#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_২৯
“বউ খাইয়ে দাও তো।আমি না খুব ক্লান্ত এই বস্তাদের টেনে।”, আহির কথাটি বলতেই মুগ্ধতা ভ্রু কুচকে বলে উঠে,” এইটুকু তেই ক্লান্ত?এত বাহাদুরি কে দেখাতে বলেছিল আপনাকে?রুদ্র বা রাফি কে কল করতেন ওরা একাই যথেষ্ট দুজন কে তুলে আনার জন্য।”
আহির মুখ ফিরিয়ে বলে উঠে,”লাগবে না আমাকে খাইয়ে দেয়া।আমি খেয়ে নিতে পারবো।”
মুগ্ধতা ঠোঁট টিপে হেঁসে বলে,”আপনি বললে আমি খাইয়ে দিতে পারি।”
আহির চট জলদি মুগ্ধতার হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলে,”অবশ্যই নাও খাইয়ে দাও।”
“আপনি কখনোই ভালো হবেন না আহির সাহেব।”,বলে মুখে খাবার পুরে দেয় আহিরের।
আহির কোনো উত্তর না দিয়ে মুগ্ধতার মুখ পানে তাকিয়ে চুপচাপ খাবার খেতে ব্যাস্ত।
.
আহনাভ চলে যাওয়ার পরেই লায়ানা উপরে চলে আসে সকলে আলাদা আলাদা টেবিলে খেতে বসে যায়।আহির ও মুগ্ধতা এক টেবিলে।লায়ানা,আহান,রুদ্র,রাফি,নওশাদ এক টেবিলে বসে খাচ্ছে। আহির বলেছিল আহান সবার শেষে খাবে কিন্তু লায়ানা রিকুয়েস্ট করে আহান কে তাদের সাথে খেতে বসিয়ে দেয়।
আহান লায়ানার জন্য প্লেটে খাবার নিয়ে বলে,”না খেয়ে খেয়ে কী হাল করেছিস দেখ তো বোন।তুই জানিস আমি তোকে এইভাবে কখনোই সহ্য করতে পারবো না।কেনো কষ্ট দিস নিজেকে তুই জানিস না তোর ভাই তোর কষ্ট দেখলে কত্ত টা কষ্ট পায়।”,বলেই লায়ানার মুখে খাবার পুরে দেয় আহান।
লায়ানা ছলছল চোখে তাকায় আহান এর দিকে।আহান কণ্ঠে কাঠিন্য এনে বলে,” একদম কাঁদবি না।চোখ থেকে যেনো পানি না পড়ে।চুপচাপ খাবার খা।তোর ভাই থাকতে তুই কিনা কাঁদবি এই কখনো হয়।জীবনে কত কঠিন কঠিন মিশন সাকসেস করেছি তোর সাথে কিন্তু আজ আহনাভ কে অজ্ঞান করতে গিয়ে নিজেই কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলাম!”
লায়ানা ফিক করে হেঁসে দেয়।আহান আবার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলে,”এইতো এইভাবে হাসবি।আমার বোন কিনা মুখটিকে পেঁচার মত করে রাখে কেমন দেখায় তখন?”
লায়ানা পুনরায় হেঁসে উঠে।আহান পর পর লায়ানার মুখে খাবার তুলে দিতে থাকে আর একেকটা কথা বলে লায়ানাকে হাসাতে থাকে।রাফি আহান এর পাশেই বসে আছে।রাফি নিজের প্লেট থেকে খাবার তুলে হুট করে আহান এর মুখে পুরে দিয়ে বলে,” তুইও খা ভাই।”
আহান খাবার গিলে বলে,”তুই আবার এত ভালো কবে হয়ে গেলি রাফি?”
রাফি আড় চোখে তাকিয়ে বলে,”আমি বন্ধু হিসেবে খাটি বুঝলি।তুই খাইয়ে দিচ্ছিস ম্যাম কে আমি নাহয় আমার বন্ধুকে খাইয়ে দিলাম।আজ কাল ভালোর কোনো দাম নেই।তোর জন্য উচিত ছিল খাবারের মধ্যে চার পাঁচটা মরিচ ঢুকিয়ে খাইয়ে দেয়া।”
লায়ানা হেঁসে বলে,” রাফফু নেক্সট বার না বলে একেবারে খাইয়েই দিস।”
“এমনটাই করবো ম্যাম।আর ম্যাম আপনি অলয়েজ এইভাবেই হাসবেন কখনোই ভেঙ্গে পড়বেন না। আমি,আহান,মুগ্ধ ম্যাম,রুদ্র আমরা সবাই আছি আপনার পাশে।আর আমি সবসময় নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও আপনার পাশে আছি আপনার ঢাল হয়ে।”
.
জেরিন আহনাভের ঘরের সামনে এসে দাড়িয়ে যায়,ঘরের বেহাল অবস্থা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ঘরের প্রত্যেকটি জিনিস ভেঙ্গে চুরে একাকার তার মাঝে বিছনায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আহনাভ।
জেরিন ঘরের এমন অবস্থা দেখেই বুঝতে পারলো তার ছেলের রাগ তুঙ্গে উঠে আছে।শাড়ির আঁচল গুজে এগিয়ে গেলো ধীরে ধীরে পুরো ঘর পরিষ্কার করতে লাগলো।আর ভাবতে লাগলো অতীতের দিনগুলোর কথা…ছোট বেলা থেকেই রাগ উঠলে যেনো এই আহনাভ পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতো,নিজের ঘরে এসে সব ছুড়ে ছুড়ে ভেঙ্গে ফেলত অতঃপর এমন করে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতো বিছানায় আর প্রতিবার জেরিন এসে সব গুছিয়ে আহনাভের পিঠে হাত রাখতেই চট করে উঠে বসে জেরিনকে জাপটে জড়িয়ে ধরতো আহনাভ।ধীরে ধীরে আহনাভ আহিরের সাথে বাবা,মা,বড় বাবা,বড় মা,দিদুন এর চোখের মণি হয়ে বড় হয়ে উঠলো।যখন তার সকল পড়াশোনা শেষ পর্যায়ে চলে এলো তখন আহনাভ ও আহিরের বাবার ব্যবসার অবনতি হয় এক পর্যায়ে বড় অঙ্কের লোকসান পোষাতে না পেরে পিএস ইন্ডাস্ট্রি ইনভেস্টারদের হাতে তুলে দিতে হয়েছিল তার সাথে তুলে দিতে হয়েছিল আবরাহার ম্যানশন।তারপর থেকে শুরু হয় আবরাহার পরিবারের সংগ্রাম।আহনাভের পড়াশোনা শেষ হলো হুট করেই লিলীমা এলো আহনাভের জীবনে অতঃপর আহনাভকে ঠকিয়ে লিলীমা চলে গেলে আহনাভ নেমে পড়ে তার বাবার সাথে তাদের সকল কিছু ফিরিয়ে আনতে।কয়েক মাস পরেই তাদের পরিশ্রমে ফিরে পায় পিএস ইন্ডাস্ট্রি ও আবরাহার ম্যানশন।পরবর্তীতে আহনাভ বিজনেস এর পাশাপাশি অংশ নেয় অ্যাক্টিং এর জগতে আর আহির তার ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ হার্ট স্পেশালিস্ট একজন ভালো সার্জন হয়ে উঠে।অতঃপর আহির বিজনেসের পাশাপাশি নিজের হসপিটাল সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।..
জেরিন সব গুছিয়ে আহনাভের পাশে বসে পড়ে। আহনাভের পিঠে আলতো করে হাত রেখে মৃদু কণ্ঠেই বলে উঠে,”কে আমার ছেলের রাগ উঠিয়ে দিলো আজ?”
জেরিনের হাতের স্পর্শ পেতেই চট করে উঠে বসলো আহনাভ।জেরিনকে জাপটে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো,”মা তুমি ঠিক আছো?তোমার কিছু হয় নি তো?”
জেরিনের বুকটা ধুক করে উঠে ছেলের এমন কণ্ঠ শুনে।জেরিন আহনাভ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আহনাভের দিকে তাকায়।আহনাভ এমন এলোমেলো কেনো!ঝাঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে,চোখ রক্ত বর্ণ রঙ ধারণ করেছে।জেরিন আহনাভের গালে হাত রেখে বলে,”আমি ঠিক আছি তো।কী হয়েছে তোর এমন অবস্থা কেনো?তুই কেনো বুঝতে চাস না আহনাভ তোকে এমন দেখলে আমার কষ্ট হয়।তোর মাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাইনা?”
আহনাভ জেরিনের মুখটি দুই হাতে আগলে নিয়ে বলে,”নাহ আমার মাকে কষ্ট দিতে আমার কেনো ভালো লাগবে বলো তো?”
জেরিন ঠোঁটে হাঁসির রেখা টেনে বলে,”তো মাই বেটা বিয়ে করে ফিল কেমন?”
আহনাভ বিস্মিত কণ্ঠে বলে , “হোয়াট?”
“আরেহ আমার ছেলে আজ বিয়ে করলো তাও আমার পছন্দের মেয়েকে,আমি তো খুব এক্সাইটেড ছিলাম।কত প্ল্যান করলাম অ্যাক্টিং করলাম।আমি কী সাকসেস হতে পেরেছি বেটা?”
“মা এর মানে কী আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“আরেহ তোকে কিভাবে থ্রেট করবে কী বলে থ্রেট করবে তার আইডিয়া টা তো আমি দিয়েছিলাম।আচ্ছা কেমন লাগলো।আর আমি জানতাম আজ তোর আর লায়ানার বিয়ের কথা।আমি কী,আমাদের পুরো পরিবার জানত।”
আহনাভ অবাক হয়ে বলে,”তোমরা এমন টা করতে পারলে আমার সাথে?”
জেরিন আহনাভের পিঠে থাপ্পর দিয়ে বলে,”এমন করে বলছিস যেনো তোকে ধরে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছি। হায়াতির মত বউ পেয়েছিস তোর ভাগ্য।”
আহনাভ আড় চোখে তাকায় তার মায়ের দিকে।আহনাভ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”আচ্ছা মা ওই মেয়ে তোমাকে কী জাদু করেছে বলোতো এত ভালো লাগে তোমার ওকে?”
জেরিন আহনাভের কান মুলে বলে উঠে,”ওই মেয়ে কী হে?তোর বউ হয় ও।আবার যদি শুনেছি বলেছিস ওই মেয়ে তোকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পর মারবো।”
আহনাভ চোখ বড় বড় করে বলে,”তুমি আমার মা নাকি ওই মেয়ের মা।”
জেরিন আরো জোরে আহনাভের কান মুলে ধরলে আহনাভ আ’র্ত’না’দ করে বলে উঠে,”মা প্লিজ প্লিজ কান ছাড়ো।”
“কী যেনো বলছিলি ওই মেয়ে?”
“মা প্লিজ ছাড়ো আর কখনো বলবো না।”
জেরিন ছেড়ে দেয় আহনাভের কান।আহনাভের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমাদের বাড়ির সকলে তোদের আজকের বিয়ের কথা জানলেও হায়াতির বাড়ির শুধু মুগ্ধতা মা আর ইয়াশা আপা,ওনার বড় বোন জানে আর কেউ জানে না।কাউকে জানতে দেয়া যাবে না আজকের বিয়ের কথা।আমরা কাল তোদের বিয়ের কথা বলতে যাবো ওদের বাড়িতে।তোদের ধুমধাম করে বিয়ে দিব।”জেরিন থেমে গিয়ে আবার বলে,”আর তোদের মধ্যে কী হয়েছে আহনাভ?মুগ্ধতা মা বলেছিল তোদের মধ্যে কী এমন মনোমালিন্য হয়েছে যে দুজনের মধ্যে কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।হায়াতি মা খাওয়া দাওয়া অব্দি বন্ধ করে দিয়েছিল খেতে চাইতো না মনমরা হয়ে থাকতো নিজেকে কাজের চাপে ডুবিয়ে রাখতো।যাই হয়ে থাক আহনাভ মেয়েটাকে কষ্ট দিস না এখন থেকে ও তোর বউ।তুই ওকে কষ্ট দিলে আমি তোকে কখনো মাফ করবো না।”
আহনাভ মাথা নিচু করে বলে,”মা!সবসময় এমন ইমোশনাল ব্লেইক মেইল কিভাবে করো তুমি?কিন্তু তোমরা ঠিক করোনি আজ আমার সাথে এমন করে।”
জেরিন আহনাভের মাথার থেকে হাত সরিয়ে বলে,”ভালই করেছি আমি তো খুব খুশি।কাল তৈরি থাকিস কিন্তু।”বলেই জেরিন বিছানা ছেরে নেমে দাড়ায় অতঃপর চলে যায় আহনাভের ঘর থেকে।
.
আহনাভ দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আনমনে বলে,”বউ হয়ে গেলে!মিসেস আবরাহার আহনাভ।কিন্তু একজন খু’নি আমার বউ কী করে হতে পারে?”
…..
আজ সকাল থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢাকা,যে কেউ দেখেই বলবে বৃষ্টির পূর্বাভাস।কিন্তু দুপুর হয়ে এলো বৃষ্টি পড়লো না,ঠাই আকাশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে রইলো।
আবরাহার বাড়ির সবাই তৈরি আজ মুগ্ধতাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য।সকলেই গাড়িতে গিয়ে বসে পড়েছে ,আহনাভ এখনও আসলো না।আহির কে বলা হয়েছে যেনো আহনাভ কে নিয়ে আসে।আহিরের যত সূরা জানা আছে সে সব সূরা কালাম পড়ে আহনাভের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো।
আহির দরজা ধাক্কা দেয়ার আগেই আহনাভ দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো।আহনাভ তীক্ষ্ণ নজরে আহির এর দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।আহির চরম পর্যায়ে গিয়ে অবাক হলো,কাল আহির কিনা কিডন্যাপ করলো আর এখনও কিনা একটাও কেলানি পিঠে পড়লো না আহিরের।আহির আহনাভের পিছু ডেকে বলে উঠে,”আহনাভ তুই ঠিক আছিস?”
আহনাভ দাড়িয়ে গেলো পিছন ফিরে বলল,”কেনো তোকে যদি এখন একটা জম্পেশ কেলানি দেই তাহলে কী মনে করবি আমি ঠিক আছি?তুই চাইলে আমি দিতে পারি।আমি খুশি খুশি তোকে মারতে রাজি।”
আহির ভড়কে গেলো।আহনাভকে রেখেই বড় বড় পায়ে হেঁটে পাশ কাটিয়ে নেমে গেলো।সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে উঠল,”আমি কিছু করি নাই ভাই।”
আহনাভ নিশব্দে হাসলো। আহিরের উপর রাগ আহনাভ কখনোই করে থাকতে পারে না।আহনাভ সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো।বাড়ির বাইরে এসে দেখতে পায় সকলেই গাড়িতে বসে আছে, সাহিরাহ চেঁচিয়ে বলে উঠে,”কী গো হায়ার জামাই এতক্ষন কী করছিলে?চটপট চলে আসো,গাড়িতে উঠে বসো।”
আলিযাও একই তাল মিলিয়ে বলে,”হায়ার জামাই থমকে দাড়িয়ে আছো কেনো?তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পরো।”
জেরিন ঠোঁট টিপে হেঁসে মেয়েদের সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠে,” আরেহ আমার এক মাত্র ছেলের বউয়ের জামাই কী এমন ভাবছিস আয় তাড়াতাড়ি।”
আহনাভ চরম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলো অতঃপর গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসলো ভুলেও এদের সাথে গাড়িতে উঠার কথা ভাবলো না আহনাভ।নাহয় পুরো রাস্তা হায়ার জামাই বলতে বলতে কান ঝালা ফালা করে ফেলবে।
.
আধ ঘন্টা পর সকলের গাড়ি এসে থামলো মুগ্ধতাদের বাড়ির সামনে।সকলে গাড়ি থেকে নেমে এলো।দারোয়ানকে গাড়ি গুলোর চাবি দিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলো সবাই।
মুগ্ধতার বড় মামা সোফায় বসে ছিলেন আহনাভ ও আহিরের পুরো পরিবারকে সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে ঠোঁটের কোণে অমায়িক হাঁসির রেখা টেনে বসা থেকে উঠে দাড়ায়,এগিয়ে যায়।
আহনাভের বাবা হেঁসে মুরাদ কে জড়িয়ে ধরে বলে,” কী চলে এলাম আবার তোমাদের বাড়ির আরেক মেয়ে কে আমাদের বাড়ির রানি করে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব নিয়ে।”
মুরাদ হাঁসলো সরে দাঁড়ালো।একে একে সকলে গিয়ে সোফায় বসে পড়লো।মুরাদ ইয়াশা সহ সকলকে ডেকে আনলো।মুগ্ধতার পুরো পরিবার কুশল বিনিময় করলো একে অপরের সাথে।মুগ্ধতা ও লায়ানা বাদে সকলেই আছে বসার ঘরে।
আহনাভের বাবা বলে উঠে,”তো আমাদের হায়াতি মা কোথায়?”
মুগ্ধতার ছোট আম্মু বলেন,”মুগ্ধতা নিয়ে আসছে ওকে।”
আলিযা ও আফ্রা সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,”ঐযে দেখো আসছে আমাদের দুই ভাইয়ের দুই বউ।”দুইজন থেমে গিয়ে দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠে,” ইয়ে মানে আমাদের এক ভাইয়ের বউ আরেক ভাইয়ের হোনে ওয়ালি বউ।”উপস্থিত সকলেই হাসলো।
আহনাভ চোখ তুলে তাকালো সিঁড়ির পানে।মুগ্ধতা ও লায়ানা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে।আহনাভ মনে মনে বলল,”ঐদিনের ঘটনার কথা মনে পড়লে তোমার প্রতি থাকা আমার সকল অনুভূতি গুলোকে ছাপিয়ে এক ঘৃনা চলে আসে মনের মাঝে।”
আহির মুগ্ধতার পানে তাকিয়ে মুগ্ধ কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলে,”আমার বউ তো অলোয়েজ লুকিং ফাটাফাটি।”
মুগ্ধতা,লায়ানা নেমে এলে জেরিন বসা থেকে দাড়িয়ে দুজনের কাছে এগিয়ে যায়।প্রথমে মুগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কেমন আছো মুগ্ধতা মা?”
“এইতো বড় মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি?”
জেরিন মুগ্ধতাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”খুব ভালো।”তারপর লায়ানাকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,”কী গো আমার ছেলের বউ।”
লায়ানা ঠোঁট টিপে হাঁসে।জেরিন একই ভাবে ফিসফিস করে বলে,”আমার ছেলের বউকে আজ এই মেরুন রঙের শাড়িতে খুব মানিয়েছে কিন্তু।আমি তো জানি আমার ছেলে এতক্ষনে বউকে দেখে ফিদা হয়ে গিয়েছে।”
লায়ানা আহনাভের দিকে তাকালে আহনাভ মাথা নিচু করে ফেলে।লায়ানা তাচ্ছিল্য হাঁসে মনে মনে বলে,”সে তো আমাকে ঘৃনা করে।”
জেরিন লায়ানাকে ছেড়ে দিয়ে মুগ্ধতার মা ইয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,”আপা আপনি বললে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে যাক আর আমরা আমাদের মধ্যে কথা গুলো সেরে ফেলি।”
ইয়াশা সম্মতি জানিয়ে বলে,”অবশ্যই।হায়াতি আহনাভ কে নিয়ে যাও।”
আহনাভ উঠে দাড়ালো এগিয়ে যেতেই লায়ানা সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে লাগলো আহনাভ তার পিছু পিছু গেলো।
.
লায়ানা ছাদের দরজা খুলে ভিতরে চলে এলো।আহনাভ ভিতরে আসতেই লায়ানা আহনাভের হাত এক হাতে শক্ত করে ধরে নিয়ে,আরেক হাতে ছাদের দরজা আটকে দেয়।
আহনাভ লায়ানার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে সরে আসে।লায়ানা এগিয়ে যায়, আহনাভের সামনে দাড়িয়ে অনুরোধের স্বরে বলে,”আহনাভ প্লিজ আজকে আমাকে বলতে দাও।একবার বলতে দাও।” লায়ানার চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝরছে,লায়ানা কাঁদছে।
আহনাভ চুপ করে রইলো কিছু বলল না।লায়ানা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলা শুরু করলো,”আহনাভ আমি কোনো নির্দোষ কে মা’রি’নি।আমি একজন আন্ডার গ্রাউন্ড মা’ফি’য়া কিন্তু কখনোই আন্ডার গ্রাউন্ড মা’ফি’য়া’দে’র মত নির্দোষদের মে’রে ফেলেনি।আমি আন্ডার গ্রাউন্ড মা’ফি’য়া’দে’র সাথে থেকে ওদের প্ল্যান জেনে ওদের অগোচরেই ওই প্ল্যান নষ্ট করেছি।ওরা জানতে পারেনি এখনও আমি ওদের প্ল্যান নষ্ট করে থাকি।আমাদের কানাডা থেকে বাংলাদেশে ব্যাক করার কারণ হচ্ছে একটি মিশন।বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল অনেক নারী পা’চা’র’কা’রি গ্যাং সাথে ছিল শিশু পা’চা’র’কা’রি গ্যাং।আমি তাদের প্রত্যেককে খুঁজে শা’স্তি দিয়েছি আহনাভ।আর রাঙামাটিতে যেই লোকটিকে মে’রে’ছি ওই লোকটি মেয়েদের ধ’র্ষ’ণ করতো,হিং’স্র প’শু’র ন্যায় খু’ব’লে খে’ত ওই শরীর গুলো শেষে মে’রে ফে’ল’ত মেয়েগুলোকে।ওকে তো মরতে হতই আহনাভ।আমি কোনো ভুল করিনি এমন জা’নো’য়া’র’কে মে’রে।”
আহনাভ পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে রইলো।লায়ানার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।আচমকা আকাশে বিজলী চমকে উঠলো ঝরঝর করে বৃষ্টি ধরণীতে নেমে এলো।সাথে সাথে দুজন ভিজে গেলো।লায়ানা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,”আহনাভ এই লায়ানার বাবা মা কখনোই তার সাথে ভালো আচরণ করেনি তারা ছোট থেকেই আমাকে কষ্ট দিয়েছে।আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দিতে চাইনি আমাকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারপর আমি পালিয়ে আসি ওই পরিবার থেকে এই পরিবারে।এই পরিবারের মানুষের সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও এনারা আমার রক্তের সাথে মিশে আছে।মুগ্ধতা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু সকলে জানে আমি ওর বোন ও আমার বোন।তারপর চলে যাই কানাডা মুগ্ধতার সঙ্গে আমার স্বপ্ন পূরণের দেশে।নিজের পায়ে দাড়াই।নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলি।কখনো ভাবিনি কোনো কারণে বাংলাদেশ আসা হবে আমি কখনো আসতেই চাইনি।শেষমেশ আসলাম এই ন’র’পি’চা’শ’দে’র ধ্বং’স করতে।তারপর দেখা পেয়ে গেলাম তোমার।ভালোবেসে ফেললাম তোমায়।ভালোবাসি আহনাভ।”
লায়ানা থেমে গেলো পুনরায় বলা শুরু করলো,”আমার জীবনের সকল কিছু তোমাকে জানিয়ে দিলাম।এখন তুমি আমাকে মেনে নিবে না আহনাভ?”,লায়ানা কান্না থামিয়ে হাঁসলো,হাসতে হাসতে বলল,” সমস্যা নেই চাপ নিবে না।আমি আজকের রাতের ফ্লাইটে কানাডা ব্যাক করছি এক মাসের জন্য।তোমাকে এই এক মাস কেউ জ্বালাবে না।তোমাকে এই এক মাস সময় দিয়ে গেলাম।”
লায়ানা দুজনের মাঝের দুরত্ব ঘুচিয়ে এগিয়ে গেলো আহনাভের পায়ের উপর পা রেখে দাড়িয়ে গেলো আহনাভের কানে ফিসফিস করে বলল,”আহনাভ ভালোবাসি।আমার জীবনে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা খুব কম যদি হুট করেই জানতে পরো আমি নেই তাহলে আমার ওই মৃ’ত দেহের কানের কাছে গিয়ে একবার বলে দিয়ে এসো হায়া পাখি ভালোবাসি।ভালো না বাসলেও বলে দিও অন্তত মিথ্যে আশা নিয়ে হলেও ভালো থাকতে পারবো ওই পরপারে।”
লায়ানার প্রত্যেকটি কথায় আহনাভের বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে গেলো।লায়ানা আহনাভের পায়ের উপর থেকে নেমে আসলো সাথে সাথে দরজার সামনে থেকে আলিযার কণ্ঠে ভেসে আসলো,”এই তোমরা বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো।”
লায়ানা আলিযার দিকে তাকাতেই আলিযা ছুটে এসে দুজনের হাত টেনে ছাদ থেকে নিয়ে যায়।
আহনাভ বলে উঠে,”আলিযা ছার হায়ার সাথে আমার কথা আছে।”
আলিযা দুজনকে টানতে টানতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগে। আহনাভের কথার প্রতুত্তরে বলে,”ভাই চুপ কর তোর মাথায় আদও আছে যে তুই বৃষ্টিতে ভিজলেই গা কাপা জ্বর চলে আসে।
#copyrightalert
#চলবে।
কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে আশা করি ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টান্তে নিবেন সকলে।