#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৭
.
রান্নাঘরে কাজের মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে টুকটাক কথা বলছিলাম আর হাতে হাতে কাজ গুলো করে দিচ্ছিলাম৷ কিছুক্ষণ আগেই হ্যাভেন ফোনে বেডরুমে যেতে বলেছিলো৷ কিন্তু ভয়ে যাওয়ার সাহস হয়নি। আবার না যেয়েও স্বস্তি পাচ্ছিলামনা৷ দোটানায় পড়ে কাজ করছিলাম।
রান্নাঘরের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে এক হাত পকেটে গুঁজে দিয়ে বাঁকা হাসি দিচ্ছিলো হ্যাভেন। কাজের মেয়েটা ওকে দেখে চলে যায়। আমি কাঁপা হাতে প্লেটগুলো গুছিয়ে রাখি আর বলি,
-‘ আপনি রুমে যান আসছি আমি ‘।
-‘ নিজে যেতে পারলে তখনি যেতে সুন্দরী ‘। বলেই এগিয়ে এসে আমাকে কোলে তুলে নেয়। একদম রুমে গিয়ে নামিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। নিচে কাজের মেয়ে আর আমার বড় দেবর হ্যারি ছিলো। লজ্জায় চোখ, মুখ খিঁচে ছিলাম৷ আমি হাজার লজ্জা পেলেও ও বাড়ির প্রতিটি লোকই এসব স্বাভাবিক নিতো৷ তবে শ্বশুরের সামনে কখনো এমন কিছু ঘটতো না ঘটাতো না হ্যাভেন। এই একটা লোককেই বোধহয় কেয়ার করে ওনি।
আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসায়। মাথার ঘোমটা সড়িয়ে দিয়ে পুরো মুখে ফুঁ দিতে থাকে। আমি জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকি। ওনি ঠিক কি করবে না করবে কিছু বুঝতে পারছিলাম না৷ শাস্তি দেবে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছিলো না৷ নানারকম আহানা, বাহানা করে বুকে টেনে নিলেন আমায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
-‘ বিয়ে মানো না, স্বামী মানো না তাহলে কিসের এতো কৌতূহল আমায় নিয়ে ‘।
-‘ ভালোতো বাসেননা তাহলে কেনো এভাবে আটকে রাখতে চাইছেন আমায়’?
কথাটা শুনে ছেড়ে দিলেন আমায়। হো হো করে হাসতে হাসতে বিছানায় ধপাশ করে শুয়ে পড়লেন। বললেন,
– ‘ ভালো না বাসলে তুমি এখনো আমার বউরূপে এ বাড়িতে রয়েছো কি করে সুন্দরী ‘?
ছলছল চোখে তাকালাম ওনার দিকে। আমার সে তাকানো দেখে চট করে ওঠে বসলেন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,
-‘ তোমরা মেয়েরা বড্ড লোভী। আর তুমি হচ্ছো মারাত্মক লেভেলের লোভী একটা মেয়ে। আর আমি তোমার থেকেও একশ ধাপ এগিয়ে ‘ বলেই চোখ মেরে আমার দু’কাধে ধরে বিছানায় ফেললেন। নিজের সম্পূর্ণ ভাড় আমাকে দিয়ে আমার কপাল থেকে গাল অবদি এক আঙুলে স্পর্শ করলেন। আমি চোখ বুজে ফেললাম। আমার সে বন্ধ চোখের পিঠে আলতো ঠোঁট ছোঁয়ালেন। চোখ মেলে তাকাতেই সেই বিশ্রি হাসিটা দিলেন। আমি লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। ওনি সেসবে পাত্তা না দিয়ে আমার সারা অঙ্গে ওষ্ঠ ছোঁয়া দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।
সেদিন দুপুরে আমি বা ওনি কেউ রুম থেকে বের হইনি। দীর্ঘ সময় ওনি আমাতে মত্ত ছিলেন। যখন আমাকে ছাড়লেন তাঁর ঠিক আগের মূহুর্তে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
-‘ আমি ভীষণ লোভী শুধু এই শরীরে আমার লোভ সীমাবদ্ধ থাকেনি আহি। তোমার বক্ষঃস্থলে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে থাকার লোভ জন্মেছে আমার। তোমার বক্ষঃস্পন্দনে আমার যে নাম রয়েছে সেই নামের স্বীকৃতি পাওয়ার লোভ জন্মেছে। যতোদিন না এসব হচ্ছে ততদিন তোমার অভিনয়েই নিজেকে তৃপ্ত করবো। কিন্তু অভিনয়ে ভুল যতো বেশী থাকবে শাস্তি ততো তীব্র হবে ‘।
.
সেদিন রাতে আবারো হ্যাভেন মদ্যপান করে বাড়ি ফেরে। রুমে ঢুকেই আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তখনি ওনার গা থেকে মদের গন্ধ পাই আর বুঝি ওনি নেশা করেছেন। কি আশ্চর্য ওনি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকলে দূর থেকে কখনোই বোঝা যায় না ওনি নেশা করেছেন৷ ব্যাবহারেও স্পষ্ট ধরা যায় না। শরীর থেকে, মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেই ধরা যায় লোকটা নেশা করেছে। এও হয়? সেদিন সত্যি বুঝতে পারি লোকটা সুস্থ অবস্থায় মাতাল থাকে। ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে বসাই ওনাকে কিন্তু ওনি শুয়ে পড়ে। গায়ের শার্ট খুলে দিয়ে টিশার্ট পড়িয়ে দেই। এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে মাথার নিচে বালিশ দেই৷ সব ঠিকঠাক করে ওঠে যেতে নিতেই হাত আটকে ধরে ওনি। ওনার দিকে তাকাতেই সেদিনের মতো সেই অদ্ভুত হাসি দিয়ে অদ্ভুত চোখে তাকায়। বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে আমার। কি সুন্দর সে হাসি কি সুন্দর সে চাহনী! ওনার সেরূপ আমার হৃদয়ে অন্যরকম এক অনুভূতির সৃষ্টি করে দিতো তা হয়তো কোনদিন ওনি জানতেও পারবে না।
-‘ আহি,বুকে মাথা রাখো ‘।
সেদিন দুবার নাম ধরে ডেকেছেন ওনি আমায়। যে সুন্দরী ডাকটা শুনে বিরক্ত হতাম সে ডাকটাকে বড্ড মিস করছিলাম তখন৷ কেমন যেনো মিশ্রিত অনুভূতি আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে নিচ্ছিলো আমায়৷ ধীরে ধীরে ওনার বুকে মাথা রাখি। আমি বুঝে যাই হ্যাভেনের মাঝে দুটো সত্তা রয়েছে। তবে এ দুটো সত্তার মাঝে একটি সত্তার প্রতি আমার ভীষণ দূর্বলতা কাজ করে সেটি হলো যখন ওনি মদ্যপান করে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকে। হঠাৎই ধীর কন্ঠে বলে ওঠেন,
– ‘ যতোক্ষণ আমার মুখ চলবে ততোক্ষণ চুপচাপ এভাবেই থাকবে ‘।
আমি ঘোর কন্ঠে বলি ‘হুম’ আর ওনি বলতে শুরু করেন ওনার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই সর্বনাশের কথা। শুধু কি ওনার সর্বনাশ? না ওনার সাথে সাথে আমারও সর্বনাশ ছিলো সেই ঘটনাটি। যখন ধ্বংসলীলা সৃষ্টি হয় তখন কেবল একটি বস্তু, একটি স্থান একটি মানুষের জীবনই ধ্বংস হয় না৷ পারিপার্শ্বিক সব কিছুরই বিনাশ ঘটে। যেমনি ঘটলো আমার জীবন, আমার আবেগ, আমার স্বপ্ন, আমার সংসারের বিনাশ।
________________
অনার্স ফাইনাল ইয়ারে হ্যাভেন। বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে ক্লোজ ছিলো জিসান। সে বছরই এমপি পদে বিজয়ী হয় জিসানের বাবা। জিসান বন্ধু-বান্ধবকে ইনভাইট করে তাঁর নিজের বাড়িতে। সেদিন সবাই সেখানে উপস্থিত হলেও উপস্থিত হয় না হ্যাভেন৷ কারণ আমার শ্বশুর মশাইয়ের প্রতিপক্ষ ছিলেন জিসানের বাবা। পারিবারিক শত্রুতাকে কখনো পরোয়া করেনি জিসান, হ্যাভেন৷ কিন্তু বাবার পরাজয় কে আনন্দের সাথে গ্রহণ করার মতো ছেলেও হ্যাভেন নয়৷ বিষয়টি জিসানও বুঝতে পারে তাই আর জোরাজোরি করেনি।
.
অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো রূপসা। অত্যন্ত গরীব ঘরের অবহেলিত সন্তান ছিলো সে। পড়ালেখায় আগ্রহী বলে তাঁর খালার সহযোগিতায় ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলো৷ কিন্তু হ্যাভেনের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকে খালার সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি আর। ফার্স্ট ইয়ারে নবীন বরণ অনুষ্ঠানেই পরিচয় হয় হ্যাভেনের সাথে রূপসার। একদম সহজসরল মনের মেয়ে ছিলো রূপসা। খুবই সাদামাটা জীবন ছিলো তাঁর। এদিকটাই হ্যাভেনের ভীষণ মনে ধরে। সিনিয়র হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করতো হ্যাভনকে রূপসা। আর হ্যাভেন প্রতিদিন রূপসা কে এক নজর দেখার জন্য একটুখানি কথা বলার জন্য ছটফট করতো৷ রূপসা যথেষ্ট সুন্দরী একটা মেয়ে৷ হতে পারে সে অত্যন্ত গরীব ঘরের সন্তান কিন্তু উপরওয়ালা তাঁকে অপরূপা করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তাঁর রূপে,গুণে সর্ব সময় মুগ্ধ থাকতো হ্যাভেন৷ কয়েকমাস কেটে গেলেও কেউ কাউকে প্রেম নিবেদন করেনি৷ অথচ তাঁদের মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গিয়েছিলো শুরুতেই। একদিন হঠাৎ করেই রূপসা হ্যাভেনকে প্রপোজ করে বসে। বিনিময়ে হ্যাভেন রূপসাকে নিয়ে ছুটে যায় কাজি অফিসে৷ কয়েকজন বন্ধু কে ফোন করে নিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে ফেলে। হঠাৎ করেই এমন কিছু ঘটে যাবে ভাবতেও পারেনি রূপসা৷ সকলের সামনে হ্যাভেনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলো মেয়েটি। মানুষ যা কল্পনা করে যা স্বপ্ন দেখে হুট করে তা পেয়ে গেলে অনুভূতি টি তখন কেমন হয়? রূপসারও হয়তো তেমন হয়েছিলো।
.
তালুকদার বাড়িতে বিয়ের কথা জানাতেই প্রথমে হুমায়ুন তালুকদার ভীষণ রাগারাগি করেন। এবং পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয় আপাতত ছেলে, ছেলের বউ বাড়িতে ওঠবে না৷ শহড়ে তাঁদের ফ্ল্যাটের অভাব নেই৷ ভার্সিটির কাছাকাছি ফ্ল্যাটটায় থাকবে তাঁরা। বিয়ের ব্যাপারটাও বেশী লোক জানাজানি করতে নিষেধ করেন৷ বিয়ে ঠিক এনগেজমেন্ট হয়েছে এটুকুই জানাতে বলা হয় সকলকে৷ এদিকে রূপসার পরিবারের কেউই এ বিয়ের ব্যাপারে জানেন না৷ হ্যাভেন সিদ্ধান্ত নেয় অনার্সটা শেষ করে বাবার বিজনেসে বসবে এবং নিজ পরিবার কে পাঠাবে রূপসার পরিবারের কাছে।
চলতে থাকে তাঁদের পড়াশোনা। ভার্সিটিতে আগের মতোই চলাফেরা করে তাঁরা। চুটিয়ে প্রেম করে দুজন৷ হ্যাভেনের ক্লোজ বন্ধু রা তাঁদের বিয়ের ব্যাপারে জানতো শুধু৷ দিনের বেলা হ্যাভেনও ফ্ল্যাটে যেতোনা তেমন তবে রাত হলে তাঁকে কেউ আটকাতে পারতো না। অনেক সময় বন্ধু দেরও নিয়ে যেতো ফ্ল্যাটে রূপসা নিজ হাতে রান্না করে আপ্যায়ন করতো তাঁদের। এমনি ভাবে একদিন জিসানের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেয় রূপসাকে। জিসান বন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রূপসার মতো সুন্দরী বউ পেয়েছে সে। তারওপর মেয়েটা অত্যন্ত দরিদ্র ছিলো হ্যাভেন যদি মেয়েটার পাশে না দাঁড়াতো তাহলে মেয়েটা হয়তো এ শহড়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারতো না৷
.
বিয়ের এক বছর কেটে যায়। দিনগুলো ভালোই কাটছিলো হ্যাভেন আর রূপসার। কতশত পরিকল্পনা করেছিলো দুজন নিজেদের জীবন নিয়ে। রূপসার পেটে মাথা গুঁজে বাচ্চাসুলভ আচরণ করে বায়না করেছিলো হ্যাভেন সে বাবা হতে চায়। সব ভালোই চলছিলো শুধু বাচ্চা নেওয়ার কথা শুনে রেগে গিয়েছিলো রূপসা। সে বাচ্চা চায় না সে অনেক পড়াশোনা করতে চায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। হ্যাভেন হাসিমুখে তাঁর চাওয়াকে সম্মান করে বলেছিলো ‘তাই হোক’।
হ্যাভেন ছিলো অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির এবং শক্ত ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ। তবে মনের দিক দিয়ে ছিলো খুবই নরম প্রকৃতির। রূপসার আগে অন্য কোন মেয়ের আগমন ঘটেনি তাঁর জীবনে৷ রূপসাই প্রথম রূপসাই শেষ এটাই বলতো সে। রূপসার কোন আবদার সে ফেলতে পারতো না৷ কখনো শক্ত করে কিছু বলতেও পারতো না৷ একটুখানি স্পর্শ করতে গেলেও হাজারবার ভাবতো তাঁর প্রেয়সীর ব্যাথা লাগবে না তো? তাঁদের প্রথম কাছে আসার দিন যখন রূপসা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলো হ্যাভেনের দু চোখ বেয়েও অশ্রু ঝড়েছিলো। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো কখনোই আর এভাবে কাছে যাবে না সে রূপসার৷ বুকের ভিতর জড়িয়ে নিয়ে সারাটাজীবন দিব্যি পাড় করে দিতে পারবে। তাঁর সেই সিদ্ধান্তে অবশ্য অটল থাকতে দেয়নি রূপসা৷
.
সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটতে থাকে৷ নিজেদের বিজনেসেও যোগ দেয় হ্যাভেন৷ রূপসা পড়াশোনা আর ছোট্ট সংসার নিয়েও ব্যাস্ত। দিনের বেলা পড়াশোনা বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি করে রাতের বেলা হ্যাভেনের ভালোবাসায় সিক্ত থাকে। যতোদিন যায় বিলাসীতাও বাড়তে থাকে রূপসার এদিকে কখনোই কোন আপত্তি ছিলো না হ্যাভেনের। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজের সবকিছুই তাঁর নামে করে দেবে।
হ্যাভেনের ব্যাস্ততা বেড়ে যায়। বেশ রাত করে রূপসার কাছে ফেরে সে। অবশ্য রূপসাকে বুঝিয়েও বলে তাদের অফিসে ইদানীং কাজের চাপ বেশী৷ দুপুর টাইমে শুধু বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতে খাবার খেয়েই আবার বেরিয়ে পড়ে অফিসে। রাতের আগে ফেরা সম্ভব হয় না৷ এও বলে সামনে মাসেই রূপসার বাড়িতে নিজ পরিবারকে পাঠাবে। রূপসা বলে,
-‘ কি দরকার? আমার পরিবারের আমাকে নিয়ে বিন্দু আগ্রহও নেই৷ যদি থাকতো শহড়ে পড়াশোনা করছি কোথায় আছি, কোথায় থাকছি, কি খাচ্ছি ঠিক খোঁজ নিতো এক খালার ভরসায় ছেড়ে দিত না ‘।
হ্যাভেন তখন পরম স্নেহে বুকে টেনে নেয় রূপসাকে। আর বোঝায় ‘তাঁরা তোমার জন্য না ভাবলেও আমাদের উচিত নতুনভাবে জীবন শুরু করার আগে তাঁদের দোয়া নেওয়া ‘।
.
দিনটি ছিলো সোমবার৷ দুপুরের দিকে অফিস থেকে বেরিয়ে ফ্ল্যাটে যায় হ্যাভেন। প্রতিদিন নিয়ম করে এ সময় সে মায়ের হাতে খাবার খেতে যায়৷ কিন্তু সেদিন যায়নি কারণ সেদিন তাঁর আর রূপসার দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী ছিলো। কয়েকগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে মুচকি হাসতে হাসতে এগিয়ে যায় দরজার দিকে৷ রাতে পার্টির আয়োজন করা হলেও অপ্রত্যাশিতভাবে সে সময় হ্যাভেনকে পেয়ে রূপসার যে আনন্দানুভূতি হবে সেটি দেখার লোভেই কলিং বেল না বাজিয়ে নিজের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খোলে সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠে এক জোড়া মানব-মানবীর অনাবৃত দেহ আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ওষ্ঠ চুম্বনে লিপ্ত হয়ে থাকার দৃশ্য।
সে মূহুর্তে সে সময় অন্য কোন পুরুষ হলে হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে ওদের আক্রমণ করতো কিন্তু হ্যাভেন পারেনি। শ্বাসরোধ হয়ে বসে পড়ে সেখানেই। এবং কিছু সময়ের ব্যবধানেই জ্ঞান হারায়। যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিষ্কার করে নিজ বাড়িতে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় মা,বোন এবং ভাইদের। সকলকে দেখে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠে ‘রূপসা’ বলে। তখনি কিছু কাগজপত্র এগিয়ে দেয় হ্যারি৷ সেখানে চোখ বুলিয়ে ডিভোর্স পেপার দেখেই হিংস্র হয়ে ওঠে হ্যাভেন৷ হ্যারিকে এলোপাথাড়ি ঘুষি দিতে থাকে। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। ঘন্টাখানেক সময় পাড় করে নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে৷
ফ্ল্যাটে গিয়ে রূপসা কে পায় না হ্যাভেন। আসবাবপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই সেখানে। পাগলের মতো ছটফট করতে করতেই জিসানকে ফোন করে এবং পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে।
-‘ আমার রূপসাকে তুই কি করে স্পর্শ করতে পারলি জিসান ‘?
-‘ যেভাবে রূপসা আমাকে কাছে টেনেছে ঠিক সেভাবেই ‘। বলেই শব্দ করে হাসতে লাগলো।
-‘ আমি তোকে ছাড়বোনা ছাড়বোনা আমি তোকে’।
-‘ জিসানের কিছু হলে আমিও তোমায় ছাড়বো না হ্যাভেন ‘।
রূপসার ভয়েস শুনে নিভে যায় হ্যাভেন। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলে,
-‘ আমার সাথে এটা তুমি কেনো করলে রূপসা? এভাবে কেনো আমায় ঠকালে? এতো নিখুঁত ভালোবাসার পরেও কি করে পারলে পরপুরুষে আসক্ত হতে’?
-‘ আমি তোমাকে ভালোবেসে ভুল করেছি হ্যাভেন। আমি যদি আমাকে চিনতে পারতাম আমার সঠিক জায়গা বুঝতে পারতাম তাহলে এই ভুল কোনদিন করতে পারতাম না ‘।
-‘ রূপসা তুমি কি ভুলে গেছো সেইসব দিনের কথা ‘?
– ‘কিছু ভুলিনি আমি তুমি আমার দুর্দিনে আমাকে সহায়তা করেছো ঠিকই কিন্তু তাঁর বিনিময়ে আমাকে ভোগও করেছো। আমি দিয়েছি শরীর তুমি দিয়েছো অর্থের প্রাচুর্য। তোমার যেমন অর্থ আছে আমার তেমন রূপও আছে। কিন্তু আমি তোমার অর্থ দেখে আমার সারাজীবন নষ্ট করতে পারিনা৷ আমার মতো রূপবতী নারী কখনোই তোমার মতো কৃষ্ণমানবকে ডিজার্ভ করেনা। তাঁর প্রমাণ আমি দিয়ে দিলাম৷ আমি পেলাম অতি সুদর্শন পুরুষ জিসানকে। জিসানের বাবা বর্তমান এমপি ভবিষ্যতে জিসানও এই স্থানে আসবে সেই জিসানকে প্রত্যাখ্যান করার সাহস আমার হয়নি৷ দিনের পর দিন তোমার কুৎসিত শরীরের সংস্পর্শে আর থাকতে মন চায় না। আমি আমার সঠিক ঠিকানা এবার পেয়ে গেছি। তুমি বরং তোমার মতোন কাউকে নিয়েই সুখে থাকার চেষ্টা করো৷ বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার স্বপ্ন আর দেখো না তুমি ‘।
-‘ কথায় আছে ছোটলোক কোনদিন বড় লোক হতে পারে না। হুট করে বড়লোক হয়ে গেলে গর্বে তাঁর মাটিতে পা পড়ে না৷ জন্মগত জমিদার বা জমিদারের বাচ্চারা কোনদিন অহংকার দেখায় না। অহংকার দেখায় নামহীন পরিচয়হীন জমিদার তকমা পাওয়া ছোটলোকরা৷ পায়ের নিচে পিষে মারা প্রাণীকে কখনো মাথায় স্থান দিতে নেই। অযোগ্য কে যোগ্য স্থান দিলে তাঁর মর্যাদা সে কোনদিন রাখতে পারেনা। তুই হলি সেই নারী তোর থেকে প্রস্টিটিউটরাও আজ থেকে অধিক সম্মানের অধিকারী আমার কাছে। মনে রাখিস, শুনে রাখ, তোর থেকে অধিক সুন্দরী নারীই হবে আমার বউ। শুধু বাহ্যিক দিকে সে তোর থেকে উচ্চ হবে না চারিএিক দিক থেকেও হবে উচ্চস্থানের অধিকারী। তুই রানী হওয়ার স্বপ্ন দেখবি আজীবনভর আর সে রানী হয়েই পা ফেলবে আমার দরবারে। ভালোবাসার শুরুটা দেখেছিলি তুই শেষটা দেখবে সে এটা আমার নিজের কাছেই নিজের প্রতিশ্রুতি ‘।
চলবে..