#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#extra part
লোকটা কে চিন্তা করছি? যাই হোক কলিং বেল তো বাজাবো। আমি আবসা আলোতে ভেতরে এলাম। কলিং বেল বাজানোর আসায় আছি। কিন্তু বাজছে না অনেকক্ষন চলে গেলো আমি দাঁড়িয়ে আছি। এবার আমি হালকা আলোতে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে ডিম লাইট জ্বলছে এটা কারেন্ট না থাকলেও জ্বলে। আমি সেই আলোতে চারপাশে দেখছি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। আবার কলিং বেল ও বাজলো না তাহলে বাইরে কে ওটা। চোর নয়তো।
নাহ চোর কখনো গাড়ি নিয়ে আসে নাকি। আমার মাথা গেছে কি সব ভাবছি। আমি পা টিপে টিপে দরজার কাছে গেলাম না ভেতরে বন্ধ তাহলে কি কেউ আসে নি।
তাহলে বাইরে কে ছিলো? ঘুরতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম আমার পা ভিজা অনুভব করছি। পায়ের নিচে পানি এলো কি করে? এক পা উঁচু করে হাত দিয়ে দেখি পানি। বাইরে বৃষ্টি তার মানে কেউ ভেতরে এসেছে? কিন্তু আমরা কেউ তো দরজা খুলি নাই তাহলে? তার কাছে কি এক্সটা চাবি আছে? চাবি তো শুধু ইলা, ইমা, চাচা আর ভাইয়ার কাছে আছে। তাহলে এটাই ভাইয়াই। আমি সিউর। একবার রুম এ থেকে উঁকি দিয়ে আসবো নাকি?
যেই ভাবা সেই কাজ আমি সিঁড়ি দিকে গেলাম ভাইয়া রুমে যাব তাই। আমার বুকের ভেতরে টিপটিপ করছে। যদি ভাইয়া না হয় এটা ভেবে ভয় ও করছে চোর ও তো হতে পারে।বাসা খালি দেখে আবার চোর আসে নি তো। আকাশ পাতাল ভেবে ভয়ে জরোসরো হয়ে ভাইয়ার রুমের কাছে এলাম। ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছে আমি আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিলাম। রুমে চার্জার লাইট জ্বালানো। আর সেই আলোতে ইহান ভাইয়ের উদাম শরীর দেখা যাচ্ছে। ভেজা শার্ট খুলে সোফায় ছিটকে দিলো গা ভেজা তার। হাত দিয়ে চুলের পানি ঝারছে। ভাইয়ার বাম সাইট আমি দেখছি। ভাইয়াকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এই রকম উন্মুক্ত শরীর এ ভাইয়াকে দেখে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠে। আমি চোখ সরিয়ে ভাবছি ভাইয়া তিন দিন পর কোথা থেকে এলো আর এতো দিন কোথায় ছিলো?
তখন ভাইয়া কন্ঠে আমার নাম শুনে আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে ভয়ে।
ভাইয়া অন্যদিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,,,” ঊষা আমার জন্য খাবার নিয়ে আয় তো।”
কথাটা শুনে আমার চোখ কপালে ভাইয়া আমাকে দেখলো কিভাবে? আমি হকচকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। এদিকে না ফিরে বুঝলো কিভাবে আমি এখানে দাড়িয়ে আছি।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। তখন ভাইয়া আবার বলে উঠলো,,,
” সারাদিন কিছু খাইনি। প্রচন্ড মাত্রায় খিদে পেয়েছে। দাঁড়িয়ে চিন্তা ভাবনা না করে খাবার নিয়ে আয়। এই লাইট নিয়ে যা।”
বলেই বিছানায় লাইট রেখে বাথরুমে ঢুকে গেলো। আমি থমকে দরজা খুলে ভেতরে এলাম। ধরা খেতেই হলো। সারাদিন না খেয়ে কেন ছিলো? এসেই খাবার চাইছে ভাইয়া। আমি চোখ বড় করে ভাবতে ভাবতে লাইট নিয়ে নিচে এলাম। আজকে ইলিশ মাছ রান্না হয়েছিলো যেটা ভাইয়ার ফেবারিট। চাচি চলে যাওয়ায় বেচে গেছে মাছের টুকরো আমি মাছের তরকারি, বাজি, ভাত বেড়ে হাতে নিলাম প্লেট। কোথায় ছিলো যে না খেয়ে থাকতে হলো।
আমি রুমে এসে দেখি এখনো বাথরুমে থেকে বের হয় নি খাবার এনে টেবিলে রাখলাম সোফায় বসে খেতে পারবে।
পানির বোতল হাতে নিয়ে আবার বেরিয়ে এলাম। বোতল ভর্তি করে পানি এনে খাবারের প্লেট এর পাশে রাখলাম। তখন ভাইয়া বেরিয়ে এলো। আমি তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ভাইয়া গেঞ্জি আর ট্রাউজার পরে এসেছে। তাকে খালি গায়ে দেখলেই আমার বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে যায়।
বাইরে এসে আমার দিকে তাকালো তার সেই ভয়ংকর চাহনী দিয়ে যা দেখেই আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,
“খা-বা-র দি-য়ে-ছি। আমি যাই।”
তারাতাড়ি বলেই চলে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলাম। এখানে থাকা যাবে না কেমন জানি লাগছে?
ভাইয়া ফট করেই আমার হাত ধরে আটকে ফেললো আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়েই চলেছে। তার উপর ভাইয়া স্পর্শ আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো।
আমি চোখ বন্ধ করে কিছু বলতে যাব ভাইয়া তার আগেই একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললো আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাইয়া শরীর ঠান্ডা গোসল করেছে যে তার ঠান্ডা শরীর এর স্পর্শে আমি থরথর করে কাঁপছি। ভাইয়ার মাথা থেকে চুলের পানি আমার ঘাড়ে পরছে আমি চোখ বন্ধ করে আছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে এতো জোরে কেউ চেপে ধরে হাড় গুড়ো করে ফেলবে নাকি।
আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করা পারছি না।ভাইয়ার শক্তির কাছে আমার শক্তি কিছু না আমি জানি তাই তো ছুটতে পারছি না।
আমার নরাচরা ধপ করেই থেমে গেলো ভাইয়ার কথা শুনে। ভাইয়া বলছে,,
” তোর মায়ায় আমাকে কঠিন ভাবে আটকে ফেলেছিল ঊষা। এই মায়া থেকে আমি কিছুতেই বের হতে পারছি না। তোর এই মায়া কাটানোর জন্য বাসা ছেড়ে চলে গেলো। ভেবেছিলাম তোর থেকে দূরে থাকলে তোকে না দেখলে হয়তো আমি তোর এই বিচ্ছিরি মায়া থেকে বের হতে পারবো। কিন্তু না! কিছু হলো না। সব উল্টা হলো। আমি আড়ালে তোর দূরে গিয়ে আরো তোর মাঝে আটকা পরে গেলাম। প্রতিটা মুহুর্তে আমি তোকে মিস করেছি খুব মিস করেছি। বুকের ভেতর তোর জন্য কষ্ট অনুভব করেছি আর তাতে আমি বুঝে গেছি আমি তোর মাঝে থেকে আলাদা হতে পারবো না। আমার তোকে চাই শুধুই তোকে চাই। তোকে বুকের মাঝে শক্ত করে রাখবো। যাতে এই বুক থেকে কেউ তোকে নিতে না পারে। এই বুকে কতো ব্যাথা হচ্ছিল জানিস একটুও শান্তি পায়নি। এখন সেই ব্যাথা চলে গেছে তোকে নিজের বুকে নিতে পেরে। মনে হচ্ছে আমার সমস্ত সুখ এই তোর মাঝে আছে।”
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ভাইয়া আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। হাত পা কাঁপছে ও না মনে হচ্ছে আমি পাথর হয়ে গেছি। ভাইয়া আমার দিকে একনজর তাকিয়ে সোফায় বসে পরলো,,
খেতে বসলো। এক লোকমা মুখে দিয়ে বললো,,
“জানিস এই কয়দিন আমি খেতেও পারিনি। আমার খেতেই ইচ্ছে হয়নি। সব যেন একজনের দূরত্ব এ শেষ হয়ে গেছিলো।এখন আমি প্রাণ ভরে খাবো। ”
বলেই ভাইয়া খাচ্ছে আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না। ভাইয়ার বাচ্চা মো কথা শুনে আমি আরো অবাক হলাম। আমার সব কিছু তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমি আর তাকালাম না ভাইয়ার দিকে। এক হাত উঁচু করে আরেক হাতে চিমটি কাটলাম। তারপর মৃদু আওয়াজ করলাম এসব সপ্ন না সত্যি ভাই এসব বলেছে আমি থমকে গেলাম আবার। ভাইয়া আমার আওয়াজ শুনে তাকিয়ে ছিলো আমি তখন দৌড়ে বেরিয়ে আসি রুমে থেকে ভাইয়া পাগল হয়েছে। কি সব বললো? এসব সত্যি হতেই পারেনা। আমি বিরবির করতে করতে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে বিছানায় বসে পরলাম।
আমার হাত পা অসম্ভব কাঁপছে। আমি হাঁটু ভাঁজ করে বসে মাথা রেখে চোখ বড় করে ভাইয়ার কথা ভাবছি। সব কথা গুলো আবার রিপিট হচ্ছে আমার কানে।
তখন জানালা দিয়ে বাতাসে এক ঝাপটা পানি এসে আমার নাক মুখ ভিজিয়ে দিলো।আমি চমকে মাথা তুলে সামনে তাকালাম। আবসা অন্ধকারে বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু আমি সিউর জানালা খুলে রাখার জন্য রুমের ফ্লোরে ভিজে ছুপছুপে হয়ে আছে। তারাতাড়ি উঠে গেলাম। জানালা অফ করে ঘুটঘুটে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পরলাম। চোখে ঘুম মাথা চিন্তা নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পরলাম। অনেক রাত গেছে তাই ঘুমের মাত্রা বেড়ে গেছে।
আজকে বৃষ্টিতে বজ্রপাত ছিল না শুধু বাতাসার বৃষ্টি ছিল। এজন্য আমি একটুও ভয় পাইনি।
#চলবে
( ইহান তো মনের কথা বলে দিলে এবার ঊষা ওকে মেনে নেবে নাকি নেবে না?)