#আমার_তুমি
#পর্ব_২৮ [অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
সন্ধ্যা ছয় টার বেশি সময় বাজে। সাদনান আর রাহান বেড়িয়ে এলো একটা ভবন থেকে। সেখানে আজ একটা মিটিং ছিল কয়েকজন বড় বড় নেতা ছিল।
সাদনান রাহান দু’জনেই গাড়িতে উঠে বসে। রাহান আজ বাড়ি চলে যাবে। আজ চার দিন ধরে বাড়ি যাওয়া নেই রাহান এর মা আজ ফোন দিয়ে কান্না কাটি করেছে বাড়ি যেতে বলেছে।এক ছেলে তার ভীষণ আদরের আর এক মেয়ে তাকেও কাছে পায় না। সেই ইতালি পারি জমিয়েছে আজ বছর পাঁচ বছর হতে চলে। বলেছে এই বছর দে-শে ফিরে আসার কথা এখন বাকি টা আসলে বলা যাবে।
সাদনান নিজের বাড়ির সামনে নেমে গেলো আর ড্রাইভার কে বলল রাহান কে বাড়ি পৌঁছে দিতে।
সাদনান গেইট দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে জাফর মির্জা ফোনে কথা বলছে বাগানে দাঁড়িয়ে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো দাদার দিকে।
-“হ্যাঁ, হ্যাঁ।
আপনি চিন্তা করবেন না আমি বাড়িতে আজ রাতেই এই বিষয়ে কথা বলবো।”
-“আচ্ছা আচ্ছা।
আপনি চিন্তা করবেন না।
আচ্ছা তাহলে রাখি।”
জাফর মির্জা কথা শেষ ফোন কেটে পেছন ফিরতেই দেখে সাদনান ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি কিছু বলবে তার আগেই সাদনান বলল
-“সরি দাদু।
কারোর কথা লুকিয়ে শোনা ঠিক না কিন্তু আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই না চাইতেও কথা গুলো আমার কানে গেলো।”
-“ইট’স ওকে দাদু ভাই।
এমনিতেও আমি তোমার সাথে এই ব্যাপারে আজ কথা বলতাম।ওয়াসিফ দেওয়ান ছিল কলে।”
জাফর মির্জা হেঁসে সাদনান এর কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলল।
সাদনান বাড়ির সদর দরজায় এসে থামলো।
ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানালো
-“দাদু আমি ভীষণ ক্লান্ত।
ফ্রেশ হয়ে রাতে কথা বলি।”
-“হুম।
তবে তোমার সাক্ষাৎ কেমন ছিল নেতাদের সাথে?”
-“যেমন টা তুমি আশা করেছিলে।
ওরা ওদের মতো বুঝালো।আমার মতে অফার।”
-“বুঝতে পারছি।
কিন্তু তুমি তোমার মতো করে এগিয়ে যাও।
আর গাড়ির জিপি নেওয়ার ব্যাপার টা কি আগের ঘোষণা থাকবে?”
-“হ্যাঁ দাদু এটা তুমি জানিয়ে দিয়েও।”
সাদনান এর কথা জাফর মির্জা সম্মতি দিলো। আর সাদনান নিজের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
নমিনেশন পাওয়ার পর সাদনান ভোট হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো ড্রাইভার থেকে টাকা নিতে না করেছে। এতে ড্রাইভাররা ভীষণ খুশি। তার কারণ রোজ ইনকাম হয় কতো একজন ড্রাইভার এর?তার মধ্যে যদি চাঁদা দিতে হয় তো তাদের থাকে কি?
এটা নিয়ে আগের এমপির কাছে অনেক বার দরখাস্ত করেও কোনো লাভ হয় নি।আর সাদনান নমিনেশন পাওয়ার পর পর সেটা উঠিয়ে দিয়েছে। বলা যেতে পারে ড্রাইভার আর ফুটপাতে দোকানদার সাথে গরিব মানুষের জন্য আজ সাদনান এখানে।
সাদনান রুমে এসে ঘড়ি খোলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।
প্রিয়তা রুমে নেই নিশ্চয়ই রান্না ঘরে না কারণ রান্না ঘরে থাকলে দেখতে পেতো রান্না ঘরে কাজের লোক আর সুফিয়া বেগম ছিল।প্রিয়তা হয়তো দাদির ঘরে নয়তো সারা, মাইশার সাথে।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবি খোলে ফোন হাতে মাইশা কে মেসেজ দেয়।
অতঃপর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
প্রিয়তা মাইশার পাশে শুয়ে ছিল আর ওর ওপাশে সারা।
ওরা গল্প করেছিল এর মধ্যে হঠাৎ মাইশা প্রিয়তা কে বলল
-“ভাইয়া এসছে তুমি রুমে যাও।”
প্রিয়তা একটু লজ্জা পেলে তবে সেটা ধামাচাপা দিয়ে মাইশা কে বলল
-“তোমাকে কত বার বলেছি?
আমাকে আগের মতো তুই করে বলবে।”
-“আরে বাবা ঝগড়া পরে করিস।
এখন রুমে যা।”
মাইশা কথা টা বলতে বলতে প্রিয়তা কে শোয়া থেকে উঠিয়ে রুম থেকে বেড় করে দিলো সাথে সারাও সাহায্য করে।
প্রিয়তা রুমে এসে কাউ কে দেখতে পায় না। কিন্তু সোফায় সাদনান এর পাঞ্জাবি দেখে বুঝতে পারে সাদনান সত্যি এসছে।
প্রিয়তা এগিয়ে সেটা হাতে নিয়ে শ্বাস টেনে নেয়।
অতঃপর সেটা ভাজ করে রাখে।
সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে প্রিয়তা কে দেখলো দরজা বুয়ার হাত থেকে কফির মগ নিচ্ছে।
সাদনান শুধু একটা টাওয়াল পড়ে আছে আর এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত দিয়ে মাথার চুল ঝাঁকিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে সাদনান এর হাতে কফির মগ টা দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ফিরে এলো হাতে আরেক টা টাওয়াল নিয়ে।
সাদনান ততক্ষণে সোফায় বসে আছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে সাদনান এর পেছনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছতে লাগলো।
সাদনান একবার আঁড়চোখে পেছনে তাকিয়ে আদেশের স্বরে বলল
-“সামনে দিয়ে এসো।”
প্রিয়তা শুনলো বাধ্য মেয়ের মতো সামনে দিয়ে এলো।
সাদনান প্রিয়তা কে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
গলায় মুখ গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল।
সাদনান বিরক্ত হলো।
ভ্রু কুঁচকে বলল
-“খাবার শেষ তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসবে।
মনে থাকবে?”
প্রিয়তা মাথা নাড়ে।আবারও চুল মুছতে শুরু করে। সাদনান কফি শেষ উঠিয়ে গিয়ে একটা ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট নিয়ে পড়ে নিলো।
প্রিয়তা ততক্ষণে নিচে চলে গিয়েছে।
সাদনানও কাপড় পড়ে নিচে চলে আসে। লিভিং রুমে সবাই বসে আছে। রাহাত, মফিজুর মির্জাও আছে হয়তো তার আসার পর পরই ওনারাও এসছে।
সাদনান সহ এসে দাদার পাশে বসে পড়ে। সবাই টুকটাক সাদনান এর আজকের ঘটনা জিজ্ঞেস করছে কেমন কাটলো দিন সাথে খুব সাবধানের সহিত থাকতে হবে এটা সেটা বাপ, চাচা, দাদা সবাই উপদেশ দিচ্ছে।যদিও সাদনান এর জ্ঞান সম্পর্কে তারা অবগত তবুও বড় হিসেবে তাদেরও কিছু উপদেশ দিতে হয়।
তাদের কথার মাঝেই জাফর মির্জা ওয়াসিফ দেওয়ান এর বলা কথা জানায়।তিনি মাইশা কে ওনার ছেলের জন্য চান। মাইশা সারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আম্বিয়া মির্জার পেছনে কথা টা শোনা মাত্রই মাইশা সারা হাত চেপে ধরে।
সারা আশ্বাস দেয়।ইশারায় বোঝায় ভাইয়া আছে তো।কিন্তু সারা হয়তো জানেই না এই পরিস্থিতি টা ঘুরে-ফিরে ওর উপর আসবে।
এ-র মধ্যেই মফিজুর মির্জা সাদনান এর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো
-“কিন্তু শফিক ভাই তো আয়ানের জন্য বলে ছিল।”
-“কথা দিয়ে ফেলেছো?”
-“তেমন না দাদু ওনি অনেক আগেই আবদার করেছে।
তাই আর কি।”
সাদনান ফোড়ন কেটে বলে উঠে।
জাফর মির্জা একবার সারার দিকে তাকালো।এর মধ্যে
খাবার এর জন্য ডাক পরে তাই সবাই চলে যায় শুধু সাদনান মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা বসে আছে জাফর মির্জা কিছু বলবে সেই আশায়।
-“আমি ওয়াসিফ দেওয়ান এর সাথে কথা বলবো।”
সবাই সায় জানালো।অতঃপর তারাও ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো। জাফর মির্জা ভাবছে সারার জন্য বলবে।যদি রাজি হয়।সমন্ধ টা ভালো হাত ছাড়া করা যাবে না। তবে তার মন বলছে রাজি হবে কারণ মাইশার থেকে সারার একটু লম্বা সাথে চেয়ার ভালো তবে মাইশার থেকে গায়ের রঙ টা সামান্য কালচে।
————
সাদনান ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। প্রিয়তা তখন রুমে এলো আজ কফি আনে নি মুলত সাদনান নিজেই না করেছে আনতে।
প্রিয়তা রুমে এসে সাদনান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো। সাদনান নিজেও তাকালো।
প্রিয়তা ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে সাদনান বলল
-“চলো।”
-“কোথায় যাব?”
-“আহ চলই না।”
সাদনান প্রিয়তার গায়ে একটা চাদরে জড়িয়ে দিয়ে হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
লিভিং রুম তখন একদম ফাঁকা। রাত দশ টা বাজতে চলে সবাই যার যার রুমে।
রান্না ঘরে একজন বুয়া ছিল। সাদনান ওনাকে ডেকে বলল ঘুমিয়ে পড়তে ওরা এক্সট্রা চাবি দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে।
অতঃপর ওরা বেড়িয়ে পড়ে।
সাদনান দারোয়ান এর হাতে গাড়ির চাবি দিলো এতে প্রিয়তার মন টা একটু খারাপ হলো।
সাদনান বউয়ের মন খারাপ এর কারণ বুঝতে পারে।কিন্তু পাত্তা দেয় না।
এখন সে আর আগের মতো সাধারণ নয়। সে না মানলে এটাই সত্যি সেখানে নিজের সিকিউরিটি ছাড়া বাইক নিয়ে বেরুনো টা মোটেও শোভনীয় নয়।
#চলবে…