ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৩৯

0
278

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩৯
মুগ্ধতা ও আহির তাদের নিজ নিজ হসপিটাল এর দায়িত্ব নিয়ে ব্যাস্ত আর লায়ানা, আহনাভ প্রজেক্ট নিয়ে ব্যাস্ত।এমন করেই কেটে যাচ্ছে দিন গুলো।কাজের মাঝে সময় বের করে নিজেদের মধ্যে কিছু স্মৃতিময় মুহূর্ত তৈরি করতে’ও ভুলছে না তারা।

.
এত দিনে অভ্র’র বিশ্বাস অর্জন করে ফেলেছে মুগ্ধতা।অভ্র’র কেবিনে লাগিয়ে আশা মিনি সিসি ক্যামেরা দিয়ে অভ্র’র প্রতিদিনের যাওয়া আশা থেকে শুরু করে, অভ্র কোন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ অধিক ব্যাবহার করা হচ্ছে সব কিছুই নোট করে আহান।

গত কালের কথা,,,মুগ্ধতা এসেছিল বাবেল ইন্ডাস্ট্রিতে।মুগ্ধতা অভ্র’র পাশেই বসে আছে।অভ্র বলে উঠে,”ডার্লিং তুমি কিছুই বলছো না যে।”

মুগ্ধতা অকপটে বলে উঠে,”শুনো না আমার তোমার হাতে বানিয়ে আনা সেই স্পেশাল কফি খুব খেতে ইচ্ছে করছে প্লিজ বানিয়ে আনো না।”

অভ্র হেঁসে বলে,”এইটুকু বলতে এতক্ষন সময় নিলে তুমি বসো আমি করে আনছি।”

অভ্র উঠে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।মুগ্ধতা কেবিনের দরজার সামনে গিয়ে নব ঘুরিয়ে ভালো করে দরজা আটকে দিলো।অতঃপর দ্রুত অভ্র’র চেয়ারে বসে কানে ব্লু টুথ লাগিয়ে বলে উঠে,”আহান কী করবো কুইক বল।”

ঐপাশ থেকে আহান বলে,”আপু দেখো তোমার সামনে একটি কম্পিউটার আছে।যেই এন্টিনা আর পেন্ড্রাইভ টা আমি তোমাকে দিয়েছি দুইটা কম্পিউটারে লাগাও বাকি কাজ আমি করছি।”

মুগ্ধতা দুটো জিনিস’ই লাগিয়ে বলে,”আহান ডান।”

আহান জোরে চেচিয়ে বলে উঠে,”শা’লা’র কম্পিউটার হ্যাক করা ডান।”

মুগ্ধতা চোখ মুখ কুচকে বলে,”আমি বেরিয়ে এসে আগে তোকে জম্পেশ কেলান কেলাবো,এমন করে কেউ চেঁচায়?”

“খুশিতে আবেগে আমার বিবেক ব্লক হয়ে গিয়েছিল।সরি আপু।”

“এখন কি এন্টিনা আর পেন্ড্রাইভ টা খুলে ফেলবো?”

“ওয়ান মিনিট আপু।”,আহান সময় নিয়ে আবার বলে উঠে,”নাও অল ডান এইবার খুলে ফেলো।দেখো এইবার ওর সব তথ্য নেয়ার পর ওর ইন্ডাস্ট্রি কিভাবে ধূলিসাৎ করে ফেলি।”

মুগ্ধতা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাঁসে, এন্টিনা আর পেন্ড্রাইভ খুলে ব্যাগে রেখে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়।অতঃপর দরজার সামনে গিয়ে দরজার নব ঘুরিয়ে আগের মত করে দিয়ে আবার সোফায় এসে বসে পড়ে।

.
অভ্র ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে দুই মগ কফি নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করতেই মুগ্ধতা দাড়িয়ে বলে উঠে,”অভ্র আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ চলে এসেছে আমার যেতে হবে।”

“কিন্তু!”

“প্লিজ অভ্র।”,অভ্র প্রতুত্তরে কিছু বলে না মুগ্ধতা ব্যাগ হাতে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

.
বাবেল ইন্ডাস্ট্রি থেকে অনেকটা দূরেই এক বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর দাড়িয়ে আছে মুগ্ধতা,লায়ানা।মুগ্ধতা কানের ব্লু টুথ অন করে বলে উঠে,”সব ডান?”

ঐপাশ থেকে রুদ্র বলে,”ম্যাম অল ডান।”

মুগ্ধতা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেঁসে বলে,”তাহলে দেরী কীসের জ্বা’লি’য়ে দাও বাবেল কে।”,বলতেই বাবেল ইন্ডাস্ট্রির দরজা থেকে আ’গু’ন লাগা শুরু হলো সাথে সাথে পুরো বাবেল ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়িয়ে যেতে লাগলো আ’গু’ন।লায়ানা হেঁসে তার হাতে থাকা রিমোটের লাল বাটন ক্লিক করতেই বি’ক’ট শব্দে বাবেল ইন্ডাস্ট্রির বিল্ডিংটি ভে’ঙ্গে গু’ড়ি’য়ে যায়।সাথে সাথে ধূ’লি’সা’ৎ’এ পরিনত হয় বাবেল ইন্ডাস্ট্রি।

লায়ানা হেঁসে বলে উঠে,”ধ্বং’স হলো এক পা’পে’র কারখানা।”

বাবেল ঔষধ তৈরির একটি ইন্ডাস্ট্রি হওয়ায় আজ পুরো বাবেল ইন্ডাস্ট্রির সেনিটাইজ ডেট ঠিক করা হয়।এই কারণে সকল কর্মচারীদের ছুটি দেয়া হয়।সেনিটাইজ টিম এর জায়গায় মুগ্ধতা,লায়ানার পুরো টিম সেনিটাইজ টিম সেজে আসে। বাবেল ইন্ডাস্ট্রি সেনিটাইজ করার বদলে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে কে’রো’সি’ন ছ’ড়ি’য়ে দেয় সাথে প্রত্যেকটি জায়গায় বো’ম ফিট করে দেয় মুগ্ধতাদের পুরো টিম।রুদ্র গাড়িতে বসে দেয়াশলাই জ্বা’লি’য়ে তা প্রবেশ দরজায় ছু’ড়ে মা’রে সাথে সাথে পুরো টিম গাড়ি নিয়ে বাবেল এর সামনে থেকে দূরে সরে যায়।আর লায়ানা রিমোট চাপতেই মুহূর্তের মাঝে পুরো বাবেল ভে’ঙ্গে ধ্বং’স স্তু’পে পরিণত হয়ে যায়।

.
কিছুক্ষন যেতেই বাবেল এর বিরুদ্ধে সকল পেপার, ফাইল আইনের হাতে তুলে দেয় মুগ্ধতা,লায়ানা।গোপনে থেকেই কাজটি করেছে দুজন।

.
সন্ধ্যার আকাশ কালো মেঘে ঢেকে চারিপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে কিন্তু এখনও বাবেল এর কিছু কিছু জায়গায় আ’গু’ন জ্বলছে।বাবেল এর ধ্বং’স স্তূ’পে’র সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটির’ও বুকের ভিতর জ্ব’লে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে,রক্ত বর্ণ ধারণ করা ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে সামনে ধ্বং’স স্তূ’পে’র দিকে।

ধ্বং’স স্তূ’পে’র সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি চি’ৎ’কা’র করে বলে উঠে,”আমি তোদের ছাড়বো না তোরা আমার স্বপ্ন আমার বাবেল কে ধ্বং’স করেছিস আমি তোদের ধ্বংস করে ফেলবো।কুইন আমি তোমাকে দূরে থেকেও তো ভালোবেসেছি কিন্তু তুমি আমার বাবেল কে ধ্বংস করে ফেললে আমি তোমাকে ছাড়বো না ধ্বংস করে ফেলবো,তোমাকে তিলে তিলে মারবো,বেঁচে থেকেও মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা কষ্ট দেবো তোমায়।”

…….

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আহির তার হসপিটাল চলে এসেছে।নিজের কেবিনে বসে আছে আহির,’নেক্সট’ বলতেই দরজা ঠেলে একটি লোক প্রবেশ করে।

আহির তার সামনে চেয়ারটি দেখিয়ে বলে,”বসুন।”

লোকটি চেয়ার টেনে বসলে আহির পুনরায় বলে,”জি বলুন আপনার সমস্যা গুলো কী কী।”

সামনে বসে থাকা লোকটি হালকা কেশে বলে,”
এই হসপিটালে আপনার মত এত বড় একজন হার্ট স্পেশালিস্ট তার সাথে বাঙালি ডক্টর আছে তা আমি জানতে পেরেই চলে এসেছি।”

আহির ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।লোকটি পুনরায় কেশে বলে,”আসলে ডক্টর আমার সমস্যা হচ্ছে আমার বউ যখন রেগে যায় তার রাগ দেখে আমার হার্ট বিট স্পিড বেড়ে যায় তার সাথে আমার প্রেশার হাইহ হয়ে আসমান ছুঁয় ছুঁই করতে থাকে।তখন মনে হয় আমার দুনিয়া ঘুরে উল্টো হয়ে আছে।বউয়ের রাগ দেখে ডক্টর ওই সময় বুকের মধ্যে এক চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।”

আহির হেঁসে বলে উঠে,”ওহ ম্যান তুমি তো বউয়ের কেসে ফেঁসে আছো।সমস্যা নেই আসলে তোমার কোনো রোগ নেই।তুমি একটা ভালো সাইকোলজিস্ট দেখাও।আমার ওয়াইফ মুগ্ধতা আবরাহার আয়ানা একজন বেস্ট সাইকোলজিস্ট তুমি তার কাছে যেতে পারো। তা ছাড়া একটা থেরাপি দিতে পারি আমি তোমাকে।”

“জি জি বলুন ডক্টর বউয়ের রাগ থেকে বাঁচার থেরাপি যদি হয় উগান্ডা চলে যাওয়া আমি তাও মেনে নিবো আপনি শুধু থেরাপি টি বলুন।”

“শুনো বউ রেগে গেলে তাকে প্রথমে তার সব কথা বলতে দিবে তারপর তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে যদি তোমার দোষ না থাকে তাও চাইবে,কারণ নিজের দোষ না থাকলেও বউয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া কোনো ছোট হয়ে যাওয়ার মত ব্যাপার না।তারপর তাকে কাছে টেনে টপাটপ কয়েকটা চুমু খাবে।”

লোকটি চোখ বড় বড় করে বলে,”ওহ।”

” তাও যদি রাগ না কমে তাহলে ভালো করে জড়িয়ে ধরে তোমার তার প্রতি ভালো ফিলিংস গুলোর কথা বলে আবার টপাটপ করে চুমু খেয়ে নিবে দেখবে রাগ শূ শূ করে উড়ে যাবে।এইটাকে বলে চুমু থেরাপি।বউয়ের রাগ কমানোর জন্য একটি অথেনটিক থেরাপি, চুমু থেরাপি।”

লোকটি ঠোঁটের কোণে এক বিজয়ী হাঁসির রেখা টেনে বলে,” থ্যাংক ইউ ডক্টর।”

“কিন্তু আরেকটি বিষয় হচ্ছে বউ যদি হয় আমার বউয়ের মত এই থেরাপি বেশিক্ষণ কাজে লাগবে না তোমায় তুলেই আছার মারবে।সাথে একটা জম্পেশ কেলনি খাবে।”

লোকটি কিছু বলবে তার আগেই আহিরের ফোন বেজে উঠে।আহির ফোন হাতে নিয়ে মুচকি হেঁসে বলে,”আমার বউ আমাকে কল দিয়েছে দাড়াও একটু কথা বলেনি।”

ফোন রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে মুগ্ধতা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”এই হারামী বেটা কই তুই?তোর আসার কথা কখন ছিল তোর আদও মনে আছে আজকে আমাদের কত কাজ করার আছে?আরেহ আমি একা কাজ করতে করতে বেকা হইয়া গেসি ভাই!তুই তাড়াতাড়ি আয় নাহয় তোরে আমি!”

আহির বোকা বোকা হেঁসে বলে,”বউ কুল কুল আমি আসছি আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করো।”

“তোর অপেক্ষার খেতায় আগুন।তাড়াতাড়ি আয় তুই।”

“ঠিক আছে।”, আহির ফোন রেখে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে,”আসলে বউ অনেক মিস করছিল তো তাই ফোন করে বলল ডার্লিং তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসো নাহয় আমি তোমাকে আদর করবনা।”

লোকটি হেঁসে বলে,”আপনার ওয়াইফ আপনাকে অনেক ভালোবাসে।অনেক সম্মান করে বুঝতেই পারছি।”

“অবশ্যই সে আমাকে অনেক ভালোবাসে।আর সে আমাকে যা সম্মান করে না মাঝে মাঝে তা দেখে আমি বিস্ময়ের চরম সীমায় চলে যাই।”

.
লায়ানা,আহনাভ নেক্সট ইন ইন্ডাস্ট্রির ভিতর প্রবেশ করতেই আচমকা একটি ছেলে লাফ দিয়ে লায়ানার সামনে এসে বলে,”সিইও আই মিস ইউ সো মাচ।সিইও আমি টো ছুটিতে গিয়েছিলাম।কিন্টু আমি জটন জানতে পেরেইছি আপনি আবার ব্যাক করেছেন আমি নাচতে নাচতে চলে এসেইছি।”

আহনাভ বিড়বিড় করে বলে,”এর বাংলায় এমন দুর্ভিক্ষ লাগসে কেন ভাই!”

লায়ানা বোকা বোকা হেঁসে বলে,”কিন্তু আমি যে তোমার নাম ভুলে গিয়েছি কী যেনো তোমার নাম?”

ছেলেটি তার গায়ের টি শার্ট এর দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে, “আই নো সিইও ইউ ফরগেট মাই নেম এভরি টাইম।”

লায়ানা ছেলেটির টি শার্ট এর দিকে তাকিয়ে বলে,” ওহ অরোরা ইজিয়ান।”,কিছু একটা ভেবে লায়ানা আবার বলে উঠে,”এই শুনো এখন থেকে তোমার নাম ইজি শেষ এইবার আর আমি ভুলবো না।”

ইজিয়ান হেঁসে বলে,”ওকে আওয়ার কিউটি সিইও।”

আহনাভ ভ্রু কুচকে তাকায়।লায়ানা বলে উঠে,”আহনাভ জানো আমি সবসময় ইজির নাম ভুলে যাই তাই ও ওর নাম দিয়ে একটা টি শার্ট’ই বানিয়ে ফেলেছে।ইজি আমার পছন্দের এম্পয়দের মধ্যে একজন।ওর এই খরা লাগা বাংলা আমার কাছ থেকেই শিখেছে।”

“ওহ সিইও এহ’ইটা আপনার হাসবেন্ড?”

“হম ইজি।”

“ওহ কিউটির হাসবেন্ড আপনি ঝানেন আমি কি কি শিখেছি বাংলা?”

“হম কী”

“আমি হা’রা’ম’জা’দা, ইজিয়ান এর বা’চ্চা, শ’য়’তা’ন এর ছামচা,তোর চৌদ্দ গুষ্টির নাম মো’হনে করিয়ে দিবো বলে দিচ্ছি, হা’রা’মী আরো অনেক সুন্দর সুন্দর কথা শিখেছি।”

আহনাভ ঘাড় কাত করে লায়ানার দিকে তাকাতেই লায়ানা সামনে হাঁটা ধরে বলে,”আহনাভ কেবিনে আসো।”

আহনাভ দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলে,”ইজিয়ান তুমি এইসব বলো না এইগুলো সুন্দর সুন্দর জিনিস না ভাই এইগুলো গালি!আমি তোমাকে পরে ভালো কিছু শিখাবো।”

.
লায়ানা নেক্সট ইন এর সব কাজ শেষ করে ,প্রজেক্ট প্লেসে চলে যায় আহনাভের সাথে।কেমন কাজ চলছে ঘুরে ঘুরে সব দেখে নিচ্ছে লায়ানা হঠাৎ আহনাভ লায়ানার হাত টেনে সামনের একটি চেয়ারে বসে লায়ানাকে নিজের কোলে বসিয়ে বলে,”রেস্ট করো অনেক ঘুরে ঘুরে চেক করেছো সব।”

লায়ানা চোখ বড় বড় করে বলে,”এই আহনাভ ছাড়ো এইখানে কত মানুষ বিল্ডিংয়ের কাজ করছে দেখে কী ভাববে।”

“কেউ কিছুই ভাবছে না শুধু তুমিই বেশি বেশি ভাবছো।আমি আমার বউকে আমার কোলে বসিয়ে রেস্ট করাচ্ছি তাতে কার কি?”

লায়ানা উঠতে নিলে আহনাভ আরো শক্ত করে লায়ানার কোমড় জড়িয়ে ধরে।একজন স্টাফ এসে দুই পেকেট খাবার,সামনের একটি ছোট টেবিল টেনে দিয়ে তার উপর রেখে চলে যায়।লায়ানা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আহনাভ ছার বলছি তুই আমার মান সম্মান সব খেয়ে দিবি বেডা।”

আহনাভ হো হো করে হেসে উঠে।লায়ানার কোমড় বাম হাতে শক্ত করে চেপে ধরে ডান হাতে খাবার নিয়ে লায়ানার মুখের সামনে তুলে বলে,”নাও খেয়ে নাও।”

“আমাকে ছাড়ো নাহলে খাবো না।”

“তুমি না খেলে আমিও না ছেড়ে সবার সামনেই টপাটপ করে চুমু খাবো তখন কি করবে?”

লায়ানা দুই হাতে কান চেপে ধরে বলে,”ইশ কী বেশরম লোক।”

“এইবার খেয়ে নাও পাখি।”

লায়ানা এতদিনে ঠিক বুঝে উঠেছে লোকটি খুব ঘাড় তেরা লোক এখন আরো কথা বললেও কোনো কথা শুনবে না চুপচাপ খেয়ে নেয়াই শ্রেও মনে করলো।

.
গোধূলি লগ্ন চলছে,আকাশ কমলা হলুদ রঙের আভায় এক অসাধারণ রূপ ধারণ করেছে।লায়ানা,আহনাভ দুজনেই বাড়িতে চলে এসেছে,বাড়িতে আসতেই আসতেই রাত আটটা বেজে যায় দুজনের।

আহনাভ বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই পিছন থেকে লায়ানার চোখ একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে বলে,”আমার হাত শক্ত করে ধরো আমার সাথে সাথে চলো।”

“আহ আহনাভ কী করছো?চোখের কাপড় খোলো।”

“চুপ চলো আমার সাথে।”

লায়ানা আহনাভের হাত ধরে ধরে এগিয়ে যায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে আবার হাঁটা ধরে।হঠাৎ আহনাভ থেমে গিয়ে লায়ানার চোখের কাপড় খুলে দেয়।লায়ানা কয়েকবার চোখের পলক ফেলে চোখের সামনে ঘোলাটে ভাব সরিয়ে ভালো করে তাকায়।

লায়ানার চোখের কোণে পানি এসে জমাট বেঁধেছে।লায়ানা বলে উঠে,”এত কিছু আমার জন্য আহনাভ?”

“নাহ আমার সেকেন্ড বউয়ের জন্য।”

লায়ানা হেঁসে উঠে।লায়ানাকে ছাদে নিয়ে এসেছে আহনাভ।পুরো ছাদ জুড়ে গোলাপের পাঁপড়ির ছড়াছড়ি,ছোট ছোট মোমের আলোয় পুরো ছাদ হলুদ আলোয় ভরে উঠেছে।চারিপাশে লাল বেলুনের ছড়াছড়ি।

আচমকা পিছন থেকে মুগ্ধতা,আহির আর আহান পার্টি পপার বম্ব ফাটিয়ে উঠে।মুগ্ধতা,আহির, ,আহান আহনাভ একসাথে বলে,”হেপী বার্থডে টু ইউ,হেপী বার্থডে টু ইউ আওয়ার ডিয়ার হায়াতি।”

লায়ানা পিছনে ফিরে বিস্মিত চাহনিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা,আহির, আহনাভের দিকে,আজ তার জন্মদিন তার নিজেরও মনে ছিল না।ঘড়ির কাঁটা এখন বারোটার কাঁটা ছুঁয়ে বারোটা এক বাজে।মুগ্ধতা ফুড সার্ভিং ট্রলিটি এগিয়ে নিয়ে মাঝে রেখে বলে,”কীরে দাড়িয়েই থাকবি নাকি কেক’ও কাটবি।” ফুড সার্ভিং ট্রলিটি ফুল দিয়ে সাজানো তার মাঝে একটি কেক।

আহনাভ লায়ানার হাত ধরে ফুড সার্ভিং ট্রলিটির সামনে এনে দাড় করিয়ে বলে,”নাও এইবার কেক কেটে ফেলো পাখি।”

লায়ানা ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে পাশ থেকে ছুরি নিয়ে কেক কেটে প্রথমেই মুগ্ধতাকে খাওয়ায় তারপর আহান,আহনাভ আর আহিরকে।

আহান লায়ানার সামনে এসে মাথায় হাত রেখে বলে,”যুগ যুগ জিও হায়াতি।এক ডজন বাচ্চার জননী হও এই দোয়াই করি।সামনে আমাকে মামা আর আপুকে খালামণির সাথে চাচী হওয়ার সুযোগ করে দিও।”

লায়ানা চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে,”এক ডজন পোলাপান কে সামলাবে তুই?”

“সমস্যা নেই আমি মামা হয়ে আমার এক ডজন ভাগ্নি ভাগিনাদের সামলাতে পারবো।”

আহনাভ হেঁসে বলে উঠে,”আহ আহান শালা হোক তো তোমার মত।তো কী বলো পাখি আমরা এক ডজন পোলাপান ডাউনলোড দেয়ার মিশনে নেমে যাই?”

লায়ানার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করে।মুগ্ধতা এগিয়ে এসে বলে,”আমিও আমার এক ডজন ভাগিনা ভাগ্নিদের অপেক্ষায় রইলাম তাহলে।”,বলেই মুগ্ধতা আহিরের হাত ধরে দৌড়।

“বেস্ট অফ লাক।”,বলেই আহান ও দৌড়।

আহনাভ ফিচেল হেঁসে লায়ানার হাত টান দিতেই লায়ানা আহনাভের বুকে এসে বা’রি খেয়ে সরে যেতে নেয় আহনাভ লায়ানার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,”এত পালাই পালাই কীসের পাখি।আজ আমাদের এক ডজন বাচ্চার ডাউনলোডের মিশনে তুমি আমি নেমে যাই কেমন হয়।”

লায়ানা মৃদু কন্ঠে বলে,”একদম ভালো না।”

আহনাভ লায়ানাকে ঘুড়িয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,”আমার তো মনে হচ্ছে খুব ভালো হবে।”,বলেই আহনাভ লায়ানাকে কোলে তুলে চোখ মেরে হাঁটা ধরে।ছাদের পাশের ঘরটিতে লায়ানাকে নিয়ে প্রবেশ করতেই লায়ানার চোখ বড় বড় হয়ে যায়,পুরো ঘর গোলাপ দিয়ে সাজানো।

আহনাভ বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে লায়ানাকে শুয়ে দেয়,লায়ানার উপর নিজের ভর ছেরে দিয়ে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে,”বউ শুভ জন্মদিন।”লায়ানা মুচকি হাসে।আহনাভ লায়ানার ওষ্ঠে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”আমি আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করি কারণ আমি তোমাকে পেয়েছি।আমি জানিনা আমি তোমাকে তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসতে পেরেছি কিনা।কিন্তু তোমার কিছু হলে এই আহনাভের মৃত্যু অনিবার্য।”

লায়ানা আহনাভকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”এত ভালবাসো আমায়!তুমি আমায় বাকিটাও উন্মাদ বানিয়ে ফেলবে আহনাভ।অনেক অনেক ভালোবাসি তোমায় আমি।তোমাতে পুরোটাই ডুবেছে লায়ানা যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ নেই।”

আহনাভ লায়ানাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে,দুই চোখে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”আমিও অনেক ভালোবাসি আমার হায়া পাখিকে।আচ্ছা কী গিফ্ট চাও বলো তো আমার থেকে?”

লায়ানা মুচকি হেসে আহনাভের গলা জড়িয়ে অধরে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”আমি তো আমার জীবনের প্রত্যেকটি উপরহারে তোমাকে চাই।তুমি আমার হয়ে থেকে যেও মৃত্যুর আগ অব্দি,এইটাই আমার কাছে বড় উপহার হয়ে থাকবে।”

আহনাভ হাঁসে,লায়ানা পুনরায় বলে,”এই হাঁসি আমার খুব প্রিয় কখনো মুখ গম্ভীর করে থাকবে না এমন করেই হাসবে।”,বলেই লায়ানা আহনাভের মুখে উম্মাদের মত ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতে থাকে,আহনাভ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ধীরে ধীরে লায়ানাকে নিজের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে,লায়ানা বারংবার কেঁপে উঠে প্রত্যেকটি স্পর্শে।প্রত্যেকটি স্পর্শে যেনো ভালোবাসা লুকিয়ে আছে আহনাভের।

.
মুগ্ধতা,আহির দুজনে ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।আহির লাইট অফ করে মুগ্ধতাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।মুগ্ধতা আহিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আহির কেমন আছেন?”

আহির বলে,”খুব খুব খুব ভালো।”

পরমুহুর্তে কিছু একটা মাথায় আসতেই আহির বিস্মিত চাহনিতে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলে,”কি বললে আমাকে নাম ধরে বললে?উফফফ মুগ্ধ রানি আমাকে এভাবেই নাম ধরে বলবে খুব ভালো লাগে ইচ্ছে করে তোমাকে কয়েকটা টপাটপ চুমু দিয়ে দি।”

মুগ্ধতা আহিরের হাতে কামড় দিতে দিতে বলে,”খালি এইসবই আপনার মাথায় আসে।ভালো কিছু মাথায় আনতে পারেন না?”

“উফফ বউ কি করছো ব্যথা পাই।আর তোমার মাথায় কি এরকম কামড়ানোর বুদ্ধিই আসে?”

মুগ্ধতা আহিরের ঘাড়ে জোরে কামড় বসিয়ে দেয়।মুগ্ধতা আহিরকে ছেড়ে দিতেই আহির মুগ্ধতার উপর উঠে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে,”আমার মাথায় এতক্ষন কিছুই আসছিল না ভদ্র বাচ্চাদের মতো ছিলাম কিন্তু তুমি থাকতে দিলে কই?”

বলেই মুগ্ধতার গাড়ে মুখ ডুবায় আহির।মুগ্ধতা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আহহহহ আহির ছাড়ুন খুব সুরসুরি লাগছে ছাড়ুন।”

“নাহ ছাড়ব না। তোমাকে এভাবেই এখন থেকে শাস্তি দিবো। রাগ করবে করো সমস্যা নেই।তুমি রাগ করে কথা বলা অফ করবে এমন করে তোমার ঘাড়ের কাছে যাবো আর তুমি কথা বলা শুরু করে দিবে।ওয়াও আহির ইউ আর সো ইন্টেলিজেন্স খুব ভালো বুদ্ধি সাব্বাস বেটা।”আহির মুগ্ধতার ঘাড় থেকে মাথা তুলে এক হাত উচু করে নিজেকে সাবাসি দিয়ে কথা গুলো বলছিল।তাল সামলাতে না পেরে মুগ্ধতার উপর পড়ে যায়।

মুগ্ধতা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আহহহহহ আহিররররর আপনার মতো এত মোটা সত্তর কেজির বস্তা আমার উপরে পড়লো আল্লাহ বাচাও!উঠুন উপর থেকে।”

আহির উঠে বলে,”আল্লাহ আমার কান গেল রেএ।আনার বউ কি জোরে চেঁচায় আল্লাহ!পাশের বাড়ির মানুষ’ও জেগে যাবে কি উল্টো পাল্টা ভাববে!ইশ!কী শরম!”

মুগ্ধতা পুনরায় চেঁচিয়ে বলে,”চেঁচাবো না তো কি করব আপনাকে চুমু দিবো?”

আহির মুগ্ধতার মুখের কাছে ঝুঁকে নিজের ঠোঁট দেখিয়ে বলে,”কথাটা মন্দ বলোনি নাও চুমু দাও।এখানে।ফাস্ট কয়েকটা টপাটপ করে চুমু দিয়ে দাও তো।”

মুগ্ধতা দুষ্টু হেসে আহিরের গলা জড়িয়ে বলে,”সোয়ামি কাছে আসুন প্লিজ।”আহির এইবার মুগ্ধতা কে আর কিছু না বলতে দিয়ে আহির মুগ্ধতার অধরে অধর ছুঁয়ে দেয়।আহির ব্যস্ত হয়ে যায় তার মুগ্ধকে নিজের করে নিতে।

.
অন্ধকার ঘরটির ফ্লোর র ক্তে ভেসে আছে, ঘরটির মাঝেই অভ্র’র থে ত লে যাওয়া শ রী র পড়ে আছে।অভ্র’র সামনেই বসে থাকা পুরুষটি তার হাতে থাকা ছু রি বৃদ্ধা আঙ্গুলে স্লাইড করতে করতে বলে,”নিজের ভুলের জন্য নিজের মৃ ত্যু কে ডেকে আনলি অভ্র।তোকে আমার বাবেল এর মালিক বানিয়েছি মেয়েদের সাথে ঘুরাঘুরি করার জন্য না।আমি নারী পা চা র কা রী হয়েও কোনো নারী কে ছুঁয়েই দেখলাম না আর তুই কিনা দিনের পর দিন মেয়েদের সা থে বে ড শে য়া র!তুই কী করলি আমার বড় শ ত্রু মা ফি য়া লেডি মুগ্ধতাকে বাবেল এ ঢুকার পথ করে দিলি।তোর জন্য আমার বাবেল আজ ধ্বং’স স্তু পে পরিণত হয়েছে।”

অভ্র’র সামনে বসে থাকা পুরুষটি গর্জে বলে উঠে,”শুনে রাখ মুগ্ধতা,লায়ানা আমি আমার নিজের ভাইকে নিজের হাতে মে রে ছি তাহলে তোদের জন্য তো এক ভ য় ঙ্ক র পরিণতি ডেকে আনবো। ”

#copyrightalert
#চলবে।

কেমন আছেন প্রিয় পাঠকগণ?আপনাদের কী গল্পটা বোরিং লাগছে?..🍁🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here