প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৬

0
749

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৬

শেখ বাড়ীর ছোট ছেলে আদনান। শান্ত, ভদ্র এক ছেলে। ইন্জিনিয়ারিং শেষ করে ভালো এক পেশায় নিয়োজিত। লম্বা চওড়া সুন্দর ধাঁচের ছেলেটা। আরহামের মা তাকিয়ে আছেন আদনানে’র দিকে। এগিয়ে এসে একটু মাথায় ও হাত বুলিয়ে দিলেন। আদনান ফিচেল হাসলো। ও জানে এই আদরটা ওর মা ওকে করছে না। এই আদর টুকু হলো ওর বড় ভাই আরহামে’র। চেহারা এক হওয়াতে মা মাঝেমধ্যে ই আরহামের কথা মনে পরলে রাত বিরাতে আদনানে’র রুমে ছুটে আসেন। আদনান বুঝে মায়ের মন। কিছুই করার নেই তার। শুধু আদনান কেন কেউ ই কিছু করতে পারবে না। মায়ের হাতটা জড়িয়ে নিজের বুকে রাখে আদনান। অল্প অন্ধকারে দেখে নেয় মায়ের ক্রন্দনরত চেহারাটা। দুই ভাই এর ই জান তাদের মা। আদনানের মা ভাবে নি ছেলে সজাগ। আদনান মায়ের কোলে মাথাটা তুলে দিতেই হু হু করে কেঁদে উঠেন তিনি। আদনান মা’কে থামায় না। কাঁদতে দেয়। কাঁদুক। কাঁদা ভালো। কাঁদলে মন হাল্কা হয়। আদৌ কোনদিন ওর মায়ের মন হালকা হবে কি না জানা নেই। একজন মায়ের কাছে তার প্রথম সন্তান কি তা সেই মা ছাড়া কেউ জানে না। সৃষ্টিকর্তা’র দেয়া প্রথম নেয়ামত বলে কথা।
ধীরে সুস্থে মায়ের কোল থেকে মাথা তুলে আদনান। হাত বাড়িয়ে মুছে দেয় চোখের পানি। অল্প বিস্তর হেসে শুধায়,

— কেন কাঁদছো মা? ভাই ঠিক আছে।

সচকিত নয়নে তাকান তিনি। আদনান বুঝে মায়ের না করা প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর সরুপ ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় তার ললাটে। চোখের পানি বাকিটুকু মুছে দিয়ে বলে,

— জানি না কোথায় আছে কিন্তু এতটুকু বিশ্বাস আছে তার নিজের প্রাণের টুকরো’কে নিয়ে সে খারাপ থাকবে না কখনোই।

দুই হাতে জাপ্টে ধরেন তিনি ছেলেকে। কাঁদতে কাঁদতে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলেন,

— ও..ওকে এনে দে না আদনান। আমার প্রথম সন্তান ও। আমার কলিজার টুকরো’টাকে দেখি না কতবছর।

আদনানে’র গলা ধরে আসে। কান্না পায় তারও কিন্তু কাঁদে না সে। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শুধু বলে,

— আরেকজনের কলিজার টুকরো নিয়ে গিয়েছে সে মা।

— ও পুতুলের খারাপ চায় না।

— চাইলেও কোনদিন ভালো করতে পারবে না মা। কবে না জানি তুঁষে’র লা*শ নিয়ে চৌকাঠে আসে।

ওর মা ঝট করে ছেড়ে দেন আদনান’কে। আদনানে’র ঠোঁটে তখন দেখা মিলছে দুর্বোধ্য হাসি। ওর মা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। আদনান মায়ের হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললো,

— যাও মা। ঘুমাও। ভাই ঠিক আছে। যাও।

নির্বোধের ন্যায় উঠে দাঁড়ায় ওর মা। দুই পা ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে ও যান। পরবর্তী পা ফেলা হলো না। আদনানে’র দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ও কি কখনো ভালো হবে না?

— চিকিৎসক নিজে অসুস্থ হলে তার রোগ সারাবে কে?

ওর মা আর অপেক্ষা করে না। রুম থেকে চলে যান। বালিশে মুখ গুজে দেয় আদনান। বলিষ্ঠ দেহটা কাঁপছে তার ক্ষণে ক্ষণে। কেন সে ভালোবাসা পেলো না? মানুষ তো সুরত দেখে ভালোবাসে। তাহলে তার তুঁষ কেন আটকালো না? আরহাম আর ওর মাঝে চেহারার পার্থক্য টা কোথায়? আদনানে’র মনটা যেন হঠাৎ ই উত্তর দিলো, “ভালোবাসা সুরত দেখে না”।
___________________

নিজের পিঠে ভারী কিছু অণুভব হতেই আরহামের ঘুম কিছুটা ছুটে যায়। তুলতুলে একটা র*ক্তে মাংসে গড়া অস্তিত্ব তার উপর টের পাচ্ছে সে। কোন নড়চড় নেই অস্তিত্বটার মাঝে। আরহাম নিজেই একটু নড়লো। তবুও ওর উপরে থাকা তুলার বস্তাটা নড়লো না। সে ঠাই মে’রে আরহামের পিঠে’র উপর শুয়ে আছে। আরহাম ঘুম জড়ানো কন্ঠে ডাকলো,

— তুঁষ?

ধ্বক করে উঠে তোঁষা’র ছোট্ট বুকটা। এই ডাকটা যেন তার হৃদয় এফারওফার করে দিচ্ছে। আরহাম তোঁষা’র জবাব না পেয়ে পুণরায় বললো,

— কি হয়েছে প্রাণ?

তোঁষা এবারের ও নিশ্চুপ। আরহাম এবার তোঁষা’কে এক হাতে পেঁচিয়ে পল্টি দিয়ে ঘুরলো। অবস্থান পেলো তোঁষা আরহামে’র বুকে। নিজের মুখটা আরহামের মুখের উপর নিয়ে বেজার মুখে বললো,

— বোর হচ্ছি আরহাম ভাই। চলুন না ঘুরতে যাই।

— ঘুরতে যাবি?

— হু।

— কোথায়?

তোঁষা ভাবছে কোথায় যাওয়া যায়। একুল ওকুল ভেবেও গতি যখন পেলো না তখন উৎফু্ল্ল চিত্তে বললো,

— আপনি যেখানে নিবেন সেখানেই যাব।

–যেখানে নিব সেখানেই।

— হ্যাঁ তো। উঠুন না। আমার একা ভালো লাগছে না।

আরহাম নিজের সরু দৃষ্টি ফেলে তোঁষা’কে দেখে যাচ্ছে। এক হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে তোঁষা’র আধ ভেজা চুল। মেয়েটার এই দীর্ঘ কেশ অনেক পছন্দ আরহামে’র। তোঁষা ও অনেক যত্ন করে চুল গুলোর। আরহামের উপর ঝুঁকে থাকাতে কিছু সংখ্যক চুল আরহামের মুখে চলে এলো। তোঁষা হাত দিয়ে তা আরহামে’র মুখ থেকে সরাতে নিলেই আরহাম থামিয়ে দিলো। তোঁষাটা’র চুল থেকেও কেমন একটা ঘ্রাণ আসে। এতবছর দূরে থাকলেও আরহাম ভুলে নি তার তুঁষে’র ঘ্রাণ। যেই ঘ্রাণ আগে লুকিয়ে চুপিয়ে নিতো সেই ঘ্রাণ এখন ও কাছ থেকে পাচ্ছে। এই তুঁষ’টার ঘ্রাণ ও কেমন একটা শীতলতা অনুভব করায় ওর প্রাণে।
তোঁষা পুণরায় তাড়া দিলো,

— এএই আরহাম ভাই?

— উউম।

— আর কতক্ষণ?

— আয় ঘুরাই তোকে।

বলেই আরহাম তোঁষা’কে কোলে তুলে উঠে দাঁড়ালো। তোঁষা হেসে আরহামে’র গলা জড়িয়ে ধরে। আরহাম ওকে নিয়ে পুরোটা ফ্লাট জুড়ে হাটলো। আনাচে কানাচে সব জানালো। প্রায় ঘন্টা খানিক যখন পার হবে তখন শেষ হলো ওদের ঘুরা। আরহাম এখানে খুব সুক্ষ্মভাবে এরিয়ে গিয়েছে তোঁষা’কে ঘুরতে নেয়ার ব্যাপারটা। তোঁষা অতশত খেয়াল করলো না। সে মজা পেয়েছে এভাবে আরহামের কোলে চড়ে ঘুরতে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই আরহাম তোঁষা’কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসালো। তোঁষাটা’র হাটু সমান চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে দিতে দিতে তাকালো তোঁষা’র পানে। মেয়েটা সারাটাক্ষন আরহাম’কে দেখে। কি যে দেখে আল্লাহ মালুম। এই যে আজ দুটো দিন হতে চললো অথচ তোঁষা দেখেই যাচ্ছে আরহাম’কে। আরহাম যে ওকে আরো গভীর ভাবে দেখে তা কি তোঁষা জানে বা টের পায়? পায় না বোধহয়। পেলে নিশ্চিত লজ্জায় ম’রে যেতো।
তোঁষা হঠাৎ ই প্রশ্ন করলো,

— আরহাম ভাই, আপনি কি ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছেন?

— এটা কেন মনে হলো তোর?

— জিজ্ঞেস করলাম?

— কাজ ছেড়ে দিলে বউ খাওয়াব কি দিয়ে?

— দেশে জয়েন করেছেন?

— হু।

তোঁষা কথা বাড়ালো না।
আরহাম এদেশে থেকে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলো কিন্তু দুই বছর যেতেই দেশের বাইরে পারি জামায় সে। তোঁষা শুধু জানে ওর আরহাম ভাই ডক্টর হওয়ার সুযোগ পেয়েছে তাই গিয়েছে কিন্তু পুরো শেখ পরিবার জানে আসল ঘটনা। খুব সাবধানে তারা তোঁষা থেকে আড়াল করে রেখেছে এতগুলো বছর। আরহামের সাথে প্রথম প্রথম তোঁষা’কে যোগাযোগ করতে দিলেও পরে তা কমিয়ে দেয়া হয়। আরহাম জিজ্ঞেস করতেই তাকে জানানো হয়, তোঁষা’র পড়াশোনায় প্রভাব পড়বে এত বেশি কথা বললে। আরহাম মেনে নেয়। তার তুঁষ’টাকে পেতে সবটুকু কথা মেনে নেয় পরিবারের। টু শব্দ করে না। কিন্তু চঞ্চল প্রাণ তোঁষা’কে থামাতে পারে নি কেউ। নিজের ফোন না থাকায় রাতে বাবা, ভাইয়ের ফোন লুকিয়ে এনে আরহাম’কে কল দিয়ে কথা বলতো। কখনো প্রেমের আলাপ জমতো না তাদের মাঝে। যা ছিলো বা থাকতো সবটা ছিলো তোঁষা’র বাচ্চামো কথাবার্তা। আরহাম শুনতো। মাঝেমধ্যে হু হা যা বলা তা বলতো। তোঁষা’র তখন উঠতি বয়স। ভালো লাগতো সব কিছু।
শেখ বাড়ীর সবাই ভেবেছিলো সময়ের সাথে সাথে তোঁষা আরহাম’কে ভুলে যাবে কিন্তু না এমন কিছুই হয় নি বরং তোঁষা দিন কে দিন আরো গভীর ভাবে ডুবে থাকতো আরহামে’র ভাবনায়। যেটা কে সবাই তোঁষা’র আবেগ বলে আখ্যা দিয়েছিলো সেটা পরবর্তী’তে রুপ নিয়েছিলো ভালোবাসায়। একসময় পাগলামিতে।

#চলবে……

[গল্পটা কাল্পনিক তাই সেভাবেই ভাবুন। আর সুন্দর সুন্দর কমেন্ট চাই]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here