#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২২
বারান্দায় আনমনে বসে আছে ওহিদ।আজ আমাবস্যা রাত।আকাশে অনেক তারার মেলা বসেছে।লক্ষ কোটি নক্ষত্র গুলো ও পৃথিবী কে আলোকিতো করতে পারছে না।পৃথিবী নিকশ অন্ধকারে ডুবে আছে।পৃথিবীর আকাশে যেমন একটা চাঁদের অভাব, ঠিক তেমনই ওর আকাশে একটা আদওয়ার অভাব।
ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনিই হয়।হৃদয় পুড়িয়ে পুড়িয়ে কয়লা করেই বুঝি তার স্বস্তি।
হাতে আগুনের আচ লাগতেই দুই আঙুলের মাঝে সিগারেটের দিকে তাকালো ওহিদ।এই পোড়া সিগারেটের মতোই কি হৃদয়টা একদিন পুড়ে শেষ হয়ে যাবে?কি জানি,যাবে হয়তো।
একতরফা ভালোবাসা গুলো বুঝি এরকমই হয়। ভালোবাসার মানুষটির মুখে অন্য কারো জন্য লাজুকতা,চোখে অন্য কারো জন্য প্রেমময় বৃষ্টি একতরফা প্রেমিকের হৃদয় খুচিয়ে রক্তাক্ত করে দিলেও ঠোঁটের কোনে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হয়। প্রেয়সীকে একবার ভালোবাসি বলাটা ও যেন নিকৃষ্টতর অপরাধ। আর সে যদি হয় বেষ্ট ফ্রেন্ড তাহলে তো তার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকানো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রেয়সীর চোখে অন্য কারো জন্য ভালোবাসা দেখার চেয়ে প্রেমিক পুরুষের মৃত্যু শ্রেয়।
হাতের নিভে যাওয়া সিগারেট টা ফেরার গিটারে টুংটাং ধ্বনি তুললো সে।চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করলো,
এই অবেলায় তোমারই আকাশে
নীরব আপসে ভেসে যায়
সেই ভীষণ শীতল ভেজা চোখ
কখনো দেখাইনি তোমায়
কেউ কোথাও ভালো নেই যেন সেই
কতকাল আর হাতে হাত অবেলায়
কতকাল আর ভুল-অবসন্ন বিকেলে
ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়
সেই কবেকার ভায়োলিন
বেজে যায় কতদিন
প্রাণে চাপা ঢেউ
দেখেনি আর কেউ
কখনো অভিমান, অবাধ্য পিছুটান
জানি না কী কষ্টে এই অবেলায়
তবুও নির্বাসন বাসর সাজিয়ে
ঠোঁটে চেপে ধরা থাক ভালোবাসায়
ঘুণে খাওয়া মেঘে কালো হয়ে যায় এ হৃদয় যখন
একা একা শুধু অকারণেই ঝরে বৃষ্টি এমন
আজও তাই অবাক রঙে এঁকে যাই
সাদা কালো রঙ মাখা ফানুসের মুহূর্ত রাঙাই
ভীষণ কালো মেঘ পুড়ে ছাই আবেগে আজও তাই
অবাক জোছনায় পোড়া চোখ তবুও সাজাই
এই সন্ধ্যায় দু’চোখ সাগরে
বুকের পাঁজরে ভেসে যায়
অবাক জোছনায় লুকিয়ে রেখেছি
ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়
এই অবেলায় তোমারই আকাশে
নীরব আপসে ভেসে যায়
সেই ভীষণ শীতল ভেজা চোখ
কখনো দেখাইনি তোমায়
কেউ কোথাও ভালো নেই যেন সেই
কতকাল আর হাতে হাত অবেলায়
কতকাল আর ভুল-অবসন্ন বিকেলে
ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়
পাশের বারান্দা থেকে ভাইয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তৌহিদ। যে জেনে শুনে কষ্টের সাগরে ঝাপ দেয় তাকে বাচানোর শ্রাদ্ধ কার?
🌸
ঘুম ঘুম চোখে মুচকি হাসছে সম্রাট। ফোনের ওপাশ থেকে আদওয়ার ভারি নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে। কাল কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পরেছে আদওয়া। সম্রাট ও সারা রাত প্রেয়সীকে পাহারা দিয়েছে ফোনের এপাশ থেকে।
এখন ভোর ৫ টা বাজে।সম্রাট কে ফোন কানে ধরে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো সায়েম।চার বন্ধু আজ একসাথে ঘুমিয়েছে। সবার ই ফজরের নামাজ পড়ার অভ্যাস আছে।তাই সবাই সকাল সকাল ই উঠে।
— ভেটকি মাছের মতো ভেটকি মাইরা রইলি ক্যা। ওই পাশের থেকা তোরে বাপ হওয়ার শুসংবাদ দিছে নি।(চোখ বড় বড় করে)
সায়েমের দিকে কটমট করে তাকালো সম্রাট। এরা
ভাই বোন এক একটা কাহিনি। সারারাত আদু তাকে প্রতারক চক্রের সভাপতি বলে ঘোষিত করেছে।তাকে মেডিসিন এর জন্য টাকা কেন দিলো না তাই।আর এখন ওর ভাই বিয়ে ছাড়া ই ওকে বাপ বানায় দিচ্ছে। কি একটা লজ্জাজনক অবস্থা।
— চাইয়া রইলা ক্যা মামা।বুঝি বুঝি,তলে তলে এতো দূর।তুই বাপ হইলে আমরা ওতো মামা হইতাম।একটু কইলে কি হইতো।মিল মহব্বত করায় দিলাম,এহন আর আমাগো চিনো না।বেঈমান পোলা।তোরে আমি পৃথিবী থেকা নিসিদ্ধ করলাম।
— সকাল সকাল লাথি খাইতে না চাইলে মুখ বন্ধ রাখ।(দাতে দাত চেপে)
— এহন তো বলবি ই।যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি। এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি। নাসির আংকেল, আমি জানতাম আপনি এই গান টা শুধু মাত্র এই বেঈমান পোলার লাইগা বানাইছেন।আজ একটা প্রেমিকা নাই বলে বন্ধুদের এতো অবহেলা। আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিল,,,,
কথা শেষ করার আগেই সায়েম খাট থেকে নিচে পড়ে গেলো। মৃদু আর্তনাদ করতেই ইসহাক,সুমন ধড়পড়িয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে ঘুম ঘুম গলায় সুমন বললো,
— আগেই বলেছিলাম কিনারে ঘুমাইছ না।এখন পরে কচি কোমড় টা ভাঙলো তো।(আফসোস করে)
— কচি কোমড় মানে?(রাগী গলায়) আর আমি এমনি এমনি পরি নি।আমাকে লাথি মেরে ফেলা হয়েছে।আমি এই নিষ্ঠুরতার বিচার চাই।
সায়েমের কথা শুনে হাই তুললো ইসহাক।পুনরায় শুয়ে কম্বল দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি জরিয়ে নিয়ে বললো,
— তাহলে ঠিক আছে। সকালে এর কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার করা হবে।
— আসামি যাতে পালিয়ে না যায় তার দিকে ও নজর রাখতে হবে। আমি যাচ্ছি বারান্দায়। আসামি এখন ওখানেই আছে।
সায়েম কোমড়ে হাত দিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো।
সুমন কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে সন্দিহান গলায় বললো,
— বারান্দা থেকে ফেলে দেয়ার কোন সম্ভাবনা আছে?
— না।(স্বাভাবিক ভাবে)
— তাহলে ঠিক আছে।
🌸
আচ্ছা আদু,তোর কখনো অন্য কাওকে ভালো লাগে নি?
তানির কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালাম আমি। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললাম,
— হঠাৎ এই প্রশ্ন?
— এমনিই জানতে ইচ্ছে হলো। সম্রাট ভাইয়ার সাথে তো তোর সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিলো। তাকে একদম সহ্য করতে পারতি না।কি কি অভিশাপ দিছিস এটা শুধু আমরা জানি।বেচারা সম্রাট ভাইয়া। তোর মতো অত্যাচারী নারীর কবলে পরেছে।আল্লাহ তাকে হেফাজতে রাখুক। আমিন।
আমিন ক ছেড়ি।ভাইরে তোর হাতের থেকা বাচাইতে হইবো না!
আমি কিছুক্ষণ অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলাম। প্রত্যেক টা কথা সত্যি।সম্রাট ভাইয়া যদি জানতে পারে আমি তাকে প্রতিটি কদমে কদমে বদ দোয়া দিয়েছি তাহলে আমাকে এই শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানিতে দুই ঘন্টা চুবাবে।তানি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জোর করে হাসার চেষ্টা করলাম।
— হে হে হে। আরে ধুর,আমি আর কাওকে ই পছন্দ করি নি। আর ওই সব আগের কথা মনে করে কি লাভ।ওগুলো মন থেকে ছিলো নাকি!মন থেকে বদদোয়া না দিলে কবুল হয় না। দেখিস না আমার টা ও কবুল হয় নাই।আমার দোয়া যদি কবুল হতো তাহলে তো সে একটা আস্তো ঝগড়াটে বউ পেতো।এখন দেখ, সে তো এরকম কিছু পায়নি তাই না!
আমি হড়বড় করে একদমে কথা গুলো বলে থামলাম। তানি আমার দিকে ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে।
— আমি ঠিক বলেছি না? (সন্দিহান চোখে)
— হ।একশ ভাগ সত্যি কথা।দোয়া তো কবুল হয় নাই। হইলে তো ঝগড়াটে বউয়ের বদলে রাক্ষসী বউ পাইতো না।
— হ্যা হ্যা একদম ঠিক।
আমি তাড়াতাড়ি করে ওর কথার জবাব দিতেই খেয়াল হলো ও কি বলেছে।আমি নাকি রাক্ষসী!কেন রে,আমি কি তোর রক্ত খেয়েছি?নাকি তোর ঘাড় মটকে দিয়েছি।মীরজাফর মহিলা।
— আগামি দুই মিনিট তুই আমার সাথে কথা বলবি না বেদ্দপ বেডি।ছি ছি ছি,তুই আমার বান্ধবী হয়ে এমন কথা বলতে পারলি!আমার মতো নিস্পাপ একটা মেয়েকে রাক্ষসী! জাতি মেনে নিবে না।ঘরে ঘরে প্রতিবাদ চলবে। মশাল জ্বালিয়ে মিছিল বের হবে।দেখে নিস তুই। (কাদো কাদো গলায়)
— হ হ। ঠিক কইছোস।সেই মশালে আগুন জ্বালায় মিছিল উদ্ভবন করার লাইগাইতো আমি বাইচা আছি বেহুদা ছেমরি। যা সর।(বিরক্তিকর গলায়)
চলবে,,,
(আজকে বন্ধু স্পেশাল পর্ব ছিলো। রি-চেক করা হয় নি। আমি এখনো সুস্থ হইনি।সবাই দোয়া করবেন।)