#সুখের_নেশায় পর্ব ২৩

0
758

#সুখের_নেশায় পর্ব ২৩
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা

পর পর কয়েকজন ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে আসে। চৈত্রিকা বিমর্ষ চেহারা নিয়ে তাদের আসা যাওয়া অবলোকন করে যাচ্ছে। আচমকা কারো ডাকে পাশ ফিরে তাকায়। মিহিতা চমকিত নেত্রে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। যেন ভূত দেখেছে। অবাক স্বরে প্রশ্ন করে,
‘ কখনও স্যারের বাড়ি, কখনও অফিস। এখানে আসার কারণ? ‘
চৈত্রিকা কোনো প্রকার ভণিতা না করে জবাব দেয়,
‘ ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। ‘
মিহিতা যেন অদ্ভুত কিছু শুনেছে। চৈত্রিকার পাশে খালি জায়গায় বসে পড়ল কিছুটা গা ঘেঁষে। জিজ্ঞেস করল,
‘ স্যার জানে?’
‘ হু। ‘

বড়সড় চোখে তাকায় মিহিতা। ভাবুক হয়ে বলে,

‘ তাহলে জব তো তোর কনফার্ম। আর সেই রাতে কি হলো বললি না তো। ‘
চৈত্রিকা দ্বিতীয় প্রশ্ন টা এড়িয়ে গিয়ে প্রথমটার পৃষ্ঠে উত্তর দিল,

‘ আমি সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় জব টা হাসিল করে নিব মিহি। ‘

‘ স্যার যা স্ট্রিক্ট তোর নিজের যোগ্যতাই ছিনিয়ে নিতে হবে। এই অফিসে জয়েন করার পর অনেক শুনেছি স্যার কখনও কারো উপর অনুগ্রহ করে না। একটা মানুষ এতো পাথর কিভাবে হয় চৈত্র?’

পাথর?নিজের স্বামীর ব্যাপারে এমন প্রশংসা শুনে নির্বাক চৈত্রিকা। পাথরই তো। নাহলে কি করে পারে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে ফেলে দূরে দূরে থাকতে!সেই সুন্দরী মেয়েটা পুনরায় এসে বিনয়ী স্বরে বলে উঠল,

‘ আপনাকে ডাকা হচ্ছে ভিতরে। ‘

মিহিতা অল দ্যা বেস্ট জানিয়ে চলে যায়। চৈত্রিকা শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ভিতরে প্রবেশ করে নত মস্তকেই সালাম দিল। সালামের জবাব কানে ভেসে আসতেই চকিতে মাথা তুলে তাকায় চৈত্রিকা। প্রথমেই নজর গেল বৃহৎ কাঁচের দেয়ালে হাত রেখে উল্টো ঘুরে দাঁড়ানো সাফারাতের দিক। পিছন থেকেও লোকটাকে চিনতে একদমই কষ্টকর হয় নি চৈত্রিকার দ্বারা। কাঁচের দেয়াল ভেদ করে তুখোড় দৃষ্টি তার সুদূরের, যান্ত্রিক ভিড়ে। চৈত্রিকা চোখ সরিয়ে আনতেই দেখল এখানে সাফারাত ব্যতীত আরো দু’জন মানুষ উপস্থিত। অপরুপ সুন্দর গড়নের একটা মেয়ে। বয়স হয়ত চৈত্রিকার সমান হবে। অথবা তার চেয়ে কম। আরেকটা মোটাসোটা বয়স্ক লোক। মেয়েটা রিনঝিনে স্বরে বলে উঠল,

‘ হ্যাভ আ সিট। ‘

ধন্যবাদ জানিয়ে চৈত্রিকা চেয়ারে বসে। কিছুটা নার্ভাসনেস কাজ করছে তার মাঝে। চোখ দুটো না চাইতেও বার বার সাফারাতের দিকে চলে যাচ্ছে। অথচ একটাবার ঘুরেও তাকাচ্ছে না মানুষটা। এতো পাষাণ সাফারাত!গত রাত থেকে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে অন্তর, হৃদপিণ্ড। এটেনশন পাওয়ার নিমিত্তে মেয়েটা গলা ঝাড়ি দিল। থতমত খেয়ে নিজেকে সামলে নেয় চৈত্রিকা। মেয়েটা মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে,

‘ আপনার নাম?’
‘ চৈত্রিকা। ‘
‘ আগে পিছে কিছু নেই? ‘
‘ না। ‘
মেয়েটা এইবার চৈত্রিকার জমা দেওয়া সিভিটা তে চোখ বুলায়। সাবলীল কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
‘ ম্যারিড অর আনম্যারিড উল্লেখ করেন নি যে?’

চৈত্রিকা আঁড়চোখে সাফারাতের দিকে তাকালো। ততক্ষণে সাফারাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পকেটে এক হাত গুঁজে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে অপলক, স্থির। সম্মুখে দৃষ্টি মেলে যথেষ্ট নম্রতার সহিত পাল্টা প্রশ্ন করে চৈত্রিকা।

‘ এটা উল্লেখ করা কি জরুরি? ‘

‘ জরুরি না তবে আমাদের অফিসে ম্যারিড মেয়ে কর্মচারীর জন্য এক্সট্রা ফ্যাসিলিটিজ আছে। ম্যারিড মেয়েদের পক্ষে অফিসে রাত ৭টা পর্যন্ত সময় দেওয়া টা কঠিন। তাই যারা ম্যারিড তাদের পার্সোনাল লাইফ বিবেচনা করে আমরা হাফ টাইম কাজ করার সুযোগ দিয়ে থাকি। নয়ত দেখা যাবে অনেক বিবাহিত মেয়েদের নিজের জন্য কিছু করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ‘

মেয়েটার কথা কর্ণপাত হতেই চৈত্রিকা বিস্মিত হয়। এরকম একটা সুযোগ কেউ দেয় না। যার ফলে সংসারে সময় দিতে গিয়ে মেয়েরা নিজের জন্য কিছু করতে ভুলে যায়। সব স্বামী, শশুড় বাড়ির মানুষ তো সারাদিন বাহিরে কাজ করার অনুমতি দেন না। দেখা যায় সংসার করতে করতে নারী হারিয়ে বসে নিজস্ব সত্তা। এই পৃথিবীতে কেউ আপন হয় না। স্বয়ং স্বামীও না। আজকাল অহরহ ডিভোর্স হচ্ছে। পরের উপর নির্ভরশীল মেয়েদের হাঁটতে বসতে মুখ বুঁজে সহ্য করতে হচ্ছে নানা কটুক্তি, অপমান। নিজের পরিবারের লোকও ছাড় দেয় না এক্ষেত্রে। অবহেলা করে। চৈত্রিকা ম্যারিড বলতে গিয়েও বলল না। মনে অভিমান পোষে রেখে ক্ষীণ হেসে বললো,

‘ আনম্যারিড। ‘

সাফারাত চেয়ার টেনে সামনে এসে বসল। ধূসর রঙের চক্ষুদ্বয় হালকা লাল। কই একটু আগে তো ঠিক ছিল। অকস্মাৎ বদলে গেল কেন? চৈত্রিকা স্থবির নেত্রে তাকিয়ে রইল অনিমেষ। সাফারাত স্মিত হেসে বললো,

‘ জবটা না দিলে আপনি কেমন অনুভূত করবেন?’

চৈত্রিকা চমকায়। থতমত খেয়ে যায়। সচরাচর ইন্টারভিউ তে জিজ্ঞেস করা হয় আপনাকে চাকরিটা কেন দিব অথবা কেন আপনার চাকরি টা জরুরি। এখানে তার স্বামী এই অফিসের ওনার তাকে প্রশ্ন করছে জবটা না পেলে কেমন ফিল করবে!ইন্টারভিউ নেওয়ার আগে এমন একটা প্রশ্ন নিঃসন্দেহে যে কারো মনোবল,সাহস নিঃশেষ করে দেবার জন্য যথেষ্ট। চৈত্রিকা প্রথমদিকে দুর্বল হয়ে পড়ে। পরমুহূর্তেই কঠিন গলায় বললো,

‘ অবশ্যই আমি আনন্দ অনুভূত করব না। জবটা যেহেতু জরুরি, না পেলে দুঃখ পাবো। ‘

‘ আপনি আসতে পারেন। ‘

কাঠ কাঠ গম্ভীর কন্ঠে চৈত্রিকাসহ বাকি দু’জন ভড়কালো,হকচকিয়ে গেল। কারণ সাফারাত কারো সাথেই ক্রুদ্ধ স্বর ব্যবহার করে নি। চৈত্রিকা বুঝতে পারছে না সে কি বেশি কঠিন, ত্যাড়া কিছু বলে ফেলেছে? ও মানছে সাফারাত এখন শুধুই একজন বস। তাই তার ব্যবহার টা স্বাভাবিক। তবুও মনকে বুঝ দিতে কষ্ট হচ্ছে চৈত্রিকার। গভীর ভালোবাসায় সিক্ত রাখে যে লোক তার কন্ঠের গম্ভীরতা বক্ষে আঘা*ত হানে। ঠোঁট চেপে চৈত্রিকা নিজেকে সামলে নেয়। সালাম দিয়ে বেরোতেই সাফারাত উঠে দাঁড়ায়। সাফারাতের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট মিস মোনা কে তড়িঘড়ি করে বললো,

‘ বাকি ইন্টারভিউ গুলো দু’জন মিলে কমপ্লিট করে ফেলবেন। আমার জরুরি কাজ আছে। আসছি। ‘

মোনা কিছু বলার চেষ্টা করতেই সাফারাত হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল। দরজা খুলে বড় বড় পা ফেলে হারিয়ে গেল চোখের সামনে থেকে। হঠাৎ কি হলো সাফারাতের মোনা ঠাহর করতে ব্যর্থ হচ্ছে রীতিমতো। তবে চৈত্রিকা নামের মেয়েটার প্রতি প্রগাঢ় সন্দেহের সৃষ্টি হলো মানসপটে। মনে হচ্ছে কিছু তো একটা আছে সাফারাতের সাথে এই মেয়ের যোগসূত্র। যদি সত্যিই কিছু থাকে অথবা সাফারাত এক পলকেই চৈত্রিকার প্রতি আকৃষ্ট হয় তাহলে মেয়েটাকে একদম এই অফিসে টিকতে দিবে না মোনা। নতুন জব নিয়েছে সে। জব টা তার কাছে ম্যাটার করে না। ও শুধু এই অফিসের কিছু কিছু মেয়েদের ন্যায় সাফারাতের সান্নিধ্য চায়,সাফারাতকে চায়।

লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে চৈত্রিকা। দুঃখ, আফসোস, অপমান, আঘাত সব ছাব্বিশ বছরের জীবনে সয়ে গেছে ওর। এসবকে আর নিজের উপর চওড়া হতে দিতে চায় না চৈত্রিকা। সাফারাত এতো নিষ্ঠুর!হতে পারে কাজের ক্ষেত্রে শক্ত মানুষ সে। নারীদের অল্পতে ঝরে পড়ে জলবিন্দু কণা। যদিও চৈত্রিকার চক্ষু কোটর হতে জল গড়ায় নি। তবুও ভিতরে ভিতরে যন্ত্রণার বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। লিফটে একজন ব্যক্তি ছিল। এই সময়টা কর্মচারীদের চলাচল কম থাকে। লোকটা বেরিয়ে পড়তেই চৈত্রিকা ঢুকে যায়। বন্ধ করতে যাবে তার ঠিক আগ মুহুর্তে সাফারাত ঢুকে পড়ে হুড়মুড়িয়ে। চৈত্রিকার হাত টা টেনে নিজের বুকের উপর এনে ফেলে কোমল দেহখানি। কোমর পেচিয়ে শক্ত করে নিজের মাঝে আবদ্ধ করে লিফটের দরজা বন্ধ করে দেয়। আচম্বিত, সহসা এহেন কান্ডে চৈত্রিকার হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার জোগাড়। প্রচন্ড গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে হৃদপিণ্ড। সাফারাত একটু নিচু হয়ে চৈত্রিকার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল । শুষ্ক ওষ্ঠযুগল ছুঁয়ে দিতে শুরু করে ক্ষণে ক্ষণে । ক্রুদ্ধ, রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল,

‘ আপনি আনম্যারিড চৈত্র? ‘

নিস্তব্ধ, নির্বাক চৈত্রিকা। সাফারাতের অধরছোঁয়ায় শ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। দু’হাতে ঠেলে সরানোর প্রয়াস করতেই বাঁধন শক্ত হলো। ঠোঁটের স্পর্শ হলো গাঢ়,তীব্র। চৈত্রিকা আমতা আমতা করে বলে,

‘ বিয়ে করে হাসবেন্ড খবর না নিলে নিজেকে ম্যারিড বলে দাবি কেন করতে যাব?’

সাফারাত গভীর ছোঁয়া একে দিয়ে মুখ উঠিয়ে আনল। কিন্তু চৈত্রিকাকে নিজের থেকে সামান্য একটুও আলাদা করল না। শাড়ি ভেদ করে বলিষ্ঠ দু’টো হাত গিয়ে থামে উন্মুক্ত কোমরে,পেটে। চৈত্রিকার পেট মোচড় দিয়ে উঠল। এতো ঘোর লাগা স্পর্শ নিয়ন্ত্রণহীন করে দিচ্ছে তাকে।

‘ রাতে অনেক ক্লান্ত থাকার দরুন চোখ লেগে যায়। সকালে ইচ্ছে করে ফোন দেই নি। তাহলে যে ইন্টারভিউ তে আপনি দুর্বল থাকতেন। আপনি কি জানেন আমার প্রতি অভিমান, আমার কঠোরতা আপনাকে কঠোর হতে বাধ্য করেছে?আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে?’

চৈত্রিকা নিশ্চুপ। কিন্তু মনে মনে মানতে হলো সাফারাতের বলা কথাগুলো সঠিক এবং সত্য। অভিমান থেকেই তো নিজেকে স্ট্রং রাখতে পেরেছে। চৈত্রিকা একদম বুঝতে পারে না সাফারাতের মন, আকার ভঙ্গি। কেবল উপলব্ধি করতে পারে গভীর প্রেম, অনুরাগ। গতকালকের বলা একটা কথা মস্তিষ্কে উদয় হতেই চৈত্রিকা নিজেকে পুনরায় বাঁধন থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাল। সাফারাত কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে লহু স্বরে বলে উঠল,

‘ কাছে তো আমি টেনেছি। আপনি নন। এই ছোঁয়াটা নরমাল। প্রেমিক -প্রেমিকার কাছে আসা টা ভিন্ন। মাঝে একটা অদৃশ্য দেয়াল থাকে। স্বামী -স্ত্রীর টা তার থেকে ব্যতিক্রম। যেদিন আপনি নিজের সকল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্যাকুল হয়ে আমায় গভীরতায় ডুবিয়ে নিবেন সত্যি সেদিন আপনার বাঁধা মানব না। চিরতরে বাহুডোরে বেঁধে নিব আপনাকে। আমায় ছাড়া এক মুহুর্তও চলতে দিব না। আমি জানি আমার ভালোবাসা আপনাকে টেনে আনবে আমার মাঝে। খুব জলদি। ‘

চৈত্রিকা লজ্জায় চুপসে গিয়ে সাফারাতের বুকে মাথা এলিয়ে রাখে। মিহি স্বরে বলে,

‘ দাদি কেমন আছেন?’
‘ আগের থেকে বেটার। ‘
‘ বিয়ের ব্যাপারে বলেছেন?’

সাফারাত জবাব দিল না। কিয়ৎক্ষণ সময় নিল। অতঃপর বললো,
‘ সরাসরি লাল টুকটুকে বউ নিয়ে হাজির হব। ‘
__________________

গাড়ি থামে একটা শপিং মলের সামনে। চৈত্রিকা কপাল কুঁচকে তাকায়। কিছু জিজ্ঞেস করবে তার সময় না দিয়ে তাকে রেখে বেরিয়ে গটগট পায়ে মার্কেটে ঢুকে পড়ে সাফারাত। চৈত্রিকা অস্ফুটস্বরে বলে–‘ অদ্ভুত! ‘তৎপরে দরজা মেলতে গিয়ে দেখে লক করে গিয়েছে সাফারাত। মার্কেটে আজ অনেক ভিড় দেখা যাচ্ছে। অনবরত চলছে মানুষের আনাগোনা। ব্যস্ত এই নগরীতে মানুষের ভিড়ে, তপ্ততায় মাঝে মাঝে শ্বাস ফেলাও কষ্টকর। সাফারাত ফিরে আসে পাক্কা পনের মিনিট পর। হাতে একটা ছোটো সাইজের শপিং ব্যাগ।চৈত্রিকা ভ্রুঁ কুঁচকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,

‘ এদিকে আসুন। ‘

চৈত্রিকা এগিয়ে এলো। সাফারাত বক্স হতে একটা ডায়মন্ডের নোসপিন বের করে পরিয়ে দেয় নাকে। চৈত্রিকা আগে কখনও নোস পিন ইউস করে নি। ব্যাথায় নাক মুখ কুঁচকে আসে তার। সাফারাত নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,

‘ বিবাহের চিহ্ন রাখার প্রয়োজন হয় না। তবুও আপনাকে নিয়ে রিস্ক নিতে পারলাম না আমি। ‘

হাতে দু’টো ডায়মন্ডের চুড়ি পরিয়ে দিয়ে চুমু খায় সাফারাত উল্টো পিঠে। চৈত্রিকা চক্ষু মুদিত করে অনুভব করতে লাগল প্রত্যেক টা স্পর্শ। সামান্য কাঁচের চুড়ি পড়ার মতো সামর্থ্য তার নেই অথচ সাফারাত তার মতো ফকিন্নির হাতে ডায়মন্ড সাজিয়ে দিল?উহু!ফকিন্নি নই সে। যেই মেয়ের আজঁলাতে এমন ভালোবাসা, সুখ আছে সে কখনো ফকিন্নি হতে পারে না। এই দামি দামি অলংকারের চেয়ে অত্যাধিক মূল্যবান ভালোবাসা, সুখ,শান্তি।

চৈত্রিকা গাড়ির সামনের ছোট আয়নাটা তে নিজেকে দেখল। চোখ ধাঁধিয়ে আসল ওর। প্রথমবার নিজের রূপ নিয়ে আনন্দিত ও। চৈত্রিকার মায়ের গায়ের রং টা শ্যামলা। বাবা বেশ ফর্সা ছিলেন। তারই মতো হয়েছে দুই বোন। বাবার কথা মনে পড়তেই চৈত্রিকার মন টা শূণ্যতায় হাহাকার করে উঠে। বাসা টা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে বাবা বিহীন। বড্ড বেশি।

‘ আপনি আর টিউশনি করবেন না চৈত্র। আজকেই সবাইকে ফোন দিয়ে না করে দিবেন। ‘

আকাশসম অবাকতা চৈত্রিকার মুখশ্রীতে। ছোট্ট প্রশ্ন ওর,

‘ কেন?’

সাফারাত গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ভরাট কন্ঠে বললো,

‘ আমি আপনার হাসবেন্ড। আপনাকে খরচের টাকা দেওয়া আমার দায়িত্ব। নিজের অধিকার আদায় করে নিতে শিখুন। আপনি টিউশনি ছেড়ে দিবেন। এটা আমি হাসবেন্ডের অধিকারে বলছি। ‘

রোদে পুড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে গিয়ে টিউশনি করাতে চৈত্রিকার ভীষণ কষ্ট হয়। পরিবার সামলাতেই তার জীবনের সুখ, উল্লাস ত্যাগ করা। সাফারাত নাহয় তার দায়িত্ব নিবে কিন্তু মিম ও ফাহমিদা? সাফারাতের টাকায় উনাদের ভরণপোষণ দৃষ্টিকটু দেখায়। এই সমাজ আঙ্গুল তুলতে একটাবার পিছুপা হবে না যে জামাই শশুর বাড়ির মানুষ পালছে নিজের টাকায়। চৈত্রিকার মনের চিন্তা যেন সাফারাত বুঝে নিল।

‘ আপনার ফ্যামিলির দায়িত্বও আপাতত আমার। চাকরি পেলে সব টাকা শোধ করে দিবেন। ‘

চৈত্রিকা থ হয়ে বসে রইল। ঠিক কতক্ষণ, কতক সময়, কত সেকেন্ড হিসেব নেই। এমন কেন মানুষটা?সবকিছু বুঝে নেওয়া,ক্লিয়ার কাট কথা বলা কি খুব জরুরি? সঙ্গে সঙ্গে সাফারাতের ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত স্বর শোনা গেল।

‘ অত্যন্ত আত্মসম্মান প্রিয় মানুষের জন্য এর চেয়ে বেটার সলিউশন আমার কাছে নেই। ‘

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here