#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৩২ ❤
.
.
🍂
.
কেটে গেল আরও ২টি দিন! কালই রিয়া আপুর গায়ে হলুদ! আমরা আজ বিকেলেই রিয়া আপুদের বাসায় এসেছি। যেহেতু মামুদের বাড়িটা বড়ই আছে। সেহেতু,শুধু শুধু কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েটা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে নি। আর তাছাড়া মামানির কথা বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে বাড়িতেই হবে। কাল সকাল থেকে পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে। অথচ এখনও কমপ্লিট হয়নি! সবার মতে আমি ছোট মানুষ তাই আমাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমি একবার এর কাছে আবার ওর কাছে যাচ্ছি তো আবার কখনো রিয়া আপুর সাথে গল্প করছি। রিয়া আপুর সাথে তেমন ফ্রিও না। কি গল্প করব? সবাই সবার কাজে ব্যস্ত! ভাবীটাও ব্যস্ত! ভাল্লাগে না।
.
বেশকিছুক্ষণ যাবৎ রিয়া আপুর কাছে বসে থেকে আর ভালো লাগছিল না। তাই রিয়া আপুকে বলে তার থেকে বিদায় নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
.
রুমে এসে ফুল স্প্রীডে ফ্যানটা চালিয়ে দিয়ে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে চুলের খোঁপাটা খুলে দিয়ে দক্ষিণের জানালার কার্ণিশ ঘেঁষে হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালাম। আকাশটা কেমন যেন মেঘলা লাগছে। আবহাওয়াটা খুবই সুন্দর সাথে রোমান্টিকও! ছাঁদে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিজের বাসায় হলে সাহসটা দেখাতাম। এখানে নেই সাহসটা দেখানো অসম্ভব! দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখটা বন্ধ করে দেয়ালের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে এমন সুন্দর মনোরম পরিবেশটা উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে সেই বিশেষ জনের কথাই ভাবছি! খুব ইচ্ছে আমার এরকম একটা আবহাওয়ায় উনার হাতে হাত রেখে কোনো এক গন্তব্যহীন নির্জন পথে পাড়ি জমানো।
.
হঠাৎ কারো স্পর্শে চমকে গিয়ে চোখ খুলে ফেললাম। সাথে স্বপ্নরাও ডানা ঝাপটে পালালো। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এতো সুন্দর স্বপ্নটা কি না ভাঙালে পারত না নাকি? আমার ভাবনার মাঝেই আমার পেছনের ব্যক্তি আমাকে পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরল। তার স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। সারা শরীর জুড়ে বয়ে গেলে অদ্ভুত এক শিহরণ! আমি নড়াচড়া করার শক্তিটাই হারিয়ে ফেলেছি। ধীরে ধীরে আমার শ্বাস ভারী থেকেও ভারী হচ্ছে। আমাকে জড়িয়ে ধরা ব্যক্তির নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। তার নিশ্বাস আমার কাঁধে এসে পড়ছে। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে তার চুল খামচে ধরলাম। কাঁপা গলায় বললাম…….
.
—- দে..দে..দেখুন! আ..আ..আমার অস্থির লাগছে খুব ছাড়ুন!
.
ওপর পাশের ব্যক্তি জবাবে কিছুই বললেন না! বরং আরও শক্ত করে আকরে ধরলেন। মনে হয় ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাব। কিন্তু উনার এই স্পর্শে যে আমার জান বেড়িয়ে আসার উপক্রম সেটা উনি বুঝতে পারছেন না? আমি দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছি না। কোনোমতে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সড়ে আসতে নিলে উনি আমার বা হাতটা ধরে ফেলেন। সাথে সাথে হেঁচকা টানে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে নেন। এক হাত কোমড়ে রেখে চেপে ধরেন। ধীরে ধীরে আমার শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে এগিয়ে আসেন। আমি খিঁচে গিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলি!
.
হঠাৎ করে রিয়া আপুর ডাকে উনি আমাকে ছেড়ে একহাত দূরে গিয়ে দাঁড়ান। উনি চারপাশে এটা ওটা দেখছেন। এমন ভাব করছেন যেন এই ঘরে উনি ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি নেই! রিয়া আপু ভ্যাবলাকান্তর মতো একবার উনার দিকে তো একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।হয়তো বোচারি বুঝতে পারছেনা ঠিক কি হলো!
.
ছিঃ ছিঃ ছিঃ! কেমন একটা পরিস্থিতি ভাবা যায়? কি লজ্জা কি লজ্জা! ছিঃ! না জানি রিয়া আপু কি না কি ভাবছেন! উফহ্ সালা খচ্চর তোর যখন এতোই রোমাঞ্চ করার ইচ্ছা জাগছে দরজাটা লাগাইতে পারলিনা? রোমাঞ্চ করবি তুই আর দরজা কি তোর দাদা আইসা লাগাইবো ব্যাটা অসভ্যের পূর্ব পুরুষ! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! তোর লাইগা তোর বইন আজকে আমারে কি ভাবতেছে কে জানে! তোরে তো বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিতে চুবামু সালা সাদা বিলাই, খাটাশ,শাঁকচুন্নির জামাই! এহন এমন ভান করছে যেন মাছ ভেজে খেতে পারেনা। সাদা বিলাই একটা! আমার ভাবনার মাঝেই রিয়া আপু বলে উঠলেন……
.
—- সরি! সরি! সরি ভাইয়া! আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে এমন সময় চলে আসব। আই এম রিয়ালি সরি ভাইয়া!
.
—- আরে না না! সরির কিচ্ছু নেই! তুই কোনো রং টাইমে আসিস নি। কি বলবি বল। আমি বরং যাই!
.
—- না ভাইয়া! তুমি থাকো তোমার বউর কাছে আমি বরং যাই। আসলে ফুপিয়া আলোকে দেখতে না পেয়ে আমাকে বলেছে দেখে আসতে কোথায় আছে! আর কেউ না থাকলে ওকে সঙ্গ দিতে। ও তো আবার এখানে ফ্রি না তাই! এখন তো এখানে এসে অন্য কিছু দেখলাম। ওকে সঙ্গ দেওয়ার তো মানুষের অভাব নেই!
.
রিয়া আপু এক নিশ্বাসে সবটুকু কথা বলে দাঁত কেলিয়ে দৌড়ে পালালো। উনার যাওয়ার দিকে আমি তাকিয়ে আছি। আসলে উনি কি বোঝাতে চাইলেন তা ঠিক বুঝতে পারলাম না। সূর্য দরজায় উকি দিয়ে কি দেখলেন কে জানে? হুট করে গিয়ে দরজাটা লাগিয়েই সোফায় ধপাস করে বসে পড়লেন। দেখে মনে হলো উনি এতোক্ষণ এটাই চাইছিলেন যে কখন রিয়া আপু যাবে? আমার ভাবনার মাঝেই বলে উঠলেন……
.
—- ফাজিল মেয়ে একটা! দিন দিন ফাজিল হচ্ছে৷ বড় ভাইয়ের রুমে নক করে ঢুকে না। ধুরু এতো সুন্দর রোমান্টিক মুডটা দিল নষ্ট করে! থাপড়াইয়া গাল লাল করে দিতে পারতাম। বেদ্দপ মাইয়া একটা।
.
উনার কথা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আমাকে তাকাতে দেখে বললেন…..
.
—- এভাবে তাকাচ্ছো কেন আলোরাণী? প্রেমে পড়েছো বুঝি?
.
উনার কথা শুনে আমার কুঁচকে থাকা ভ্রু জোড়া সমান হয়ে এলো। আর চেহারায় ফুটে উঠল বিষ্ময়ের স্পষ্ট চিহ্ন!
.
—- আরে বাবা এভাবে তাকাতে হবে না আমি জানি আমি খুব সুন্দর, হ্যান্ডসাম,কিউট, ড্যাশিং,ক্রাশিং। তুমি দিনে লক্ষ লক্ষ বার ক্রাশ খাও আমার উপর আমি সব জানি!
.
ইয়া আল্লাহ্! পোলায় কয় কি? এতো দেখি আস্ত পাগল। নিজে নিজের প্রশংসা করে! ভাবা যায়! আমি কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলাম…….
.
—- হুম! হুম! কন্টিনিউ কন্টিনিউ।
.
—- মানে? আর কি বলব?
.
—- কেন এতোক্ষণ যা বলছিলেন। বলুন বলুন! খুব ভালো লাগছিল শুনতে। আ’ম ইমপ্রেসড! (দাঁতে দাঁত চেপে)
.
উনি এবার আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হয়তো আমার এভাবে বলার কারণ বুঝতে চাইছিলেন! না পেরেই জিজ্ঞেস করলেন…..
.
—- কেন? আমি ইমপ্রেসড হওয়ার কিছু বলেছি নাকি? আর তুমি রাগছো কেন আলোরাণী? (ইনোসেন্ট মুখ করে)
.
—- নাহ্! একদমই নয়! আপনি নন আমি বলেছি। একদম কথা বলতে আসবেন না। এখন ঘুমাবো রাত ১০টা বাজতে চলল!
.
উনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি বিছানায় গিয়ে বসে পড়লাম। বাব্বাহ্!পা ব্যথা হয়ে গেছে ।
.
আমি বিছানায় বসার সাথে সাথেই উনি সোফা থেকে এসে হুট করেই আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন।সেই সাথে দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরেছেন। উনার নিশ্বাস আমার পেটের উপর পড়তেই থেকে থেকে কেঁপে উঠছি আমি। কেমন যেন অদ্ভুত শিহরণে শিহরিত হচ্ছি আমি!
.
আমি উনাকে সড়িয়ে দিতে চাইতেই আরও জোড়ে চেপে ধরলেন আমার কোমড়! এবার যেন আমার নড়াচড়া করাই বন্ধ। উনি হয়তো আমার অস্বস্তিটা বুঝতে পারছেন। তাই হয়তো আমায় ছেড়ে উঠে বসলেন। উনি উঠে গিয়ে জানালার কার্ণিষ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। আমি বুঝতে পারলাম না। উনি কি রাগ হলেন নাকি মন খারাপ ?
.
আমি দু’বার ডাকলাম কিন্তু উনি কোনো সাড়া দিলেন না! তাই এবার আমি উনাকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। এবারও উনি কোনো রিয়েকশন দিলেন না। কে জানে আবার কি হলো!
.
—- আমি আইসক্রিম খাব!
.
উনি কিছুই বললেন না। আমি আবার বললাম…..
.
—- আমার খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।
.
এবারও কিছু বললেন না। এবার আমি উনার সামনে গিয়ে উনার চোখে চোখ রাখলাম।
.
—- কি হয়েছে?
.
—- কিছুনা!
.
—- তাহলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেন? আমি কখন থেকে কিছু একটা বলছি।
.
—- আলো সত্যি করে একটা কথা বলতো, তুই মন থেকে আমাকে মেনে নিতে পারিস নি তাই না?
.
উনার কথা শুনে আমি অবাক হলাম! কিসের মধ্যে কি বলছেন এসব? আর কেনই বা বলছেন?
.
—- মানেহ্? হঠাৎ এসব প্রশ্নের মানে কি?
.
—- যা জিজ্ঞেস করেছি তাই বল!
.
—- কেন পারব না? অবশ্যই পেরেছি।
.
—- তাহলে কিসের এতো দ্বিধাবোধ তোর? কিসের এতো অস্বস্তি? যখনই তোর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি তখনই……
.
উনাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই নিজের ঠোঁট জোড়া জুড়ে দিলাম উনাে সাথে। কারণ এইটুকু বলতেই বুঝে গেছি উনি কি বলতে চান!
.
প্রায় ১০মিনিট পর ছেড়ে দিলাম উনাকে৷ দু’জনেই হাঁপাচ্ছি। উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আর আমি মাটিতে। কারো মুখে ধ্বনি নেই!
.
বেশকিছুক্ষণ পর,
নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম……
.
—- আপনার স্পর্শে আমার অস্থির লাগার কারণ আপনাকে মেনে না নেওয়া নয়! বরং প্রথম কেনো পুরুষের স্পর্শ পাওয়ায়। আর যেখানে আপনাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি, ভরসা করি।সেখানে না মেনে নেওয়ার প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে? আপনাকে আমি আজ নয় বরং যেদিন আপনার প্রতি থাকা আমার প্রতিটা ফিলিংস উপলব্ধি করতে পেরেছি সেদিন থেকেই মেনে নিয়েছি। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন! আমি শুধু আর শুধুই আপনার৷ আর আপনাকেই ভালোবাসি এবং ফিউচারেও বাসব!
.
এইটুকু বলে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারটা অন করে দিলাম। খুব অস্বস্থি লাগছে। একটু শাওয়ার নিয়ে শান্তিতে ঘুমাবো।
.
শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে চুলটা আঁচড়ে নিয়ে সোজা শুয়ে পড়লাম। উনাকে কিছু বলার সুযোগই দিলাম না।আসলে কেন যেন উনার সাথে এমুহূর্তে কোনো প্রকার কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। বিছানায় শুয়ে কাঁথাটা গায়ে টেনে নিলাম। কিছুক্ষণ পরে লাইট অফ করে উনি বারান্দায় চলে গেলেন। হয়তো বলার মতে কিছু পাচ্ছে না অথবা বলতে চাইছে না কিছু। আমিও আর কিচ্ছু বললাম না। চোখ বন্ধ করে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মাঝেই চোখে এসে ভর করল রাজ্যের সকল ঘুম। পাড়ি জমালাম ঘুমের দেশে।
#চলবে……..
[#বিঃদ্রঃ সরি গাইস! আ’ম সো সরি। কি করব বলুন? আম্মু অসুস্থ নিজেও তেমন সুস্থ নই। তবুও সব সামলাতে হয। তার মাঝে যদি হয় মুড সুয়িং তাহলে তো কথাই নেই। আসলে ছোট থেকেই আমার একটা বাজে অভ্যাস। মুড সুয়িং হলে কিচ্ছু ভালো লাগে না। মাথা কাজ করেনা। আর ইদানীং তো রাগ তো রাগ নয়। যেন আস্ত এক অগ্নিপিণ্ড! অল্পতেই রেগে যাই। সবকিছু নিয়ে খুব প্রবলেমে আছি। মনটা যদি স্বাভাবিক থাকতো তাহলে সব সামলে লিখতে পারতাম। কিন্তু মনটাই খুব খারাপ ছিল। লিখতেই ভালো লাগছিল না। যাই হোক, এখন থেকে রেগুলার না দিলেও ১/২দিন পর পর অবশ্যই দিব। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ ❤]