#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_25
আমি উল্টো দিকে ঘুরে আছি। শাড়ির কুচি হাতের মুঠোয় নিয়ে কেঁদে যাচ্ছি। ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করল,,
” কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন? ”
ভাইয়া আমার শাড়ি খুলে গেছে দেখতে পারেনি।
আমি পেছন ঘুরে থেকেই বললাম,,
” আমার শাড়ি খুলে গেছে।এখন কি হবে ? আমি ভেতরে যাব কি করে?”
ফুপাতে ফুপাতে বললাম।
ভাইয়া হতভম্ব হয়ে বলল, হ্যাউ টু ওপেন?
দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর গলায় বলল।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,, ” ভাইয়া আমাকে ফুপি পরিয়ে দিয়েছে শাড়ি। সে ভালো মতো পরাতে পারে না! কোন রকম পরিয়ে ছিলো। আমি সাবধানে ছিলাম। কিন্তু নামার সময় পায়ের সাথে বেজে কুচি খুলে গেছে।”
ভাইয়া হালকা রেগে বলল, ” তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ঠিক করে নে।”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,, ” আমি তো ঠিক করতে পারিনা। শাড়ি কখনো পরিনি আগে। একবার ইমা আপু পরিয়ে দিয়েছিলো। আর আজ ফুপি।”
ভাইয়া কঠিন গলায় বললো,,” সেসব পারিস না পরতে, সামলাতে সেসব কেন পরিস বুঝি না।”
ভাইয়া কপালের চিন্তায় ভাঁজ ফেলে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঘাড় বাঁকিয়ে একবার তাকালাম ভাইয়ার দিকে। রেগে চেয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে সামনে তাকালাম।
ভাইয়া আমাকে বলল,” ভেতরে গিয়ে বস।”
আশ পাশে লোক আছে। আমি মাথা নেড়ে ভেতরে গিয়ে বসলাম তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
” আমি কি ভেতর এ যাব না?”
ভাইয়া আমার চোখের দিকে বলল, ” আমি না আশা পর্যন্ত গাড়ির বাইরে আসবি না।”
” কিন্তু….
আমার কথা কানে নিল না ভাইয়া চলে গেলো।আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
ইহান মাথায় ঊষার চিন্তা নিয়ে ভেতরে এলো। ও খুঁজছে শীলাকে। সবাই রিফাতের পাশে বসে হলুদ নিয়ে মজা করছে।ওকে দেখেই সবাই চিৎকার করে উঠল।
ও আসবে কেউ ভাবেনি। সবাই খুশি হলো অনেক। ইহান শীলার কাছে গিয়ে বলল,
” আমার সাথে আয় তো একটু!”
শীলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইহানের দিকে,,
“কি হয়েছে?”
ইহান সাথে আসতে বললো। শীলার এখানে থেকে যেতে ইচ্ছা না থাকলেও গেলো।
“আরে ভাইয়া আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? বাইরে আসছো কেন?”
ইহান কিছু না বলে বাইরে এসে ঊষাকে দেখিয়ে দিলো।শীলা ঊষাকে দেখেই ইহানকে রেখে ওর কাছে গেলো।
“কি হয়েছে এখানে বসে আছিস কেন? ভেতরে চল।”
“কি করে যাব আমার শাড়ি খুলে গেছে।”
” এ্যা কিভাবে?”
সব বললাম ওকে।সব শুনে শীলা আমাকে কুচি করে হাতে দিয়ে বললো,
” এবার গুজে নে।”
শাড়ি ঠিক করে বেরিয়ে এলাম। এতোক্ষণে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। এতো ক্ষন চিন্তায় ছিলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম।
“কি রে একটুও তো সাজিস নি? এভাবে এসেছিস কেন?”
শীলার কথায় আমার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
“আমি তো সাজতে পারিনা। তাই আর সাজা হয়নি। ”
“তুই এখনো আনস্মার্ট রয়ে গেলি। একটুও সাজ খোঁজ পারিস না।আচ্ছা দাড়া একটু লিপস্টিক দিয়ে দেয় তোকে আমার ব্যাগে আছে।”
বলেই ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করলো খয়েরি। আমি দেখেই না করলাম। তবুও জোর করে নিয়ে দিলো।
“এবার তাও ভালো লাগছে। এতোক্ষণ বিধবা লাগছিলো। তুই এমনিতেই ফর্সা মেকআপ দরকার নাই।”
আমাকে ভালো করে দেখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বলল,” আমি ঠিক বলছি না ভাই। ”
আমি চমকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,ভাইয়া এখনো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। শীলার কথায় চমকে চোখ সরিয়ে সামনে নিলো আর বললো,
“তারাতাড়ি চল।”
ভাইয়া আগে আগে চলে গেলো।আমি আর শীলা পেছনে এলাম। লেট কেন হলো কোথায় গেছিলাম সব জিজ্ঞেস করলো শীলা।
হলুদের অনুষ্ঠানে এলাম। রিফাত ভাইয়াকে হলুদ দিয়ে ভূত করে ফেলছে।সবার দেওয়া শেষ আমি বাকি। আমাকে দেখেই ভাইয়া হাসি দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো। আমি ভালো আছি বলেই ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসে তাকে একটু হলুদ দিয়ে দিলাম। মিষ্টি খাওয়ানোর সময় ঝামেলা করলো রিহান। আমি ভাইয়াকে মিষ্টি ধরেছি সে ভাইয়ার পাশেই ছিলো। ফট করে চামচ টেনে নিজের মুখে নিয়ে নিলো।আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।আর বাকি সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।
রিফাত ভাইয়া বলল, ” ফাজিল তুই আমার হক খেয়ে ফেললি।”
বলেই বাহুতে থাপ্পড় দিলো। রিহান হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তাকাতেই চোখ মারলো। আমি চমকে রেগে চোখ সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সামনে তাকাতেই ইহান ভাইয়ের উপর চোখ পরলো চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। কঠিন চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে যেন চোখ দিয়েই ভষ্স করে দেবে। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে নিচে নেমে এলাম।
সবাই সবাইকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। আমি কেও একটু লাগিয়েছে রিফাত ভাইয়ের বোন। সবার সাথে দাঁড়িয়ে আছি।
খাওয়া শেষ করে।
আমরা চলে যাব তখন কোথা থেকে রিহান ভাই এলো আর ফট করে আমার গালে হলুদ লাগিয়ে দিলো। হতভম্ব হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছি। রিহান বলল,
” তোমাকে হলুদ না লাগিয়ে যেতে দেয় কি করে? শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।”
বলেই দাঁত বের করে হাসলো।সবাই চলে গেছে গেছে বাইরে আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আর রিহান কথা বলছে।তখন ইহান ভাই এলো আর আমার দিকে একবার তো একবার রিহানের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে রিহানের সামনে থেকে টেনে নিয়ে এলো।আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাইয়ার কাঁধে দিকে তাকিয়ে আছি। আবার ভাইয়ার কি হলো?
হাত জ্বলছে আমার কাচের চুড়ি বোধহয় ভেঙে হাতে ঢুকে গেছে। আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছি।
” ভাইয়া আমার লাগছে হাত ছারুন প্লিজ।”
ব্যাথায় আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।ভাইয়ার সেদিকে খেয়াল নেই টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে এলো।বাকিরা চলে গেছে শুধু আমরাই আছি। ভাইয়া আমাকে গাড়ির কাছে এনেই গাড়ির সাথে চেপে ধরলো।
আমার ব্লাউজ এ ফিতা ছিলো আর ফিতাতে ঘন্টি লাগানো ছিলো। ভাইয়া গাড়িতে চেপে ধরায় সেটা পিঠে লেগে ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠলাম।
ভাইয়া আমার দুইহাত শক্ত করে ধরে একদম আমার কাছে চলে এলো।আমি হাত ও পিঠের ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলাম। ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছি।
তখন ভাইয়া কঠিন সুরে বলে উঠলো,, ” ওই ছেলেটার সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করতে মানা করেছিলাম না তোকে। ”
আমি চোখ পিটপিট করে তাকালাম। ভাইয়া আগুন চোখে তাকিয়ে আছে।আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। হাত পা কাঁপছে।
ভাইয়া এক হাত উঁচু করে আমার গালে রাখলো যে গালে রিহান হলুদ লাগিয়েছে।সেই গাল চেপে ধরে বলল,
” আবার হলুদ লাগানো হচ্ছে।”
বলেই আমার হাত চেপে ধরলো আমি এবার আর শান্ত থাকতে পারলাম না। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলাম।
ভাইয়ার আমার ব্যাথিত মুখ দেখে ছেড়ে দিলো। আমি সরে এসে হাত ধরে কাঁদছে লাগলাম। চুড়ি ভেঙে গেছে। হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
ভাইয়া তা দেখেই সব রাগ মাটি করে ফেললো উত্তেজিত হয়ে আমার হাত ধরে টেনে দেখতে লাগলো।
আমি কেঁদেই যাচ্ছি ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাত দেখলো তার মুখটা ছোট হয়ে গেছে।
পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার হাত বেঁধে দিলো।সাথে আরেকটা কাজ করে ফেললো, আচমকা আমার হাতের নিজের ঠোট ছুঁয়ে দিলো। আমার দিকে মলিন মুখ করে তাকিয়ে বলল,
” সরি। এটা কি করে করে ফেললাম আমি।”
আমি ব্যাথা ভুলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া অপরাধী মুখ করে তাকিয়ে আছে। সারা রাস্তা কথা হলো না। বাসায় আসার পর ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেলো। আমি গেলাম ইমা আপুর হলুদ এ। সবাই ছুড়াছুড়ি লাফালাফি করছে আমাকেও দিলো আমিও দিলাম। হাত ব্যাথা পাত্তা দিলাম না মজা কি প্রতিদিন করতে পারবো।
গোসল করে ভেজা চুল নিয়ে সোফায় পা তুলে বসে আছি। রুমে জায়গা হয়নি।ইমা আপুর সাথে তার ফ্রেন্ড ঘুমিয়েছে। সবাই ঘুমে। আমি সোফায় বসে ঝিমছি। তখনই আওয়াজ পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম,,
আমার সামনেই ইহান ভাই দাঁড়িয়ে আছে কপাল কুঁচকে।
আমি তাকাতেই বললো, ” এখানে বসে আছিস কেন?”
আমি হকচকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
“ঘুমাচ্ছিস না কেন?”
“কোথায় ঘুমাবো?”
“কেন রুম কি হয়েছে?”
বলেই ভাইয়া নিজেই থেমে গেলো। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কিছু না বলেই আমাকে তার রুমে নিয়ে এলো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
“এখানে কেন নিয়ে এলেন?”
“আজ এই রুমেই থাকবি তুই তাই।” ভাই শান্ত গলায় বললো।
আমি হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ার কথা শুনে।
চলবে