অন্তহীন💜 #পর্ব_১৯ #স্নিগ্ধা_আফরিন

0
714

#অন্তহীন💜
#পর্ব_১৯
#স্নিগ্ধা_আফরিন

বৃষ্টির পরের পরিবেশ স্নিগ্ধতায় ছেয়ে আছে। পশ্চিম দিগন্তে আদিত্য প্রায় ডুববে ডুববে। মেহেদী রাঙ্গা অম্বর দেখলেই যেনো নেত্র জুড়িয়ে যায়। দখিনা বাতাসে কিশোরীর চুল গুলো উড়ছে। ছাদের রেলিং এর উপর বসে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে চৈতি। চৈতি পড়ে যেতে পারে বলে চৈতির কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রহন।
চৈতি ঊর্ধ্বদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাসীন গলায় বললো,”আপনি অনেক ভয়ংকর কথা বলেন।যা শুনলে আমার বুকের বা পাশে ধক করে উঠে।”

চৈতির কথা শুনে হাসলো প্রহন। চৈতি কে রেলিং এর উপর থেকে নামিয়ে দিয়ে বললো,”আমি সার্থক।”

প্রহনের উত্তর শুনে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল চৈতির। বুঝতে না পেরে বললো,”মানে?”

“মানে?বড় হও বুঝতে পারবে। এখন নিচে চলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।”

চৈতি আর কিছু বললো না।জানতে ও চাইলো না।কারন সে ভালো করেই বুঝতে পেরে গেছে বকবক করে মাথা নষ্ট করলেও প্রহন কিছুই বলবে না।নিজ থেকে বুঝে নিতে বলবে।জানা আছে চৈতির।
প্রহন ছাদ থেকে নামার আগে চৈতি নেমে পড়ে।ড্রইং রুমের সোফায় বসে চা খাচ্ছেন রেদোয়ান চৌধুরী।
চৈতি কে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাক দিলেন। চৈতি মুচকি হেসে এগিয়ে যায় সে দিকে। রেদোয়ান চৌধুরীর পাশে বসে নিজ থেকেই বলে,”আব্বু আপনাকে যে চকলেট এর কথা বলে ছিলাম ভুলে গেছেন তাই না?”

চৈতির কথা শুনে জিভে কামড় দিলেন রেদোয়ান চৌধুরী।যার অর্থ তিনি ভুলে গিয়ে ছিলেন।
অপরাগতা প্রকাশ করে বললেন,”সরি মা। আমি ভুলে গেছি।বয়স বেড়েছে তো।বুড়ো মনের খেয়াল ছিল না।”

চৈতি মুচকি হেসে বললো,”কিচ্ছু হবে না। আপনার ছেলে আছে না। উনি না হয় নিয়ে আসবেন।”

প্রহন সেই সময় সিঁড়ি বেয়ে সে দিকে আসছিল। চৈতির কথা শুনে দ্রুত এগিয়ে এসে বললো,”কী আনবো আমি? কিছু আনতে পারবো না।”

প্রহনের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল চৈতির।বসা থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। মিসেস ইয়াসমিন তখন বিকেলের নাস্তা বানাচ্ছিলেন। চৈতির গোমড়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,”কী হয়েছে?মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

চৈতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৌন কন্ঠে বললো,”নাহ!কিছু হয়নি।”

মিসেস ইয়াসমিন চৈতির দিকে এগিয়ে এসে বললেন,”প্রহন কিছু বলেছে?”

“নাহ!কী বলবে?বাদ দাও তো।”

“ওহ বুঝতে পেরেছি।মা বাবার কথা মনে পড়ছে নিশ্চয়ই?”

চৈতি উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে ফ্লোরে পায়ের আঙ্গুল ঘষতে লাগলো।
বসার ঘর থেকে প্রহনের গলার স্বর শোনা যাচ্ছে।সে চিল্লিয়ে বলছে,”এক কাপ চা দিয়ে যাও আমাকে।”

মিসেস ইয়াসমিন মুচকি হাসলেন। চুলার উপর থেকে চায়ের পাতিল নামিয়ে কাপে ঢেলে চা বানিয়ে দিলেন। চৈতির দিকে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে মিসেস ইয়াসমিন বললেন,”যা ওরে চা টা একটু দিয়ে আয়।”

চৈতি মিসেস ইয়াসমিন এর মুখের দিকে তাকিয়ে তার হাত থেকে চায়ের কাপ টা নিলো।যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মিসেস ইয়াসমিন পেছন থেকে ডেকে বললেন,”চৈতি শোন..”

চৈতি থামলো। পেছনে ফিরে মিসেস ইয়াসমিন এর দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
মিসেস ইয়াসমিন হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন চৈতি কে। চৈতি ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যায়। মিসেস ইয়াসমিন চৈতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”প্রহন শুধু তোর জন্য আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছে।”

“জানি তো আমি। বলেছেন আমাকে কিন্তু শুধু যে আমার জন্য আসছে তা জানতাম না।”
শেষের কথাটা একটু অবাক হয়েই বললো চৈতি।

“ওরে একটু সময় দিস মা।ওর কাছাকাছি থাকিস।”

মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো চৈতির। চৈতি ভিতী কন্ঠে বললো,”আমি প্রস্তুত না ভালো মা।”

চৈতির কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন ভ্রু যুগল কুঁচকে কিছুক্ষণ চুপ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিসেস ইয়াসমিন কে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে ফেলল চৈতি। মিসেস ইয়াসমিন ফিক করে হেসে উঠলেন।হাসি যেন থামছেই না তার।
চৈতি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে চোখ বড় বড় করে মিসেস ইয়াসমিন এর দিকে তাকিয়ে রইল।

মিসেস ইয়াসমিন কোনো রকম হাসি থামিয়ে বললেন,”মেয়ে আমার অনেক কিছুই বুঝে। কিন্তু মা আমি তো অন্য কিছু কে উদ্দেশ্য করে বলি নাই। আমি শুধু বলেছি, প্রহনের পাশে থাকতে।ওর প্রতি একটু খেয়াল রাখতে।ওর কাছাকাছি থেকে ওর ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলো জানতে।”

মিসেস ইয়াসমিন এর কথার অর্থ বুঝতে পেরে লজ্জায় নুয়ে পড়লো চৈতি।এক নিমিষের জন্য মনে হলো,ফ্লোর ফাঁক হয়ে যাক।সে ভেতরে ঢুকে যেতো।মনে মনে নিজেকে নিজেই ইচ্ছা মতন বকলো।”ইশশ কী বলে ফেললাম”। ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।

মিসেস ইয়াসমিন হাসতে হাসতে বললেন,”যা যা, জলদি যা।চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

চৈতি দ্রুত পায়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মিসেস ইয়াসমিন এর সামনে পড়লেই লজ্জায় তাকাতে পারবে না।

বসার ঘরে এসে দেখে কেউ নেই। রেদোয়ান চৌধুরী ও নেই। প্রহন ও নেই। চৈতি ভাবলো প্রহন হয় তো রুমে আছে তাই সে রুমে চলে গেল। রুমে এসে সে সত্যিই প্রহন কে দেখলো। প্রহন কে দেখলেই লজ্জা লজ্জা লাগছে কেন জানি।হয় তো তখন কার ঘটনায়। প্রহন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা খুঁজছে। চৈতি প্রহনের দিকে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে বললো,”আপনার চা।”

প্রহন মুচকি হেসে চৈতির হাত থেকে চায়ের কাপ টা নেওয়ার সময় চৈতির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”তোমার মুখ এত লাল কেন পিচ্চি বউ?”

একটার পর একটা কথায় লজ্জার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে শত গুণ। প্রহনের মুখে পিচ্চি বউ ডাকটা শুনে মুখের লালাভ আভা বেড়ে গেলো আরো কয়েক গুণ।

“শুনুন, আপনি এই সব নামে ডাকবেন না।”

চৈতির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে গেলো প্রহনের। চায়ের কাপ টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে চৈতির দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলো প্রহন। অভাবিত রুপে প্রহন কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে চমকে উঠলো চৈতি। প্রহন এগিয়ে গেলে সে পিছিয়ে যায়।যেতে যেতে একটা সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় চৈতির।‌”দে-দে-দেখুন আপনি এ-এই ভাবে এগোবেন না। হৃদয়ের স্পন্দন এর গতি বেড়ে মরে যাবো আমি।”
কথা আটকে আটকে বললো চৈতি। প্রহন তার পাশের দেয়ালে হাত রাখতেই কেঁপে উঠে চোখ মুখ খিঁচে ফেললো চৈতি।
চৈতির মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে প্রহন। মুখের সামনে আসা চুল গুলো কে কানের পিছে গুঁজে দিল আলতো করে। প্রহনের আলতো স্পর্শে কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায় চৈতির।কান গরম হয়ে গেল। লজ্জার লালাভ আভায় আচ্ছাদিত হলো নবিনা কিশোরীর আনন খানি। চৈতির লজ্জায় নুয়ে পড়া মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে প্রহনের। চৈতি কে আরো একধাপ লজ্জায় ফেলতে চৈতির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো,”আমার শয়তান মনে শয়তানি ইচ্ছে উদয় হয়েছে।”

“দেখুন আমি এবার দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবো নিশ্চিত।”

চৈতির কথা শুনে হাসতে হাসতে চৈতির কাছ থেকে দূরে সরে এলো প্রহন।”শুনো আমি তোমাকে পিচ্চি বউ বলেই ডাকবো।যখন যা বলে ডাকতে মন চাইবে তখন তা বলেই ডাকবো।এতে তোমার ভালো লাগলো কিংবা না লাগলো তাঁতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।বুঝছো?না বুঝলে নিজে নিজেই বুঝে নাও।”

অসহায় দৃষ্টিতে প্রহনের দিকে তাকিয়ে আছে চৈতি।বিড় বিড় করে বললো,”কী এক মহাজ্বালা। উনি কি বুঝেন না আমার লজ্জা লাগে।”

চৈতির বিড় বিড় করে বলা কথা টা কান এড়িয়ে যায় না প্রহনের। চায়ের কাপ টা হাতে নিতে নিতে বলে উঠলো,”আমি বুঝলাম না, লজ্জাবতী গাছের পাতা ছুঁলে ওরা লজ্জায় নুয়ে পড়ে কিন্তু তোমাকে তো ছোঁয়া দূরের কথা সামান্য বউ বলে ডাকলেই এত লজ্জা।”

চায়ের কাপে চুমুক দিতেই বিরক্ত হলো প্রহন।চা ঠান্ডা হয়ে শরবত।

“খান চা শরবত খান। আমি আর গরম করে দিতে পারবো না।”কথাটা বলেই চৈতি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে প্রহন চৈতির ওড়নার কোনা ধরে টান দেয়। চৈতি থেমে যায়। প্রহন চৈতির দিকে এগিয়ে এসে চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো,”কোনো লোন তো আমায় দাও নি। তার পর ও তোমার প্রতি আমার এত ইন্টারেস্ট বেড়ে যাচ্ছে কেন?”

#চলবে,,,,,

(বিঃদ্রঃ আসসালামুয়ালাইকুম ♥️ গতকাল গল্প দিতে পারিনি এর জন্য দুঃখিত। আমি আবার চাশমিশ 🤓 মানে অর্ধ কানা।চশমা ছাড়া দেখি না কিছু। সারাদিন এ একটু একটু করে লিখি।গত কাল ব্যস্ত থাকায় লিখা না হওয়ায় দিতে পারিনি।এক নাগাড়ে মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না 😒। বুঝতে পারবেন আশাকরছি।আর যারা সব পর্বের লিংক চাচ্ছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। আমি এখনো লিখেই শেষ করিনি। চলমান গল্পের লিংক দিবো কোথা থেকে? অদ্ভুত!😑😑)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here