেঘ সঙ্গে সঙ্গে পানি ঢেলে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে,আবির ভাইয়ের মাথায় ফুঁ দিচ্ছে। আবির কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গ্লাসের সবটুকু পানি শেষ করলো। মেঘের ফোন বিছানায় রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। গ্লাস মেঘকে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক পলক তাকালো অষ্টাদশীর মুখের পানে, এমন কান্ডে হাসবে নাকি রা*গ করবে সেটাও বুঝে উঠতে পারছে না আবির।

কিছুক্ষণ বসে, উঠে যাওয়ার সময় গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আমার নাম্বার তো তোর ফোনে আছেই। তাহলে মামনিকে দিয়ে,মীমকে দিয়ে কেনো কল দেয়াতে হয়? তুই কল দিতে পারিস না?”

মেঘ জিহ্বায় কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

দু পা এগিয়ে আবির পুনরায় থমকে দাঁড়ালো, ঘাড় ঘুরিয়ে চেয়ে রাশভারি কন্ঠে বললো,

“ভ*ন্ডামি বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দে।”

কথা টা বলে এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় নি। বেরিয়ে পরেছে রুম থেকে।

মেঘ বিড়বিড় করে বলছে,
“স*র্বনা*শ! নাম্বার সেইভ করা দেখে বিষম খেলেন ওনি?”

মেঘ তাড়াতাড়ি বসে নাম্বার টা বের করলো। একবার ভাবলো নাম টা পাল্টাবে পরক্ষণেই মনে হলো,
“যা দেখার তো দেখেই ফেলছে, এখন আর পাল্টালে কি হবে? ”

মেঘ ছবিটা দেখে হাসছে আর আর বলছে,
“আহারে! কবে যে নামের পিছন থেকে Vai টা সরাতে পারবো!”

★★★★

কিছুদিন পর আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খান অফিসে কাজের ফাঁকে গল্প করছিলেন। গল্প না ঠিক, দু ভাই নিজেদের সুখ- দুঃখের কথা শেয়ার করছিলেন। মোজাম্মেল খান আর আলী আহমদ খান ছোট থেকেই বন্ধুর মতো। এখন যেমনটা তানভির আর আবিরের সম্পর্ক ।

মোজাম্মেল খানকে চিন্তিত দেখে আলী আহমদ খান প্রশ্ন করলেন,

“কিরে কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ নাকি?”

মোজাম্মেল খান চিন্তিত স্বরে বললেন,
“মেঘকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি, ভাইজান। ”

আলী আহমদ খান গম্ভীর কন্ঠে শুধালেন,
“মেঘ মা কে নিয়ে আবার তোর কিসের চিন্তা? কত লক্ষী একটা মেয়ে। ”

মোজাম্মেল খান তপ্ত স্বরে বললেন,
“সামনে ভার্সিটি পরীক্ষা, মেডিকেল পরীক্ষা। তানভির টা তো ঠিকমতো পড়লোই না, এখন সব আশা ভরসা তো মেঘকে নিয়েই। ”

আলী আহমদ খান ভাইকে সাহস দিয়ে বললেন,
“আরে চিন্তা করিস না। ইনশাআল্লাহ চান্স হয়ে যাবে না হলে কত কত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে ঐগুলোতে পড়াবো।৷ সমস্যা কি?”

মোজাম্মেল খান মন খারাপ করে বললেন,
“আমি তো চাই মেয়েটা মেডিকেলে পড়ুক।”

আলী আহমদ খান হাসিমুখে উত্তর দিলেন,
” ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। দিনশেষে ওরা মানুষ হলেই হলো। আমার আর কোনো চিন্তা নেই। ”

মোজাম্মেল খান এবার একটু ঠাট্টার স্বরে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ, তোমার আর চিন্তা কি! তোমার ছেলে তো পড়াশোনা শেষ করে, তোমার কথা মতো ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। তোমার তো খুশি লাগবেই। ”

আলী আহমদ খান ভাইয়ের কথায় স্ব শব্দে হেসে উঠলেন, হাসতে হাসতে বললেন,
“আমার ছেলে আমার কথা মেনে অফিসে আসছে এটা দেখছিস৷ সাথে নিজের মর্জিমাফিক কোম্পানি শুরু করেছে, বাইক কিনলো, রাত বিরাতে বাড়ি ফিরে, নিজের মতো চলে এগুলো নিয়ে তো কিছু বললি না। সেসব কথা বাদ দে, আমার ছেলে আর তোর ছেলে বলতে কিছু নেই। আমরা যেমন মিলেমিশে আছি। আমি চাই আমাদের সন্তানরাও সারাজীবন মিলেমিশে থাকুক।”

মোজাম্মেল খান হাসিমুখে উত্তর দিলেন,
“দোয়া করি তাই যেনো হয়। ”

এরকমে আবির দরজায় দাঁড়িয়ে বললো,
“আসবো?”

আলী আহমদ খান তাকিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ আসো। তোমাকে কতদিন বলেছি, আমার রুমে আসতে অনুমতি নিতে হবে না। ”

আবির ভারী কন্ঠে উত্তর দিলো,
“আপনারা কথা বলছিলেন, হুট করে ঢুকে পড়া টা ভালো দেখাবে না তাই ভেতরে ঢুকি নি। ”

মোজাম্মেল খান বললেন,
“আমাদের সব কথা তো তোমাদের কে নিয়েই। তোমরা ভালো থাকো এটায় তো চাই। ”

চাচ্চুর দিকে চেয়ে আবির মুচকি হাসলো।

তারপর আব্বুর দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“সময় করে ফাইল টা একটু দেখে নিয়েন, প্লিজ। ”

আবির যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আলী আহমদ খান ডেকে উঠলেন,

“শুন।”

আলী আহমদ খান ছেলের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললেন,
“দুই অফিস সামলাতে কি খুব কষ্ট হচ্ছে? ”

আবির মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
“না, সমস্যা নেই। কষ্ট না করলে আপনাদের মতো সাকসেসফুল কিভাবে হবো! ”

আলী আহমদ খান নিঃশব্দে হেসে বললেন,
“সব বাদ দিয়ে কাজ করলে তো হবে না। নিজের যত্ন নিতে হবে তো। অফিস তো শেষ ই বাসায় যাবে না?”

আবির ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
“৫-১০ মিনিট পর বেড়িয়ে যাবো। ”

আবির বাবার কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে চলে গেছে।। মোজাম্মেল খান আর আলী আহমদ খান ফাইল চেক করে রেখে বেড়িয়েছে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতে আসতে, আলী আহমদ খান হঠাৎ ই শাহরিয়ারকে দেখে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে উচ্চস্বরে ডাকলেন,

“এই, শাহরিয়ার! ”

শাহরিয়ার কাছেই একটা দোকানে কি কিনতেছিলো। আলী আহমদ খানকে দেখে এগিয়ে এসে সালাম দিয়েছে।

আলী আহমদ খান সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,
“কেমন আছো তুমি?”

শাহরিয়ার হাসিমুখে উত্তর দিলেন,
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা কেমন আছেন?”

দু ভাই সমস্বরে বলে উঠলেন,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ”

আলী আহমদ খান স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
“তুমি যে অসুস্থ ছিলা সুস্থ হয়েছো?”

শাহরিয়ার মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,
“ছেলে মে*রে হাসপাতালে পাঠাইছে আর এখন বাপে খবর নিচ্ছে। ভালোই। ”

আলী আহমদ খান পুনরায় বলে উঠলেন,
“তুমি যদি বলতে আমাদের বাসা দূরে হয়ে যায় তোমার জন্য । আমি পেমেন্ট বাড়াতাম। কিন্তু তুমি তো কিছু জানালেও না। ”

শাহরিয়ার শুধু বলেছে,
“না মানে…”

ওমনি চোখ পরছে অফিস গেইটের সামনে দাঁড়ানো আবিরের দিকে। চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে শাহরিয়ারের দিকে।

মোজাম্মেল খান গম্ভীর স্বরে বললেন,
“কি হলো?”

শাহরিয়ার ঢুক গিয়ে ধীর কন্ঠে জানালো,
“অসুস্থ ছিলাম তাই জানাতে পারি নি। এটা কি আপনাদের অফিস আংকেল?”

আলী আহমদ খান হাসিমুখে উত্তর দিলেন,
“হ্যাঁ। আসো ভেতরে আসো। চা – কফি খেয়ে যাও। ”

শাহরিয়ার মাথা নেড়ে না করলো আর মনে মনে বললো,
“আগে জানলে এই রাস্তায় আসতাম ই না। আবার অফিসে বসে চা- কফি খাবো। আর মা*ইর খেতে চাই না । ”

শাহরিয়ার চোখ তুলে চাইতেই দ্বিতীয় বার চোখাচোখি হলো আবিরের সাথে৷ আবির রা*গে কটমট করছে। শাহরিয়ার তাকাতেই আঙুল দিয়ে ইশারা করলো, চলে যেতে।

শাহরিয়ার বাধ্য ছেলের মতো বিদায় নিয়ে সেখান থেকে কেটে পরলো।

আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খান ঘুরতেই আবির হেলমেট পড়তে ব্যস্ত হলো । মোজাম্মেল খান আবিরকে দেখে বলে উঠলেন,

” ছেলেটাকে মেঘের জন্য টিউটর ঠিক করা হয়ছিলো। তুমি আসার পরেই তো পড়াতে গিয়েছিল। চিনতে পারো নি?”

আবির গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“কি জানি, খেয়াল নেই । ”

আলী আহমদ খান ভাইয়ের দিকে চেয়ে জানালেন,
“ছেলেটা পড়াবে বললে ত পেমেন্ট বেশি দিয়ে হলেও রাখতাম। বলতে তো পারতো। ”

আবির ভারী গলায়, কপাল কুঁচকে বললো,
“ছেলে যদি পড়াতে না চায় তাহলে জোর করার কি দরকার তাছাড়া নতুন টিউটর তো শুনলাম ভালোই পড়াচ্ছে। ”

আলী আহমদ খান বললেন,
“একদিন এসে ছেলেটা আর বাসায় গেলো না, কল দিয়ে জানালোও না, ২-৩ দিন পর আমি কল দেয়ার পর বললো অসুস্থ আর পড়াবে না।। আজ সামনে পেয়েছি জিজ্ঞেস করলাম আরকি। ”

আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে জবাব দিলো,
“ছেলের পড়ানোর ইচ্ছে ছিল না তাই হয়তো জানায় নি। আপনারা এখন তাকে এত প্রশ্ন করছেন এতে সে বিরক্তও হতে পারে। ”

আলী আহমদ খান শ্বাস ছেড়ে বললেন,
“তাও ঠিক। কথা তো আজ বললাম ই। আর তো কথা বলার দরকার নেই। ”

আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খান গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেছে। আবির নিজের অফিস থেকে ঘুরে ঘন্টাখানেক এর মধ্যে বাসায় এসেছে। আবিরের বাইকের শব্দে মেঘ বেলকনিতে ছুটে গেছে। অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয় না। মেঘ মনে মনে ভাবছিলো আবির ভাই আসলে চাবি নিয়ে ছাদে যাবে। মেঘ নিজের রুম থেকে বের হয়ে আবির ভাইয়ের দিকে দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, পলক পরছে না একটিবার। আবির মেঘের কাছে এসে একবার তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি নামালো, পকেট থেকে একটা কিটকেট চকলেট বের করে মেঘকে দিলো।

মেঘ চকলেট নিয়ে মাথা নুইয়ে মুচকি হাসলো। নিজেকে স্পেশাল কিছু মনে হচ্ছে। আবির চলে যাচ্ছে তৎক্ষনাৎ মেঘের মনে পরে গেলো চাবির কথা।।

মেঘ তটস্থ হয়ে ডাকে,
“আবির ভাই….!”

আবির রুমের দিকে যেতে যেতেই উত্তর দেয়,
“”হুমমমমম…!””

মেঘ একগাল হেসে বলে,
“ছাদে যাবো। চাবিটা কি দেয়া যাবে?”

আবির গুরুভার কন্ঠে বলল,
“নিয়ে যা এসে। ”

মেঘ দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে চকলেট টা লুকিয়ে রেখে মোবাইল নিয়ে বের হয়েছে। আদি চকলেট হোক আর চিপস যা পায় সব ই খেয়ে ফেলে। এজন্য মীম আর মেঘ প্রিয় জিনিস বা খাবার গুলো লুকিয়ে রাখে যাতে আদি নিতে না পারে।

মেঘ চাবি নিয়ে তালা খুলে ছাদে চলে গেছে। বিকেলের রোদে গাছে থাকা ফুল গুলো জ্বলজ্বল করছে। ইদানীং প্রতি রাতেই বৃষ্টি হয় কিন্তু দিনের বেলা তার রেশমাত্র থাকে না। মেঘ কয়েকটা গাছের পাতা আর অবাঞ্ছিত ডালপালা কেটে হাত ধৌয়ে ছাদে হাঁটছিলো। ১০-১৫ মিনিট পর আবির একটা সেন্টু গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়ে ছাদে আসছে। আচমকা আবির ভাইকে দেখে কিছুটা ভ*য় পেয়েছে। তবে দেশে ফেরার পর এই প্রথমবার আবির ভাইকে লুঙ্গি পরা দেখে মেঘ দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলো। হাসি যেনো থামছেই না বরং হাসির তী*ব্রতা ত্রমশ বেড়েই যাচ্ছে ।আরির কপাল কুঁচকে তাকালো।

আবিরের চাউনীতে মেঘ চিবুক নামিয়ে মুখে হাত চেপে হেসেই যাচ্ছে। আবির কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“এভাবে হাসছিস কেন?”

মেঘের সরল স্বীকারোক্তি,
“আপনাকে দেখে হাসি পাচ্ছে। ”

আবির বিরক্তি হয়ে বললো,
“এভাবে হাসছিস যে, তোর তাঁনারা ধরবো নে। ”

অকস্মাৎ মেঘের মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে। মেঘের কান্ড দেখে আবির মুচকি হেসে ছাদের কর্ণারে সিঙ্গেল সোফায় গিয়ে বসে পরেছে।

সূর্যের আলো ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। মেঘ সঙ্গে সঙ্গে চুল বেঁধে মাথায় ঘোমটা টেনে ধীর পায়ে আবির ভাইয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরেছে। আবির ফোনে কথা বলছে আর মেঘ ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আবির ভাইকে দেখছে।

প্রথম দেখে হাসলেও এখন মেঘের ভালোই লাগছে।। শক্তপোক্ত উন্মুক্ত বাহু দেখেই মনে হচ্ছে জিম করে এমন বডি বানিয়েছেন। প্রশস্ত বুকের লোমগুলো হালকা হালকা দেখা যাচ্ছে । আবির ভাইকে এভাবে দেখে মেঘের বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়ে যাচ্ছে। আবির ভাইয়ের হাতে মেহেদী দেয়া থাকলেই এখন নতুন জামাই লাগতো। এটা ভাবতেই মেঘের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে । আবির ভাইয়ের শ্যামবর্ণের মুখশ্রী সর্বক্ষণ মেঘের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায়। চোখ বন্ধ করলেও সেই তামাটে চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠে।

মেঘ বিড়বিড় করে বললো,
“মনে মনে ভালোবাসি,
আপনি না বাসলেও
আমি বাসি। ”

মেঘ চুপিচুপি আবির ভাইয়ের ২-৩ টা ছবিও তুলে নিয়েছে। আবির কল কেটে মেঘের দিকে চেয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বললো,

“এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? রুমে যাহ। ”

মেঘ আহ্লাদী কন্ঠে বললো,
“একটু থাকি না, প্লিজ। ”

আবির আর কিছুই বললো না। আহ্লাদী কন্ঠে মেঘ কিছু বললে আবির কখনোই না করতে পারে না। এই সেই ললনা যার সামান্যতম আবদারও আবির ফেলতে পারে না। আবিরের সমস্ত পৃথিবী একদিকে আর অন্যদিকে তার Sparrow. আবির চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।

বেশখানিকটা সময় মেঘ আবির ভাইকে সরু নেত্রে নিরীক্ষণ করে ধীর কন্ঠে ডাকলো,
“আবির ভাই…..!”

আবির চোখ বন্ধ করেই জবাব দিলো,
“হুমমমমম..!”

মেঘ উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“আপনার কি মন খারাপ?”

আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
“কই না তো। ”

মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবির বলে উঠলো,
“আজান পরবে কিছুক্ষণের মধ্যে, তোর একটু থাকার ইচ্ছে মিটলে রুমে যা। ”

মেঘও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ রুমে চলে গেছে।

আবির মনে মনে বলছে,
” আমি তো তোর সাথে জীবনের প্রতিটা সূর্যোদয়- সূর্যাস্ত দেখতে চাই। তারজন্য অনেক ঝড়ঝাপটা পেরোতে হবে। যাই হয়ে যাক, একদিন তোকে আমার করে নিবোই ইনশাআল্লাহ। ”

★★★★

হঠাৎ এক বৃহস্পতিবারে মেঘ আর বন্যা কোচিং থেকে বের হতেই দেখতে পেলো আবির ভাই বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। মেঘকে বের হতে দেখে আবির কিছুটা এগিয়ে আসলো। আবির বন্যার দিকে চাইতেই চোখাচোখি হলো দুজনের ।
বন্যা হাসিমুখে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া । কেমন আছেন?”

আবির স্বভাবসুলভ গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?”

বন্যা উত্তর দিলো,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ”

আবির স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
” তুমি ই তো বন্যা। ”

বন্যা বলে,
” জ্বী ভাইয়া। ”

বন্যা পুনরায় বলে উঠলো,
“আমি আসছি ভাইয়া। ভালো থাকবেন। আসছি মেঘ ”

কথাগুলো বলে বন্যা কোনোরকমে পালালো এখান থেকে।

আবির মেঘের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে শুধালো,
“তোর বান্ধবীও দেখা যায় তোর ই মতো। ”

মেঘ আহাম্মকের মতো চেয়ে প্রশ্ন করলো,
“কেমন?”

আবির ঠাট্টার স্বরে বললো,
“তাড় ছিঁ*ড়া। ”

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো,
“মোটেই না। ”
মেঘ ভেঙচি কেটে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।

আবির স্ব শব্দে হেসে বললো,
“চড়ুই পাখিকে গাল ফুলালে পেঁচার মতো লাগে।”

মেঘ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আবির ভাইয়ের দিকে চাইলো। কিন্তু আবির ভাইয়ের মুখের অকৃত্রিম হাসি দেখে নিজের রা*গ টা ধরে রাখতে পারলো না।৷মেঘ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কয়েক সেকেন্ড অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সহসা মেঘের ওষ্ঠ ছড়িয়ে আসে। মেঘ মনে মনে বললো,

“আপনি এই হাসিতে আমি বেসামাল হয়ে যাবো।”

আবির বাইকের কাছে গিয়ে হেলমেট পরে নিলো। মেঘ কাছে যেতেই মেঘের জন্য কিছুদিন আগে কেনা একটা হেলমেট বের করে মেঘকে পড়াতে গেলে,

মেঘ বলে,
” আমি পড়তে পারবো। ”

আবির গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
“আমি পরিয়ে দিলে সমস্যা? ”

মেঘের বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে এটা সে আবির ভাইকে কিভাবে বুঝাবে। আবির ভাই কাছে আসলে ওনার শরীর থেকে আসা তীব্র ঘ্রাণ মেঘের মস্তিষ্কের নিউরন পর্যন্ত নাড়িয়ে দেয়। মেঘের বক্ষস্পন্দন জোড়ালো হয়। নিজেকে সামলানোর সব শক্তি ক্রমে ক্রমে বিলীন হয়ে যায়।

আবির নিজেই হেলমেট পরিয়ে দিয়ে বাইকে বসলো। মেঘের দিকে চাইতেই মেঘ বাইকে বসলো । আবির বাইক টান দিতেই, হুমড়ি খেয়ে পরলো আবিরের পিঠে । নিজেকে সামলে সঙ্গে সঙ্গে দু হাতে আবির ভাইয়ের কাঁধ চেপে ধরলো।

আবির উচ্চস্বরে বললো,
“আর একদিন ও তোকে ধরতে বলবো না। পরে গেলেও ফেলেই চলে যাবো। ”

মেঘ চুপচাপ আশপাশে দেখছে। কতকত কাপল ফুটপাত দিয়ে একসাথে হাঁটছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে, কেউ বা শাড়ি পাঞ্জাবি পরে হাটছে আর কতক মানুষ বাইকে, রিক্সাতে ঘুরছে। তাদের দেখে মেঘের মনে প্রেমানুভূতি জাগ্রত হয়। খুব ইচ্ছে করছিলো আবির ভাইকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরার কিন্তু সাহস হয় নি। সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব সরিয়ে অকস্মাৎ আবিরের পিঠে মাথা রাখলো মেঘ।

আবির সঙ্গে সঙ্গে বাইকের গতি কমিয়ে, মৃদু হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। মেঘ তা বুঝতে পেরে সহসা মুখ তুলে স্বাভাবিক হয়ে বসলো।

আবিরের মুখের হাসিটা কয়েক সেকেন্ডে বিলীন হয়ে গেলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে একটা বাইকের শোরুমের সামনে এসে থামলো। মেঘ উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“আমরা এখানে কেনো আসছি?”

আবির নিরেট কন্ঠে বললো,
” তোর ভাইয়ের জন্য বাইক কিনতে আসছি। ”

মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে শুধালো,
“সত্যি? ”

আবির মেঘকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে বললো,
” পছন্দ কর। ”

মেঘের উত্তেজনা নিমিষেই মিলিয়ে গেলো, আস্তে করে বললো,

“আমি তো বাইক চিনি না। আর আমার পছন্দ ভাইয়ার কি ভালো লাগবে?”

আবির শক্ত কন্ঠে বললো,
“তানভিরের নির্দিষ্ট কোনো পছন্দ নেই। তাছাড়া তুই ওকে গিফট করবি এতে পছন্দ না হওয়ার কি আছে। তুই কালোর মধ্যে কয়েকটা পছন্দ কর। আমি তো আছিই। ”

মেঘ আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে বললো,
“আমি গিফট করবো মানে?”

আবির কপাল কুঁচকে বললো,
“এত মানে বুঝতে হবে না। ”

আবির ঘুরে ঘুরে বাইকের ডিটেইলস বলছে আর মেঘ পছন্দ করছে। সবশেষে দুটা বাইকে কনফিউজড।

মেঘ আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে ভণিতা ছাড়াই বলে উঠলো,
“দয়া করে দু’টা নেয়ার চিন্তা করবেন না। প্লিজ। ”

আবির মেঘের মুখোমুখি হয়ে ছোট করে বললো,
“আমার টা রেখে এই দুটা নিয়ে নেই?”

মেঘ চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“নাহ…। আপনার টা আমার অনেক পছন্দ । ”

আবির মৃদু হেসে সাইডে গিয়ে বসলো। মেঘকে বললো তানভিরকে কল দেয়ার জন্য। আবিরের কথামতো মেঘ কল দিয়ে সেই সেই কথাগুলোই বলেছে যা আবির শিখিয়ে দিয়েছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তানভির চলে আসছে। মেঘ তানভিরের হাতে দুটা চিরকুট দিয়ে বললো,

“যেকোনো একটা তুলো। ”

তানভির বনুর কথামতো তাই করলো।

সহসা মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“সারপ্রাইজ৷ এটা তোমার গিফট। আবির ভাইয়ের তরফ থেকে । ”

আবির পাশ ফিরে মেঘের দিকে চেয়ে বললো,
“আমাদের দুজনের পক্ষ থেকে, টাকা আমার পছন্দ ওর। ”

তানভির আবিরকে জরিয়ে ধরে বললো,
“Thank you so much Vaiya. ”

মেঘকেও ধন্যবাদ দিলো।

বাইকের সব কাজ শেষ করে শোরুম থেকে বের হয়েই মেঘ বললো,
“ভাইয়া ট্রিট দিবা না?”

তানভির হাসিমুখে বললো,
“অবশ্যই দিবো। ১ মিনিট ওয়েট কর বনু। ”

আবির ভাইকে সাইডে নিয়ে তানভির কানে কানে বললো,

“ভাইয়া, হেল্প করো প্লিজ। ”

আবির কপাল কুঁচকে বললো,
“কি হেল্প?”

তানভির বিড়বিড় করে বললো,
“তোমার মতো আমিও আমার ওনাকে প্রথমে বাইকে বসাতে চাই। ”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে তপ্ত স্বরে শুধালো,
” আমি কারে প্রথমে বাইকে উঠাইছি?”

তানভির ঠাট্টার স্বরে বললো,
“আমার সামনে ঢং করো না ভাইয়া। আমায় বাইকে উঠাতে হবে বলে একা একা বাইক কিনে নিয়ে গেছো। মীম, আদিকে বাইকে ঘুরাবা দূরের কথা আমায় বাইক ছুঁতে ই দাও নি। বনুরে নিয়ে সর্বপ্রথম বাইকে ঘুরছো। বনুরে নিয়ে ঘুরার কয়েকদিন পরে আমারে তোমার বাইকে প্রথম উঠতে দিছো। কি ভাবছো? আমি জানি না? তুমি যেদিন প্রথম বনুরে নিয়া ঘুরছো সেদিন ই আমার বন্ধু আমায় বলছে। ”

আবির নিঃশব্দে হেসে বলছে,
“আস্তে বল, ও শুনে ফেলবে। ”

তানভির আকুল স্বরে বললো,
“তাহলে আমার ব্যবস্থা করে দাও প্লিজ।”

আবির গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“তোর ওনাকে তো আনতেই চাইছিলাম কিন্তু ওনাকে বলার আগেই ছুটে পালাইছে।”

তানভির সুস্থির ভঙ্গিতে বললো,
“প্লিজ ভাইয়া…!”

আবির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
“তুই ও তো তোর বোনের মতোই হইছিস। ঠিক আছে, দেখছি। ”

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here