#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৭
দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে মাথাটা কিঞ্চিৎ পরিমাণ নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে জারিফ।দরজা খুলে সামনে তাকাতেই লিয়া এ্যস্টোনিস্ট হয়ে যায়।লিয়া ঠিক দেখছে কিনা তা বিশ্বাস করতে পারছে না।লিয়া হতবাক নজরে সামনে দাঁড়ানো সুঠাম দেহের সুদর্শন মানবের পানে স্থির চাহনিতে চেয়ে রইলো।দরজা খোলার শব্দ পেয়ে জারিফ কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই মাথাটা তুলে তাকায়। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে সুগভীর শান্ত নজরে লিয়ার মুখশ্রীতে তাকায়।লিয়ার মুখে এখনো বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।লিয়াকে একদম বেলি ফুলের পাপড়ি ন্যায় স্নিগ্ধ লাগছে। টানাটানা হরিণী নজরজোড়া ঘুমানোর জন্য একটু ফোলাফোলা।লিয়া বিস্ময় কাটাতে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।লিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।আর এইসময় জারিফের এখানে আসার কারনও বুঝে আসছে না। কিয়ৎকাল ধরে নানান প্রশ্ন লিয়ার ছোট্ট মস্তিষ্ক জুড়ে ঘুরপাক খেতে থাকে।জারিফের আসার কারন কি? তবে উনি কি এখনই বিচ্ছেদ চান? সেইজন্যই কি এখনকার হুট করে আগমন?এসব ব্যাপারেই কথা বলতে আসছেন কি?এসব কিছু ভেবে লিয়া আড়ালে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে।কি বলে কথা বলবে তা ভেবে না পেয়ে লিয়া আচমকা হুট করে বলে উঠল,,
“কি চাই?”
লিয়ার এহেন প্রশ্নে হতবিহ্বল জারিফ। আশ্চর্য!এটা কেমন ধরনের প্রশ্ন?লিয়ার প্রশ্নে জারিফের খানিকটা রা’গ হয়।জারিফের মনে হচ্ছে ও কোনো ফকির।আর সাহায্য চাওয়ার জন্য লিয়ার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। সেইজন্য লিয়া এমন প্রশ্ন করছে।এমনিতেই ভেতরে ঢুকতে গিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে জারিফের। সেখানে মেজাজটা যথেষ্ট খা’রাপ হয়েছে।আবার এখন লিয়ার এমন কথা।মেইন গেইটে দায়িত্বে থাকা মাঝ বয়সী ডিউটিরত সদস্য কিচ্ছুতেই অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দেবেন না।ক্যান্টনমেন্টন হলো সংরক্ষিত এরিয়া।এর ভেতর জন সাধারণের প্রবেশ নিষেধ।কারো আত্বীয় হলে তাকে এসে খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।এছাড়া নয়।লোকটার কাঠকাঠ কথা ছিলো এটা। সেখানে জারিফ লিয়ার বাবার নাম বলে।লোকটা জবাব করে কি হোন আপনি ওনার?জবাবে কি বলবে তাই নিয়ে জারিফের দ্বিধার শেষ ছিলো না। অবশেষে বুদ্ধি করে এককথায় বলে, আত্বীয়।মুখের কথায় যেমন চিড়া ভেজে না।ঠিক তেমনি জারিফের কথায়ও লোকটির কোনো হেলদোল হলো না।উনি অনড় রুলস ভেঙে ভিতরে কাউকে যেতে দেওয়া সম্ভব নয়। আত্বীয়ই যখন হন তখন ফোন করে আসতে বলেন।আর নয়তো স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দিন।তবেই আমি ভিতরে যেতে দিতে পারি।এছাড়া সম্ভব নয়।একে তো এখানে আসার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না।তার উপরে আবার প্রবেশে বাঁধা।লিয়ার বাবার ফোন নম্বর না থাকায় আরেক বেকায়দার সৃষ্টি হলো।কার থেকে ফোন নম্বর যোগাড় করবে তা নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভেবে স্থির করে জারিফ। তাসনিমের কাছে ফোন করে নম্বর পাওয়া যাবে। কিন্তু তাসনিমের কাছে কল দিতে ইচ্ছে হলো না। অবশেষে তুষারের নম্বর কললিস্ট থেকে বের করে। নাতাশার জন্মদিনের দিন বাসায় ফিরে তুষার কল দিয়েছিলো। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করার পর তুষারের নম্বর কললিস্টে পায়। অবশেষে তুষারের থেকে এনামুল খাঁনের ফোন নম্বর নিয়ে কল দেয় জারিফ।সালাম দিয়ে বেশ ভদ্রভাবে কথা বলে।খানিকটা জড়তা নিয়েই নাতাশাকে নিয়ে আসার কথা বলে।গেইটে দাঁড়িয়ে আছে এটা বলতেই এনামুল খাঁন ফোনটা ডিউটিতে থাকা সদস্যের কাছে দিতে বলেন। অবশেষে জারিফ ভেতরে আসার পারমিশন পায়।
লিয়া নিজের করা প্রশ্নে নিজেই ভ্যাবাচেকা খায়।সাথে সাথেই হাতের নখ কামড়ে ধরে।তড়িৎ জড়তা নিয়ে বলে উঠল,,”ইয়ে মানে আপনি?”
জারিফ কিছু বলার আগেই জারিফের পেছন থেকে নাতাশা বেড়িয়ে আসে।ঝকঝকে দাঁত বের করে শব্দ করে হাসতে থাকে।লিয়ার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসে।নরম গোলগোল ছোটো ছোটো দুইহাতে লিয়াকে ঝাপটে ধরে। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলতে থাকে,,”মামী। সারপ্রাইজ।কেমন হলো সারপ্রাইজ টা?”
বাচ্চা মেয়েটার শ্রুতিমধুর কন্ঠটা শ্রবণন্দ্রিয়ে সাড়া জাগানোর সাথে সাথেই লিয়ার মন শিহরিত হয়ে উঠল।এতো সুন্দর ডাকে লিয়ার মনটা পুলকিত হয়ে উঠল।লিয়া নাতাশার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। দুইহাতে নাতাশার মুখটা আজল করে ধরে। মিষ্টি হেসে কোমল স্বরে বলে,,”সোনা তুমি।কি খবর?কেমন আছো তুমি?”
নাতাশা দুইহাতে লিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে । হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল ভাবে ফের ধীরে ধীরে সুন্দর করে বলতে থাকে,,”আমি ভালো আছি।তোমাকে দেখে আরো এত্তো এত্তো বেশি ভালো আছি।তুমি তো আমার খোঁজ নাও না।তোমাকে দেখতে তাই আমিই চলে আসলাম,হুম।”
লিয়া নাতাশার দুইগালে চুমো খায়। মিষ্টি হেসে বলতে থাকে ,,”ভালো করেছো কিউটিপাই।”
লিয়া আর নাতাশার মিষ্টি সম্পর্কটা দেখে জারিফের ভালো লাগে।জারিফ কপাল কুঁচকে দুজনের আলাপন দেখতে থাকে।লিয়া উঠে দাঁড়িয়ে নাতাশার একহাত ধরে বলে,,”ভেতরে চলো সোনা।”
নাতাশার হাত ধরে ভেতরের দিকে পা বাড়ায় লিয়া।লিয়ার কাজে জারিফের বিরক্তবোধ আকাশসম হয়।এখানে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে।তাকে ভেতরে আসার কথা না বলেই সোজা ভেতরে চলে যাচ্ছে। কার্টেসির খাতিরেও তো বলতে হয়।অদ্ভুত!জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।ভেতরে যেতে জারিফের অস্বস্তি হচ্ছে।যেখানে একবারো ভেতরে যাওয়ার কথা বললো না,সেখানে একাএকা ভেতরে গেলে বেহায়ার মতো যাওয়া হবে।জারিফ হালকা কেশে নাতাশাকে ডেকে বলে উঠলো,,
“নাতাশা আমি বাইরে ওয়েট করছি।কিছুক্ষণ পর নিচে চলে এসো কেমন।আমি নিচে আশেপাশেই থাকবো।”
নাতাশার সাথে লিয়াও মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।তাকাতেই জারিফের চোখে চোখ পড়ে।লিয়া দাঁত দিয়ে জিহ্বায় কামুড় দেয়। মনেমনে আওড়ায়,এইরে ভুলেই তো গিয়েছি।ওনাকে তো একবারো ভেতরে আসতে বলিনি।আর জনাবের যে ইগো। মাইন্ড করে বসেছেন হয়তো অলরেডি।লিয়া গলা ঝেড়ে নিয়ে মৃদু আওয়াজে বলতে থাকে,,”ভেতরে আসুন।”
জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে স্পষ্টস্বরে আওড়ালো,,”নাহ্।ঠিক আছি।একটু ফাস্ট নাতাশাকে পাঠিয়ে দিও।আমি নিচে গাড়িতে ওয়েট করছি।”
এরমধ্যে রাজিয়া সুলতানা আসেন। প্রথমে নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে দুই একটা কথা বলেন।জারিফ সালাম দেয়। সালামের উত্তর দিয়ে রাজিয়া সুলতানা অমায়িক হেসে বললেন,,”মাত্রই লিয়ার আব্বু ফোন করে বলল তোমাদের কথা।আগে থেকে জানলে গেইটে বলে রাখলে সমস্যা হতো না।তুমি কিছু মনে করো না,বাবা।”
জারিফ নম্র স্বরে বলল,,”নাহ্। আন্টি ঠিক আছে,সমস্যা নেই।এটা তো এখানকার রুলস।আমারই ভুল। প্রথমেই আংকেলের সাথে যোগাযোগ করলে ভালো হতো।”
রাজিয়া সুলতানা আদূরে গলায় বললেন,,”বাবা ভেতরে আসো।এই লিয়া এখনো বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস।ভেতরে নিয়ে বসতে দে।”
লিয়া একবার মায়ের দিকে তাকালো।আরেকবার জারিফের দিকে।লিয়া ভাবছে উনি তো ভেতরে আসবেন না। লিয়ার ভাবনার মাঝেই লিয়াকে অবাক করে দিয়ে জারিফ ভেতরে পা বাড়ায়।ড্রয়িংরুমে জারিফকে বসতে দেওয়া হয়।জারিফ তিন আসন বিশিষ্ট সোফার একপাশে বসে ফোন স্ক্রল করছে।লিয়া নাতাশাকে সাথে নিয়ে ওর রুমে যায়।জারিফের সামনে থাকতে কেমন জানি লজ্জা লাগছে।তাই বসতে দিয়েই নাতাশাকে নিয়ে চলে এসেছে। লিয়ার বিছানার উপর নাতাশা বসে আছে।সামনে অনেক খেলনা ছড়ানো ছিটানো।লিয়া একটা রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টার দেখাচ্ছে আর বলছে,,
“এটা আমার ভাইয়ের ছিলো।”
নাতাশা মিষ্টি হেসে বলে,,”ওহ তাই। আচ্ছা মামী তোমার ভাই এখনো খেলনা খেলে।”
লিয়া একহাতে নাতাশার গালটা একটু টিপে দিয়ে বলে,,”উঁহু!এইযে খেলনা গুলো দেখছো না।এইসব খেলনা আমার আর আমার ভাইয়ের ছিলো। আম্মু সব খেলনা যত্ন করে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছে।আর যত রান্নাবান্নার হাড়ি পাতিল দেখছো সব আমার ছিলো। আম্মু বলে,আমি নাকি রান্নাবান্না খেলা খুব পছন্দ করতাম। সেইজন্য এত এত খেলনা হাড়ি পাতিল কিনে দিতো।আমার ভাই তো অনেক খেলনা ভেঙ্গে ফেলেছে।”
নাতাশা আবদার করে বলল,,”মামী তাহলে তুমি এখন আমার সাথে রান্নাবান্না খেলো।আমি রান্না করা খেলতে চাই।”
লিয়া প্লাস্টিকের খেলনা গ্যাস ওভেন একহাতে ঠিক করে বসায়।উপরে পাতিল,কড়াই বসিয়ে বলে,,এইযে দেখো রান্না করছি।কি রান্না করবো বলো তো?”
“উমম!গোশ আর পোলাও।”
এরমধ্যে রাজিয়া সুলতানা আসেন।মেয়ের কান্ডজ্ঞান দেখে অবাক হন।জামাই ওখানে একাএকা বসে আছে।আর মেয়ে ঘরে বসে বসে, উফ্! দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিয়ার কাছে এগিয়ে আসেন।মুখায়বে বিরক্তিভাবটা ফুটিয়ে একটু ফিসফিসিয়ে বলেন,,”একি লিয়া।তুই এখানে। জারিফ ওখানে একাএকা বসে আছে।নাতাশাকে সাথে নিয়ে ওখানে সোফায়ই বসে গল্প করতে পারতিস তো।”
লিয়া মনেমনে আওড়ায়,উনি যে নাতাশার জন্য আসতে বাধ্য হয়েছেন।তা আর কেউ না জানলেও আমি ভালোই জানি।উনার সামনে থেকে শুধুশুধু ওনাকে বিরক্ত করার মানেই হয়না।
লিয়াকে নিশ্চুপ দেখে রাজিয়া সুলতানা ফের বললেন,,
“আমি নাস্তা রেডি করে রেখেছি।যা জারিফকে নাস্তা দে।”
লিয়া কপাল কুঁচকে বলে,,”ওহ আম্মু।তুমিই দাওনা।দেখছো তো নাতাশার সাথে খেলছি।”
রাজিয়া সুলতানা মেয়ের দিকে মৃদু রা’গি চাহনিতে চাইলেন।একটু ধমকের সুরে বললেন,,”লিয়া।যা বলছি তাই কর।”
লিয়া অবশেষে মুখটা ভার করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।কিচেনের দিকে পা বাড়ায়।লিয়ার সাথে নাতাশাও যায়।লিয়া নাস্তার ট্রে টা দুইহাতে ধরে ড্রয়িংরুমের দিকে যেতে থাকে।নাতাশা লিয়ার ওড়নার কোণা ধরে যেতে থাকে।রাজিয়া সুলতানা ভাবেন,লিয়া আর জারিফের কথাবলার জন্য একটু স্পেস দেওয়া দরকার। তড়িৎ রাজিয়া সুলতানা নাতাশাকে ডেকে বলেন,,”নাতাশা আপু ।তুমি আমার সাথে আসো।আমি নিজে হাতে তোমাকে পায়েস খাইয়ে দিবো কেমন।তুমি পায়েস খাও আপু?”
নাতাশা রাজিয়া সুলতানার পাশে আসে।মুখটা তুলে তাকিয়ে বলল,,”হুম।খাইতো।তুমি খাইয়ে দিবে?”
রাজিয়া সুলতানা কিচেন থেকে পায়েসের ছোট বোলটা নিয়ে বললেন,,”হ্যা।চলো তোমাকে গল্প শোনাবো আর খাইয়ে দিবো।”
“ইয়ে গল্প।চলো চলো।”
ড্রয়িংরুমের দিকে যত এগোচ্ছে আর লিয়ার হার্টবিট যেনো তত ফাস্ট হচ্ছে।লিয়া সামনের টি-টেবিলের উপর শব্দ করে ট্রেটা নামায়।জারিফ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথাটা কিঞ্চিৎ তুলে সামনে দাঁড়ানো লিয়ার দিকে তাকায়।লিয়া ফাঁকা ঢুক গিলে নেয়।যে মানুষ নিজে থেকে কিছু বলছে না।তার সাথে কি বলে কথা শুরু করবে।তা লিয়া ভেবে পাচ্ছে না।লিয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলল,,”নাস্তা করুন।”
জারিফ তবুও নির্বিকার।জারিফকে ভাবলেশহীন দেখে লিয়ার মেজাজ খা’রাপ হতে থাকে।লিয়া বিড়বিড় করে বলে, আশ্চর্য! কিছু বললাম মনেহয়না উনার কানে ঢুকেছে।এরকম নির্বিকার থাকার মানে কি?উনি কি চাইছেন চামুচ দিয়ে মুখে তুলে আমি খাইয়ে দেই, না-কি?লিয়া হালকা কেশে জারিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অতঃপর চিনামাটির পায়েস রাখা ছোট বোলটা একহাতে জারিফের সামনে ধরে ঠোঁট আওড়ায়,,
“আপনার নাস্তা।”
জারিফ ফোনটা পকেটে পুরে রাখে।লিয়ার মুখশ্রীতে একনজর তাকায় অতঃপর লিয়ার হাতের দিকে।ডান হাতটা বাড়িয়ে লিয়ার থেকে বোলটা নেয়।বোলটা ধরার সময় লিয়ার হাতের সাথে জারিফের হাতের স্পর্শ লাগে।লিয়া তড়িৎ শুকনো ঢুক গিলে নেয়।সারা শরীর জুড়ে মৃদু কম্পন বইয়ে যায় লিয়ার।ভেতরে ভেতরে লিয়া লজ্জা আর অস্বস্তিতে নুইয়ে পড়ছে।লিয়া কিকরবে ভেবে পাচ্ছে না। এখানে থাকবে কিনা চলে যাবে।এই নিয়ে ভেবে লিয়া স্থির করে এখান থেকে চলে যাওয়াই বেটার।তাই ভেবে লিয়া পিছন ঘুরে চলে যেতে থাকে।কয়েক কদম পা বাড়িয়ে যেতেই লিয়া থেমে যায়। শীতল কন্ঠের আওয়াজ কর্ণদ্বয় ভেদ করে নিউরনে সাড়া জাগাতেই লিয়ার পা থেমে যায়।
“তোমার পড়াশোনার কি খবর?”
জারিফ লিয়াকে উদ্দেশ্য করে শীতল গলায় শুধায়।লিয়া ঘুরে জারিফের দিকে তাকায়।ওড়নার কোণা আঙ্গুলে পেচাতে থাকে।খেয়ালি নজরে জারিফের দিকে তাকায়। কিয়ৎক্ষন পরে ক্ষীন আওয়াজে ঠোঁট আওড়ায়,,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
জারিফ খাবার চিবুতে চিবুতে ফের নরম স্বরে বলল,,
“এক্সামের রুটিন তো দিয়ে দিয়েছে।সামনের মাসেই তো এক্সাম।তা প্রিপারেশন কেমন?”
লিয়া ছোট করে বলে,,”জ্বি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
হঠাৎ কিছু মনে হতেই লিয়া জারিফকে উদ্দেশ্য করে মৃদুস্বরে বলে উঠলো,,”আপনি বোধহয় আমার এক্সাম শেষ হওয়ার দিন গুনছেন। অপেক্ষা করছেন কবে শেষ হবে।আর তারপর মুক্তি পাবেন।টেনশন নিয়েন না আমি আমার পূর্বের সিন্ধান্তই বহাল রাখবো।”
লিয়ার কথাটা জারিফের ভালো লাগলো না।জারিফ কি বলবে তা স্থির করতে না পেরে পড়াশোনার টপিকটা নিয়েই আলোচনা শুরু করেছিলো। কিন্তু লিয়া যে বেশি বুঝে।বেশি বুঝা বললে ভুল হবে উল্টো বুঝে এরকম বলবে,তা জারিফ ভাবতে পারেনি।জারিফ শান্ত নজরে লিয়ার দিকে তাকায়। গম্ভীর গলায় ঠোঁট আওড়ালো,,
“সব সময় এক ধাপ বেশি বুঝা তোমার নেচার দেখছি।সব সময় দুই লাইন বেশি বোঝার চেষ্টা করো।ঠিক কি বেঠিক নির্বাচন না করেই যা মনেহয় ফট করে বলে ফেলার ব্যাড হেবিট আছে দেখছি তোমার।তুমি যেটা বলছো।আমি সেটা মিন করে বলিনি।”
জারিফের প্রথম কথাগুলো খানিকটা কটাক্ষ করে হলেও লিয়া জারিফের উত্তরে ভেতরে ভেতরে সন্তুষ্ট হলো।লিয়া পায়ের আঙ্গুল দিয়ে ফ্লোর খুঁটে যাচ্ছে।জারিফ লিয়াকে শুধায়,,”নাতাশা কোথায়?না মানে দেখছি না।”
“আম্মু নাতাশাকে খাইয়ে দিচ্ছে।”
জারিফ কয়েক চামুচ মুখে দিয়ে বোলটা টেবিলের উপর নামিয়ে রাখে।এক গ্লাস পানি নিয়ে কয়েক ঢক পানি খায়। সময় দেখে নেয়।অতঃপর লিয়াকে উদ্দেশ্য করে নরম কন্ঠে বলে,,”সন্ধ্যা হয়ে আসছে।নাতাশাকে এবার বুঝিয়ে হলেও পাঠাও , প্লিজ।ওতো সহজে রাজি হবে না।তুমি বললে শুনবে হয়তো।”
লিয়া ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়।যার অর্থ ঠিক আছে।জারিফ রাজিয়া সুলতানার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করে বিদায় নেয়।মেইন দরজার কাছে আসতেই হঠাৎ করে নাতাশা আবদার করে বলে উঠলো,,”মামা মামীকে নানুবাসায় নিয়ে চলো না।আমি মামীকে নিয়ে যেতে চাই।”
জারিফ কি উত্তর দেবে ভেবে কূল পাচ্ছে না।লিয়া একবার জারিফের দিকে তাকালো।আরেকবার নাতাশার দিকে। জারিফ কিছু বলার আগেই নাতাশার গালে হাত রেখে মিষ্টি করে বলতে থাকে,,”কিউটিপাই আমার কলেজ আছে।সামনে পরীক্ষা।বুঝতেই পারছো পড়াশোনা নিয়ে কতটা ব্যস্ত থাকবো।আর তোমার যদি আমার কথা মনে পড়ে তুমি নিজেই চলে এসো কেমন।দরকার পড়লে তোমার নীল মামুকে বলবে।নীল মামু নিয়ে আসবে।”
লিয়ার শেষের কথাশুনে জারিফের রা’গ হয়।জারিফ মনেমনে লিয়ার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়।জারিফ ভাবে,ওদিকে নীলের যেমন লিয়াকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই।এদিকে এনারো তো নীলকে নিয়ে কম আগ্রহ নেই দেখছি।ফট করে নীলের কথা বলার খুব প্রয়োজন ছিলো কি?এসব কথা মনেমনে ভাবলেও মুখে কিছুই বলে না।নাতাশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে থাকে,,”ঠিক আছে।মামী।”
জারিফ সিঁড়িতে পা দিবে এমন সময় একজন মাঝ বয়সী মহিলা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে।জারিফ সাইড হয়ে একপাশে দাঁড়ায়। ভদ্র মহিলা আড়চোখে বারবার জারিফকে দেখতে থাকে।মহিলাটি উঠতেই জারিফ নামতে থাকে।মহিলাটি ঘাড় বাঁকিয়ে একবার জারিফের দিকে তাকালো তো আরেকবার লিয়া আর নাতাশার দিকে। লিয়াদের সামনের ফ্লাটে থাকে। ভদ্র মহিলা কপাল কুঁচকে নাতাশাকে ইশারায় দেখিয়ে প্রশ্ন করে,,”লিয়া এইটা কে?”
লিয়া স্বাভাবিকভাবে বলল,,”এ হলো নাতাশা।”
লিয়ার এমন উত্তরে মহিলার কপাল কুঁচকে যায়।ভাবেন এটা আবার কেমন উত্তর? মহিলাটির কিওরিওসিটি নাতাশাকে নিয়ে নয়। বরং জারিফকে নিয়ে।ছেলেটা কে?লিয়াদের কি হয়?এই প্রথম দেখছেন তাই জানার আগ্রহটা একটু বেশিই কাজ করছে। ভদ্র মহিলা লিয়ার দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসলেন। জারিফকে ইশারায় দেখিয়ে একটু ক্ষীন আওয়াজে ঠোঁট আওড়ালেন,,”ছেলেটা কে?”
জারিফের তীক্ষ্ণ শ্রবণেন্দ্রিয় স্পষ্ট না শুনলেও হালকা ভয়েজ শুনতে পারলো।জারিফ লিয়ার উত্তর টা শোনার জন্য কানটা আরেকটু সজাগ রাখলো।লিয়া কি উত্তর দেয়,তা জানার জন্য জারিফের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়।লিয়া স্মিত হেসে বলল,,”উনি।উনি হলো নাতাশার মামা।”
দ্বিতীয়বার লিয়ার এহেন জবাবে ভদ্র মহিলার মুখায়বে স্পষ্ট বিরক্তবোধটা ফুটে উঠল। ভদ্রমহিলা বাঁকা চোখে লিয়ার দিকে তাকালেন।উনার মনে হলো লিয়া উনার সাথে মশকরা করছে। মশকরা ছাড়া কেউ কখনো এরকম জবাব দেয় নাকি? আশ্চর্য!লিয়ার এমন জবাব দেখে জারিফ বেশ অবাক হয়।জারিফ ভাবল,লিয়া তো সত্যি করে জবাবে বলতে পারতো।তবে লিয়া বলল না কেনো?তবে কি লিয়া সত্যিই ওর সিদ্ধান্তে অটল থাকবে?আর লিয়ার এতোটা কঠোর সিদ্ধান্তের পিছনে অন্যকোনো কারনই বা আছে কি?লিয়া নিচ পর্যন্ত আসে। নাতাশা হাত নাড়িয়ে বায় বলে জারিফের সাথে চলে যেতে থাকে।ওদের যাওয়ার পানে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে লিয়া।
.
সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা করতে মেডিকেলের ক্যাফেটেরিয়ায় যায় তাসনিম।আজকে নাইট শিফট আছে। কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।ভেতরে গিয়ে একটা বার্গার আর এককাপ কফি হাতে নিয়ে বসার জন্য নিরিবিলি টেবিল খুঁজতে থাকে। তাসনিমের চোখ যায় জানালার পাশ ঘেঁষে কর্ণারের একটা টেবিলে।যেখানে ডক্টর আলিফ বসে ফোন স্ক্রল করছে। তাসনিম ধীর পায়ে হেঁটে সেদিকে যেতে থাকে।যদিও খানিকটা লজ্জা লাগছিলো। তারপরেও লজ্জাটাকে আজকে একটু দূরে ঠেলে মনের ইচ্ছাকে প্রায়োরিটি দেয়। তাসনিম কাছাকাছি গিয়ে হালকা কেশে আলিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সালাম দিয়ে কোমল গলায় বলতে থাকে,,
“ওদিকটায় একটু ভিড় বেশি তো,তাই
তাসনিমের কথার মাঝেই আলিফ বলে উঠলো,,”সমস্যা নেই।আপনি বসুন।”
তাসনিম হাতে থাকা বার্গার আর কফি টেবিলের উপর নামিয়ে একটা চেয়ার টেনে আলিফের সামনা-সামনি বসে পড়ে। অতঃপর কিছু ভেবেই তাৎক্ষণিক ভাবে বলে উঠলো,,”স্যার আপনি এটা নিন।আমি আরেকটা নিয়ে আসছি।”
কফির মগটা আলিফের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে।আলিফ স্মিত হেসে বলে,,”আমি অর্ডার দিয়েছি।ঐতো চলে এসেছে।অফার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।”
একজন ওয়েটার কফি দিয়ে যায়।আলিফ কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে আড়চোখে তাসনিমের দিকে তাকায়।
মেরুন রঙের থ্রি পিসের উপর সাদা এপ্রোন।এটা যেনো তাসনিমের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্লিকি স্ট্রেইট কিছু চুল কাঁধের একপাশ দিয়ে সামনে রাখা।ফ্যানের বাতাসে কপালের উপর এলোমেলো ছোটো ছোটো কিছু চুল উড়াউড়ি করছে।আলিফ শান্ত নজরজোড়া সামনে বসা শ্যাম বর্ণের মুখশ্রীতে নিবদ্ধ করে।।তাসনিমকে দেখলে আজও আলিফের মনটা পুলকিত হয়।তবে আলিফের বিবেক সব সময় মনে করিয়ে দেয় অন্যর আমানতের দিকে দৃষ্টি দেওয়া পা’প। তাই পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।নিজের দূর্বলতাকে চেপে রাখে।আলিফ কফির মগে চুমুক দিয়ে শান্ত গলায় শুধালো,,”তা মিসেস তাসনিম আপনার সংসার লাইফ কেমন চলছে?পরম সৌভাগ্যবান ব্যক্তির সাথে মিট করার প্রচন্ড ইচ্ছে আছে আমার। একদিন আপনার হ্যাজবেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েন।”
আলিফের কথা শুনে তাসনিম বড়বড় চোখ করে তাকায়।অবাক হয়। তাসনিমের বিয়ে হয়নি।বিয়েটা ভেঙ্গে গিয়েছে। মেডিকেলের অনেকেই জানে।আর স্যারের কথা শুনে মনে হচ্ছে,স্যার বোধহয় এখনো জানে না।তিন সপ্তাহের বেশি হবে বিয়ে ভেঙ্গেছে। বিষয়টা অনেকে জানলেও স্যার জানে না।তা এখন স্যারের কথায়ই স্পষ্ট।আর স্যারের না জানারই কথা।স্যার তো আর সবার সাথে ঐভাবে মেশে না। দরকারি কথা ছাড়া কখনো মেডিকেলের কারো সাথে কথা বলতে দেখিনি আর শুনিনি।একয়দিনে রাউন্ডে পেশেন্ট আর ওয়ার্ড ক্লাসে পড়াশোনার টপিক ছাড়া ভাল মন্দ কোনো কথায়ই হয়নি স্যারের সাথে।যাক এবার যেহেতু স্যার নিজে থেকে কথাটা উঠালো, তাহলে বিয়ে হয়নি এটা বলা যেতেই পারে।এটা ভেবে তাসনিম মনেমনে আলিফের প্রতি সন্তুষ্ট হলো।আর আনমনেই অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো। অতঃপর গলা ঝেড়ে কোমল স্বরে বলতে থাকে,,
“আসলে স্যার আমি আনম্যারিড।সেদিন আমার বিয়েটা হয়নি।একটা দূর্ঘটনার জন্য বিয়েটা ভে’ঙ্গে যায়।”
কথাটা শোনার সাথে সাথেই আলিফ মাথাটা তুলে তাসনিমের শ্যামবর্ণ মায়াবী মুখশ্রীতে তাকায়।আলিফ হতবিহ্বল নজরে কিয়ৎক্ষন তাসনিমের দিকে চেয়ে থাকে।আলিফের শিড় দাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।আলিফ সৃষ্টি কর্তার প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে মনেমনেই। উফ্!কিযে প্রশান্তি হচ্ছে তা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।আলিফ নিজেকে স্থির করে একটু গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে শান্ত কন্ঠে বলল,,”ওহ্!সরি।আমি জানতাম না।না জেনে হার্ট করে ফেললাম বোধহয়।”
তাৎক্ষনিক তাসনিম ঠোঁট মেলে বলে উঠল,,”না স্যার ঠিক আছে। প্রবলেম নেই।”
আলিফ কৌতুহলী গলায় ফের শুধায়,,”কিছু মনে না করলে, একটা প্রশ্ন করতে পারি?”
তাসনিম মাথা নাড়ায়।যার অর্থ হ্যা সমস্যা নেই।আলিফ আলতোভাবে কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে নেয়। প্রশান্তির সহিত গালে থাকা কফিটুকু গলাধঃকরণ করে।আজকের কফিটা একটু বেশিই মিষ্টি মিষ্টি লাগছে।একটু অন্যরকম টেস্ট লাগছে।কফিটা বেশি স্বাদ হয়েছে নাকি সামনে বসা মেয়েটা তার একটা বাক্য দিয়ে আলিফের পুরো পৃথিবীটাই একদম পাল্টে দিয়েছে।এতো দিনের বিষন্ন মনেও পরম প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে। কোনো প্রকারের ভনিতা ছাড়াই আলিফ স্পষ্টকরে সোজাসুজি প্রশ্ন করে উঠলো,,
“বিয়েটা না হওয়ার কারন কি?না মানে দূর্ঘটনাটাই বা কী?”
তাসনিম শর্টকাটে সবটা বলে।আলিফ মনেমনে হাসে। মুচকি হাসি নিয়েই ঠোঁট আওড়ায়,,”তোমার ছোটো বোনকে বলো,আমার তরফ থেকে ওর গিফট পাওনা আছে।ও জানে না।না জেনেই আলিফ শাহরিয়ার খান এর কতবড় উপকার করেছে। ওহ্!আর তুমি করেই বললাম।?”
আলিফের কথাশুনে তাসনিম লজ্জায় মাথাটা নুইয়ে ফেলে। লজ্জা আড়ষ্টতা তাসনিমকে ঘিরে ধরছিলো।আলিফ তাসনিমের অস্বস্তি বুঝতে পেরে দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে উঠলো,,”তোমার সাথে আজকে ডিউটিতে কে কে আছে?”
তাসনিম একটা মেয়ে আরেকটা ছেলের নাম বলে।আলিফ বলল,,”ওহ্! আচ্ছা রাতে বা কখনো কোনো প্রবলেম হলে সাথে সাথে আমাকে কল করো।”
তাসনিম মাথা নাড়িয়ে বলে,,”ঠিক আছে স্যার।”
আলিফ অমায়িক হেসে বলল,,”বাইরে থাকাকালীন এত স্যার স্যার বলার প্রয়োজন নেই। আস্তে আস্তে প্রাকটিস করো।”
আরো কিছুক্ষণ ভালো মন্দ কথা চলে দুজনের মধ্যে।
.
কয়েকদিন পর,,
বিয়ে বাড়ি চারিদিকে সাজসাজ রব।নজরকাড়া ডেকরেশন করা হয়েছে ডুপ-লেক্স বাড়িটায়।চারিদিকে বিভিন্ন লাইটিং এ ঝলমল করছে বাড়ির চতুর্দিক। সন্ধ্যার পর ধরণী যখন অন্ধকারে ছেয়ে যেতে থাকলো।বাড়িটার সাজসজ্জা তত যেনো নজর কাড়তে থাকলো।আজ হলুদ কাল বিয়ে।রুপমের বিয়ে।হলুদ অনুষ্ঠানে রুপমের ক্লোজ সব ফ্রেন্ডরা সন্ধ্যার আগেই এসে হাজির হয়েছে। শুধু এখনো জারিফ আসেনি।বাড়ির সামনে বিশাল গেইট তৈরি করা হয়েছে।গেইটে বিভিন্ন নিয়ন আলোর মরিচ বাতি টিপটিপ জ্বলছে।গেইট দিয়ে একটা গাড়ি আসতে থাকে।এসে পার্কিং লনে আরো কয়েকটা গাড়ি আছে সেখানে দাড় করায়।জারিফ নেমে একটু এগিয়ে আসতেই।ওর ফ্রেন্ডরা এগিয়ে আসে।রোহান গমগমে স্বরে বলতে থাকে,,
“এই জারিফ।তোর এখন আসার সময় হলো।কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি।”
জারিফ একহাতে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করতে করতে বলল,,”আজকে আসার প্লান ছিলো না।কালকে একবারে বিয়েতে এটেন্ড করতাম।বাট তোর অতিরিক্ত ফোনকলে আসতে বাধ্য হলাম।”
রোহানের সাথে রুপম আরো এক ফ্রেন্ড শাওন ছিলো।রোহান রুপমের কাঁধে একহাত রাখে উদাস হয়ে বলতে থাকে,,”এতবার ফোনকল কি আর সাধে করেছি নাকি।তোর সাথে কথা আছে।আমাকে একটা হেল্প করতে হবে।”
জারিফ কপাল কুঁচকে দৃষ্টি সরু করে চায়।রুপম রোহানের হাতটা নিজ কাধ থেকে নামিয়ে দেয়।রোহান একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়। সন্ধ্যার আগে দেখা কিছু দৃশ্য কল্পনা করে বলতে থাকে,,”জারিফ দোস্ত।তোদের বন্ধু দেওয়ানা হয়েছে এক ল্যারকির উপর। শুভ্ররঙা ড্রেসে একদম শুভ্রপরি লাগছিলো মেয়েটাকে।দোস্ত ফার্স্ট দর্শনেই সেই লেভেলের ক্রাশ খাইছি।আ’ম ক্রাশড অন হার।মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী।বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষজন আসবে।কে কখন প্রোপোজ করে বসবে।তখন বুকড হয়ে যাবে।সেইসময় কপাল চাপড়ালেও ফিরে পাওয়া যাবে না।তাই আর্লি আমি মেয়েটাকে প্রোপোজ করতে চাই।আর জারিফ তুই আমাকে হেল্প করবি।”
জারিফ চোখ পাকিয়ে তাকায়। দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,”মাথা খা’রাপ হয়েছে আমার।এই সব বিষয়ে ভাই আমি নাই।তোর পছন্দ হয়েছে তুই প্রোপোজ করবি নাকি কি করবি?সেটা কর গিয়ে।আমাকে শুধুশুধু এর মধ্যে ইনভলব করছিস কেনো? স্ট্রেইন্জ!এইসব ফা’লতু কাজের মধ্যে আমি নাই।”
রোহান ফের একটু করুন সুরে বলল,,”আরে দোস্ত তোকে দেখলে মেয়েরা এমনিতেই ফিদা হয়।আর কারোকারো কথা মানুষের উপর তাছির পড়ে বেশি।তুই সুন্দর করে মেয়েটার সামনে আমার প্রশংসা করবি।আমাকে হাইলাইট করবি। বন্ধুর জন্য এতটুকু হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে যদি কাজ নাই করতে পারিস।”
পাশ থেকে শাওন বলে উঠলো,,”আরে জারিফ বেচারা রোহান যখন এতকরে বলছে, হেল্প কর-না ভাই।”
রুপম বলে উঠলো,,”আরে চলতো তোরা।ওদিকে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।মা কখন ডেকে গিয়েছে।যদিও এসব হলুদে আমার ইন্টারেস্টড নেই।তবুও মা আর ছোট বোনদের আবদার রাখতে হলুদে বসতে হবে।”
রোহানের চোখ চিকচিক করে উঠল। কন্ঠে চঞ্চলতা নিয়ে বলে উঠল,,”মেয়েটাকে এখন ছাদেই পাওয়া যাবে।চল জারিফ তোকে দেখিয়ে দেবো।তুই সুন্দর করে কথা বলবি।আমি পাশেই থাকবো।আর তোর ইন্টেনশন থাকবে পাশে থাকা আমার সুনাম করা আর যাতে করে মেয়েটা আমার উপর ইমপ্রেস হয়। সুন্দর সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি কথার ফাঁকে আমাকে ইশারায় দেখিয়ে বলবি , আমার বন্ধু আপনাকে পছন্দ করে।পাশ থেকে শাওন, রুপম ওরাও তোকে সাপোর্ট দিবে।”
জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। ঠোঁট চেপে বলে,,”নিজের জন্য কখনো কাউকে প্রোপোজ করলাম না।আর এখন কিনা এই গা’ধাটার জন্য কোনো মেয়ের সামনে গিয়ে আলাপ জুড়তে হবে, উফ্!আবার তাকে সেটেল করার জন্য বস্তা বস্তা মিথ্যে কথা বলতে হবে।”
রোহান ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,”মিথ্যে কথা কি বলবি?”
” মেয়েটার সামনে তোর সুনাম করতে হবে।সেটা আদৌ সত্যি হবে কী?”
রোহান একটু লাজুক হাসলো।একটু ভাব নিয়ে বলল,,”বন্ধুর জন্য তা নাহয় করলি।যা মেয়েটার সাথে সেটেল হওয়ার পর।তুই যদি সাকসেস হোস তাহলে তোকে সব জেলার বিখ্যাত বিখ্যাত মিষ্টি খাওয়াবো,পাবনার প্যারাডাইসের প্যারা সন্দেশ,বগুড়ার দই,নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম
জারিফ রোহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,”হয়েছে হয়েছে। থাম এবার।আমি এত মিষ্টি খাইনা।”
চার বন্ধু সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে থাকে।ছাদে হলুদের জন্য প্যান্ডেল করা হয়েছে।রোহান জারিফকে এটাসেটা বলেই চলছে।মেয়েটার সামনে ঠিক কি কি বলতে হবে।
চলবে,,,
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।যারা পড়বেন তারা অন্তত রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন 😒)