#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৩
জাহিন আর অয়ন্তি এসে পৌঁছাল আহমেদ ভিলাতে। আহমেদ ভিলার চারদিকে লাইটিং করা। অয়ন্তি গাড়ি থেকে নেমে চারপাশটা নজর বুলিয়ে নেয়। সারা বাড়ি মানুষে গমগম করছে। জাহিন গাড়ি পার্ক করে অয়ন্তির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে।
“চলুন ভেতরে চলুন।”
অয়ন্তি আস্তে ধীরে জাহিনের হাঁটার সাথে তালে তাল মিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু সামনের দিক থেকে দৌঁড়ে একটা ছেলে আসছে তাদের দিকে। জাহিন ভ্রু কুঁচকে সেটা দেখে সাথে সাথে নিজের শক্ত ডান হাতটা অয়ন্তির কাঁধে চেপে ধরে নিজের বাহুডোরে নিয়ে আসে। আকস্মিক এমনটা হওয়াতে অয়ন্তি হতবাক হয়ে যায়। জাহিনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বোঝার চেষ্টা করছে লোকটার হলোটা কি হঠাৎ করে? জাহিন অয়ন্তির অবাক করা চাওনি দেখে সাথে সাথে অয়ন্তিকে ছেড়ে দিয়ে গলা খাকারি দিয়ে চারপাশটায় নজর বুলিয়ে বলে।
“সরি এভাবে টান দেওয়ার জন্য আসলে একটা ছেলে আপনার পাশ দিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছিল। যদি টান না দিতাম আপনাকে তাহলে হয়ত কাঁধে ব্যথা পেতেন।”
অয়ন্তি মৃদু হাসল জাহিনের কথা শুনে। জাহিন এত চিন্তা করে তার জন্য ভাবা যায়। অয়ন্তির হাসি দেখে জাহিন নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে।
“কি হলো হাসছেন কেন?”
“এমনি চলুন আপনার বন্ধু হয়ত আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
অয়ন্তি সামনের দিকে হাঁটা ধরল। জাহিন মুখ দিয়ে “চ” বর্গীয় শব্দ উচ্চারণ করে নাক ফুলিয়ে বিরস গলায়, “স্টুপিড বয়।”
বলেই হাঁটা ধরল সামনের দিকে। অয়ন্তি আর জাহিন ভেতরে ঢুকতেই নেহাল তাদেরকে দূর থেকে দেখে দৌঁড়ে এসে জাহিনকে জাপটে জড়িয়ে ধরল। এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য জাহিন নিজের ঢাল সামলাতে না পেরে দু কদম পিছিয়ে যায়। নেহাল জাহিনকে ছেড়ে দিয়ে বলে।
“এতক্ষণ লাগল আসতে তোর কি এমন রাজ কাজ করছিলি তুই যে এত দেরি হল? ও হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি তো আবার নেতা সাহেব। নেতাগিরি করতে করতে আপনার দিন যায় যদিও বা তুই রাজনীতির “র” টাও জানিস না। আমি যদি রাজনীতি করতাম তাহলে দেখিয়ে দিতাম আমি কি কি করতে পারি।”
জাহিন নিরবে বন্ধুর সমস্ত কথা শুনে যাচ্ছে। আর নেহাল কথা বলেই যাচ্ছে। থামার নামেই নেই। জাহিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অয়ন্তি হা হয়ে তাকিয়ে আছে নেহালের দিকে। একটা লোক এত কথা বলে কিভাবে? বুঝাই যাচ্ছে এই লোক পুরো বাচালের বাচাল। জাহিনের পুরো উল্টো নেহাল। এই লোকের সাথে কি করে জাহিনের মতো গোমড়া মুখোর বন্ধুত্ব হলো এটা এখন অয়ন্তির ভাবনা।
অবশেষে নেহালের বকবকানি বন্ধ হল। জাহিন মজা করে বলে, “বকবক করে তো নিজেকে নেহাল থেকে বেহাল বানিয়ে ফেলবি এবার থাম ভাই। আমি না হয় তোর বকবকানিতে অবস্থা কিন্তু আমার পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে সে তোর বকবকানিতে অভ্যস্ত নয়।”
নেহাল জাহিনের পাশে থাকা অয়ন্তির দিকে তাকাল। বন্ধুকে ঝারি দিতে ব্যস্ত থাকার জন্য নেহাল এতক্ষণ খেয়াল করে নি অয়ন্তিকে। অয়ন্তি মুচকি হাসল। নেহালও তার বিপরীতে হেসে জাহিনের পেটের সাইডে খোঁচা মেরে বলল, “যাক তাহলে তুই ভাবিকে নিয়ে আসলি ভেবেছিলাম আনবি না হয়ত ভাবিকে। চল সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য। ভাবি চলুন।”
নেহাল জাহিনের কাঁধ জড়িয়ে ধরে কৌতুকের গলায় বলে, “তা হলে শেষমেষ বিয়েটা করলি তুই। সেটাও আবার কত্ত কাহিণী করে।”
জাহিন নেহালের কথায় নিরুত্তর রইল। এই ছেলের সাথে কথা বললেই উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করে দেব। তাই শ্রেয় হচ্ছে ওর কথা চুপচাপ গিলে ফেলা।
জাহিন তার বন্ধু মহলের মাঝে আসতেই সবাই উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে উঠে বিশেষ করে অয়ন্তিকে জাহিনের সাথে দেখে। সবার সাথে এক এক করে জাহিন অয়ন্তিকে পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই অয়ন্তির সাথে কুশল বিনিময় করল। নেহালের বউ রইমা অয়ন্তিকে নিজের সাথে নিয়ে যায় এত গুলা বেডা মানুষের সাথে থাকার কোনো মানেই হয় না।
_______
অনুষ্টান শেষের পথে এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে। জাহিন আর তার বন্ধুরা জাহিনকে ঘিরে কাঁকড়া মতো চিপে ধরেছে। জাহিন সবার মুখের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে বলে।
“কি হয়েছে?”
মুরাদ বলল, “হয়েছে তো অনেক কিছুই। এখন যা যা হয়েছে তুই সব আমাদের খোলসা করে বলে দে।”
জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি বলব আমি?”
নেহাল সোফার হাতলে বসে জাহিনের কাঁধে চাপড় মারতে মারতে বলে, “তোর বিড়াল মরার কাহিণী বল?”
মিরাজ উত্তেজিত গলায় বলে, “ওই জাহিন তুই কি সত্যি বিড়াল মেরেছিস?”
নেহাল মিরাজের কথা চিনিয়ে নিয়ে বলে, “আরে মেরেছে মেরেছে ওর বা হাতের পাশে দেখলাম তো খামচির দাগ এটা নিশ্চয়ই ভাবির নখের খামচির দাগ তাই না জাহিন।”
জাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে নেহালের দিকে তাকাল। নেহাল দুুষ্টু হেসে দু ভ্রু নাচাতে শুরু করল। জাহিন যথেষ্ট সতর্কে ছিল যাতে করে তার এই দাগ নেহাল না দেখতে পারে তার জন্য শার্টের হাতা পর্যন্ত কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে নি। তবে একবার করেছিল হাত ক্লিন করার সময় তখনই হয়ত নেহাল কোনো ভাবে দেখে নিয়েছে। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। এবার এই খামচির দাগ নিয়ে সবাই পিএইচডি করা শুরু করে দিবে। মিরাজ নেহালের কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে।
“তাই নাকি আমাদের নিরামিষ জাহিন এত জলদি বিড়াল মেরে দিল।”
জাহিন উচ্চ বাক্যে বলল, “আরে তোরা ভুল ভাবছিস।”
নেহাল আহত গলায় বলে, “তার মানে কিচ্ছু হয় নি।”
জাহিন দাঁতে দাঁত চেপে নেহালের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে, “না।”
“এটা কোনো কথা বললি তুই জাহিন? আমার বন্ধু হয়ে তুই এতটা পিছিয়ে কি করে যেতে পারলি। আমাকে দেখে শিখ ব্যাটা বিয়ের নয় মাসের মাথায় তোর ভাবিকে একটা বাচ্চা গিফট করে দিলাম তার ছোট্ট পেটটাতে।”
জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “এই নয়টা মাস কিন্তু অনেকটা সময় তাই বেশি ভাব নিস না।”
“তা ঠিক কিন্তু দেখ আমাদের বন্ধু মহলে কে এমন বীরপুরুষ যে নয় মাসের মাথায় এমন একটা বীরত্বের কাজ করতে পেরেছে।”
সুমন কন্ঠে ক্রোধ এনে বলে, “এই নেহাল তুই কিন্তু আমাদের পুরুষত্বের উপরে আঘাত করছিস।”
নিজেদের মাঝেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ল নেহাল আর সুমন। জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বন্ধুদের ঝগড়া করা দেখছে প্রত্যেকবারের মতো। এটাই হয়ে আসছে বিগত সাত বছর ধরে। এর মাঝে জাহিনের ফোন আসল। নুহাশ কল করেছে। জাহিন এই হট্টগোলের মাঝে না থেকে ফোন পিক করে দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করল নুহাশের সাথে।
“বল নুহাশ?”
“ভাই রিহানকে ফিরিয়ে আনা দরকার বাড়িতে। না হলে ছেলেটা ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারে।”
জাহিন চিন্তিত হয়ে বলে, “ডিপ্রেশনে চলে যাবে মানে?”
“একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাইছে ও। কিন্তু মেয়েটা বার বার প্রত্যাখ্যান করে দিচ্ছে ওকে আর ও বেহায়ার মত মেয়েটর কাছে। তাই আমার মনে হয় বাড়ির সকলের সাথে ওর এখন থাকা দরকার।”
“ঠিক আছে আগামীকাল ওর কাছে যাব আমি। মেয়েটা কে খোঁজ নিয়েছিস?”
“এখনও নেওয়া হয় নি।”
“ঠিক আছ ওদেরকে খোঁজ নিতে বল মেয়েটার বিষয়ে।”
“আচ্ছা। তোমরা আসবা কখন?”
“একটু পরেই চলে আসব।”
“আচ্ছা তাহলে সাবধানে আসো।”
জাহিন নুহাশের সাথে কথা বলে নেহালদের কাছে আসে। পরিবেশ এত শান্ত দেখে জাহিন সোফায় বসতে বসতে সন্দিহান গলায় বলে, “কি হল তোদের কথা বলার ঝড় থেমে গেল কেন হঠাৎ করে?”
নেহাল মেকি হেসে সেন্টার টেবিলের উপর রাখা শরবতের গ্লাসটা জাহিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “পরিবেশে ঠান্ডা হয়ে গেছে এবার তুইও একটু ঠান্ডা শরবত খেয়ে চাঙ্গা হয়ে যায়।”
জাহিন ভ্রু কুচকে বলে, “এই শীতের মাঝে আবার ঠান্ডা শরবত কেন?”
নেহাল আমতা আমতা করে বলে, “এমনি। এতো কথা না বলে খা।”
কথাটা বলে অন্য বন্ধুদের বলে, “এই তোরাও খা তোদের ভাবির হাতে স্পেশাল শীত কালের ঠান্ডা শরবত।”
কথাটা বলে আড় চোখে জাহিনের দিকে তাকাল। জাহিন কিছুক্ষণ শরবতের গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু তো একটা ঘপলা আছে এর মাঝে সকলের হাবভাব দেখে যা বুঝা যাচ্ছে। জাহিন গলা খাকারি দিয়ে বলে, “গ্লাসটা চেঞ্জ করে দে!”
নেহাল আগে থেকে অবগত ছিল এটা হবে। তাই আবেগি হয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, “জাহিন দোস্ত তুই কি আমাকে সন্দেহ করচ্ছিস?”
জাহিন অবলীলায় বলল, “তোকে সন্দেহ করার মত অনেক রিজন আছে। অতিতে যা যা করে এসেছিস এরপর তোকে বিশ্বাস করতে আমার ভয় হয়।”
নেহাল আহত গলায় বলে, “ঠিক আছে তুই যখন আমাকে এতই সন্দেহ করচ্ছিস তাহলে তুই আমার গ্লাসটা নে।”
জাহিন নেহালের গ্লাসটা নিয়েও বসে রইল। নেহাল অধৈর্য গলায় বলে, “কি হলো এখন খাচ্ছিস না কেন?”
জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে শরবতটা পান করতে শুরু করে। এদিকে নেহাল ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি রেখে একবার মিরাজের দিকে তো আরেক বার মুরাদের দিকে তাকায়। নেহাল মনে মনে বলল।
“বন্ধু তুমি যদি চলো ডালে ডালে তো আমি চলি পাতায় পাতায়। তোমার বাসর যদি আমি আজকে না করিয়েছি তাহলে আমার নাম নেহাল নয়।”
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা জাহিন উঠে চলে যেতেই নেহাল বলে, “আচ্ছা থাম এসব কথা বাদ দে। এবার অন্য কথায় আসি।”
“কি কথা?”
“দেখ জাহিনের বন্ধু হিসেবে তো আমাদের একটা দায়িত্ব কর্তব্য আছে নাকি।”
মুরাদ আগ্রহ নিয়ে বলল, “তা কি সেই দায়িত্ব কর্তব্যটা শুনি একটু?”
“শোন আমি জানি এই বেডার এই জীবনে বাসর টাসর করা হবে না।”
মিরাজ মজার স্বরে বলে, “কেন জাহিনের কি কোনো সমস্যা আছে নাকি? তাহলে চল কলিকাতা হারবালে নিয়ে যাই ওকে। এক প্যাক খেলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে ব্যাটার। কলিকাতা হারবাল মানেই জাদুর খেলা।”
মুরাদ মিরাজকে খোঁচা মেরে বলল, “তুই কি তোর দুর্বল যন্ত্রপাতি সবল বানিয়েছিস নাকি কলিকাতা হারবালের ঔষধ সেবন করে। যে কলিকাতা হারবালকে এক্কেবারের জাদুর খেলা বলচ্ছিস।”
বলেই হাসত লাগত মুরাদ। মিরাজ রেগে ফায়ার হয়ে বলে, “হুম তুই রুমে চল তোকে দেখিয়ে দেই আমার যন্ত্রপাতি কতটা সবল।”
মুরাদ নাক মুখ কুঁচকে বলে, “ইয়াক! তুই কি আমাকে গে মনে করিস নাকি যে তোর সাথে আমি রুমে যাব।”
নেহাল দুটোকে ঝারি মেরে বলে, “আরে রাখবি তোদের কলিকাতা হারবাল। আমার কাছে কলিকাতা হারবালের ঔষধের থেকেও এমন এক জিনিস আছে যেটা খেলে আমাদের আনলুমান্টিক জাহিন লুমান্টিক জাহিনে পরিণত হবে।”
“কি সেটা?”
নেহাল ফ্রিজ থেকে একটা ছোট মদের বোতল এনে বলে, “এই সেই জিনিস যে জিনিস খেলে জাহিন বাবাজি টাল মাতাল হয়ে যাবে।”
মিরাজ ঠোঁট টিপে হেসে বলে, “ভাই এই জিনিস জাহিন একবার খেয়েছিল তাও আবার জোর করে ওকে খেয়েছিলাম মনে আছে। তারপরে ওর যন্ত্রণা যা সহ্য করেছি সারা জীবন মনে থাকবে আমরা।”
“তাই তো বলছি এবার একটু আমাদের ভাবিসাব সহ্য করুন ওর যন্ত্রণা।”
বলেই সবাই বাঁকা হাসল।
_______
জাহিন বেশি অর্ধেকটা খেয়েছে শরবত। সবাই জাহিনের দিকে আগ্রহের সহিত তাকিয়ে আছে। জাহিনের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে সবকিছু। জাহিন চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে আবারো চোখ খুলে ধীর গলায় বলল।
“কি হয়েছে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
মিরাজ বলল, “ভাই তোর কি মাথা ধরেছে?”
“অল্প একটু। কিন্তু কেন বল তো?”
নেহাল হাসতে হাসতে বলে, “কারণ আপনার শরবতে একটু খানি না একটু খানি না অনেকটাই মদ মিশিয়ে দিয়েছি।”
জাহিন কপাল তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে ধরে হতবাক হয়ে বলে, “মানে?”
“মানেটা একটু পরে টের পাবা। মিরাজ যা তো অয়ন্তি ভাবিকে গিয়ে বল ওনার স্বামী কেমন করছে জানি।”
জাহিন দুর্বল গলায় বলে, “মিরাজ যাবি না তুই আমার কসম লাগে।”
নেহাল ধমক স্বরে বলে, “রাখ তোর কসম! মিরাজ তুই যা।”
জাহিন রেগে বলল, “মিরাজ না করছি কিন্তু আমি।”
মিরাজ জাহিনের কথা পাত্তা না দিয়ে চলে গেল। জাহিন এখনও মাতাল হয় নি তবে আস্তে ধীরে যে সে তার সেলফ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে এটা বুঝতে পারছে। অয়ন্তি সামনে আসলে নিশ্চয়ই কিছু একটা করে বসবে তখন কতটা অস্বস্তিতে পড়তে হবে তাকে। এমন বন্ধু থাকার যে না থাকা ভালো।
অয়ন্তি হন্ততন্ত হয়ে জাহিনের কাছে আসল। অয়ন্তির পেছন পেছন রাইমাও এসেছে। অয়ন্তি মাতাল জাহিনের কাছে এসে কিছু ঝুঁকে চিন্তিত গলায় বলে, “কি হয়েছে আপনার?”
জাহিন চোখ মেলে তাকাল অয়ন্তির দিকে। জাহিনের গভীর নেশাতুর চোখের চাওনি দেখে অয়ন্তির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। শুকনো ঢোক গিলে অয়ন্তি নিজেকে সামলে বলল, “আপনি ঠিক আছেন?”
এর মাঝে নেহাল বলে উঠে, “ভাবি ও ঠিক নেই ওর রেস্টের প্রয়োজন।”
অয়ন্তি সোজা হয়ে নেহালের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, “কেন ওনার কি হয়েছে?”
নেহাল লজ্জা পাওয়ার ভাব ধরে বলল, “আসলে ভাবি কিভাবে যে বলি? আসলে জাহিন ভুলে একটু লাল পানীয় মানে মদ খেয়ে ফেলেছে। আর এই বেডা মদ খেলে হুশ জ্ঞান থাকে না। তাই বলচ্ছিলাম ওকে নিয়ে আপনি রুমে যান। বাবা মা যদি দেখে ওর এই বেহাল অবস্থা তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
“কিন্তু বাড়িতে যেতে হবে আমাদের।”
নেহাল অধৈর্য গলায় বলে, “না ভাবি এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না। যদি কোনো সাংবাদিক দেখে নেয় জাহিন মাতাল তাহলে ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। আর সামনে আসছে নির্বাচন। যদি এটা জানাজানি হয়ে যায় তখন কি হবে বলুন তো?”
“কিন্তু।”
“চিন্তা করবেন না আমি ওই বাড়িতে ফোন করে সবটা বুঝিয়ে বলব। আপনি বরং ওকে নিয়ে রুমে যান।”
“আমি তো একা নিতে পারব না আপনার একটু সাহায্য করুন।”
অয়ন্তি জাহিনের দিকে পুনরায় তাকাল। জাহিন আগের ন্যায় তাকিয়ে আছে তার দিকে। জাহিন নিজ থেকে টালতে টালতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় গলার স্বরে থেমে আসছে, “অয়ন্তি বিশ্বাস করুন আমি মাতাল নই। ওরা আমাকে….।”
জাহিন আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই নেহাল বলল, “মাতাল কোনো দিন স্বীকার করে না যে সে মাতাল।”
কথাটা বলে জাহিনের কাঁধ ধরে বলে, “চল তোকে রুমে দিয়ে আসি না হলে তোকে বাবা মা এভাবে দেখলে নেহালের হাল বেহাল হয়ে যাবে।”
বলেই জাহিনকে নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করল। অয়ন্তি মুরাদ আর মিরাজের দিকে তাকাতেই তারা মেকি হাসল। অন্য দিকে রইমা খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে এই কাজটা যে তার গুণধর স্বামী ইচ্ছে করে করেছে।
#চলবে_____
গল্প ভাল না লাগলে ইগনোর করবেন। কমেন্ট বক্স আইসা অযথা উল্টাপাল্টা কমেন্ট করবেন না। আর আমি যদি এই উল্টাপাল্টা কমেন্টের রিপ্লাই দেই তখন আবার বলবেন লেখিকার ব্যবহার কত্ত খারাপ। আমি ভাই শান্তিপ্রিয় মানুষ কারো সাথে বেজালে জড়াতে চাই না। তাই আপনিও সুখে থাকুন আমিও সুখে থাকি।