#অন্তর্লীন_প্রণয়
সাদিয়া মেহরুজ দোলা
পর্ব-০৭
স্কুল ফর্মটা হাতে নিয়ে আয়ন্তিকা অশ্রুসিক্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে অহর্নিশের দিকে। হাতদুটো তার বেগতিক গতীতে কাঁপছে! কম্পমান হাতটা থেকে ফর্মটা ভুলবশত ফ্লোরে পড়ে যায় তৎক্ষনাৎ।প্রচন্ড খুশির মাঝে মানুষ নিস্তব্ধতা ধারণ করে, ঠিক এই ঘটনাটিই ঘটেছে আয়ন্তিকার সাথে। অহর্নিশ যদিও বলেছিলো স্কুলে পড়তে দিবে তাকে। তবে তা যে এত তাড়াতাড়ি কার্য সমাপ্ত হবে তা ভাবেনি সে।
অহর্নিশ হতভম্ব! বিচলিত হয়ে পড়লো একটু খানি।তার মন নিভৃতে একটাই প্রশ্ন বারংবার ঘুরছে! এই মেয়ে কাঁদছে কেনো? আয়ন্তিকার তো খুশি হওয়ার কথা তাই না? তাহলে এভাবে কাঁপা কাপিঁ, কান্না কাটি করছে কেনো আয়ন্তিকা?
অহর্নিশ উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
-‘ স্ট্রেন্জ! কাঁদছো কেনো তুমি?স্কুলে পড়তে চাও না?’
আয়ন্তিকা তড়িৎ বেগে চোখের পানি সন্তপর্ণে মুছে নেয়। নিজেকে ধাতস্থ করে সে ব্যাকুল হয়ে বলল,
-‘ কে বলেছে পড়তে চাই না। আমি পড়তে চাই! কান্না করছি তো খুশিতে। আমি এতো জলদি আমায় স্কুল ভর্তি করার বন্দোবস্ত করে দিবেন তা ভাবিনি কখনো। ‘
-‘ মূল্যবান সম্পদকে অল্প খানেক খুশিতে ঝড়িয়ে দিয়ে নষ্ট করতে নেই! কারো এই সম্পদকে অযথা নষ্ট হতে দেখলে কষ্ট লাগে সেটা তোমার বোঝা উচিত। ‘
অহর্নিশ তার কথা সম্পূর্ণ একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়।বোকা আয়ন্তিকা এবারও অহর্নিশের কথাটা বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো।বোকা বোকা চাহনি তার। অহর্নিশ নিজেও কথাটি বলে অস্বস্তি বোধ করছে মন গহীন হতে! কি বলল এটা সে? কেনো বলল? তাও আয়ন্তিকা কে।
আয়ন্তিকা নত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ বুঝিনি আপনার কথা। কি বললেন?’
-‘ কিছু না! তুমি ফর্মটা পূরণ করো। আর কিছু বই এনেছি। ভর্তি পরিক্ষা দেয়া লাগবে! কাল বাসায় গিয়ে পড়া শুরু করবে। ‘
আয়ন্তিকা ইশারায় ‘ হ্যা ‘ বলল। অহর্নিশের ওপর হটাৎ দলা মোচড়ানো রাগ চেপে বসেছে। এই লোক এমন কেনো? কথা বলবে অতী রহস্য নিয়ে, আগামাথা ছাড়া কথা। মানে জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যাবে। এমন অদ্ভুত লোক আয়ন্তিকা আগে কখনো অবলোকন করেনি। পরবর্তী বিড়বিড় করে সে কিছু বলল। তদ্রূপ পাশ হতে কালো রঙের বল পয়েন্ট এর কলমটা নিয়ে স্কুলের সেই ফর্মটায় আস্তে ধীরে খালিঘর গুলো পূর্ণতা দিতে লাগল। অহর্নিশ একবার আঁড়চোখে আয়ন্তির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে! তবে পরক্ষণে সে কফির মগটা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বেলকনিতে চলে যায়। এখানে থাকলে নিশ্চিত সে উল্টোপাল্টা কোনো কর্ম করে বসবে!
________________________
দুপুরের তাপদাহে আবেষ্টিত আশপাশ। ভ্যাপসা গরমে এক বিন্দু বাতাসের আভাস নেই! গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে কাঠ। পানির আশায় থেকে থেকে তারা ক্লান্ত। টিভিতে যদিও বলেছে সেদিন খুব জলদিই প্রকৃতিতে পদচারণা ঘটবে বর্ষণের! কিন্তু আজ চার পাঁচদিন কেটে গেলো বোধহয় বর্ষণের কোনোরূপ দেখা নেই! আবহাওয়া বিদদের এমন মিথ্যা ভাষণ শুনে প্রকৃতিও বুঝি চার পাঁচটা করে গালি মেরে দিয়েছে তাদের।
আয়ন্তিকা ব্যাস্ত শহরে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বইয়ে মুখ ডোবায়। অহর্নিশের ফ্লাটে ফিরে এসেছে তারা আজই! এইতো খানিকক্ষণ আগে হবে। এসেই আয়ন্তিকা অহর্নিশ কে অতিষ্ঠ করে ফেলেছে বই কোথায়? বই কোথায়? বলে বলে! অহর্নিশ প্রথমে বলেছিলো কিছু সময় রেষ্ট নিয়ে পড়তে বসতে কিন্তু কে শোনে কার কথা? আয়ন্তির সাথে শেষে না পেরে বইয়ের সন্ধান দিয়ে দেয় অহর্নিশ।
বই পড়তে পড়তে ক্লান্তি ভর করে আয়ন্তিকা দুই চোখের পাতায়। ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা! তবুও সে তটস্থ হয়ে জোর করে পড়ছে। এক পর্যায়ে অসাবধানতা বশত পড়ে যেতে নিলে ঘুমের প্রভাবে তৎক্ষনাৎ আয়ন্তিকার কানে ভেসে আসে ভারী কন্ঠস্বর। ঘুম উড়ে যায় তার!
অহর্নিশ ভারী কন্ঠে বলল,
-‘ ঘুম আসছে ঘুমাও! এমন ভাবে পড়ছো যেনো কালই পরিক্ষা তোমার। ৮ দিন সময় আছে। তাছাড়া এটা জাষ্ট নামের এক্সাম! তুমি পরিক্ষার খাতায় কিছু না লিখে আসলেও তারা তোমায় ভর্তি নিবে। ‘
আয়ন্তিকা হতবাক! ঠোঁট যুগল গোল গোল করে সে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ কিছু না লিখে আসলেও ভর্তি নিবে?’
-‘ হ্যা? ‘
-‘ কেনো?’
-‘ কারণ তাদের স্টুডেন্ট চাই! স্টুডেন্ট হলে তাদেরই লাভ। টাকা পাবে! বেসরকারি স্কুল এটা। ‘
অহর্নিশ বিরক্তি কন্ঠে বলল। আয়ন্তিকা বিষয়টা ধরতে পারে। তবুও সে পড়া থেকে বিরতি নেয় না। সে পড়বে মানে পড়বেই! অহর্নিশ আয়ন্তিকা কে আগের রূপে বহমান থাকতে দেখে ফের একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে। হাতে থাকা ফোনটা সে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে বলল,
-‘ আমি বাহিরে যাচ্ছি! এখনি চলে আসবো। দরজা লাগিয়ে যাও। ‘
বলে অহর্নিশ সামনের দিকে লম্বা পা ফেললো। আয়ন্তিকা তার মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে বেড থেকে নামে। ড্রইং রুমে এসে দেখে অহর্নিশ চলে গেছে আগেই। দরজা খোলা! এগিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আয়ন্তিকা ফের পড়ায় মশগুল হয়। পড়ার মাঝে থাকলে অন্ততপক্ষে বাবা মার কথা মনে এসে খোঁচা দিয়ে তাকে কান্না করাবে না তো।
.
আজানের সুমধুর শব্দ কানে প্রতিফলিত হতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আয়ন্তিকা। চারিদিক আঁধারে নিমজ্জিত দেখে সে বেশ অনেকটা চমকে যায়! মাগরিব এর আজান দিয়েছে মাত্র। শেষ বিকেলের দিকে পড়তে পড়তে দেয়ালে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে। টেরই পায়নি কতক্ষণ ১ ঘন্টা কেটে গেলো! হয়তো ক্লান্ত ছিলো বলে ঘুম গভীরতা তৈরি করেছে।
আয়ন্তিকা বেড থেকে নামে ওযু করার উদ্দেশ্যে। অহর্নিশ এর কথা মাথায় আসতে তার ভ্রু যুগল কিন্চিত কুঁচকে যায়। অহর্নিশ বলেছিলো সে এখনই আসছে, তাহলে দেখা নেই কেনো এখনো তার? আসেননি? নাকি এসেছিলো? দরজায় কলিং বেল এর শব্দ আয়ন্তিকা ঘুমের কারণে শুনতে পায়নি। নিভৃতে গড়ে ওঠা প্রশ্নটাকে নিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়লো। গহীন হতে কিছু ভেবে পা বাড়ায় মেইন ডোরের দিকে! দরজা খুলতেই আয়ন্তিকার চক্ষু চড়কগাছে অবস্থান করছে।
অহর্নিশ দেয়ালে হেলান দিয়ে মাটিতে হাঁটুগেড়ে বসে চোখ বন্ধ করে আছে। তারমানে আয়ন্তিকার নিভৃতে গড়া প্রশ্নটাই সঠিক! অহর্নিশ হয়তোবা বহুক্ষণ আগে এসেছিলো। এতক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করতে করতে বোধহয় ক্লান্তরূপে রূপান্তরিত হয়ে মাটিতে বসে পড়েছে। ব্যাথাতুর, আহত দৃষ্টি আয়ন্তিকার! নিজেকে তার দুই তিনটা থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছে করছে। আয়ন্তিকা ভাবনা গুলো ঠেলে নিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। পা যুগল গতিশীল করে সামনে অহর্নিশ এর সামনে এসে দাঁড়ায় সে।
আয়ন্তিকা কোমল কন্ঠে বলল,
-‘ শুনছেন? ‘
একটি মাত্র শব্দ! কানের কাছে গিয়ে এক প্রকার ঝংকার তুলে দিয়ে অহর্নিশের। চোখের পাতা তড়িৎ বেগে খুলে নিয়ে স্থিতিশীল দৃষ্টি তার আবদ্ধ করে সামনে। আয়ন্তিকা দাঁড়িয়ে যেখানটায়! আয়ন্তি কে দেখে এই মূর্হতে অদ্ভুতানুভূতি জাগলো অহর্নিশের। নীল রঙের ওড়না মাথায় দেয়া। কিছু অবাদ্ধ চুল এসে সামনে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কপাল, নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে রয়েছে।
অহর্নিশের এই মূর্হতে আয়ন্তিকা কে ১৫ বছরের কিশোরী মনে হলো না। আয়ন্তিকা কে দেখে তার সবেমাত্র মনে অনুভূতি এসে বলল, আয়ন্তিকা প্রাণনাশীনি! রূপমোহিনী! চোখ ধাঁধানোকর এক রূপবতী যুবতী। আয়ন্তিকা কে তার কাছে এই মূর্হতে বউ বউ লাগছে। ‘শুনছেন? ‘ শব্দটা তার কানে এসে বেজেছে মধুর শব্দে! বারংবার মনে হয়েছে এই নারী কেনো তাকে সর্বদা এভাবে মাধুর্যতা মিশিয়ে ডাকে না? কেনো ভয়ে সিটিয়ে থাকে?
অহর্নিশ উঠে দাঁড়ালো। তার ভাবনা গুলো নিছকই অতীব নিকৃষ্টমান। কেনো? তা অন্তর্লীন হয়ে আছে অহর্নিশের।
আয়ন্তিকা আহত কন্ঠে বলল,
-‘ কখন এসেছিলেন?’
-‘ একটু আগে?’
-‘ মিথ্যা বলছেন? ‘
অহর্নিশ একটু চমকে বলল,
-‘ অদ্ভুত তো! মিথ্যা বলতে যাবো কেনো?’
-‘ মিথ্যাই বলছেন আপনি। একটু আগে আসলে এভাবে বাহিরে দেয়াল ঘেঁষে বসে ঘুমিয়ে পড়তেন না নিশ্চিত। কলিং বেল দেননি? আসলে আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অনবরত কলিংবেল দিতে পারতেন তাহলে হয়তো ঘুমটা ভেঙে যেতো। ‘
অহর্নিশ তপ্তশ্বাস ফেললো। নিম্নকন্ঠে বলল,
-‘ দরকার পড়লে হাজার বছর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো আমি তবুও তোমার ঘুম ভাঙ্গাবোনা! সেই সাধ্য নেই আমার। ‘
পরবর্তীতে সে উঁচু কন্ঠে বলল,
-‘ ভেতরে চলো! ‘
অহর্নিশ ভেতরে গিয়ে হাতের খাবারের প্যাকেট গুলো টেবিলে রেখে দেয়। শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খুলে নিয়ে ফের সে তপ্তশ্বাস ফেলে! আয়ন্তিকা দরজা লাগিয়ে এসে অহর্নিশের পিছন এসে দাঁড়ায়। গলা ঝেড়ে সে বলল,
-‘ আপনি বাহিরে কোথায় গিয়েছিলেন?’
অহর্নিশ এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে প্রতুত্তরে বলল,
-‘ খাবার আনতে! আজ বুয়া আসবেনা। তাছাড়া তুমি তো আর রান্না পারোনা আর পারলেও দেখা যাবে কিচেনে গিয়ে অঘটন ঘটিয়ে বসেছো।পিচ্চি কিনা! তাই বাহির থেকে এনেছি। ‘
আয়ন্তিকা এবার সাহস জুগিয়ে নিলো মন নিভৃতে। শুষ্ক ঠোঁট যুগল জিহ্বা দ্বারা সিক্ত করে নিয়ে সে বলল,
-‘ বড় কাওকে বিয়ে করলেই পারতেন। তাহলে তো অযথা বাহির থেকে খাবার কিনে এনে টাকা খরচ করা লাগতো না। আমায় বিয়ে করে শুধু শুধু নিজের ক্ষতিই করলেন! সাথে আমারও! ‘
শেষোক্ত কথাটা নিম্নকন্ঠে বলল আয়ন্তিকা। অহর্নিশ কঠিন কন্ঠে বলল,
-‘ আমার লাভ ক্ষতি তোমার দেখার প্রয়োজন নেই।আমি নিজেরটা নিজেই ভালো বুঝি! বিয়ে করে আমার তো কোনো ক্ষতি হয়নি তবে তোমার ক্ষতি হলে তার দায়ভার আমি নিবো না আর না আমি এতে দায়ী! দায়ী তুমিই! ‘
অহর্নিশ শব্দ করে হেঁটে নিজের রুমে চলে যায়। আয়ন্তিকা হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট বাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে সে বলল,
-‘ অদ্ভুত তো! আমি আবার কি করলাম? আমি দোষী হলাম কি করে?’
________________________
নাহিয়া আহমেদ পর পাশে সিজ্ঞেল সোফায় বসে আছে শাফি। নাহিয়া আহমেদ মাঝখানে থাকা সোফায় পা তুলে বসে খবর দেখছে টিভিতে। শাফি এতে বিরক্তবোধ করলো। এই কারণে কি তাকে ডেকে আনানো হয়েছে? টিভিতে খবর দেখানোর জন্য?
শাফি পরিশেষে ধৈর্যহারা হয়ে বলল,
-‘ নানীমা, আপনে কি আম্রে টিভি দেখানোর জন্য ডাকছেন? ‘
নাহিয়া আহমেদ চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বলল,
-‘ না। কাজ আছে। তার আগে একটু খাড়া। খবর দেইখা লই। ‘
-‘ আইচ্ছা জলদি। ‘
সময় চ্যানেলটায় এসে নাহিয়া আহমেদ থেমে যান। সেখানে দুপুরের সংবাদ দেখাচ্ছে। একজন সাংবাদিক গরগর করে বলল,
-‘ ঢাকার বিশিষ্ট আর্টিস্ট সাফিয়া নূর আজ এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ। পুলিশেরা তদন্ত করছেন কিন্তু তার কোনো হদিস নেই! তবে গত পরশু তিনি একটা ল্যান্ড লাইন হতে ফোন দিয়ে বলেছিলাম তিনি এক এপার্টমেন্টের ১৩ তলায় বন্দী আছেন। তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে! এরবেশি কিছু বলতে পারেননি তিনি। পুলিশসহ সি.আই.ডি কর্মকর্তারা এখনো তার খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। ‘
পরবর্তীতে স্ক্রিনে ভেসে উঠলো একজন মেয়ের অর্ধছবি! নাকের অর্ধেকাংশ, চোখ এবং কিছু চুল দেখা যাচ্ছে বাকিটা কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। শাফি ছবিটা দেখা মাত্রই লাফিয়ে উঠে বলল,
-‘ নানীমা এটা অহর্নিশ ভাইয়ের প্রথম বউ না? ‘
.
নামাজ শেষে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতেই হুট করে কারেন্ট চলে যায়। আয়ন্তিকা বিরক্ত প্রকাশ করলো এতে। তৎক্ষনাৎ ওয়াশরুম হতে অহর্নিশ উঁচু কন্ঠে বলল,
-‘ আয়ন্তিকা, আমার ফোনের চার্জ শেষ ঐটাতে ফ্লাশলাইট অন করে যাচ্ছেনা। তুমি কিচেনের সেল্ফ থেকে মোমবাতি নিয়ে এসো। আমি ওয়াশরুমে বের হতে পারছি না! আমার চোখমুখে সাবান লেগে আছে। জলদি আনো। ‘
অহর্নিশের কথায় জলদি করে কিচেনের সেল্ফ হতে মেমবাতি নিয়ে সে ওয়াশরুমের সামনে আসে। একটু আগেই অহর্নিশ গোসল করতে ঢুকেছিলো তাকে বলে নিয়ে! আয়ন্তিকা দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
-‘ মোমবাতি এনেছি। দরজা খুলুন একটু করে! ফাঁক দিয়ে দিচ্ছি। ‘
-‘ ওয়েট…’
কিছু সময় পর খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হয়। অহর্নিশ তখন ব্যাকুল হয়ে বলল,
-‘ আয়ন্তিকা প্লিজ। আমি চোখ খুলতে পারছিনা। একটু ভেতরে এসে পানি এগিয়ে দাও। ‘
আয়ন্তিকা প্রথমে চাইছিলো না যেতে। মনে ভরাট অস্বস্তি নিয়ে সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলে অহর্নিশের ধমকে সে ভেতরে যেতে বাধ্য হয়। চটজলদি পানি এগিয়ে দিয়ে বের হতে নিবে তৎক্ষনাৎ তার হাত আঁকড়ে ধরে অহর্নিশ।
অহর্নিশের ঘোর লাগা দৃষ্টি। হাতে মোমবাতি নিয়ে থরথর করে কাঁপুনি দেয়া আয়ন্তিকা কে সে গহীন চোখে দেখছে। কাঁপা ঠোঁটদুটোকে তার বলিষ্ঠ হাত যুগল দিয়ে স্পর্শ করার আকুল প্রেরণা জেগেছে মনে। হুট করে সে এগিয়ে যায় সামনে! আয়ন্তির হাত হতে মোমবাতি নিয়ে পাশে রেখে শক্ত করে জরীয়ে ধরে আয়ন্তিকা কে অহর্নিশ। আয়ন্তিকা পাথর রূপে পরিনত হয়। তার শ্বাস দমে আছে!
চলবে…
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
________________________________
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায়। সবার রেসপন্স চাচ্ছি।