ভয়_আছে_পথ_হারাবার ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম] ২৮,,

0
364

#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]

২৮,,

বাড়ি ফেরার পর তিলো নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও সে খোলেনি। এদিকে নাসীরা পারভীন, ওর সন্ধ্যাকালীন নাস্তা নিয়ে কয়েকবার দরজার সামনে গিয়ে ওকে ডেকেছে। ও শুধু বলেছে, আজকে ভালো লাগছে না কোনোকিছু। ওকে বিরক্ত করতে নিষেধ করেছে পাশাপাশি। নাসীরা পারভীন এরপরও ওকে ডাকলে শেষ পর্যায়ে ওর আচরণটা আজ আবারও খানিকটা রুক্ষ হয়ে উঠেছে। নাসীরা পারভীনের তীব্র বিশ্বাস, অরিকের সাথে ওর কিছু হয়েছে। আর সেই বিশ্বাসের জেরে অরিকের উপর রাগটাও বাড়ছে। বিয়ে হয়নি এখনও, তার মাঝেই তিলোকে কষ্ট দিতে শুরু করেছে সে!

তিলো সেই সময় থেকে নিজের অবস্থান পর্যন্ত বদলায়নি। বিছানার উপর চিত হয়ে শুয়ে মাথার উপর ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানটার একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যেন ঘূর্ণন সংখ্যা গুনছে খুব মনোযোগ দিয়ে। এটাই ওর একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিলোর চোখে একবার মনে হচ্ছে ফ্যানটা খানিকটা নিচে নেমে এসেছে। আবার মনে হচ্ছে, না ঠিকই আছে। ফ্যানের মাঝখানের লাল বিন্দুটা যেন ওকে সম্মোহিত করে ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর পর চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে চুলের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, কানের পাশ ঘেঁষে চলে যাচ্ছে। সেই পানি মুছে ফেলার শক্তিটুকু বা ব্যস্ততা ওর মাঝে নেই। যেন হাত নাড়িয়ে এতোটুকু করতে ওর ভীষণ কষ্ট হবে।
তিলোর প্রশ্বাস ঘন হয়ে উঠেছে। আবারও সেই একই প্রকার অনুভূতি ওকে গ্রাস করে ফেললো যেমনটা সে অনুভব করেছিলো ফাহাদের বিয়ের সময়। তিলোর মনে পড়ছে গতবছর অনিমার সাথে কাটানো সেই রাতটার কথাগুলো।

সেদিন অনিমার ছোট ভাই আয়াশের জন্ম বার্ষিক ছিলো। আয়াশের অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার পাশাপাশি একইসময়ে জন্মদিনটা হওয়ায় আদ্রিয়ান আঙ্কেল বড় করে একটা অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত আয়াশের সাফল্যের কথা আত্মীয় স্বজনদের জানানোই মুখ্য উদ্দেশ্য। অনির বন্ধু বলতে তখন তিলোই সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলো। বাকিদের থেকে ও অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিলো অন্তর ওকে ধোঁকা দেওয়ার পর। অবশ্য অন্তরের কাছে থেকে ধোঁকাটা ও যেচে নিয়েছে। ও জানতো অন্তর একটা বখাটে ছেলে। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাই ওর প্রধান কাজ। এরপরও ও অন্তরের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এমন নয় যে অন্তর ওকে জোর করেছিলো। অনি স্বেচ্ছায় ওর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
সেরাতে তিলোর খাওয়া শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়। তিলো আনিস সাহেবকে ফোন করে ওকে নিয়ে যেতে বলার আগেই অনি ওকে একপ্রকার জোর করে সেরাতে ওর সাথে থাকতে। সারারাত জেগে মুভি দেখবে আর গল্প করবে। তিলো প্রথমে ইতস্ততা করলেও নিজেও লোভটা সামলাতে পারেনি। ও রাজি হয়ে যায়।
রাতে অনির পোশাক পড়ে ওর রুমে ওর সাথেই থেকে যায়। অনি দরজা বন্ধ করে থ্রিলার মুভি দেখতে শুরু করে দুজনে। ‘নেইলপলিশ’ মুভিটা দেখছে আর সেটা নিয়ে আলোচনা করছে। ওরা এক একজন একে অপরের প্রতিক্রিয়া নিয়েও হাসাহাসি করছে। মুভিটার একপর্যায়ে অনি বললো,
-দেখ, এর থেকেও বোঝা যায়, ভীড় সিং নাটক করছে। সে চারু হয়ে গিয়েছে। একটা মেয়ে যতো সমস্যায়ই পড়ুক কিভাবে ও উকিলের শার্টের বোতাম ধরে টেনে রেখেছে?

তিলো চোখ জোড়া ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকালো। অনি ওর প্রতিক্রিয়া দেখে বললো,
-কি হলো? ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

তিলো উবু হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
-তুই বলছিস একথা? ক্লাস সিক্সে থাকতে মেলায় ভুতের বাড়িতে ঢুকে সামনের সারির ছেলেদের কোলের উপর কে বসে পড়লো?

অনি তৎক্ষনাৎ উঠে বসে জিহ্বা কামড়ে বললো,
-জায়গা মতো ঘাই দিলি একেবারে। তোর কাছে থেকে কোনো কথা বলে সরার উপায় নেই।

-হ্যাঁ সেটাই।

বলে তিলোও হেসে দিলো। অনি হাসতে হাসতে বললো,
-এখনো মন খারাপ হলে ঘটনাটা মনে পড়লে হাসি পায়। তুই তো ছেলেটার পিঠে ধাক্কা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলি। আমি আর ফারিয়া একেবারে সামনের তিনটার কোলে। চোখ বুজে চিৎকার করছি। আর কামিনী নিজের জায়গায় বসে চিৎকার করছে। আমি ভাবছি, ভুতগুলো সেটা দেখার পরও কিভাবে ভয় দিচ্ছিলো নিজেরা না হেসে? আর জানিস, ওই ছেলেটাও সুযোগ নিয়েছিলো, আমার হাত ধরে রেখেছিলো।

তিলো এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
-তুমি সুযোগ দেবে আর সে নেবে না? এটা সম্ভব!

-তাই তো। অন্তর জানতো এটা। আসলে মানুষ যেখানে নিরাপদ মনে করে নিজেকে সেখানেই নিজেকে সপে দেয়। সেফটি ফার্স্ট। সেটা যেখান থেকে আসুক।

আরো কিছু সময় হাসাহাসির পর সিনেমা শেষ হলে অনি ফেসবুকে ঢুকে একটা ছেলের প্রোফাইল বের করে তিলোর হাতে ফোনটা দিয়ে বললো,
-তোর মনে আছে, দুমাস আগেও শফিক স্যারের ব্যাচে আমি পেছনে গিয়ে বসতাম।

তিলো ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-খেয়াল করিনি।

-হ্যাঁ বসতাম। এই ছেলেটা তার কারণ ছিলো। জানিস, একে আর তোকে নিয়ে আমি স্বপ্নও দেখেছি।

তিলো অবাক হয়ে বললো,
-তাই!!

-আমি ফারিয়াকে বলেছিও সেই স্বপ্নটা। আমি দেখেছি, আমি আর তুই একটা রেস্টরন্ট এ খেতে গিয়েছি। সেখানে ও ও ছিলো নিজের বন্ধুদের নিয়ে। আমার সাথে ওর চোখাচোখি হয়। কিন্তু তুই তখন ওকে দেখিসনি। খাওয়া শেষে বের হয়েছি। তুই আমি দুজনে দুদিকে চলে গিয়েছি। এরপর আমি আবারও কোনো একটা কারণে ফিরে এসেছি। আসলে স্বপ্ন বিধায় সবটা মনে নেই। আর সবকিছুর যুক্তিও হয়না। আমি তোকে খুঁজতে খুঁজতে ওই সেই নদীর পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছি। তখন দেখি, তুই আর ও একে অপরের অনেক কাছে। খুব কাছে। এরপরই আমার ঘুম ভেঙে যায়।

তিলোর অনির কথা শুনে শরীরে মৃদু কম্পন বয়ে গেলো। ও কোনো ছেলের এতো কাছে সজ্ঞানে। চিন্তা করেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো। তারপর আবারও জোরে হেসে দিয়ে বললো,
-কোন লেভেলের স্বপ্ন তোর!! বাস্তবে ছ্যাঁকা খেয়ে এখন স্বপ্নেও খাওয়া শুরু করলি। তোর কি জীবনে কারো সাথে সম্পর্ক স্থায়ী হবে না? স্বপ্নেও ছ্যাঁকা। অন্তত স্বপ্নে তো সংসার করতে পারতিস।

তিলো প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছে হাসতে হাসতে। অনি নাক ফুলিয়ে বললো,
-ভাব একবার! তাও তোর থেকে! তোকে সবকিছু বলে দিই বলেই বোধহয় একটা ভয় কাজ করে।

তিলো হাসি থামিয়ে বললো,
-তারপরও এই নিয়ে ভেবে চলেছিস! লাইক সিরিয়াসলি!

-জানিস ও সত্যি আমাকে ছ্যাঁকা দিয়েছে। প্রোফাইল স্ক্রল কর। দেখ, রামিসার সাথে ওর কতোগুলো ছবি! বুঝলাম, ওর গার্লফ্রেন্ড রামিসা।

-তুই কি হতাশ?

-আরেহ্ নাহ্। ওকে তো শুধু চোখে লেগেছিলো। আর কিছু না।

-তাহলে এখন বাদ দে কথাগুলো। আরেকটা মুভি প্লে কর।

-ক্যাস্ট অ্যাওয়ে দেখবি? অস্কার পাওয়া ছবি।

-দেখেছি।

-তাহলে আর কি?

-দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস। টমাস হ্যারিসের উপন্যাস অবলম্বনে। এটাও অস্কার পাওয়া।

অনির সম্মতিতে তিলো প্লে করলো সিনেমাটা। সারারাত জেগে সকাল আটটার দিকে ঘুমিয়েছে ওরা।

তিলো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো সেদিনের কথাগুলো। আজ আবারও মনে পড়লো। আজকের ঘটনাটা অনির স্বপ্নকে সত্যি করেছে। তিলো এই পর্যায়ে শব্দ করে কেঁদে দিলো। চোখে দেওয়া কাজল তো আরো আগেই লেপ্টে গিয়ে যা তা অবস্থা।

নাসীরা পারভীন অরিককে ফোন করে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিলেন। অরিক ওনাকে বলেছে যে ও কিছু জানে না তিলোর কি হয়েছে সে ব্যাপারে। কিন্তু নাসীরা পারভীন সেটা শুনলেন না। ওনার ভাষ্যমতে এখন তিলোর ভালো থাকা বা কষ্ট পাওয়া যেকোনো বিষয় শুধু এবং শুধু অরিকের উপরই নির্ভর করছে। কেননা, তিনি আজ পর্যন্ত তিলোকে ওর বন্ধুদের দ্বারা কষ্ট পেতে কখনোই দেখেননি। অনেক ছোট থাকতে পেতো, যখন ও কিন্ডারগার্টেনে পড়তো। তখন ওর গায়ের রঙের জন্য অন্যান্য বাচ্চারা ওকে অবজ্ঞা করতো। তখন ও বাড়ি ফিরে কাঁদতো। তারা কেউই ওর বন্ধু ছিলো না। আর এখন তিলো বড় হয়েছে। ওকে এমন কোনো কথা বললে ও কষ্ট পাবে না। বরং অরিক কিছু বলেছে বলে ওনি নিশ্চিত। ওনি হুমকিও দিলেন এর শেষ দেখে ছাড়বেন। তিলোর সাথে মিটমাট করে নিতে না পারলে আর তিলো স্বেচ্ছায় খুশি মনে রাজি না হলে ওনি অরিককে মেয়ে দেবেন না। অরিক ওনার ফোন কেটে দেওয়ার পর হতভম্ব হয়ে কিছু সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকে। তিলোর কি হলো হঠাৎ সেটা ও অরিককেও বলেনি। অরিক এরপর একভাবে ওকে ফোন করে। কিন্তু ওর ফোন বন্ধ।

তিলো রাতে খাওয়ার সময় হতেই নিজে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে। ও রুম থেকে বের হয়েছে দেখে, আনিস সাহেব আর নাসীরা পারভীন দ্রুত এসে ওকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে তোলে। তিলো তাদের কারো কথার জবাব না দিয়ে বরং বিরক্তিসূচক কিছু কথা বলায় ওনারা দমে যান। তিলোকে ঘাটানো বন্ধ করে দেন। তিলো চুপচাপ খেয়ে আবারও নিজের রুমে ফিরে আসে। ও যতোই রাগ করে থাকুক বা মন খারাপ হোক, ও কোনোভাবেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করতে পারে না। এটা ওর স্বকীয় একটা বৈশিষ্ট্য।

তুষার রাতে ঘুমানোর আগে একবার তিলোর রুমে আসে। তিলোর সাথে কথা বললেও তিলো খুব কমই প্রতুত্তর করে। তুষার নিজের উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় ওর চোখ পড়লো তিলোর ব্যাগের দিকে। ভেতরে চকলেটগুলোকে উঁকি দিতে দেখে তুষার উত্তেজিত হয়ে ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে তিলোর উদ্দেশ্যে বললো,
-অনি আপু দিয়েছে আজকে এগুলো? তুই তো আমার ভাগটা দিলি না।

তিলোর কানে অনি নামটা যেতেই ও নিজের ভেতর রাগের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। ওর রক্ত ধারা রাতের ফাঁকা হাইওয়ে ছেড়ে উন্মাদ উগ্র অরণ্যের রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় একভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিলো তুষারের হাতে থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
-ওর জিনিস একদম ধরবি না।

তুষার অবাক চোখে তিলোর দিকে তাকালো। এরপর আবার বললো,
-আমাকে না দিয়ে একা খাবি সব? অনি আপুকে বলবো তোর কাছে আর কখনো দেবে না।

বলে আবারও তিলোর হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিতে যেতেই তিলো ওকে একটা ধাক্কা দিলো। তুষার আতর্কিত ঝোঁকটা সামলাতে না পেরে অনেকটা পিছনে সরে কার্বাটের সাথে ধাক্কা খেলো। তিলো চিৎকার করে বললো,
-একটা কথা কতোবার বলা লাগে তোকে? ছ্যাঁচড়ামি আমার একদমই ভালো লাগে না তুষার। একটা কথা একবার বললে শুনবি৷ এগুলো কিচ্ছু ধরবি না।

তুষার আঘাত পেয়েছে তিলোর আচরণে। আগে তিলো কখনো কিছু আনলে ওকে না দিয়ে খায়নি। আনার সাথে সাথে ওর ভাগটা বুঝিয়ে দিতো। এমন না যে ওকে এগুলো খেতেই হবে। কিন্তু তারপরও একটা আকর্ষণ!
আজকে ওর হঠাৎ পরিবর্তনটায় তুষারেরও অভিমান হয়েছে। কিছু না বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

তিলো ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। হাতে ধরা ব্যাগটার ভেতর চোখ যেতেই দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেললো। সবকিছু কাল ও ফিরিয়ে দেবে অনিকে। আজকে ঘটনার আকস্মিকতায় বিষয়টা মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিলো।

তিলো ফোন অন করে রাখলো। রাতে অরিকের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। তিলো অনেকটা সময় ভেবে নিজেই ফোন করলো অরিককে। ওদের প্রণয় সম্পর্কটির পর এই প্রথম তিলো নিজে থেকে ফোন করলো অরিককে। যখন থেকে তিলো সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে তারপর।

অরিক ওর ফোনের অপেক্ষা করতে করতে সোফায় বসে ঝিমিয়ে পড়েছিলো। ধড়ফড়িয়ে উঠলো আওয়াজ কানে যেতেই। স্ক্রিনে তিলোর নাম দেখে ব্যস্ত হয়ে ফোনটা তুললো। তিলোকে কিছু বলতে না দিয়েই নিজের উদগ্রীবতা প্রকাশ করলো অরিক। তিলো ওর ব্যস্ততা বুঝতে পেরে হেসে দিলো। এতোক্ষণের মনখারাপ হঠাৎই ভালো হয়ে যেতে শুরু করেছে। অরিক একভাবে কিছু কথা বলে যখন তিলোর কোনো সাড়া পেলো না। অরিক থমকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-তিল! তুমি কি ঠিক আছো?

তিলো মৃদু হেসে বললো,
-হ্যাঁ। আমি ঠিক আছি। একদম ঠিক আছি।

-ছোটমা তখন ওভাবে কথা বলছিলেন কেন? তুমি কি করেছো? আমি কিছু করেছি কি?

তিলো থমকে গেলো কিছু মূহুর্তের জন্য। ওর সামান্য এতোটুকু প্রতিক্রিয়ায় ওদিকে এতোটা গড়িয়ে গিয়েছে সেটা ও আন্দাজ করতে পারেনি। তিলো স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
-তুমি কিছুই করোনি। আর এমনিই। একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম তাই আরকি।

-দুশ্চিন্তা!! কি নিয়ে? দেখো, একদম টেনশন নিজের ভেতর চেপে রাখবে না। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।

তিলো বামহাতের সামান্য বর্ধিত নখগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
-এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। একদম নেই। আমার চিন্তাগুলো সব বিদায় নিয়েছে। তুমি তো আছো।

অরিক ওর কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বললো,
-আমি থাকলে তোমার দুশ্চিন্তা বিদায় নিলো কি করে?

তিলো কন্ঠে উৎফুল্লতা এনে বললো,
-ম্যাজিক। এটা সম্পূর্ণ যাদু। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি অরিক।

-হ্যাঁ। তো?

-তো কিছু না। কাল দেখা করবে?

অরিকও তিলোত্তমার হঠাৎ প্রস্তাবিত প্রকল্পে নিজের ভেতর খুশির আমেজ অনুভব করলো। ও সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলো।

-কোথায় করতে চাও? বলো।

-তোমার ফ্ল্যাটেই।

অরিক তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না ওর কথায়। ও কেবল সম্মতি দিলো।
তিলো পূর্ণ আত্মতৃপ্তির সাথে ফোন কেটে দিলো। ও নিশ্চিত, ও বিশ্বাস করে, যে যাই বলুক বা যেই আসার চেষ্টা করুক অরিকের জীবনে। অরিক ওকে ছাড়বে না। তিলোর এখন নিজেকেই বোকা মনে হচ্ছে। আগেই অরিকের সাথে কথা বললে ওকে এতোক্ষণ মনোকষ্টে ভুগতে হতোনা। অরিকের কন্ঠে ওর জন্য বিশেষ কিছু আছে। যেটা ওর অশান্ত মনটাকে শান্ত করার অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here