মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১৮

0
430

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৮

সম্রাট ভাইয়া কে দেখে আমি এখনো আগের মতো দাড়িয়ে আছি।দুই ঠোঁট আপনা আপনি আলাদা হয়ে গেছে। কিন্তু এই লোকের কোন হেলদোল নেই। সে নিজের মতো সিগারেট টেনে যাচ্ছে। আজব!আমি কি সিগারেটের থেকে ও ক্ষুদ্র হয়ে গেলাম নাকি!আমাকে তার চোখে পরছে না!

নিজেকে কয়েক’শ গালি দিয়ে নিজের ভাবনা কে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেললাম।আমি কি তার পাত্তা পাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি নাকি!
কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে মনে হলো, আমি সত্যিই মরে যাচ্ছি তার পাত্তা পাওয়ার জন্য। এখন কি নিজের মাথায় গুলি করে তাকে আমার দিকে ফেরাতে হবে!
তাকানোর দরকার নেই আমার দিকে।সিগারেটর দিকেই তাকায় থাক তুই!সিগারেট রে বিয়ে করে তার সাথেই সংসার কর নেশাখোর! আমার দিকে তাকালে আমি তোর চোখে তুলে চক্ষু হাসপাতালে দান করে দিবো সস্তা কবির সিং।

নিজের মনে বিরবির করে আশেপাশে তাকাতেই আমার মাসুম বন্ধু মহলের উজবুগের মতো দৃষ্টি দেখে কিছুটা হচকচিয়ে গেলাম। তানি কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,

– দোস্ত,তুই ঠিক আছস?এমন ভেটকি মাছের মতো ভেটকি মাইরা রইলি ক্যা।ওই ওহিদ, ওরে একটু ঝাকি মাকি দে তো!আমার মনে হয় ওর হার্ট অজ্ঞান হইয়া গেছে! বইন তুই হা কর।আমি এখনি পানি মাইরা তোর কলিজার জ্ঞান ফিরামু।ছবিতে দেখছি,পানি মারলেই জ্ঞান ফিরে।হা কর তারাতাড়ি বাল।

পিঠের ওপর তাল পরার মতো কিল খেয়ে তানি আর্তনাদ করে থেমে গেলো। পিছনে ওহিদ কে দেখে কটমট করে তাকিয়ে নিজের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

– আমারে মারতে কই নাই বাল।তুই কোন কামের না।মন চাইতাছে সাইকেল এর নিচে মাথা দিয়া মইরা যাই।সব অকর্মের ঢেকি।উফফফ,,আমার পিঠ।ওই তোর সরম করে না মেয়ে মাইনসের গায়ে হাত তোলোস।ম্যানারসলেস পোলা।

– ও তো দূরে।আমার হাটতে ইচ্ছা করতাছে না।আর সামনে কে আছে দেখছোস!আমি ওরে কিছু কইলে আমারে চান্দে পাঠায় দিবো।এর চেয়ে ভালো আমি তোরে দিলাম।তুই ওরে পাস্ কইরা দে।

ওহিদের নির্লিপ্ত কথা শুনে তানি রাগে ফোসফাস করে তৌহিদের দিকে তাকালো।
তানির ইশারা বুঝতে পেরে তৌহিদ আগেই নিজের হাত খারা করে নিজেকে সেফ জোনে নিয়ে গেলো।

– নিরামিষ বাল।
বিরবির করে তৌহিদ কে কয়েক’শ গালি দিয়ে দাড়িয়ে রইলো তানি।

– হয়ে গেছে?

আমার প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো সবাই।

– এভাবে তাকিয়ে থাকার কি হলো! ক্লাস করার ইচ্ছা নাই? স্যার কি এখন তোদের জন্য রাস্তায় ক্লাস করাবে নাকি!

– না মানে,সম্রাট ভাইয়া সামনে,,,

তানির আমতা আমতা করে কথা বলতেই আমি ওকে থামিয়ে দিলাম,

– তো?এইটা রাস্তা।এখানে যে কেউ থাকতে পারে।তাই বলে আমাদের দাড়িয়ে থাকতে হবে!

– না তা কেন হবে। এমনিই বলছিলাম। আচ্ছা চল ক্লাসে যাই।

আদওয়ারা চলে যেতেই সম্রাট সায়েমের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বললো,

– আমি কিন্তু তোর বোন কে খুন করে ফেলবো। কত বড় সাহস ওর।আমাকে যে কেউ বলে!আমি যে কেউ!(রেগে)

– হুম।(নির্লিপ্ত ভাবে)

– দুইটা খুন করতে আমার কোন সমস্যা নাই।একটার সাথে আরেকটা ফ্রী। কি করবো?

সম্রাট দাতে দাত চেপে কথাটা বলতেই সায়েম নিজের বোকামি বুঝতে পারলো। জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো,

– আমার বইনডা এমন নির্দয়া কেমনে হলো বলতো!(চিন্তিত হয়ে)।পাষাণ মহিলা।নিজের ভাইয়ের উপর একটুও দয়া নাই!(কাদো কাদো হয়ে)

সম্রাট বিরক্তকর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার আরেকটা সিগারেট ধরালো।

ভোর সকাল থেকে এখানে এনে বসিয়ে রেখে এখন ছ্যাকাখোরের মতো সিগারেট টানছে। এখন কি এখানে ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকব নাকি!
বিরবির করে কথা গুলো বলে সম্রাটের দিকে তাকিয়ে কেবলা মার্কা হাসি দিলো সায়েম।

🌸

ক্লাসে এসে মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো। সে এখানে কেন এসেছে?আমি তো তাকে শাস্তি দিতে ছেড়ে চলে এসেছি। তাহলে সে কেন আবার আমার সামনে চলে এলো?

– কি হলো? কি ভাবছিস?

তানির কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।ওর দিকে তাকিয়ে মলিন হাসতেই ও আবার বললো,

– ভাইয়ার সাথে সব ঠিক করে নে।ওনার অবস্থা দেখেছিস! কি করেছে নিজের! আমার খুব খারাপ লাগছে ভাইয়া কে এই অবস্থায় দেখে।

তানি মন খারাপ করে কথা গুলো বলতেই আমার মাঝে একরাশ অপরাধবোধ ভর করলো। লোকটার এই অবস্থার জন্য আমিই কিছুটা দায়ী।

– সব কিছু এতটা সহজ হবে না। আমাদের দুজনের মধ্যে একটা দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এই দুরত্বের নাম হচ্ছে অস্বস্তি। কেউই কারো সাথে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে কথা বলতে পারবো না। আর সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি কথা বলতে চাইছি না। আমি আমার লাইফে আর কোন কমপ্লিকেশন চাই না।

– বিশ্বাস কর বইন।আমার মাঝে মাঝে তোরে চড়ায় ঠিক করতে ইচ্ছা হয়।কি চাস তুই ক তো?আলাদা হইতে চাস?ভাই যদি তোরে ছাইরা দেয় তাইলে খুশি হবি?নাকি তুই অন্য কারো গলায় ঝুলতে চাস?কোনডা করবি ক?নাকি ভাইরে তোর পিছনে সারা জীবন ঘুরাইতে চাস?কথা কস না ক্যা বাল।

তানির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ওহিদ ওর দিকে পানি এগিয়ে দিলো।

চলবে,,,,

(দয়া করে এপ্রুভ করবেন।লেখার মধ্যেই খবর পেলাম আমার বড় মামাতো ভাই মারা গেছেন।তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।কয়েক দিন আগে তার স্ত্রী ও মারা গেছে পাচ বছরের একটা ছেলে রেখে।আজ ছেলেটা একেবারে এতিম হয়ে গেলো। পরের পর্ব বড় করে দিবো ইংশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here