#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৯
নিস্তব্ধ কামরা জুরে এক অসহ্য নিরবতা বিরাজমান। একটা আধভাঙ্গা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে যুবরাজ। চারিদিকে চোখ বুলাতেই তার মেজাজ কঠিন ভাবে খারাপ হলো। মেয়ে গুলো নিজেদের অর্ধনগ্ন করে পরিদর্শন করতে ব্যাস্ত। এরকম একটা পরিবেশ আদু আছে ভাবতেই মারিয়ার বাবা কে কয়েকশ টুকরো করার বাসনা জাগলো মনে। সময় নষ্ট না করে পতিতা পল্লীর সর্দারনীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,,
— নতুন মেয়েটাকে আমার চাই।যত টাকা লাগে দিবো।কিন্তু মেয়েটাকে আমার এই মুহুর্তে চাই।
যুবরাজের কথা শুনে মহিলা খুক খুক করে হেসে উঠলো। বিশ্রী ইঙ্গিত দিয়ে বললো,
— কিনার কি দরকার স্যার।এক রাইতের লাইগা লইয়া যান।নিজের ইচ্ছা মতো মস্তি করেন।মন ভইরা গেলে আবার এই হানে দিয়া যাইয়েন।টেকা ও কম লাগবো। আর আমি ওরে বেচতে পারুম না। যাদ থেকা ওরে কিনছি হের লগে জবান দেওন লাগছে,আমি ওরে দিয়া এই হানে ধান্দা করামু।শুরুডা নাইলে আপনেই করেন।এক্কেবারে ফ্রেশ মাল।এহনো কেউ হাত লাগায় নাই।
যুবরাজ মহিলার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। এই মহিলাকে সহজে বাগে আনা যাবে না এইটা ও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এতো সহজে হার মানার মানুষ সে না।এর শেষ দেখেই ছাড়বে সে।
— আমি তো জানি এখানে টাকা চলে। জবান আবার কবে থেকে চলা শুরু করলো! যাই হোক, দেয়া না দেয়া আপনার ব্যাপার। আমি না হয় অন্য কোথাও থেকে কিনে নিবো। আশা করি দশ লাখ টাকায় পেয়ে যাবো।কি বলেন?
দশ লাখ টাকার কথা শুনে মহিলার চোখ চক চক করতে লাগলো। মাত্র দুই লাখ টাকায় সে আদওয়া কে কিনে নিয়েছে।আট লাখ টাকা লাভ কিছুতেই হাত ছাড়া করা উচিত হবে না।
— আরে স্যার রাগ করেন কা।আমি তো বেচার লেইগ্যাই এইহানে দোকান খুইলা বইছি।ধান্দা তো আপনের ওইহানে গেলেও করবো।হেই তো একই কতা।আপনে তো আএ সাজায় রাখবেন না।নিয়া ঠিকই ভোগ করবেন।তাইলে আর আমার কি সমস্যা। নিয়া যান।
ওই বিউটি, যা মাইয়াডারে লইয়া আয়।
ম্যাডামের অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথেই বিউটি চলে গেলো আদওয়া কে আনতে।যুবরাজ টাকা দিয়ে লেনদেনের ব্যাপার টা সেরে নিলো।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সব কিছু ভালো করে দেখে নিলো।যাতে পরবর্তীতে আর কোন সমস্যা না হয়।
🌸
আজ দুই দিন তৌহিদের জ্ঞান ফিরেনি। আই সি উ তে নিস্তেজ হয়ে পরে আছে।পেটে, মাথায় ব্যান্ডেজ করা।অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে তাই জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগছে।বিপদ কেটে গেলেও ডাক্তার রা এখানো কিছু সঠিক ভাবে বলতে পারছে না।
দুই দিন ধরে ওহিদ আর প্রিয়ার অবস্থা নাজেহাল। একদিকে আদুর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না আর অন্য দিকে তৌহিদের এই অবস্থা।দুজনের অবস্থা দিশেহারা প্রায়।ওহিদের মা কাল থেকে কান্না করেই যাচ্ছে। ছেলের চিন্তায় প্রেশার বেড়ে গেছে। পাশের কেবিনে তাকেও ভর্তি করা হয়েছে।
প্রিয়া ওহিদের কাধে হাত রেখে বললো,
— চিন্তা করিস না। ও ঠিক হয়ে যাবে ইংশাআল্লাহ।
— হুম।
— আদওয়া কে পাওয়া যাবে।ওর কিছু হবে না।
আদওয়ার কথা বলতেই ডুকরে কেঁদে উঠলো ওহিদ। কাল থেকে চিন্তায় চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর।না জানি আদু কি অবস্থায় আছে। ও ঠিক আছে তো!ওর সাথে খারাপ কিছু হয় নি তো! এই চিন্তা গুলো মাথায় আসলেই নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।আল্লাহ না করুন, যদি আদুর সাথে খারাপ কিছু হয় তাহলে আদওয়া সহ্য করতে পারবে না। নিজেকে একেবারে শেষ করে দিবে।এর মধ্যে সবাই জেনে গেছে আদওয়া কে পাওয়া যাচ্ছে না। ফিরে আসলে ও খুব খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। মানুষ রেপিষ্ট কে কিছু বলে না কিন্তু যে মেয়েটা এতটা নির্যাতনের স্বিকার হয় তাকেই সারা জীবন ধরে কথা শুনতে হয়। মানুষ তাকে ততক্ষণ কথা শুনাতে থাকে যতক্ষণ না সে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে। এগুলো ভাবতেই ওহিদের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
নিজের চিন্তা ভাবনার উপর রাগ হতে লাগলো ওর।বারবার কেন খারাপ চিন্তা ই মাথায় আসছে!এরকম কিছু হবে না। আদু নিশ্চয়ই ঠিক আছে।
ওহিদের দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রিয়া।ছেলেটা নিজের আবেগ সামলাতে না পারলে খুব খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে। যা কারোর ই কাম্য নয়।
🌸
গাড়ি তে বসে হাসফাস করছে সম্রাট। কালকে তৌহিদের দেয়া ইনফরমেশন নিয়ে আদওয়া কে খুজতে খুব একটা সময় লাগে নি তার।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আদওয়া কে সে নিজে গিয়ে আনতে পারবে না। এখানে নাটক সিনেমার মতো করে গিয়ে সবাইকে মেরে আদওয়াকে উদ্ধার করতে যাওয়া টা বোকামি। কারণ এইটা তাদের রাজত্ব।এখানে চুনপুটি থেকে রাঘব বোয়ালদের হাত আছে।একটু এদিক সেদিক হলেই আদওয়া কে গায়েব করে দিতে সময় নিবে না এরা।হয়তো বা অন্য কোনো দেশে পাচার করে দিবে।তাই সম্রাট আর কোন রিস্ক নিতে চাইছে না। ওই লোক গুলো সম্রাট আর তার সাথের সবাইকে চিনে।কিন্তু যুবরাজ কে চেনে না।তার সকালের ফ্লাইটে যুবরাজ কে কক্সবাজার নিয়ে আসে সম্রাট। যুবরাজ কে সব কিছু বলতেই রাগে ফেটে পরে ও।মারিয়ার বাবার পিছনে সাথে সাথেই লোক লাগিয়ে দেয় যাতে সে কোথাও পালিয়ে যেতে না পারে।এই লোকটার কঠিন শাস্তি পাওনা আছে। সাফা র চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই শরীরের প্রতিটি লোম কুপে আগুন লেগে যায় ওর।
যুবরাজ ভিতরে গিয়েছে দুই ঘন্টা হতে চললো। এবার সবার একটু টেনশন হচ্ছে। রাব্বির চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কান্নার কারণে চোখ দুটো রক্তিম হয়ে আছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সায়েম শান্ত চোখে গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথম থেকেই ওর ব্যবহার খুব শান্ত। চিন্তার কারণে বিষয়টি কেউ খুব একটা খেয়াল করে নি।
— এতো সময় কেন লাগছে?ভিতরে সব ঠিক আছে তো?
রাব্বি কে অস্থির হতে দেখে ইসহাক বললো,
— চিন্তা করিস না। সব প্ল্যান মতোই হবে।
ইসহাকের কথা শুনে ও রাব্বি স্থির হতে পারছে না। তার বোন এমন একটা জায়গায় আছে।সে কিভাবে নিজেকে শান্ত রাখবে!
সম্রাট চোখ বন্ধ করে বসে আছে। সুমন একটু পর পর তাকাচ্ছে ওর দিকে। এতটা শান্ত হয়ে বসে থাকার লোক সম্রাট না।নিশ্চয়ই কোন বড় কিছু করার প্ল্যান করেছে।সবার মধ্যেই শুধু আদওয়ার ঠিক ঠাক ফিরে আসার অপেক্ষা।
🌸
অন্ধকার রুমের একটা নোংরা বিছানায় পরে আছে আদওয়া।বিউটি এসে এই অবস্থায় দেখে শুকনো ঢোক গিললো। মেয়েটা কে সেও কাল খুব মারধর করেছে। যদিও কেউ জানে না। কিন্তু এই অবস্থায় দেখে মেডাম ঠিকই বুঝে যাবে।কাস্টমার নিবে কিনা তাও ভাবার বিষয়।
— এই মেয়ে ওঠ।আর কতো পরে থাকবি।তরে বেচা হয়ে গেছে। তারাতাড়ি রেডি হ।
বিউটির ডাকে ও যখন আদওয়ার কোন সারা পাওয়া গেলো না তখন সে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। মরে টরে যায় নি তো আবার!আদওয়ার নাকের পাসে দুই আঙুল দিয়ে চেক করতেই দেখলো হালকা নিশ্বাস নিচ্ছে। এরকম ভাবে থাকলে আর বেশিক্ষণ এই নিশ্বাস টাও বন্ধ হয়ে যাবে।
বিউটি দ্রুত গতিতে গিয়ে মেডাম কে খবর দিলো।মেডাম বিউটির দিকে কটমট করে তাকিয়ে আড় চোখে যুবরাজের দিকে তাকালো। যুবরাজের দৃষ্টি ও তাদের দিকেই।
— কোন সমস্যা?
— আসলে মাইয়া নতুন তো তাই একটু খাতির যত্ন করতে হইছে।এহন একটু অসুস্থ হইয়া গেছে। আপনে নাহয় কাইল আহেন।আমি অরে হাসপাতালে নিয়া সুস্থ কইরা আনি।আপনে কাইল একদম রেডি পাইবেন।
মহিলার কথা শুনে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো যুবরাজের। তবুও নিজেকে শান্ত করে বললো,
— কোন ব্যাপার না। আপনি গাড়ি তে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। বাকিটা আমি বুঝে নিবো।
যুবরাজের কথা শুনে মহিলা কিছুটা ইতস্ততভাবে বিউটি কে তাই করতে বললো। আরো কয়েকজন মেয়ের সাহায্যে বিউটি আদওয়া কে গাড়িতে তুলে দিলো।সাথে সাথেই যুবরাজ গাড়ি নিয়ে দৃষ্টি সিমার বাইরে চলে গেলো।
সম্রাটের সামনে এসে যুবরাজের গাড়ি থামতেই সম্রাট ঝড়ের গতিতে এসে দরজা খুলে আদওয়া কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। সে এখনো আদওয়ার অবস্থা খেয়াল করে নি। কিছুক্ষণ পরে আদওয়ার নড়াচড়া না দেখে বুক থেকে আলগা করতেই ওর নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
কপালে জমাট বাধা রক্ত আর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ দেখে সম্রাট পাগলের মতো আদওয়া কে ডাকতে লাগলো। সম্রাটের পাগলামি দেখে রাব্বি দৌড়ে বোনের কাছে এসে থমকে গেলো।
চলবে,,,
(প্রথমে আইডি তে সমস্যা। তারপরে ফোন নষ্ট 🥺🥺🥺🥺🥺।জীবনডা বেদনা হইয়া গেলো। তিন দিন পরে জামাই রে তেল মাইরা ফোন ঠিক করায় আনলাম। এখন থেকে সব কিছু ঠিক থাকলে গল্প প্রতিদিন পাবেন ইংশাআল্লাহ। সবাই সুস্থ থাকুন। আমার জন্য ও দোয়া করবেন☹️।ভালোবাসা সবাইকে)