উধয়রনী #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৫২||

0
531

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৫২||

১০৮।
ধুমধাম আয়োজন করে চুনিকে দিদার বারেকের হাতে তুলে দেওয়া হলো। আহি বিয়েতে কোনো কমতি রাখে নি। চুনির ইচ্ছাতেই ঘোড়া গাড়ির ব্যবস্থা করেছে সে। এখন ঘোড়া গাড়িতে চড়ে শ্বশুড় বাড়ি যাচ্ছে চুনি। মেয়ের বিদায়ে মুনিয়া খালা কাঁদছেন। সালমা ফাওজিয়া আর রোকেয়া ফাওজিয়া তাকে মৃদু সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আহি রুমে এসে এলোমেলো জিনিসপত্র গোছাচ্ছে, এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরলো। আহি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখলো লিনাশা। লিনাশাকে আপাদমস্তক দেখে সে বলল,
“তুই কখন এলি?”

লিনাশা হেসে আহির বিছানায় পা উঠিয়ে বসে বলল,
“যখন আমার বেস্টু ঘটকালি শেষে বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।”

আহি হেসে বলল, “নায়ীব ভাইয়া আসেন নি?”

“সে তো মহা ব্যস্ত। আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো চেম্বারে। তার না-কি ভিআইপি পেশেন্ট এসেছে।”

“আচ্ছা, ভালো তো।”

“হ্যাঁ সবই তো ভালো। এখন বল, তোর ভালো কখন হবে?”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমার আবার কি ভালো হবে?”

লিনাশা এবার গম্ভীরমুখে বলল, “বিয়ে করবি?”

আহি থমকে গেলো। লিনাশার পাশে বসে বলল,
“তুই জানিস, আমি আগ্রহী না।”

“পরে করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু করবি তো!”

“দেখা যাক। তুই হঠাৎ এতো রাতে বাসায় এসে আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছিস!”

“হ্যাঁ। কীভাবে বলবো, বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, আগে বল, তুই কি রাদকে ভালোবাসিস?”

আহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ওকে আমি বন্ধুর মতো ভালোবাসি।”

“আমি জানতাম, তোদের সম্পর্কটা কাইন্ড অব, ইউ এন্ড মি, রাইট?”

“ইয়েস।”

লিনাশা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,
“উজ্জ্বলকে কেমন লাগে তোর!”

আহি এবার চোখ বড় বড় করে লিনাশার দিকে তাকালো। লিনাশা আহির চোখ দেখে বলল,
“ওয়েট, ওয়েট, এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। উজ্জ্বলের আম্মু, মানে আমাদের ম্যাডাম আর পুষ্পের চাচি, মাকে এসে তোর কথা বলেছেন।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কী বললেন?”

“বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। মা কাল না-কি আন্টির সাথে কথা বলতে আসবে। এখন বিয়ে না করলেও সমস্যা নেই। এট লিস্ট কথাবার্তা ঠিক হয়ে যাক।”

আহির চোখ-মুখ শক্ত হয়ে এলো। সে চেঁচিয়ে বলল,
“বাঁচতে দিবি আমাকে তোরা? এতোদিন তাজওয়ার মাথার উপর ঘ্যানঘ্যান করছিল। এখন রাদ ওর অনুভূতি নিয়ে আমার দিন-রাত অস্থির করে তুলছে। এদিকে তুই এসেছিস বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে! তোরা কি অন্ধ? তোরা কি আমাকে দেখছিস না? আমার মন কী চাই, একবার জানতে চেয়েছিস? আমি কি চাই, কেউ জানে?”

লিনাশা বিছানা ছেড়ে উঠে এসে আহির হাত ধরে বলল,
“আমি জানি তোর মন কী চায়। কিন্তু যেটা তুই চাস, ওটা কি আদৌ পাওয়া সম্ভব?”

আহি থেমে গেলো। গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা অশ্রু। লিনাশা আহির চোখ মুছে দিয়ে বলল,
“আফিফ তোর ভাগ্যে নেই।”

আহি মলিন হেসে বলল,
“আফিফ আমার ভাগ্যে না থাকুক, ওকে ভালোবাসা আমার ভাগ্যে আছে। হ্যাঁ, আজ আমি স্বীকার করে নিলাম না হয়, আমি এখনো ভুলতে পারি নি আফিফকে। ওকে ভুলে যাওয়ার সুযোগটাই তো ভাগ্য আমাকে দিলো না। আর বিয়ে জীবনের একমাত্র সমাধান নয়। আমার মনে হয়, নিজের মনকে ভালোবাসা, নিজের আত্মাকে ভালোবাসা, নিজের ইচ্ছের প্রাধান্য দেওয়ায় মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি আফিফকে চাই না। আমি একা থাকতে চাই। কারণ এখন আমি নিজেকে ভালোবাসতে চাইছি। জানিস, আমি কখন সুখে থাকবো?”

“কখন?”

“একা থাকলে।”

“সারাজীবন কি একা থাকা সম্ভব, আহি?”

“মা তো থাকছে। মা কি আর বিয়ে করেছে?”

“আন্টির জন্য তো তুই আছিস? কিন্তু তোর কে আছে?”

আহি নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো লিনাশার দিকে। লিনাশা আহির দুই গালে হাত রেখে বলল,
“নায়ীব বলেছে আমাকে, আফিফ অনেক ভালো একটা ছেলে। ও যদি তোর হতো, আমি অনেক খুশি হতাম। পদ্মের চেয়ে আমি তোকে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু পদ্ম তো এক্জিস্ট করে।”

আহি লিনাশার হাত ধরে বলল,
“এনাফ ম্যাচিউর আমি। নিজের ভালোটা বুঝি। পদ্ম আফিফের স্ত্রী, আমি জানি। এটাও জানি, আফিফ আমার হবে না। তার মানে এই না যে, তোরা বললি আর আমি হুট করে বিয়ে করে নিলাম, নতুন জীবন শুরু করলাম? তুই নায়ীব ভাইয়াকে ভালোবেসেছিস, পদ্ম আফিফকে ভালোবেসেছে, পুষ্প লাবীবকে ভালোবেসেছে। কিন্তু আমি আফিফকে ভালোবাসি নি। আমি আমার হৃদয়টাই দিয়ে দিয়েছি৷ তোরা কি কেউ পারবি, আমার মতো করে তোদের প্রিয় মানুষকে ভালোবাসতে? এক তরফা, কোনো ইশারা, কোনো আশা, কোনো ফলাফল ছাড়া, পারবি ভালোবাসতে? কেউ পারবে? আমি স্পেশাল। তাই আমি পেরেছি। এটা আমার অহংকার। আর এটাতেই আমি নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবি। জানিস লিনু, আহি কেন সবার চেয়ে ভিন্ন? কারণ আহি আফিফকে ভালোবাসে। আমি যদি ভালোবাসাই ছেড়ে দেই, তাহলে আমার স্পেশালিটি আর থাকবে না। দেবদাস হয়েছে কতো জন, এবার না হয় আহির জন্ম হোক।”

“দেবদাস হওয়া সহজ। কিন্তু আহি হওয়া না। কারণ তুই একটা মেয়ে। আর দেবদাস মরে প্রমাণ করে দিয়েছে, সে তার শেষ নিঃশ্বাস অব্ধি পার্বতীকে ভালোবেসেছিল।”

“আমি আহি। কোনো দেবদাসী নই। আমি নিজেকে শেষ করে দেবো না। আমি বাঁচবো নিজের জন্য। স্বপ্ন দেখবো নিজের জন্য৷ শুধু ভালোবাসাটা হৃদয়ে দাফন হয়ে থাকবে। যেই অদৃশ্য মাটিতে আমার কয়েক বছরের পাগলামো, আমার স্বপ্ন, হাতে আঁকা প্রিয় ছবিগুলো, চারুশিল্প, সেই পথ সব, সবটাই দম ছাড়বে। আর সেই মৃত স্মৃতিগুলো আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।”

লিনাশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আহি মুচকি হেসে বলল,
“তোর বর আমার জীবনে এসে অনেক বড় উপকার করেছে।”

“কী?”

“আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে আবেগ ধরে রাখতে হয়। আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে অলকানন্দাকে ভালোবেসে কাঠগোলাপকে আগলে রাখতে হয়। শিখিয়েছে কীভাবে সাদার ভীড়ে ধূসর বেগুনিকে খুঁজতে হয়।”

“আর?”

“আর রাদ, ও তো আমার মেডিসিন। আমাকে সাপোর্ট করেছে অনেক। এখন বল, আমি কি করবো? মেডিসিন তো রোগ সারায়৷ যেমন বন্ধুত্ব হতাশা কাটায়। রাদও আমার এলোমেলো জীবনটাতে একটু গতি এনেছে। বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে। তুই তো ছিলি না পাশে। জানিস, অতিরিক্ত সবকিছুই মান হারায়। আমার অতি ভালোবাসাও মান হারিয়েছে। তবে এবার আমি ভুল করছি না। আমার যদি নিতেই হয়, আমি মেডিসিন নিবো। তবে এতো বেশি না, যেটা আমার মনে সাইড ইফেক্ট করবে। আর যেখানে আমি রাদকেই ভালোবাসতে পারছি না, সেখানে উজ্জ্বল বা পৃথিবীর অন্য কোনো পুরুষ দাঁড়ানোর যোগ্যতায় রাখে না।”

(***)

আজ শিক্ষা জীবনের সমাপ্তিতে রাদ, লাবীব, পুষ্প আর আহি ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে। মাস্টার্সের সার্টিফিকেট তুলতে ক্যাম্পাসে এসেছে তারা। ক্যান্টিনে বসে তারা অনেক আড্ডাও দিলো। আড্ডার বিষয় লাবীব আর পুষ্পের বিয়ে। আড্ডা শেষে রাদ উঠে দাঁড়ালো। আহির হাত ধরে বলল,
“তোকে একটা জিনিস দেবো।”

আহি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “কি?”

রাদ আহিকে একপাশে টেনে এনে বলল,
“আগে একটা সুখবর শোন।”

“হুম, বল।”

“আহি, আমার চাকরি হয়েছিল একটা।”

আহি আনন্দিত কণ্ঠে বলল,”সত্যি? কখন?”

“হ্যাঁ, একমাস আগেই হয়েছে। ভেবেছি আজই তোকে বলবো। আর তোকে সেই গিফটটাও দেবো।”

“রিয়েলি, গিফট! দেখি তো কি সেটা?”

রাদ ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আহির হাতে দিলো। আহি প্যাকেটটা খুলে দেখলো একটা ধূসর বেগুনি রঙের সুতির শাড়ি। সাথে সোনালী রঙের ব্লাউজ। আহি রাদের দিকে তাকালো। রাদ বলল,
“তোকে ল্যাভেন্ডার কালারের শাড়িতে খুব মানায়। আমার জন্য পরবি কিন্তু একদিন।”

“আমার তো ছিলোই শাড়ি।”

“সব শাড়ি, আর এই শাড়ি এক না। এই শাড়িটা আমার স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমার প্রথম সাফল্যের স্মৃতি। অনেক বছর পর যখনই তুই এই শাড়ি পরে আমার সামনে এসে দাঁড়াবি, আমার মনে পড়বে আমার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপের কথা। মনে পড়বে নিজের টাকায় তোর জন্য আমার প্রথম গিফট কেনার মুহূর্তটির কথা।”

আহি মুগ্ধ দৃষ্টিতে রাদের দিকে তাকালো। ছলছল করে উঠলো আহির চোখ দু’টি। রাদ তা দেখে বলল,
“চল, তোকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি। এতো আবেগী হতে হবে না তোকে।”

রাদ আহির হাত ধরলো। সিঁড়ি বেয়ে নেমে পড়লো কয়েক ধাপ। ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে আহির দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো সে। পুরো মাঠ খালি। আজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী কম। মাঠের মাঝখানে এক আকাশস্পর্শী স্বপ্ন দেখা যুবক, আর তার হাতে আবদ্ধ তার প্রেয়সীর হাত। রাদ মুচকি হেসে বলল,
“তোর হাসি দেখতে দেখতে আমি মরেই যাবো বোধহয়। এতো মিষ্টি হাসি তোর! আমার হৃদয়টাই কাঁপিয়ে দেয়।”

রাদ কথাটি বলেই সামনে তাকালো। আহিও সামনে তাকিয়ে থমকে গেলো। ক্যাম্পাস গেটের সামনে তাজওয়ার দাঁড়ানো। আহি অবাক কন্ঠে বলল,
“তাজওয়ার এখানে?”

মুহূর্তেই ঠা ঠা শব্দ ধ্বনিত হলো নিরব ক্যাম্পাস জুড়ে। আহি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ঢিলে হয়ে এলো তার হাতটি। তার চোখের সামনে এই মাত্র হাসিমাখা মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি ক্যাম্পাসের ইটের রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। সাথে সাথেই আহির পুরো শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। তাজওয়ার আহির দিকে বন্দুক তাক করে বলল,
“আমি ছাড়া তোমার দ্বিতীয় কোনো প্রেমিক থাকতে পারবে না।”

আহি অস্থির হয়ে রাদের হাত হাতড়াতে লাগলো। ঝাঁকাতে লাগলো তার নিথর শরীর। ঠা ঠা শব্দে ক্যাম্পাসের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো অনেকেই। লাবীব ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে সামনে এগুতেই পুষ্প তার হাত চেপে ধরলো। তাদের চোখের সামনে ঝড়ে গেলো এক প্রেমিক, যেই প্রেমিক শুধু ভালোবাসার অপরাধে প্রাণ দিয়েছে। তাজওয়ার দৃপ্ত পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। আহি রাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো,
“রাদ, এই রাদ। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ, একটু চোখটা খোল। আমি তোকে এক্ষুণি হস্পিটালে নিয়ে যাবো।”

লাবীব দৌঁড়ে এলো। আহি লাবীবকে দেখেই গাড়ির জন্য উঠে দাঁড়াতে, ক্যাম্পাসের কয়েকটা ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহৃত এম্বুল্যান্সের জন্য পরিবহন কমিটির সাথে দেখা করতে বললো। আহি দৌঁড়ে গেলো সেদিকে। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসে রাদকে তুললো স্ট্রেচারে। আহির শরীর যেন চলছেই না। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতেই পুষ্প তাকে শক্ত করে ধরলো। আহি পুষ্পের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল,
“ও..ওর কিছুই হবে না। আমি পাগল হয়ে যাবো ওর কিছু হলে। পাগল হয়ে যাবো আমি। কি.. কি করবো আমি? রা.. রাদ আসবে। ঠিক হয়ে যাবে ও।”

পুষ্প আহিকে জড়িয়ে ধরলো। আহি শরীরের ভার ছেড়ে দিতেই পুষ্প ভীত কন্ঠে বললো,
“আহি? এই আহি?”

আহি জ্ঞান হারিয়েছে। এরপর আহিকে ক্যাম্পাসের মেডিকেল রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।

(***)

অনিশ্চিত জীবন। হুট করে যে কীভাবে সব এলোমেলো হয়ে যায়! রাদের হঠাৎ মৃত্যু সবাইকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। এদিকে আহি ব্রেইন স্ট্রোক করে দু’দিন হাসপাতালে ভর্তি। এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো আহি স্ট্রোক করেছে। ডাক্তারের ভাষ্যমতে, প্রথম বারের স্ট্রোকের সাথে দ্বিতীয় বারের স্ট্রোক করার সময় ব্যবধান অনেক বছর হওয়ায় আহি মোটামুটি আশঙ্কামুক্ত। কিন্তু কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি আবার স্ট্রোক করে, তাহলে আহির মৃত্যুও হতে পারে, আর বেঁচে গেলে পঙ্গু হয়ে যাবে। আহি এখনো জানে না, রাদের মৃত্যু হয়েছে। সে ধরে নিয়েছে রাদ বেঁচে আছে। আহিকে রাদের মৃত্যুর সংবাদ দেয় নি কেউই। দেওয়ার ক্ষমতাও নেই কারো।

(***)

রাদের কুলখানি আজ। আহিকেও হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হলো। আজ বেশ শান্ত দেখাচ্ছে আহিকে। সালমা ফাওজিয়ার দিকে তাকিয়ে সে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“রাদ কোথায়?”

সালমা ফাওজিয়া বললেন,
“ওর সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।”

“মা, আমি দেখেছি, ওর কপালে গুলি লেগেছে। ও বেঁচে আছে তো?”

সালমা ফাওজিয়া ক্ষীণ কন্ঠে বললেন, “হ্যাঁ।”

“চিন্তা করো না, মা। আমি মরবো না। আমি তো আগে থেকেই মৃত ছিলাম। আমাকে একটু বলো তো, তাজওয়ার জেল থেকে পালালো কীভাবে? ও কোথায় এখন?”

“পুলিশ ধরতে পারে নি ওকে।”

আহি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বলল,
“জানোয়ারটা আমাকে শেষ করে দিয়ে গেছে, মা। কোন অলুক্ষণে দিনে আমি তার সামনে এসে পড়েছি জানি না। সে কখন আমাকে দেখে এতোটা ডেস্পারেট হয়ে গেলো যে আমার জন্য সে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে মার‍তে এলো! ও তো জানোয়ার না। তাহলে ও কি, মা? ও কি সাইকো? হ্যাঁ, ও একটা সাইকো কিলার।”

“শান্ত হো, আহি।”

আহি শান্ত হলো। চোখ বন্ধ করলো সে। সেকেন্ড খানিক পর মায়ের দিকে তাকালো। বলল, “তাজওয়ারকে কে পালাতে সাহায্য করেছে আমি জানি। এখন তাজওয়ার কোথায় আছে, আমি সেটাও জানি।”

আহি উঠে দাঁড়ালো। এদিক-ওদিক কিছু একটা খুঁজতে লাগলো। সালমা ফাওজিয়া জিজ্ঞেস করলেন,
“কি খুঁজছিস?”

“আমার ফোন!”

সালমা ফাওজিয়া আহির ফোনটা এনে দিলেন। আহি ফোন পেয়ে সাথে সাথেই উজ্জ্বলের নম্বরে ডায়াল করলো। উজ্জ্বল ওপাশ থেকে কিছু একটা বললো। আর আহিও কল কেটে দিয়ে মাকে বলল,
“মা, আমাকে যেতে হবে।”

“তুই এই কাজটা করিস না, আহি।”

“এই দেশে কোনো আইন নেই। কোনো বিচার নেই। রাদের বিচার আমি করবো। এবার যা হওয়ার হোক। দেখবো আমি, আইন আমাকে কি শাস্তি দেই।”

“পাপ হবে, আহি।”

“পাপ! সিরিয়াসলি? ঠিক আছে, যদি পাপ হয়৷ হোক। এমন পাপ আমি করবোই করবো।”

আহি বেরিয়ে পড়লো। সালমা ফাওজিয়া এদিকে অস্থির হয়ে গেলেন। তিনি ব্যস্ত হয়ে ফোন হাতে নিলেন। কিছু একটা ভেবে একটা নম্বরে ডায়াল করলেন।
রিং যাচ্ছে। সেকেন্ড খানিক পর ওপাশ থেকে হ্যালো শব্দ শোনা যেতেই সালমা ফাওজিয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলতে লাগলেন সবটাই।

চলবে-

(পরের পর্বে সব ক্লাইমেক্স শেষ হবে। আর এরপর সমাপ্তি অংশগুলো আসবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here