এক_চিলতে_রোদ #Writer_Nondini_Nila #Part_10

0
278

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_10

দেখতে দেখতে আমার সব গুলো পরিক্ষা শেষ হলো মোট আঠারো দিন লাগলো শেষ হতো মাঝে কঠিন পরীক্ষার আগে বন্ধ ছিলো সাথে শুক্রবার ও পরেছে দুইটা। সমস্ত ঝড় ঝাপটার মধ্যে টেস্ট পরিক্ষা শেষ করলাম এবার স্কুল অফ। এমনিতেও খুব একটা স্কুলে যেতে পারতাম না এখন তাও নেই। শুনেছি পনেরো দিন পর এক্সটা ক্লাস হবে এস এসে সির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কিন্তু তাতে বাড়তি খরচ লাগবে তাই সেটার আশা বাদ দিলাম। চাচী কিছু তেই আমাকে বাড়তি খরচ দিবে না আরো বললে ঝামেলা হবে।তাই ওইসব এক পাশে ফেলে রাখলাম।
পরিক্ষা শেষ হয়েছে চারদিন হলো আজকে শুক্রবার বার।সবাই বাড়িতে আজ সকালে উঠেই সবাইকে চা কফি দিয়ে এলাম।ইলা আপু আমাকে দিলো এক ধমক তার রুমে নক করেছি বলে।
“এই তুমি এই সাতসকালে আমার ঘুম নষ্ট করলি কেন?”
“আপু তোমার দুধ চা।”
“দেখছিস না আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে কেন আনলি অসহ্য।”
আপু বকছে আমি মাথা নিচু করে আছি বিরক্ত হয়ে চায়ের কাপ রেখে আসতে বললো।
আমি ট্রি টেবিলের উপর রেখেই তারাতাড়ি চলে এলাম এটা আজ নতুন না তাই আমার অতটাও খারাপ লাগে নি। আপু বলেছে তার চা যেন সকালে দেয় বন্ধের দিন ও তাও কারণ না হলে নাকি তার মাথা ব্যাথা করে কিন্তু তবুও প্রতিবার ই এই ধমক আমার শুনতে হয়।
ইমা আপু খাবে না জানি তাই তাকে না দিয়ে চাচীকে দিয়ে এলাম সাথে চাচার টাও। এবার এলায় ইহান ভাইয়ার রুমে কফি নিয়ে সবাই চা খায় শুধু ভাইয়া বাদে।
ভাইয়ার কফি নিয়ে গেলাম ভাইয়া ও উঠে নি বিছানায় শুয়ে আছে। খালি গায়ে বুকে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। পিঠ দেখা যাচ্ছে ফর্সা পিঠ আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। কাঁপতে কাঁপতে ভাইয়ার কাছে গিয়ে ডাক দিলাম না হলে কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই।
লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে ভাইয়ার ডাকছি ভাইয়া শেষমেষ উঠলো। বিছানায় বসে পরলো ভাইয়ার সিল্ক চুল গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে আছে আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার মুখের দিকে ভাইয়া ঘুম ঘুম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো কফি নেওয়ার জন্য। আমি কফির মগ এগিয়ে দিলাম ভাইয়া নিয়েই চুমুক দিলো সাথে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমি ভাইয়ার দিকে এক বার তাকিয়ে পেছনে ঘুরে চলে এলাম।
বিকেলে শুনলাম বাড়িতে মেহমান আসবে। ইমা আপু কে দেখতে সেই তোরজোর শুরু হলো। দুপুর থেকে। বিকেলে তারা এলো দুজন পুরুষ একজন মহিলা আর একটা ইয়াং ছেলে যাকে দেখেই চিনে ফেললাম এ তো ইমা আপুর ফ্রেন্ড। আপুর সাথে আগেও দেখা করতে এসেছে। তারাই এসেছে ইমা আপু মেরুন রঙের সুন্দর একটা শাড়ি পড়েছে আপু দেখতে এমনিতেই সুন্দর তার উপর আজকে সেজেছে খুব সুন্দর লাগছে।আমি আপুকে গিয়ে বললাম আপু তোমার সেই ফ্রেন্ড এসেছে। আপু শুনে শুধু লজ্জায় লাল নীল বেগুনী হতে লাগলো।
তারা এসে হালকা খাবার খেলো তারপর আপুকে নেওয়া হলো আমি খুশি মনে তাকিয়ে আছি ছেলেটার নাম শুনেছিলাম রিফাত। আপুর সাথে খুব মানাবে আপুকে রিফাত ভাইয়ার পাশে বসানো হলো।আমি দূরে থেকে কথা শুনতে পারলাম না। কিন্তু তারা যে আপুকে পছন্দ করেছে সিউর কারণ রিফাত ভাইয়ার মা আপুকে আংটি আর গলায় চেন পরিয়ে দিয়ে গেল। তারপর আপু কে নিয়ে আসা হলো তারা আর কিছু ক্ষন কথা বলে চলে গেল।
শুনলাম বিয়ে ঠিক হয়েছে। আপুর ও অনেক খুশি তারা এতো দিন চুটিয়ে প্রেম করেছে। বিয়ে তারাতাড়িই ঠিক হয়েছে এক মাস পর।
রাতে আপুর পাশে বসে আমি রিফাত ভাইয়ার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছি আপু লজ্জা লাল নীল হয়ে সব বলল,
কলেজে থেকে তাদের রিলেশন শুরু হয় তারপর একসাথে মেডিকেলে পরে। তাদের ভালোবাসার সাত বছর পূর্ন হয়েছে বাড়িতে আপু এক সপ্তাহ আগে জানিয়ে ছে কিন্তু কি অদ্ভুত আমি কিছু জানতে পারিনি‌। তাও মনখারাপ করলাম না যাই হোক আপুর তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে এর থেকে ভালো কি হতে পারে।
আপুর রুমে দুই রুম পরে ইহান ভাইয়ের আমি সেদিকে তাকিয়ে কি মনে করে যেন সেদিকে পা বাড়ালাম।
একটা ইলা আপুর রুমে সেটা ভেতরে থেকে লক করা আরেকটা খালি রুম। আমি ধীর পায়ে রুমের কাছে আসতেই থমকে গেলাম। কান খাড়া করে দরজার কাছে দাঁড়ালাম। খুব স্লো ভয়েজ এ গান শুনা যাচ্ছে। ভাইয়া গান গাইছে আমি দরজা ফাঁকা করে ভিতরে উঁকি দিলাম কেউ নাই কিন্তু গিটারের আওয়াজ আসছে ভাইয়া কি বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান গাইছে নাকি হবে হয়তো।
কি মিষ্টি কন্ঠস্বর ভাইয়ার এই নাও আমি দুবার গান শুনলাম কিন্তু আফসোস এটাও হিন্দি গান। তবুও শুনছি মুগ্ধ হয়ে কি অপূর্ব কন্ঠ মনটা নিমিষেই আনন্দে ভরিয়ে দেয়।আমি দরজার কাছে থেকে আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকে পরলাম আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় করছে। হার্টবিট বেড়ে গেছে দ্রুত গতিতে তবুও এগিয়ে গেলাম বারান্দায় দরজার দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে গান শুনছি।
গান শেষ হতেই থমকে গেলাম আমি ভেতরে চলে এসেছি হায় হায় ভাইয়া দেখলে আমাকে কি মনে করবে? তারাতাড়ি পেছনে ঘুরে ছুটে চলে এলাম বাইরে এসে বুকে হাত চেপে ধরে হাপাচ্ছি।

দেখতে দেখতে আরো এক সপ্তাহ চলে গেল।আজকেও শুক্রবার সকালেই জানতে পেরেছি আজ সবাই ঘুরতে যাবে আমার স্পেশাল গেস্ট রিফাত ভাইয়া। বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসতে তাই তার আগে সবাই মিলে ছোট একটা পিকনিক করবে।
এখানে বিবাহিত কেউ যাবে না যাবে ইলা আপু, ইমা আপু , ইহান ভাই, রিফাত ভাইয়ার ও তার দুই ফ্রেন্ড।
ইমা আপুর এক মেয়ে ফ্রেন্ড ও যাবে মোট আট জন। এখানে আবার ইমা আপু আমাকে ও রোগ করেছে সেটা শুনেই আমি হতভম্ব চাচী আমাকে কিছুতেই যেতে দেবে না আমি সিউর।
তাই হলো চাচী শুনেই চেঁচামেচি করতে লাগলো কথাটা তুলেছিলো সকালের খাবার টেবিলে আর শুরু হলো ঝামেলা।আমি চুপ করে রান্নাঘরে থেকে দেখছি আপু আর চাচীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে বিষয়টি আমার একটু ও ভালো লাগছে না আমার জন্য ঝামেলা হচ্ছে।
“মা প্লিজ ঝামেলা করো না এটা শুধু আমার সিদ্ধান্ত না রিফাত ও চায় ও যাতে যায় আমার সাথে।”
‘কেন ও এমন চায় কেন?
“কারণ ও জানে ঊষা আমাদের বোন কাজের লোক না। প্লিজ নিজেকে জামাইয়ের কাজে ছোট করো না আর ঊষা কখনো কোথাও যায় এইভার না হয় গেল। বেশিদিনের ব্যাপার না তো মাত্র তিন দিন একদিন যাব দুইদিন মাঝে থাক দেন চলে আসবো প্লিজ।”
চাচী খাবার ছেড়েই উঠে গেল রেগে গমগম করতে করতে রাজি হলো না।
খাবার শেষ করে ইমা আপু আমাকে নিয়ে শপিং মলে এলো আমাকে দুইটা ড্রেস কিনে দিলো একটা লং ফ্রক কালো সাদা মিক্স কালো ওরনা সাথে। আরেকটা কামিজ আমি নিব না এতো বললাম শুনলো না এসব নিয়ে তাদের সাথে বেড়াতে যেতে হবে। শুনে আমি চমকে উঠলাম।
“আপু কি বলছো চাচি তো রাজি হয়নি।”
“সেসব তোকে ভাবতে হবে না আমি সব ম্যানেজ করবো।
“কিন্তু আপু।
“কোন কথা না আমি তোর বড় তাই আমার কথায় প্রেক্ষিতে কথা বলবি না।”
আপুর কড়া কথা শুনে আর কিছু বললাম না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here