ভয়_আছে_পথ_হারাবার ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম] ৩০,,

0
397

#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]

৩০,,

তিলো অনিমার বাড়ির দরজায় বেল বাজিয়ে দাঁড়ায়নি। আয়াশ যতক্ষণে দরজা খুলেছে, ততক্ষণে তিলো ওখানে ছিলোনা। আয়াশ আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে দরজা আটকানোর আগে নিচে পড়ে থাকা ব্যাগটার দিকে চোখ পড়তেই ওর ভ্রু যুগল আপনাআপনি কাছাকাছি চলে আসে। ও ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে চিনতে একদমই অসুবিধা হয়না এটা কিসের ব্যাগ।
আয়াশ ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে ব্যাগটা তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। অনি এই মূহুর্তে বাড়িতে নেই যে ওকে এগুলো ফিরিয়ে দিয়ে আয়াশ নিজের কৌতুহল মেটাতে পারে।

রাতে অনিমা তিলকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলো। কিন্তু তিলো সেগুলো রিসিভ করেনি।

পরদিন ভার্সিটিতে গিয়েও তিলো অনির সাথে কোনো কথা বলেনি। অনিমা কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তিলোর ওকে এড়িয়ে যাওয়ায় ও নিজের অবস্থান বুঝে নিয়েছে। একবার ক্লাসের মাঝে হাত টেনে ধরে আদুরে ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করেছিলো,
-এই তিল, কথা বলছিস না কেন? রাগ করেছিস? দেখ, পরশু কেবল আমার মনের কথাগুলো তোকে বলেছিলাম। তোকেই তো সব বলি। এতে রাগ করছিস কেন?

তিলো অনির সে কথারও কোনো প্রত্যুত্তর করেনি। ও এই বিষয়টাকেও এতোটা হালকাভাবে নিচ্ছে, ভেবেই তিলোর শরীর রাগে রি রি করে উঠলো।
অনি আরো কিছু বলতো। তবে তিলোর থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে বললো না।

কিছুক্ষণ পর যখন ওরা মাঠে এসে বসেছে তখন অনি আবারও বললো,
-আজকে আব্বু অরিক স্যারের বাবার সাথে দেখা করতে যাবে।

কথাটা তিলোর কানে গেলেও তিলো কিছু বললো না। আবার ওদের ভেতরকার মনোমালিন্যতা ওদের বাকি বন্ধুদের চোখ এড়িয়ে যায়নি। জিজ্ঞাসা করেও সদুত্তর পায়নি তারা৷ তবে অনির শেষ কথাটা রিয়ার শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো অনির দিকে। সে অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করলো,
-তোর বাবা স্যারের বাবার কাছে যাবেন কেন?

অনি ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বললো,
-বিয়ের কথা বলতে।

এবার প্রত্যেকেই ওর দিকে তাকালো। তিলো কিছু না বলে উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। তৌকির আর আহান ওকে পেছন থেকে ডাকলো। কিন্তু তিলো থামলো না। ওর কান্না পাচ্ছে। ইতিমধ্যে চোখজোড়া ভরে উঠেছে পানিতে। আপন মানুষগুলোই ওর বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে কেন? তিলো ভেবেও উত্তর পায়না। তুলি নিজের চরিত্র দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিশ্বাস করতে নেই সবাইকে। আজকে আবার অনিও। ও কি বুঝেও না বোঝার ভান করে বসে আছে। তিলো এটাও জানে না। ও আর পরবর্তী ক্লাসগুলো করবে না। বেরিয়ে গেলো ভার্সিটি থেকে।

অনির কথা শুনে সকলেই অবাক হয়েছে। রিপা অবাক কন্ঠেই বললো,
-তিলের সাথে তো বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাহলে তুই মাঝখান থেকে উদয় হলি কেন?

অনি হাত দুটো পিছনে নিয়ে শরীরের ভর পেছনে দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে বললো,
-তিলো তো পরিবারের ঠিক করে দেওয়া বলে রাজি হয়েছে। তাহলে এই বিয়ে ভেঙে গেলে সমস্যা কোথায়?

মীরা অনির মাথায় চাটি মেরে বললো,
-তাতে কি? ঠিক তো হয়েছে। একটা সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া কতো বড় অন্যায় তোর ধারণা আছে! পাগল নাকি তুই!

অনি কিছু বলার আগে রিয়া বললো,
-দেখ অনি, পাগলামি করিস না। আমি বুঝতে পারছি না, আঙ্কেল কি করে সায় দিচ্ছেন এতে? তিলো কষ্ট পেয়েছে, বুঝতে পারছিস না? ও মন থেকে এই বিয়ে করতে চায়।

অনি মুখ থেকে ‘চঁ’ জাতীয় শব্দ করে বললো,
-ওরও বোঝা উচিত, কারো অনুভূতিকে দাম দিতে হয়। আরেহ্, তোরা বুঝিস না কেন, ও কেবল পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে রাজি। আমি ভালোবাসি তাকে। রিয়া, তুই কেন আহানের সাথে পালিয়ে গেলি তোর বাবা তোর জন্য ভালো একটা ছেলে ঠিক করার পরও?

ওদের মধ্যে বিতর্ক চলতেই থাকলো যতক্ষণ না ওরা নিজেদের শব্দভাণ্ডার শূন্য করে নিজেদের ক্লান্ত করে তুলেছে। তবে সে বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিজয়ী কে, কেউই নিশ্চিত নয়। তারা নিজেদের অবস্থানে নিজেদের যুক্তিসমেত যথেষ্ট পাকাপোক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।

তিলোকে ওর বন্ধুরাও ফোন করেছে। কিন্তু সে তাদের ফোনও রিসিভ করেনি।
বিকালে ছাদে গিয়ে তিলো তুলিকে আগে থেকেই সেখানে ইশানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়। ইশানকে কোলে নিয়ে সে ওর সাথে আহ্লাদী সুরে কথা বলছে আর বিভিন্ন জিনিস চেনানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিলো এগিয়ে যেতেই শুনতে পেলো তুলি বলছে,
-আমার আব্বুটা দেখো, এটা হলো একটা গাছ। এটা কাঁঠাল গাছ। পাতার রং দেখো। এটা সবুজ। দেখো, ওটা একটা কাক।

তিলো হেসে দিলো তুলির বাচ্চামিতে ভরপুর কথাগুলো শুনে। ইশান এখনো কত ছোট! তাই ওর সাথে এভাবে কথা বলে চলেছে তুলি! আবার কিছুক্ষণ পরপর তুলি ওর পেটে মুখ গুঁজে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আর তাতে ইশান দাঁতহীন গালটা চওড়া করে শব্দ করে হেসে কুটিকুটি। ধবধবে ফর্সা নাদুসনুদুস বাচ্চাটাকে দেখলেই তিলোর ইচ্ছা করে চটকে খেয়ে ফেলবে। নিজেকে রাক্ষুসী মনে হয় তখন।
আসলে মানুষ অতিরিক্ত সুন্দর কিছু সহ্য করতে পারে না। সুন্দর কিছু দেখলে আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার দুটির অস্বাভাবিক ক্ষরণের ফলে সেই বস্তুটাকে মানুষ ধ্বংস করতে চায়। এর প্রভাব সিরিয়াল কিলারদের মাঝে মাত্রাতিরিক্ত থাকলেও প্রতিটা মানুষের মাঝেই থাকে। যে কারণে সুন্দর ফুল ফুটতে দেখলে আমরা ছিঁড়ে ফেলি। গোলগাল বাচ্চাদের জোরে গাল টিপে ধরি। একে ‘Cute Aggression’ বা ‘Playful Aggression’ বলে। ডোপামিন আসলে বিভৎস রকমের একটা নিউরোট্রান্সমিটার (আমার মতে)। ডোপামিন, নরপাইফিন এবং এড্রেনালিন হরমোন নিঃসরণের ফলে ক্রাশ বা ভালোবাসার মানুষটা কাছে আসলে হৃৎস্পন্দনের হার আপনাআপনি বৃদ্ধি পায়। অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
ভালোবাসার মানুষটার পাশে ঘুমালে আমাদের ডিপ্রেশন হ্রাস পায়। এই ডোপামিন এবং সেরোটোনিন ক্ষরিত হয়, যা আমাদের মন ভালো রাখে। আবার ডোপামিন, মেলাটোনিন হরমোনে রূপান্তরিত হয়, যা আমাদের ঘুমের সাইকেলে প্রভাব বিস্তার করে। আমরা দ্রুত এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি।

তিলো মনুষ্য প্রজাতির উর্ধ্বে নয়। ইশানকে দেখলেই ওকে আদর করতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে এটা এতো বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যায় যে, ইশান অবশেষে কেঁদে দেয়। ওর গাল হাত পা লাল হয়ে যায়। নাসীরা পারভীন এর আগে দুবার তিলোকে বকেছেন এই নিয়ে। তাতে তিলোর কি? ও ইশানকে হাতের কাছে পেলে নিজেকে সামলাতে পারে না। নিজের গালটাও আপনাআপনি আদুরে ভাব প্রকাশ করে।

তিলো তুলির কোল থেকে ইশানকে নিয়ে ওর গালটা টিপে ধরে জোরে একটা চুমু বসিয়ে দিলো। ইশান হাত নাড়িয়ে নিজের আনন্দ প্রকাশ করতে তিলোর মুখ খামচে ধরলো। তিলো তাতে বিরক্ত না হয়ে আরো বেশি করে ওকে আদর করতে ব্যস্ত। তুলি কেবল ওদের দেখছে আর মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলছে।

কিছুসময় নিজের আবেগ নিয়ে খেলা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিলো তুলিকে জিজ্ঞাসা করলো,
-তোর কাহিনি আমাকে বল তো।

তুলি ভ্রু কুঁচকে বললো,
-কোন কাহিনি?

-তোর নতুন প্রেমের কাহিনি। যার জন্য এখন এই পিচ্চি বাপ ছাড়া।

তুলির মুখটা সাথে সাথেই ঘনকালো মেঘে গোমড়া হয়ে গেলো। তিলো আবারও বললো,
-কি রে বল।

-রাতে আমার রুমে আসিস বলবো। এখন আম্মা বা কেউ শুনে নিলে বিষয়টা বিশ্রী হয়ে যাবে। ইশানকে দে। ওর খাওয়ার সময় হয়েছে।

তিলো কিছু না বলে ইশানকে তুলির কোলে দিয়ে দিলো। তুলি ওকে কোলে নিয়ে নিচে চলে এলো। তিলোও কিছু সময় কাটিয়ে নিচে এলো।

সন্ধ্যায় তিলো কেবল পড়তে বসার পরই ওকে তৌকির ফোন করে জানালো আহান অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। এখন সিটি হসপিটালে আছে। অবস্থা ভালো না। সংবাদটায় তিলো ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেলো। আনিস সাহেব সবে বাড়ি ফিরেছেন। তিলো কাউকে কোনো জবাবদিহিতার প্রয়োজনবোধ করলোনা। আনিস সাহেবকে কেবল বললো ওর সাথে যেতে। আনিস সাহেব সারাদিনের ক্লান্তিতে ইচ্ছা না থাকলেও ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

#চলবে

*আমি জানি, আমি নিয়মিত গল্প না দিয়ে বিরক্ত করি। তবে আমি নিরুপায়। পরীক্ষা হবে বিধায় পড়াশোনার চাপ খুব বেড়েছে। পাশাপাশি অ্যাসাইনমেন্ট। এক সপ্তাহেরটা জমা দিয়ে বাড়ি ফেরার আগেই আরেক সপ্তাহেরটা প্রকাশ করা হয়। আশা করি, আমার অবস্থান থেকে ভেবে দেখবেন।

*অনেকে বলছেন, এটা রোবটের প্রেমকাহিনী মনে হচ্ছে। একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন, ওদের পরিবার যথেষ্ট ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলে। আর তাতে ওরা যেটুকু করছে, সেটুকুই বাড়াবাড়ি। বিয়ের আগে লুতুপুতু প্রেম লেখা সম্ভব না 😒। দুঃখিত, কারো অনুভূতিকে আঘাত করে থাকলে।

*ওদের কথাগুলো সাহিত্যের মতো শোনাচ্ছিলো। হয়তোবা। আমি জানি না আসলে কি হয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সেভাবেই কথা বলে থাকি অনেক সময়। বিশেষ করে নিজের সাথে শলাপরামর্শ করতে।

*সিক্রেট বলি? অনির স্বপ্নটা না সত্যি। মানে, আমারই বেস্ট ফ্রেন্ড এমন স্বপ্ন দেখেছে। মেলার ঘটনাটাও সত্যি। সেরাতে নেলপলিশ ফিল্মটা দেখার সময় ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা সত্যি। কেবল শেষ মুভি আর দেখা হয়নি৷ ও সত্যিই একটা ছেলের থেকে আঘাত পেয়েছে। তবে অনির মতো না। ছেলেটা বিদেশে চলে গিয়েছে। আর ও কিন্তু খুবই ভালো একটা মেয়ে। অনেক বেশি গুণী আর ভালো মনের। এখনো বলে, সে ফিরে আসলে ও চোখ বুজে তাকে মেনে নেবে। বেচারি, স্বপ্নেও ছ্যাঁকা খায়😂।
ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করলাম😒। অবচেতন উত্তেজনা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here