যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_১৬_বর্ধিত_অংশ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
308

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_১৬_বর্ধিত_অংশ
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

বিনা সমুদ্রর বুকে মাথা রেখে চুপ করে রইলো। সমুদ্র বিনার মাথায় ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিনার ভীষণ ভালো লাগছে। লোকটা যে তাকে এতটা ভালোবাসবে কখনো ভাবতে পারেনি বিনা। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো মেয়েটা।

শুক্রবার, বাদ আসরের নামাজের পর আবারও মল্লিক বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনো সাজসজ্জা নেই, নেই কোনো সানাইবাদক কিংবা সানাইয়ের সুর। কন্ঠদের বসার ঘরে বসেই ঘরোয়াআসরে বিয়ে সমাপ্ত হলো কন্ঠ ও ইফতির। শারমিন সুলতানা মেয়ের বিয়ে দিতে পেরে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। একেবারে সাদামাটা করে বিয়ে হলেও বিয়েতে মিষ্টি না থাকলে তো চলে না! সমুদ্র মিষ্টি বিতরণ করে এসেছে আশেপাশে প্রতিবেশীদের। আসলে এটা ঠিক মিষ্টি ছিল না। কন্ঠকে নিয়ে যারা নানাবিধ কথাবার্তা বলতো তাদের দেখানোর জন্য সমুদ্র ইচ্ছে করে মিষ্টির সাথে দু’টো কথাও শুনিয়ে দিয়েছে। ইফতির কেমন জানি ঘোরের মতো লাগছে। ভালোবাসার মানুষটাকে এতো সহজে নিজের করে পেয়েছে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে তার। অবশ্য মানুষ পাওয়া কী এতো সহজ? এই প্রশ্নের উত্তর ভেবে ভেবে ইফতি দিশেহারা!
” আম্মা মুরগির মাংসের বিরিয়ানি রান্না করা শেষ হয়েছে। আপনি একবার দেখে নিবেন সব ঠিকঠাক আছে কি-না। ”
বিনা শাড়ির আঁচলে হাত মুছে বললো। চুলোয় এখনো অন্য তরকারি রন্ধন হচ্ছে। বিয়েটা যেরকম করেই হোক ইফতির কলেজের প্রফেসর আর একজন সহকর্মী এসেছে বিয়েতে। তাদের তো না খাইয়ে ফিরতে দেওয়া যায় না। সমুদ্রর জোরাজোরিতে বিরিয়ানি রান্না করতে বলেছিলেন ইফতির মা শায়লা মল্লিক। শায়লা মল্লিক পোলাও এর পাতিল চুলো থেকে নামিয়ে পাশে রেখে বিনার দিকে দৃষ্টিপাত করলো।
” সবকিছু ঠিকই লাগছে। তুমি বরং ভাত কতদূর হলো দেখো। মাংশের তরকারি আর ভাত হয়ে গেলে রান্নাবান্না শেষ হবে। আমি তরকারি দেখছি।”
” ঠিক আছে আম্মা।”
বিনা ভাতের চামচ দিয়ে নেড়ে কয়েকটা ভাত চামচে তুলে হাতের আঙুল দিয়ে চেপে পরীক্ষা করলো ভাত কতদূর হলো। আর শায়লা তরকারি দেখে আন্দাজ করলেন আর কতক্ষণ সিদ্ধ করতে হবে মাংস।
বিয়ের পরপরই কন্ঠকে ইফতিদের বাসায় নিয়ে এসেছে। শারমিন সুলতানাকেও জোরাজোরি করে নিয়ে এসেছে ইফতি। মেয়ের শ্বশুর বাড়ি এটা যেনো ভুলেও না ভেবে দূরত্ব গড়ে নেয় সেই বিষয়ও কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাহাঙ্গীর মল্লিক। কন্ঠ বসে আছে ইফতির ঘরের বিছানায়। পরনে হালকা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি। মায়ের অনুরোধে ইফতির আনা এই শাড়িটা পরতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু অনুভূতি শূন্য তার। একদিন এই বিয়ে নিয়ে কতো পরিকল্পনা করেছিল প্রহরের সাথে। অথচ মানুষটা কী বাজেভাবেই না ঠকিয়ে অন্য কারো স্বামী হয়ে গেলো। আর মজিদ মল্লিক? ভদ্রলোক কতো স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়ের বিয়ে নিয়ে। মেয়ের বিয়ে দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য উনার ছিল না বলেই হয়তো এভাবে বিয়ের দিনেই গত হয়েছিলেন তিনি।
” কন্ঠ! তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? ”
আকস্মিক সমুদ্রর কথায় ভাবনার ছেদ ঘটলো কন্ঠর। আত্মীয়স্বজন নেই বলে একা একাই বসে ছিল এতক্ষণ।
” না রে। তোর কাজ থাকলে যা না থাকলে বস।”
সমুদ্র বিনার পাশে বসলো শান্ত ভঙ্গিতে। সম্পর্কে ভাবি হলেও ছোটো থেকে চুলোচুলি করে বড়ো হয়েছে দু’জন। আর পরিস্থিতিও স্বাভাবিক না। তাই সময় নিয়ে ভাবি বলে সম্বোধন করবে বলে ঠিক করেছে সমুদ্র।
” আমার আর কী কাজ! ভাবলাম তুই একা একা বসে বোর হচ্ছিস তো কথা বলি।”
” আমি ঠিক আছি। বিনার সাথে সংসার কেমন চলছে? ”
” দারুণ! প্রথম প্রথম ভাবতাম বিয়ে করে জীবনটা বুঝি শেষ হলো। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝলাম সঠিক জীবনসঙ্গী জীবনে কতটা প্রয়োজন। দিনশেষে একটা মানসিক শান্তির আশ্রয়স্থল থাকা কতটা প্রয়োজন। নিজেকে কারো কাছে খুচরো পয়সার মতো জমাতে কতটা সুখ অনুভূত হয় তা বুঝলাম। ”
” যাক আলহামদুলিল্লাহ। এভাবেই আজীবন ভালো থাক তোরা।”
” কন্ঠ!”
” হ্যাঁ বল শুনছি তো।”
“তুইও একটু চেষ্টা কর দেখবি ভাইয়া তোকে ভীষণ ভালো রাখবে। সম্পর্কে এগোতে গেলে দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। পুরোপুরি বলছি না একটুখানি হলেই হয়। দেখিস একদিন গর্ব করে বলবি, ইফতি ভাইয়াকে পেয়ে তুই ভীষণ লাকি।”
” ইফতি ভাইয়া বাইরের কেউ না সমুদ্র। তোকে যেমন ছোটো থেকে চিনি উনাকেও চিনি। তাই মানুষ হিসেবে কেমন সেটা আমিও জানি,বুঝি। আমি সব রকমের দায়িত্ব পালন করবো। ”
সমুদ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সমুদ্র মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। রাত দশটায় সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে। কেবল কন্ঠ আর ইফতি খায়নি। শায়লা শারমিনকে যেভাবেই হোক কিছু খাইয়ে দিয়েছে। জাহাঙ্গীর মল্লিকের কড়া নির্দেশ কন্ঠ এবং তার মায়ের যেনো কোনো অযত্ন না হয়।

” প্রহর আজকে আমার শরীরটা কেমন লাগছে যেনো। তুমি বরং কালকে একবার আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেও।”
বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললো ঐশী। প্রহর টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কাজ করতে ব্যস্ত। সে আরো ব্যস্তসমস্ত ভঙ্গিতে বললো,
” আমার সময় হবে না ঐশী। তুমি বরং একা গিয়ে দেখিয়ে এসো। টাকা দিয়ে যাবো।”
” টাকা দিলেই সব দায়িত্ব শেষ? আমার আর আমার সন্তানের জন্য তোমার কোনো সময় হয় না কেনো?”
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে ঐশী। প্রহর মাথা ঠান্ডা রাখে। অহেতুক ঝামেলা করে তো লাভ নেই।
” জোর করে কাউকে পাওয়া যায় না ঐশী। এখনো কি বুঝলে না?”
” তাহলে তখন অতো পীরিত উতলে উঠেছিল কেনো? তখন আমার সাথে থাকতে বেশ সুখ লেগেছিল এখন সন্তান আসাতে সুখ অসুখে পরিণত হয়েছে। হ্যাঁ ভুল আমারও ছিল। কিন্তু আমি তো তোমার সাথেই সম্পর্কে থাকতে চেয়েছি। আর তুমি? ফাও খেতে এসেছিলে তাই তো?”
” ঐশী ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে। আমাকে কাজ করতে হবে। ”
ঐশী কিছু বলে না আর। এরকম কথা কাটাকাটি প্রায় লেগে থাকে দুজনের মধ্যে। ঐশীর দু-চোখ ছলছল করছে। প্রহরের মতো ছেলেরা না পারে প্রেমিকার বিশ্বাস রাখতে না পারে স্ত্রীকে সম্মান ও ভালোবাসা দিতে। জেদের বশে প্রহরকে বিয়ে করাটাই ছিল ঐশীর জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল।

দরজা খোলার আওয়াজে মাথা উঁচিয়ে তাকালো কন্ঠ। এতক্ষণ হাঁটুতে হাত দিয়ে থুতনি ঠেকিয়ে বসে ছিল। শুয়েও ছিল কিছুক্ষণ। চেনা ঘরটা কেমন একটা বিকেলের মধ্যে অচেনা হয়ে গেলো। সাথে মানুষটার সাথেও সম্পর্ক বদলে গেলো।
” শাড়ি খুলে থ্রিপিস পরে আয়,একসাথে খেয়ে নিবো দু’জন। ”
ইফতি হাতের খাবারের প্লেটটা বিছানার পাশের টেবিলে রাখলো।
” তুমি খেয়ে নাও। আমি খাবো না।”
” না খাওয়ার কারণ? ”
” ক্ষিদে নেই। ”
” কেনো? আমাকে রেখে একা একাই কোর্মা, পোলাও খেলি কখন!”
কন্ঠ চমকাল,থমকাল। এই লোক কীসব বকছে? নেহাৎ মজা করছে না-কি সত্যি বললো। কন্ঠর বিস্ফোরিত দৃষ্টি দেখে ইফতি মুচকি হেসে পাশে এসে বসলো। ফের বললো,
” মজা করেছি। তাড়াতাড়ি পাল্টে আয়। আমার কিন্তু ভীষণ খিদে পেয়েছে। প্লিজ কন্ঠ,প্লিজ!”
একটা মানুষের খিদে পেয়েছে। এরকম করে বললে কি “না” করা যায়? কন্ঠ নিঃশব্দে বিছানা থেকে নামলো। ব্যাগ থেকে একটা কামিজ আরেকটা সালোয়ার বের করে বাথরুমে গেলো পোশাক পাল্টাতে। ইফতি ততক্ষণে খাবারগুলো বিছানায় এনে রাখলো। গুনে গুনে সাত মিনিট পরে কন্ঠ বের হলো বাথরুম থেকে। কিন্তু এই সাত মিনিট অপেক্ষা করা ইফতির জন্য সাত ঘন্টার সমান লাগছিল। কন্ঠ ওড়না দিয়ে চোখমুখ মুছে বিছানার অপরপ্রান্তে বসলো।
” এবার তুমি খাও আমি বসলাম। ”
ইফতি তরকারি দিয়ে ভাত মেখে কন্ঠর মুখের সামনে লোকমা নিয়ে বলে,
” আগে তুই খাবি তারপর আমি। এখন দেখ নিজের সাথে কি আমাকেও না খাইয়ে রাখবি?”
ইফতির জন্য আলাদা পোলাও আর মাংস আর কন্ঠর জন্য ভাত। কন্ঠ আবার তেলযুক্ত খাবার কম খায়। সেই সাথে ভাত তার প্রিয় ভীষণ। কন্ঠ বিপাকে পড়লো। খেতে ইচ্ছে করছে না মোটেই। কিন্তু ইফতিকে না খাইয়ে রাখতেও মন সায় দিল না। অগত্যা ভাত নিলো মুখে। ইফতি ফের মুচকি হাসলো। তারপর নিজেও খেতে শুরু করলো।
চলবে,

সবাই রেসপন্স করবেন আশা করি। দুই দিন পর পরীক্ষা। এজন্য ছোটো করে গল্প আসবে একদিন পর পর। পরীক্ষা গেলে নিয়মিত দিবো ইনশাআল্লাহ।
আগের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=398047302876221&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=400246445989640&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here