এক_চিলতে_রোদ #Writer_Nondini_Nila #Part_40

0
182

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_40

হাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে বসে আছি চেয়ারে। আর আমার দৃষ্টি হাতের মধ্যে। যেখানে ইহান নাম লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। আমার পাশে বসে দিনা যে আমার মেহেদীর প্রশংসা করতে ব্যস্ত।

দিনা বললো, “ঊষা তোমার মেহেদির ডিজাইন বেশি সুন্দর হয়েছে। আপুর টার থেকে ও। ইহান ভাইয়ার পছন্দ খুব সুন্দর তাইনা।”

আমি ওর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম। ইহান ভাই দিনার ভাই তামিম এর সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে।
ইমা আপু হাতে মেহেদি লাগাচ্ছে। তিন্নি আপু তার বান্ধবী দের সাথে গল্পে ব্যস্ত। একটু আগের কথা ভাবতেই লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি।

আমি ভাইয়া থেকে চোখ সরিয়ে আবার হাতের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।

বিকেলে ভাইয়ার রুমে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর যখন চোখ খুললাম আমার মুখের সামনে দিনাকে বসে থাকতে দেখি।ও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। আমি ওকে দেখে অবাক হয়ে যায় আর চোখ খুলে বুঝতে পারি আমি ভাইয়ার রুমে আছি। কিন্তু ভাইয়া রুমে নাই। দিনা বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমার চোখ খুলে তাকানো দেখে জিজ্ঞেস করে, “ঊষা তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ কেন? এটা তো ইহানের রুম। তুমি সেই যে এলে আর গেলে না পরে আমি এসেও দরজা ভেতর থেকে আটকানো পেলাম। তোমরা দুজন ভেতরে কি করছিলে?”

আমি ওর কথায় চমকে উঠে বসলাম। এই মেয়েকে এখন আমি কি বলবো? দিনা আমাকে পুলিশের মতো জেড়া করছে। তখন ইমা আপু এলো আর আমাদের কাছে এসে দিনাকে বলল,

“সেসব জেনে তুমি কি করবে দিনা?”

দিনা বলে, ” ভাবি ঊষা ইহানের রুমে ছিলো জানো।এখানে ঘুমাচ্ছিলো।”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছি। ছিঃ আপুর সামনে এসব কি করে যে ঘুমিয়ে পরলাম আর ভাইয়া কোথায় গেছে?

আপু আমার দিকে একবার তাকিয়ে দিনার দিকে তাকিয়ে বললো,
” জানি।”

‘তুমি কি বলবা না? এসব কি ?”

“কি বলবো?”

দিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বলছে না কেন কিছু ও ভাবছে।

ইমা আপু দিনাকে গড়গড় করে বলে দিলো আমার আর ইহান ভাইয়ের বিয়ে হবে। বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছোট থেকে। আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে আমার হাত টেনে আংটি দেখালো। দিনা সব শুনে থ মেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি। সত্য মিথ্যা কি সুন্দর বলে দিলো আপু।

দিনা চোখে মুখে চরম বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

আপু আমাকে বললো, ” উঠ আর কতো ঘুমাবি। একটু পর মেহেদি দেওয়া হবে যা রেডি হয়ে ওইপাশে যা। সবাই নাচবে গাইবে দিনার সাথে রেডি হয়ে আয়।”

দিনা আমাকে নিয়ে ওর রুমে এলো। আর আমার দিকে কোমরে দিয়ে তাকালো। তারপর গালে ফুলিয়ে বললো,

“তাই তো বলি আমি ইহানকে নিয়ে সরি, ইহান ভাইকে নিয়ে কথা বলায় মুখটা ওমন করে কেন রাখছিলি।”

আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি।

“আগে বলবি না এই কাহিনী। তাহলে কি তোর বরের দিকে নজর দিতাম নাকি‌ আমি ওতো খারাপ না হু।”

আমি আমতা আমতা করে বললাম, “আমি খারাপ বলেছি নাকি!”

“বলো নি মনে মনে ঠিক বলেছো জানি। ইহান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে এসব শুনে তো আমি অবাক। যাই হোক তোমাদের কিন্তু খুব মানাবে।”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম।

“আচ্ছা তোমরা এক রুমে কি করছিলে?”

আমি থমকে গেলাম।

“ও এগিয়ে এসে বললো। আহারে ক্রাশ খেতে খেতে ছ্যাকাও খেলাম।”

বলে মনে খারাপ করে তাকালো। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ও এগিয়ে এসে বললো,

“ইহান ভাই তোমাকে খুব ভালোবাসে তাইনা।”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।

“ওয়াও কী লাকি তুমি!”

আর কিছু বললো না আমাকে রেডি হতে বললো। আমাকে একটা ড্রেস দিলো ওর ড্রেসের মতো। নীল রঙের লেহেঙ্গা। সবাই এই এক কালারের ড্রেস পরবে। আমার আনা ড্রেস পড়া হলো না‌। আমি সাজতে পারিনা তাই দিনা আমাকে সাজিয়ে দিলো। চুল মাঝে সিথি কেটে দুই পাশে ফুলিয়ে ছেড়ে দিলো ও নিজেও আমার মতো করেই সাজলো। আমি চুড়ি এনেছিলাম তাই নীল চুড়ি পরলাম। দিনা ব্যাসলেট পরলো। তারপর আমরা ছাদে চলে এলাম সাতটার দিকে।কতো মানুষ এসেছে অনুষ্ঠান নাচ গান হবে যে। দেখার জন্য আশেপাশের আর আত্মীয় স্বজন সবাই আছে। ইমা আপু চাচি কে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো। আমি তিন্নি আপুকে দেখলাম। তিনি রানী গোলাপি রঙের ড্রেস পরেছে। তারটা ভিন্ন ব‌উ বলে কথা। তার দুই হাত ধরে বসে দুজন অপরিচিত মুখের অধিকারী মানুষ মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।

ইহান ভাইকে নীল রঙের জিন্স আর শার্ট পড়া দেখলাম। তিনি পাঞ্জাবি পরে নি দিনা বললো সবাইকে দিয়েছে সে নাকি পরবে না তাই ম্যাসিং করে শার্ট পরে এসেছে।
ভাইয়া রিফাত ভাইয়া আর কয়েকজনের সাথে দাড়িয়ে আছে। দিনা আমাকে রেখে ওর একটা ফ্রেন্ড এসেছে তার কাছে চলে গেলো।

আমি হাঁটতে হাঁটতে চাচির কাছে গিয়ে পরলাম।চাচির সাথে আরো কয়েকটা মহিলা বসা ছিলো তারা আমাকে দেখেই ডাকলো। আমি চাচির দিকে তাকিয়ে মুখ কাচুমাচু করে এগিয়ে যেতেই তারা চাচিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

আপা এটা আপনার ছেলের হবু বউ তাইনা। মাশাআল্লাহ কি সুন্দর দেখতে। মেয়ে তো আপনার দেওর এর মেয়ে তাইনা‌। দেওর মারা গেছে শুনলাম আহারে মেয়েটা ছোট বয়সেই এতিম হয়েছে। আপনারা খুব ভালো মানুষ এই অনাথ মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন আবার ছেলের বউ করবেন সত্যি এমন ভালো মানুষ। এমন আমি খুব কম দেখেছি।

বলেই আমাকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চাচি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাবে যেন। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এর এসব কি বলছে?

একটু পর ঘটনা ক্লিয়ার হলো,

“আপনার মেয়ে মানে আমাদের রিফাতের ব‌উ আমাদের সব বললো। না হলে জানতেই পারতাম না।”

আপু সবাইকে এসব বলেছে। অবাক হয়ে সেখানে থেকে চলে এলাম। দিনারা নাচবে এখন তাই গান ঠিক করছে। আমি একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন ভাইয়া এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।

আমি মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া বললো,

“কি হয়েছে?”

আমি বললাম, “আপু সবাইকে কি সব বলছে জানেন?”

“কি বলেছে?”

“আমার আর আপনার নাকি বিয়ে ঠিক। আরো অনেক কথা। চাচি তো খুব রেগে আছে।”

“ভালোই তো করেছে। আপুকে আমার থ্যাক্স দিতে ইচ্ছে করছে।”

“কেন?”

“এসব বলার জন্য।এখন সবাই জানে তুই আমার হবু বউ। তাই কেউ আমার সাথে তোকে দেখলে খারাপ ভাববে না।”

আমি চোখ বড় তাকালাম।

ভাইয়া চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললো, ” তোকে নীল কালারের মানায় না রে ঊষা।”

আমি বললাম, “মানে।”

“মানে তোকে দেখতে ভালো লাগছেনা। ”

আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আজ মনে হয় সত্যি ভালো লাগছে না কেউ তো আমার প্রশংসা করে নি।

আমি নিচের দিকে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছি‌
ওইদিকে দিনা নাচছে দেখতেও ইচ্ছে করছে না। ভাইয়া আমাকে টেনে স্টেজ এর পেছনে নিয়ে এলো। আর আমাকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড় করিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, “কি হলো এখানে আনলেন কেন?”

‘আচ্ছা তোর কি মনে খারাপ হয়েছে? সুন্দর লাগছে না বলে?”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম। আমার তো মন খারাপ হয়েছে কিন্তু আমি বলবো না।

“কি হলো আমার মুখে প্রশংসা শুনতে চাস?”

আমি ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেললাম কি সর্বনাশ আমার ভাইয়ার মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে করছে। আমি নিজের এমন নির্লজ্জ ইচ্ছে কি করে বলবো। পারবো না আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠোঁট শুকিয়ে আসছে আমি বার বার ভিজিয়ে নিচ্ছি জিভ্বা দিয়ে ঠোঁট। ভাইয়া আমার থুতনি ধরে মুখটা তুলে বললো” কি হলো এমন হাঁসফাঁস করছিস কেন?”

আমি বললাম, ” সবাই নাচছে চলুন দেখি?”

ভাইয়া ছারলো না।

আমি বললাম, ” আমাকে তো ভালো লাগছে না দেখতে তাহলে এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

ভাইয়া ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি টেনে বললো, “আমার জিনিস সুন্দর লাগলেও আমি তাকায় থাকবো। না লাগলেও তাকায় থাকবো তোর কি?”

ভাইয়ার কথা শুনে থমকে চুপ করে গেলাম। ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলো।

“দেখা শেষ হবে না আমার। তাই চল যাই‌।”

বলে হাত ধরে টেনে অনুষ্ঠানে এলো। তখন দিনা দৌড়ে এলো আর আমাকে আর ইহান ভাইকে টেনে নিয়ে বললো নাচতে। কিন্তু ভাইয়া নাচবে না না করছে। আমি জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নাচতে হলে লজ্জায় পারবো। এতো মানুষের সামনে আমি নাচতেই পারবো না। কিন্তু ভাইয়া রাজি হলে আমি না করতে পারবোনা।
আল্লাহ কে ডাকছি যেন রাজি না হয়। কিন্তু রাজি হলো তাও একা না ভাইয়া আর আমি আর ইমা আপু আর রিফাত ভাই‌ তাই ইহান ভাই রাজি হয়েছে।

একটা হিন্দি গান ছারলো আর শুরু হলো নাচ।আমি নাচতে পারিনা বলে চুপ করে কোনায় সরে দাঁড়িয়ে আছি।
রিফাত ভাই আর ইমা আপু নাচছে। আমাকে না পেয়ে ভাইয়া চলে এলো আমার কাছে।

‘চল। ”

“আমি নাচবো না। আমি নাচতে পারিনা।”

“তোর নাচতে হবে না। আমার সাথে খালি তাল মিলাবি”

“তাও পারবো না। এতো মানুষের মধ্যে আমি কিছু করতে পারবোনা।”

“চল।”

“না।”

ভাইয়া বিরক্ত হয়ে রেগে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। আমি আঁতকে হাত ছারানোর চেষ্টা করছি পারছিনা।

ভাইয়া আমাকে কোমর জড়িয়ে ধরলো। আমি আশেপাশে তাকাচ্ছি। সবাই খুব ইনজয় করছে। কিন্তু কিছু মহিলা কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। গ্ৰামে এটা স্বাভাবিক।

চাচি আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি সবার দিকে।

নাচ শেষ হতেই আমি রেগে মেগে চলে গেলাম। ভাইয়া আমার পেছনে এলো।

“আপনি আমার আশেপাশে আসবেন না ছিঃ সবার সামনে আমাকে নাচিয়ে ছারলেন?”

“আমরা একা নাকি আপুরা ও ছিলো।”

‘তো কী তারা হাজবেন্ড ওয়াইফ আর আমরা?”

“আমরা ও হবো তো।”

আমি এই প্রথম ভয় চোখে না রাগী চোখে তাকালাম। তা দেখে ভাইয়া বললো,

“ও মাই গড তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিস না উল্টা রাগ দেখাচ্ছিস?”

আমি রাগী চোখে তাকিয়ে আছি খুব রাগ লাগছে আমার।

ভাইয়া বললো,

“আমি তো এমন ঊষাকেই চাই। যে আমাকে ভয় পাবে না। যার চোখে থাকবে অফুরান্ত ভালোবাসা, যে আমাকে রাগ দেখাবে, রেগে গাল ফুলিয়ে রাখবে। আমি তার রাগ ভাঙাবো। তার ছোট ছোট আবদার পূরণ করবো। তাকে খুব ভালোবাসবো।

আমি রাগ ভুলে মুগ্ধ নয়নে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এসব তো আমার কল্পনা। আমি এমন একজন চাইতাম। ভাইয়া জানলো কি করে?

“কি ভাবছিস?”

হকচকিয়ে বললাম, কিছু না।

ভাইয়া আমাকে বললো, মেহেদী দিবি।

আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি?

‘হুম। মাথা নাড়িয়ে বললো।

“আমি কেন?

“আয় দিবি আর আমার নাম লিখবি।”

“কিন্তু?”

“কোন কিন্তু না চল।”

বলেই মেহেদী আর্টিস্টদের ডেকে নিজে আমার পাশে বসে পরলো আমাকেও চেয়ার টেনে বসিয়ে। তারপর তার ইচ্ছা মতো ডিজাইন বলে মেহেদী দেওয়া লো আমি নিরবে সব দেখলাম। আমার হাতের মাঝে ভাইয়ার নাম লেখালো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here