বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ১৩ : #গায়ে_হলুদ লেখিকা: #Lucky_Nova

0
453

গল্পের নাম: #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ১৩ : #গায়ে_হলুদ
লেখিকা: #Lucky_Nova

“তোর ওকে শাড়ি পড়াতে হবে না।”
এরোনের তিরিক্ষি কন্ঠ শুনে প্রীতি আর রুমা অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকালো। মিহির অসস্তি আর লজ্জা আরো বেড়ে গেল।
“তুই?!” রুমা ভ্রু উঁচু করল।
“তুই বের হ। ওর গায়ে হাত লাগাবি না।” খিটখিটে কন্ঠে বলল এরোন।
রুমা ভ্রু বাঁকালো।
“কেন? তোর ব…।” ‘বউ’ শব্দটা বলতে গিয়েও গিলে নিলো রুমা। তারপর বলল, “ওকে ছুলে ওর রূপ ঝলসে যাবে?”
“তুই মেয়ে না অন্যকিছু।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল এরোন।
প্রীতি মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
“হয়েছে, হয়েছে। যাচ্ছি!” বলেই শাড়ি রেখে মুখ ভেংচি দিয়ে বেরিয়ে গেল রুমা। ওকে অনুসরণ করে হালকা হেসে প্রীতিও বেরিয়ে গেল।
ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পর এরোন মিহির দিকে তাকালো।
সে লজ্জার লাল আভা ওর মুখে ছড়িয়ে আছে। এই রুমাকে ও মানা করেছিল মিহিকে জ্বালাতে। শোনেনি। দিব্যি চলে এসেছে।
“শাড়ি পরে রেডি হও।” নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল এরোন।
মিহি একপলক তাকিয়ে চোখ নামালো।

এরোন বের হয়ে গেল।
মিহি বড় করে শ্বাস নিতে নিতে রুমার উদ্দেশ্যে মনে মনে বলে উঠলো, সত্যিই! ওটা মেয়ে না অন্যকিছু! নির্লজ্জ।
অত্যন্ত বিরক্তির সাথে শাড়ি পরা শেষ করলো মিহি। প্যাচগোচ দিয়ে বাঙালী ধারার শাড়ি পরেছে সে। মিহির কাছে হলুদ শাড়ি মানেই বাঙালী স্টাইলে পরা উচিত।
প্রস্তত হয়েও মিহি বের হলো না। ঠ্যাং ঠ্যাং করে অন্য কারো অনুষ্ঠানে সে যাবে না। মন সায় দিচ্ছেনা তার। এমনিই বাড়ির সবার কথা চিন্তা করে মাথা হ্যাং হয়ে আছে ওর। তার উপর নাকি এই ছেলের সাথে সবাই বিয়েটা মেনে নিয়েছে। এটা ভেবেই ত মিহির মাথা ঘুরছে।
তবে মিহি সৌভাগ্য যে ওর বাবা রাজি না। ওর বাবা মুখ ফুটে হ্যা বলবেও না। তাছাড়া একবার ওর বাবা রাজি হয়ে গেলে ওকে বিয়ে টা করতেই হবে।

দরজায় কেউ টোকা দিতেই মিহির ভাবনায় ছেদ পরল। সে দরজার দিকে তাকালো।
“হয়েছে?” জিজ্ঞেস করলো এরোন।
“হু।” নিচু আওয়াজে বলে মিহি এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। ওর নিচে যেতে ইচ্ছেই করছে না।
এরোন দরজা ঠেলে ঢুকলো।
হলদেটে কমলা রঙের শাড়িও এই মেয়েকে মানিয়ে গেছে। আসলে সব রঙই মানাবে।
মিহির দিকে তাকিয়ে আনমনে মৃদু হাসে এরোন।
মিহি চোখ তুলে একপলক তাকিয়ে আবার চোখ নামায়। কিন্তু এরোন চোখ নামায় না।
মিহি দুইহাত একত্রে ধরে শুকনো একটা ঢোক গিলে নেয়।
এরোন আবার ওর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে।
মিহি বুঝতে পেরে চমকে ওঠে। হালকা ভয়ে পায়ের আঙুলগুলো মুড়ে নেয় ও। চিন্তা করে, চুল ত এখন খোলাই আছে তাও কেনো আগাচ্ছে সে!
এরোন মিহির সামনে এসে থামে। তারপর বলে,”নিচে চলো।”
বলেই আবার রুমের বাহিরে যেতে শুরু করে সে। মিহি ইতস্তত করে ধীর পায়ে ওকে অনুসরণ করে।
নিচে এসে নামতেই সবার হৈ হুল্লোড় বেড়ে যায়।
মিহি সবার মধ্যে আরো অসস্তি বোধ হতে থাকে। কাউকে চেনা না, জানে না, এজন্য আরোই ভালো লাগছে না ওর।
“চলো বসো।” প্রীতি ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওকে।
মিহি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর প্রীতির দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনের দিকে তাকায়।
স্টেজ সাজানো হয়েছে সামনে। হলুদ গাঁদা ফুল আর লাল গোলাপের সংমিশ্রণে। সাথে বিভিন্ন রঙের ওড়না আর বেলুনও ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে আবার দুইটা চেয়ার দেওয়া।
এসবের কি মানে! আর ও কেনো বসবে ওই চেয়ারে? প্রশ্ন জাগে মিহির। সে জিজ্ঞাসাসূচক চোখে তাকায় প্রীতির দিকে।
প্রীতি কিছু না বলে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে।
মিহি সন্দিহান চোখে আবার সামনে তাকায়।
এবার তার চোখ আটকায় গায়ে হলুদ লেখা ব্যানারে।
চোখ বড়সড় করে ফেলে ও। মুহুর্তেই সব পরিষ্কার হয়ে যায় মিহির কাছে।
চাপা রাগে দুইপা পিছিয়ে যায় ও। তারপর কোনো কিছু না বলে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।
ওকে এভাবে যেতে দেখে সবাই খানিকটা অবাক হয়ে যায়।
এরোন অবাক হয় না।
সে আগেই আঁচ করছিলো যে এমনটা হতে পারে।
উপর থেকে ধরাম করে দরজা আটকানোর শব্দ আসতেই সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করে।
“মামা, গায়ে হলুদ হবে না?” ভেটকি মাছের মত মুখ করে বলে মেঘ।
“আর হলুদ!” হতাশ হবার ভান ধরে বলে ওঠে সুভাষ।

এরোন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঝের দিকে কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে কিছু চিন্তা করে। তারপর চোখ তুলে সুভাষের দিকে তাকায়।
আর বলে, “এক কাজ কর।”
“এত করছি সকাল থেইক্কা। আবার কি?” ভ্রু সংকুচিত করে সুভাষ।
“মিহির বোনের বরকে খুঁজে বের কর।” দাঁতেদাঁত চিপে বলে এরোন।
“হেরে দিয়া কিতা হরবি?” মেঘ হা হয়ে প্রশ্ন করে।
“কি আর করবো! হলুদ লাগাবো।” বলতে বলতে মুখ শক্ত হয়ে আসে এরোনের।
সুভাষ বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে ফেলে, “অনেক দিন পর খেলা হবে তাইলে! যাচ্ছি।”
সুভাষ রাজার হালে বেরিয়ে যায়।
আগাগোড়া কেউই কিছু না বুঝে হ্যাবলার মত তাকিয়ে রয়।
এরোন ওদের তোয়াক্কা না করে এগিয়ে গিয়ে তিনটা হলুদের বাটি একটার উপর একটা নিয়ে নেয়।
“এগুলো কি করবি।” রুমা আকাশ থেকে পরে।
“বউকে লাগাবো।” গম্ভীর গলায় উওর দেয় এরোন।
সবাই ভ্রু উঁচু করে।
“কেমনে কিতা? বউ ত দুয়ার লাগাই দিছে!” বলল মেঘ।
এরোন উওর না দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।

মিহি দাঁতেদাঁত চিপে আয়নায় নিজের দিকে তাকালো। নিজের উপর নিজের অসহ্য লাগছে ওর। এতসময় লেগে গেল কিভাবে বুঝতে!
বুয়া করার নাম করে রেখে এসবই করতে চায় সে। তাছাড়া সে ত আগেই বলেছে বিয়ে করেই ছাড়বে।
এখান থেকে দ্রুত বের না হতে পারলে সব শেষ।
দরজায় কেউ কড়া নাড়াতেই মিহির চিন্তায় ছেদ পরে।
সে দরজার দিকে তাকিয়ে কোনোমতে বলে ওঠে, “নিচে যাব না আমি।”
“নিচে যেতে হবে না।” স্বাভাবিক ভাবেই বলে এরোন।
এরোনের গলা শুনে মিহি রাগে।
“কেনো এসেছেন? আমি মোটেই যাব না।”
“যেতে হবে না। দরজা খোলো।”
“জানি ত, দরজা খুললেই আমাকে জোর করে নিয়ে যাবেন।” দাঁত কিড়মিড় করে বলে মিহি।
“তাহলে আমিই খুলছি।” বলেই ডুব্লিকেট চাবি দিয়ে লক খোলে এরোন।
মিহি হতবুদ্ধি হয়ে যায়।
তবে এরোনের হাতের হলুদ বাটিগুলো দেখে চমকে ওঠে।
এরোন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ওর দিকে আগায়।
মিহি চোখ গোলগোল করে পিছায়।
ফলে এক পর্যায়ে বিছানার কাছে এসে বাধ্য হয়ে থেমে দাঁড়ায়।
কিন্তু এরোন এগুতেই থাকে।
তাই ভয়ে আরেকটু পিছাতে গিয়ে বিছানায় বসে পরে মিহি।
এরোন সামান্য দূরত্ব রেখে ওর পায়ের কাছে হাটু ভাজ করে বসে।
মিহি শুকনো ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করতে পারে না।
এরোন মুচকি হেসে একটা বাটি থেকে হলুদ নিয়ে মিহির পায়ে ছুঁয়ে দেয়। মিহি শিউরে উঠে পায়ের আঙুলগুলো মুড়িয়ে নেয় আর হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে।
এরোন ওর মুখের দিকে তাকায়। দেখে, মুখ ফিরিয়ে চোখ বুজে আছে মিহি।
আলতো হাসিসমেত বাটি হাতে উঠে দাঁড়ায় এরোন। তারপর মুখ ফিরিয়ে রাখা গালটার উপর বাটি উপুড় করে হলুদ ঢেলে দেয়।
মিহি চমকে ঘুরিয়ে রাখা মুখ একটু পিছনে সরিয়ে নেয়। আর বড়বড় চোখ মেলে মেঝের দিকে তাকায়।
গাল থেকে গলা আর গলা থেকে সারা শরীরে হলুদ গড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।
রুদ্ধশ্বাস অবস্থা হয়ে পরে ওর।
এরোন আরেকটা বাটি হাতে তুলতেই মিহি হকচকিয়ে যায়। তবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর কাধের উপর অল্পকিছুটা হলুদ ঢেলে দেয় এরোন।
না চাইতেও শিউরে ওঠে মিহি।
আর হালকা তেজী গলায় বলে ওঠে, “কি শুরু করেছেন আপনি?”
“বউয়ের গায়ে হলুদ।”
মিহি কটমট চাহনির সাথে তাকিয়ে বলে,”আমি বিয়ে করবই না আপনাকে।”
“বিয়ে করতে হবে না। আপাতত বিয়ে বিয়ে খেলো আমার সাথে।” সিক্ত কন্ঠে বলে ওঠে এরোন।
মিহি চকিত হয়, “ম..মানে?”
“ছোটো বেলায় খেলো নি? সেইরকম।” সোজাসাপ্টা উওর এরোনের।
কিছুই মাথায় ঢোকে না মিহির। সে হতবিহ্বল হয়ে যায়।
এরোন ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানার পাশে রাখা পানির জগটার দিকে তাকায়। মোটামুটি পানি ভর্তি করা সেটাতে।
এরোন দুইপা পিছিয়ে মিহিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “উঠে আসো। আর এখানে এসে দাঁড়াও।” হাতের ইশারা করে একটা জায়গা দেখিয়ে দেয় এরোন।
মিহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এরোনের দিকে তাকায়। তবুও বসেই থাকে।
“জলদি।” হালকা হুমকির মত দিতেই মিহি দাঁতেদাঁত চিপে উঠে গিয়ে দাঁড়ায়।
এরোন এগিয়ে গিয়ে জগটা হাতে নেয়।
মিহি আড় চোখে তাকিয়ে দেখে।
এরোন অন্য হাতে থাকা হলুদের বাটির সব হলুদ জগের মধ্যে ঢেলে দেয়।
মিহি আড়চোখের চাহনীতেই কপাল কুচকে ফেলে।
কি করতে চাচ্ছে সে!
এরোন মিহির দিকে তাকাতেই মিহি দৃষ্টি অন্যদিকে সরায়।
আচমকা এরোন ওর মাথার উপরে জগের পুরো পানি ঢেলে দেয়।
মিহি এবার হা হয়ে যায়। এটাও আশা করেনি সে।
“যাক বউয়ে হলুদ শেষ।” বলে স্বভাব সুলভ হাসিটা দেয় এরোন।
মিহি দাঁত কিড়মিড়িয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আর এরোনের দিকে তাকায়।
তীব্র রেগে কিছু বলে ওঠার আগেই এরোন বলে, “এবার তোমার পালা কাপকেক।”
শুনেই আঁতকে ওঠে মিহি।
“আমাকে হলুদ ছোঁয়াও জলদি।” একরকম আদেশের সুরে বলে এরোন।
মিহি কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে কাঁপা গলায় বলে, “মানে টা কি!”
এরোন মেঝে থেকে তৃতীয় বাটিটা তুলে নিতে নিতে বলে,”মানে সিম্পেল। বর বউকে হলুদ দিয়েছে এবার বউ বরকে হলুদ দেবে।”
ওর মুখের দুষ্টু হাসি দেখেই মিহির বোঝা হয়ে গেল কি চাচ্ছে সে।
মিহি আরো পিছিয়ে গেল।
এরোনও নাছোড়বান্দা। সে মিহির কাছে এগিয়ে এসে বাটিটা মেলে ধরলো। আর চোখের ইশারায় লাগিয়ে দিতে বলল।
মিহি দেয়ালে লেপ্টে এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করে। তার শক্ত মুখোভাব বলে দিচ্ছে যে, মরে গেলেও সে এই ছেলেকে হলুদ ছোঁয়াবে না।
এরোন সেটা বুঝেও যায়।
তাই মুহূর্তেই মিহির হলুদ লাগানো গালের সাথে নিজের গাল ঘষে আনে এরোন।
মিহি চমকে এরোনের দিকে তাকায়। সে হাসছে।
মিহি দাঁতেদাঁত চিপে মুখ শক্ত করে নেয়।
“তোমাকে জড়িয়ে ধরবো?”
মিহি পীলে চমকে ওঠে।
“হলুদের বাটি নেও আর আমাকে লাগাও নাহলে ওটাই করবো যেটা মাত্র বললাম।”
মিহি ভীত চোখের দৃষ্টি সরিয়েই রাখে।
এরোন এক পা এগুতেই ও লাফিয়ে উঠে বলে, “ল…লাগাচ্ছি।”
“গুড বউ।” চোখে হাসে এরোন।
মিহি জানে এই ছেলে জড়িয়েও ধরতে পারবে। বাঁধবে না।
তাই মিহি ইতস্তত করতে করতে হলুদের বাটি নেয়। আর অনিচ্ছা সত্বেও অল্প এগিয়ে যায়। নতমুখ করে কাঁপা হাতে সরাসরি এরোনের গলার কাছে হলুদের বাটি উপুড় করে দিয়ে সরে আসে।
তারপর বাটি আঁকড়ে ধরে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। হলুদ ত করিয়ে ফেলল জোর করে। এখন ত বিয়ে। সেটাও কি এভাবে…? কপালে ভাঁজ পরে যায় মিহির।
অতি সত্বর পালাতে না পারলে আর জীবনেও পালাতে পারা যাবে না।
এরোন সরু চোখে মিহির দিকে তাকায়। সে ভেবেছিলো হাত দিয়ে হলুদ ছোঁয়াবে মিহি। কিন্তু না। সেও তার দেখানো পথই অনুসরণ করলো।
তাও দিয়েছে এটাই অনেক।
“চেঞ্জ করে নেও।” মৃদু হেসে বলে এরোন বেরিয়ে গেল।
মিহির নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আজ এখান থেকে পালাতেই হবে। যে করেই হোক।

মিহি শাড়ি বদলে ফ্রেস হয়ে পুনরায় লাল শাড়িটা পরলো। সময় নিয়ে গোসলের পরেও গা থেকে কাঁচা হলুদের গন্ধ বের হচ্ছে। এটার প্রতিকার হবে কি দিয়ে ওর জানা নেই।

🌸
রাত গভীর হয়ে এসেছে প্রায়। চারিদিকের নিরবতাই তার প্রমাণ দিচ্ছে। পাখিদেরও হাক ডাক নেই।
এখন হয়তো সবাই ঘুমাচ্ছে।
মিহি আলতো পায়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। পা টিপে টিপে দরজার কাছে আসে ও। তারপরে অনেক আস্তে করে দরজাটা খুলে এদিক ওদিক উঁকি মেরে দেখে নেয়।
রাস্তা পুরো ফাঁকাই মনে হচ্ছে।
গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামে মিহি। নামতে নামতে এদিক ওদিক তাকিয়ে পরখ করে দেখে নেয় যে সত্যিই কেউ দেখছে কিনা। না, দেখছে না।
গোপনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চোরের মত সদর দরজা কাছে যায় সে।
মুসিবত ত এখন। দরজার হুকগুলো খুলতে গেলে যদি আওয়াজ হয়! চিন্তায় পরে যায় মিহি।
কিন্তু চেষ্টা ত করতে হবে।
মিহি সময় নিয়ে সবগুলো হুক খুলে ফেলে। বিনা ঝামেলায় খুলতে পারার জন্য মুখে জয়ের হাসি চলে আসে ওর।
দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসে ও। কিন্তু বের হয়েই মুখ মলিন হয়ে যায়। কারণ এই অন্ধকারে কোথায় যাবে ও! তারচেয়ে বড় কথা টাকাই ত নেই। এটা মাথায়ই ছিল না ওর।
টাকা ছাড়া, তার উপর এত রাতে! মিহি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল।
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো ফিরে যাবে কিনা!
অন্যদিকে খারাপও লাগছে ওর। কারণ আজ পালানোর রাস্তা পুরো ফাঁকা। তাও মিহি নিরূপায়।
মিহি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। বিরক্তিতে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। আর চুলগুলোর মধ্যে হাত ডুবিয়ে পিছনে ঠেলে দিলো মিহি। ফিরেই যেতে হবে। উপায় নেই।

আচমকা কেউ পিছন থেকে ওর এক হাত টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
মিহি চমকে উঠলো।
“এত রাতে এভাবে, এখানে কি করছ?” দাতেদাত চিপে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল এরোন।
মিহির বুক ভয়ে ছ্যাত করে উঠলো।

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here