প্রজাপতির_রং🦋
Last_Part(শেষাংশ)
#Writer_NOVA
আমার কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো,,,,
— না মেয়ে চাই!!!
আমি সবার দিকে চোখ বুলিয়ে কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দিলাম।
আমিঃ মেয়ে কি এখন আমি বানিয়ে আনবো?আল্লাহ খুশি হয়ে যা দিবে তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
আম্মুঃ আল্লাহ যা দিবে তাতেই খুশি।
আমিঃ তোমাদের জামাই,নাতি তো পুতুল বেবীর জন্য পাগল হয়ে গেছে। জানো আম্মু এনাজ ছেলের মাথাটা খেয়েছে।ওকে পুতুল বেবী চাই বলে উসকানি দিয়েছে।প্রথম যেবার অফিসে বেবীর কথা বললো।সেদিন নাভানের কানে কানে কি জানি বলে ওকে রাজী করে ফেললো।পরে জিজ্ঞেস করে জানি সে নাকি বলেছে যদি আমার কাছে পুতুল বেবী চায় তাহলে নাভানকে অনেকগুলো ট্রয়(খেলনা) কিনে দিবে। সেই খুশিতে আমার ছেলে এই যে শুরু করলো পুতুল বেবী চাই। শেষ অব্দি তার আবদার মানতে আরেকজনকে আনতেই হচ্ছে।
নূরঃ নোভা, তুই বেশি বেশি নামাজ পরে মেয়ে চাইবি।তাহলেই আল্লাহ মেয়ে দিবে।
আমিঃ আমি একা চাইলে হবে না। আপনারাও চাইয়েন।আমার ছেলেকে মেয়ের জামাই বানাতে চাইলে জলদী জলদী মেয়ে নিয়ে আসেন।
আমার কথা শুনে নূর আপি মাথা নিচু করে ফেললো।তায়াং ভাইয়া আপিকে কি জানি চোখের ইশারায় বললো সেটা দেখে নূর আপি তাকে চোখ রাঙালো।এনাজ,এনাম,নিতু,নাভান, নূর আপি,তায়াং মোট কথা সবাই মেয়ে বাবুর জন্য পাগল হয়ে গেছে। এবার আল্লাহ সবার কথা কবুল করলেই হলো।
তায়াংঃ নূর, খেয়ে রেডি হও।আমাদের বের হতে হবে তো।
আমিঃ কোথায় যাবি তুই? এই রাতের বেলা কোথাও যেতে পারবি না। তোর যদি যেতে হয় তাহলে চলে যা।নূর আপি কোথাও যাচ্ছে না।
আব্বুঃ এলেই তো সন্ধ্যার সময়।এখন আবার কোথায় যাবে রাতটা থেকে যাও,তায়াং।এত রাতে যাওয়ার দরকার নেই।
এনাজঃ কোথাও যাচ্ছিস না তোরা।এক পা বাইরে দিয়ে তো দেখ।তোর সাথে আর কোন কথা নাই।
তায়াংঃ কিন্তু এনাজ!!!
আম্মুঃ তোর খালু, জামাই যখন বলেছে থাকতে তাহলে আবার কিসের কথা।কতদিন পর সবাই একসাথে হয়েছি।আবার কবে হবে তার ঠিক আছে।
তায়াং ভাইয়া আর মানা করতে পারলো না।এনায়েতকে খাইয়ে,ঘুম পারিয়ে নীতু চলে এলো।সবশেষে আমি,নীতু ও নূর আপি খেতে বসলাম।আমার খাওয়া মাটিই গেলো।এক পিস মাছ নিয়ে খেতে বসছিলাম তারপর ইতিহাস।গা গুলানো শুরু হয়ে গেলো।বমি বমি লাগতেই না খেয়ে উঠে পরলাম।
🦋🦋🦋
সবাই একদফা গল্প করে ১২ টার দিকে ঘুমাতে গেলো।সবার বিছানা ঠিক করে দিয়ে, খাবার-দাবার গুছিয়ে আমি রুমে ঢুকলাম সাড়ে ১২টার দিকে।নীতু একা কত সমলাবে।অবশ্য আমাকে করতে মানা করেছিলো।কিন্তু আমি জোর করে বাকি কাজগুলো করে নিয়েছি।রুমে ঢুকতেই দেখি এনাজ নাভানকে ঘুম পারিয়ে ফেলেছে। সে নিজেও ল্যাপটপে কাজ করতে করতে ঝিমাচ্ছে। আমার আসার শব্দ পেয়ে ফট করে চোখ খুলে আমার দিকে তাকালো।
আমিঃ কি ব্যাপার ঘুমাচ্ছো না কেন?
এনাজঃ তোমার আসার সময় হলো?
আমিঃ রান্নাঘরের কাজ সেরে ফিরলাম।
এনাজঃ তুমি বসো আমি আসছি।
আমিঃ কোথায় যাচ্ছো? সবাই তো শুয়ে পরেছে।আগামীকাল অফিসে যাবে তো তুমি। এবার ঘুমাও।আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। একটু তেল দিলে বোধহয় ভালো লাগতো।
এনাজঃ কে বলেছিলো কাজ করতে যেতে?
আমিঃ কিরকম কথা বলো? মেয়েটা একা একা সারাদিন সব করলো।এখনো কি কষ্ট দিবো? তাছাড়া মেহমান তো আমার এসেছে। আমি যদি কাজ এগিয়ে না দেই তাহলে কি বিষয়টা ভালো লাগে।
আমার কথার মধ্যে এনাজ ল্যাপটপটা পাশে রেখে খাট থেকে উঠলো।তারপর ডেসিং টেবিল থেকে তেলের বোতল নিয়ে এলো।
এনাজঃ হ্যাঁ,বুঝেছি কামিনী মহাশয়া।এবার এদিকে আসেন।চুপ করে খাটে বসেন তো।আমাকে একটু আপনার সেবা করতে দেন।
আমিঃ তুমি তেলের বোতল দিয়ে কি করবে?
এনাজ আমার দুই বাহু ধরে খাটে বসিয়ে দিলো।তারপর কোন কথা না বলে পেছনে বসে খুব যত্ন সহকারে তেল দিতে মনোযোগ দিলো।
এনাজঃ এতো নড়ো কেন? চুপ করে বসে থাকো।আমাকে ঠিকমতো তেলটা তো দিতে দিবে।
আমিঃ কই নরলাম? এই শুনো না।
এনাজঃ হুম বলো।
আমিঃ তুমি কি ঠিকানাবিহীন বাড়ির সবাইকে আগামীকাল দুপুরে আসতে বলেছো তো? মুসকান,আদরকে বলেছো তো?কেউ বাদ রইনি তো আবার?
এনাজঃ সবাইকে বলেছি।ঠিকানাবিহীন বাসায় নিজে গিয়ে বাবা-মাকে আসতে বলেছি।আদরের বাসায়ও গিয়েছিলাম। একটা সুখবর আছে।
আমিঃ কি?
এনাজঃ তোমাকে এরিন কিছু বলেনি?
আমিঃ এরিন কল করেছিলো কিন্তু আমি ধরতে পারিনি।কিন্তু সুখবরটা কি?
এনাজঃ এরিনও তো প্র্যাগনেন্ট।
আমিঃ সেকি!!! কয়মাস?
এনাজঃ দুই মাস।
আমিঃ মুসকানের খবর কি গো? মেয়েটার সাথে ঠিকমতো কথাই হয় না।
এনাজঃ মুসকানের খবর ভালোই। ওদের পরিবারে এখনো কোন সদস্য আসেনি।তবে খুব শীঘ্রই আসতে পারে।যদি ওরা প্রসেসিং শুরু করে।
আমি মাথা উঠিয়ে এনাজের বুকে একটা হালকা চাপর মেরে বললাম।
আমিঃ ছোট বোন হয় তোমার।কথাবার্তা সাবধানে বলো।
এনাজঃ আমি কি ভুল কিছু বলছি?
আমিঃ আরিয়ানের সাথে থাকতে থাকতে তোমার মুখেও কিছু আটকায় না।
এনাজঃ নেও তোমার মাথায় তেল দেয়া হয়ে গেছে। এবার একটা বেণী করে দেই।
আমিঃ দিবে যখন মানা করে কে? নাভান কখন ঘুমালো?
এনাজঃ মিনিট দশ হবে।
এনাজ সুন্দর করে মাথায় তেল দিয়ে চুল বেণী করে দিলো।তারপর আমার মাথাটা পেছন দিকে উঁচু করে কপালে গাঢ় করে একটা চুমু খেলো।
এনাজঃ হয়ে গেছে। এবার তুমি একটু বসো।আমি আসছি।
আমিঃ কোথায় যাবে?
এনাজঃ তুমি যে রাতে কিছু খাওনি তা কি আমি জানি না ভাবছো।চুপ করে বসে থাকো।কোথাও যাবে না।
আমিঃ এখন আর কিছু খাবো না।
এনাজঃ তুমি না খাও।আমার মেয়েকে আমি না খাইয়ে রাখবো না।
আমিঃ ইস, এখন আসলের থেকে সুদের মায়া বেশি। কথা নেই তোমার সাথে। যাও ভাগো।
আমি অভিমানি সুরে কথাগুলো বলে গাল ফুলিয়ে রাখলাম।এনাজ ডেসিং টেবিলে তেলের বোতলটা রেখে আমার সামনে এসে বললো।
এনাজঃ এখন গাল ফুলালেও কাজে দিবে না। তুমি রাতে না খেয়ে ঘুমাতেই পারবে না।
🦋🦋🦋
কথাটা বলে হনহন করে কিচেনে চলে গেল এনাজ। আমি উঠে আয়ানায় সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাথার মধ্যে জামাই আমার ইচ্ছে মতো তেল দিছে।তেলের আন্দাজ করতে পারেনি।সেগুলো বেয়ে-চেয়ে আমার কানের পাশ দিয়ে, কপাল দিয়ে পরছে।সেগুলো মুছে নিলাম।বেণীটা খুব সুন্দর করে করেছে। জামার ওপর দিয়ে একটু পেটে হাত দিলাম।পেটটা এখনো ফুলেনি।স্বাভাবিকভাবেই আছে। আমি কত মোটা হয়ে গেছি😵।দিনকে দিন আরো হবো। সেটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো নাভান ঘুমের মধ্যে বিরবির করছে।আয়না দেখা বাদ দিয়ে নাভানের মুখের সামনে কান পাতলাম।
নাভানঃ না আমার একটা মেয়ে পুতুল বেবী চাই,পুতুল বেবী চাই । আমার বোইনা লাগবে।
লোও ঠেলা,পোলা আমার ঘুমের মধ্যেও বোন চাইছে।এবার আল্লাহ সবার কথা শুনে একটা মেয়ে দিলেই হলো।
এনাজঃ কি করছো?
এনাজের কথায় চমকে গেলাম।তাড়াতাড়ি নাভানের কাছ থেকে সরে চুপ করে বসলাম।
আমিঃ তোমার ছেলে ঘুমের মধ্যেও বোন চাইছে।তাই শুনছিলাম।
এনাজঃ আল্লাহ এবার কবুল করলেই হলো।এদিকে আসো।
আমিঃ আমি এখন খাবো না। আজকের মতো মাফ করো।
এনাজঃ তুমি জীবনে ভালো কথায় কিছু করলে না।আমি এখন একটা ধমক দিবো তাহলে এখানে আসবে।তাই ভালোয় ভালোয় বলছি বকা খাওয়ার আগে চলে এসো।
আমিঃ দেখেন ভাই চমক, আমারে দিবেন না ধমক।
এনাজঃ এটা কি??
আমিঃ এটা একটা নাটকের ডায়লগ বললাম আরকি।আর কিছুই না।হে হে!!
এনাজের ভয়ে আমি গুটি গুটি পায়ে ওর সামনে এসে বসলাম।সে হাত ধুয়ে আমাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য এক লোকমা ভাত মুখের সামনে ধরলো।ওমনি আমার গা গুলানো আরম্ভ হয়ে গেলো।আমি এক হাতে নাক ধরে আরেক হাতে মুখ আটকে রাখলাম।
এনাজঃ হাত সরাও।
আমিঃ আমার বমি পাচ্ছে।
এনাজঃ পাক,বমি পেলে খেয়ে বমি করবে।
ভাতের প্লেটটা নিচে রেখে আমার হাত সরিয়ে জোর করে এক লোকমা ভাত মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো।আমি কাঁদো কাঁদো ফেস করে তা বহু কষ্টে চাবাতে লাগলাম।পুরো এক প্লেট ভাত আমাকে জোর করে খাইয়ে দিয়ে তবেই উঠলো।আমি যে কত কষ্টে তা শেষ করেছি সেটা একমাত্র আমিই জানি।খাওয়া শেষ হতেই এনাজ আমাকে পানি খাইয়ে প্লেট নিয়ে কিচেনে চলে গেল।এর এত এত কেয়ারিং মাঝে মাঝে বিরক্ত ধরে যায়।যেমন এখনও ধরেছে।কে বলছিলো এখন নিজের ঘুম বাদ দিয়ে এতগুলো ভাত খাওয়াতে আমাকে।
এনাজঃ এখনো বসে আছো।ঘুমাবে না?
আমিঃ কথা নেই তোমার সাথে😶।
এনাজঃ আচ্ছা। আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলি তাহলে।
আমার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পেটের মধ্যে নিজের কানটা রাখলো।আমি একটু নড়েচড়ে সরতে নিলেই আমার দুই বাহু শক্ত করে ধরলো। যাতে আমি দূরে সরতে না পারি।
এনাজঃ আমার আম্মুটা কি করতাছে?তুমি কি ঘুমাচ্ছো মা-মণি।তোমার আম্মু দেখো কত কেয়ারলেস। ঠিকমতো খাবার খেতে চায় না।আমি জোর করে খাইয়ে দিলে উল্টো আমার সাথে রাগ করে।তুমি পৃথিবীতে এলে আমি, তুমি আর তোমার ভাইয়া মিলে তোমার আম্মুকে বকে দিবো।ওকে?
আমিঃ সরো তো।এই রাত দুপুরে কি শুরু করছো?আমি ঘুমাবো।
এনাজঃ আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলছি
দেখছো না।
আমিঃ আমার ঘুমে ধরছে।
এনাজঃ এই হুটহাট রাগগুলো কবে কমাবে? এখন তো আরো বেড়ে যাবে।সেই ক্লাশ নাইনের বাচ্চা মেয়ের মতো এখনো ছেনছেন করো।
যদিও আমি জানি কেন ক্লাশ নাইনের কথাটা বললো।তারপরেও না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম।
আমিঃ ক্লাশ নাইনে আমি এমন করতাম তা জানলে কিভাবে?
এনাজ ফ্লোরের থেকে উঠে আমার কোলে মাথা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পরলো।তারপর আমার হাত ওর চুলে রেখে বললো।
এনাজঃ মাথায় বিলি কেটে দেও তো।
আমিঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম।
এনাজঃ কেন তুমি জানো না? তোমাকে যে আমি ক্লাশ নাইনে থাকতে প্রথম দেখেছিলাম।আচ্ছা আবার বলি তাহলে।
এনাজ একটু থেমে রূপকথার গল্প বলার মতো করে বলা শুরু করলো।
এনাজঃ সেই বহুকাল আগের কথা। আমি ও তায়াং গিয়েছিলাম গ্রামে।আমাদের দুজনের একটা কাজ ছিলো।আর সেদিনই তায়াং-এর মা আমাদের পাঠিয়েছিলো সেই বাচ্চা মেয়েটার বাড়িতে।সিলেট থেকে অনেক কিছু এনেছিলো আন্টি।মূলতো সেগুলো দিতেই আমাদের গ্রামে যেতে হবে।এদিকে কলেজে সেদিন নবীন বরণ অনুষ্ঠান। তার দায়িত্ব পরেছিলো আমাদের কাঁধে। আন্টিও পিড়াপিড়ি শুরু করছে যাওয়ার জন্য। কাঁচা বাজার হওয়ায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে বলে আমাদের দুজনকে ভোরে পাঠিয়ে দিলো।সময় কম থাকায় বাসায়ও যেতে পারবো না। তাই শীতের সকালে জ্যাকেট,টুপি,মুখে মাফলার পেচিয়ে বাইক নিয়ে রওনা দিলাম গ্রামের দিকে। বাসার সামনে তায়াং তার বাচ্চা খালাতো বোনকে আসতে বলেছে।ওর কাছে সবকিছু দিয়ে আবার চলে আসবো।বাসায় গেলে আবার ঝামেলা।মেয়েটার বাসার সামনের তিন রাস্তা মোড়ে শীতে জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কারো আসার নাম নেই। বাইকে করে আসায় শীতটা বেশি লাগছে।কিছু সময় পর স্কাট পরহিত, খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে একটা বাচ্চা মেয়ে আমাদের সামনে দৌড়ে এসে থামলো।গলায় ওড়না পেঁচানো, মাথায় এক ঝুটি।পরনে পেস্ট কালার একটা সোয়েটার।শীতের সকালে তাকে খালি পায়ে আমার দিকে দৌড়ে আসতে দেখে আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।আমাদের সামনে এসে হাঁটুতে হাত রেখে হাঁপাত হাঁপাতে তায়াং কে বললো,”রাস্তায় জুতো ছিঁড়ে গেছে। তাই ফেলে দিয়ে দৌড়ে চলে এলাম।জলদী কি দিবি দে,নয়তো চলে যাবো কিন্তু।” বাচ্চা মেয়ের মুখে শাসানো কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম।সে এতটাই ব্যস্ত ছিলো তায়াং-এর সাথে কথা বলতে যে আমার দিকে খেয়ালই করিনি।জিনিসপত্র নিয়ে আবার ছুটলো বাসার দিকে।হয়তো তারও আমাদের মতো তাড়া ছিলো। সেই যে ঐ বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরে গেলাম।আজ অব্দিও তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। আর সেই মেয়েটা এখন আমার বউ।
🦋🦋🦋
আমি মিটমিট করে হাসলাম।এই ঘটনাটা আমি এনাজের মুখে আগেও বহু শুনেছি।তারপরেও আমার শুনতে ভালো লাগে। আমি মুচকি হেসে বললাম।
আমিঃ তোমাকে চিনবো কি করে? তুমি তো মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলে।তাছাড়া তায়াং ভাইয়া আসলে মাঝে মাঝেই তার কোন না কোন বন্ধুকে নিয়ে আসে।তাদের দিকে আমি কখনো তাকাতাম না।আমার ধারণা ছিলো তায়াং ভাইয়ার মতো ওর বন্ধুগুলো বদের হাড্ডি। কিন্তু আমার কাছ থেকে যখন সব আপন মানুষগুলো দূরে সরে গেলো, তখন আমি নতুন তায়াং-কে আবিষ্কার করলাম।যার মধ্যে পুরনো কোন অভ্যাসই ছিলো না।সারা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে আমাকে সেভ রেখেছে। ওর মতো ভাই পেয়ে সত্যি আমি ধন্য।কিন্তু তোমাকে আমি দেখেছিলাম অনার্স ১ম বর্ষে।সিবিআই এর ট্রেনিং শেষ করে যেদিন বিদেশ থেকে ফিরলে সেদিন তো আমি তায়াং ভাইয়ার সাথে তোমাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম।সেদিন প্রথম দেখা।আমি কিন্তু তোমাকে মনে মনে পছন্দ করে ফেলেছিলাম।তা মহাশয় আমাকে ক্লাশ নাইনে দেখলেও আমার সামনে এত বছর পর কেন এসেছিলে? যদি তোমার আগে আমাকে অন্য কেউ নিয়ে যেতো।
এনাজঃ এত সোজা নাকি😏!! এনাজের প্রাণপাখি অন্য কেউ নিয়ে যাবে।আর এনাজ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো বুঝি।কখনো না।তাকে মেরে তোমায় তুলে আনতাম।
আমিঃ হইছে ঢপ কম মারেন।কেন এতবছর পর আমার সামনে এসেছিলেন তাই বলেন।(মুখ ভেংচিয়ে)
এনাজঃ আমি নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম।নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাতে তোমার বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারি তার জন্য নিজেকে সময় দিচ্ছিলাম।আর তোমার সামনে এলে এসব বাদ দিয়ে প্রেম করতে মন চাইতো। তাই তোমার দূরে থেকেছি।তবে তায়াং-এর থেকে তোমার কম-বেশি সব খবরই নিতাম।
আমি চুপ হয়ে গেলাম।আলতো হাতে এনাজের চুলে বিলি কাটতে লাগলাম।মানুষটা আমায় একটু বেশি ভালোবাসে।এতটা ভালোবাসার যোগ্য কি আদোও আমি?তাও মাঝে মাঝে ভাবি।
এনাজঃ বাটারফ্লাই!!!
আমিঃ হুম।
এনাজঃ তোমার নাম আমি বাটারফ্লাই কেন রেখেছিলাম জানো?
আমিঃ কেন?
এনাজঃ তুমি না ছোট থাকতে অনেকটা প্রজাপতির মতো ফরফর করতে।কোন কিছুতে স্থির হয়ে থাকতে না।প্রথম দেখায় তুমি কিরকম ছটফট করছিলে।অনেক চঞ্চল টাইপের ছিলে।প্রজাপতি যেমন কোন ফুলে স্থির হয়ে থাকে না। তার মধু পান শেষ হলেই অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য ছটফট করে।তুমিও তেমন করতে।তাই তোমার নাম রেখেছিলাম বাটারফ্লাই।
আমিঃ আর আপনি আমাকে তায়াং ভাইয়ার মতো, না ভাইয়ার থেকে বেশি শাসন করতেন বলে আমি রেগে আপনাকে আনাইজ্জা কলা বলতাম।
এনাজঃ পাগলী একটা। ভালোবাসি!!!
আমিঃ আমিও।
এনাজঃ বাকি জীবনটা কি আমাকে প্রজাপতির রং-এ রাঙিয়ে রাখবে।প্রমিস আর কখনো ছেড়ে যাবো না। আল্লাহ যতদিন হায়াত রেখেছে ততদিন তোমার সাথে থাকবো।
আমি মুচকি হেসে তার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললাম।
আমিঃ রাখবো। সারাটা জীবন প্রজাপতির রং না ভালোবাসার রং দিয়ে রাঙিয়ে রাখবো।
এনাজঃ প্রজাপতির রং।
আমিঃ না ভালোবাসার রং।
এনাজঃ এটাকে ভালোবাসার রং না বলে প্রজাপতির রং বলবে।
আমিঃ আচ্ছা তাই বলবো।তবে তুমি কিন্তু আবার প্রজাপতির মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে যেয়ো না।
এনাজঃ কখনো না।আল্লাহ না নিলে আমি এই জীবনে তোমায় ছাড়ছি না।
আমিঃ তাহলে আমিও প্রজাপতির সব রং নিয়ে বাকি জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই।
এনাজঃ জানো বাটারফ্লাই, সবশেষে আমি একটা কথাই বলবো।যেটা আমি আগেও বলতাম।ভালোবাসা হলো প্রজাপতির মতো।আলতো করে ধরবে তো উড়ে যাবে। শক্ত করে ধরবে তো মরে যাবে।আর যত্ন করবে তো কাছে রবে।আমি আমার ভালোবাসাকে শক্ত করেও ধরিনি, আলতো করেও ধরিনি।বরং যত্ন করেছি।তাইতো আমার প্রজাপতি আজ আমার কাছেই রয়েছে। সবার উচিত ভালোবাসাকে যত্ন করার।
আমিঃ সবাই তোমার মতো বুঝতো।তাহলে হয়তো পৃথিবীতে নারী নির্যাতন নামক কোন শব্দই থাকতো না।
এনাজ মুচকি হাসলো।তবে কোন উত্তর দিলো না।মাথা উঠিয়ে টুপ করে পেটে একটা চুমু খেলো।তারপর শক্ত করে তার দুই হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এমনভাবে ধরেছে যেনো ছেড়ে দিলেই আমি চলে যাবো। আমি একবার এনাজের দিকে তাকিয়ে আরেকবার নাভানের দিকে তাকালাম।যেই আমিটা সাত মাস আগেও একা ছিলাম।আজ আমার সব আছে। একেই হয়তো সৌভাগ্য বলে।আজ নিজের একটা ঘর আছে, সংসার আছে, স্বামী আছে, সন্তান আছে। ভরসার একটা হাত আছে। জড়িয়ে ধরে কান্না করার জন্য একটা মানুষ আছে। আর কি লাগে আমার?আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। তিনি আমার সব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এসব ভেবে চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরলো।এনাজ চট করে মাথা উঠিয়ে ফেললো।উঠে আমার চোখের পানি মুছে দিলো।এই মানুষটা কি করে জানি বুঝে যায় আমার মনের কথা।আমি নিঃশব্দে কাঁদলাম তাও টের পেয়ে গেলো।চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আমার মাথাটা তার বুকের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে রেখে দুই হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।পারলে আমায় তার হৃৎপিণ্ডে ঢুকিয়ে রাখে।আমার আর কি করার, তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে তার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি শুনতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।ভালোবাসি এই মানুষটাকে। ভীষণ ভালোবাসি!! এই মানুষটাকে ভালো না বেসে আমি থাকতেই পারবোই না।কারণ সে যে আমার জীবনকে রাঙিয়ে দিতে, প্রজাপতির রং নিয়ে হাজির হয়েছে।
~~~~~~~~~~~~(সমাপ্ত)~~~~~~~~~~~~~
আসসালামু আলাইকুম। অবশেষে গল্পটা শেষ হয়েই গেলো।আমি জানি না এন্ডিংটা কেমন হয়েছে। তবে আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।এই গল্পে আর পুতুল বেবী আনলাম না।তবে হ্যাঁ,অন্য কোন গল্পে নিশ্চয়ই আনবো।অনেকে নোভানাজের ক্লাইমেক্স দেখতে চেয়েছেন।সেটাও না হয় পরবর্তী গল্পে দেখিয়ে দিবো।এই গল্পে বিয়ের আগের কোন কিছুই দিতে পারিনি। তার জন্য এই জুটির আরেকটা গল্প আনতে চাইছি।তবে সেটা আরো পরে।আপাতত কিছু দিন বিশ্রাম নিয়ে নতুন কোন জুটির গল্প আনবো।ততদিন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন আর নিজের খেয়াল রাখবেন।সবশেষে আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ ।আজকে অন্তত গল্পের আলোকে দুই লাইন ভালো কিংবা খারাপ বলে যান।