অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_২১

0
240

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২১

‘স্যার মালা ম্যামের খবর পেয়েছি’

‘গ্রেট অর্নব!তিনি এখন কোথায় আছেন?’

‘স্যার তিনি বাংলাদেশে নেই। তবে খুব তাড়াতাড়ি নাকি আসবেন বাংলাদেশে তিনি।আমেরিকার কোনো শহরে তার বসবাস’

‘ধন্যবাদ তোমায়। এবার নাবিল শিকদার কোথায় এটা বের করার চেষ্টা করো।নীলা শেখকে ও তো আসতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। কত বছর পালিয়ে বাঁচবে সে। এই গ্রামে তো ফিরতেই হবে।’

‘জি স্যার আমি চেষ্টা করছি আমার সাধ্য মতো’

কল কাটলো শেহজাদ। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পথেই ফোন করেছিলো অর্নব। বউটা তার সাথে কথাই বলছে না ঠিকমতো। কি যন্ত্রণা! ভালোবাসার আরেক নাম যন্ত্রণা। যাতে সে দগ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রেয়সীর অবহেলা,এড়িয়ে যাওয়া বড্ড পোড়ায় তাকে। প্রেয়সী কি তার হৃদয়ের গভীর খত দেখতে পায় না। যা একমাত্র সে ছাড়া আর কেউ নেভাতে পারবে না। ফুলের দোকানে চোখ পরতে গাড়ি থামিয়ে ফুল কিনলো সে। প্রেয়সী বড্ড ভালোবাসে লাল গোলাপ। কিনে নিলো কয়েকটি লাল গোলাপ।

বাড়িতে পৌঁছে খুশি মনে নিজের রুমে প্রবেশ করে। প্রবেশ করতেই যেই দৃশ্য দেখে তাতে আত্মা কেঁপে উঠে শেহজাদের। দৌড়ে এসে কোলে তুলে বিছানায় বসায় ওয়ামিয়াকে। ওয়ামিয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। পা কেঁটে রক্ত পরছে। শেহজাদ দ্রুত ব্যান্ডেজ করে দিলো। ওয়ামিয়া ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে।শেহজাদ রাম ধমক দিয়ে বলল,,

‘কি করে হলো এই সব’

‘আসসসলে আমি খেয়াল করি নি এখানে কাঁচের টুকরো ছিলো না দেখেই পা দিয়ে ফেলেছি’

‘তুমি কি এখনো ছোট ওয়ামিয়া। দেখে শুনে চলাফেরা করবে না। বড্ড খামখেয়ালিপানা করো তুমি। নিজের প্রতি একটুও যত্নশীল নও’

‘আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আপনি এর জন্য ধমক দিলেন আমায়’

‘তোমাকে ধমক না থাপ্পড় মারা উচিত ফাজিল মেয়ে। একবার হাত কেটে হাসপাতালে গিয়েছে আর এখন পা কেটেছে’

‘তখন না হয় ইচ্ছে করে কেটেছিলাম তবে আজ তো অনিচ্ছাকৃত। এতে আমার দোষটা কোথায়’

ওয়ামিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে কথাটি। শেহজাদ শুনেও না শোনার ভান করে ওয়ামিয়ার হাত পা দেখছে। দেখার কারণ আর কোথাও কেটেছে কি না। ওয়ামিয়া মনে মনে ভীষণ হাসছে লোকটার কান্ড দেখে তবে মুখে বিরক্তি ভাব বজায় রেখেছে। শেহজাদের অস্থিরতা তার মনে দাগ কেটেছে। লোকটা ভালোবাসে তাকে ভীষণ ভালোবাসে। তবে এতো সহজে তো সে ধরা দিবে না। আর কিছুদিন না হয় নাকানিচুবানি খাওয়ালো। এটা তার শাস্তি,আমায় প্রত্যাখান করার। পা যে বেশি কেটেছে তা নয় সামান্য কেটেছে তবে রক্ত পরেছে অনেকটা এতেই লোকটা অস্থির হয়ে পরেছে। ভালোবাসে যখন একটু আধটু কষ্ট পেতেই হবে ডাক্তার সাহেব!

‘বিছানা থেকে এক পা ও নামাবে না। কিছু দরকার হলে আমায় বলবে। খেয়েছো?’

‘নাহ’

‘আচ্ছা তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি’

শেহজাদ রুম ত্যাগ করলো। ওয়ামিয়া হেসে উঠলো। অনেক সময় ধরে সে হাসি চেপে রেখেছে। লোকটার অস্থিরতা দেখে মনে সুখের দোলা দিয়েছে। তার জন্যও কেউ পাগল,কিছু হলে উৎকন্ঠা হয়ে পরে। শেহজাদের মতো দায়িত্বশীল পুরুষ যেনো প্রতিটি নারী পায়। সে সৌভাগ্যবতী। এমন পুরুষকে নিজের স্বামী হিসাবে পেয়ে। শেহজাদ খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো সাথে মুনতাসিব এবং মেহবুবা খান। ওয়ামিয়ার কাছে এসে বসেন মেহবুবা। মুনতাসিব খান সোফায় বসে বলেন,,

‘মা তুই একটু সাবধানে চলাচল করবি না। কিভাবে কাঁটলো।কাঁচটাই বা আসলো কোথা থেকে’

‘ফুপা তুমি চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি। কাঁচের টুকরোটা হয়তো কিছু থেকে পরেছে না দেখেই পা দিয়ে ফেলেছি’

‘ঠিক মতো থাকিস মা।’

কথাটা বলে বের হয়ে পরলেন মুনতাসিব খান। মেহবুবা খান ও কিছুকথা বলে বের হয়ে যান। ওদের একা ছেড়েই মূলত বেরিয়েছে তারা। শেহজাদ নিজের হাতে খাইয়ে দেয় প্রেয়সীকে। যদিও ওয়ামিয়া খেতে চাইনি তার হাতে। শেহজাদ জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। ওয়ামিয়ার খাওয়া শেষ হলে নিজেও খেয়ে নেয়। ওয়ামিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে তার শখের পুরুষকে। এতোদিন নিজেকে তার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখলেও আজ রাখেনি সে। প্রেয়সীর ক্ষততে নিজেও অস্থির উৎকন্ঠা হয়ে পরেছে। এতো ভালোবাসা সইবে তো। এই প্রতিশোধের গল্পে সে শেহজাদের হয়ে থাকতে পারবে তো। কে জানে!

***********

সকাল সকাল ইফাজ বেরিয়ে পরেছে অজিফাকে নিয়ে বেরোনোর উদ্দেশ্যে। অনেক ভেবে কাল এই বুদ্ধি বের করেছে সে। সবাই ভাববে সে নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।সে খুঁজলে সমস্যা হতেই পারে তবে অজিফা কাউকে জিজ্ঞেস করলে তো আর কেউ সন্দেহ করবে না। কাল রাতে ফোন করে সে অজিফাকে ডেকেছে। যদিও আজ অজিফা তার মাথাটা ভালো করেই খাবে খুব বুঝতে পারছে সে। মেয়েটা বড্ড চঞ্চল। এতো চঞ্চল মেয়ে তার পছন্দ নয়। মেয়েরা হবে শান্ত তবে সঠিক সময় বাঘিনী রূপ ধারণ করবে।

অজিফা ইফাজকে আসতে দেখে নিজেকে ঠিক করে দাঁড়ালো। পরণে অবশ্য কালো বোরকা। ইফাজ তাকে কালো বোরকায় নিজেকে আবৃত করে আসতে বলেছে। অজিফাও তাই করেছে। সে কি আর প্রিয় মানুষের কথা ফেলতে পারে। কালো বোরকা নিকাবে আবৃত করে এসেছে। ইফাজ অজিফাকে দেখে মুগ্ধ হলো। আজ অন্যরকম লাগছে মেয়েটাকে। অদ্ভুত এক আকর্ষন অনুভব করছে ইফাজ। তবে কি এবার ইফাজ আবরার ও প্রেমে পরলো এই চঞ্চল নারীর। নারী বড্ড ভয়ংকর।

‘চলো দ্রুত যেতে হবে আমাদের বিকালের আগেই তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।’

‘আমার কোনো সমস্যা নেই ইফাজ সাহেব। আমি বাড়িতে বলে বেরিয়েছি আজ বাড়ি ফিরবো না। ওয়ামিয়ার কাছেই থাকবো। আপনার কাজ না শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরবো না’

দুজন বেরিয়ে পরলো। উদ্দেশ্য তাদের ইমন শেখ। খুঁজে আজকে তারা বের করবেই ইমন শেখকে যেভাবেই হোক না কেনো। দুজন পাশের গ্রামে খুঁজলো তবে পেলো না। ইমন শেখকে কেউই চিনে না। দুজন আরেক গ্রামে যায়। সবার কাছে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা শেষ। ক্লান্ত হয়ে পরেছে দু’জন। বিকাল প্রায় হয়ে গিয়েছে। একটা লোককে দেখলো মুদি দোকান নিয়ে বসে আছে। অজিফা এগিয়ে গেলো লোকটার দিকে। লোকটার কাছে অতি নম্র কন্ঠে শুধালো,,

‘চাচা ইমন শেখ নামের কাউকে চিনেন আপনি’

‘আম্মা ইমন শেখ নামে তো এই গ্রামে কেউ থাকে না’

অজিফা কিছু একটা ভেবে বলল,,, ‘চাচা আমি যাকে খুঁজতেছি সে এখনো বিয়ে করেনি। একাই থাকেন। দেখতে ফর্সা করে। মোটামুটি লম্বা বলা চলে। চিনেন চাচা’

‘হ্যাঁ আম্মা একজন লোককে তো চিনি। বিয়ে করেনি সে। এই গ্রামে থাকে দুই তিন বছর ধরে। লোকটা বড্ড ভালো মনের মানুষ। তবে তার নাম ইমন শেখ না ইমান আলী। লোকটা নাকি যৌবন কালে একজনরে ভালোবাসতো না পাইয়া আর বিয়া করেনি’

‘চাচা তার বাড়ি কোথায় বলতে পারবেন আমি তার বান্ধবীর মেয়ে। আমার আম্মা তার বন্ধুর খবর নিতে পাঠিয়েছে আরকি’

‘ওহ লোকটাকে সেদিনও একজন খুঁজতে এসেছিলো। বলল সে নাকি তার ভাগ্নে। এতো বছর কিছু কারণ নিয়ে যোগাযোগ ছিলো না। তবে এখন নাকি মামাকে মনে পরছে তাই দেখা করতে এসেছে। সোজা পথ ধরে ডানে যাইবা ওই পথের শেষ বাড়িটা তার’

‘ধন্যবাদ চাচা আপনারে’

লোকটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইফাজে কাছে আসে। ইফাজ কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিলো। অজিফা সব খুলে বলতেই দুজন সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাড়িটার অবস্থা তেমন একটা ভালো না। টিনের একটা ঘর আর ইটের একটা দালানের মতো দুই রুমের ঘর মনে হয়। পেছনের ঝোপঝাড় দিয়ে উঁকিঝুকি মারছে দু’জন।তখনই তারা কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখলো। ইমন শেখ। এতো বছর পর ও দু’জন চিনলো তাকে। চেহারায় ভালো মানুষির একটা ছাপ আছে। তবে আদেও কি লোকটা ভালো। নাহ এই লোকটা জঘন্যতম একজন খুনি। তারা দু’জন সব জানে এই লোকটার ব্যাপারে। তবে প্রশ্ন এতো দিন শেহজাদ কেনো বাঁচিয়ে রেখেছে এই লোককে!

*********

‘মম সে রেসপন্স করেছে’

মহিলাটি উত্তেজিত হয়ে পরলো। ছেলেটি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তবুও সে শান্ত হতে পারলো না। তাকে যে বড্ড ভালোবাসে। সেই দিনে আর কাউকে বাঁচাতে না পারলেও তাকে সে বহু কষ্টে বাঁচিয়েছে। প্রাণে বাঁচাতে পেরেছে শুধু। কোমাতে গত পাঁচটা বছর ধরে। আজ নাকি সে রেসপন্স করেছে। এটা শুনে কি করে ঠিক থাকবে সে!

#চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here