#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ (ছদ্মনাম)
০৫,,
-অকর্মা কোথাকার! সামান্য একটা পিয়াজু ভাজতে পারিস না! সংসারে গিয়ে করবি কি তুই? রোজ নালিশ আসবে তো আমার বাড়িতে। তিল, আমি কিন্তু আগে থেকে বলে রাখছি, তোর সংসারের ঝামেলা আমার সংসারে এনে ফেলবি না একদম। এতো বড় হয়ে গিয়েছিস, এটুকুও পারিস না! সর এখান থেকে, দেখ আমি কিভাবে করি।
নাসিরা পারভীন তিলোর কাজে বিরক্ত হয়ে কথাগুলো তিক্ত কন্ঠে বললেন। সন্ধ্যাকালীন হালকা নাস্তা বানাতে রান্নাঘরে ঢুকতেই তিলোর আক্রমণের মুখোমুখি হলেন তিনি। মাঝে মাঝেই তিলোর এমন রান্নাবান্নার আগ্রহ জাগে। বিশেষ করে ও যখন মনে করে, ওর আসলে শেখা উচিত এই কাজগুলো। তিলোর রান্নাঘরে প্রবেশকে নাসিরা পারভীন আসলে ভয় পান। কাজ তো ঠিকমতো করবেই না বরং এক কাজ করতে হাজারটা ভুল করে ওনার কাজ বাড়াবে।
তিলো সরুচোখে একবার ওনার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তুমি কি প্রথমবার এর থেকে ভালো করে ভাজতে পেরেছো? আমি নিশ্চিত পারোনি। শিখতে তো দেবা? নাকি?
নাসিরা পারভীন ওর হাত থেকে খুন্তিটা কেড়ে নিয়ে ঠিক করে ভাজতে ভাজতে বললেন,
-তোর মতো বয়সে আমি তুলির মা হয়ে গিয়েছি। আর রান্নাবান্না! দেখ কিভাবে করতে হয়।
-উফঃ আম্মা। তুমি অকালপক্ব ছিলে বলে কি আমাকেও হতে হবে? আর এখন তো তুমি পারবেই। তোমার সংসারের বয়সের থেকে আমার বয়স কম। ছোট মানুষ আমি। না শেখালে শিখবো কি করে?
কথাগুলো বলে তিলো আবারও ওনার হাত থেকে খুন্তি নিয়ে নিজের কেরামতি দেখাতে গেলো। আর তাতে পিয়াজু গুলোর সমস্ত পেঁয়াজ দলাগুলো থেকে ছাড়িয়ে সারা তেলে ছড়িয়ে একেবারে যা-তা অবস্থা!
তিলো কাজটা করে জিহ্বা কামড়ে ধরলো। আড়চোখে একবার নাসিরা পারভীনের দিকে তাকিয়ে ছোট করে ‘সরি’ বলে ধীরগতিতে পেছনে ফিরলো আর নাসিরা পারভীন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিলো সেখান থেকে গায়েব। নাসিরা পারভীন রাগে গজগজ করতে করতে একা একাই বকবক করলেন কিছুসময়। সেটা ছিলো তিলোকে কয়েকটা ঝাড়ি দেওয়া। তারপর নিজেই কাজে লেগে পড়লেন তিনি।
তিলো একছুটে তুলির ঘরে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। তুলি ওকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-আবার কি আকাজ করে আসলি?
-কোনো আকাজ না। শুধু শিখতে গিয়েছিলাম। আর তুই তো জানিসই আম্মা সামনে থাকলে যা হয়।
-আম্মা সামনে থাকলে কিছু হয়না। আকাজ তুই করিস। চা বানাতে গুঁড়া দুধের জায়গায় বেসন কে দেয়? পেঁয়াজ বাটা রসুন বাটা গুলিয়ে ফেলে কে?
তিলো একপ্রকার বিরক্ত হয়ে তুলির পাশে বসে বললো,
-বাদ দে সেসব। আম্মা এমনিতে রেগে আছেন।
তুলিও আর এ নিয়ে কোনো কথা তুললো না। তুষার এসে ওদের পাশে বসলো। তুষার কথা বলা শুরু করার আগেই তুলি ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ওকে ইশারায় চুপ করতে বললো। ইশান ঘুমাচ্ছে। তুলি ওর দুপাশে বালিশ দিয়ে ছোট মশারীটা দিয়ে ঢেকে দিলো ওকে। রুম ছেড়ে দিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো। ততক্ষণে নাসিরা পারভীন স্ন্যাক্স নিয়ে চলে এসেছেন। তিলো নিতে গেলেই ওনি তিলোর হাতে ছোট করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলেন,
-নিজে যা বানিয়েছো তাই খাবি।
তিলো করুণ চোখে একবার ওনার দিকে তাকালো। ওনি সেই খাবারগুলোর সাথেই আনা একটা পিরিচে রাখা ছাড়া ছাড়া পেঁয়াজ ভাজি ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-দুদিন এমন শিক্ষা দিলে তুই পথে আসবি বাছাধন। আমি তোকে বারবার নিষেধ করেছি তিল, আমার কাজের সময় বিরক্ত না করতে। এখন তুি এগুলো পাবি না।
-আম্মা প্লিজ। আর বিরক্ত করবোনা। আজকের মতো দাও প্লিজ।
নাসিরা পারভীন কড়া চোখে একবার ওর দিকে তাকিয়ে পিরিচটা ইশারা করে বললেন,
-এই পিরিচের সবটা তুই খাবি।
তিলো একবার তুলি আর তুষারের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা মিটিমিটি হাসছে। তিলো হুট করেই সোফা ছেড়ে উঠে ধপাধপ্ পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো। ও চলে যেতেই শুনতে পেলো সেখানে হাসির রোল পড়ে গিয়েছে। তিলোর রাগ হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। ও জানে কিছুক্ষণ পর নাসিরা পারভীন ওর জন্য ভালো খাবারটাই এনে দেবেন। প্রথমে ও অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে থাকবে। তারপর খেয়ে নেবে। কিন্তু এখন রাগ করে মায়ের সাথে ঝগড়া করলে আর সেটা হবে না। তাই তিলো বসে অপেক্ষা করলো নাসিরা পারভীনের আসার। প্রায় এক ঘন্টা পর ঘটলোও তাই।
পরদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকেই অনি তিলোকে একেবারে ছেঁকে ধরেছে। তার দাবি অরিকের সাথে ওর একটা কিছু করে দিক তিলো। তিলোর ভাষায় লাইন বা ইটিসপিটিস। তিলো যতোবারই এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে, অনি ততবারই বেশি করে ওকে ধরছে।
-বুন্ডি একবার একটা উপায় করে দে। দেখ, তোর কাছে আর কখনো কিচ্ছু চাইবো না। তোকে প্রমিজ করছি, এবার থেকে সব পরীক্ষায় তোকে সবকিছু দেখাবো। সব নোট আমি নিজে যোগাড় করে দেবো।
অনুরোধের সুরে অনি বারবার তিলোকে বলে যাচ্ছে। ভার্সিটি শেষে তিলো লাইব্রেরিতে এসে বসেছিলো। সেখানেই অনি হাজির। আজকে সম্পূর্ণ সময়টা তিলো ওর থেকে দূরে দূরে থাকতে চেয়েছে। রিয়া আর আহান দুজনের কেউই ক্লাসে না আসায় আজকে সবাই সে আলোচনাতেই ব্যস্ত ছিলো। আর এদিকে অনি ওর পেছনে ফাউ এর মতো লেগে পড়েছে। তিলো এতক্ষণ ওর কথার কোনো উত্তর না দিলেও এবার আর না দিয়ে পারলোনা।
-তুই দেখাবি পরীক্ষায় আমাকে? ও তাই?
চোখ মুখ শক্ত করে তিলো বললো,
-আর তোর তা দেখে ফেইল করি বসে।
অনি অস্থির ভঙ্গিতে বললো,
-এই না না। না দোস্ত। এবার থেকে আর ফেইল হবে না। পড়বো আমি। খুব পড়বো তোকে পাশ করাতে।
তিলো ওর কথায় হাসবে না কাঁদবে নাকি নির্বিকার হয়ে থাকবে, সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। এই মেয়ে পড়াশোনা করবে ওকে পাশ করাতে, নিজে পাশ করতে নয়! তিলো কর্কশ কন্ঠে বললো,
-ফাজিল মহিলা! নিজে পাশ করার কোনো ইচ্ছা নেই না? শোন অরিক ভাইয়ার কিন্তু এমন ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট একদম পছন্দ না।
-ওহ ইয়েস! ইয়েস! ইয়েস! ইয়েস! ফাইনালি স্বীকার করলি প্রফেসর তোর ভাই।
প্রায় লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে অনি কথাটা বললো। পুরো লাইব্রেরির সকলের দৃষ্টি এখন ওর দিকে। অনি নিজের কাজের জন্য লজ্জাবোধ করলো ঠিকই তবে সেই অনুভূতির প্রভাব ওর উপর থাকলো না একদমই। চোখ খিঁচে বন্ধ করে টুপ করে চেয়ারটায় পুনরায় বসে চোখ মেলে সকলের উদ্দেশ্য হাত দুটো উপরে তুলে সারেন্ডার্ডের ভঙ্গিতে বললো, ‘মাই ব্যাড।’
তিলো চমকে উঠেছিলো অনির এহেন কাজে। এবার ও ক্ষমা চেয়ে নিতেই তিলো বললো,
-তুই তাহলে এতক্ষণ আন্দাজে ঢিল মারছিলি?
অনি মুখে হাসি নিয়ে মাথা নেড়ে ওর কথার সম্মতি দিলো।
-ছিঃ তোর লজ্জা করে না? ওনি না তোর প্রফেসর?
-লজ্জা কেন করবে? আমি যখন বিয়ে করবো তখন যদি জামাইয়ের পেশা শিক্ষকতা হয়, তাহলে কি আমি বিয়ে করবো না। না যে, ছেলে টিচার, মানে সে বিরাট সম্মানিত। তাকে বিয়ে করা যাবে না। কারণ আমি ছাত্রী। তাহলে তো প্রত্যেক টিচারের উচিত জীবনে কোনোদিন কোনো স্কুল, কলেজে যায়নি এমন মেয়ে বিয়ে করা। তাহলে তার কোনো টিচার থাকবে না আর টিচারের স্টুডেন্ট সে হবে না। এখন যদি টিচারটা গোল পৃথিবীতে ঘুরতে ঘুরতে তার বউয়েরই টিচার হয় বা সে যদি চাকরিটা তার বউ পড়া ভার্সিটিতেই পায়, তবে ছেড়ে দেবে চাকরিটা? কোনো টিচার কি কোনোদিনও প্রেম করে না? দুটো সম্পর্ক আলাদা। মিলিয়ে ফেলিস না। তাছাড়া প্রফেসর অরিক আমাদের ডিপার্টমেন্টের না।
তিলো চুপচাপ ওর যুক্তিগুলো শুনে বললো,
-পারবোনা আমি। তোর শখ হলে নিজে যা। জানিসই তো ওরা কেউ আমার কোনো কথা শোনে না। তাছাড়া দুদিন পর আরেক ছেলে দেখে ভাইয়াকে ভুলে যাবি তুই। চিনি তো আমি তোকে।
অনি তিলোর একহাত নিজের দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
-দেখ দোস্ত, না শুনুক। একটুখানি আমাকে সাহায্য কর। বিশ্বাস কর, এটা আমার শেষ ক্রাশ। আর কাউকে দেখে আমি আর কখনো ক্রাশ খাবো না। প্রয়োজন ছেলে দেখলেই চোখ বন্ধ করে ফেলবো। প্রফেসর তোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। না হলে, কালকে যেচে অতো কথা বলতে আসতেন না। কোনো প্রফেসর, ছাত্রীর রূপ নিয়ে বলতে পারে? তুই বোন বলেই তো বলেছেন৷ প্লিজ তিল। কিছু কর।
তিলো টেবিলের উপর মেলে রাখা বইটা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আনবিলিভেবল’। বলেই ওখান থেকে উঠে গেলো। অনিও ওর সাথে সাথে উঠে ওর পেছনে পেছনে ওকে অনুরোধ করতে করতে গেলো।
#চলবে
I owe you an apology for everything.
স্বপক্ষে কিছু যুক্তি পেশ করার একটা সুযোগ নিলাম মাত্র –
আগে আমি গল্প টাইপ করতাম আমার আম্মুর ফোন থেকে। তবে গতকাল নিজে একটা ফোন কেনার পর আর সেটা হচ্ছে না। এখন নতুন ফোনে সবকিছু সেটআপ করে গল্প পোস্ট করতে সময় লেগেছে। জানি, সেটা করতে সময় লাগে না। তবে অলসতায় সব অ্যাপ ইনস্টল করে আর করতে ইচ্ছা করছিলো না। আর এই ব্রান্ডের ফোন ব্যবহারে আমি অভ্যস্ত নই। তাই টাইপ করতেও বেশ ঝামেলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বারবার স্পেস দিতে গিয়ে হোম স্ক্রিনে চলে আসছে। আর সবকিছুর পরে সারাদিন রোজা থেকে আর মাথা খাটাতে ইচ্ছা করে না। আবার এদিকে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ভাষণ! সবকিছু মিলিয়ে অবস্থা একটু খারাপ।
তবে আশা করি, এরপর থেকে নিয়মিত গল্প পোস্ট করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং।