তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৩৪ #মেহরিন_রিম

0
237

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩৪
#মেহরিন_রিম
শত্রুরা যেন পিছুই ছাড়ছেনা আদৃতের। যাদেরকে সহ্য করতে পারেনা তাড়াই বরং বারবার চোখের সামনে চলে আসছে। দশদিনের গ্যাপ নিয়ে একটা কনসার্ট করছে, কিন্তু এখানে নিরবের দেখা পাওয়ার কোনো মানে হয়! একেতো রিফাত এর কথা মাথা থেকে বের হচ্ছেনা, তার উপর নিরব কে দেখে আরো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আদৃতের। কনসার্ট চলাকালীন টাইমে খেয়াল না করলেও কনসার্ট শেষ হওয়ার কিছুক্ষন আগে দেখতে পায় নিরব এবং তার কিছু বন্ধুকে।

ব্যাস,মেজাজ টা তখনি বিগড়ে যায়। কনসার্টে আসা লোকজন বিশেষ করে মেয়েরা সেলফি তোলার অনেক চেষ্টা করছিল,কিন্তু আদৃতের এখন এই ক্রাউড এর মধ্যে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। স্টেজ এর পিছন থেকে তাই কোনোভাবে বেড়িয়ে যায় আদৃত, অতঃপর সকলে হতাশ হয়ে চলে যায়।

একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কনসার্ট ছিল, আদৃত সেখান থেকে বেড়িয়ে বাইক নিয়ে একটু সামনে চলে আসে। রাত হয়ে যাওয়ায় এখানে খুব একটা মানুষ নেই, তার উপর অন্ধকারে কেউ তাকে তেমনভাবে চিনতে পারবে না। একটা লেক এর পাশে বসে পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট টা বের করে আদৃত। মাথাটা একটু হালকা করা প্রয়োজন, সিগারেটে আগুন ধরিয়ে টান দিতে যাবে তখনি দেখতে পায় নিরব এবং তার বন্ধুরা এইদিকেই আসছে। বিরক্ত হয় আদৃত, বারবার সামনে চলে আসছে কেনো এরা? ওদের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সিগারেট এর ধোয়া ছাড়লো আদৃত। পকেট থেকে ফোনটা বের করে স্ক্রোল করতে শুরু করে, তবে ফোনের দিকে তার বেশিক্ষণ খেয়াল থাকেনি। নিরব এবং তার তিনজন বন্ধু আদৃত এর থেকে কিছুটা দূরত্বে বসে পড়ে,তারাও এখানে আদৃত কে খেয়াল করেনি। নিরবের সাথে থাকা একটা ছেলেকে আদৃত এর আগেও কলেজে দেখেছে।
আদৃত ফোনের দিকে চোখ রেখেই ওদের কথা শোনার চেষ্টা করলো।

নিরবকে খানিকটা মুড অফ করে থাকতে দেখে তার পাশে থাকা ছেলেটি তাকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলে,
_একবার ছ্যাকা খেয়ে তোর এই অবস্থা ভাই! আর আমিতো এখন পর্যন্ত কতগুলো ছ্যাকা খাইলাম,কই আমি তো একদম ঠিক আছি।

_তুই কারোর সাথে সিরিয়াস রিলেশন এ গেলে তো বুঝবি!

_তো তুই এতো সিরিয়াস হইতে গেছিস কেনো? চিল মামা, লাইফ তো এখনো বাকি।

নিরবকে চুপ করে থাকতে দেখে ছেলেটা আবারো বলে,
_আচ্ছা তুই সিরিয়াস রিলেশন এ যেতে চাস তাই তো? তাহলে তেমন মেয়ের সাথে যা।

নিরব ভ্রু কুঁচকে বলে,
_কেমন মেয়ে?

নিরবের অন্য পাশে থাকা আরেকটি ছেলে বলে,
_আরে মেয়েতো তোর চোখের সামনেই থাকে,তুই দেখতেই পারিস না।

_ক্লিয়ারলি বলবি তোরা?

_ও ইশার কথা বলছে, দেখ আই থিংক মেয়েটা যথেষ্ট সিরিয়াস থাকবে রিলেশনশিপ নিয়ে। আর ও তো তোকে অনেক আগে থেকেই লাইক করে,এটা তুই একটু হলেও জানিস।

_দেখ ফালতু কথা বলবিনা।

_ফালতু কথা কই বললাম ভাই? তুইও এখন সিঙ্গেল,আর ইশাও হয়তো সিঙ্গেল। তাহলে প্রবলেম টা কোথায়? আমার মনে হয় তুই একবার প্রপোজ করলেই ও এক্সেপ্ট করে নেবে।

_আর যদি না করে?

_সেটা তো আলাদা কথা,কিন্তু ট্রাই করতে ক্ষতি কি?

_বলছিস?

_হ্যা বলছি।

বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আদৃত। হাতে থাকা ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে। অন্যহাতে থাকা সিগারেট টা চেপে ধরায় হাতে ছ্যাকা লাগতেই সেটা দূড়ে ছুড়ে ফেলে দেয় আদৃত। অসহ্য লাগছে তার, কোথায় মাথা ঠান্ডা করতে এখানে বসেছিল সেখানে হলো উল্টোটা।

দ্রুতপায়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো আদৃত, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি স্পীড এ বাইক চালাচ্ছে সে। বাহিরের শীতল বাতাসেও তার মাথা বিন্দুমাত্র ঠান্ডা হচ্ছেনা।
বাইক গ্যারেজে রেখে লিফট এ উঠে পড়লো আদৃত। চুল টেনে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। দড়জা খুলে ফ্লাট এ ঢুকে শব্দ করে দড়জা আটকে দেয় সে। ডাইনিং রুমের লাইট জ্বলছে আর বাকি সব লাইট নেভানো। আদৃত নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় বসে দুহাতে মাথা চেপে ধরে। আজকের দিনটাই খারাপ তার জন্য। সকালে রিফাত এর ঘটনা, আর এখন নিরব তো সব সীমাই ছাড়িয়ে গেলো। যদিও সেদিন ইশার কথা শুনে মনে হয়নি তার মনে নিরব এর জন্য কোনো ফিলিংস অবশিষ্ট আছে, তবুও ভয় হচ্ছে আদৃত এর।
কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত রিফাত কে নিজের শত্রু মনে হচ্ছিল আদৃতের কাছে,তবে নিরব কে এখন তার চেয়েও বড় শত্রু মনে হচ্ছে। কি করা উচিৎ তার? বলে দেবে ইশাকে তার মনের কথা? কিন্তু কি করে? যার সাথে ঝগড়া ছাড়া কোনো কথা বলেনি এখনো তাকে কি করে ভালোবাসার কথা বলবে?

বেশ চিন্তায় পরে গেলো আদৃত,মায়ের কথা মনে পরছে খুব। মায়ের কথা ভাবতেই একজনের কথা মনে পরলো আদৃতের। মাথা থেকে হাত সরিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করলো, মনে হলো সেই ব্যাক্তি আদৃতকে কিছু উপায় বলতে পারবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আদৃত,কাল ই যাবে তার সাথে কথা বলতে।

____
পূর্ণর সামনে নিজের কান্না নিয়ন্ত্রন করলেও বাড়িতে এসে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। কথাগুলো কিভাবে বলেছে সেটা কেবল ফাইজাই জানে। অতি কষ্টে আটকে রাখা কান্নাগুলো যেন এখন আর বাঁধ মানছে না। ইশার কিছুটা মাথা ব্যাথা থাকায় সে নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছে,নাহলে সে এতক্ষনে ঠিকই ফাইজার ঘরে চলে আসতো।
হাটুতে মুখ গুজে কাঁদছে ফাইজা। আগের চেয়েও যেন এখন বেশি কষ্ট হচ্ছে তার। আগে জানতো পূর্ণ তাকে ভালোবাসেনা,তাই নিজের মনকে শান্ত রাখতে পেরেছিল। কিন্তু এখন কি করে শান্ত হবে, যেখানে সে নিশ্চিত পূর্ণ তাকে ভালোবাসে। যদি তাকে নাই পাওয়ার ছিলো, তাহলে কেন নতুন করে আশা জেগেছিল মনে?

রাতে আর খাওয়া হলোনা ফাইজার,কাঁদতে কাঁদতে একসময় ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। এই সময়টুকুই হয়তো কষ্টগুলো ভুলে থাকতে সক্ষম হবে সে।

___
জানালা থেকে আসা সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় ফাইজার। চোখ খুলে মাথা তুলতেই বুঝতে পারে তার মাথা ভার হয়ে আছে। বিছানায় হাতের ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। এত আলো তার ভালো লাগছে না,তাই গিয়ে জানালার পর্দা টেনে দেয় সে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দড়জা খুলে দেয় সে। ইশা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি দেখে নিচে চলে আসে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখতে পায় রুকসানা অনেক ধরণের নাস্তা বানাচ্ছেন। ফাইজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
_এত কিছু কার জন্য করছো ছোট আম্মু? ছোট আব্বু আসবে নাকি?

রুকসানা ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলে,
_না না তোর ছোট আব্বু নয়। ভাইয়া ভাবি আসছে, কতদিন পর আসছে বলতো!

ফাইজা চোখ বড়বড় করে বলে,
_আব্বু আম্মু আসছে?

_হ্যা..

_কখন? আমি তো কিছু জানিনা।

_তোর ফোন কোথায় রাখিস? ভাবি বললো তোকে ফোনে পাচ্ছে না। আর আমিও জানতাম না তো,ভাবি ভোরবেলা ফোন দিয়ে বললো ভাইয়ার হাটু ব্যাথাটা একটু বেড়েছে তাই ডাক্তার দেখাতে আসছে। এইতো এক্ষুনি চলে আসবে, তুই একটু হাতেহাতে কাজ করে দে না মা। না থাক,তুই গিয়ে বরং ইশাকে ডেকে দে। বন্ধ পেয়ে আর ঘুম থেকেই ওঠার নাম নেই।

_হুম যাচ্ছি।

ফাইজা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে ইশার রুমের দিকে যেতে লাগলো। তবে তার চিন্তা হচ্ছে, আদতেও কি তারা ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যেই আসছে নাকি অন্য কাজে? ভাবতে ভাবতেই ইশার ঘরে চলে এলো ফাইজা,এখন ইশাকে ঘুম থেকে ওঠানোও আরেকটা যুদ্ধ..

দশমিনিট এর মধ্যেই ফাইজার বাবা মা অর্থাৎ জাফর সাহেব এবং ফাহমিদা বাড়িতে প্রবেশ করলেন। রুকসানা তাদের আপ্যায়নে ব্যাস্ত,ফাইজাও তাকে কিছু কাজে সাহায্য করছে। তবে তার নজর বাবা মায়ের দিকে, তাদের হাবভাব ভালো ঠেকছে না। নিজেরা ফিসফিস করে কোনো বিষয়ে আলোচনা করছে।

ইশাকে ঘুম থেকে ওঠাতে ব্যার্থ হয়েছে ফাইজা,আজ ছুটির দিন তাই সে বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠবেনা। টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে জাফর আর ফাহমিদা কে ডেকে আনলো ফাইজা। তাড়াও হাসিমুখে ডাইনিং টেবিল এ বসে নাস্তা করতে করতে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললো। তবে ফাইজা আছে অন্য চিন্তায়, আর তার ধারণা সত্যি প্রমাণিত হলো কিছুক্ষন পরেই।
ফাহমিদা রুকসানার উদ্দেশ্যে বললেন,
_ইশা তো বড় হচ্ছে,ওর বিয়ের কথা কিছু ভেবেছো নাকি?

রুকসানা হেসে উত্তর দেয়,
_ওর তো এখনো বিয়ের বয়স ই হয়নি ভাবি। আগে ভার্সিটি তে উঠুক,তারপর ভাববো এই নিয়ে।

ফাহমিদা জাফর এর দিকে একনজর তাকিয়ে আবারো রুকসানার দিকে তাকিয়ে বললো,
_বলছিলাম যে, আমাদের মেয়ে আমাদের কাছে থাকলেই ভালো হয়না?

_ভাবি ঠিক কি বলতে চাইছেন বুঝলাম না..

_আমার ছেলেও তো বড় হয়েছে, তাই ভাবছিলাম ফায়াজ এর সঙ্গে ইশার বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here