মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৫৩

1
937

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৫৩

___________________

” আমার মনে হচ্ছে ওরা আশেপাশেই কোথাও আছে, সাবধানে ”

আরুহীর কথা শুনে মিরাজ খানিকটা সময় ভাবলো, দ্রুত পায়ে এগুলো আরুহীর সামনে। আরুহী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকিয়ে ই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আশ্চর্য জনক হলেও এখন পর্যন্ত মিস্টার তালুকদার আর রাজন চন্দ্রের দেখা সে পায় নি!

আরুহী রুম থেকে বের হয়ে সামনে ডান দিক বরাবর এগুলো , লম্বা বারান্দার রেলিং ঘেঁষে হেটে চলছে সে আর মিরাজ। পিছনে পদশব্দ ভারী মনে হলো তার। আরুহী হাঁটতে হাঁটতে ই কান খাড়া করে রাখলো, হুট করেই কোথ থেকে একটা ধারালো ছুরি পাশ ঘেঁষে গেলো আরুহীর বাম বাহুর। আচমকা হওয়াই আরুহী হকচকিয়ে উঠলো। সামন্য আচর লেগেছে।

মিরাজ পাশে থাকায় ব্যাপার টা বুঝতে তার বেশ দেরি হয়েছে। মিরাজ চমকে উঠে আরুহীর হাত চেপে ধরলো,

” ইসসস কত খানি কেটে গেছে! ”

” সামান্য ”

” আরুহী সামনে আগাস না বোন, ওরা ভয়ানক, ভীষণ ভয়ানক। তোকে মেরে ফেলবে, তুই যাস না, চল তোকে বাড়ি তে পৌঁছে দিই ”

আরুহী বাহু চেপে ধরে ই হাসলো,

” ৮০% কাজ তো শেষ ই বাকি ২০% না শেষ করতে পারলে মরলেও যে আফসোস থেকে যাবে ”

” তবুও বেশি রিস্কি ”

আরুহী জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

” এতো চিন্তা করো না, একটু পানি নিয়ে আসো ”

মিরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে গেলো পানি আনতে। আরুহী ভালো করে ই জানে মিরাজের কোন ক্ষতি তারা করবে না।

আরুহী হেটে নিচের বিশাল হলরুমে প্রবেশ করলো। বিশাল বড় হলরুমের মাঝ দিয়ে আবার দোতলা উঠার সিড়ি। আলিশান প্রাসাদের মতো। আরুহীর প্রবেশ করার সাথে সাথে ই হলরুমের ঠিক তিনটি দরজা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো সাথে বন্ধ হলো হলরুমের বাতি কিন্তু আরুহী একটুও চমকালো না। যেনো এটা হওয়ার ই ছিলো না হলেই বরংচ আরুহী অবাক হতো!

আরুহী বাঁকা হেসে সামনে এগুলো, সিড়ির উপর পা তুলে আপাতত বসলো। যা হবে তা দেখায় যাবে।

প্রায় মিনিট দুয়েক পরেই দরজা গুলো খুলে গেলো সাথে সকল বাতিও জ্বলে উঠলো। আরুহী স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকালো মেইন দরজার দিকে।

একে একে প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ জন বডিগার্ড সমেত হলরুমে ঢুকলো মিস্টার তালুকদার আর রাজন চন্দ্র।

আরুহী বাঁকা হেসে গলা উচিয়ে লম্বা সালাম দিলো,

” আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহ মিস্টার তালুকদার! আর আদাব রাজন চন্দ্র ”

আরুহীর নির্ভিক কন্ঠ শুনতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো মিস্টার তালুকদার। খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,

” তাহলে এখানে ও চলে এসেছো! আমার ছেলেকে তো মে-রে গু*ম করে রেখেছো আবার কি চাও! ”

আরুহী বাঁকা হেসে বাম হাত দিয়ে ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে বলল,

” কথাটা যে পুরোপুরি ঠিক না মিস্টার তালুকদার! আপনার ছেলেকে মে’রে গুম করিনি

কিছু টা থেমে মুখভঙ্গি স্বাভাবিক করে বলল,

গুম করে মেরেছি ”

মিস্টার তালুকদার বেজায় চটে গেলো রাগে ফুপাতে ফুপাতে বলল,

” খুন করে এসে আমার বড়ো বড়ো লেকচার ছাড়ছো! তোমাকে তো আমি চৌদ্দ শিকের ভাত খাইয়ে ছাড়বো ”

আরুহী বেশ শব্দ করে হাসলো,

” এই জন্মে বোধ হয় আপনার এই আশা পূরন হবে না তালুকদার সাহেব! এই আরুহী চৌধুরীর নামে কোন কেস ই থানায় উঠবে না, আমার নামে ডাইরি করতে গেলে বেচারা পুলিশ দের চাকরি নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হবে। কে চায় বলুন অযথা ঝামেলা করতে ”

আরুহীর কথা শুনে তালুকদার শব্দ করে হাসলো,

” তোমাকে যে পুলিশের ভয় দেখিয়ে বিন্দু মাত্র লাভ হবে না সেটা আমি জানি। তোমার কি মনে হয় আরুহী চৌধুরী এখন এখান থেকে তুমি বেঁচে ফিরতে পারবে? রাজন চন্দ্র যে তোমাকে এই ঠিকানা দিয়েছে সেটাও আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী, তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না? “.

বলেই তালুকদার শব্দ করে হাসতে লাগলো। আরুহী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

” প্ল্যান?”

” হ্যা তো প্ল্যান। তুমি কি ভাবছো আমরা কিছু ই জানি না? তোমার উপর রাগ তো আমার সেই দিন থেকে যেদিন তুমি আমার সকল ব্যবসায় একে একে আঘাত করছিলে। প্রথমে ড্রা*গ পাচার আর আমদানি, জাল ঔষধ তৈরি, ওগুলোতে সিল মারা। তারপর আক্রমণ করলে মা*দক আমদানি তে, আবার নারী পা*চারের পিছনে লেগেছো। এমনি এমনি ছেড়ে দেবো নাকি তোমাকে? আমার এই কাজে যে বাঁধা হয়ে দাড়ায় তাকেই চিরতরে শেষ করে দেই, যেখানে আমার বাপ ই রেহায় পায় নি সেখানে তুৃমি তো চুনোপুঁটি মাত্র ”

কথাটা বলেই বিশ্রি ভাবে হাসতে লাগলো। আরুহীর ঘৃণায় শরীর রি রি করছে। এতোটা খারাপ আর নি*কৃষ্ট মানুষ কি করে হতে পারে! নিজের জন্মদাতা পিতাকে ও ছাড়েনি এই প*শু।

আরুহী বসা থেকে উঠতে উঠতে মুখ ভঙ্গি স্বাভাবিক করলো, মিস্টার তালুকদার এর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলল,

” আমি তো আমার কথা মোটেও চিন্তা করছি না তালুকদার সাহেব। বরং আপনার কথা চিন্তা করছি, আজ আপনার কি হবে? আদৌও কি বেঁচে ফিরতে পারবেন তো? ”

” মানেহ ”

আরুহীর পদচালনা থেমে গেলো তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে বা*কা হেসে তর্জনি দিয়ে ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বলল,

” বিশ্বাস করেন তালুকদার সাহেব আমিও কল্পনা ও করি নি আপনি এতো তাড়াতাড়ি আপনার সমস্ত অ্যাভিডেন্স দিয়ে দেবেন, যাক ভালো ই হলো আমার আর এক্সট্রা পরিশ্রম করতে হলো না, এই জন্য তো আপনার একটা লম্বা ধন্যবাদ পাওনা রইলো ”

আরুহী ঘুরতে ঘুরতে রাজন চন্দ্রের সামনে গেলো,

” আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। আপনার এই খারাপ আর জঘন্য গুনটার জন্য ই আজ আমি প্রবলেম সল্ভের ক্লু পেয়েছি মিস্টার রাজন চন্দ্র। আমি এও জানি আপনি প্রথম দিন আমাকে চিনতে পারেন নি, এটাও জানতেন না যে আমি কে? মিরাজ খান এর সাথে কি সম্পর্ক আমার। শুধু আপনি আমার সঙ্গ চেয়েছিলেন আর এটাকেই হাতিয়ার বানাই আমি। আপনি যখন জানতে পারলেন ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। কিচ্ছু করার নাই ”

কথা গুলো বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে ই বলল আরুহী। এদিকে মিস্টার তালুকদার রাগে ফোস ফোস করতে করতে কোমড়ে থাকা পিস্তল বের করে আরুহীর দিকে তাক করে বলল,

” তোমার খেলা এখানেই শেষ আরুহী চৌধুরী। তোমার জন্য আমার কোটি কোটি টাকা লস। পথে বসতে যাচ্ছি আমি। ”

আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তালুকদার এর দিকে,

” জনগন জানতে পারলে ভাবছেন ছেড়ে দেবে আপনাকে? ”

” জনগণ জানতেই পারবে না ”

আরুহী মাথা নুইয়ে মুচকি হাসলো,

” আর ইউ সিউর? জনগণ কিছু ই জানতে পারবেনা? বাট ইউ আর টোটালি রং! লাইভ চলছে বস! ”

আরুহী পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করে লাইভ অন করলো, পুনরায় ধরলো মিস্টার তালুকদার আর রাজন চন্দ্রের দিকে। মিস্টার তালুকদার বেশ ঘাবড়ে গেলো, এ কথা তিনি কল্পনা তেও আনতে পারেননি। আরুহী ডেঞ্জারাস তিনি জানতেন কিন্তু এতো টা তুখোড় মেধা নিয়ে কাজ করে ঘুনাক্ষরে ও টের পান নি তিনি।

মিস্টার তালুকদার মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে অবিশ্বাস্য চোখে আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” এসব? ”

” আসলে মাথা মোটা মানুষ দিয়ে ব্যবসা হয় না আর সেটা যদি হয় বেআইনি তাহলে তো কথায় ই নেই ”

মিস্টার তালুকদার এর রাগ ঝড়ের বেগে বেড়েই চলেছে তার ইচ্ছে করছে আরুহী কে এখুনি এখানে পুতে ফেলতে। মিস্টার তালুকদার পিস্তল বের করে গুলি করতে যাবে হঠাৎ করে ই তিনি ব্যথায় চিৎকার করে উঠলেন, পিস্তল টা ছিটকে নিচে পড়ে যায় আর তালুকদার আর্তনাত করতে করতে নিচে বসে পড়ে। হাত থেকে গড়িয়ে র*ক্ত পড়ছে। হাতে গুলি লেগেছে। গুলিটা কে করেছে দেখতেই মেইন গেইট এর দিকে তাকালো সবাই।

সুলতান রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আরুহী মুচকি হেসে সুলতান কে ইশারা করতেই সুলতান ভেতরে ঢুকলো।

মিস্টার তালুকদার অবাক দৃষ্টিতে তার বডিগার্ড দের দিকে তাকালো। তার হাতে গুলি লেগেছে অথচ সব গুলা রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে ব্যপার টা সন্দেহ জনক।

মিস্টার তালুকদার তার বডিগার্ড দের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,

” ওই তোর দেখতে পাচ্ছিস না আমার উপর আক্রমন করেছে, তোরা সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? শ্যুট কর”

তবুও বডিগার্ড দের কেন নড়চড় দেখতে না পেয়ে বেশ ঘাবড়ে যায় মিস্টার তালুকদার আর রাজন চন্দ্র। বডিগার্ড কথা শুনছে না কেন!

ততক্ষণে আর্ম ফোর্স পুরো বাংলো ঘেড়াও করে ফেলেছে কিছু সোলজার ভেতরে ঢুকে আরুহী কে স্যালুট করে সামনে তাকালো, রাজন চন্দ্র অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো আরুহীর দিকে সাথে তালুকদার সাহেব ও। তারা বুঝতে পেরেছে বডিগার্ড দের এখন হাজার বললেও তারা তার হয়ে কাজ করবে না, তাদের আরুহী চৌধুরী অনেক আগেই কিনে ফেলেছে।

আরুহী মুচকি হেসে দুজনের সামনে এসে দাড়ালো,

” কি ব্যপার তালুকদার সাহেব! কিছু বুঝতে পারলেন না তো? ”

তালুকদারের মুখ ব্যথায় নীলাভ বর্ন ধারণ করেছে, তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” সব তোমার প্ল্যান তাই তো? ”

আরুহী এবার শব্দ করে ই হাসলো,

” এতোক্ষণে বুঝতে পারলেন নাকি মশাই? আসলে আমি সবসময় ই বলি প্রতিপক্ষকে কখনোই দূর্বল ভাববেন না তাহলে সেই যুদ্ধে হার নিশ্চিত। আর আরেকটা কথা, ঘটে বুদ্ধি থাকলে বিনা র*ক্ত পাতে যুদ্ধ জয় করা যায়! আপনার সকল অ্যাভিডেন্স আমার ফোনে রেকর্ড করা আছে, নিজের মুখেই তো স্বীকার করলেন! ভাববেন না আমি একা রেখেছি, এখন মনে হয় পুরো দেশ বাসী জেনে গেছে আপনার কুকর্ম সম্পর্কে। তাই আইনের থেকে বাঁচতে পারবে না আর না জনগন আপনাকে ছেড়ে দেবে, হ্যাভ এ নাইস ডে তালুকদার সাহেব আর রাজন চন্দ্র ”

বলেই পিছনে ঘুরে চলে আসলো আরুহী। দরজা দিয়ে বের হতে সুলতান বেরিয়ে গেলো আর আরুহী ঠিক তার পিছনে। হঠাৎ পর পর তিনটি গুলির শব্দে পরিবেশ থমকে গেলো এক মুহূর্তে। আরুহী হাত চেপে নিচে বসে পড়লো,

পিছনে থেকে আরুহীকে উদ্দেশ্য করেই মিস্টার তালুকদার পর পর তিনটি গুলি ছুড়েছে, দুটো ডান বাহুতে আর বাকি একটা পিঠের মাঝামাঝি তে।

সাথে সাথে ই দুটো গুলির শব্দে পরিবেশ আরোও নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। পরবর্তী গুলি দুটো তালুকদার কে উদ্দেশ্য করে ই করা হয়েছে। আরুহী দরজার দিকে তাকালো,

তার মা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে লাইসেন্স করা রিভলবার। মিস্টার তালুকদার রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আরুহীকে লাগাতার গুলি ছুড়তে চাইছিলো কিন্তু তিনটা গুলি করার পর আয়াতের পাল্টা গুলিতে হাত থেকে রিভলবার পুনরায় ছিটকে পড়ে তার।

হাত থেকে লাল রঙের রক্তে ভেসে যাচ্ছে পাথরের তৈরি মেজে। ব্যথায় চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে আসছে আরুহীর । হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঝাপসা চোখেই একবার দেখে নিলো, আয়াত আর আরুশ দৌড়ে এদিকেই আসছে,,

” আরু ডোন্ট ক্লোজ ইউর আইজ, প্লিজ ডোন্ট! ”

আরুহীকে কোলে তুলে দৌড়ে বেরিয়ে এলো আরুশ। মিরাজ আগে থেকে ই গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা ছিলো। সামনের সিট দখল করলো আয়াত আর পিছনে আরুহীর মাথা কোলে নিয়ে বসলো আরুশ।

” আরু এতো টা স্বার্থপর হোস না বউ! আমি কি নিয়ে থাকবো তোকে ছাড়া? ভালোবাসি তো বউ! ”

আরুহী ঝাপ্সা চোখেই দেখলো আরুশকে, রক্তে রঞ্জিত হাত দিয়ে আরুশের গালে ধরে মুচকি হেসে ধীর কন্ঠে থেমে থেমে বলল,

” পরের জনমে আমি না হয় ফুল হয়ে জন্ম নিবো, তুমি আমাকে পরম যত্নে তুলে নিয়ে বুক পকেটে রেখে দিও কেমন? ”

চলবে…

[ আজকের পর্বটা কেমন হ’য়েছে কমেন্টে জানাবেন কিন্তু ]

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here