ওহে_প্রিয় #জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_৪৫ (বর্ধিতাংশ)

0
531

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৫ (বর্ধিতাংশ)
_________________
-‘তুমি গাইতে পারো আগে কখনো বলোনিতো ‘?

-‘আপনি বুঝি জানতে চেয়েছেন খুব ‘?

ভর্ৎসনা করে কথাটি বলেই হ্যাভেনের দিকে আড় চোখে তাকালো আহি। হ্যাভেন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বর্ডারের ওপর বসে দুপাশে দুহাত রাখলো। ইদানীং হ্যাভেনের চাহনী বড্ড অসহনীয় লাগে আহির। এই অসহনীয়তা আগেও হতো কিন্তু তা সহনশীল করে নিয়েছিলো। যেদিন থেকে সে ও বাড়ি ত্যাগ করেছে, হ্যাভেনকে ত্যাগ করেছে সেদিনের পর থেকে হ্যাভেনের দৃষ্টিজোড়ায় খুঁজে পায় গভীরতা। যে গভীরতার অন্ত তার জানা নেই।

-‘ এখন জানতে চাই বলো আর কি পারো তুমি? আর কি করতে ভালো লাগে তোমার ‘?

-‘ এটাই আপনার জরুরি কথা ‘?

প্রশ্নটি করেই পিছনে তাকালো আহি। দেখলো পুরো ছাদটাই ফাঁকা। নিচে বিছানো পাটি টা নেই এমনকি একটা চেয়ার অবদিও নেই। ভ্রু কুঁচকে সচকিত হয়ে আহি বললো,

-‘ একি! ওরা সব কোথায়? আল্লাহ আমি কথার তালে এতো সময় পার করে দিয়েছি। আর আপনি তো ভারি অসভ্য এতো সময় ধরে বকবক করছেন একটা বার বলবেন তো ওরা চলে যাচ্ছে। আর ওরাও বা কি আমায় একা ফেলে চলে গেলো ‘?

-‘ একা কোথায় আমি আছি তো ‘?

-‘ আপনি আছেন কই আমি তো দেখতে পাচ্ছি না ‘।বলেই এদিক সেদিক তাকিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো আহি। হ্যাভেন হুড়মুড়িয়ে ওঠে আহির সামনে দাঁড়ালো। বললো,

-‘ ওরা নিচে আড্ডা দিচ্ছে হয়তো, তুমি কিছু সময় এখানে থেকে যাও প্লিজ। আমার সঙ্গে একটু সময় কাটাও ভালো লাগবে। আমার অনেক কথা আছে থেকে যাও প্লিজ ‘।

হ্যাভেনের অমন কাতর আবেদনে নম্র হলো আহি। বললো,

-‘ আচ্ছা তবে বেশী সময় কিন্তু থাকবো না ‘।

-‘ ওকে ‘।

বলেই মৃদু হাসলো হ্যাভেন অথচ মনে তার তীব্র উত্তেজনা কাজ করছে। আহি নম্র ভণিতায় আবারো বর্ডারের কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বললো,

-‘বোধহয় বৃষ্টি হবে আজ আকাশে চাঁদ নেই মেঘে ঢাকা পড়ে গেছে। বাতাসেও কেমন হিম অনুভূত হচ্ছে ‘।

আহির কথায় পাত্তা না দিয়ে তার অতি নিকটে পাশে দাঁড়িয়ে হ্যাভেন বললো,

-‘ তোমায় পারপেল কালারে অসাধারণ লাগে। অনলাইন থেকে নিজে পছন্দ করে কিনেছি সবটা। ফার্স্ট বেশ চিন্তিত ছিলাম তুমি একসেপ্ট করবে কিনা। কিন্তু নানুমনি ইজ গ্রেট!

-‘ নানুমনি না বললে কিছুই একসেপ্ট করতাম না ‘।

-‘ একসেপ্ট করেছেন বলে ধন্যবাদ আপনাকে ‘।

-‘ আপনাকে ধন্যবাদ দিব এজন্যই যে দুবছর একসাথে থাকার মান রেখেছেন আমার পরিহিত পোশাকের মাপ জেনে এবং মনে রেখে ‘।

-‘ হাজব্যান্ড আমি তোমার। তোমার ছোট খাটো বিষয় থেকে শুরু করে সব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আমার কর্তব্য ‘।

ঘাড় ঘুরিয়ে হ্যাভেনের দিকে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকালো আহি এবং দৃঢ় কন্ঠে বললো,

-‘ এতো গর্বিত হচ্ছেন কেনো আপনি? এখানে গর্বিত হওয়ার কিছু দেখতে পারছিনা৷ দু’টো বছর আমাকে ব্যবহার করেছেন। অথচ আমার ব্যবহৃত বড় কাপড় থেকে শুরু করে ছোট কাপড়গুলোরও সাইজ জানবেন না? নারীর অন্তর্বাসের সাইজ জানাটা গর্বের বিষয় নয় বরং নারীর মনের প্রগাঢ়তা বোঝাই গর্বের বিষয় ‘।

খানিকটা বিরক্ত হলো হ্যাভেন। দীর্ঘ এক শ্বাস ছেড়ে বললো,

-‘ একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না ‘?

-‘ ইচ্ছে করে না ‘।

-‘ ওকে ফাইন তুমি চুপ থাকো আমি বলি ‘।

-‘ ওওও আচ্ছা তাই… তা আমি জেগে স্বপ্ন দেখবো না ঘুমিয়ে ‘?

-‘ মানে ‘?

-‘ মানে হলো দ্যা গ্রেট হ্যাভেন তালুকদার! মিষ্টি ভাষায় কথা বলবে তা আমায় বিশ্বাস করতে হবে ‘?

-‘ ইয়েসস করতে হবে ‘।

আহির দিকে খানিকটা ঝুঁকে কথাটি বললো হ্যাভেন৷ আহি পিছিয়ে গেলো হ্যাভেনও সরে গিয়ে বর্ডারে দুহাত ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

-‘ হ্যাভেন নামের অর্থ’টা সবাই জানে তুমিও জানো। কিন্তু আহি নামের অর্থ টা তুমি কি জানো সুন্দরী ‘?

কৌতুহলোদ্দীপক হয়ে হ্যাভেনের পাশে দাঁড়ালো আহি উদবিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো,

-‘ আহি নামের অর্থ আপনি জানেন ‘?

-‘ হুম জানি হ্যাভেন অর্থ স্বর্গ, আকাশ। আর আহি অর্থ আকাশ এবং পৃথিবীর সংযোগ ‘।

বিস্ময়ান্বিত হয়ে তাকিয়ে রইলো আহি। হ্যাভেন মাথা দুলিয়ে হাসলো বললো,

-‘ সারপ্রাইজড হলে? আমাদের দুজনের নামের মধ্যেই একটা ইউনিক ব্যাপার রয়েছে সেই সাথে রয়েছে আমাদের মধ্যকার গভীর সংযোগ। তোমার আমার মিলন উপর থেকেই ধার্য করা সুন্দরী ‘।

-‘ বাজে কথা এসব ‘।

-‘ উমহ… বাচ্চা দের মতো ত্যাড়ামি করবে না ইটস ট্রু বিলিভ না হলে ইউটিউব ঘেঁটে দেখতে পারো ‘।

-‘ প্রয়োজন নেই ‘।

-‘ ওকে ফাইন এবার একটি প্রশ্ন করবো উত্তরটি বহুবাক্যে শুনতে চাই ‘।

-‘ বহুবাক্যে ‘?

-‘ হ্যাঁ। করবো ‘?

-‘ হুমহ’।

-‘ ধরো তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি তোমায় প্রশ্ন করলাম তুমি আমায় কেমন ভালোবাসো? মানুষ বলে ভালোবাসা’কে নাকি পরিমাণ নির্ধারণ করে ব্যাখ্যা করা যায় না। ভালোবাসার পরিমাণ বিপরীত মানুষ টা’কে কখনো বলে কয়ে বোঝানো সম্ভব হয় না ৷ তবে আমি বলবো এ পৃথিবীতে সবই সম্ভব। এ পৃথিবীতে অচেনা, অজানা একজন মানুষকে ভালোবেসে হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সারাটা জীবন একসঙ্গে কাটিয়ে দেওয়া যেমন সম্ভব। তেমনি অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করে হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে চলে যাওয়াও সম্ভব। আবার প্রতিশ্রুতি বিহীন আমৃত্যু একে অপরের পাশে থাকাও সম্ভব। এতো সম্ভবের মাঝে সামান্য ভালোবাসার পরিমাণ, পরিমাপ বোঝানো কেন সম্ভব নয় সুন্দরী… ‘?

হ্যাভেনের বলা প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে স্তব্ধ হয়ে গেলো আহি। প্রহত হলো তার হৃদয়। আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। হ্যাভেনও তার দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি স্থির রাখলো। একজোড়া হৃদয়ে বয়ে গেলো চঞ্চলতা। তাদের হৃদয়ে বয়ে চলা তাণ্ডব যেনো ধীরে ধীরে আছড়ে পরতে চাইছে প্রকৃতি’তে। তারই পূর্বাভাস পেলো দুজন মেঘের গর্জনে। হৃদয়ের গর্জনে হৃদয় কাঁপলেও আকাশে মেঘের গর্জনে শরীর কেঁপে ওঠলো আহির। হ্যাভেন আকাশের দিকে চেয়ে আহির পাশে ঘেঁষে দাঁড়ালো। আহির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

-‘ ভয় নেই আমি আছি তো ‘।

আঁতকে ওঠে নিজের অপর হাত’টা বুকে চেপে ধরলো আহি৷ বললো,

-‘ আপনি এমন করবেন না প্লিজ হাত ছাড়ুন আমি নিচে যাবো ‘।

-‘ উহুম আগে প্রশ্নের উত্তর চাই ‘।

-‘ জানিনা আমি ‘।

-‘ তা বললে চলবে না তুমি আমায় কেমন ভালোবাসো উত্তর চাই ‘।

-‘ উত্তর একটাই ভালোবাসিনা ‘।

-‘ চুপপ। ভালোবাসো তা ধরে নিয়ে উত্তর দিতে বলেছি’।

-‘ হ্যাঁ ধরে নিয়েই উত্তর দিলাম আমি সত্যি জানিনা। প্রশ্নটির পাল্টা প্রশ্ন আপনাকে করা হলে উত্তর কি হতো’?

হাসলো হ্যাভেন। প্রকৃতির দমকা হাওয়ায় তার কপালের এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুল গুলো হালকা নড়ছে। আহির শাড়ির আঁচলটাও বাতাসের বেগে উড়ে যেতে চাইছে। গা শিরশিরে বাতাসকে সুক্ষ্ম ভাবে অনুভব করলো হ্যাভন সেই সাথে আহিকে একদম নিজের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে উত্তর দিলো,

-‘ আমাকে যদি তুমি ভালোবাসার ব্যাখ্যা দিতে বলো তবে আমি বলবো ভালোবাসি। আমাকে যদি তুমি ভালোবাসার ব্যাখ্যা দিতে বলো তবে আমি বলবো তোমায় ভালোবাসি। আমাকে যদি তুমি ভালোবাসার ব্যাখা দিতে বলো তবে আমি বলবো ভালোবাসি ‘।

চরম বিরক্ত হলো আহি এক ঝটকায় হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বৃথা হলো। তাই হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,

-‘ ছাড়ুন বলছি মাতাল একটা! আপনি কোন দিন শোধরাবেন না ‘।

আচমকাই এক আঙুলে আহির ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরলো হ্যাভেন। মাতাল করা চাহনীতে চেয়ে মাতাল করা কন্ঠে বললো,

-‘ মদহীন মাতাল আমি সুন্দরী যা নিজে স্বীকার করি তা তুমি বললে কখনোই রাগবো না। এবার সিরিয়াস উত্তরটি শুনে যাও বউ…
“আমি তোমায় এক গুচ্ছ গোলাপের ভালোবাসা দিব না। সেখানে তুমি মুগ্ধতা পাবে, পাবে হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি। পাবেনা শুভ্রতা,পাবে না স্নিগ্ধ অনুভূতিদের নির্মল ভালোবাসা’কে। আমি তোমায় এক গুচ্ছ কদম ফুলের ভালোবাসা দিতে চাইনা। কারণ সেখানে তুমি শুভ্রতাকে অনুভব করতে পারবে। পাবে কিছুটা স্নিগ্ধতা… কিন্তু মুগ্ধতা তোমায় ঘিরে রাখতে পারবে না। মুগ্ধতার ছোঁয়া পেতে ভালোবাসার লাল গোলাপকে তোমায় মনে পড়বেই, ইচ্ছে করবে শত কাঁটার আঘাত পেয়ে হলেও মুগ্ধতায় ডুবে থাকতে।আমি তোমায় সমুদ্র সমান ভালোবাসতে চাইনা। কারণ কি জানো? সমুদ্রের শেষ সীমানায় পৌঁছানো সম্ভব। অসম্ভব পরিমাণ ভালোবাসায় সম্ভব জিনিস টা যে বড়ই তুচ্ছ। এই তুচ্ছমান ভালোবাসা কি আমি তোমায় দিতে পারি? আমি তোমায় আকাশ সমান ভালোবাসি এবং আকাশ সমান ভালোবাসা দিতে চাই। এর কারণ কি জানো? বিশাল ঐ আকাশের শেষ ঠিকানা আমার জানা নেই। ভালোবাসা জানা হীন ঐ আকাশটার মতোনই। যেখানে তুমি খুঁজে পাবে রঙধনুর সাত রঙকে। যেখানে তুমি খুঁজে পাবে শুভ্রতা,স্নিগ্ধতা,মুগ্ধতাকে। ঐ আকাশটা তোমায় রোদের প্রয়োজনে উত্তাপে পুড়িয়ে দেবে। ঐ আকাশটা তোমায় বৃষ্টির প্রয়োজনে ভাসিয়ে দেবে। ঐ আকাশটা তোমায় যেমন সূর্যদয়ের সাক্ষি করবে তেমনি সূযাস্তের সাক্ষ্যও দেবে। রাতের বিদঘুটে অন্ধকারে বিষাদীয় প্রকৃতিতে একটুখানি আলোর ঝাপটা পাই ঐ আকাশ চন্দ্রিমাকে ঠাঁই দেয় বলেই। কখনো ভেবে দেখেছো রাতের পর দিনকে যদি আমরা না পেতাম? সৃষ্টিকর্তার নিয়মানুসারে ঐ আকাশে সূর্য স্থান না পেতো? কেমন হতো আমাদের জীবনের ধারাগুলো?
আমাদের হাসি,কান্না,মান-অভিমান,ঘৃনা,ভালোলাগা, ভালোবাসা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ সবটাই যেনো ঐ আকাশে বিদ্যমান। তাহলে আমার ভালোবাসাটা কেন হবে দুনিয়া জুরে বিষয় বস্তুকে ঘিরে? আমি একবার বলবো, হাজার বার বলবো,চিৎকার করে বলবো আমি তোমায় ঐ আকাশ সমান ভালোবাসি সুন্দরী ‘।

আহির ওষ্ঠে চেপে রাখা আঙুলটি সরিয়ে নিয়েছে অনেক ক্ষণ হলো। হ্যাভেন অনেকটা চিৎকার করেই শেষ বাক্য গুলো জ্ঞাপন করলো। আহির পুরো শরীর কম্পনরত অবস্থায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। কাঁপছে তার হার্ট শেপড কোমল ওষ্ঠজোড়াও। হ্যাভেন আহির সে ওষ্ঠজোড়ায় তাকিয়ে কাটিয়ে দিলো কয়েক পল।তারপর আবারো আহির সম্মুখে দাঁড়িয়ে আহির চোয়াল জোড়া দুহাতের আঁজলে নিয়ে মোহনীয় কন্ঠে বললো,

-‘ কাঁদছো কেন সুন্দরী? ভালোবাসো আমায়’।

ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো আহি। বললো,

-‘ আপনি খুব খারাপ হ্যাভেন আপনি শুধু কাঁদাতেই পারেন। আপনি আমার জীবনের রিয়েল ভিলেন। হিরো হওয়ার চেষ্টা করলেও কাঁদিয়ে ফেলেন আমায়। ভিলেনরা কখনো হিরো হতে পারেনা ‘।

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো হ্যাভেন। আহি দৃষ্টি নত করে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকালো হ্যাভেনের দিকে। নিচের ওষ্ঠ ফুলিয়ে আবারো বললো,

-‘ এভাবে তাকাবেন না৷ আপনি ভালোবাসার ব্যাখ্যা যাই দিন না কেনো সবটাই আমার থেকে ধার করে নিয়েছেন ‘।

-‘ হোয়াট!

-‘ হুম আপনি যখন আমাকে প্রশ্ন করলেন কেমন ভালোবাসি আমি বললাম জানিনা আর আপনি দুনিয়াজুড়ে বিশ্লেষণ করে শেষ উত্তর জানিনাই দিলেন। আকাশের শেষ ঠিকানা আপনি জানেন না। জানা হীন আকাশটার মতোন ভালোবাসি বলেছেন৷ অর্থাৎ উত্তর একি আপনি শুধু ঘুরিয়েছেন, প্যাচিয়েছেন৷ তাই আমি সঠিক এবং আমিই জিতেছি ‘।

দুহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোয়াল মুছতে মুছতে মুচকি হাসলো হ্যাভেন৷ বললো,

-‘ হুম তুমি সূত্র দিয়েছো আর আমি প্রমাণ করেছি। একে অপরের পাশে থেকে একে অপরকে সাহায্য করাই স্বামী-স্ত্রীর ধর্ম ‘।

দু’জনের কথোপকথনের মাঝেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি নামতে শুরু করলো সেই সাথে বাতাসে প্রবল বেগ। আহি সচকিত হয়ে বললো,

-‘ বৃষ্টি পড়ছে চলুন নিচে যাই উফফ ভিজে যাচ্ছি ‘। বলেই হ্যাভেনের হাত ছাড়িয়ে ছুটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা টানতে শুরু করলো। এবং উচ্চকন্ঠে বলতে শুরু করলো,

-‘দরজা তো খুলছে না হ্যাভেন… এখন কি হবে কে লাগালো আল্লাহ! আপনি প্লিজ এদিকে আসুন, প্লিজ কাউকে ফোন করুন ‘।

গুটি গুটি পায়ে হ্যাভেন এগিয়ে গেলো আহির দিকে। সেসময়ই পকেটে থাকা ফোনটা কৌশলে অফ করে দিলো। আহির পাশে দাঁড়িয়ে সেও দরজা টান দিয়ে বললো,

-‘ কাজটা নিশ্চয়ই ঐ বিচ্ছুদের, ভিজে যাচ্ছো আহি এদিকে এসো আমার সঙ্গে ‘।

-‘কি বলছেন আপনি হ্যারি কে ফোন দিন প্লিজ ‘।

ওকে বলেই হ্যাভেন ফোন বের করে আহির সামনে ধরে বললো,

-‘ আহি… ফোনের চার্জ নেই অফ হয়ে গেছে ‘।

-‘ আল্লাহ মাবুদ এখন কি করবো আমরা ‘।

আহি কথাটা বলতেই বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটলো৷ হয়তো খুব কাছেই বজ্রপাতটি হয়েছে। ভয়ে আহি দুকান চেপে ধরেছে। বুক,হাত,পা কাঁপছে অনবরত।
হ্যাভেন তৎক্ষণাৎ আহিকে জরিয়ে ধরে তাকে নিয়েই এক পা এক পা করে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে পড়লো। কারেন্ট চলে যাওয়াতে পুরো ছাদ সহ চিলেকোঠার ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।

কোনমতে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে আহিকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে হ্যাভেন৷ আহি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো,

-‘ কোথায় যাচ্ছেন এমন অন্ধকার কেনো ছাড়ুন আমায়’।

ঝুম বৃষ্টির শব্দের পাশাপাশি দুজন নর নারীর ঘন নিঃশ্বাসের তীব্র শব্দে চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরটি মুখরিত হয়ে ওঠলো৷ জোর পূর্বক হ্যাভেন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আহি। অন্ধকারে আশেপাশে হাত দিয়ে নিজেদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করার ক্ষণেই মাগো বলে চিৎকার করে ওঠলো। আঁতকে ওঠলো হ্যাভেন সেই সাথে মেজাজ বিগড়ে গেলো তার। ‘ আলগা মাতব্বরি দেখিয়ে বড়সড় আঘাত পেয়ে মা মা করবে তবুও ত্যাজ কমবে না’ বিরবির করে কথাটি বলেই আহির মৃদু আর্তনাদ কান পেতে শুনে তার দিকে হাত বাড়িয়ে সর্বস্ব শক্তি খাঁটিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিজের কাছে জব্দ করে মেঝেতে বসে পড়লো।

চলবে…
আমার লেখা গল্প নিয়ে সমালোচনা উন্মুক্ত। তবে লেখিকাকে নিয়ে সমালোচনা উন্মুক্ত নয় তাই লিমিট ক্রস করবেন না কেউ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here