#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১৬❤
.
.
🍁
.
বিকেল ৫ টা বেজে ২৫ মিনিট। বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছি। মাথা ভীষণ ব্যাথা করছে। তবে তার থেকেও বেশি মুড সুয়িং চলছে। আর আমার এমনই একটা অভ্যেস যে মুড সুয়িং হলে কিচ্ছু ভালো লাগে না। শুধু শুধু ভীষণ কান্না পায়। ইচ্ছে তো করে চোখের জলে সব ভাসিয়ে দেই। তবে মুড সুয়িং-এর কারণ না জানায় মাঝে মাঝে নিজের উপর ভীষণ রাগ লাগে। ইচ্ছে করে মাথার চুল টেনেটুনে ছিঁড়ে ফেলি। এমুহূর্তেও আমার তার থেকে কিছু কম মনে হচ্ছে না। তাই আর দেড়ি করলাম না। শাওয়ার নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।
.
৩০ মিনিট পর________
.
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই উনাকে চোখে পড়ল। উনি সোফায় বসে ল্যাপ্টপে কিছু একটা করছেন। পড়নে নীল শার্ট, কালো জিন্স, স্লিকি চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে। নিচের ঠোঁট কামরে ধরে কিছু একটা মেলাচ্ছে হয়তো। ফর্সা শরীরে নীল আর কালো রঙটা বেশ মানিয়েছে। দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। মাশাল্লাহ! হঠাৎ উনার ডাকে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম আমি। উনি ল্যাপ্টপে চোখ রেখে বললেন…..
.
—— কিরে এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? আর এসময় গোসল করেছিস কেন?
.
উনার কথায় আমি কিছুটা অবাক হলাম। না দেখে কি করে বুঝলেন আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি? আবার গোসল করছি সেটাও বলল? আল্লাহই ভালো যাসে খাটাশটার কযটা চোখ?
.
আমার কোনো জবাব না পেয়ে উনি ল্যাপ্টপটা টেবিলে রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন…..
.
—– এই যে ম্যাডাম! কিছু জিজ্ঞেসা করেছি?
.
আমি মাথা নেড়ে জবাব দিলাম। যার অর্থ “হ্যাঁ”। আমাকে মাথা নাড়তে দেখে উনি আবার বললেন…..
.
—- কিরে বোবার মতো মাথা ঝাঁকাচ্ছিস কেন?
.
এবার আমি মুখ খুললাম। কিছুটা রেগে বললাম…..
.
—- আপনি আমাকে বোবা বললেন ?
.
—- আমি তোকে বোবা বলব কেন ? আমি তো তোকে বোবার মতো বলেছি ।
.
এইটুকু বলেই রুম কাপিয়ে হেঁসে উঠলেন উনি। উনার হাসি দেখে রাগে আমার সারা শরীর জ্বলে গেল। ইচ্ছা তো করছে এই ব্যাটা বজ্জাতটাকে উষ্টা মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিই । ব্যাটা খচ্চর। আস্ত খাটাশ একটা। আমার মতো একটা মাসুম বাচ্চার পিছনে এমনে লাগোস ক্যান ? দেখে নিস তোর ভালো হইবো না। বউ পাইতি না হুহ… ! হাসতে হাসতে শহীদ হো খাটাশ আমার কি? হুহ…. ।
.
আমাকে রাগে ফুঁসতে দেখে উনি আবার বললেন….
.
—- তা বোবার মতো ম্যাডাম! এসময় গোসল করলেন কেন? কাল এক্সাম যদি শরীর খারাপ করে? পাগল কুকুরে কামড়েছে নাকি ?
.
উনার কথা শুনে মেজাজ আমার ফর্টিনাইন। ইচ্ছে করছে এক ধাক্কা দিয়ে সোফা থেকে ফেলে দিই। অসভ্য লোক কোথাকার! তবে এবার আর চুপ রইলাম না। রাগটাকে উনার উপর ঢেলে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম…..
.
—- এই আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো ?
.
—- কই কিছুই না।
.
—- তাহলে আমার পেছনে পড়েছেন কেন ?
.
—– কই আমি তোর পেছনে পড়লাম? আমি তো তোর সামনে দাঁড়ানো । তাহলে পেছনে গেলাম কখন ?
—- আপনাকে তো আমি !
.
—- ছিঃ ছিঃ এই বয়সেই এসব কি ভাবিস তুই ? এখনো পিচ্চি অথচ এতো কিছু ভাবিস ! মাই গড ! না জানি বড় হলে কি করবি?
.
—- এই আমি কি করছি ? এখানে ছি বলার কি আছে ?
.
—- না না বোন ভালো আমার মতো মাসুম বাচ্চা ছেলের দিকে এসব নজরে তাকাস না। আমি একটা বাচ্চা । আমাকে যেতে দে….
এবার তো আমার ইচ্ছে করছে অসভ্যটারে নিয়া বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিতে চুবাই । ফাজিল একটা! কি সাঙ্ঘাতিক লুচু ভাবা যায়? আমি বলছি কি আর সে বলে কি? এই মুহূর্তে আমার দুটো শিং থাকলে গুতো দিয়ে তোর পেট ফুটো করে তোর অশ্লীল কথাবার্তা বের করতাম অসভ্য একটা! হুহ….
.
—- আপনি দাঁড়ান । আজকে আপনার একদিন কি আমার একিদন!
.
কথাটা বলে বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে উনার পেছনে ছুঁটতে লাগলাম। প্লাজুতে পা বেঁধে পড়তে নিলে উনি ধরে আর সাথে সাথে উনাকে নিয়ে বিছানায় পড়ি। এর আগে কখনোই আমি উনাকে এতো কাছ থেকে দেখিনি। আজই প্রথম। আমি সব রাগ ভুলে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি উনারে সেই উজ্জ্বল চোখ, সজীব ঠোঁট ও স্নিগ্ধ চেহারাটাতে। ইশশ! কত্তো সুন্দর উনি ! উনি তো ছেলে তাহলে এত সুন্দর কেন ? ছেলেদের সুন্দর,,কিউট হতে নেই । সৌন্দর্য শুধু আর শুধুই মেয়েদের জন্য। আমার ভাবনায় এক বালতি জল না না সরি এক বালতি কম হয়ে যাবে এক টাঙ্কি জল ঢেলে উন বললেন…..
.
—– কি ম্যাডাম! এভাবেই থাকবেন নাকি উঠবেন? ওঠ বলছি ডাফার! ( ধমক দিয়ে) আর এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন? দেখে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবি।
.
এতো সুন্দর মুডটা আবার বিগড়ে দিল খাটাশটা। আচ্ছা! উনি কি ঝগড়া ছাড়া কিছুই পারেন না নাকি? কতো সুন্দর করে দেখছিলাম উনাকে দিলো ১২ টা বাজিয়ে। সেদিনও অসভ্য লোকটা এরকম করছে । তোরে তো আমি ৭ তলা থেকা ধাক্কা দিয়া ফালামু বজ্জাত পোলা। হুহ…! মনে মনে হাজারটা গালি দিলেও মুখে কিছু বললাম না।
.
বেশকিছুক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে উনি বলে উঠলেন….
.
—- মাথা বেশি ব্যথা করছে? টিপে দিব?
.
উনার কথা শুনে যেন আমি আকাশ থেকে পড়লাম। অবাকের চরম পর্যায় গিয়ে বললাম…..
.
—– আপনি ঠিক আছেন তো? জ্বর টর হয়নি তো?
.
উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন…..
.
—- কেন? আমি তো ঠিকই আছি।
.
—- আচ্ছা! আপনি কি ভুত প্রেতের আস্তানায় গিয়েছেন?
.
—- কেন ?
.
—- না মানে আপনি আমার মাথা টিপে দেওয়ার কথা বলছেন তাই মনে হলো আপনি পাগল হয়ে গেছেন।
.
—- আলো !
.
—- উনার রাগী কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। নিশ্চিত এমুহূর্তে আমাকে হালুযা বানাবে । এখন কি হবে? একটা শুকনো ঢোক গিলে জোরপূর্বক হেসে বললাম….
.
—- আরে না। আমি তো মজা করে বলছি ।
.
—- চুপচাপ শুয়ে পড় মাথা টিপে দিচ্ছি। মাথা ব্যাথা কমলেই পড়তে বসবি। কাল এক্সাম।
.
আমি আর কিছুই বললাম না। বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়লাম। আমি কখনোই উনার সাথে পেড়ে উঠি না। এবারও যে উঠব না তা আমার জানা। তাই তো শুধু শুধু এনার্জি ওয়েস্ট করার মানেই হয় না। আর তাছাড়া এইমুহূর্তে আমার এনার্জি নেই। মাথা খুবই ব্যথা করছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। উনি মাথা টিপে দিচ্ছেন। ইশশশ! কি শান্তি! কতোজন স্ত্রীর সৌভাগ্য হয় স্বামীর সেবা পাওয়ার? হোক না সে আমাকে ভালোবাসে না। তাতে কি? আমার জন্য ভাবে সে,, কেয়ার করে এটাই অনেক বড় পাওয়া। অনেকে তো এইটুকুও পায় না। সেই হিসেবে আমি খুবই ভাগ্যবতী। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম।
#চলবে…..…
[ রি-চেইক করা হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ❤]