#সুখের_নেশায় পর্ব ২৫
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
চৈত্রিকা অফিসে ঢুকেই সম্মুখীন হলো মোনার। মোনা অন্যান্য নতুন কর্মচারীদের দের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে। চৈত্রিকা চারপাশে চেয়ে দেখে যে যার কাজে নিমগ্ন। মোনা অন্যদের সাথে হেসে খেলে কথা বললেও তার সাথে বলছে না। বাধ্য হয়ে নিজেই এগিয়ে গেল। সালাম দিয়ে নম্র স্বরে প্রশ্ন করে চৈত্রিকা,
‘ কেমন আছেন ম্যাম?একচুয়ালি আমি কি কাজ করব বুঝতে পারছি না। যদি বলে দিতেন। ‘
মোনা বিরক্ত চোখে তাকায়। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,
‘ নিজের পজিশন জানো তো?’
‘ ইয়েস ম্যাম। ‘
‘ যাও স্যারের কফি দিয়ে আসো। আর আমার ডেস্কের উপর একটা ফাইল আছে সাইন করিয়ে আনবে।
মোনার সহকারী এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চৈত্রিকাকে। মোনার আন্ডারে তার সকল কাজ। ইন্টার পাস মেয়ের ক্ষেত্রে এই কাজটা একটু বেশিই উঁচুমানের। মোনার সাহস হচ্ছে না সাফারাতের সেই ওয়ার্নিং এর পর দ্বিতীয় বার তাকে ফেস করার। তবে তার এটিটিউডে চরম ফিদা হয়ে গিয়েছে মোনা। আপাতত চৈত্রিকাকে দিয়ে কাজ চালানো যাক। তাকে এড়িয়ে গেছে তার মানে চৈত্রিকাকেও লাই দিবে না।
চৈত্রিকা মৌন মুখে প্রস্থান করে। কানাঘুঁষায় শুনেছে আজ মিটিং আছে। এসেছে প্রায় বিশ মিনিট হবে কিন্তু সাফারাতের দেখা মিলে নি। সরাসরি ওর কক্ষেও যেতে পারছে না, কে কি বলে বসে চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দেয় বলা তো যায় না৷ কেউ তো জানে না চৈত্রিকা সাফারাতের বউ। সবাই উল্টো টায় ভেবে বসবে। চরিত্রহীনার তকমা লাগিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। ক্যান্টিনে কফি নেবার সময় একটা ছেলে পাশে এসে দাঁড়াল। নিজের জন্য কফি হাতে তুলে নিয়ে কন্ঠে অবাকতা নিয়ে ডেকে উঠল,
‘ চৈত্রিকা!’
নিমেষে চৈত্রিকা পাশ ফিরে তাকালো। নিস্তব্ধ, নির্বাক সে। হৃদস্পন্দন বেগতিক। ঠোঁট দুটো নড়ে উঠল ক্ষীণ।
‘ আপনি?’
মাথায় ঝাঁকড়া চুল। মুখে হাসি নিয়ে শ্যামলা বর্ণের একটা ছেলে চৈত্রিকার দিকে চেয়ে আছে নিষ্পলক। ছেলেটা কি চৈত্রিকার অস্ফুটস্বরে করা প্রশ্ন টা শুনতে পেয়েছে? হয়ত পায় নি। গলায় জোর বাড়িয়ে বললো,
‘ আপনি এখানে কি করছেন?’
‘ জব করছি। কয়েকদিন আগে এখানে জব হয়েছে আমার। এতো বছর কোথায় লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলে তুমি?দ্বিতীয় বর্ষে উঠে পড়া কেন ছেড়ে দিলে?ডু ইউ নো?আমি অনেক খুঁজেছি তোমাকে। মিহিতার কাছে অনেক রিকুয়েষ্ট করেছি তোমার এড্রেস টুকু দেওয়ার। মেয়েটা এতো ঘাড়ত্যাড়া দিলোই না আমাকে। বরঞ্চ অফিসেও আমার থেকে পালিয়ে বেড়াই। ‘
একটানা এতো প্রশ্নের ভিড়ে হারিয়ে যাবার জোগাড় চৈত্রিকার। শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। যার থেকে ভার্সিটিতে পালিয়ে বেড়িয়েছে সর্বদা, বছরখানেক ঘুরতেই মুখোমুখি সে। এই সেই সিনিয়র ভাই যার কথা মিহিতা কয়েকদিন আগও বলেছিল। চৈত্রিকার মনে আছে ছেলেটা ফার্স্ট ইয়ারের শুরু থেকেই পিছু ঘুরত তার। প্রেমের প্রস্তাব টা বার বার প্রত্যাখ্যান করেও শান্তি মেলে নি। ছেলেটার নাম তনয়। চৈত্রিকার নোটস তৈরি করে দিত বারংবার না করা সত্ত্বেও। ফুচকাওয়ালা কে টাকা দিতে দিত না৷ রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিত মাঝে মাঝে আগ বাড়িয়ে, জোর করে। ভার্সিটির গেইটে দাঁড়িয়ে থাকত চৈত্রিকার মুখদর্শন করার জন্য সকাল হতে। তার এতো চেষ্টা প্রতিবার পরাস্ত হয়েছে। মন গলে নি চৈত্রিকার। নরম হবেই বা কেমন করে?যার মনে একজনের বসবাস সবটা জুড়ে সেই মনে কি আর অন্যের নিমিত্তে জায়গা মিলে?
তুড়ি বাজানোর শব্দ কর্ণগোচর হতেই সম্বিৎ ফিরে পেল চৈত্রিকা। হকচকিয়ে গেল আচমকা এহেন কান্ডে। তনয় স্মিত হেসে বললো,
‘ তুমি আজও আগের মতো চুপচাপ। আজ নতুন জয়েন করেছ এখানে?’
‘হুম। এখন যেতে হবে আমার। ‘
চৈত্রিকা তাড়া দিয়ে বলে উঠল। কন্ঠে অতীব উত্তেজনা । অফিসে একটা ছেলের সাথে এভাবে খোলামেলা কথা বললে অন্য কেউ খারাপ না ভাবলেও, সাফারাতের চক্ষুগোচর হতে সময় লাগবে না।
‘ ঠিক আছে যাও। পরে কথা হবে কিন্তু। আমার জবাবগুলো পাই নি। ‘
ঝটপট হাতে কফির মগ তুলে নেয় চৈত্রিকা। তনয়ের কথার প্রতিউত্তর না করে দ্রুত পায়ে চলে এলো। এক হাতে কফি, অন্য হাতে ফাইল নিয়ে উপস্থিত হলো সাফারাতের কেবিনের সামনে।
বুঝে পায় না ও সব ভেজাল কেন তার ঘাড়েই এসে চাপে!এই বিতৃষ্ণার জীবনে আর কত যে তিক্ততার বাকি আছে। হাতের উল্টো পিঠে বার কয়েক দরজায় করাঘাত করে। তৎপরে অপর পাশ হতে পুরুষালী ভরাট, গম্ভীর স্বর শোনা গেল।
‘ কাম ইন মিসেস চৈত্র। ‘
ঠোঁট দুটো আলগা হয়ে এল চৈত্রিকার। মগের হাতলে আবদ্ধ হাতটা হালকা ঢিলে হয়ে গেল। মাটিতে পড়ার আগেই কোনোমতে পুনরায় শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। সাফারাত না দেখে কি করে জানল ও এসেছে। টলমলে পায়ে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল। চোখে বিঁধে এক সুদর্শন, তাগড়া পুরুষকে। যার নজর নিবদ্ধ একটা ফাইলে। চৈত্রিকার বুক টা ধক ধক শব্দ করছে। মনে ঝড়ো হাওয়া বইছে। উথাল পাতাল অভ্যন্তর। এতো সুন্দর কেন সাফারাত? চৈত্রিকাও তার মতোন সৌন্দর্যে ভরপুর কিন্তু তা যেন ফিকে পড়ে যায় এই ছেলের সামনে।
‘ আপনি ওইখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?কাছে আসুন। ‘
অকস্মাৎ বাক্যে চৈত্রিকা আবারো হকচকালো, থমকালো। তন্মধ্যে সাফারাত মাথা তুলে তুখোড় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। মুখে গম্ভীরতার ছাপ। ধূসর রঙা চোখ দুটো নিঃসন্দেহে এই মুহুর্তে যেকোনো মানুষকে ভস্ম করার ক্ষমতা রাখে। এতো রাগ কেন?ধীরস্থ, মন্থর গতিতে হেঁটে এসে টেবিলে ফাইলটা রেখে কফির মগ টা এগিয়ে দেয় চৈত্রিকা। অনতিবিলম্বে সাফারাত মগটা হাতে নেয়। চুৃমুক দিতে গিয়ে মুখের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনে। চৈত্রিকার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে অত্যন্ত শান্ত স্বরে বললো,
‘ আপনি প্রথমে চুমুক দিন। ‘
রুদ্ধদার অবস্থা চৈত্রিকার। ভিতরটা হাস ফাঁস করছে। অফিসের বসের কফি এঁটো করবে ও?কন্ঠনালিতে কথা জড়িয়ে এলো। বললো,
‘ কিন্তু স্যার,,!’
‘ আ’ম নট ইউর বস। আ’ম ইউর হাসবেন্ড। অফিস হোক কিংবা রাস্তাঘাট আমি আপনার হাসবেন্ড। সম্পর্ক, অধিকার, পরিচয় নিশ্চয়ই বদলে যাবে না। হাসবেন্ড কে হাসবেন্ড হিসেবে দেখতে শিখুন। ‘
গম্ভীরতার অতলে বুঝি ডুবে গেল চৈত্রিকা। বিনা বাক্যে মগে নরম,কোমল ওষ্ঠযুগল ডুবিয়ে দিল। এক চুমুকের বদলে দুই,তিন চুমুক খেয়ে ফেলল। হতে পারে ভয়ের তাড়নায়। আরেক চুমুক দিতে যাবে তার আগেই সাফারাত হাত থেকে মগ টা টেনে নেয়। কফিতে চুমুক বসিয়ে বলে উঠল,
‘ প্রতিদিন আমাকে কফি দেওয়ার পূর্বে আপনি খাবেন অর্ধেক টা। আবার আজকের মতো তিনভাগের দুইভাগ খেয়ে আমাকে একভাগ দিতে যাবেন না। ‘
চৈত্রিকা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল। সাফারাত কেন তার এঁটো কফি খাচ্ছে? প্রতিদিনই বা কেন খাবে?এই মানুষটার মতিগতি বুঝার সাধ্য আজো কি চৈত্রিকার হবে?মিহি স্বরে বললো,
‘ ক্যান্টিনে কফি আছে। আমি নিয়ে আসি আরেক কাপ আপনার জন্য। ‘
‘ ক্যান্টিনের সব কফিতে কি আপনার অধরযুগলের স্বাদ আছে চৈত্র মাস?’
চৈত্রিকার সমস্ত দেহ জুড়ে শিহরণ খেলে গেল। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মৃদু কেঁপে উঠল বোধহয়। সাফারাতের কথার মানে চট করে বুঝে নিল ও। দাঁড়িয়ে রইল ঠাঁই। সাফারাত কাছাকাছি এলো। হাত টেনে চেয়ারে বসিয়ে তীক্ষ্ন কন্ঠে বলে উঠল,
‘ অযথা পা গুলোকে ব্যাথা দিচ্ছেন। ‘
একটুখানি ঝুঁকে চৈত্রিকার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ তনয়ের সাথে কি কথা বলছিলেন আপনি এতক্ষণ যাবত?আপনারা কি পূর্বপরিচিত?’
মুহুর্তেই চৈত্রিকার নেত্রযুগল বৃহৎ হয়ে এলো। কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সাফারাত কি করে জানল?শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমেও মৃদু মৃদু ঘামছে সে। চৈত্রিকা কেন ভয় পাচ্ছে?সে তো এতো ভীতু নয়। সাফারাতকে পুনরায় হারানোর ভয় কি তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে ক্রমে ক্রমে?ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকে। এখানে ভুল কেন বুঝবে? স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দেয়,
‘ভার্সিটির সিনিয়র ভাই হয়। ‘
‘ আপনার ধারে কাছে আমি ব্যতীত অন্য কেউ আসার সাহস যেন না পায় চৈত্র। ফলাফল খারাপ এবং খুবই জঘন্য হবে। ‘
সাফারাত কি থ্রেট দিল?চৈত্রিকা বুঝতে পারছে না। চেয়ার ছেড়ে উঠতেই সাফারাত একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিল। আদেশের সুরে বললো,
‘ সন্ধ্যায় রেডি থাকবেন। এক জায়গায় যাবো আমরা। ‘
_________________
লাল টুকটকে একটা জর্জেট শাড়ি পরিধান করে রেখেছে চৈত্রিকা। শাড়িটা মিশে আছে তার চিকন শরীরে। উন্মুক্ত চুলগুলো কোমর ছাড়িয়েছে। গাড়ির সিটে পড়ে আছে এলোমেলো হয়ে। ফর্সা চেহারায় লাল লিপস্টিক চৈত্রিকার অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে। রেড চেরির ন্যায় লাগছে তাকে। এটা অবশ্যই মিমের জোরাজোরিতে দিয়েছে। সাজগোজ করার ইচ্ছে তো মাটিচাপা দিয়ে ফেলেছে সে। দূর থেকে হু হু করে বাতাস প্রবেশ করছে গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে। সন্ধ্যার রূপ চৈত্রিকার মন ছুঁতে পারছে না। সে তো ভাবনায় মগ্ন। একটাবারও সাফারাত ফিরে তাকালো না ওর দিকে। একবার চোখ পড়েছে কিন্তু তাতে মুগ্ধতা ছিল কি-না তা বুঝার আগেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। বিকেল অব্দি তো ঠিক ছিল।
গাড়ি এসে থামে একটা চিলেকোঠার সামনে। চৈত্রিকা চারদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে ঢাকা থেকে দূরে কোথাও এটা। গ্রামীণ পরিবেশ মনে হচ্ছে। নদীর ধারে ছোট ছোট চিলেকোঠার ঘর। খাবারের আয়োজনও আছে। মানুষের উপস্থিতি নেই তেমন একটা। ছোট্ট গেইট দিয়ে হাত ধরে সাফারাত ভিতরে নিয়ে এলো। মানুষের সংখ্যা ভিতরেও কম। আরেকটু ভিতরে যেতেই পিছন থেকে চোখে ফিতা বেঁধে দিল সাফারাত। চৈত্রিকা উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠল,
‘ কি করছেন?’
সাফারাত জবাব দিল না। চৈত্রিকাকে ধরে আরেকটু সামনে নিয়ে এলো। অতঃপর পিছনে দাঁড়িয়ে ফিতা খুলে দিয়ে বললো,
‘ চোখ খুলুন। ‘
আঁখিপল্লব ঝাঁকিয়ে চোখ মেলল চৈত্রিকা। সামনে না তাকিয়ে উল্টো ঘুরে সাফারাতের দিকে তাকালো। কেন যে মনটা কু ডাকছে তার। তীব্র ভয় হচ্ছে। সাফারাতের জ্যাকেট টা আঁকড়ে ধরল দুর্বল হাতে। কাতর দৃষ্টিতে তাকালো।
‘ কি হলো?সামনে তাকান চৈত্র। ‘
মাথা নাড়িয়ে না করল চৈত্রিকা। মলিন স্বরে বললো,
‘ আমার সারপ্রাইজ ভয় লাগে সাফারাত। ‘
‘ আমি থাকতে কিসের ভয়? আর কিছু কিছু সত্যের মুখোমুখি হতেই হয়। যেটা আপনার প্রাপ্য সেটা আপনি পাবেন। পরিবারের জন্য কঠোর হওয়া মেয়েটার চোখে ভয় মানায় না। ঘুরে তাকান। ‘
চৈত্রিকা ঘুরে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীর প্রবলভাবে কেঁপে উঠল ওর। পড়ে যেতে নিলে সাপোর্ট হিসেবে পায় সাফারাতের প্রশস্ত বুক,বলিষ্ঠ হাত দু’টো। নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না তার সামনে অতীতের পরিচিত একটা মানুষ দাঁড়িয়ে। ও তো ভুলেই গিয়েছিল এই মেয়েটাকে। মানুষটাকে দেখে ধাক্কা লাগে নি ওর। লেগেছে পুরোনো কিছু কথা মনে পড়ে। মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে,
‘ সিনথিয়া?’
হাসিমুখে দাঁড়ানো মেয়েটা এগিয়ে এলো। চৈত্রিকার হাত টা আলতো করে ধরে বলে উঠল,
‘ অনেক বছর। অনেক বছর পর আমাদের দেখা হলো চৈত্র। অবশ্য প্ল্যান করেই হলো। সারপ্রাইজ হয়েছিস নিশ্চয়ই? ‘
সারপ্রাইজ? চৈত্রিকা রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে। সিনথিয়া ও সাফারাতের বিষয়টা কি করে ভুলে গেল ও এতবছরে? কেন একটা বারও মাথায় রইল না এতো বড় বিষয়টা? কলেজ লাইফে নিজেই তো উঠে পড়ে লেগেছিল সাফারাতকে রাজি করাতে সিনথিয়ার জন্য। আচ্ছা সেদিন বদ্ধ রুমে সাফারাত কি রাজি হয়েছিল?আবেগি বয়সে কত বড় ভুল করে বসল চৈত্রিকা!যদি সাফারাতের জন্য মনে জন্ম নেওয়া অনুভূতিগুলো আগে উপলব্ধি করতে পারত তবে কখনও সিনথিয়াকে ও সাফারাতকে কাছাকাছি আনত না।কখনও না। ভালোবাসার মানে তো আগে বুঝে নি ও। বুঝেছে সাফারাতকে হারিয়ে। সেদিন বদ্ধ রুমে কি হয়েছিল?তারপর থেকেই তো সিনথিয়া ও সাফারাত দু’জনের দেখা পায় নি আর চৈত্রিকা। মাথাটা ঘুরছে ওর। এই বুঝি বেহুঁশ হয়ে যাবে। জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,
‘ এতো,, এতো বছর দু’জনের যোগাযোগ ছিল?সেদিন,, সেদিন কি হয়েছিল?’
সাফারাত তাচ্ছিল্য হাসল। সিনথিয়ার হাসি উবে গিয়ে চেহারায় কাঠিন্য ভাব প্রতীয়মান হয়।
‘ সেদিন কি হয়েছিল? সেদিন আপনার জন্য সিলেট শহর ছাড়তে হয়েছে আমার চৈত্র। কলেজ ছাড়তে হয়েছে। আমি আপনাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম। সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই তো ওইদিন আপনি আমার অগোচরে ছুরি গেঁথেছিলেন আমার হৃদয়ে। নষ্ট করেছেন আমাদের বন্ধুত্ব। আমার কষ্টের কারণ হয়েছিলেন। আমার জীবনের সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট মানুষ আমার মা’কে অপমানিত হতে হয়েছে আপনার কারণে। ‘
ক্রুদ্ধ কন্ঠে কথাগুলো বলে চৈত্রিকাকে নিজের থেকে সরিয়ে দেয় সাফারাত। বুকে হাজারো ছুরি গাঁথলে হয়ত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এ কেমন যন্ত্রণা অনুভব করছে চৈত্রিকা, যার কোনো ঘা নেই। শুধু দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখে ঝাপসা হয়ে ভাসছে সবকিছু। হাতড়ে সাফারাতকে পুনর্বার ধরতে চাইল। খুব একটা বেগ পোহাতে হয় নি। সাফারাত নিজেই টেনে কাছে নিয়ে এলো উম্মাদের ন্যায়। রোষপূর্ণ স্বরে বললো,
‘ আপনার সাথে তীব্র অভিমান আমাকে জার্মান পাড়ি জমাতে বাধ্য করেছে। ভেবেছিলাম প্রতিশোধ নিব। আপনার দুঃখের জীবনটাকে আরো দুর্বিষহ করে তুলব আমি। তখন মাথায় এলো সরাসরি আক্রমণের চেয়ে ধীরে ধীরে ভালোবাসায় মারা ভালো। কাউকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য প্রেম নামক অস্ত্র হতে বড় অস্ত্র আর হয় না চৈত্র। ‘
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধীরে ধীরে রহস্য উন্মোচন হবে। আজকের পর্বের শেষের অংশটা কিছুটস ঘোলাটে যা জড়িত সাফারাত, সিনথিয়া,চৈত্রিকার অতীতের সাথে। কিশোর জীবনের সাথে।)