চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৪৯

0
333

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৯
১৩৭.
চালের গুড়ার রুটি সাথে গরুর গোশত স্বাদ অসাধারণ।অর্পণের খুব পচ্ছন্দের।তাই চারটা টা রুটি এবং বাটির অর্ধেক গরুর গোস্ত এর সাথে খেয়ে নিয়েছেন।বাকিটা পুতুলের জন্য রেখে গেছে।পুতুল,চুপচাপ দেখে মুচকি হাসি দিলো।আজ পবিত্র শবেবরাত।আল্লাহ নাম নিয়ে বাহিরে সব পুরুষরা গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে গেছে।আর মহিলা সবাই বাড়িতে ওযু করে নামাজ দাঁড়িয়ে গেলো।

শবে বরাত হলো মুসলমানদের জীবনে অত্যন্ত ফযিলতপুর্ন একটি উৎসব।এ রাত ক্ষমা লাভের বা নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার একটি রাত।এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ডাকে সারা দিতে চতুর্থ আসমানে নেমে আসেন।শবে বরাত মূলত হিজরী সালের শাবান মাসের পনের তারিখে।এটি মুলত ইসলামি বছরের অষ্টম মাস।সারা বছরে একবার মুসলমানদের মাঝে এই উৎসবটি পালিত হয়। শবে বরাতের মুসলিমরা দিনের রোযা পালন করে এবং রাতে সারারাত ধরে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে। যেহেতু শবে বরাত মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত সেহেতু সবার উচিত এ রাত টি আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেওয়া। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনের সব ভুল গুলো ক্ষমা করে দিয়ে আমাদেরকে তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করে দিবেন।

নামাজ শেষ হতেই রাতের একটার সময় অর্পন,স্বাধীন,মিলন,সাজু,বাড়িতে পা রাখে।রিফাত এখনো সুস্থ হয়নি।তবে ঘরে শুয়ে সে-ও হালকা জিকির এবং দোয়া,দূরদ পাঠ করতে থাকে।স্বামী ঘরে পা রাখতেই পুতুল নামাজের সালাম শেষ করে মোনাজাতে দুই হাত তোলে।তার বিরবির করে কথাবলার চেষ্টা সবটাই নজরে পড়ে।পুতুল জানেও না।তার ডানে তার স্বামী দাঁড়িয়ে তাঁকে অনেকখন পরক্ষ করছে।

সকালে কাক ডাকা ভোরের জেগেছে অর্পণ।ফজরের নামাজ পড়ে এসে মাঠে গেছে লুঙ্গি পরে।অনেকদিন হলো অভ্যাস নেই।আবার নতুন করে লুঙ্গি পড়ায় হিমশিম খাচ্ছে।তবুও আজ ক্ষেতে নামল।সেখানে স্বাধীন ভুট্টা ক্ষেতে দাঁড়িয়ে গরুর জন্য ঘাস কাটছে।অর্পনকে এখানে আশা করেননি।এই ছেলে এখানে কি মনে করে?স্বাধীন ঘাস কা*টা বন্ধ করে এগিয়ে আসে।

-;কিছু বলবে তুমি।

অর্পণ লুঙ্গিটা হাঁটু অবধি টেনে কোমড়ে গিট্টু মেরে কাচি নিয়ে সে-ও ঘাস কা*টতে লাগল।
অর্পণ চুপ থাকায়।স্বাধীন চুপ করে কাজে মনযোগ দিলো।কাজের এক ফাঁকে অর্পণ বলল,

আমি পুতুলকে নিয়ে লন্ডনে যেতে চাই।ওর ডাক্তারি পরীক্ষা জন্য।এবং আরেকটি কারণ আছে?

কি কারণ?

পুতুল কানে শুনতে পায়।কিন্তু মুখে বলতে পারে না।আপনি আপনার মতো করে অনেক চেষ্টা করেছেন।এবার আমি তার স্বামী হিসেবে আরেকটিবার শেষ চেষ্টা করতে চাই।যদি আল্লাহ তায়া’লা রহম করেন।সবটা ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ।

অর্পণের কথায় স্বাধীনের হাত থেমেছে।ওর দিকে তাকিয়ে রয়।মেয়েটা নিজের পরিচয় গড়ুক তাতে আপত্তি নেই।কিন্তু পুতুল কি কোনোদিন কথা বলতে পারবে?ওকে আগেই আশা দেওয়া ঠিক হবে?পরে যখন ভালো কিছু না হবে।ওর মন ভেঙে যাবে।ওহ কষ্ট পাবে।

অর্পণ ঘাস কাটতে কাটতে আত্ম বিশ্বাসের সাথে বলল।কিছু হবে না।বরং সবকিছু ঠিক হবে।আমার ওপর ভরসা রাখুন।

সেটাই তোও ভয়ের কারণ!আমি তোমাকে ভরসা করব কি করে?তুমি তোও তোমার ছোট্ট মামার আদরের ভাগ্নে।

স্বাধীনের কথায় অর্পণ এর হাত কয়েক সেকেন্ড জন্য থামালেও আবার কাজ করতে করতে বলল,

সে সম্পর্কে আমার মামা হলেও আমি তাকে মামা হিসেবে মানি না।যে অন্যের ক্ষতি করে আনন্দ পায়।সে কখনোই ভালো মানুষ হতে পারে না।যার একদিন পরের ক্ষতি করতে হাত কাপেঁ নিই।সে নিজের পরিবারকে কতটা ভালো রাখবে।হ্যা,আমি মানছি।আমার শৈশব একটু অন্য রকম কে*টেছে!আমি আর দশটা বাচ্চাদের মতো নই।একটু দূরন্ত এবং চটপটে ছিলাম।ভুলভাল কাজ কর্ম যেমন করতাম।তেমনই আব্বু হাতে খুব বকা এবং মা’র খেতাম।সময়ের সাথে সেসব বদলেছে।আমি আর ছোট্ট নেই।এখন বড় হয়েছি।দায়িত্ব কি? সেটা বুঝতে শিখেছি।এখন মা,বাবার পাশাপাশি আমার একটা মিষ্টি বউ আছে।যার ভালো থাকাতেই আমার স্বস্তি।আমার অন্য রকম শান্তি।তারজন্য বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা মানেটাকে।তার ছোঁয়া আমার এই আমিটাকে বদলে নিয়েছি।বাকি যে বদ মেজাজ রয়েছে সেটা তার সঙ্গপর্ণে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

আমি দুই,একদিনের মধ্যে আমার এবং পুতুলের জন্য পার্সপোট তৈরি করতে কাগজপত্র অফিসে জমা দিতে যাব।পার্সপোট দ্রুত তৈরি করা জন্য বলব।তারা আজেন্ট পনেরো দিনের মধ্যে করে দিবে।অর্পণ হাতের কাজ শেষ করে ভ্যানগাড়িতে সবটা তুলে দিলো।লুঙ্গির গিট্টু খুলে নামিয়ে নিলো।চললাম।

কল চাপার শব্দে পুতুল ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি দিতেই দেখতে পায়।অর্পণের ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে।মনে হয় রোদের মধ্যে ছিল।পুতুল হাতে করে গামছা নিয়ে এগিয়ে যায়।অর্পন হাত মুখ ধুয়ে নিতেই পুতুলকে সামনে দেখতে পায়।গামছাটা এগিয়ে দিতেই চুপচাপ নিয়ে সেটা দিয়ে মুখ এবং হাত,পা মুছতে লাগল।

১৩৮.
মিলন তুমি বল তোও বড় হয়ে কি হতে চাও?

স্যার,আমি বড় হয়ে বিয়ে করতে চাই?

কি?

হ্যা,স্যার।আমার মা,বাবার জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ আনতে চাই।

আমি বিয়ের কথা বলিনি।বলছি,বড় হয়ে কি হতে চাও।মানে পুলিশ,ডাক্তার,ইন্জিনিয়ারি আরকি?

কেনো স্যার?আমি ওগুলো হব কেন?পুলিশ হলে তোও পাবলিককে বিনা কারণে মে*রে মে*রে জেলে দিবো।এসব ফালতু কাজে হাত চুলকায় বেশি।আর পাবলিক আমায় এসবের জন্য ডিটারজেন্ট পাউডার ছাড়া ধুয়ে দিবে।আর যদি ডাক্তার হতে যাই।একবার ভাবুনতো,রোগীর মুখ বন্ধ।আমার হাত চলবে বেশি।একশ বিশটা সুই লাগাবো।সেটা কোথায় আর কোথায় ফেলবো আমি নিজেই জানিনা।যার ওপর সুঁইয়ের বর্ষণ চলবে।সে না পারবে কাউকে বলতে আর না পারবে দেখাতে।এবার ভাবুন কোথায় কোথায় পড়বে?আর ইন্জিনিয়ারিং পড়লে অটো পাশের মতো উল্টো বিল্ডিং বানাবো।যার না থাকবে দরজা আর না থাকবে সিঁড়ি।

তাহলে তুমি বিয়ে করবে?

হ্যাঁ,অবশ্যই করব।

বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি?

কেন,আমি যা খাব তাই খাবে।

আরে বাবা,তুমি এখন তোমার বাবার টাকায় খাচ্ছো,পড়ছো,ঘুমাচ্ছ।তাঁকে কি করবে?

সে যেহেতু আমার বউ হবে।তাহলে সে-ও আমার মতো আমার বাবা-র টাকায় খাবে,পড়বে,ঘুমাবে।

আরে,আমি বলতে চাইছি।তুমি নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে তারপরে বিয়ে কর?

কেনো?স্যার,আমি তোও আমার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।আপনার পায়ে ওপর তোও দাড়াইনি।তাহলে নিজের পায়ে ওপর দাঁড়িয়ে থাকার কথা আসছে কেন?

এই ছেলে বড্ড বেশি কথা বলো।বেয়াদব।যা-ও বাহিরে গিয়ে কান ধরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকো।

যা বাবা আমি আবার কি করলাম।আজকাল দেখছি ভালো কথার দাম নেই।দূর যাতার মাথা।

মিলন বিরবির করে চলে যেতেই স্যার আস্তে আস্তে ব’লে উঠল,

সুখে আছো, সুখেই থাকো!
ভু’তের কাছে যাওয়ার দরকার নাই,কি”ল খা’বি।

শাফকাত খান বাংলাদেশে আসছে দুইদিন হলো।বউ,ছেলে,মেয়ে বিদেশে রেখে দেশের মাটিতে ফিরেছে।তার আদরের ভাগ্নের খবর নিতে রুহিতপুরে মাটিতে হক সাহেবের বাড়িতে পা রাখে।পুতুল তখন পুকুর পাড়ে বসে গোসল করার জন্য গায়ে সাবান মাখছে।
এমন সময় পিছন থেকে কেউ তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই চমকে উঠে।রাগে শরীর কাঁপতে থাকে।পিছনে মানুষটিকে ঘুরেই ঠাসস করে থা*প্পড় মেরে বসে।এইদিকে পুতুলের সাথে একটু দুষ্টুমি করতে গিয়ে বউয়ের হাতে থাপ্পড় খাবে।এটা তার কল্পনাতে ছিল না।গালে হাত দিয়ে উজবুক মতো তাকিয়ে বলল,

বউ তুমি আমাকে মারতে পারলা।তোমার দশটা না পাঁচটা না মাত্র একটা জামাই।তার ওপর থাপ্পড় মেরে দিলে।এটাতো পুরুষ নির্যাতন হলো।হায় হায়।অর্পণ শেষমেষ বউয়ের হাতের মা’র খেলি।আমি দেখি সবকিছুতে অলরাউন্ডার হয়ে খেলাম।বউয়ের হাতে কিল,ঘুষি,খামচি,জুতার বারি,শেষে থাপ্পড়।আহারে আমি এই দুঃখ কথায় রাখব।বউ শুধু কথায় কথায় রাগ,বকাঝকা ছাড়ে।একটু আদর করে ভালোবেসে কাছে টানে না।ছেহহ শালা জীবনটা আমার গেলো বউয়ের বিরহে।

এইদিকে রাগের বসে না দেখেই থাপ্পড় মেরে বসেছে পুতুল।যখন দেখল এটা তার স্বামী তখন মুখে অলরেডি হাত চলে গেছে।চোখ পিটপিট করে লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও লাভ হলো না।জামাই তাঁকে ঠিকঠাক কথা শুনিয়ে বিস্মিত করে দিলো।ইস কি বিচ্ছিরী কান্ড ঘটে গেলো?

পুতুল কোনো দিশা না পেয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দিতে নিলেই অর্পন পিছন থেকে হাত টান মা’রে।এক টানে অর্পনের বুকের মধ্যে এসে পরে।

বউ শুধু পালাই পালাই করে।কিন্তু আজ ছাড়ছি না।

রেডি ওয়ান,টু,থ্রি।অর্পন,পুতুলকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে।হঠাৎ লাফিয়ে পড়তে পুতুল অর্পনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।পানির মধ্যে থেকে দু’জনে মাথা তুলতেই পুতুলের নাকে,মুখে পানি যেতেই কাশি উঠে।
রাগী চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রয়।আর অর্পন মিষ্টি হেঁসে বউয়ের কপালে চুমু বসিয়ে দেয়।বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে খালি গলায় স্বর তুলতে তুলতে কানে হাত রাখে।

লক্ষী সোনা রাগ করে না একটু হাসো প্লিজ
ভাল্লাগে না আর হবে না করছি যে প্রমিস।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here