মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_৩২

0
388

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩২

ডাক্তারের কেবিনে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সম্রাট। ডাক্তার কে ও অনেকটা বিচলিত মনে হচ্ছে।

সম্রাট আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো,

— আদুর ঘারে গলায় ওগুলো কিসের দাগ ডক্টর?(বিচলিত হয়ে)

— পেসেন্টের গলায় ওগুলো মনে হচ্ছে কামড়ের দাগ।দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে এবিউজ করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া তার শরীরে নানান জায়গায় কামড় আর নখের আচড়ের দাগ আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মনে হচ্ছে এটি একটি রেপ
কেস।আমারা সেরকম কোন সিন্ডম এখনো পাই নি। আপনাদের বিষয়টি আগে ইনফর্ম করতে চাইছিলাম। এতদিন মাথার আঘাত টি গুরুতর ছিল বিধায় আমরা তার মেডিকেল চেক-আপ করি নি।

ডক্টর কে মাঝ পথেই থামিয়ে দিলো সম্রাট। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে বললো,

— তার দরকার নেই ডক্টর। আর এই বিষয় নিয়ে কারোর সাথে কথা বলার ও প্রয়োজন নেই।এমন কি পেসেন্ট এর সাথে ও না।আমি কি আপনাকে বোঝতে পেরেছি?

সম্রাটের দৃর গলায় বলা কথা গুলো শুনে ডক্টর কিছুটা হচকচিয়ে গেলো।

— দেখুন মি.সম্রাট, আপনি বললে তো আর হবে না। ট্রিটমেন্ট করতে হলে আমাদের পরিক্ষা নীরিক্ষা করতেই হবে। আর মেয়েটাকে প্রচন্ড আঘাত করা হয়েছে। অনেক কিছু ডেমেজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই আমি আপনার কাছে রিকুয়েষ্ট করবো আমাদের কাজে বাধা দিবেন না।

— হুম।বুঝতে পেরেছি ডক্টর। তবে আদুর সাথে যদি এমন কিছু হয়ে ও থাকে তবে এই কথা যেন আর কেউ না জানে।এমন কি আমাকেও বলার প্রয়োজন নেই।মানুষের মন বড্ড বেঈমান ডক্টর। আর জুবান হচ্ছে ভয়ংকর লাগামহীন। মুখ ফস্কে কখন সত্যি বেরিয়ে যাবে বলা মুশকিল। তাই গোপন থাকাই ভালো।

ডক্টর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সম্রাটের দিকে। সম্মতি সূচক মাথা নাড়তেই সম্রাট আলতো পায়ে বেড়িয়ে গেলো।

ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা আদওয়ার কেবিনে চলে এলো সম্রাট। কেবিনে রুবিনা বেগম আর আফজাল সাহেব বসে আছে। সম্রাট কে দেখে রুবিনা বেগম আহত বাঘিনীর মতো করে তাকালো। যেন সুযোগ পেলেই সম্রাটের হাড় মজ্জা চিবিয়ে খাবেন। সম্রাট ওনার দৃষ্টি কে পাত্তা না দিয়েই আদওয়ার পাশে বসে পরলো। সম্রাটের এমন খাপছাড়া আচরণ দেখে রুবিনা বেগম কটমট করে তাকালো আফজাল সাহেবের দিকে।আফজাল সাহেব স্ত্রীর ব্যবহারে রীতিমত বিরক্ত হচ্ছেন। তাই তিনিও তার দৃষ্টি কে পুরোপুরি উপেক্ষা করলেন ।

সুমনের ফোনে সম্রাটের টেক্সট এসেছে। ওই লোক গুলো কে আর মারধর করতে নিষেধ করেছে সে।এখন হালকা পাতলা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের একটু সুস্থ করতে বলা হয়েছে।

মেসেজ পড়ে বিরক্তি তে কপাল চুলকালো সুমন। এক বালতি পানি নিয়ে ঝপাং করে ছুড়ে মারলো লোক গুলোর উপর। তবুও জ্ঞান ফিরলনা তাদের।সুমন কিছু অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে আবার পানি এনে ছুড়ে মারলো। এবার পিটপিট করে চোখ খুলতে শুরু করলো সবাই।

— আবার যদি জ্ঞান হারাইছোস তাইলে তো বোঝছ ই।চুপচাপ চোখ খোলা রাখ।এত মেহেনত কইরা বারবার জ্ঞান ফিরাইতে পারতাম না।

সুমনের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো ইসহাক। বনানী কে সম্রাটের ফ্ল্যাটে রেখে সে এখানে চলে এসেছে। যদি ও বনানী আসার জন্য অনেক জোর করছিল। কিন্তু ইসহাক তাকে নিয়ে আসেনি। এই সব জানোয়ারদের সামনে বনানী কে কখনোই আনবেনা সে।অথচ নির্জন জায়গায় তানিয়া কে জানোয়ার দের মধ্যে ছেড়ে এসেছিলো সে। তানিয়ার কথা মনে হতেই তখনকার কথা মনে পরে গেলো ইসহাকের। মেয়েটা তার দিকে একবার ফিরেও তাকায় নি।চোখ বন্ধ করে অতীতের কথা ভাবতে লাগলো সে,

অতীত,

তানিয়াদের বাড়ি থেকে আসার পরে আরো কয়েকবার দেখা হয়েছে তানিয়ার সাথে ইসহাকের।প্রত্যেক বার শুধু ঝগড়া ই করেছে দুজন। আচানক ইসহাক তানিয়ার সাথে ভালো ব্যবহার করা শুরু করে। প্রথম দিকে তানিয়া পাত্তা না দিলেও পরবর্তীতে সেও ইসহাকের সাথে ভালো ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। আস্তে আস্তে দুজন দুজনের সাথে অনেকটা সহজ হয়ে যায়। ইসহাক তানিয়াকে নিয়ে অনেকটা পসেজিভ হয়ে যায়। ইসহাকের কেয়ারিং দেখে তানিয়া ও কিছুটা দুর্বল হয়ে পরে। একদিন ইসহাক প্রোপজ করে তানিয়া কে।তানিয়া মনে মনে খুশি হলেও কোন জবাব না দিয়েই চলে আসে।এতে ইসহাক আরো বেশি রেগে যায়।

— তুই সত্যিই ভালোবাসিস তানিয়া কে?

সায়েমের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় ইসহাক।হঠাত এসে সায়েম এমন প্রশ্ন করবে ভাবতেও পারে নি ইসহাক। আমতা আমতা করে বলে,

— হ হ্যাঁ।

— তাহলে তোতলাচ্ছিস কেন?

— ক কই তোতলাচ্ছি?তুই এইসব কেন জানতে চাইছিস?

ইসহাক কে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মলিন হাসলো সায়েম। ম্লান গলায় বললো,

— জানি না তুই ওকে সত্যি ভালোবাসিস কি না।তবে কেউ হয়তো ওকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে।তুই যদি ওর সাথে মজা করার উদ্দেশ্যে এইসব করে থাকিস তাহলে আমি বলবো তুই ভুল করছিস।আসলে ভুল নয়, অন্যায় করছিস।কারণ তোর এই সামান্য মজার কারণে তানিয়া তার সত্যিকারের ভালোবাসার উপর থেকে বিশ্বাস হারাবে। ওর মন ভাঙবে। ও জীবনে আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। যে ওকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসবে তাকেও ও প্রতারক ভাববে।ওর জীবন টা ভালোবাসা হীন হয়েই থেকে যাবে।তোর একটা মজা ওকে ভিতর থেকে মেরে ফেলবে। তোর একটা সামান্য মজা যদি কাউকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দেয় তাহলে তা আর ভুলের পর্যায়ে থাকবে না। তা গুনাহ হয়ে যাবে।

ইসহাক কে কথা গুলো বলে সায়েম ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। ইসহাক এখনো স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। সায়েমের কথা গুলো ভাবছে।তবে তানিয়ার মতো চঞ্চল মেয়েরা এসব খুব একটা গায়ে মাখবে না।কয়েক দিনের ব্যপার।কয়েক দিনে তো আর কাওকে এতটা ভালবাসা যায় না!

বর্তমানে,

সুমনের ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসলো ইসহাক। সামনে তাকাতেই তানিয়া কে চোখে পড়লো। যুবরাজের সাথে এখানে এসেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ওকে এখানে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ইসহাকের। এইসব খারাপ মানুষের সামনে ও কেন আসবে?আজব!

যুবরাজ গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরলো। তানিয়া ওর সাথে জোর করে চলে এসেছে। মেয়েটা অনেক ঘাড় তেড়া।

তানিয়া লোক গুলোর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

— এই লোকগুলো ই আমাদের ফলো করতো ভাইয়া।আমি কয়েকদিন দেখেছি।

তানিয়ার কথা শুনে যুবরাজ ভ্রু কুচকে তাকালো।

— ওরাই আদওয়া কে কিডন্যাপ করেছিল।

যুবরাজের কথা শুনে তানিয়া নিজের ব্যাগটা ফেলে চারিদিকে কিছু একটা খুজতে লাগলো। রুমের কোনায় একটা হকিস্টিক দেখে দ্রুত পায়ে গিয়ে ওটা নিয়ে লোক গুলো কে মারতে লাগলো। তানিয়া কে মারতে দেখে ইসহাক,সুমন, সায়েম,যুবরাজ হা করে তাকিয়ে আছে। সম্ভতি ফিরে পেতেই ইসহাক দ্রুত গতিতে গিয়ে তানিয়া কে ওদের থেকে সরিয়ে আনলো।
ইসহাক কে নিজের এত কাছে দেখে তানিয়ার রাগ এবার আকাশ ছুলো।হাতের স্টিক দিয়ে ইসহাক কে জোরে আঘাত করতেই ইসহাক ছিটকে দূরে গিয়ে পরলো। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। সব চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে ইসহাক। সে আকাশ সম বিস্বয় নিয়ে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে।
তানিয়া এখনো রাগে ফোসফাস করছে। ইসহাকের দিকে এগিয়ে গিয়ে মুখোমুখি দাড়ালো সে।ইসহাকের চোখে চোখ রেখে দাতে দাত চেপে বললো,

— আমাকে স্পর্শ করার সাহস কোথায় পেলেন?মেয়ে দেখলেই হাত নিসপিস করে ছোয়ার জন্য? নিজের নোংরা হাত নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিখুন। না হলে পরের বার হাত আর হাতের জায়গায় থাকবে না।

তানিয়ার কথা শুনে তার দিকে ছলছল চোখে তাকালো ইসহাক। কম্পিত গলায় বললো,

— ম মন!

— কল মি তানিয়া সেহরিশ চৌধুরী।

রক্তচক্ষু নিয়ে ইসহাকের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো তানিয়া।

— আশা করি এর পর থেকে এমন ভুল আর হবে আপনার মি.ইসহাক ইমতিয়াজ। আর একটা কথা, পচা শামুকে পা কাটর ভুল বার বার করার মানুষ আমি নই।তাই সীমার মধ্যে থাকুন।

চলবে,,,

(সামনে গল্পের মোড় ঘুরে যেতে পারে।আপনাদের কাছে অনুরোধ আগেই কেউ মন্তব্য করবেন না। আমাদের সমাজে মেয়েদের কিভাবে হেয় করা হয় আমি গল্পে এই দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। ভালোবাসা সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here