#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৯
দেখ, সম্রাট ভাইরে আমার আগে থেকেই বহুত পছন্দ। এখন তুই ও তারে ছ্যাকা দিয়া বেকা কইরা দিতে চাইতাছোস।তাই এই সুযোগে আমি তার সাথে ভাব কইরা হালামু।তারপর সুযোগ বুইঝা বিয়াডা ও সাইরা ফেলমু।কি কছ মনু!
ওহিদ সব গুলো দাত বের করে থামসআপ দেখালো।তৌহিদ কিছুক্ষণ নিজের কপাল চাপকে আক্ষেপের সাথে বললো
— তোরা পৃথিবীতে কি করছ ক তো? তগো তো মহাকাশে থাকা উচিত। দুনিয়া তোদের উপযোগী না!
— ধুর ব্যাটা। তুই বোঝছ না ক্যা।আমি তো সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে চাইলাম। এতো সুন্দর হ্যান্ডসাম একটা পোলা ওর মতো আবালের লেইগা যৌবন ছাতু করবো আমি এইটা কোন ভাবেই মেনে নিবো না। (আফসোস করে)
তানির লেইম কথা গুলো শুনে মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
— তো যা না।গিয়ে কোলে উঠে বসে থাক।তারাতাড়ি বিয়ে করে দুই এক মাসে চার হালি বাচ্চা পয়দা করে আমাদের খালামনি বানায় দে ফাজিল! (দাতে দাত চেপে)
আমার কথা শুনে দুই ভাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। তানি কিছুক্ষণ মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থেকে ভাব নিয়ে বললো,
— নাহ।এতো তারাতাড়ি বাচ্চা কাচ্চা নেয়ার কোন প্লানিং নেই।কয়েক দিন রাস্তায় রাস্তায় রোমান্স করবো। কিছু কিছু মানুষের কলিজা জ্বালাবো। (আর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে)। তারপর সুইজারল্যান্ড হানিমুনে যাবো(লাজুক হেসে)।ওখান থেকে বরফের মতো সুন্দর একটা বাচ্চা পয়দা করে তবেই দেশে ফিরবো। বলা তো যায় না দেশে থেকে পয়দা করলে কারো হিংসায় জ্বলে আমার মাসুম বাচ্চা কালা হয়ে যাইতে পারে। আমি বাবা রিস্ক নিতে চাইছি না।
ওহিদ তৌহিদ হু হা করে হেসে উঠলো। আমি কটমট করে তাকাতেই ওরা আরো বেশি করে হাসতে লাগলো। আমি তানির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে হোস্টেলের দিকে হাটা ধরলাম। অসভ্য মাইয়া।হানিমুনে যাওয়ার সাধ জন্মের মতো মিটিয়ে দিবো।এই রকম একটা লুচু মাইয়া আমার বেস্টু কেমনে হইলো। আমার জামাইর দিকে প্রেম প্রেম নজরে তাকায়!ভাবা যায়!
হঠাৎ করে কারোর সাথে ধাক্কা খেতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।ইসসস,নাকটা বুঝি ভেঙেই গেলো। নাকে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম সম্রাট ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।ভালো আছেন? শরীর সাস্থ ভালো? দিন কাল কেমন চলে?
বোকার মতো হেসে প্রশ্ন গুলো করতেই সম্রাট ভাইয়া বিরক্ত হয়ে গাড়ির দিকে তাকালো।
— গাড়ীতে উঠ।
ভাইয়ার শান্ত স্বরে বলা কথাটা শুনতেই আমার সমস্ত সাহস ফুস হয়ে গেলো। দুই একটা চড় থাপ্পড় মারার হলে এখানের মেরে দিক।গাড়িতে নিয়ে মারতে হবে কেন!আজব।
আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই গাড়ির ভিতর সায়েম ভাইয়াকে দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো। ভাইয়া ইশারায় হাত জোর করে অনুরোধ করছে গাড়িতে উঠার জন্য।
— আপনি সায়েম ভাইয়া কে কিডন্যাপ করেছেন! (অবাক হয়ে)।
সায়েম ভাইয়া হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। সম্রাট ভাইয়া কিছুক্ষন নিজের কপাল স্লাইড করে সায়েম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি কিন্তু এবার সত্যি মেরে দিবো। তোর বোন কে ভালোয় ভালোয় গাড়িতে উঠে বসতে বল।
— আদুউউউ।ভালোবাসার বোন আমার।আমি তোকে কতো ভালোবাসি তুই জানিস?শুধু শুধু কেন কথা বারাচ্ছিস বোন আমার।ভাইয়ের উপর একটু ও দয়া নাই তোর!তারাতারি উঠে আয়।
আমি চোয়াল ঝুলিয়ে সায়েম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। জীবনে এই প্রথম সে আমার সাথে এতো আদর মেখে কথা বললো।
– আরেকটা কথা বললে তোদের দুইটা রে আমি আজ সাগরে ফেলে দিবো। (দাতে দাত চেপে)
আমি অসহায় বেড়াল ছানার মতো গিয়ে গাড়িতে বসলাম।সম্রাট ভাইয়া আমার পাশে এসে বসতেই সায়েম ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট করলো। আমি একটু সামনের দিকে এগিয়ে ভাইয়ার কানে কানে বললাম,
— চিন্তা করো না ভাইয়া।আমি তোমাকে নির্দয় পাষাণ লোকটার হাত থেকে রক্ষা করবো। আমি বেচে থাকতে কেউ তোমার কিছু করতে পারবে না। আমি আছি তো।
আমার কথায় ভাইয়া একটু শয়তানি হেসে বললো,
— তোকে কে বাচাবে সেই চিন্তা কর বরিশালের মনু।
আমার কথা তোর না ভাবলে ও চলবে।
ভাইয়ার কথা শুনে ভয়ে ভয়ে পাশে তাকালাম। সম্রাট ভাইয়া সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। নিজেকে দুই একটা চড় থাপ্পড় খাওয়ার জন্য মানুষিক ভাবে তৈরি করে নিলাম। ভয় কে জয় করতে হবে। আমি কাওকে ভয় পাই না।ভাবতেই মুখটা কাদো কাদো হয়ে গেলো আমার।
ফোনের রিংটোনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। সম্রাট ভাইয়া ফোন রিসিভ করেই বললেন,
— মেইন রোডে দাড়া।আমি দুই মিনিটের মধ্যেই আসছি।
ফোন কেটে আমার দিকে তাকাতেই আমি তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে নিলাম।
আদওয়া কে চোখ সরিয়ে নিতে দেখে বাকা হাসলো সম্রাট। অনেক পুড়িয়েছো আদু রানী।এবার মলম লাগানোর পালা।
আদওয়া ফোন বাজতেই দেখলো তানি কল করেছে।
— হ্যা বল।
— কই তুই?রুমে তো নাই।আবার এহন কই গিয়া বইয়া রইলি পাগল ছেড়ি।(রেগে)
— তোর না হওয়া বাচ্চার বাবার সাথে আছি। বেশি কথা না বলে ফোন রাখ।(দাতে দাত চেপে)
— ওওওওহহহহ।আচ্ছা সমস্যা নাই। কিন্তু বেশি হাংকি পাংকি করিছ না।বাইচ্চা থাকলে আবার দেখা হইবো বান্দুপি।
তানি কল কেটে দিতেই মুখটা কাদো কাদো হয়ে গেলো আমার।এমন বন্ধু থাকলে শত্রুর প্রয়োজন হয় না।
আমি আড়চোখে সম্রাট ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম সে এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কোন কিছু না ভেবে আব্বু কে মেসেজ করলাম,
— আব্বু,,আমি কিডন্যাপ হয়ে গেছি।সম্রাট ভাইয়া আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তুমি কিছু করো।
দুই মিনিট পর আব্বু রিপ্লাই দিল,
— এটা তো হওয়ারই ছিল মা।সে তোমার কোন ক্ষতি করবে না এটা আমার চেয়ে বেশি ভালো তুমি জানো। সায়েম আছে সাথে।ভয় পেয়ো না।দব ঠিক হবে ইনশাল্লাহ।
এটা কি হলো। আব্বু ও!
কোমরে কারো স্পর্শ পেতেই শিরায় শিরায় কাপন ধরে গেলো। হালকা হাতে তার দিকে টেনে নিতেই তার বুকের উষ্ণ আলিংগন টের পেলাম। মানুষটার বুক কাপছে।তার চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই আমার। থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উপরে তুলতেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম। লজ্জা ভয় সব একেবারে ঝেকে ধরেছে।
কিছুক্ষণ যেতেই বুঝতে পারলাম আমার চোখের নিচে লেপ্টে যাওয়া কাজল যত্ন সহকারে মুছে দিচ্ছে। তার নিশ্বাস গুলো আমার মুখে আচড়ে পরতেই তার শার্ট খামচে ধরলাম।
— কিছু না করতেই এতো কাপাকাপি!করলে তো খুজেই পাওয়া যাবে না। (বাকা হেসে)
— প্লিজ সরে বসুন।(কাপা কাপা গলায়)
আমার কথায় মুচকি হেসে কমরে ধরে রাখা হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরলেন। একটু উঁচু করে আমাকে তার অপর পাশে নিয়ে আসতেই আমার চোখ আপনা আপনি বড় হয়ে গেলো। আমি কি আসলেই এতটা হালকা!
সুমন আর ইসহাক ভাইয়া কে গাড়ি তে উঠতে দেখে আরো বেশি অবাক হলাম।এরা কোথা থেকে আসলো!
— কি খবর আদু।কেমন আছো? তুমি কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করো নি।আমার বন্ধু তো পাগল হওয়ার অবস্থা।
ইসহাক ভাইয়ার কথা শুনে আবার সম্রাট ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আসলেই অনেকদিন শুকিয়ে গেছে। একটু খারাপ লাগলো। লোকটা এখন ফোনের মধ্যে মুখ গুজে বসে আছে। কে বলবে একটু আগে সে আমার দম আটকে দিচ্ছিলো। খারাপ লোক একটা।
আমাকে বিরবির করতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো সবাই। আমি বোকার মতো হেসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। এখন একটু ভালো লাগছে। কারণ এখানে সবার কাছে আমি সেফ।আর সবচেয়ে বড় কথা, এখানে আমার ভালোবাসার মানুষটা আছে। যে নিজের প্রাণ থাকতে আমার কিছু হতে দিবে না।
চলবে,,,,
(সম্রাট ভাইয়ার বাবা আবারও চেয়ারম্যান হয়েছে🥱🥱🥴🥱 🥱🥱🥱🥱🥱🥱মিষ্টি খাইতে চাইছিলাম।আমাকে বললো, দোকানে গিয়ে কিনে খা।হাহ,,,।)