ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৩৫

0
264

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩৫
প্রত্যেকটি মেয়ের বিয়ের পর বিদায়ের সময়’ই টিতে নিজের বাড়ির মানুষ গুলোকে ছেরে যেতে হবে তা ভেবেই যেনো নিশ্বাস আটকে আসে।প্রত্যেকটি মেয়ের জীবনেই এমন একটি দিন আসে,সেইদিন হয়তো মেয়েরা চাইলেও কেনো যেনো এই বাবার বাড়ি’কে ছেরে যেতে চায় না।

তেমনি লায়ানা,মুগ্ধতার বিদায়ের সময় এসে পড়েছে।লায়ানা ইয়াশা’কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর বলছে,”খালামণি আমাকে ওই প্রথম দিন থেকে এই অব্দি এত আদর করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।তুমি আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছো তুমি আমার পাশে না থাকলে আজ হয়তো এই লায়ানা এত বড় একটা পজিশন’এ আসতেই পারতো না।”

ইয়াশা লায়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আরেহ মেয়ে কাঁদে না।”

ইজাজ মুগ্ধতার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলবে,”দেখেছিস আজকে সেই দিন এসে পরেছে আমি বলেছিলাম না তুই গেলে আমরা সব ভাই মিলে পার্টি করব দেখ আমি সব রেডি করেছি তুই এক দিক দিয়ে যাবি আর আমরা চলে যাবো সেখানে।”

মুগ্ধতা আর নিজেকে সামলাতে না পারে না,তার অবাধ্য অশ্রু চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।কাঁদতে কাঁদতে বলে,”তুমি এখনো ভালো হলে না।

ইজাজ আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”দেখো ভাই আমি বাকি ভাইদের মতো বলব না আমার বোনের খেয়াল রেখো।না রাখতে পারলে তোমার হাত-পা ভেঙে দিব এসব কিছুই বলব না।শুনো তুমি কিছুদিন পর নিজেই এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলবে ভাই তোমার বোন কে ফিরত নিয়ে যাও।আমি একে সামলাতে পারব না।আজ পর্যন্ত আমাকে জ্বালিয়েছে এখন তোমার পালা।”, বলেও হাসতে থাকে ইজাজ।

আহির হেসে বলে,”ভাইয়া এরকম কিছুই হবে না। দেখে নিয়েন ওকে আমি অনেক যত্নে রাখব।”

.
আহান আহনাভের হাত ধরে বলে,”আহনাভ আমার বোনকে কষ্ট দিও না কখনো,ওর মনটা খুব নরম বুঝলে।হায়াতি আমার আপন বোন না হলেও হায়াতি আমার জান।ওকে আমি প্রথম যেইদিন দেখি এক ভয়াভয় আ’গু’ন জ্বলতে থাকা ঘরে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে ছিলো তখন আমি ওকে উদ্ধার করি ঐখান থেকে।তারপর থেকে নিজের বোনের মত আদর করেছি।আমি অনাথ আমার কেউ নেই এই পৃথিবীতে এই হায়াতি ছাড়া।আমি নিজে আহত হয়েছি কিন্তু ওকে আহত হতে দিইনি। তাই বলছি এই ভাইয়ের বোন’টা ভালো রেখো আগলে রেখো ও করো থেকে একটু ভালোবাসা পেলেই অদূরে হয়ে ওঠে।আমার পাগলী টাকে ভালো রেখো।”

লায়ানা ইয়াশাকে ছেড়ে আহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”তুই পাগল তোর পুরো বংশ পাগল আমি একদম পাগল না।”

আহান হেঁসে বলে,”আমার তো তুই ছাড়া কেউ নেই বোন।”

আহনাভ আহানকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”আমি সবসময় ওকে নিজের প্রাণ দিয়ে রক্ষা করে যাবো আহান।তুমি চিন্তা করো না।”

ইজাজ লায়ানার কাছে গিয়ে দাড়ায় লায়ানাকে বলে,”আরেহ থামো থামো যাওয়ার সময় আমাদের বাড়িটাকে সাগর বানিয়ে যেওনা।পরে দেখা যাবে আমাদের তোদের দুজনের বিদায় হওয়ার পর যে পার্টি হওয়ার কথা সেটা মিস দিয়ে সেই পানি কেচতে হবে।অবশেষে ছাগল-পাগল দুটোই বাড়ি থেকে বিদায় হচ্ছে।আহনাভ একে সামলে নিয়ো।”

লায়ানা ভেজা কণ্ঠে বলে উঠে,”আজকেও ছাগল পাগল বলছে।দেখে নিও আমি বলে যাচ্ছি তোমার
বউ তোমাকে ক্যারাটে মাইর দিবে।প্রয়োজন পড়লে তোমার বউকে আমি নিজে এসে ক্যারাটে শিখিয়ে যাবো।”

ইজাজ আহনাভকে বলে উঠে,”ভাই একে নিয়ে যাও আমার বউ এর দিকে নজর দিচ্ছে।”

সকলে হেঁসে উঠে।আহনাভ লায়ানার হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।আহির মুগ্ধতা’ও গাড়িতে উঠে বসলে সব গাড়ি এক এক করে ছেরে দেয়।

.
এক ঘণ্টা পর বাড়িতে এসে পৌঁছায় সকলে।চারজন কে বরণ করা হলে লায়ানা,মুগ্ধতাকে আহির,আহনাভের ঘরে রেখে আসা হয়।আহনাভ নিজের ঘরের সামনে এসে দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে আফ্রা, সাহিরাহ, আলিযা দাড়িয়ে।আহনাভ হেঁসে বলে,” ওহ বুঝছি বুঝেছি বাসর ঘরে যাওয়ার জন্য টাকা নিবি তোরা?সমস্যা নেই আমি তো তোদের ক্যাশ বান্ডিল ধরিয়ে দিতে রাজি।”

আহনাভ শেরওয়ানির দুই পকেট থেকে দুই বান্ডিল টাকা বের করে দুজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।আহনাভ দরজা আটকে বিছানার দিকে নজর দিতেই দেখতে পায় তার বউ গুটি শুটি হয়ে শুয়ে আছে মাথার চুনরি ফ্লোরে পড়ে আছে।আহনাভ হাঁসলো এগিয়ে গেলো।হঠাৎ বাইরে থেকে আফ্রা, সাহিরাহ, আলিযা তিনজন চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আহনাভ তুই আমাদের নকল টাকা দিয়েছিস কেনো অসভ্য ছেলে বেরিয়ে আয় তুই ঘর থেকে।”

তিজনের এমন চিৎকার শুনে লায়ানা কেঁপে লাফ দিয়ে উঠে বসে।লায়ানাকে এমন করে লাফ দিয়ে উঠে বসতে দেখে আহনাভ দ্রুত লায়ানার পাশে বসে লায়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”এই কী হয়েছে পাখি?তুমি ঠিক আছো?খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”

লায়ানা চুপ করে রইলো আহনাভের শেরওয়ানির করলার চেপে ধরে রাখলো।আহনাভ লায়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তুমি ঠিক আছো পাখি?”

লায়ানা মাথা তুলে আহনাভের দিকে তাকিয়ে বলে,” আসলে আমি ঘুমের মধ্যে এমন জোরে কিছুর আওয়াজ পেলে কেঁপে উঠি ভয় পেয়ে যাই।”

আহনাভ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের মধ্যে মিলিয়ে নেয় লায়ানাকে।অদূরে কণ্ঠে বলে,”ওরেহ আমার পাখি’টা এইভাবে ভয়ও পায়।আমি ওদের কাল এক জম্পেশ মাইর দিয়ে দিবো আমার পাখি কে এইভাবে ভয় দেখানোর জন্য।”অতঃপর ঠোঁট টিপে হেঁসে বলে,”এইযে লেডি মা’ফি’য়া কত জায়গা বোম দিয়ে উড়িয়েছো আর এইটুকু আওয়াজে ভয় পেয়ে গেলে জাতি কী বলবে।”

“জাতি যা মন চায় ভেবে ললিপপ খাক ভাই আমি তো ছোট বেলা থেকেই ঘুমের মধ্যে এইভাবে আওয়াজ পেলে কেঁপে উঠি।”

“ঠিক আছে বুঝলাম।এখন পাখি কী চেঞ্জ করে আসবে আমরা এক সাথে নফল নামাজ পড়ে নিতাম।অনেক করে পেয়েছি তোমায় অনেক ভুল বোঝা বুঝির পর।আল্লাহ ‘র কাছে তো শুকরিয়া আদায় করতে হবে। ”
.
লায়ানা উঠে লাগেজ থেকে একটি ব্যাগ বের করে আহনাভ এর সামনে এসে বলে,”এইটা তোমার জন্য।”

“কী আছে এতে?”

“একটা কালো পাঞ্জাবি পাজামা আর কালো ঘড়ি।আমার তরফ থেকে ছোট একটি উপরহার।”

লায়ানা ব্যাগ আহনাভের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।লায়ানা সাদা রঙের হাঁটু অব্দি গোল জামা, সাদা রঙের পাজামা পরে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলে আহনাভ লায়ানার দেয়া কালো পাঞ্জাবিটা নিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে।আহনাভ বেরিয়ে এলে লায়ানা দুজন মিলে নামাজ পরে নেয়।

.
আহনাভ কাবার্ড থেকে একটি বক্স বের করে লায়ানার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,”চোখ বন্ধ করো তো হায়া পাখি।”

লায়ানা চট জলদি চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিয়ৎকাল যেতেই লায়ানা তার গলায় ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে ওঠে।আহনাভ বলে উঠে,”তাকাও।”

লায়ানা চোখ খুলে তাকায় গলায় কিছু একটা অনুভব করতেই চোখে পরে,একটি স্বর্ণের চেইন তার মধ্যে ছোট করে আহনাভ আর লায়ানার নামের প্রথম অক্ষর লিখা।

লায়ানা কিছু বলার আগেই আহনাভ লায়ানার গলায় মুখ ডুবিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,”কেমন লাগলো বউ এই ছোট গিফট টি। ”

লায়ানা মুচকি হেঁসে বলে,”আমি স্বর্ণ পছন্দ করি না তেমন কিন্তু এইটা অসম্ভব সুন্দর আহনাভ।”

আহনাভ লায়ানাকে পাজা কোলে নিয়ে নেয়, বিছানায় নিয়ে এক পাশে শুয়ে দিয়ে নিজেও লায়ানার পাশে শুয়ে পড়ে।লায়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”বউ,একবার ভালোবাসাকে হারিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার জীবনে ঝড়ের মত এসে সব অগোছালো করে দিলে ।তুমি এই আহনাভকে ছেড়ে কখনো যেও না,এই আহনাভ জেন্ত লা’শ হয়ে যাবে।”

লায়ানা স্থির চাহনিতে আহনাভের দিকে তাকালো অতঃপর চট করে আহনাভের মুখ নিজের দুই হাতের মাঝে নিয়ে বলে উঠলো,”লায়ানা মৃত্যুর আগ অব্দি এই আহনাভের।শুধুই তার,কখনোই তাকে ছেরে যাবে না লায়ানা।এক আল্লাহ ছাড়া এই লায়ানাকে কেউ তার আহনাভ থেকে আলাদা করতে পারবে না।”

আহনাভ প্রসন্ন হাঁসলো।লায়ানা দুষ্টু হেঁসে আহনাভের অধর জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়,আহনাভ লায়ানার চুলের মাঝে হাত ডুবিয়ে দেয়।লায়ানা সরে এসে বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলে উঠে,”নাও দিয়ে দিলাম তোমার সেই চুমু।”

আহনাভ হেঁসে উঠে,আহনাভ এর হাঁসি দেখে লায়ানা আহনাভের গালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”জানো আহনাভ আমার তোমার এই হাঁসি খুব প্রিয়।তোমার এই হাঁসি আমাকে আরো উন্মাদ বানিয়ে ফেলে।তোমার সব কিছুতেই এক নেশা আছে,তুমি মানুষটাই একটা নেশা তুমি আমার এক অন্যরকম নেশা আহনাভ।”

আহনাভ লায়ানার ঘাড়ে মুখ গুজে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে,”তুমি আমার কাছে আরো বড় এক নেশা যাকে ছাড়া মৃত্যু অনিবার্য।”আহনাভ থেমে গিয়ে আবার একই কণ্ঠে শুধায়,”বউ আজ এই আহনাভ তোমার মাঝে ডুবে যেতে চাইছে!”

লায়ানা মুচকি হেসে আহনাভের বুকে মুখ লুকায়।আহনাভ ঠোঁট টিপে হাঁসে।লায়ানার সম্মতি যেনো পেয়ে গেছে আহনাভ।ধীরে ধীরে লায়ানার মাঝে ডুবে যায় আহনাভ,সময় যতই যেতে থাকে,দুজনের ভারী নিশ্বাস পুরো ঘর জুড়ে বিরাজ করতে থাকে।

.

আহির তার ঘরে ঢুকে দেখে তার বউ আরামে ঘুমিয়ে আছে ভারী লেহেঙ্গা চুনরি পড়ে।আহির এগিয়ে যায় মুগ্ধতার পাশে বসে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে মৃদু কণ্ঠে ডেকে উঠে,”মুগ্ধরানি শুনো উঠে চেঞ্জ করে প্রয়োজন পড়লে ঘুমাও। ”

আহিরের ডাকে মুগ্ধতা চোখ খুলে তাকায় আহিরকে এভাবে দেখে লাফ দিয়ে বসে যায় মুগ্ধতা।আহির বলে উঠে,”কী হয়েছে বউ?আচ্ছা তুমি এভাবে শুয়ে ছিলে যে খুব ক্লান্ত ছিলে?আমার জন্য অপেক্ষা করার দরকার কি ছিল ড্রেস চ্যাঞ্জ করে নিবে না?”

“আমি আসলে অনেক ক্লান্ত তাই আপনার জন্য অপেক্ষা না করেই শুয়ে পরেছিলাম।সরি।”

“এখানে সরির কি হলো মুগ্ধ রানি?আমার বউ ক্লান্ত ঘুমাবেই।আমি তো অফিস হসপিটাল সামলায় তখন মাঝে মধ্যেই বাড়ি আসতে পারি না আর সবসময় রাত হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে।তখনও তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে না।এখন তুমি গিয়ে চেঞ্জ করে আসো।”

মুগ্ধতা লাগেজ থেকে গাঢ় মেরুন রঙের চুড়িদার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ঠিক আধ ঘণ্টা পর বেরিয়ে আশে ফ্রেশ হয়ে।আহির সোফায় বসেছিল মুগ্ধতা’কে বেরিয়ে আসতে দেখে এগিয়ে যায় বলে উঠে,”একী মুগ্ধ রানি তুমি এই রাতে গোসল করেছো?”

“আমি কোথাও গেলে এরকম রাতে থাকতে হলে আগে গোসল করি।”

আহির ব্যাস্ত হয়ে মুগ্ধতার হাত থেকে তাওয়াল নিয়ে মাথা মুখে দিতে দিতে বলে, “আর ঠান্ডা লেগে গেলে?”

“লাগবে নারেহ বাবাহ।”

মুগ্ধতা আহিরের হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে বলে,”দেখেন আমার ক্লান্তি এখন পুরো চলে গিয়েছে
এইবার আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

আহির মুগ্ধতার হাত থেকে তাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।আহির বের হলে দুজন একসাথে নামাজ পরে নেয়।নামাজ শেষ করে মুগ্ধতা বিছানায় গিয়ে বসলে,আহির মুগ্ধতার সামনে গিয়ে বসে পড়ে ধীরে ধীরে মুগ্ধতার কাছে এগিয়ে যেতে থাকে মুগ্ধতা পিছিয়ে যেতে যেতে বিছানার হেড বোর্ডের সাথে লেগে যায়।আহির মুগ্ধতার পায়ের কাছে এসে বলে,”আমার মুগ্ধরানি আমাকে এত ভয় পায় কবে থেকে?আমার মুগ্ধরানি তো আমাকে রাগাতে আর জ্বালাতে পছন্দ করে।তো এত ভয় পাওয়া কেন হচ্ছে?”

মুগ্ধতা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে,”আমি কোনো ভয় পাচ্ছি না আমার বিছানার হেড বোর্ডের সাথে গা এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল তাই এভাবে পিছিয়েছি।আর আপনাকে আমি কবে জ্বালিয়েছি? আমি তো কাউকে জ্বালাতেই পারি না উহুহ।আর আপনি এইভাবে পায়ের কাছে বসে আছেন কেনো?”

“কেনো তোমার কাছে এসে বসবো কী বলো মুগ্ধ রানি।”,বলেই মুগ্ধতার পাশ ঘেঁষে বসে বলে উঠে,”চলে এসেছি তোমার একদম কাছে।”,মুগ্ধতা পারছে না দেয়াল ভেদ করে তার ভিতরেই ঢুকে যেতে।

আহির বিছানার সাইড টেবিলের উপর থেকে একটি প্যাকেট নিয়ে উঠে গিয়ে পুনরায় মুগ্ধতার পায়ের কাছে বসে পড়ে।মুগ্ধতা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।

আহির ঠোঁট টিপে হাসে প্যাকেট থেকে একটি বক্স বের তার থেকে এক জোড়া রুপার নুপুর বের করে। মুগ্ধতার পায়ে পরিয়ে দিয়ে বলে,”এটা শুধু আমার সামনেই পরবে,এতে আমি ঝুনঝুনি দিয়েছি যখন আমি বাড়িতে আসব তখন তুমি আমার সামনে পাইচারি করবে আর এটা ঝুমঝুম শব্দ করবে।”

মুগ্ধতা বিছানা থেকে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে খুশিতে লাফাতে লাফাতে বলে,”দেরি কিসের এখনি শব্দ শুনিয়ে দেই।”

হঠাৎ মুগ্ধতা থেমে গিয়ে বলে, “আপনি আমাদের ভবিষৎ নিয়ে এত কিছু ভেবে ফেলেছেন?ওয়াহ ভালোই তো।”

আহির বিছানা ছেড়ে নেমে মুগ্ধতার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,” অবশ্যই ভাবতে তো হচ্ছেই।আমার মুগ্ধ রানিকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।”

মুগ্ধতা আহিরের গলা জড়িয়ে বলে,”আমারও কোনো সমস্যা নেই আমার এই হুলু বানর জামাই কে নিয়ে কিছু ভাবতে স্বপ্ন সাজাতে।হিহি।”

“মুগ্ধরানি তোমার মনে হচ্ছে না তুমি আমার একটু বেশি কাছে চলে এসেছো?

“নাহ করছে না।

“তাহলে আরেকটু কাছে চলে আসা যাক কী বলো?”,বলেই আহির মুগ্ধতাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে থাকে।আহির বলে উঠে,”বউ তোমায় পেয়ে আমি অনেক খুশি আজ।বউ তোমাকে বুঝায় কী করে আমি কত খুশি”

মুগ্ধতা আহিরের এহেন কান্ডে হেসে আহিরের বুকে মুখ লুকায়।আহির থেমে যায় ধীরে ধীরে বিছানার কাছে গিয়ে মুগ্ধতা’কে শুইয়ে দেয়।আহির মুগ্ধতার উপর ঝুঁকে গিয়ে মাতাল করা কণ্ঠে বলে,”আজ তোমাকে পুরোপুরি আমার করে নেই মুগ্ধ রানি?আমি তোমাতে ডুবে যেতে চাই মুগ্ধ রানি।”

মুগ্ধতা চুপ করে থাকে।আহির মুচকি হেসে বলে,”তোমার এই মৌনতার মানে কী বুঝবো তুমি সম্মতি জানাচ্ছ।”আহির তাকিয়ে থাকলো মুগ্ধতার লজ্জায় রাঙা মুখ পানে,আজ মুগ্ধতা তার লজ্জায় রাঙা মুখ কোথায় লুকাবে।আহির বিছানার পাশের টেবিল লাইট অফ করে দেয়।ধীরে ধীরে মুগ্ধতার কাছে এগিয়ে যায় মুগ্ধতার নিশ্বাস ভারী হতে থাকে।
রাত বাড়তে থাকে দুটো শরীর এক হয়ে যেতে থাকে।আজ যেনো একজন তার ভালোবাসায় ছোঁয়ায় আরেকজনকে পুরোপুরি তার করে নিতে ব্যাস্ত।

……

পাখির কিচিরমিচির শব্দ,সূর্যের প্রখর রশ্মি পর্দা ফেদ করে ঘরে উকি দিচ্ছে।মুখের মধ্যে সূর্যের আলো এসে পড়তেই মুগ্ধতা নড়ে চড়ে উঠে টিপটিপ করে তাকায়,নিজেকে আহিরের উন্মুক্ত বুকে তার দুই বাহুডোরে মাঝে আবিষ্কার করে মুগ্ধতা।মুগ্ধতা আহিরের মুখ পানে তাকাতেই রাতের কথা মনে পড়ে যায়,মুহূর্তের মাঝেই মুগ্ধতার মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে।মুগ্ধতা আহিরের থেকে নিজেকে ছাড়াতে
চাইলে আহির মুগ্ধতা কে ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে থাকে।

আহির ছেরে দিতেই মুগ্ধতা বিছানা ছেড়ে লাগেজ থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড় লাগায়।মুগ্ধতা গোসল করে বেরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে চলে যায়।নিচে এসে কাউকে না পেয়ে এই সুযোগে রান্নাঘরে চলে যায়।পরনের শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে সকলের জন্য নাস্তা বানানো শুরু করে।

.
রান্না শেষ, কোমড়ে গুজে রাখা আঁচল ঠিক করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।ঘরে এসে দেখে এখনও আহির ঘুমাচ্ছে।মুগ্ধতা আয়নার সামনে গিয়ে চুল ব্রাশ করে আহিরের পাশে গিয়ে বসে আহিরকে ডাকতে থাকে”এই উঠুন সকাল হয়েছে।আমি তাড়াতাড়ি উঠে গিয়েছি আমি একা একা কি করব উঠুন না প্লিজ।”

আহির একটু নড়ে উঠে,মুগ্ধতার কোমড় জড়িয়ে মুগ্ধতা কে টেনে নিজের সাথে শুইয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,”আমার সাথে ঘুমাও।”

মুগ্ধতা থাপ্পড়, ঘুষা,ধাক্কা সব দিয়ে দিল কিন্তু আহির উল্টো আরো শক্ত করে ধরে রাখে মুগ্ধতাকে।মুগ্ধতা এইবার রেগে গিয়ে জোরে কামড় বসিয়ে দেয় আহিরের হাতে।আহির ‘আহহহ’ বলেই চোখ খুলে তাকায়।বলে উঠে,”এইভাবে কামড়ে আমার মাং’স উঠিয়ে ফেলবে নাকি।সারারাত ঘুমাতে পারিনি এখন ঘুমাতে দেও।তুমিও তো ঘুমাওনি তাই এখন চুপচাপ ঘুমাও আমার সাথে।

মুগ্ধতা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,”আমাকে ছেড়ে দেন আমি নিজেই একা থাকি আপনার উঠা লাগবে না আপনি ঘুমান আমি যাই।

আহির মুগ্ধতাকে ছেড়ে দেয়। মুগ্ধতা ছাড়া পেতেই শাড়ি ঠিক করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

.
আহনাভ চোখ খুলে তাকাতেই তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা লায়ানাকে দেখে হাসে,লায়ানার কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”আমার পাখি’টাকে ঘুমের মধ্যে কত শান্ত লাগে।তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলে যে কেউ বলবে পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্পাপ সে।সত্যি আমার বউ পুরোটাই নিষ্পাপ।”

.
লায়ানা নড়ে চড়ে চোখ খুলে তাকাতেই আবার আহনাভের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললো।আহনাভ হো হো করে হেঁসে উঠে।আহনাভ হাঁসি থামিয়ে বলে,”এইবার তো ছাড়ো হায়া পাখি।”

লায়ানা মৃদু কন্ঠে বলে,”নাহ আমার তোমার দিকে তাকাতেই শরম করছে।”

আহনাভ পুনরায় হেঁসে বলে উঠে,”আমার দিকে তাকাতে শরম করছে আর আমার বুকের মাঝে লুকিয়ে থাকতে শরম করছে না বুঝি?”

“নাহ একদম না এইটা আমার একান্ত মুখ লুকিয়ে রাখার জায়গা।”

আহনাভ লায়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”তোমার এই একান্ত মুখ লুকানোর জায়গায়’তেই তোমায় আগলে রাখবো পাখি।”

লায়ানা মুখ তুলে তাকায় আহনাভের দিকে অতঃপর আহনাভকে ছেড়ে আহনাভের অধরে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়েই বিছানা ছেরে ওয়াশরুমে দৌড়।

আহনাভ মৃদু হেসে বলে,”এইটা কী ছিল?”

লায়ানা ওয়াশরুম থেকে বলে উঠে,”গুড মর্নিং হামি।”

#copyrightalert
#চলবে।

কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টান্তে দেখবেন।🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here