#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২১
বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার মানুষ দেখছি।এখন রাত ২টা বাজে।কিন্তু মানুষের আনাগোনা দেখে বোঝার উপায় নেই এতো রাত হয়ে গেছে।দিনরাত সমান ভাবে ব্যাস্ততায় কাটে মানুষের।
অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা কক্সবাজার। (আপনাদের লেখিকা আফা কক্সবাজার থাকে। সাগরে হেটে যেতে আমার বাসা থেকে দুই মিনিট লাগে)সারা বছর পর্যটকে পূর্ন থাকে কক্সবাজার।তাই সব সময় মানুষের মধ্যে কাজের তাড়া থাকে।
— পেচার মতো চাইয়া না থাইকা একটু ঘুমা বইন।নাইলে সকালে তরে মরা তিমি মাছের মতো টানতে লাগবো।
তানির ঘুম ঘুম কন্ঠের কথা শুনে মুচকি হাসলাম আমি।মেয়েটা কথা যেমন ই বলুক না কেন,আমাদের অসম্ভব ভালোবাসে।মেম্বারের আদরের মেয়ে শুধু মাত্র আমার জন্য এতো দূরে চলে এসেছে ভাবতেই মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।বন্ধুত্ব খুব মুল্যবান একটা সম্পর্ক। যে কথা গুলো আমরা আমাদের সবচেয়ে আপন মানুষ যেমন, বাবা,মা,স্বামী কাউকে বলতে পারি না সেই কথা গুলো আমরা অকপটে বন্ধুদের বলে দেই।আমার কাছে বন্ধু হচ্ছে অক্সিজেনের মতো। কাছে থাকলেই যেন প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে পারি।
বারান্দা থেকে রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পরলাম। সকালে ক্লাস আছে।অলরেডি ক্লাসে আমরা লেট লতিফ নামে পরিচিত হয়ে গেছি।
🌸
প্রতিদিন সকালে গোসল করতে যাওয়ার আগে আমার কাপা কাপি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কক্সবাজার তুলনামূলক ঠান্ডা খুব কম।ঢাকার মতো ঠান্ডা হলে আমার যে কি হতো কে জানে!
‘আদু তোর ফোন বাজে’
ইসসস,এই মেয়েটা এভাবে চিৎকার কেন করে।আস্তে করেও তো বলা যায়।আমি কি কানে কালা নাকি!
ফোনে ভাইয়ার নাম্বার দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। ভাইয়া নিজেও বিজি,তাই খুব একটা কথা হয় না আমার সাথে।
— হ্যালো।
— কিরে বুচি।কেমন আছিস?
— আমি মোটেও বুচি না(গাল ফুলিয়ে)।
— হুম জানি জানি।শুনলাম তুই নাকি কিডন্যাপ হয়ে যাচ্ছিস! আমি তো ভাবলাম মুক্তিপন চেয়ে কল আসবে।এখন দেখি তোকে এমনিতেই ছেড়ে দিলো!বোঝ একবার,কিডন্যাপার ও তোকে রিটার্ন দিয়ে যায়।তুই কেমন পেইন দিস মানুষকে ভাব একবার।(হতাশ গলায়)
— ভাইয়া,তুমি ঠিক আছো??(অবাক হয়ে)
— হ্যা।কেন?
— না মানে,মনে হচ্ছে তোমার ভিতর থেকে সায়েম ভাইয়া কথা বলছে।(অসহায় ভাবে)
আমার কথা শুনে ভাইয়া হুহা করে হেসে দিলো।
— হাসার কি হলো? (ভ্রু কুচকে)
— নাহ এমনি।ভালো ভাবে খাওয়া দাওয়া করবি বুড়ী। আমি তোকে খুব মিস করি বোনু।এখন ক্লাসে যা।সন্ধ্যায় কল দিবো।
— আমি ও তোমাকে খুব মিস করি ভাইয়া।এখন রাখছি।ভালো থেকো।মায়ের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।
— আল্লাহ হাফেজ।
ভাইয়ার সাথে কথা বলে মনটা আরো বেশি করে খারাপ হয়ে গেলো। কেন যে এখানে আসতে গেলাম!ধুর,ধুর।
— তোর চাঁদে যাওয়ার চিন্তা শেষ হলে দয়া করে রেডি হ।আজকে ও লেট।(রেগে)
— যাচ্ছি যাচ্ছি। এতো রাগ করার কি আছে।
রাস্তায় বেরুতেই তৌহিদ কে দেখতে পেলাম। ওকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে গেলো আমার। আশে পাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— তুই একা কেন? ওহিদ কোথায়?
— আজকে ও ক্লাস করবে না। আজ নাকি সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাবে(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)। চল আমরা যাই।
— হুম।ওকে ছাড়া সব কিছু ফাকা ফাকা লাগে। কি আর করার। চল আমরাই যাই।(মন খারাপ করে)
হাটতে হাটতে তানি বললো,
— সম্রাট ভাইয়ার কি খবর। কয়েক দিন যাবত কোন পাত্তা নাই।ব্যাপার টা খুব একটা সুভিধার লাগে না ছেড়ি।
তানির কথা শুনে তৌহিদ নাক মুখ কুচকে ফেললো, প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তানি কে বললো,
— ভাষা ঠিক করে কথা বল।সব সময় ভাষার এমন বিদ্ধস্ত পরিনতি না করলে হয় না ফাজিল মেয়ে।
— ওলে লে লে আইছে আমার ভাষাবিদ।যা ফুট। আমি এতো ডঙ কইরা কথা কইতে পারুম না।শুনতে না চাইলে কানে আঙুল দিয়া রাখ।
তানির খাপছাড়া কথা শুনে তৌহিদ তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়ে জীবনে ঠিক হবে না বলেই নিজের সাথে ফয়সালা করে ফেললো।
ভার্সিটির গেটের ভিতর ঢুকতেই কিছু সান্ডা পান্ডা টাইপস ছেলেদের দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমি কিছুটা ভয় পেলাম।দেখে মনে হচ্ছে কোন থার্ডক্লাশ টাইপ গুন্ডা। তাদের পাস কাটিয়ে যেতেই একজনের ডাকে দাঁড়িয়ে পরতে হলো আমাদের।
— এই যে মামুনিরা।আমাদের একেবারে পাত্তা না দিয়েই চলে যাচ্ছ যে।সিনিয়র দের সালাম না দিয়ে তাদের অপমান করার সাহস পেলে কোথায়।
শেষের কথা টা একটু জোরেই বললো। আমি হালকা কেপে উঠলেও তানি আর তৌহিদ স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তানি কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে এক ছুটে একটা গাছের কাছে চলে গেলো। আম গাছটা খুব একটা বড় না।তাই খুব সহজেই কয়েকটা পাতা ছিড়ে আবার ওই ছেলে গুলোর সামনে এসে দাড়ালো। দাত বের করে হাসি দিয়ে বললো,
— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। সালাম ছোট বড় সবাই কেই দেয়া যায়।আপনিও আমাদের দিতে পারতেন।তাহলে আমরা আপনাদের মতো সিনিয়র দের থেকে শিখতে পারতাম কিভাবে সম্মান করতে হয়।আচ্ছা থাক সে সব কথা।আপনি তো পাত্তা খুজছিলেন।এই নিন।এটার নাম আম পাততা।আরো লাগলে আপনার পাশের চেলাপেলা দের বলবেন।ওনারা এনে দিবে।আসি তাহলে।
আমি তানি’র কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম। তৌহিদ ও ঠোঁট চেপে হাসছে।
ছেলে গুলো এখনো চোয়াল ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তানি’র এই বেহুদা মার্কা কথা শুনে তারা যে বেকুবের খাতায় নাম লিখিয়েছে তা তাদের চেহারা দেখে স্পষ্ট।
তানি কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাদের টেনে ক্লাসে নিয়ে আসলো। মেয়েটা পারেও বটে।
🌸
সম্রাট ভাইয়ার সাথে কথা হচ্ছে না আজ চার দিন। সে ও আমাকে কল করে নি। আর আমিও করি নি।ওইদিন বলেছিলো এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এসেছে। হয়তো ওইসব কাজ নিয়েই বিজি হয়ে গেছে। সময় পেলে হয়তো সেই আমাকে কল করবে।মায়ের জন্য খুব মন খারাপ হয়।তবে বাবা বলেছেন তিনি এসে সব ঠিক করে দিবেন। তাই আমাকে চিন্তা করতে হবে না।
আমি সম্রাট ভাইয়া কে খুব ভালোবাসি। তবুও কেন জানি মনে হয় যে তার সাথে আমার পরিনয় না হওয়াই সবার জন্য ভালো। জানি না কেন এমন মনে হয়। হয়তো এতো সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এসেছি সে জন্য।
ফোনের শব্দে ধ্যান ভাংলো আমার।স্ক্রিনে সম্রাট নামটা দেখতেই বুক কাপতে লাগলো। কাপা কাপা হাতে রিসিভ করতেই সে ক্লান্ত কন্ঠে বললেন,
— জান,,,,
ওনার এই ডাকটা শুনলেই আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে সামলে উত্তর দিলাম,
— হুম।
— আমি খুব ক্লান্ত জান।কয়েক দিন খুব বিজি ছিলাম। তাই তোকে কল করতে পারি নি। রাগ করিস নি তো আমার সাথে?
উনার ক্লান্ত গলা শুনেই আমার কান্না পাচ্ছে। বুঝতে পারছি কয়েক দিন খুব খাটা খাটনি গেছে।আস্তে করে বললাম,
— উহু।রাগ করি নি। আপনি খুব ক্লান্ত। একটু রেস্ট করুন। পরে কথা বলবোনে।এখন রাখি।
আমার কথা শুনে সম্রাট ভাইয়া আমাকে ধমকে উঠলেন।রাগী গলায় বললেন,
— তোকে বেশি বুঝতে বলেছি?চুপচাপ ফোন ধরে থাক।তোর নিশ্বাসের শব্দ শুনলেও আমার ক্লান্তি চলে যাবে।তুই হচ্ছিস আমার সকল রোগের মেডিসিন।তোর সাথে কথা বললে ও আমি অর্ধেক ভালো হয়ে যাই।
— অথচ আপনি আজ পর্যন্ত আমাকে কোন পেমেন্ট করলেন না। (অসহায় ভাবে)
চলবে,,,
(আমি খুব অসুস্থ। দুই দিনে এই টুকু লিখতে পেরেছি। রিচেক করা হয় নি। রেগুলার দেয়ার চেষ্টা করবো।অনেকটা খাপছাড়া হয়েছে। বাকিটা গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করবো।আর খুব তারাতাড়ি শেষ করে দিবো। ভালোবাসা সবাইকে।)