মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_২৭

0
410

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৭

আজকে সারাদিন ঘোরাঘুরি করার প্ল্যান নিয়ে বেরিয়েছি আমরা।ওহিদ, তৌহিদ, প্রিয়া, তানিয়া,আমি আর ভাইয়া।এতো দিন কক্সবাজার থাকলেও আমাদের খুব একটা কোথাও যাওয়া হয় নি। আমরা এখন বেরুলেও সম্রাট ভাইয়ারা আমাদের সাথে জয়েন হবে দুপুরের দিকে।

প্রথমে ইনানী, হিমছড়ি ঘুরে আমরা আবার কক্সবাজার কলাতলী ফিরে আসবো। এখান থেকে লাবনী,সুগন্ধা,বারমিছ মার্কেট সব ঘুরবো আজকে। সাথে সবার পকেট ফাকা করে দিবো।

ঘোরাঘুরি করার জন্য সম্রাট ভাইয়া তার গাড়ি টা আমদের দিয়ে দিয়েছেন। আজকে তার সব কাজ হোটেলের মধ্যেই।তাই খুব একটা সমস্যা হবে না। যদিও তিনি আমাদের একা ছাড়তে চায় নি তবুও আমাদের জেদের কাছে হার মানতে হলো।

হোস্টেলের বাইরে দাড়িয়ে ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।ভাইয়া চলে আসবে এখোনি হয়তো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে আবার ফোনের দিকে মন দিলাম আমি।

প্রচুর অস্বস্তি নিয়ে আবার সামনে তাকালাম। কয়েক দিন ধরে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে।যদিও আমি কাওকে দেখি নি। তবুও মনে হচ্ছে আমার আশেপাশে কেউ আমার উপর নজর রাখছে।এতো দিন মনের ভুল ভেবে আসলে ও আজ খুব ভয় করছে।আবার কোন বিপদের সম্মুখীন হবো না তো!

আমাকে এভাবে ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খেতে দেখে প্রিয়া হালকা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?আমি আলতো হেসে ইশারায় কিছু না বললাম। তবে প্রিয়ায় ফেস দেখে মনে হলো ও আমার কথা বিশ্বাস করে নি।তবু্ও কিছু বললো না।

পাচ মিনিটের মাথায় ভাইয়া এসে হাজির হলো। সম্রাট ভাইয়ার গাড়ি আজ ভাইয়া ড্রাইভিং করবে।

তৌহিদ গিয়ে ভাইয়ার সাথে বসে গেলো। আমরা বাকিরা পিছনে বসতেই ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট করলো।

— তুই দিন দিন বাস্কেট বলের মতো ফুলে যাচ্ছিস বইন।

প্রিয়ার কথায় আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। পাশেই তানি ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে।

সামনে ওহিদ ফিক করে হেসে দিয়েছে অলরেডি।

— ফালতু কথা কইবি না বেদ্দপ মহিলা। আমি মোটা না।আমার সাস্থ্য একটু ভালো। এইডা রে মোটা কয় না।

তানির কথা শুনে সবাই এক সাথে হেসে উঠলো। আমাদের হাসতে দেখে তানি গাল ফুলিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো।

দরিয়া নগরের কাছাকাছি আসতেই প্রিয়া লাফিয়ে উঠলো নামার জন্য। আসলে মেরিন ড্রাইভ রাস্তাটা অসম্ভব সুন্দর। দেখলে মনে হয় সারাজীবন থেকে যাই।

ভাইয়া দরিয়া নগরের ঝর্ণার কাছে গাড়ি থামালো।গাড়ি থামতেই তানি লাফিয়ে নেমে গেলো গাড়ি থেকে। তানি কে লাফিয়ে নামতে দেখে প্রিয়া আর্তনাদ করে উঠলো।

— আল্লাহ আল্লাহ। আদু একটু চেক কইরা দেখ রাস্তা ডা ফাইট্টা গেছে নি!

প্রিয়ার কথা শুনে আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আর চোখে তানির দিকে তাকাতেই তানি কটমট করে প্রিয়ার দিকে তাকালো। প্রিয়ার পিঠে ধুম করে কিল বসিয়ে ধুপধাপ করে ঝর্ণার কাছে চলে গেলো। প্রিয়া পিঠ ডলে আমার দিকে কাদো কাদো চোখে তাকালো। আমরা অকে ইগনোর করে সামনে এগিয়ে গেলাম।

প্রিয়া আমাদের দিকে তাকালাম বিরবির করে বললো, মীরজাফরের দল।

ঝর্ণার কাছে গিয়ে আমাদের সবার মন ভালো হয়ে গেলো। প্রিয়া আর তানি কিছুক্ষণ গাল ফুলিয়ে থাকলে ও এখন ঠিকই দাত বের করে হাসছে।

দরিয়া নগরে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা হিমছড়ি চলে গেলাম। হিমছড়ি গিয়ে অনেকটা হতাশ হতে হলো। ঝর্ণা দেখতে পারলাম না। পাহাড় ভাঙার ফলে ঝর্ণার কাছে পর্যটক যাওয়া বারণ।তাই আমরা ইনানীর দিকে রওনা হলাম।

হাসি আনন্দ করতে করতে পৌঁছে গেলাম ইনানী বিচ।ইনানীর সৌন্দর্য দেখে চোখ জুরিয়ে গেলো আমাদের।তানি আর প্রিয়া পাথরের উপর উঠে সেল্ফি তুলে ফোন ভরিয়ে ফেলেছে অলরেডি। তৌহিদ নিজের গম্ভীর ভাব বজায় রেখে ফোনে ব্যাস্ত। ওহিদ সব কিছু ভিডিও করছে।
আমি আস্তে আস্তে গিয়ে তৌহিদের পাশে দাড়ালাম। আমাকে দেখে মুচকি হেসে ফোন টা পকেটে রেখে আমার হাত ধরে উল্টো দিকে হাটতে শুরু করলো। আমি ও কিছু বললাম না। যখনি তৌহিদের আমাকে কিছু বলার থাকে তখন এভাবেই আমাকে ভীড় থেকে আলাদা করে ফেলে।

🌸

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি তৌহিদের দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বোকার মতো হাসলো তৌহিদ।

— হ্যাবলা কান্তের মতো দাত বের না করে কি হয়েছে সেটা বল।

— দোস্ত,আমার ধারণা ভুল হতে পারে বাট আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে। (চিন্তিত হয়ে)

আমি অবাক হয়ে তৌহিদের দিকে তাকালাম। তার মানে আমার ধারণা ভুল নয়।আমি সন্দিহান চোখে জানতে চাইলাম,

— তোর এমন কেন মনে হলো??

— আরে আমাদের কলেজে যাওয়ার আসার সময় একটা গাড়ি আমাদের আসেপাশেই থাকে। আজকে ও আমাদের ফলো করতে করতে এখানে চলে এসেছে।

আমি তৌহিদের কথা শুনে কিছুটা বিচলিত হয়ে গেলাম।আবার চিন্তা ও হতে লাগলো, আমাদের কারোর সাথে কোন শত্রুতা নেই।তাহলে কেউ আমাদের কেন ফলো করবে?

আমাকে চিন্তা করতে দেখে তৌহিদ আমাকে ভরসা দিয়ে বললো,

— আরে চিন্তা করিস না। আমি আছি তো।গাড়ির নাম্বার আমি নিয়ে নিয়েছি।প্রনবের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি অলরেডি। কিছুক্ষণ পরেই সব ইনফরমেশন চলে আসবে আমাদের কাছে।

আমি তবুও নিশ্চিত হতে পারলাম না। চিন্তিত গলায় বললাম,

— প্লিজ সম্রাট ভাইয়া কে সব কিছু জানিয়ে দে।আমার মনে হয় খারাপ কিছু হতে পারে আমাদের সাথে। আমাদের এখুনি কক্সবাজার ফিরে যাওয়া উচিত।

আমার কথা শুনে তৌহিদ ও কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেলো। সম্রাট ভাইয়া কে মেসেজ করে গাড়ির নাম্বার আর সব কিছু সংক্ষেপে লিখে পাঠিয়ে দিলো।

সামনেই তানিয়া, প্রিয়া আর ভাইয়া সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করেছে।ওদের বললে এখন খুব বেশি টেনশন করবে। ওদের আনন্দ নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না। তবুও আমাদের এখন ফিরে যাওয়া উচিত। আমরা সামনে এগুতেই কেউ পিছন থেকে তৌহিদের মাথায় আঘাত করলো।তৌহিদ আর্তনাদ করার ও সময় পেলো না তার আগেই আরেকজন এসে ওর মুখ চেপে ধরে পেটে চাকু ঢুকিয়ে দিলো।

আমি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি। চিৎকার করার শক্তি টাও আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। রক্তে তৌহিদের সাদা শার্ট লাল রং ধারণ করেছে।লোক গুলো আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করলাম।আমার চিৎকার শুনে কিছু কিছু পর্যটক আমাদের দিকে দৌড়ে এগিয়ে আসার আগেই লোক গুলো আমার মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করলো। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হওয়ার আগে তৌহিদের ব্যাথায় নীল হয়ে যাওয়া মুখ টা চোখে পড়লো। জ্ঞান হারাবার আগে আল্লাহর কাছে একটা ই আর্জি,তৌহিদের যেন কিছু না হয়।

🌸

চিৎকার চেচামেচি শুনে তানিয়ারা ও এগিয়ে এলো ভিরের দিকে। রাব্বি ভির ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো। ককয়েকজন মিলে তৌহিদের রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে।রাব্বি দৌড়ে গিয়ে তৌহিদের মাথা টা নিজের কোলে নিয়ে অস্থির হয়ে ডাকতে লাগলো,

— তৌহিদ,,, এই কি হয়েছে তোর?তৌহিদ,,, চোখ খোল ভাই!

এতক্ষণে বাকিরা ও চলে এসেছে। ওহিদ তৌহিদ কে দেখে পাগলের মতো ছুটে গেলো ভাইয়ের কাছে।

— ভাই,,,এই ভাই।র রক্ত আ আসলো কোথা থেকে? ভাই,,চিৎকার করে তৌহিদ কে ডাকছে ওহিদ।রাব্বির কোল থেকে তৌহিদের মাথাটা আকরে ধরে চিৎকার করে কান্না করছে ওহিদ।

তানি আর প্রিয়া এসে তৌহিদ কে ডাকতে লাগলো। ওদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে গেলো।

রাব্বি ওদের তাড়া দিলো তৌহিদ কে গাড়িতে তোলার জন্য। অলরেডি অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে।

— আদু কোথায় ভাইয়া।(অস্থির হয়ে)

প্রিয়ার কথায় সবার আদওয়ার কথা মাথায় আসলো।

সবাই আদওয়া কে খুজতে শুরু করলো। তখন ভির থেকে একজন এসে বললো,

— এই ছেলেটার সাথে যে মেয়েটা ছিলো তাকে ওই লোক গুলো ধরে নিয়ে গেছে।ওরাই হয়তো ওকে মেরেছে।আপনারা পুলিশকে খবর দিন।

লোকটার কথায় সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো,,,

চলবে,,,,

(রি চেক করা হয় নি। কিছু মাথায় আসছে না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here