#সুখের_নেশায় পর্ব ৩২
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
বর্ষার মৌসুমে এবার ঝড়,বৃষ্টি, রোদ সবই ঠিক পরিমাণে প্রকৃতিতে নিজের আগমন ঘটিয়েছিল। আজ প্রকৃতিকে স্নিগ্ধ, সতেজ রাখা মাস টার শেষ দিন। যদিও উল্টো নিয়মে তপ্ততার দেখা মিলেছিল প্রচন্ড পরিমাণে তবে বর্ষণের কমতি হয় নি। বরণ রৌদ্দুর তো মাঝে মাঝে ধরণীতে বেড়াতে এসেছিল। পুরো মাস জুড়ে কেবল রাজত্ব করে বেড়িয়েছে বৃষ্টি। চৈত্রিকা ফজরের নামাজ পড়ে জানালার ধারে এলো৷ সাফারাত এর কাছ থেকে ফিরে এসে বাকি রাত টুকু পাড় হয়েছে এই জানালার কাছে বসে। কেন যেন তন্দ্রা আর ধরা দেয় নি তার চক্ষে। অকারণেই আজ বাবার কথা মনে পড়ছে বড্ড,ভীষণ। মন চাইছে সিলেট ছুটে যেতে। বাবা কে না দেখুক, মনের শান্তির জন্য হলেও একটা বার কবরটা দেখে আসতে।
‘ আমি এতো অভাগিনী কেন হলাম বাবা?কেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগেই আমার মাথায় আদর করে হাত বুলালে?তোমার অভিমান, জেদ,রাগের পাহাড় টা কি আগে ধ্বসে পড়তে পারে নি বাবা?’
মিনমিন স্বরে অভিযোগ মিশ্রিত বাক্যগুলো উচ্চারণ করতে গিয়ে চৈত্রিকার গলা ধরে এলো। নেত্রদ্বয় জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। চৈত্রিকা আখিঁপল্লব বুঁজল। অশ্রু কণাদের গড়িয়ে যেতে দিল বিনা বাঁধায়,অতি সন্তর্পণে। আগামীকাল এই বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে। মা ও বোন কে বিভিন্ন ভেজালের মাঝে রেখে যেতে পারবে না সে। জানালার পাশ থেকে সরে এসে আলমিরা খুলে কিছু জমানো টাকা ছিল প্রায় পাঁচ হাজারের মতোন। সেগুলো বের করে হাতে নেয়। মায়ের ঘরে উঁকি দিতেই দেখে ফাহমিদা নামাজ পড়ছেন। চৈত্রিকা দরজার কাছ থেকে দাঁড়িয়ে রুমের চারদিকে চোখ বুলায়। বাবা বেঁচে থাকতে ভয়ে এই রুমে আসার সাহস অব্দি হতো না ওর। অথচ আজ রুমে বাবা নেই। কতটা অগোছালো সবকিছু। চৈত্রিকা মনে মনে ঠিক করে নেয় রুমটা গুছিয়ে দিবে,তার আগে বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করা জরুরি। এক মাসের ভাড়া চুকিয়ে দিবে। নাহলে যাওয়ার পর যদি মিম ও ফাহমিদাকে বাড়িওয়ালা হেনস্তা করে তা কোনো ক্রমে সইতে পারবে না চৈত্রিকা।
সিড়ি ডিঙ্গিয়ে উপরের তালায় এলো। গত কয়েক দিন পূর্বে বাড়িওয়ালারা এই ফ্ল্যাটে শিফট হয়েছেন। হয়ত এখন থেকে সবসময় এখানেই থাকবেন। চৈত্রিকা বার দুয়েক কলিং বেল বাজালো। পরমুহূর্তে মনে হলো এতো সকালে হয়ত সকলে নিদ্রায় বিভোর। ঠিক হয় নি এখন আসা টা। চলে যেতে নিলেই দরজা মেলার আওয়াজ কর্ণপাত হওয়া মাত্র ঘুরে দাঁড়াল। সামনে তজবি হাতে উপস্থিত মহিলাটার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আংকেল আছেন বাসায়?আসলে আমি অবুঝের মতো এতো সকালে চলে এলাম। তার জন্য দুঃখিত আন্টি। ‘
মহিলা একগাল হেসে বললেন,
‘ সমস্যা নেই। এসো। ‘
চৈত্রিকা পায়ের সেন্ডেল জোড়া খুলে রাখে একপাশে। উন্মুক্ত পায়ে সুস্থির ভাবে হেঁটে ভিতরে আসে। মহিলা টা আবারও একগাল হেসে বললেন,
‘ শুনলাম কাল নাকি তোমার বিয়ে?’
চৈত্রিকার কেন যেন লজ্জা অনুভব হলো। চোখের পলক ঝুঁকিয়ে বললো,
‘ বিয়ে হয়ে গিয়েছে আন্টি। কাল ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান। ‘
‘ হুম। শুনেছি তোমার মায়ের কাছে। তুমি বসো। আমি তোমার আংকেল কে ডেকে আনছি। ‘
পাশের একটা বেতের চেয়ারে বসতেই বাড়িওয়ালা চোখে বড় একটা চশমা ঝুলিয়ে রুম হতে বেরিয়ে এলেন। চৈত্রিকার কাছে এই লোক কে ভালো লাগে না। উনার ওয়াইফের ব্যাবহার যতটা মিষ্টি উনার ব্যবহার ঠিক তার উল্টো। উগ্র মেজাজের ও কর্কশ।
‘ আসসালামু আলাইকুম আংকেল। ‘
বাড়িওয়ালা সালামের জবাব দিয়ে বলে উঠলেন,
‘ বসো। ‘
‘ বসবো না। একটা অনুরোধ ছিল আংকেল। প্লিজ ফিরিয়ে দিবেন না। আমাদের তো তিন মাসের ভাড়া জমে আছে। আপাতত এক মাসের রাখুন। বাকি দু মাসের আমি খুব জলদি দিয়ে দিব। আমার খুব ভালো একটা জব হয়েছে। তাড়াতাড়ি দিয়ে দিব। ‘
‘ টাকা টা তুমি রাখো। আমি তিন মাসের ভাড়া নিব না। ‘
হতবিহ্বল হয়ে পড়ে চৈত্রিকা। ওর মনে হলো ভুল শুনেছে। হকচকানো স্বরে প্রশ্ন করলো,
‘ কি বলছেন আংকেল?’
‘ তিন মাস তোমাদের উপর দিয়ে অনেক ঝড় ঝাপটা গিয়েছে মা। আমাকে ভাড়া দিতে হবে না। বসো। চা খেয়ে যেও৷ ‘
কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন ড্রইং রুম ছেড়ে। চৈত্রিকার মনে হচ্ছে এটা কোনো ভ্রম, যা হতে বেড়িয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। যেই লোক ওর বাবা অসুস্থ থাকা কালীন ভাড়ার জন্য খুব কড়া কথা শুনিয়েছেন তিনিই গত কয়েকদিন ধরে ভাড়া নিতে অস্বীকার করছেন। সবকিছু কেমন অদ্ভুত ঠেকছে। এক লহমা,এক মুহূর্তও দেরি না করে চৈত্রিকা বাসায় চলে এলো। ঘরে ঢুকতেই শুনতে পায় ফাহমিদার চিন্তিত স্বর।
‘ কোথায় গিয়েছিলি?’
‘ ছাদে গিয়েছিলাম মা। তুমি গিয়ে রেস্ট নাও। আজ নাস্তা আমি বানাব। ‘
ইচ্ছে করেই ভাড়া দিতে যাওয়ার বিষয়টা চেপে গেল ও। পরে দেখা যাবে বাড়িওয়ালার হুটহাট পরিবর্তনে ওর মা ডিপ্রেশনে পড়ে গিয়েছে।
.
.
কোমরে ওড়না বেঁধে চৈত্রিকা আহমেদ সাহেবের রুমটা গোছাতে শুরু করে। তার কতকালের ইচ্ছে ছিল বাবার সবকিছু নিজ হাতে গুছিয়ে দিবে তা আর হলো না। এখনও মনে পড়ে বছর খানেক আগে টিউশনের টাকা জমিয়ে বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনেছিল। কিন্তু আহমেদ সাহেব নেন নি তা। উল্টো শপিং ব্যাগ টা ছুঁড়ে ফেলেছিলেন ফ্লোরে। চৈত্রিকা কাঁদতে ভুলে গিয়েছিল। ভিতরে ভিতরে বুক টা ফেটে যাচ্ছিল ওর। ফাহমিদা ওকে বুকে জড়িয়ে বলেছিল একদিন তোর বাবা অনেক ভালেবাসবে চৈত্র। মিলিয়ে নিস তুই। কই মিলল না তো মায়ের কথাটা!একদমই মিলে নি। মা হয়ত সান্ত্বনা দেবার জন্য বলেছিল।
চৈত্রিকার বক্ষজুড়ে বিষের ন্যায় বিষাক্ত যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ল। কন্ঠনালি টাও কেমন কাটা কাটা দিয়ে উঠছে। ব্যাথা করছে বেশ। চক্ষু বুঁজে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে লেগে পড়ে আবারও কাজে। বিছানা ঝেড়ে বাবার টেবিলের সামনে আসে। আহমেদ সাহেব প্রচুর বই পড়ুয়া লোক ছিলেন। জীবনের অবসর সময়গুলো তিনি ব্যয় করেছেন বই ও পেপার পড়ে। এখনও একটা বই খুলে উল্টে রাখা হয়েছে। হয়ত শেষ বেলায় এই বই টা-ই পড়ছিলেন উনি। তিনি মারা যাবার পর এই রুমের একটা আসবাবপত্রও নাড়েন নি কেউ। ফাহমিদা রাতে মিমের সাথেই থাকে ওর রুমে। চৈত্রিকা বই টা ঠিক করে রাখতে যাবে তখনই একটা কাগজ বই থেকে ছিটকে পড়ে টেবিলে। অতিশয় বিস্ময়ে থমকে যায় চৈত্রিকা। বই টা রেখে টেবিল হতে ভাজ করা কাগজ টা হাতে তুলে নেয়। ভাজ খুলবে কি খুলবে না দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে কিয়ৎপরিমাণ সময়,সেকেন্ড। অতঃপর মেলে ধরেই কাগজটা। বরাবরই সুন্দর ছিল আহমেদ সাহেবের লিখা।
কাগজটা মেলে ধরতেই বড়সড় ঝটকা খায়। কয়েক পা পিছিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
” আমি কি আদৌ বাবা হওয়ার যোগ্য?আমি তোর সকল কষ্টের,দুঃখের কারণ চৈত্রিকা। তুই যখন জন্ম নিয়েছিলি পরিবারের সবচেয়ে খুশি ব্যক্তি টা আমি ছিলাম। আমার সেদিন মনে হয়েছিল আমি এমন এক জিনিস পেয়েছি যা পৃথিবীর সকল দামী দামী উপহারকে হার মানায়। পুতুলের মতো গড়ন ছিল তোর। সাদা ধবধবে ছোট ছোট হাত, পা। তোর মা যখন তোকে আমার কোলে দিতে চেয়েছিল ভয় পেতাম বাবার শক্তপোক্ত হাতে তোর নরম,কোমল দেহ টা আঘাত পাবে না তো?সেই আমি তোর জীবনটা দুর্বিষহ করে ফেলেছি পুত্র মোহে আচ্ছন্ন হয়ে। ছেলে হবার পর সবাই বলতো মেহুল আমার বুড়ো বয়সের লাঠি, শক্তি। মেয়েরা তো বিয়ে দিলে অন্যের ঘর সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। একটা সময় পাড়া প্রতিবেশীর এসকল কথায় আমি পাল্টে যাই। তোর চেয়েও বেশি ভালোবাসতে শুরু করি মেহুলকে। তুই যখন চিল্লাচিল্লি করতি ছোট বেলায় অবুঝ মনে আমি মেহুলকে কেন বেশি আদর করি তখন আমি হাসতাম। মাঝে মাঝে দেখতাম তুই মেহুল কে কাঁদাস। মেহুলের মৃত্যুর পর আমার মনে হতো তুই হিংসার চোটে মেহুলকে সেদিন ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছিস। হতে পারে অবুঝ মনে হিংসা পুষে রেখে ওকে ইচ্ছে করেই ছাদে নিয়ে গিয়েছিলি যেন ওর ক্ষতি হয়ে যায় এটাই এতো বছর যাবত ধারণা করে রেখেছিলাম আমি। তোকে দেখলে মেহুলের মৃত্যুর কথা মনে পড়ে যেত। আমার রাগ হতো। আমি জানি আমার এমন ভাবনা টাই ছিল ভুল। তুই ছোট বয়সেও অবুঝ ছিলি না কিন্তু তোর বাবা তোকে ভুল বুঝে সারাজীবন কষ্ট দিয়ে গিয়েছে। জানি আমি ক্ষমার যোগ্য না। আমার এই অসুস্থ সময়ে তুই রাতের আঁধারে ভয়ে চুপিচুপি ওষুধের প্যাকেট রেখে যাস অথচ হাত বাড়িয়ে আমি তোকে কাছে ডাকতে পারি না। কারণ আমি প্রকৃত দোষী। আমি বাবা হয়ে উঠতে পারি নি। বাবা রা কি সন্তানদের মধ্যে পার্থক্য করে?কিন্তু আমি করেছি। ছেলেকে বুড়ো বয়সের লাঠি ভেবে মেয়েকে অবহেলা করার কারণেই হয়ত আল্লাহ আমায় চিরতরে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছেন। আমার এই সময়গুলোতে মন গলে গেলেও, নিজের ভুল বুঝতে পারলেও আমার যে তোকে কাছে ডাকার আর মুখ নেই। আজ বাকহারা আমি মা। তোর চোখে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা নয় বরং সবথেকে খারাপ,জঘন্য পিতা। এই কাগজের লিখাগুলোও তোকে দেখানোর সাহস আমার নেই। এটা কখনও তুই পাবি কিনা তাও জানিনা। তোর ক্ষমার অযোগ্য বাবা টাকে পারলে ক্ষমা করে দিস। ”
যার প্রতি কোনোদিন রাগ,ক্ষোভ রাখে নি তাকে কি ক্ষমা করবে?চৈত্রিকার তো বাবার প্রতি কোনো কষ্ট নেই। শুধু আক্ষেপ রয়ে গেছে ভালোবাসা পাবার। বাবা ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই ওর জন্য অনেক বেশি পাওয়া। তবুও চৈত্রিকার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। কি করে পারলেন আহমেদ সাহেব এমন ভেদাভেদ করতে?সত্যিই কি ছেলেরা বাবা মায়ের বুড়ো বয়সের লাঠি হয়? মেরুদন্ড হয়?মেয়েরা হয় না?চিঠি টা দেখলে মা ও মিম কষ্ট পাবে তাই ওড়নার আড়ালে লুকিয়ে নিজের রুমে চলে আসে চৈত্রিকা। বাবা নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষণিকের নিমিত্তে হলেও তো ওর জন্য মায়া দেখিয়েছে। এটাই বা কম কিসের? চৈত্রিকা বিড়বিড় করে বলে উঠল– ‘ তোমার প্রতি কোনো অভিমান নেই বাবা। খুব ভালোবাসি তোমায়। বড্ড বেশি। ‘
____________________
মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে চৈত্রিকা প্রায় এক ঘন্টার উপর হবে। সাফারাতের সাথে কথা হয়েছিল একবার দুপুর বেলায়। জ্বর কমেছে কিনা জিজ্ঞেস করাতে জানালো নিজে চেক করে নিতে। ভারী অবাকতায় জড়িয়ে গেল চৈত্রিকা। ও কি করে চেক করবে?দেখা তো কাল হবে। এখন ফোন দেওয়াতে প্রিয়ন্তী রিসিভ করে এবং জানায় সাফারাত রুমে নেই৷ তাই চৈত্রিকা মেবাইল হাতে নিয়েই বসে আছে কখন আবার কল আসে সেই আশায়। সাফারাত এর অনুপস্থিতিতে আজকাল হৃদয় ভীষণ শূন্য শূন্য অনুভব করে। মন ছুটে যেতে চায় মোহগ্রস্ত হয়ে বারংবার। এটাই কি প্রণয়ের, প্রেমের শক্তি?
অকস্মাৎ রুমে কারো পায়ের শব্দে চৈত্রিকা নড়েচড়ে উঠল। ঘাড় একটুখানি বাক ফিরাতেই দেখে মিমের পড়নে একটা হলুদ লেহেঙ্গা। মুখশ্রীতে হালকা পাতলা মেকআপ এর আস্তরণ। হতভম্ব, বিস্মিত হয় চৈত্রিকা। উত্তেজিত সুরে প্রশ্ন করে,
‘ এভাবে সেজেছিস কেন?কোথাও যাচ্ছিস?’
‘ কোথায় যাবো?নিজের বোনের বিয়ে কাল আর আমি আজকে অন্য কোথাও যাবো?তোমার মেহেদি অনুষ্ঠান ও হলুদ উপলক্ষে সাজলাম। একটা মাত্র বোন বলে কথা। ‘
‘ হলুদ?এসব কিছুই হবে না। আর এতো দামী ড্রেস কে কিনে দিল?আবার বিকাল হতে খেয়াল করছি তুই বারবার ছাদে আসা যাওয়া করছিস। ব্যাপার কি?
চৈত্রিকা ভ্রুঁ যুগল কুঁচকালো। সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মিমের দিক। মিম কথা চেপে গিয়ে বললো,
‘ ভাইয়া দিয়েছে। এবার উঠো। তোমাকে রেডি করাতে হবে। ‘
‘ কোন ভাইয়া?সাফারাত? ‘
‘ হু। ‘
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে মিম সবুজ রঙের একটা লেহেঙ্গা শপিং ব্যাগ থেকে বের করে চৈত্রিকাকে পড়ার জন্য তাড়া দেয়। চৈত্রিকা একের অপর এক প্রশ্ন করেও উত্তর না পেয়ে মিমের জোরাজোরি তে লেহেঙ্গা টা পড়তে বাধ্য হয়। হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে দেয় মিম। লাল কালার জারবেরা ফুলের টিকলি,দুল,হার পড়িয়ে দিল চৈত্রিকাকে। এখানেও জারবেরা ফুল?বুক টা ধ্বক করে উঠে চৈত্রিকার। কিছুই বুঝতে পারছে না। হালকা করে সাজিয়ে মিম হাসি মুখে বললো,
‘ এখন অনুষ্ঠানের জন্য রেডি তুমি। চলো আপু। আর এসব তোমার হাসবেন্ড পাঠিয়েছে। ‘
চৈত্রিকার মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে,
‘ এই জারবেরা ফুল গুলোও?’
সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দরজা অব্দি আসে দু বোন। চৈত্রিকার মিহি স্বরের প্রশ্নটা হয়ত মিমের কর্ণগোচর হয় নি। পিছন থেকে দু চোখে হাত রেখে বললো,
‘ পা বাড়াও আপু। ‘
‘ কি করছিস?’
‘ উফ!হাঁটো তো। ‘
চৈত্রিকা হাঁটে ধীর গতিতে। একটা সময় থেমে যায় মিমের কথায়। মিম চক্ষুদ্বয় হতে হাত সরাতেই চৈত্রিকা ঝাপসা দৃষ্টিতে চারপাশে অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে তাকায়। নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে পড়ে। নিজেকে আবিষ্কার করে ছাঁদের টিমটিমে আলোয় একদম মাঝের স্থানে পাশে দেখতে পায় সিনথিয়া,মিহিতা,মিম,দিহান,আয়ান,প্রিয়ন্তীর হাসি মাখা মুখ গুলো। জেরিনও দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে। তবে মুখে হাসির অভাব। সবাই একটুখানি দূর হতে গোলাপের পাপড়ি ছিটাতে শুরু করে চৈত্রিকার উপর। খুশিতে কেঁদে দেওয়ার উপক্রম ওর। পুরো ছাদ ফেয়ারি লাইট দিয়ে সাজানো। একপাশে ফুল দিয়ে ভরপুর ছোট খাটো একটা স্টেজ। এক মুহুর্তের জন্যও কল্পনা করে নি আজ এমনভাবে সারপ্রাইজ পাবে ও। সিনথিয়া দু’ হাত ধরে বলে উঠল,
‘ অবাক হওয়ার আরো কারণ আছে?এখনই সব অবাকতা দেখিয়ে ফেলবি?মেহেদি আর্টিস্ট চলে এসেছে। চল। ‘
চৈত্রিকাকে স্টেজে বসাতেই দু’টো মেয়ে দুই দিকে বসে মেহেদী দেওয়ার জন্য। চিকন হাত দুটো মেলে ধরে ও। এতো আয়োজন কার করা চৈত্রিকার বুঝতে বাকি নেই। কিন্তু সবাই এলো সাফারাত কি আসে নি?লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছে না চৈত্রিকা। একজন মেহেদী আর্টিস্ট জিজ্ঞেস করে ,
‘ ম্যাম আপনার বরের নাম?’
চৈত্রিকা বলতে নিলে সম্মুখ হতে ভেসে আসে,
‘ সাফারাত। ‘
#চলবে,,,!
(বড় পর্ব দিয়েছি৷ ভুল -ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রোজা রেখে ক্লাস,জার্নি এসব মিলিয়ে ভীষণ ক্লান্ত থাকি। রেগুলার গল্প লিখার মতো শক্তি মন মানসিকতা থাকে না৷ তবুও যেভাবেই হোক গ্যাপ বিহীন গল্পটা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাই। সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ। নয়ত লিখতে ভালো লাগে না।)