এক_চিলতে_রোদ #Writer_Nondini_Nila #Part_3

0
373

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_3

ইহান ভাই এর দরজার সামনে এসে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছি না।ঠিক পাঁচ মিনিট ধরে এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এক পা সামনে বাড়িয়ে পিছিয়ে নিচ্ছি ভয় লজ্জা দুটোই করছে। কালকে রাতের ইহান ভাইয়ার কথা মনে পড়ে আর লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। ভাইয়ের সামনে যেতে খুব লজ্জা করছে। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো কফি তো ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন তো খেতে পারবে না।
মনে মনে সাহস যোগাতে লাগলাম। তারপর ধীরে পায়ে দরজা হলে নিচের দিকে তাকিয়েই ভেতরে প্রবেশ করলাম।দরজা খোলে ভেতরে এক পা রাখতেই ঠাস করে কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আর আমার হাত থেকে কফিটা একদম ফ্লোরে গড়াগড়ি খেলো পরে সাথে সামনের লোক ও চিৎকার করে উঠলো,,,,
আমি ভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি ইহান ভাইয়ার হাতে পড়েছে কফি সে হাত ধরে চিৎকার করে উঠেছে। ভয়ে আমি দুই কদম পিছিয়ে গেলাম আর ভয়ার্ত চোখে ইহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার হাত ঝারছে।
হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাইয়া বিরক্ত মুখ করে খানিকটা রাগ নিয়ে বলল,,”what are you doing? Can’t see to work?”
ভয় আমি থর থর করে কাঁপছি এটা কি করে ফেললাম? আমার জন্য ভাইয়ার হাত পুড়ে গেল। ছিঃ একটা কাজ আমি ঠিকমত করতে পারি না চাচী তো ঠিকই বলে দেখা যায়। হাতের লাল হয়ে গেছে । ফর্সা হাত ভাইয়ার লাল হয়ে উঠেছে গরম কফি পড়ায়। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি দৌড়ে নিচে আসলাম আর ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে আবার একছুটে ভাইয়া রুমে গেলাম। ভাইয়া বিছানায় বসে হাতে ফু দিচ্ছিল।
আমি তাড়াতাড়ি ভাইয়ের কাছে গিয়ে হাতে টেনে নিলাম আর বরফ দিতে লাগলাম।
হাতে একদম লাল হয়ে গেছে আমার দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমার কান্না চলে এল আমি কাঁদছি আর বরফ দিচ্ছি আর ফু দিচ্ছি।

ইহানের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে সকাল বেলা উঠে কফি খাওয়ার অভ্যাস ওর। তাই নিচে কফির জন্য যাচ্ছিল। যদি কারো মনে না থাকে এজন্য। কিন্তু তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে গরম কিছু ওর হতে পরে। হাত জ্বলে ওঠে। রাগে ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই শুধু ভাঙা কফির কাপ আর কফি পরে আছে‌। বিছানায় বসে হু দিচ্ছিলো তখন কেউ ছুটে এসে ওর হাত টেনে নেয় আর বরফ দিতে লাগে‌। ওর রেগে তার দিকে তাকায় কারন ও বুঝতে পেরেছি এই ওর হাতে কফি ফেলেছে । রেগে একটা ধমক দিতে যাবে কিন্তু তাকিয়ে আর ধমকটা দিতে পারল না। মেয়েটার কেউনা ঊষা।আর ধমক দিবে কি করে এই মেয়েতো ধমক দেওয়া লাগে নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে। ইহান ভ্রু কুঁচকে ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে। ঊষা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর একদৃষ্টিতে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। বরফটা খুব যত্নসহকারে হাতে দিচ্ছে আর ফু দিচ্ছে।কখনো কারো কান্না ইহানের পছন্দ নাকেউ এমন ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদলে ওর প্রচন্ড রাগ হয়। কিন্তু ঊষার কান্না মাখা মুখ দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। ওর বিরক্ত লাগছে না। বাচ্চা মেয়েটা চোখ মুখ লাল করে কাঁদছে। দেখতে ভালই লাগছে কেন জানি না খুব ভালো লাগছে কান্নাটা কেন যেন উপভোগ করছে ইহান।
ঊষা তুই কাঁদছিস কেন ? হাতটা পুরেছে আমার কাঁদবো আমি তা না তুই কাঁদছিস?
ঊষার কান্না মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে ইহান বলল।
ইহান ভাইয়ের কথা শুনে আমি চোখভর্তি জল নিয়ে ভাইয়া দেখে অসহায় মুখ করে তাকলাম,,,
ভাইয়া আমার দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে।
“আমি খুব সরি ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে এটা করিনি। ইশ কতো খানি লাল হয়ে গেছে।
“তেমন কিছু না সামান্য লেগেছে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তোর না জ্বর! তুই এত সকালে উঠে এইসব করছিস কেন?
ভাইয়ার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম।
আমার মুখ দেখে ভাইয়া ভ্রু কুঁচকালো সেটা দেখেই আমি বললাম,
আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি জ্বর এখন একটুও নাই। বলে হালকা হাসলাম।
ইহান ভাইয়া আমার কথাটা বিশ্বাস করছে না আমি এখনো তার হাত ধরেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিজের পাশে বসতে বললো ইতস্তবোধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ভাইয়া নিজে বিছানা থেকে উঠে ডান হাত দিয়ে আমার কপাল ছুঁয়ে দিল।হুট করে ভাইয়ার স্পর্শানুভূতির কপালে পেয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমার সারা শরীর শিরশির করে উঠল।
আমি চমকে এক পা পিছিয়ে গেলাম।
ভাইয়ার ডান হাত পড়েছে। ভাইয়া ডান হাত বাড়িয়ে আমার হাতের বাহু ধরে টেনে আবার আগের জায়গায় আনলো। আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়া দেখে বড় বড় চোখ করে তাকালাম,
ভাআয়া আমার কপালে আর গালে স্পর্শ করল আবার। আমি ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছি।
আমাকে মিথ্যে বললি কেন? তোর শরীরে তো এখনো জ্বর আছে।
কথাটা বলে হাত সরিয়ে নিল।আমি চোখ মেলে তাকালাম ভাইয়া আমায় দিকে প্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি বলবো এখন ভাইয়া কে ? সে তো আর জানে না আমি এখন যদি অসুস্থতার জন্য শুয়ে থাকি আমার কপালে অনেক খারাপি আছে।
আমি তো সুস্থই একটু একটু জ্বর থাকলে কিছুই হবে না।
আমার উত্তর পেয়ে ভাইয়া চঙ্কিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ভাইয়া কিছু বলার আগেই চাচি হাঁকডাক করতে করতে ভাইয়ের রুমে এসে উপস্থিত।
এসেই ফ্লোরে ভাঙ্গা কাপ আর কফি পড়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো। সাথে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে চিৎকার করে বলল,
অলক্ষ্মীর ,অপয়া, কালনাগিনী,কি করলি তুই এটা? আমার এত সাধের কাপটা ভেঙ্গে ফেললি? এইটা আমি কক্সবাজারে গিয়ে এনেছিলাম। আমার সবকিছু ধ্বংস করে ফেললি কুলক্ষণা। বিনা পয়সায় খাওয়াচ্ছি পড়াচ্ছি থাকতে দিচ্ছি তার মূল্য এইভাবে দিচ্ছিস। ইচ্ছে করে ভেঙেছিস তাই না বলেই চাচী আমার দিকে গমগম করে এগিয়ে এলো।
আমি ভয়ে পিছিয়ে গেলাম।ভয়ে আমার হাত পা কাপছে চাচি এসে আমার গালে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উচু করে ধরল। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে মাথা কাত করে ফেলেছি।
ইহান নিজের মায়ের ডাক শুনে ঊষার হাত ছেড়ে দেয় ঊসা নিজের হাত ছাড়া পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়। তখনই মা রুমে প্রবেশ করে ভাঙ্গার কাপ দেখে ঊষাকে সামনে দেখে যা ইচ্ছা তাই বলে ওঠে। নিজের মায়ের মুখে এসব কথা শুনে ও বিশ্ময় হতভম্ব হয়ে যায়। মা এসব কথা বলবে ও কল্পনাতে ভাবি নি।নিজের মায়ের এইসব কথা শুনেও স্তব্ধ হয়ে গেছে।
এইগুলো বলেই ক্ষান্ত হয় না এগিয়ে গিয়ে ঊষাকে মারার জন্য হাত তুলে। এবার নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনা ইহান ছুটে গিয়ে মায়ের হাত ধরে ফেলে।
আর চিৎকার করে বলে ওঠে,
এসব কি হচ্ছে আম্মু তুমি ঊষাকে মারতে চাইছ কেন? ও যে অসুস্থ সেইটা কি তুমি জানো না?
ইলিনা নিজের ছেলেকে দেখে চমকে ওঠে তার খেয়ালী ছিল না এই রুমে ছেলে আছে।
কিন্তু আজকে উনি থামলেন না ওনার এত সখের কাপ টা ভেঙে ফেলেছে আর উনি ছেড়ে দেবে এটা তো হতে পারে না।ছেলেটা এখন এখানে থাকবে অযথা ছেলের সামনে এত ভালো সাজার দরকার নেই আমাদের বাসার আশ্রিতা কাজের লোক।এটা তো তুলে ধরতে হবে। আমার ছেলে বুঝতে পারবে এতদিন বিদেশে থেকে এসেছে চাচাতো বোন বলে একে ক্ষমা করবে না আমার মত এই ঊষাকে নিজের জায়গা বুঝিয়ে দেবে। ইমা টা হয়েছে সবার থেকে আলাদা বোন বোন বলে মাথা খেয়ে ফেলে।

না জানার কি আছে সব ঢং। দিনভর শুয়ে-বসে থেকেছে জ্বর চলে এসেছে।যত্তসব কামচোর একটা সারাদিন শুধু বসিয়ে বসিয়ে খাওয়া একে। বাবা-মা দুজন তো মরে বেঁচেছে আবার এই আপদ আমাদের ঘাড়ে বোঝা করে রেখে গেছে।সারাটা দিন শুধু বসে থাকবে একটা কাজ করতে গেলে এমন আকাম করবে যাতে আর কাজ না দেই।কতটা সাহস বল আমাদের খাচ্ছে আবার আমাদের জিনিস নষ্ট করছে একে মারবো না তো কি করবো?

চাচির কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
চাচা যা বলছে তার একটা কথা ওসত্যি না।
সবগুলো কথা চাচি মিথ্যা বলছে। সারা দিনই আমাকে দিয়ে কাজ করার সব কাজ আমি করি। কিন্তু এখন কি সব বলছে।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে এসব আর শুনতে ভালো লাগছে না। মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। ইহান ভাই নিজের মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তখনি চাচী ভাইয়ের হাত দেখে বলে উঠল তার হাতে কি হয়েছে?
ভাইয়া কিছু বলার আগে চাচি বলে উঠলো,,
পুড়েছে হাত।চাচি বুঝতে বাকি রইল না আমার দিকে তাকিয়ে আরো বাজে বাজে কথা বলে ভাইয়া কে নিয়ে আদিখ্যেতা করতে লাগলো।
আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,
আজকে তোর খাওয়া বন্ধ। আমার ছেলের হাত পুরিয়েছিস রাক্ষসী।
ইহান ভাইয়া তখন বলে উঠলো,
আম্মু প্লিজ ওকে এত বকো না এতে ওর একা দোষ নাই আমার দোষই ছিল বেশি।
তুই চুপ কর ওকে আমি চিনি ওই করেছে।
ইহান ভাই অসহায় মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চাচি রেগে আমার দিকে ঘুরে বললো,
খাম্বার মত দাড়িয়ে না থেকে ফ্লোর পরিষ্কার কর তাড়াতাড়ি।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। ভাঙ্গা কাচের টুকরো হাত দিয়ে ওঠানোর সময় নিজের হাত কেটে ফেললাম। থামলাম না ওইভাবেই ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করে ফ্লোর পরিষ্কার করে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
বাইরে এসে আঙুল চেপে ধরে কান্না করতে লাগলাম আর কত ব্যথা আমাকে সহ্য করতে হবে আল্লাহ।কাটা হাত নিয়ে রান্না ঘরে লতাকে সাহায্য করলাম। তারপর রুমে এসে বসে আছি।হাতে রক্ত জমাট বেঁধে আছে ওই ভাবে মুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি স্কুল ড্রেস পড়ে নিলাম।
টেস্ট পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু চাচী আমাকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। আজকে স্কুলে যেতে হবে।
রুম থেকে বের হয়ে দেখি সবাই খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। সবাই খাওয়া দেখে খেতে হলো কিন্তু চোখ সরিয়ে নিলাম রান্নাঘরে গিয়ে ভাত আর ডাল খেতে হবে। কিন্তু আজকে সেটাও চলবে কিনা জানিনা চাচি তো আমাকে খেতে মানা করে দিয়েছে। আজকে খাব‌ই না বলে বাসা থেকে বের হতে যাব তখন ইহান ভাইয়ের আওয়াজ কানে এলো ইহান ভাইয়া বলছে,,
ঊষা খাবার না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
আমি তার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরলাম। তখন চাচী রা সবাই আমার দিকে তাকালো আর চাচী ফুসে উঠে বলল,,
ওই তুই কোথায় যাচ্ছিস?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
চাচি আছে যেতে হবে আমার পরীক্ষা দুদিন পর প্রবেশপত্র আনতে হবে।
চাচি কিছু বলতে যাবে তখন পাশ থেকে ইলা বলে উঠলো, নিজের মাকে ফিসফিস করে, মা ওকে যেতে দাও আপদ বাসা থেকে গেলে কিছুক্ষণ শান্তিতে থাকতে পারি। নয় ওর মুখ আমার দেখতে মন চায় না।
চাচি কিছু একটা ভেবে চিৎকার করে আমাকে বলল আচ্ছা যা।
চাচির এত তাড়াতাড়ি রাজি হ‌ওয়া দেখে আমি খুশি হয়ে গেলাম।
ইহান ভাই এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আবার জিজ্ঞেস করে উঠলো,,, না খেয়ে স্কুলে যাচ্ছিস কেন?
ওই আমার খিদে পায়নি। এখনই লেট হয়ে গেছে আমার তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
বলে তারাতাড়ি কারো কথা না শুনে ছুটে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here