তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে #তাহিরাহ্_ইরাজ #সূচনা_পর্ব

0
587

” ভালোয় ভালোয় বিয়েটা করে নে উক্তি। এই শেষবারের মতো বলছি। বিয়ে পণ্ড করার জন্য যদি একটু এদিক থেকে ওদিক করিস না, জ্যা”ন্ত পুঁ°তে দেবো। কথাটা ভালোমতো মাথায় ঢুকিয়ে নে। ”

অত্যন্ত নির্দয় ও হিং’স্র স্বরে হু’মকি বার্তাটুকু শুনিয়ে দিলো জাওয়াদ। উক্তি’র পানে তাক করে রাখা তর্জনী আঙ্গুল। যে আঙ্গুল নিরবে-নৈঃশব্দে এখনো অব্যাহত রেখেছে হু’মকি। ‘ উক্তি ‘ নামক মেয়েটি সবটাই শুনলো। তবে তুললো না অবনত মাথা। বধূর সাজ অনেকাংশে সমাপ্ত। মেকআপের শেষ প্রলেপ পড়ানো হচ্ছে গৌর বর্ণের ওই মায়াবী মুখশ্রীতে। আশ্চর্যজনক ভাবে আপন বড় ভাইয়ের মুখনিঃসৃত হু’মকিতে এক ফোঁটাও নোনাজল গড়িয়ে পড়লো না, উক্তি’র দুই গভীর রহস্য বেয়ে। শুধু লালাভ রঙে রেঙেছে চোখ দু’টো। সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে জাওয়াদ হাতঘড়িতে চোখ বুলালো। হ্যাঁ, সেই আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত অতি সন্নিকটে। উপস্থিত বিউটিশিয়ান এবং বাকিদের উদ্দেশ্যে বললো জাওয়াদ,

” হাতে বেশি সময় নেই। যা আটা ময়দা মাখার দ্রুত মেখে ফেলুন। সাজলেও যা, না সাজলেও তা। ফটাফট এসব ঢঙ খতম করুন। হারি আপ। ”

তুড়ি বাজিয়ে আদেশ প্রদান করলো জাওয়াদ। পরিহিত নীলাভ পাঞ্জাবির দু হাতা একে একে গুটিয়ে তুললো কনুই বরাবর। অতঃপর বেশ অভিজাত ভঙ্গিতে প্রস্থান করলো সে স্থান হতে। ঠিক সে মুহূর্তে উক্তি’র লালিমা মাখা নয়ন গড়িয়ে পড়লো দুঃখের একফোঁটা বারিধারা। যা জানলো না, দেখলো না কেউই। নিভৃতে মুছে নিলো হবু বধূর পেলব হাতটি।
..

‘ বর এসেছে! বর এসেছে! ‘

গোধূলি লগ্ন। অত্যধিক হৈচৈ এবং আনন্দময় পরিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে এ আলো ঝলমলে ভবনটি। অধিকাংশ নারী-পুরুষ ছুটেছে ভবনের প্রবেশ পথে। সেথায় সাজানো বিয়ে বাড়ির গেট। গেটে রঙিন ফিতার অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে বরযাত্রী এবং সকলের মূল আকর্ষণ স্বয়ং বর। বরের বেশে দণ্ডায়মান সৌম্যকান্তি মুখশ্রী অধিকাংশের নজর কাড়লো। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে বহু ললনা! যাদের দু চোখে অসীম মুগ্ধতার আভাস! হা হয়ে গিলে খাচ্ছে বর’কে। বর সবটাই টের পেলো। বুঝলো বটে। তাই তো বিরক্তির উদ্রেক হলো তনুমনে। আস্তে করে বামে ঝুঁকে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সমবয়সী একজনকে ফিসফিসিয়ে বললো কিছু। চয়ন নামধারী সে যুবক ফিসফিসানি শব্দমালা শুনে আঁতকে উঠলো কেমন। তড়িঘড়ি করে বর’কে কিছু আশ্বস্ত করতে লাগলো। উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো অধরকোলে। চয়ন বর’কে আরেকটির বার ফিসফিসিয়ে কিছু এক বুঝিয়ে, তাকালো কনে পক্ষের দিকে। সৌজন্যমূলক হাসি সহকারে বললো,

” সালাম নেবেন সবাই। আর কতক্ষণ দাঁড়ায়ে থাকবো? এবার ভেতরে ঢুকি? ”

কনেপক্ষ হতে এক ললনা রঙঢঙ করে বললো,

” জ্বি, সালাম নিলাম। ভেতরে তো অবশ্যই ঢুকবেন। সারাদিন থোড়ি না দাঁড়িয়ে থাকবেন। বসতে, খেতেই তো এসেছেন। ”

কথাটা তড়িৎ আ’ক্রমণ করলো বরপক্ষের মস্তিষ্কে। ভ্রু’দ্বয়ে ভাঁজ ফেলে তাকালো বর। দু ভ্রুয়ের নিম্নে ঘোর অন্ধকারময় দু চোখ। যে চোখের অতলতার হদিস পাওয়া সকলের কর্ম নয়। বরং কষ্টকর। অন্ধকার, গভীর চোখ দুটোর ভাষা লক্ষ্য করে থতমত খেল বন্ধু চয়ন। দ্রুত বিষয়টা সুরাহা করতে জোরপূর্বক হেসে বললো,

” হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই তো। বিয়ে বাড়িতে আইছি খাইতাম না? এবার তো ভেতরে ঢুকতে দেন। ”

আরেক সুন্দরী ললনা অ্যাটিটিউড দেখিয়ে বললো,

” হ্যাঁ। ফিতাটা কেটে কাইন্ডলি আমাদের উদ্ধার করুন। শুধু শুধুই পা ব্যথা করে দাঁড়িয়ে আছি। দু পয়সা দেয়ার তো মুরোদ নেই। ”

বর দাঁতে দাঁত পিষে কিছু বলতেই উদ্যত হচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ ওর বাঁ হাত চেপে ধরলো বন্ধু চয়ন। চোখের প্রগাঢ় চাহনি ছুঁড়ে আকুতি মিনতি করতে লাগলো। বর তো বলতে পারলো না। তবে তার পঞ্চদশী ছোট বোন মুন্নি ঠিক মুখ খুললো।

” এই যে ম্যাডাম! এত ফডর ফডর করতাছেন ক্যালা? বউয়ের আমনে হন ডা কি? আদৌও কিছু হন তো, নাকি হুদাই আমগো লাহান বিয়া খাইতে আইছেন? ”

চরম অপমানিত বোধ করলো সে মেয়েটি। তর্জনী তাক করে পাল্টা আ’ক্রমণ করলো,

” হেই ইয়্যু! হু দ্য হেল আর ইয়্যু? তুমি জানো আমি কে? আই অ্যাম… ”

কথাটা অসমাপ্ত রয়ে গেল। কেননা ভারিক্কি এক গম্ভীর স্বরে থমকে গেল পরিবেশ। থামলো অশান্ত কলরব।

” এই যাত্রাপালা আর কতখণ চলতো চয়ন? মোর কিন্তু মটকা গরম হইয়া যাইতাছে। একবার যদি গারমি ধরে না…”

বরের অকথ্য ভাষাটুক ঠিক বোধগম্য হলো চয়নের। তাই তো তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো,

” হ বুঝছি বুঝছি। তুই একটু থাম দোস্ত। ”

পাশ থেকে বলে উঠলো মুন্নি,

” ক্যা? ভাইয়া থামবে ক্যা? এই ফালতু ছেমরির চুলের মুডি ধইরা জিগান লাগে হ্যায় কেডা! ”

চয়ন ধমকে উঠলো,

” চুপ কর তুই। ছোডো ছোডোর লাহান ই থাক। ”

মুন্নি অসম্মতি প্রকাশ করে বললো,

” না। থাকতাম না। মোর ভাইয়ারে এডাম সেডাম কইবো ক্যা? মোরা হ্যার খাই না পড়ি? ”

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বরের হলো মাথা গরম। টগবগিয়ে ফুটছে সমস্ত স্নায়ু। অসহ্যকর চাহনি ফেলে মেপে নিচ্ছে কনেপক্ষ হতে উপস্থিত সবগুলোকে। তেমনই মুহূর্তে সেথায় হাজির হলেন তোফায়েল সাহেব। সম্পর্কে উনি কনে উক্তি’র ফুপা হন। পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত মাঝবয়সী মানুষটি এখানে এসে অবাক!

” সে কি রে? জামাই এখনো গেটে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে নিয়ে আয়। ”

বরপক্ষ হতে জান্নাত নামক এক রমণী ঠেস মে^রে বলে উঠলো,

” ভিতরে ঢুকতে দেয়ার আদৌও ইচ্ছা আছে তো? নাকি এমনেই ফেরত যাইতাম? ”

হকচকিয়ে গেলেন তোফায়েল সাহেব! তৎক্ষণাৎ বললেন,

” না না। সে কি কথা! আপনারা আসুন না। ভেতরে আসুন। ”

অতঃপর একঝাঁক অশান্তির শেষে সুষ্ঠু রূপে বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ হলো বরপক্ষের। তবে তখনো কুঁচকে বরের ভ্রু’দ্বয়।

দশতলা এই অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে খাবারের সুবিশাল আয়োজন করা হয়েছে। বরের বসার স্থানও এই ছাদে। ছাদের একাংশে বরের জন্য সজ্জিত নির্দিষ্ট স্থান। সেথায় বরবেশে বসে বর। ডান পাশে বসে বন্ধু চয়ন। বাঁ পাশে পরিচিত কয়েকজন। সকলেই কেমন থমথমে বদনে বসে। বিয়ে বাড়িতে রয়েছে তারা। বসে স্বয়ং বরের পাশে। তবুও ফাজলামি, খুনসুটি নিষিদ্ধ তাদের জন্যে। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই ক্যা ক্যা না শুরু হয়ে যায়, সে আতঙ্কে জর্জরিত সব। তাই তো মুখ লটকে উদাস বদনে বসে। এটা বিয়ে বাড়ি না শ্রাদ্ধ বাড়ি! চারদিকে এত শুনশান নীরবতা ক্যা?! নীরব এই মুহূর্তে আকস্মিক অশান্তির আভাস! চমকালো চয়ন ও পাশে বসা ছেলেগুলো! গুটিকয়েক শব্দ, বাক্য এলো তাদের কানে। ব্যাস। এতেই অশান্ত হলো বরের মস্তিষ্ক। পারিপার্শ্বিক অবস্থায় এক বালতি পানি ঢেলে চটপট উঠে দাঁড়ালো বর ‘মুয়ীয’। তাকে এভাবে উঠতে দেখেই হতভম্ব হলো বন্ধু চয়ন! বিন্দুমাত্র বাঁধা দেয়ার পূর্বেই মুয়ীয উধাও। অগ্রসর হয়েছে ঝামেলার কেন্দ্রবিন্দুতে।

” ওই বেডি! মুই কানা না তুই কানা? তোর চৌদ্দ গুষ্টি কানা। আন্ধা বেডি! দিলি তো মোর সুন্দর শাড়িডা নষ্ট হইরা। ”

” ইয়্যু ব্লাডি ওল্ড উইমেন! শাড়ি দেখাচ্ছো আমায়! তোমার কোনো আইডিয়া আছে আমার এই পার্সটার প্রাইস কত? ”

” না কোনো পাইছ পুইছ জানি না। তুই মোর শাড়ি নষ্ট করলি ক্যা আগে হেইডা ক। হ্যারপর বাকি সব। ”

সুসজ্জিত নারীটি পাল্টা জবাব দেয়ার পূর্বেই সেথায় উপস্থিত বর মুয়ীয হাসান। গমগমে স্বরে শুধালো,

” এইহানে শুরু হইছে ডা কি? ”

তৎক্ষণাৎ নেকি সুরে কান্না আরম্ভ করে দিলেন অপর মহিলাটি। পঞ্চান্ন বছরের মোমেনা বেগম কাঁদো কাঁদো হয়ে ছেলের নিকটে এলেন। হাতটি আঁকড়ে ধরে দুঃখী স্বরে বলতে লাগলেন,

” দ্যাখ না বাপ! কোইত থে ফখিন্নি বেডি আইছে। মোর সাধের শাড়িডা নষ্ট কইরা দিছে। আবার কিসব পাইছ পুইছ কয়। মোরে খারাপ কথাও কইছে। ”

ললাটে তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুল ঠেকিয়ে ঘর্ষণ করতে লাগলো মুয়ীয। এখানে আসার পর থেকে যা সব হচ্ছে, তা রীতিমতো সহ্য সীমার বাহিরে চলে গেছে। আর নেয়া যাচ্ছে না। এবার পাল্টা জবাব দেয়া উচিত।

” কি ব্যাপার? এখানে এত ভীড় কিসের? আবার কোন ঝামেলা বাঁধিয়েছে এরা? ”

উপস্থিত জটলার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো জাওয়াদ। কিন্তু পরোক্ষভাবে দোষারোপ করলো বরপক্ষকে। অভিব্যক্তি তা-ই প্রকাশ করছে। অধরকোলে কেমন বিদ্রুপাত্মক হাসির আভা। সে আভা নিভাতে সম্মুখে এলো মুয়ীয। দাঁড়ালো একদম মুখোমুখি। নয়নে নয়ন স্থির রেখে। ভাড়ায় আনা শুভ্র রঙা শেরওয়ানি’টি মুয়ীযের গড়নে বেশ মানিয়েছে। নজরকাড়া আকর্ষণীয় লাগছে দেখছে! হবু সমন্ধির উদ্দেশ্যে থমথমে স্বরে বললো মুয়ীয,

” এইহানে মাইয়া বিয়া দিতাছেন, না যাত্রাপালার আয়োজন করতাছেন? আসার পর থে একখান না একখান নাটক চলতেই আছে। যে য্যামনে পারতাছে ধুইয়া দিতাছে। উঁচু অবস্থানে আছেন বইলা মাথা কিন্না নিছেন নি? তাইলে একখান কথা কান খুইলা হুইনা রাহেন। ”

অসন্তুষ্ট অথচ কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে জাওয়াদ। কি বলতে চাইছে এই মুয়ীয হাসান? বললো মুয়ীয, শুনলো উপস্থিত সব।

” উঁচুতে ওঠা হয়তো কঠিন। কিন্তু উঁচু থে নিচে ছিটকায় পড়তে এক মিনিটও লাগে না। তাই… সাবধান। শক্ত কইরা উঁচু আসন ধইরা বহেন। ছিটকায় নিচে… পইড়া না যান। ”

চক্ষু ভাষায় সুপ্ত হুমকিটুকু প্রকাশ করলো বর মুয়ীয। প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে ছিল অগ্নিকণা। কেমন অন্তর পুড়িয়ে যাচ্ছিল অবিরাম। প্রতিটি গণ্য মুহূর্তে ঝলসানো অনুভূতি হচ্ছিল ভেতরে। অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে জাওয়াদ। বিশ্বাস করে উঠতে পারছিল না তাদের বাড়িতে এসেই তাকে এতবড় অপমান কি করে করলো এই ছোটলোকের বাচ্চা! হাউ ডেয়ার হি!! জাওয়াদ র°ক্ত হিম করা চাহনিতে তাকিয়ে। নীরবে দেখে যাচ্ছে মুয়ীযের প্রস্থান। মায়ের দিকে এক পলক চেয়ে কি করে বরের জন্য নির্ধারিত আসন পানে এগিয়ে যাচ্ছে বর। কেমন নির্লিপ্ততা মুয়ীযের মুখভঙ্গিতে। এ কার হাতে বোনকে তুলে দিচ্ছে সে!

ঘড়ির কাঁটা তখন নির্দেশ করছে সন্ধ্যা সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিট। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে সুষ্ঠু রূপে বিবাহ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। উক্তি কায়সার নামক মেয়েটি আজ থেকে মুয়ীয হাসানের সহধর্মিণী। তার অর্ধাঙ্গী। এক জীবনের সবচেয়ে নিকটতম সঙ্গিনী। বিদায় লগ্ন এখন। বধূ বেশে লাল টুকটুকে কন্যা দাঁড়িয়ে। তাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে ক্রন্দনে ভেঙ্গে পড়েছে দু ললনা। একমাত্র বান্ধবী শিমু এবং ভাবী নিশাত। দু’জনের ক্রন্দনের ভীড়ে নির্বিকার দাঁড়িয়ে উক্তি। দু চোখে অনুপস্থিত দুঃখ, বিদায়ের ছাপ। তবে অন্তরে বিদ্যমান এক আকাশ কষ্টের হদিস নেই কো কারোর জানা। ভাবী নিশাত এবং বান্ধবী শিমু ই শুধু কাঁদলো। আর তেমন কেউ এক ফোঁটাও দুঃখ বেদনা দেখালো না। বরং মঞ্চ নাটক জোরপূর্বক দেখার মতো করে দাঁড়িয়ে। সে কি উক্তি’র অজানা? মোটেও নয়। তাই তো দ্রুত বিদায় লগ্ন সমাপ্ত হলো। ভাড়া করা বরের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে মুয়ীয এবং নববধূ উক্তি। গরমে হাঁসফাঁস করছে মুয়ীয। শেরওয়ানির কলার হালকা ফাঁক করে বাতাস আলিঙ্গন করে চলেছে। বিরক্তিকর অনুভূতি হচ্ছে তনুমনে। তেমনই মুহূর্তে আকস্মিক চমকালো মুয়ীয! ভাবী নিশাত তার একমাত্র ননদের নরম তুলতুলে হাতটি তুলে দিলো সদ্য বিবাহিত স্বামীর হাতে। অশ্রুভেজা স্বরে শুধু এতটুকুই বললো,

” মেয়েটার একটু যত্ন নিয়েন ভাইয়া। ওকে.. ভালো রাইখেন।”

প্রথমবারের মতো এমন করে বললো কেউ। কাউকে যত্নে রাখার, ভালো রাখার দায়িত্ব অর্পণ করলো। তাই তো কেমন বিভ্রান্তিকর চাহনিতে তাকিয়ে মুয়ীয। প্রত্যুত্তরে কি বলবে, নেই তার জানা।

স্বল্পমূল্যের কিছু ফুলে সজ্জিত ক্ষুদ্রাকৃতির সে ঘরটি। খাটের চার প্রান্ত হতে গাঁদা ফুলের মালা ছড়িয়ে। একত্রিত হয়েছে এসে খাটের মাঝ বরাবর উঁচুতে। রঙিন বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা কিছু গোলাপের পাপড়ি। শুভ্র রঙা তিনটে মোমবাতি জ্বলছে ঘরের বাম দেয়াল সংলগ্ন কাঠের পুরনো টেবিলের ওপর। ফুলেল সজ্জায় বধূ বেশে বসে মিসেস মুয়ীয হাসান। লাল রঙা শাড়ির ঘোমটায় আবৃত মুখশ্রী। দুরুদুরু বুকে বসে সে। কম্পিত অস্থির মন। সে কম্পনের গতিবেগ আরো দ্রুততর হলো যে মুহূর্তে খট করে উন্মুক্ত হলো দরজা। দরজা পেরিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো মুয়ীয। মেজাজ বেশ চটে। বকবক করে চলেছে একাকী,

” শা লা! বা^লের একটা জিন্দেগি! একফোঁডা শান্তি নাই। সারাডাক্ষণ খালি অশান্তি। শান্তির মায়ে য্যান ম°রছে! হহ্! ”

মাথায় পরিহিত পাগড়ি খুলে এক ঝটকায় ছুঁড়ে ফেললো বিনা গন্তব্যে। পাগড়িটি গিয়ে পড়লো একদম নববধূ উক্তি’র পা সংলগ্ন বিছানায়। কেমন শিউরে উঠলো উক্তি! আরো দ্রুততর হলো হৃৎস্পন্দন। খিঁচে বন্ধ করে নিলো দু চোখ। মুয়ীয বাঁ হাতে খামচে ধরেছে স্বীয় চুলের মুঠি। এখনো নজরবন্দি হয়নি সঙ্গিনীর অবয়ব। একাকী বিড়বিড়িয়ে চোটপাট করে ঘুরে দাঁড়ালো মুয়ীয। সে মুহূর্তে ঘন তমসাচ্ছন্ন দু চোখের তারায় ধরা দিলো তার বধূ, নববধূর অবয়ব। কিয়ৎক্ষণের জন্য স্থির হয়ে গেল মানুষটা। নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো বিছানায় অপেক্ষারত ওই আদুরে অবয়ব পানে। আস্তে করে ঢোক গিললো মুয়ীয। হঠাৎই কেমন শুকিয়ে গেল গলাটা। পানির তেষ্টা পাচ্ছে বড়ো। সে কি এক মূহুর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিল আজ থেকে এ রুমটি তার একার নয়, নতুন এক ভাগীদার রয়েছে! যে হবে তার জন্মান্তের সঙ্গিনী! বোধহয় সে ভুলেই গিয়েছিল। তাই তো এই নিষ্পলক, চমকিত ভাব! সহসা ক্ষণিকের ঘোর কেটে গেল। দপ করে জ্বলে উঠলো মস্তিষ্ক। বড় বড় কদম ফেলে এগিয়ে এলো মানুষটা। দাঁড়ালো বেশ সন্নিকটে। অত্যধিক রাশভারী স্বরে বললো,

” এই ছে’মড়ি! তোর ভাই কি সত্যিই চাকরিবাকরি করে? নাকি পাড়ার লেলাই দেওয়া গু^ণ্ডা মা;স্তান? এমন হা•রামি ক্যা? ”

চলবে।

#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#সূচনা_পর্ব

[ আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। বহুদিনের বিরতি শেষে ফিরে এলাম নতুন গল্প, এক নতুন জুটি নিয়ে। কেমন লাগলো সূচনা পর্বটি? আমার রচিত বিগত গল্পের তুলনায় ভিন্নতর কাহিনী এর। ভিন্ন সূচনা পর্ব। কেমন লাগলো পর্বটি? মুয়ীয, উক্তি জুটি চলবে কি?? আপনাদের রেসপন্সের ওপর নির্ভর করছে গল্পটির ভবিষ্যৎ।

ওহ হ্যাঁ। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় যথেষ্ট দুর্বল আমি। তাই ভাষাগত ত্রুটি হলে মার্জনার দৃষ্টিতে দেখবেন, কেমন? শুকরিয়া জানাই, এতদিন অপেক্ষা করে পাশে থাকার জন্য ❤️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here