#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৯
ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে আটটা বাজে। অয়ন্তি আধবোজা চোখে তাকিয়ে আবারো চোখ বন্ধ করে নিয়ে কয়েক মুহূর্ত পরে সম্পূর্ণরূপে চোখ মেলে ছাদের উপরে ঝুলে থাকা সাদা রঙের ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইল। কিন্তু কিছু একটা মনে পড়তেই চোখ বড় বড় করে তড়াক করে শুয়া থেকে উঠে বসে। ঘরের চারিদিকে নজর বুলিয়ে দেখে নেয় জাহিন আছে কি না। কিন্তু জাহিনের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া গেল না। কোথায় গেল লোকটা? হয়ত নিচে আছে। রাতের বেলা কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল অয়ন্তি বুঝতে পারে নি। আর জাহিনেই বা কখন আসল রুমে রাতের বেলা? অয়ন্তি তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা ঠিক করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। অয়ন্তি নিচে নেমে দেখে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে কিন্তু জাহিন নেই। অয়ন্তিকে দেখা মাত্রই রুনা আক্তার অয়ন্তির দিকে এগিয়ে এসে বলেন।
“অয়ন্তি তুমি ঠিক আছো এখন?”
অয়ন্তি চাচি শাশুড়ির মুখে হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে বলে, “আমার আবার কি হবে?”
“জাহিন যে বলল তুমি নাকি মাথা ব্যথার কারণে রাতে ঘুমাতে পারো নি ভাল করে। তাই তো আমরা তোমাকে আর ডাকি নি।”
অয়ন্তি চোখ বড় বড় করে বলে, “মাথা ব্যথা আমার!”
“হুমম।”
“ওনি কোথায়?”
“কে জাহিন ও তো সকাল হতে না হতেই তড়িঘড়ি করে চলে গেল এমন কি নাস্তাটা করে যায় নি। কি নাকি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।”
অয়ন্তি মনে মনে হাসল। বুঝতে পারল সবাইকে বলা জাহিনের মিথ্যা কথার মানেটা। যাতে করে তার মুখোমুখি জাহিনকে না পড়তে হয় আর অয়ন্তির ঘুমিয়ে থাকার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এক ভাবে ভালোই হয়েছে জাহিনের সকাল সকাল চলে যাওয়াতে। না হলে তারও জাহিনের সামনে পড়তে ভীষণ লজ্জা লাগত। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মাঝে এমনটা হওয়া তো স্বাভাবিক। তাহলে দুজনের মাঝে এত জড়তা কাজ করছে কেন? হয়ত তাদের দুজনের এই সম্পর্কটা সেই পর্যায়ে এখনও পৌঁছায় নি। রুনা আক্তার বলেন।
“চলো নাস্তা করে নিবে অসুস্থ অবস্থা না খেয়ে আর থাকতে হবে না।”
“চাচি আমি এখন ঠিক আছি আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আগে সবাই নাস্তা করুক তারপর আমি আপনাদের সাথে করব।”
“আচ্ছা আমাদের সাথেই করিও।”
কিছুক্ষণ পরেই জারা কলেজে ড্রেস পড়ে এক্কেবারে নিচে নেমে আসে। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের বসতে বসতে বলে, “মা জলদি নাস্তা দাও খুব খিদে পেয়েছে।”
জোহরা বেগম গ্লাসে পানি টালতে টালতে বলেন, “বস দিচ্ছি।”
এদিকে আজমল শেখ খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে বলেন, “তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে জারা?”
“জি বাবা ভালো।”
“ভাল হলেই ভাল। আর বোর্ড পরীক্ষারও তো দেরি নেই। আমি তোমার রেজাল্ট যেন ভাল দেখি।”
“জি বাবা।”
এমন সময় আহান ফোড়ন কেটে বলে উঠে, “চাচ্চু আপু না একটুও পড়াশোনা করে না সবসময় কি নিয়ে চিন্তা করে। তুমি আপুকে আচ্ছা করে বকে দাও পরের বার যেন আপু ভাল করে পড়াশোনা করতে পারে।”
আজমল শেখ গম্ভীর গলায় বলেন, “সারা বছর কি করল না করল সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি তোমাদের দু জনেরই বছর শেষে ভাল রেজাল্ট দেখতে চাই। তাই একজন আরেক জনের খুঁত না ধরে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী হও।”
কথাটা বলে আজমল শেখ নিজের ঘরে চলে যান। আর যাওয়ার আগে স্ত্রীকে বলেন ঘরে যাওয়ার জন্য। বাবা চলে যেতেই জারা কটমট চোখে আহানের দিকে তাকায়। টেবিলে আপতত জারা আর আহান ছাড়া কেউ নেই। অন্যরা সবাই খাওয়া দাওয়া করে চলে গেছেন। জারার ইচ্ছে করছে আহানের মুখে স্টেপলার মেরে দিতে যাতে পরের বার এসব কথা না বলতে পারে। আহান জারার চাওনি দেখে চিৎকার করে বলে।
“মা দেখো আপু আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে? মনে হচ্ছে আমাকে খেয়ে ফেলবে।”
জারা রেগে বলে, “এই চুপ একদম চিৎকার করবি না। এই তুই আমার ভাই নাকি দুশমন বল তো। বাবার কাছে এসব কথা বলা কি খুব দরকার ছিল।”
আহান কিছু বলতে যাবে তখনই রুনা আক্তার কিচেন থেকে এসে বলেন, “উফফ তোরা দু ভাই বোন এক সাথে হলেই ঝগড়া করিস। আর আহান তোরেই বা এসব কথা বলার কি দরকার ছিল তোর চাচ্চুকে।”
“বলেছি বেশ করেছি আরো বলব।”
জারা বসা থেকে উঠে আহানের দিকে তেড়ে যেতে নিবে তখনই আজমল শেখের গলার আওয়াজ ভেসে আসে রুম থেকে, “আমি যেন আর একটা আওয়াজও না শুনি তোমাদের। চুপচাপ খাওয়া দাওয়া করে দুজনে সময় মতো স্কুলে আর কলেজে যাও।”
জারা বসে রাগী চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহানও বোনকে ভেংচি কেটে যাচ্ছে সমান তালে। অয়ন্তি হা করে দুই ভাই বোনের ঝগড়া দেখছে। এ যেন টম এন্ড জেরি এক জনের থেকে আরেক জন। এর কিছুক্ষণ পরেই নুহাশ আসে। নুহাশকে রেখেই জাহিন চলে গেছে। নুহাশ জাহিনের সাথে যেতে চেয়েছিল কিন্তু জাহিনেই নুহাশকে পরে আসতে বলে গেছে। নুহাশ এক পলক জারার দিকে তাকিয়ে আহানের পাশের চেয়ারে বসে আহানের কাঁধে চাপড় মেরে বলে।
“কি আহান বাবু এখনও খাওয়া হয় নি?”
আহান হেসে বলে, “খাচ্ছি তো তাড়াতাড়ি খেলে তো গলায় খাবার আটকে যাবে তাই আস্তে ধীরে খাচ্ছি।”
“তাই! ঠিক আছে আস্তে ধীরে খাও।”
এমন সময় জারা বিড়বিড়িয়ে বলে, “এসে গেছে সামুদ্রিক প্রাণী।”
নুহাশ জারার বিড়বিড়ানো শুনে তার দিকে তাকায়। জারা নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। রুনা আক্তার নুহাশকে খাবার দিতে দিতে বলেন, “আহান তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করো স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে।”
এদিকে জারা খাবার খাওয়া থামিয়ে ভাবি আর চাচিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “চাচ, ভাবি জানো আমাদের বাড়িতে একটা সামুদ্রিক প্রাণী আছে।”
অয়ন্তি আর রুনা আক্তার অবাক হয়ে যায় এমন কথা শুনে। নুহাশ টের বুঝতে পারচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী যে তাকে বলা হচ্ছে। তাই নুহাশ কিচ্ছু না বলে অধর কোণে হাসি রেখে মাথা নিচু রেখে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে।
“সামুদ্রিক প্রাণী এই বাড়িতে? কে?”
জারা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “আমাদের আশে পাশেই আছে। যে নুনে পোড়া কফি তৃপ্তি ভরে খায়।”
“কিসব বলছো তুমি জারা কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি।”
রুনা আক্তার বলে, “ওর কথা বাদ দাও তো অয়ন্তি তুমি বরং খাওয়া শুরু করো।”
জারা হাত ধুতে ধুতে বলে, “ভাবি তোমার বুঝে লাভ নেই। আমি যা বোঝার বুঝে গেছি গতকাল রাত্রে। আমি এখন আসি আমার কলেজের লেট হচ্ছে। আর আহান তোর খাওয়া শেষ হয়ে থাকলে চল। যথেষ্ট খেয়েছিস আর খেতে হবে না।”
এমন সময় জোহরা বেগম জারা আর আহানের টিফিন বক্স নিয়ে এসে বলেন, “টিফিন বক্স দুটো দুজনে নিয়ে যাও।”
জারা বিরক্ত গলায় বলে, “মা তোমাকে বলেছি না আমি এসব টিফিন ফিফিন নিব না তারপরও কেন দাও?”
জোহরা বেগম চোখ গরম করে বলেন, “চুপচাপ টিফিন বক্স গুলা নিয়ে যাও। আহানেরটা আহানের ব্যাগে ভরে দিবে।”
জারা চলে যায়। নুহাশ চুপচাপ বসে খাচ্ছে আর রাত্রের ঘটনাটা মনে করে মুচকি মুচকি হাসছে। জারা যে তার রাত্রের করা অভিনয়টা বুঝতে পারে নি এটা মনে করেই মূলত হাসছে।
রাত্রে বেলার ঘটনা—-
রাতে শিরিন খালার কফি নিয়ে আসতে দেরি হচ্ছে বলে নুহাশ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে করিডোরে দাঁড়ায়। তখনই ডাইনিং টেবিলের দিকে নজর যেতেই জারাকে কফির মগে লবণ মেশাতে দেখে নুহাশ হতভম্ব হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে জারার করার কাজ গুলা দেখে যাচ্ছে সে। জারা উপরের দিকে তাকাতেই নুহাশ চট করে নিজের রুমে ঢুকে সশব্দে হেসে উঠে। নুহাশের চোখের সামনে এখনও যেন দৃশ্যটা ভাসছে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না ওই কফিটি কি ওরেই নাকি অন্য কারোর জন্য?
এর কিছুক্ষণ পরেই শিরিন খালা নুহাশের রুমে কফির মগ নিয়ে এসে বলে, “নুহাশ ভাই তোমার কফি।”
নুহাশ ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে, “টেবিলে রাখো।”
শিরিন খালা কফির মগ রেখে চলে যায়। নুহাশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কফির মগটার দিকে। কফির মগে চুমুক দিবে নাকি দিবে না ভেবে দুটানায় পড়ে গেল। তবে এক বার একটু টেস্ট করে দেখে যাক এটা জারার লবণ মিশিয়ে দেওয়া কফির মগটা কি না। নুহাশ কফির মগটা নিয়ে জিহ্বা দিয়ে কফি টেস্ট করে সাথে সাথে থুতু ফেলে দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে বলে।
“ভাইরে ভাই সমুদ্রে থাকা সব লবণ কফির মগে ঢেলে দিয়েছে মেয়েটা। এই কফি খেলে নিশ্চিত আমার কপালে মরণ লেখা আছে। এ কফি কিছুতেই খাওয়া যাবে না।”
নুহাশ কফির মগটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিবে তখনই পর্দার আড়ালে থাকা কারোর অস্তিত্ব বুঝতে পেরে থেমে যায়। অধর কোণের হাসি রেখে নুহাশ পায়চারি করা শুরু করে দিয়ে কফির মগটা নিজের মুখের সামনে এনে এমন একটা ভাব ধরছে যেন, যে কেউ দেখে বুঝতে পারে নুহাশ তৃপ্তি ভরে কফিটা খাচ্ছে। কিন্তু আসলে নুহাশ তো এই কফির এক চুমুকও খায় নি। আর উল্টো দিকে জারা ভেবে বসে রয়েছে নুহাশ কফিটা তৃপ্তি ভরে খেয়েছে।
_______
নুহাশ নাস্তা করে বের হতে নিবে তখনই অয়ন্তির ডাক পড়ে। নুহাশ অয়ন্তির দিকে ফিরে বলে, “কিছু বলবেন ভাবি?”
অয়ন্তির একটা হলদে রঙের ব্যাগ নুহাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “আসলে এই ব্যাগটা শারাফ ভাইকে মানে আপনার বন্ধুকে একটু দিয়ে দিতে পারবেন।”
নুহাশ ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি আছে এতে?”
“শার্ট।”
“কার শার্ট?”
“শারাফ ভাইয়ার! আসলে আমার ফ্রেন্ড লিজা ওনার শার্টটা নষ্ট করে….।”
“ও আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। আমি শারাফকে শার্টটা দিয়ে দিব।”
“আচ্ছা।”
নুহাশ শার্টটা নিয়ে চলে যায়। অয়ন্তিও নিজের রুমে চলে যায়। বাড়িরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে অয়ন্তির কাছে। তবে চাচি শাশুড়ি, শাশুড়ি মা, দাদি শাশুড়ি আর দাদা শশুর আছেন। কিন্তু তারাও নিজেদের ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে। অয়ন্তির একা রুমেও থাকতে ভালো লাগছে না তাই ভাবল একটু ছাদে যাওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ অয়ন্তি চলল ছাদে। ছাদের দরজা খুলতেই ওই দিনের মতোই কবুতর গুলা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে গেছে কিন্তু গতবারের মত এবার আর অয়ন্তি ভয় পায় নি বরং চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। ছাদের মাঝে দৌঁড়ে গিয়ে অয়ন্তি বসে থাকা কবুতর গুলাকে উড়িয়ে দিল। শেখ বাড়ির সব কিছুর থেকে অয়ন্তির কাছে ছাদটা যেন সব থেকে প্রিয় হয়ে উঠল এই মুহূর্তে। অয়ন্তির নজর পড়ে ছাদের কোণে থাকা কবুতরের খাবারের উপরে । অয়ন্তি এগিয়ে গিয়ে এক মুঠো সরিষা নিয়ে কবুতর গুলার দিকে ছড়িয়ে দিল। কবুতর গুলাও ঝাঁক বেঁধে উড়ে এসে ছাদের মেঝেতে থাকা সরিষার দানা গুলা টুকরে টুকরে খেতে শুরু করল। অয়ন্তি হাসি মুখে সেই সুন্দর দৃশ্যটা প্রাণ ভরে দেখচ্ছে।
________
নুহাশ থানায় এসেছে শারাফের শার্ট নিয়ে। নুহাশকে থানায় দেখে শারাফ নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মজার ছলে বলে, “আরে নুহাশ পল্লী যে। তা আমার থানায় আসার কারণ কি আপনার নুহাশ পল্লী? কারো নামে মামলা টামলা করতে এসেছেন নাকি?”
নুহাশ বিরক্ত হয়ে চেয়ারের বসতে বসতে বলে, “তুই বড্ড কথা বলিস শারাফ।”
শারাফ হেসে বলে, “ভাই দেখ আল্লাহ আমাদের মুখ দিয়েছে কথা বলা জন্য। আর এখন এই মুখ যদি কথা না বলে চালাই, তাহলে তো আমার মুখ পুরাই অকেজো হয়ে যাবে। কথায় আছে দা আর মুখে যত শান দিবি ততই ধারলো হবে।”
নুহাশ গম্ভীর গলা বলে, “হয়েছে?”
শারাফ ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি হবে?”
“তোর লেকচার দেওয়া?”
শারাফ নিচু গলায় বলে, “হুম হয়েছে।”
নুহাশ ব্যাগটা শারাফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “নে ধর।”
শারাফ ব্যাগটা নিতে নিতে বলে, “কি এটা?”
“তোর শার্ট।”
“যাক তাহলে তোর এত বছর পর মনে পড়ল আমার শার্টটা ফিরিয়ে দিতে।”
“তোর ওই শার্টটা কবেই পা মুছার কাপড় বানিয়, আগুনে পুড়ে সেই ছাই বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছি আমি।”
শারাফ অবিশ্বাস্য গলায় চোখ বড় বড় করে বলে, “তু…. তুই আমার শার্টটা দিয়ে এসব অকাজ করেছিস নু্হাশ পল্লী।”
নুহাশ বিরক্তি গলায় বলে, “তোর পাঁচ বছর আগের শার্টের জন্য এত ডং না ধরলেও চলবে। এমন অনেক শার্ট আমি তোকে দিয়ে রেখেছি।”
শারাফ ডং করে বলে, “ওই তুই কি আমাকে খোঁটা দিচ্ছিস এর জন্য? থাক তোর সব শার্ট আমি ফিরিয়ে দিব খুব তাড়াতাড়ি। তারপরও তোর খোঁটা শুনতে আমি রাজি নই।”
নুহাশ ক্লান্ত গলায় বলে, “আমি তোর এই ডং আর নিতে পারছি না আমি গেলাম।”
“তাহলে এই ব্যাগের ভেতরে কোন শার্ট আছে?”
নুহাশ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “লিজা নামের মেয়েটি শার্টটা পাঠিয়েছে আপনার জন্য।”
শারাফ থমকে যায় লিজার নামটা শুনে। নুহাশ শারাফকে পরখ করে বলে, “কি মনে লাড্ডু ফুটছে নাকি আপনার?”
“এই নুহাশ তুই যা তো এখান থেকে বেশি কথা না বলে।”
“হুম যাচ্ছি। আমি তোর এই থানায় থাকতে আসি নি।”
নুহাশ চলে যায়। শারাফ ব্যাগ থেকে শার্টটা বের করতেই একটা চিঠি পায়। শারাফ চিঠির ভাঁজ খুলে চিঠিটা পড়তে শুরু করে।
“এই যে মিস্টার খারাফ নাকি শারাফ মির্জা! শুনলাম আপনি নাকি এসআই। তো মিস্টার এসআই সাহেব শুনন আপনার শার্টটা আমি ঠিক করে দিয়েছি এখন আর আমার নামে মামলা ঠুকে দিতে হবে না আপনাকে এত কষ্ট করে। এখন এই শার্টটা আপনি আজীবন আপনার গলায় ঝুলিয়ে রেখে বসে থাকেন। ও আরেকটা কথা লিপস্টিকের দাগটা তুলতে পারি নাই তাই সেই জায়াগতে সুন্দর করে একটা সুতার কারুকাজ করে দিয়েছে। আর হ্যাঁ কারুকাজটা দেখে আবার অন্য কিছু ভেবে বসবেন না। আপনারা ছেলেরা তো আবার একটু বেশি বুঝেন। তাই আগে ভাগেই বলে দিলাম কথাটা। আমার মাথায় তখন যা এসেছে তাই করেছি বুঝেছেন। তাই পুনরায় আবারো বলছি সাবধান অন্য কিছু ভাববার চেষ্টাও করিবেন না।”
ইতি
লিজা হক…..
শারাফ তাড়াতাড়ি করে শার্টটা মেলে ধরে চোখের সামনে। লাভ আকৃতির ডিজাইনটা দেখা মাত্রই শারাফের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে মৃদু হাসি। মেয়েটা কি তাকে এভাবে প্রেম নিবেদন করল নাকি? কিন্তু চিঠিতে তো স্পষ্ট বলে দিয়েছে অন্য কিছু না ভাবার জন্য। তাও আবার এক বার নয় দু দু বার লিখেছে কথাটা। হুম লিজা বললেই হল শারাফ যা খুশি তাই ভাবতে পারে। শারাফের ভাবনাটা একান্তই নিজের। এখানে লিজা নাক গলানোর কে?
#চলবে_________