প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-২৭

0
227

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২৭
________________
সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে পুরো কক্ষ জুড়ে। রাতের আকাশের জোৎস্না ভরা আলো ছুঁচ্ছে খুব করে। পালঙ্কে চুপচাপ শুয়ে আছে ইমতিয়াজ। তার পাশে রাগান্বিতা বসা। কথা নেই কারো মুখে। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের ক্ষত স্থানে হাত ছোঁয়ালো। বললো,
“কেন যে আপনি যেতে গেলেন বাহিরে?”

ইমতিয়াজ চুপ সে নির্বিকার ভংগিতে আস্তে করে তার মাথাটা রাগান্বিতার কোলে রাখলো শীতল সুরে বললো,
“মাথায় হাত বুলিয়ে দেও বউ বহুদিন কেউ হাত বুলায় না।”

রাগান্বিতা একটু দোনামনা করলো। বললো,
“আপনার ব্যাথা লাগলে?”
“লাগবে না।”

রাগান্বিতা শুনলো আস্তে আস্তে ইমতিয়াজের চুলগুলোতে বিলি কাটতে লাগলো। ইমতিয়াজ রাগান্বিতার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। খুব আদুরে সুরে বললো,
“একটা গল্প শুনবে বউ?”

রাগান্বিতা তখন শীতল অনুভূতিতে পঞ্চমুখ। চোখ বন্ধ করছিল আচমকাই। ইমতিয়াজের স্পর্শ বরাবরই তাকে ভিন্ন রকম অনুভূতি দেয়। সে চোখ খুললো। বললো,
“জি বলুন,

ইমতিয়াজ তার চোখ বন্ধ করে শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,
“এক দেশে এক রাজা ছিল তার ছিল দুই বউ। বড় বউয়ের কোনো সন্তান ছিল না। সে ছিল একটু বোকা টাইপের যে যা বলতো তাই বিশ্বাস করে নিতো, এক কবিরাজ ছিল সে বলেছিল রানীর দোষেই নাকি রাজা কখনো বাবা হতে পারবে না। রানী ভেঙে পড়ে রাজাকে বললো আরেকটা বিয়ে করতে। রাজা প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে রানীর চাপে পড়ে বিয়ে করেন। নিয়ে আসেন অসম্ভব সুন্দরী এক রানীকে। রানী দেখতে যত সুন্দর ছিল মনটা ছিল তার চেয়েও বিষে ভরা। পরে জানা যায় কবিরাজের মেয়েই ছিল রাজার দ্বিতীয় রানী। রাজা বুঝতে পারে নি দ্বিতীয় রানীর ভিতরে কি চলছে। রাজা বিয়ে করার দু’সপ্তাহের পরই জানা গেল রাজার প্রথম স্ত্রী মা হতে চলেছেন। রাজপ্রাসাদ জুড়ে সে কি উৎসব। মাতামাতি, রাজা তো খুব খুশি। রাজা রানীকে বোঝালেন তুমি খামোখায় আমায় আরেকটা বিয়ে করালে। কিন্তু রানীর কোনো আফসোস ছিল না এতে সে রাজার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসতেন। কিন্তু রাজার দ্বিতীয় রানী সেভাবে বাসতে পারলেন না। রানীর এত আনন্দ সে দেখতে পারতো না। কিভাবে রাজার সন্তান সম্ভবা বউকে মেরে ফেলবে সেই ফন্দি আটতো। কিন্তু সফল হতে পারলো না একবারও। দেখতে দেখতে রাজার প্রথম রানীর সন্তান হলো একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান। সবাই বলতে লাগলো ছেলে নাকি হুবহু রাজার মতো দেখতে হয়েছে। এ কথা শুনে রাজার দ্বিতীয় রানী ক্রোধে ফেটে গেল রাজপ্রাসাদের এত সুখ তাও আবার রাজার প্রথম রানীকে নিয়ে তার সহ্য হলো না। ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক হলো ক্ষিপ্ত। সে ফন্দি আটলো রানীর খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলবে। তার সন্তানকে গলা চেপে মেরে ফেলার ফন্দি আটলো। কিন্তু তাতেও অসফল হলো। তখন রাজাকে বোঝালো রানীর সন্তান তার নয় অন্যকারো। সে নাকি প্রায়শই রাজার প্রথম স্ত্রীকে রাতের আধারে বাহিরে যেতে দেখতো। প্রথম প্রথম এ কথা রাজা বিশ্বাস না করলেও পরে সত্যি সত্যিই একদিন রাতের আধারে প্রথম রানীকে বাহিরে যেতে দেখে রাজা ক্ষিপ্ত হলো। প্রথম রানীকে তিনি ভালোবাসতেন খুব কিন্তু কথায় বলে না,“সব সম্পর্কেই তৃতীয় ব্যক্তিটি খুব ভাগ্যবান হয়। এখানেও তাই হলো।”

ইমতিয়াজের গলা আঁটকে আসলো। রাগান্বিতা নিশ্চুপে প্রশ্ন করলো,
“তারপর কি হলো?”
“রানীকে নির্যাতন করা শুরু করলো তার ওতটুকু সন্তানকেও ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলো রাজা। বিষ খাওয়ার ফন্দি করার কথা বললে রাজা রাজি হয় না। বলে এভাবে মেরে দিলে তার নাকি শরীরের জ্বালা মিটবে না। রাজা প্রায়শই প্রথম রানীর সাথে ঝগড়া করে। রানী এত বলে সে রাতে কারো সাথে দেখা করে নি তাও রাজা বিশ্বাস করে না। সেদিন রাতে তাদেরই কাজের লোক মজনু নামের এক লোকের সাথে দেখা করে সে বলে তার মা খুব অসুস্থ তাকে যেতে হবে রানী বিশ্বাস করে কিছু পয়সা কড়ি গুজে খানিকটা এগিয়ে দেয় তখনই রাজা দেখে। পরে মজনুকে ডাকা হলে উল্টো কথা বলে,প্রথম রানীর নামে আগে বসে যায় চরিত্রহীনের দাগ। রানীকে করা হলো এক ঘরে। রানী ধরতে গেলে এতিম ছিল বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করে ছিল রাজাকে। রানীর বাবা এটা মেনে না নিয়ে ত্যাগ করলো তার কন্যাকে। তাই কোথাও যাওয়ার মতো জায়গা ছিল না। রাজপ্রাসাদেই পড়ে রইলো সন্তানকে নিয়ে।

সময়ের সাথে সাথে ছেলে বড় হয়। কিন্তু রানীর প্রতি অত্যাচার কমলো না। রানীকে অর্ধনগ্ন করে মারতো তারই ছেলের সামনে। এত জ্বালা রানী আর সহ্য করতে পারলো না সে ছেলের মায়া ত্যাগ করে বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করলো। ছেলে কাঁদলো তার জন্য কিন্তু রাজা সে যেন খুব খুশি হলো। এরপর শুরু হলো রানীর সন্তানের উপর অত্যাচার। রাজা আর রাজার দ্বিতীয় রানী দুজন মিলে মারতো, ঠিক মতো খেতেও দিতো না,কনকনে শীতেও খালি গায়ে শুয়ে কাঁপতো ছেলে। সে যে কি যন্ত্রনার বলে বোঝানো যাবে না। তাও সহ্য করতো। এতিম ছেলে কোথায় যাবে তাই কষ্ট সহ্য করেই রাজপ্রাসাদে পড়ে থাকতো। বাবা থাকতেও তার অধিকার ছিল না তাকে বাবা ডাকার। রাজার ছেলে মেনে নিলো। এরই মধ্যে রাজার দ্বিতীয় রানীর মেয়ে সন্তান হলো। সবাই খুশি হলো। রাজা দিনরাত পার করে সেই সন্তানের সেবা করতো। আর ছেলে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতো। ভাবতো তাকেও কবে তার বাবা এভাবে আদর করবে কিন্তু করতো না। তারপর ছেলে একদিন সিদ্ধান্ত নিলো সে আর রাজার প্রাসাদে থাকবে না তাই পালিয়ে আসলো ওখান থেকে। শুরু করলো নতুন জীবন। একার জীবন। একার জীবন খুব সুখের হয় তাই না বউ?”

রাগান্বিতার চোখ ভেসে উঠলো। দু’ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো ইমতিয়াজের গালে। ইমতিয়াজ বুঝলো সে রাগান্বিতাকে ছেড়ে চাইলো রাগান্বিতার মুখের দিকে। বললো,
“তুমি কাঁদছো?”

রাগান্বিতা নির্বিকার স্বরে বললো,
“রাজার ছেলেটা আপনি ছিলেন তাই না?”

ইমতিয়াজ জবাব দেয় না। তবে রাগান্বিতা ইমতিয়াজের চোখ দেখেই বুঝলো সবটা। যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইমতিয়াজকে। চোখে মুখে ঠোঁট ছোঁয়ালো বারংবার। বললো,
“জীবন খুব ব্যাথা দিয়েছে আপনায় তাই না।”

ইমতিয়াজ মৃদু হাসলো। বললো,
“মাত্র যে তুমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে এতবার ভালোবাসার পরশ দিলে এতেই সব ব্যাথা কমে গেছে আমার।”

রাগান্বিতা তার চোখের পানি মুছলো। ছলছল নয়নে বললো,
“আপনায় আর কোনোদিন ব্যাথা পেতে দিবো না আমি। দেখবেন আমরা এখন থেকে খুব সুখে থাকবো। গুছিয়ে একটা সুন্দর সংসার গড়বো।”

ইমতিয়াজ কিছু বলে না। সে থাকে চুপচাপ। চেয়ে চেয়ে দেখে শুধু রাগান্বিতার পাগলামি, বার বার পলক ফেলার মুহুর্তটা। হঠাৎই রাগান্বিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ইমতিয়াজ,
“এই যে আমি প্রতিনিয়ত তোমায় দেখছি, তোমাতে হারিয়ে যাচ্ছি, অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে ,নিজের সর্বনাশ দেখতে পাচ্ছি এটাকে কি প্রেম বলে না।”

রাগান্বিতা থমকে গেল। ইমতিয়াজ কি তার প্রেমে পড়ার কথা বললো। রাগান্বিতা কোনো প্রশ্ন করলো না। ইমতিয়াজ আবার বললো,
“আমি ভেবেছিলাম তোমায় ভালোবাসবো না কিন্তু আজ দেখছি তোমায় ভালো না বেসে থাকা যাবে না।”

রাগান্বিতা লাজুক হাসলো। নতুন করে আবার যেন প্রেমে পড়লো ইমতিয়াজের। লোকটা ভাড়ি বদমাশ। তাকে লজ্জায় না ফেলে ছাড়বে না। ইমতিয়াজ আর একটু লজ্জা দিতে বললো রাগান্বিতাকে,
“তোমাকে লজ্জায় পড়তে দেখলে না আরো দারুণ লাগে বউ।”
“আপনি এবার থামুন তো।”
“না থামবো না কাছে আসো চুমু দিবো।”

খানিকটা কেঁপে উঠলো রাগান্বিতা। বললো,
“না লাগবে না।”

ইমতিয়াজ চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
“বারে তুমি যদি আমায় হুটহাট চুমু দিতে পারো আমি দিলে লাগবে না কেন?”

রাগান্বিতা কিছু বলে না। সে চুপ করে থাকে। লোকটা বুঝি আজ লজ্জায় ফেলেই মেরে ফেলার ফন্দি আটছে। ইমতিয়াজ হাসলো। মনে মনে আওড়ালো,“তোমার লাজুক মুখে এত বেশি মায়া কেন বউ, আমি বুঝি সত্যি সত্যিই পিছলে গেলাম। মরণ দুয়ারে বোধহয় পা বাড়ালাম।”
—–
ফজরের ধ্বনি শোনা গেল রাগান্বিতা আস্তে করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ইমতিয়াজকে উঠাবে ভেবেও আবার উঠালো না। রাগান্বিতা কক্ষ থেকে বের হলো, সোজা চলে গেল কলপাড়ে সেখানে দাদিমাও ছিলেন। বাবা আর রেজওয়ান বেরিয়ে গেলে মসজিদের উদ্দেশ্যে।

রাগান্বিতা ওজু করে নামাজ আদায় করলো। ইমতিয়াজের জন্য দু’হাত তুলে দোয়া চাইলো আল্লাহর দরবারে। ইমতিয়াজ তখনও ঘুমিয়ে ছিল মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে তার। রাগান্বিতা কি ভেবে যেন নামাজ সেরে আবার কক্ষ থেকে বের হলো। সে সোজা চলে গেল কুহুর কক্ষে। রাগান্বিতা আর কুহুর কক্ষ ছিল আলাদা। রাগান্বিতার কেন যেন মনে হলো কুহুর কক্ষে গেলে সে জানতে পারবে কুহুর কার সাথে সম্পর্ক ছিল। কুহু ডাইরি লিখতে খুব ভালোবাসতো কে জানে হয়তো ডাইরির ভাঁজেই পেতে পারে কুহুর কিছু অজানা তথ্য।

#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here