#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]
২০,,
অরিকের কথাটা পুরো লিভিং রুমে একটা বজ্রপাত ঘটালো। কেবল তাতে কেউ নিহত হলোনা। নাসীরা পারভীন খানিকটা চিৎকার করে বললেন,
-অসম্ভব! তিলের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
অরিক চোখজোড়া মেঝেতে আবদ্ধ রেখে বললো,
-আমি জানি। আসলে এটা আমার আরো আগে বলা উচিত ছিলো। কিন্তু …।
জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে,
-কিন্তু আসলে আমার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়ে গিয়েছে। আমি সবটা সামলে নেবো। আমাকে একটা সুযোগ …
অরিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই অকস্মাৎ ওর মুখে একটা থাপ্পড় পড়লো। অরিকের মুখটা একদিকে ঘুরে গিয়েছে। অরিক চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে ফাহমিদা বেগমকে আবিষ্কার করলো ওর চড়দাতা হিসাবে। ফাহমিদা বেগমের অগ্নিদৃষ্টি আজ ওকে ভীত করে তুললো না। বরং ও যেন এর জন্য প্রস্তুতই ছিলো। অরিক কিছু না বলেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহমিদা বেগম চিৎকার করে বললেন,
-এই তুই আমার ছেলে! আমি তোকে জন্ম দিয়েছি! আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।
ফাহমিদা বেগম কেঁদে দিলেন শেষের দিকে। আকবর সাহেব এসে ওনাকে আটকাতে গেলে ওনি আকবর সাহেবের উপরও চড়াও হলেন। এদিকে নাসীরা পারভীন অরিকের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
-বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয় যে যখন ইচ্ছা হবে তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে। আমরা অনেক ভেবেচিন্তে তিলের বিয়ে ঠিক করেছি। এটা নিয়ে মজা করোনা। দিনতারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছে। এখন আর পিছিয়ে আসা সম্ভব নয়। তাছাড়া তোমার মায়েরা দিকটা তো দেখবে? আমি জানি না হঠাৎ তোমার এমন অদ্ভুত কথার মানে কি। তবে বলবো, এমন আর করোনা।
অরিক নাসীরা পারভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমি সত্যিই চাই ওকে বিয়ে করতে। আমি কোনো মজা করছি না।
-এখন তা সম্ভব নয়।
আচমকা ও নাসীরা পারভীনের একটা হাত নিজের দুই হাতের মাঝে স্যান্ডউইচের মতো করে ধরে বললো,
-ছোট আম্মু, ওর যদি বিয়েটা ভেঙে যায়, তবে আমার সাথে ওর বিয়ে দেবে?
এতক্ষণে সারা ঘরে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। অরিকের ফুফু মরিয়ম রহমান বলে উঠলেন,
-কি আবোলতাবোল বলছিস তুই অরিক! মাথা ঠিক আছে? ওই মেয়েকে তুই বিয়ে করবি!
অরিক তার কথায় পাত্তা দিলো না। ও তো নাসীরা পারভীনের উত্তরের অপেক্ষায় আছে। নাসীরা পারভীন বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-ওর বিয়ে ভেঙে যাবে মানে? অরিক তুমি কিছু করেছো?
অরিক ওনার প্রশ্নের উত্তর দিলো না। নাসীরা পারভীন এবার চিৎকার করে বললেন,
-আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি অরিক। কি করেছো তুমি যে ওর বিয়েটা ভেঙে যাবে?
অরিক এবারও কিছু বললো না। নাসীরা পারভীন আবারও কিছু বলার আগে আনিস সাহেব বলে উঠলেন,
-আমি দেবো তোমার সাথে তিলের বিয়ে।
নাসীরা পারভীন এবার আনিস সাহেবের উপর তেতে উঠলেন।
-তুমি দেবে! তোমারও কি ওর সাথে সাথে মাথাটা পুরোপুরি গেলো নাকি? কিভাবে সম্ভব!
ওনাদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা হলো। সারা ঘরেই এখন একটা মাছের বাজার ধরনের অবস্থা। এতোকিছুর সূচনা যে মানুষটাকে নিয়ে তার দিকেই কেউ এতক্ষণ খেয়াল করেনি।
নাসীরা পারভীনের মনোযোগ অরিকের উপর থেকে আনিস সাহেবের উপর যেতেই অরিক তিলোকে খুঁজে চলেছে। তুষারের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো এতক্ষণ। আর এখন নেই। ফাহমিদা বেগম ওদিকে অরিককে কিছু বলে চলেছে। কিন্তু সেদিকে অরিকের খেয়াল নেই।
অরিক তুষারের কাছে গিয়ে তিলোর কথা জিজ্ঞাসা করতেই তুষার নিজেও অবাক হলো ওর পাশে তিলোকে দেখতে না পেয়ে। তুষার ওদের কথার দিকে খেয়াল করছিলো। সামনে এতোটা নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে যে প্রত্যেকেই সেদিকে খেয়াল করছে। আর চেষ্টা করছে সেই নাটকে একটা ভূমিকা পালন করতে। তবে যাকে নিয়ে এতোকিছু তার দিকে খেয়াল করার কারোরই সময় নেই।
অরিক ব্যস্ত হয়ে পড়লো তিলোকে কোথাও দেখতে না পেয়ে। এদিকে ওনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেই চলেছে।
অরিক আনিস সাহেবের কাছে গিয়ে ওনার হাত টেনে নাসীরা পারভীনের সামনে থেকে সরিয়ে এনে বললো,
-ছোট আব্বু, তিল নেই এখানে।
আনিস সাহেব কথাটা শুনে প্রথমে অবাক হলেও বললেন,
-আমি দেখছি।
বলেই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। অরিক আর তুষারও ওনার পেছনে পেছনে বেরিয়ে গেলো। নাসীরা পারভীন এদিকে আনিস সাহেবকে ডেকেও থামাতে পারলেননা।
রাস্তায় এসে অরিক আনিস সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-আমি সত্যিই দুঃখিত। বুঝতে পারিনি, সবাই এতোটা প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আমার আসলে ব্যক্তিগতভাবে বলা উচিত ছিলো বা হয়তো কখনোই না বলা উচিত ছিলো।
অরিকের কন্ঠে অনুতাপবোধ স্পষ্ট। আনিস সাহেব ওর পিঠ চাপড়ে ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার সুরে বললেন,
-তাতে কি হয়েছে? সব গোলমাল ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া কি বলছো? কখনোই বলা উচিত নয়? কেন? তোমার মনে হয়েছে তুমি বলেছো। এখন না বললে সারাজীবন আফসোস করতে। সেটা ভালো হতো কি?
অরিক ওনার কথার প্রত্যুত্তর না করে কেবল হাসলো।
তবে সারা রাস্তায় কোথাও তারা তিলোকে পেলোনা। তাদের এখন দুশ্চিন্তা হচ্ছে। তিলোর ফোনও বন্ধ। আনিস সাহেব হতাশ হয়ে ফিরলেন। সাথে ভীষণ দুশ্চিন্তা।
এসে দেখলেন পরিস্থিতি আগের তুলনায় বেশ শান্ত। তবে তার মাঝেও কলহ আছে।
ইতিমধ্যে অনেকেই চলে গিয়েছে শো’টা উপভোগ করে। আনিস সাহেবও দাঁড়ালেন না৷ পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
নাসীরা পারভীন তিলোকে খুঁজেছে। তবে পাননি। এতে ওনি রাস্তাতেই কেঁদে দিলেন। আনিস সাহেব একদিকে ওনাকে সামলালেও আরেকদিকে বিরক্ত ওনার প্রতি।
অরিক বুঝতে পেরেছে, আজকে বাড়িতে থাকা ওর জন্য অসহনীয় একটা বিষয়। ও নিজেও রওনা দিলো নিজের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে। বারবার তিলোর ফোনে কল করে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা বন্ধ।
তিলো একাই বাড়ি ফিরে এসেছে। যদিও অনেক দূর আর দু-তিনবার যানবাহনও পরিবর্তন করতে হয়, যা ওর জন্য বিরক্তির একটা কারণ সাথে সাথে জড়তাও। এরপরও ও কেবল ঝোঁকের বশেই কাজটা করে ফেলেছে। অরিকের কথাগুলো শোনার পর থেকেই তিলো যেন একটা ঘোরের মাঝে আছে। ও তো এতোদিন আন্দাজ করতো। আর আজকে যে অরিক সত্যিই এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে ও ভাবেনি। আবার আনিস সাহেবও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলেন। ওকে নিয়ে সব হচ্ছে, আর কেউ ওকে একবার জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজনবোধ করলোনা? ওর মতামতের মূল্য নেই? ও কি হাতের পুতুল যে যার হাতে সুতা থাকবে আর ওকে যেমনভাবে চালাবে ও তেমনভাবে চলবে।
তিলোর বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সূর্য ডুবে সন্ধ্যা নেমেছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একবার চিন্তিত হয়ে পড়লো এটা ভেবে যে চাবি কোথায়? পরমুহূর্তেই মনে পড়লো চাবির দ্বায়িত্ব তুষারের ছিলো, তবে ও পাঞ্জাবির পকেটটাকে বিশ্বাস করতে না পেরে তিলোর ব্যাগেই রাখতে বলেছিলো।
তিলো ব্যাগ হাতড়ে চাবিটা পেয়ে মনে মনে ধন্যবাদও জানালো। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আর দরজা বন্ধ করলোনা। বাড়ির আলোও জ্বালালো না। নিজের রুমে অন্ধকারে চুপচাপ মূর্তির ন্যায় বসে থাকলো। কি ঘটে গেলো এতক্ষণ ওর সাথে!
নিজেদের এলাকায় ঢুকতেই নাসীরা পারভীনের ফোনে হালিম সাহেব কল করে জানালেন যে, রেজার বাড়ির থেকে তিলোর সাথে রেজার বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। কারণটা ওনারা স্পষ্ট করে বলেননি। তবে এটুকু বলা হয়েছে যে, সম্পর্কটা ওনারা আর এগোতে চান না। কথাটা শুনে নাসীরা পারভীন হয়তো এখন চিৎকার করে উঠতেন। তবে ওনি এখন তিলোকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। কথাটা মস্তিষ্কে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারলোনা।
#চলবে
পর্ব বেশি বড় না হওয়ার জন্য দুঃখিত। আজকে নানাবাড়ি থেকে ফিরে অনেক ক্লান্ত আমি। অনেকটা ঝিমুনির মাঝে টাইপ করেছি। রিচেইক করিনি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
আরেকটা কথা, অনেকেই গল্পটা ভিন্ন রকমের করতে বলছে। কি করা যায়, বলুন তো। রেজার সাথে তিলোর বিয়ে হয়ে যাক?