রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
লেখিকাঃ রিক্তা ইসলাম মায়া
০৭
অবস্থানটা রিদের গুলশানের বাড়িতে। এখানে রিদের একারত বসবাস বডিগার্ড ও বেশকিছু ছেলেদের নিয়ে। আসিফ রিদের কথা মতো হাফেজ সাহেবকে রাজশাহী থেকে ঢাকা এনেছে দেখা করাতে। এতে করে হাফেজ সাহেব বেশ ইতস্তত। রিদ খানের মতো লোক হঠাৎ উনাকে কেন ডাকবে? এই ভেবে তিনি অনেকটা চিন্তিতও বটে। তবে আসিফকেও তিনি এই বিষয়ে জিগ্যেসা করেছিল উনাকে কেন ডেকেছে রিদ খান। উত্তরে আসিফ তেমন কিছুই বলেনি। শুধু জানিয়েছে ‘ভাই আপনার সাথে কথা বলতে চায় এজন্য। ব্যাস! তারপর থেকেই উনি খানিকটা চিন্তি হঠাৎ উনাকে কেন জরুরি তলব দিল রিদ খানের মতো মানুষ? নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। এমনই এমনই তো আর উনার মতোন একজন মানুষকে ডেকে গোপনীয় ভাবে কথা বলতে চায়বে না রিদ খান। হাফেজ সাহেব চিন্তিত মুখেই আফিসের পিছন পিছন রিদের বাড়িতে ঢুকলো। বড়লোকের বিশাল কারবার সেটা উনি রিদের বাড়ি দেখে বুঝল, সুখীন মানুষ গুলার সখ্যতাটা তাদের বাড়ি দিয়ে বুঝার আরেকটা উপায়। হাফেজ সাহেব মাথা তুলে আশেপাশে তাকিয়ে বাড়ির পরিবেশ দেখতে দেখতে বাসার ভিতরে ঢুকলো। এই বাড়িতে কোনো মেয়ে মানুষ দেখল না উনি। তবে বেশ কিছু ছেলেদের চোখে পড়লো। তিনি বুঝতে পারলো রাজনৈতিক কারণে এসব ছেলেরা রিদ খানের পিছনে কাজ করে। আর আসিফ তার খার্স লোক। হাফেজ সাহেব আসিফের পিছন পিছন যেতে যেতে আবারও একবার বাড়ির আশেপাশে তাকিয়ে রিদ খানের পরিবারকে খুঁজলো। বিশেষ করে রিদের বউকে। কারণ রিদ খানের বিয়েটা তাদের বাড়ি থেকেই হয়েছিল উনার বাবা দিয়েছিলেন। এতোদিনে নিশ্চয়ই রিদ খানের সন্তান হয়ে গেছে। হওয়ার কথা বিয়ে তো হয়েছে অনেক দিন হলো প্রায় দু-বছরের কাছাকাছি। তিনি আশেপাশে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকাল আসিফের দিকে। আফিসকে পিছন ডেকে রিদ খানের পরিবার, বউয়ের কথা জিজ্ঞেসা করবে কিনা এই নিয়ে খানিকটা দ্বিধায় পড়লো। নেতাদের বউয়ের কথা জিজ্ঞেসা করলে যদি তাঁরা রেগে যায় এই ভয়ে চুপ হয়ে গেলেন তিনি। শুধু আসিফকে অনুসরণ করে ড্রয়িংরুম অবধি গেল। সেখানেও বেশ কিছু ছেলেরা বসে আছে হাতে পেপার কালেকশন নিয়ে হয়তো কিছুর তথ্য যোগাড় করছে তাঁরা। আসিফকে দেখতে পেয়ে তাঁরা সালাম দিল। আসিফ সালামের উত্তর দিয়ে তাদেকে বাহিরে যেতে বলে হাফেজ সাহেবকে একা ড্রয়িংরুমে বসিয়ে দিয়ে গেল সিঁড়ি ধরে দুতলা রিদের রুমে। হালকা চাপানো দরজাটা টেলে রুমে প্রবশ করতেই দেখলো রিদ সোফায় বসে ল্যাপটপে কি যেন টাইপিং করছে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কথা বলতে বলতে। আসিফ রুমে প্রবেশ করে চুপচাপ গিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ না পযন্ত রিদের ফোন আলাপ শেষ হচ্ছে ততক্ষণ। রিদের ফোন আলাপ শেষ হতেই সুযোগ বুঝে আসিফ রিদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে বলে উঠলো…
‘ ভাই! হাফেজ সাহেবকে নিয়ে এসেছি। উনি নিচে বসা আছে।
রিদ কান থেকে সাদা ব্লুটুথটা খোলে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে চোখ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আসিফের দিকে। একহাত এখানো তার ল্যাপটপের উপরই। আসিফের কথার উত্তরে বলল…
‘ উনাকে উপরে নিয়ে আয়।
আসিফ বলল…
‘ ভাই নিচে আউট মানুষ নাই। আমি সবাই বাগানে বসতে বলছি। কথা বলতে সমস্যা হবে না।
আসিফের কথা উত্তরে রিদ তেমন কিছু বললো না। শুধু হাত দিয়ে ল্যাপটপের শার্টার বন্ধ করতে করতে বলল…
‘ তুই যা! আমি আসছি।
‘ জ্বি ভাই!
আসিফ নিচে এসে হাফেজ সাহেব সাথে গুটি কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতেই রিদ গম্ভীর মুখে নিচে নেমে আসল। গায়ে ফর্মাল ডেন্স, কালো টি-শার্ট সাথে কালো টাউজার। যেমনটা সে রোজ পরে থাকে তেমনই। রিদ হাফেজ সাহেব মুখোমুখি হতেই উঠে দাঁড়ান তিনি। রিদকে সালাম দিতেই রিদ সালামের উত্তর দিয়ে উনাকে বসতে বলে সেও বসে যায়। দুজনই মুখোমুখি সোফায় বসা। আসিফ রিদের পাশে দাঁড়ানো। থমথমে পরিবেশে হাফেজ সাহেব বেশ ইতস্তত করলো রিদের সাথে কথা বলতে। রিদ উনার ভাব ভঙ্গিমা বুঝে সোজাসাপ্টা বলতে শুরু করলো…
‘ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা না বলে সোজা পয়েন্টে আসি। আপনাকে বিশেষ প্রয়োজনে ডাকা হয়েছে এখানে। আপনি হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছেন আমার লোক আপনার বাসায় কেন গিয়েছিল!
রিদ কথাটা বলেন দৃষ্টি তুলে হাফেজ সাহেবের দিকে তাকাতেই তিনি হতবাক হয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুঝান। এর মানে তিনি জানেন না। রিদ খানিকটা কপাল কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আসিফের দিকে তাকাতেই আসিফ দ্রুত বলে উঠে…
‘ ভাই উনিতো বাসায় ছিল না। রাজশাহী ছিল। হয়তো উনার পরিবার আমার কথা জানায়নি।
রিদ বিরক্তি কপালের ভাঁজ আরও দৃঢ় হয় যখন হাফেজ সাহেব আসিফের কথায় সম্মতি জানায়। সে তার বউকে সিরিয়াস খোঁজছে অথচ এখানে সবার ডিলামিটা পছন্দ হচ্ছে না। রিদ যে তার বউকে খোঁজা নিয়ে সিরিয়াস সেটা কি কেউ বুঝতে পারছে না? নাকি রিদের মধ্যে সিরিয়াসনেস ভাসে না এই বিষয়ে? রিদের বিরক্তি রেশ কাটাতে সোজাসাপ্টা বলে উঠে…
‘ আপনার হয়তো মনে আছে আপনার বাবা আমার বিয়ে আপনাদের বাড়িতে দিয়েছিল কিন্তু কার সাথে দিয়েছিল সেটা জানতে চায়৷ সোজাসাপ্টা বলতে গেলে মেয়েটার পরিচয় বা খোঁজ চায়।
রিদের কথায় আকাশ থেকে পড়ল এমন অবস্থা হলো হাফেজ সাহেবের। তিনি হতবাক, হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল রিদের দিকে। মোট কথা এই মূহুর্তে তিনি রিদের কথা গুলো হজম করতে পারছে না। কারণ উনাদের জানামতো রিদ খানের সাথে থাকা মেয়েটি রিদের প্রেমিকা হবে বলেই উনার বাবা কাজি মোল্লা সাহেব সেদিন রাতে তাদের বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন বলছে মেয়েটি রিদ খান চিনি না। তার পরিচয় হাফেজ সাহেবের কাছে চায়ছে। এখন হাফেজ সাহেব সেই মেয়েকে পাবে কোথায় যার সাথে রিদ খানের বিয়ে হয়েছিল। সেই মেয়েকে তো তিনিও চিনেন না রিদ খানের সাথে প্রথম এবং লাস্ট দেখেছিল তাও ঝড় তোফানের রাতে। এখন এই যদি রিদ খানকে বলাতে রেগে যায় তো? হাফেজ সাহেব বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি পরে মৃদু ঘামতে লাগলো এসির নিচে বসেও। এই মূহুর্তে তিনি বুঝতে পারছেন সেদিন রাতে উনার বাবা আসলে কি ভুলটায় না করেছিল অপরিচিত দুজন মানুষ বিয়ে দিয়ে। উনার বাবাই বা কি করতেন তিনি একজন ধর্মীপ্রন্তী মানুষ। অশ্লীল চলাফেরা উনার পছন্দ না। তারপর আবার রিদ খান ও সেই মেয়েটির অবস্থাও ছিল বিধস্ত। উনারা কেন সেদিন রাতে যেকেউ তাদের দেখতে একই ভুলটা করতো। হাফেজ সাহেব অনেকটা অসহায়বোধ করে মুখ তুলে তাকাল রিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। রিদ উত্তরের আশায় উনার দিকে তাকিয়ে আছে হালকা কপাল কুঁচকে। হাফেজ সাহেব হাফেজ সাহেব হাসফাস করে বলল…
‘ আপনাকে নিয়ে সেদিন রাতে যে মেয়েটি এসেছিল আমাদের বাসায় সাহায্যের জন্য, তাঁকে আমি বা আমার পরিবারের অন্য কেউ কখনো দেখেনি বা চিনিনা। আমার বাবা মেয়েটিকে আপনার প্রেমিকা ভেবেই সেদিন রাতে বিয়েটা দিয়েছিল। তাই সেই মেয়েটির কোনো পরিচয় আমাদের কাছে নেই।
হাফেজ সাহেবের সহজ সরল কথায় মেজাজ খারাপ হলো রিদের। সে তিরতির মেজাজে দাঁত চেপে বলল..
‘ ভাত খেয়ে বয়স বাড়িয়েছেন নাকি ঘাস চিবিয়ে?
পরিচয় না নিয়েই দুজন অপরিচিত মানুষকে বিয়ে দিয়ে দিলেন? আর এখন বলছেন পরিচয় দিতে পারবেন না? মূর্খতা একটা লিমিট থাকে!!
রিদের রাগের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলো হাফেজ সাহেব। তিনি এখন বুঝতে পারছেন সত্যিই সেদিন রাতে কতোটা ভুল করেছিল দুজন অসহায় মানুষদের হঠাৎ বিয়ে দিয়ে। অপরিচিত মেয়েটি অবশ্য বারবার কেঁদে কেঁদে উনাকে বলেছিল যে রিদ খানকে সে চিনে না। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন নি। অথচ আজ ভিষণ অপরাধ বোধতায় ভোগছে। উনার কাছে কাবিননামা কাগজটিও নেই যে মেয়েটির তথ্য যোগাড় করে রিদ খানকে দিবে তার বউকে খোঁজে বের করার। কারণ ভয়ংকর আগুনে উনার বাবাসহ সকল কাগজ পত্র পুড়ে ছাই নিঃস্ব তিনি। হাফেজ সাহেব অন্তত অনুতপ্তের সাথে মাথা তুলে রিদের দিকে তাকিয়ে অপরাধী গলায় বলতে চাইল..
‘ আসলে আমরা!!
রিদ বাঁধা দিয়ে পুনরায় মেজাজ দেখিয়ে বলল…
‘ আসলে কি? কতোটা মূর্খতা কাজ করেছেন আপনারা সেটা বলবেন?
রিদের চেহারার রঙ বদল হতে দেখে পাশ থেকে দ্রুততার সঙ্গে মুখ খুললো আসিফ। সে হাফেজ সাহেবকে সহজ প্রশ্ন করে বলল…
‘ আচ্ছা বিগত দিনের মধ্যে ভাবি বা তার পরিবার থেকে কেউ এসেছিল আপনাদের বাড়িতে রিদ ভাইয়ের খোঁজ করতে?
হাফেজ সাহেব রিদের থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকাল আসিফের দিকে্, ধীরস্থে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানিয়ে আসিফের প্রশ্নের উত্তরে বললো…
‘ না আসেনি।
‘ ওহ! আচ্ছা? এমনিতে ভাবির কোনো পরিচয় দিতে পারবেন? বা বলতে পারবেন ভাবি দেখতে কেমন ছিল? তাহলে আমরা আর্টিস ম্যান দিয়ে ভাবির একটা ছবি আঁকিয়ে রাখবো খোঁজার সুবিধার্থে?
হাফেজ সাহেব এবার ভিষণ দ্বিধায় পড়লো। তিনি সত্যি সেদিন রাতের মেয়েটিকে এতো লক্ষ করেনি। হুজুর মানুষ হয়ে আরেক জনের বউকে লক্ষ করাটাও পাপ। তাই তিনি যতটুকু দেখেছিল এখন সেই চেহারাটা তেমন মনে নেই। ঐ আদৌ আদৌ হালকা মনে আছে ছোট একটা মেয়ে ছিল লাল হিজাব আর শাড়ি পড়া। ডানচোখের ভিতর ছোট একটা তিল ছিল মেয়েটি কাঁদার সময় লক্ষ করেছিল ব্যাস এতটুকু।
‘ আমি হুজুর মানুষ তাই মেয়েটিকে তেমন লক্ষ করেনি। তবে যতোটা দেখেছিলাম এতোদিনে মেয়েটির চেহারাও ভুলে গেছি। শুধু মনে আছে সল্প বয়সী শাড়ী আর লাল হিজাব পড়া একটি মেয়ে ছিল। দেখতেও মাশাল্লাহ!ডান চোখে মণি পাশে ছোট একটা তিল ছিল। কিন্তু চেহারা গঠন বর্ণনা করার মতো এই মূহুর্তে আমার তেমন কিছুই আর মনে নেই স্যার।
রিদের বদলতী চেহারাটা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসল হাফেজ সাহেবের কথা শুনে। রিদ জানে যে নিজ থেকে লুকায় তাঁকে খোঁজে বের করা মুসকিল। তার অচেনা বউও তাই। ধরা দিবে না বলেই গা ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে আছে। কোথায় লুকিয়ে আছে কে জানে? রিদ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে ভেবে গা ছেড়ে সোফায় মাথা ঠেকিয়ে বসল, দায় সারাভাব নিয়ে বললো…
‘ বুঝলেন হাফেজ সাহেব অচেনা বউটা আজকাল আমার মাথা ব্যথা থেকে বুক ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁকে যতো খোঁজা চেষ্টা করছি সে ততই হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে বেয়াদব বউয়ের পাল্লায় পড়েছি বুঝতে পারছেন। বিয়েটা করেই সে গায়েব। এখন কি করি বলুন তো?
অপরাধী হাফেজ সাহেব হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল রিদের দিকে। উনার বলার বা করার মতো কিছুই নেই আপাতত।
~~
এক বুক হতাশা নিয়ে পনেরো দিনের মতো বাড়িতে থেকে সুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম শহরে ফিরেছিলাম আরও পনেরো আগে। তারপর থেকেই আমাদের রেগুলার কলেজ, কোচিং সবই চলছে। রোজকার রুটিনমাফিক পড়াশোনা কাজটাও চলছে। বলতে গেলে সময়ের কাজ নিজ গতিতেই চলছিল কিন্তু থেমে ছিল আমার বিষন্ন মনের অবস্থাটা। অচেনা এক স্বামীর জন্য যেন প্রতিনিয়ত একটু একটু করে ছটফট করে তাঁকে চেনার আশায়। লোকটা দেখতে কেমন হতে পারে সেই চিন্তা করতে করতে একটা কাল্পনিক চিত্রও একে ফেলেছি আমি মনে মনে। অচেনা স্বামীকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করতে করতে লোকটার প্রতি কেমন যেন অদৃশ্য টান অনুভব করি আজকাল। বলতে গেলে আমার মনে ছোট একটা ঘর তৈরি হয়েছে লোকটার জন্য। যাকে খোঁজে পাওয়া আমার সাধ্যের বাহিরে। সেদিন নরসিংদী থেকে সবাই হতাশ হয়ে ফিরলেও আমি ফিরেছিলাম অসুস্থ মন নিয়ে তীব্র কষ্টের। অচেনা লোকটাকে খোঁজার শেষ আশাটুকুও আর রইল না। বহু কষ্টে কাজি বাড়ির খোঁজ পেলেও আমার স্বামীর ঠিকানা খোঁজে পাওয়া যায়নি। খালি হাতে ফিরেছিলাম সবাই নরসিংদী থেকে। তবে আসার সময় হাফেজ সাহেবের ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছিলাম উনার ছেলে সুমন থেকে। কারণ হাফেজ সাহেবের সাথে কথা বলে আমার স্বামীর পরিচয় জানবো বলে তাই। সেদিন নরসিংদী থেকে ফিরার পর আমার আবার ধুম বাধিয়ে জ্বর উঠল। পুরো দুইদিন অসুস্থ ছিলাম গায়ের তীব্র জ্বরে। তবে আমার অসুস্থতাটা শরীর থেকে মনের বেশি ছিল। তৃতীয় দিনের মাথায় আমার সকল বান্ধবীরা আবারও হাজির হয় আমাদের বাড়িতে আমার অসুস্থতা বাহানা দিয়ে দেখতে এসে। তারপর পঞ্চ বান্ধবী মিলে রুমের দরজা বন্ধ করে ফোন দিলাম হাফেজ সাহেবের ফোনে উদ্দেশ্য ছিল আমার স্বামীর খোঁজ করা। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় তাই হলো!সেদিন থেকে আজ পযন্ত হাফেজ সাহেবের ফোনটা আমরা বন্ধ পাচ্ছি। প্রতিবারই নট রিসিভবল বলছে ফোনের ওপাশ থেকে। নরসিংদীর ঘটনার পর থেকে আজ প্রায় পনেরো দিন গেল। এই পনেরো দিনে নাহলেও আমি কয়েক’শ বার ফোন লাগিয়েছি হাফেজ সাহেবের ফোনে। কিন্তু প্রতিবারই একে কথা, নট রিসিভবল। এই যে, এখনো তাই বলছে। বুক ভারীর তীব্র কষ্টে আমার মাঝেমধ্যে হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করে। এমনটা কেন করে তাও বুঝি না আমি। এমন না যে, স্বামীকে আমার খুব প্রয়োজন বা তাঁকে ভালোবাসি আমি। এমন কিছুই না। তারপরও লোকটাকে খোঁজে না পাওয়ার আকাঙ্খা থেকেই আমার কষ্টটা হয়। মানুষ বলে না যে জিনিস কষ্ট করে অর্জন করতে হয় তার কদর থাকে দীর্ঘদিন, চিরস্থায়ী!
আমার ক্ষেত্রেও তাই। লোকটাকে খোঁজার তীব্র আকাঙ্খা ও না পাওয়ার কষ্টটা ধীরে ধীরে তাঁকে আমার অস্তিত্বে সাথে বিচরণ করাচ্ছে। সে কেমন হবে জানি না, হয়তো জুইয়ের কথা মতো নেশাখোর খারাপ লোকও হতে পারে। তবে দিন যত যাচ্ছে তাঁকে না দেখে ততই যেন আরও বেশি ফিস করছি। আমার এমনটা হচ্ছে তাঁকে খোঁজে পাওয়ার আকাঙ্খা থেকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের মুঠোয় চেপে ধরা ফোনটিতে আরও একবার ডায়াল করলাম হাফেজ সাহেবের নাম্বারে। বরাবরই মতোই ফোনের ওপাশের মহিলাটি একই কথা বলতে বুক ছিঁড়ে দীর্ঘ নিশ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার কষ্টে। জুই আয়নার সম্মুখে থেকে নিজের হিজাব মাথায় বাঁধতে বাঁধতে চোখ উঠিয়ে আয়নায় দিয়ে আমার দিকে তাকাতে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। জুই আমার বিষন্ন চেহেরাটা দেখে মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আয়না দিয়ে তাকিয়ে বলল…
‘ ফোন যাচ্ছে না হাফেজ সাহেবের নাম্বারে?
‘ না।
‘ ওহ!
জুই পুনরায় আমাকে আর কিছুই জিজ্ঞেসা করলো না। বরং নিজের হিজাব বাধায় মনোযোগী হলো কারণ এখানে বলার মতো কিছুই নেই। হাফেজ সাহেবকে রোজই কল দেওয়া হয়। জুই রোজ একবার করে হাফেজ সাহেবকে কল করলেও আমি লুকিয়ে একশো বারের উপরের দেয়। জুই নিজের কাজে মনোযোগ হলো আর আমি কল করাতে মনোযোগ হলাম। কারণ আর কিছুক্ষণ পরে আমি আর জুই আরিফ ভাইয়ার সাথে চট্টগ্রামের বিশেষ মেজবান খেতে যাব ভাইয়ার এক বড় ভাইয়ের বাসায়। আমাদের কোচিং সেন্টারের সকল স্যাররাও যাচ্ছে সেই বড় ভাইয়ের বাসায়। তবে আরিফ ভাইয়া আমাকে আর জুইকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে কারণ আরিফ ভাইয়ার সেই বড় ভাইয়ের পরিবার থেকে নাকি আমাদের দুজনকেও নিয়ে যাওয়ার দাওয়াত এসেছে। আমি জানি না আরিফ ভাইয়ার বড় ভাই কে? আর না জানতে চায়। তবে আমি যতোটা আরিফ ভাইয়াকে জানি ভাইয়া কখনো তার ফ্রেন্ডের বাসায় বোনদের নিয়ে যাওয়াটা পছন্দ করে না। বন্ধুদের আলাদা রাখে বোনদের কাছ থেকে। আরিফ ভাইয়ার সকল বন্ধুত্ব বাসার বাহিরের হয় আমাদের সামনে নয়। কিন্তু এবার কেন আরিফ ভাইয়া তার বড় ভাইয়ের পরিবার কথায় আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন তাও জানি না। মাথায় এমনিতেই স্বামীর চিন্তা লেগে আছে সেখানে নতুন চিন্তা ঢুকাতে চায়না বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আবারও হাফেজ সাহেবে নাম্বারে কল লাগিয়ে জুইকে উদ্দেশ্য করে বললাম…
‘ আচ্ছা জুই তোর কি মনে হয়, সুমন নামক ছেলেটা ওর বাবার নাম্বার আমাদের ভুল দিবে?
আমার কথায় জুই হিজাবের ভিতর পিন সেট করতে করতে আয়না দিয়ে তাকিয়ে বলল…
‘ মনে হয়না ছেলেটি এমন কাজ করবে। প্রথমত ছেলেটা সত্যি সত্যিই আমাদের হেল্প করতে চাচ্ছিল এজন্য দেখলিনা সে নিজেই তার বাবার নাম্বার দিয়েছে আমাদের।
‘ তাহলে ওর বাবার নাম্বারটা বন্ধ কেন বলছে? কল যাচ্ছে না কেন?
আমার অসন্তোষ্টি কথায় হাত থেমে যায় জুইয়ের, কপাল কুঁচকে ঘাড় ঘুরিয়ে সরাসরি তাকাল আমার দিকে সন্দেহ ভাজক দৃষ্টিতে।
‘ তুই কি কোনো কারণে তোর অচেনা স্বামী জন্য অস্থির হচ্ছিস রিতু? মিস করছিস লোকটাকে?
জুইয়ের প্রশ্নে খানিকটা হাসফাস করলাম আমি। সত্যি বলতে আমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তরে নেই আপাতত। লোকটাকে মিস করছি এটা সত্য তবে জুইকে বললে ওহ রেগে যাবে। এজন্য মিথ্যা বললাম..
‘ নাহ!
আমার কথা জুইয়ের বিশ্বাস হলো তাই দ্বিতীয় বার আর প্রশ্ন করলো না। বরং প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে জিগ্যেসা করে বলল..
‘ যেভাবে আছিস সেভাবেই যাবি নাকি হিজাব করবি?
হাতের ফোনটা বিছানায় রাখতে রাখতে বললাম..
‘ হিজাব করবো।
‘ এদিকে আয় আমি করে দিচ্ছি।
~~
চট্টগ্রামের মেজবান নাকি স্পেশাল হয়। সত্যি আজ নিজের চোখে দেখলাম। আমার জীবনে এই প্রথম ছিল চট্টগ্রামের কোনো মেজবানে আসা তাও চট্টগ্রাম আসনের মন্ত্রী বাসায়। উফফ বুঝতে পারছেন আমি কোথায় এসে পরেছি? আহ! ঘুরে ফিরে আমি রিদ খানের দাদার বাড়ি চলে আসলাম। আমি কল্পনাতিও ভাবিনি আরিফ ভাইয়া আমাদের রিদ খানের বাপ-দাদার বাড়িতে নিয়ে আসবে মেজবান খেতে। যদি জানতাম তাহলে আমি কখনোই আসতাম না। একদম নিষেধ করে দিতাম যাব না বলে। কিন্তু ফাঁটা কপাল আমার এখানে এসেও প্রথমে বুঝিনি এটা যে রিদ খানের বাবার বাড়ি। বুঝেছি কখন জানেন? যখন রিদ খানের বাপ-দাদার দেখলাম তখন ভেবেছিলাম হয়তো আমাদের মতো উনারাও এখানে ইনভাইট ছিল। কিন্তু পরে যখন দেখলাম এই অনুষ্ঠানে সকল মানুষজনই আগে উনাদের সাথে দেখা করে ভিতরে যাচ্ছে আর বাহিরে আসছে তখনই সন্দেহ হলো। কিন্তু পরে যখন দেখলাম আরিফ ভাইয়া আমাদের নিয়ে আগে আসিফ নামক লোকটা সাথে দেখা করলো তখনই মাথায় আকাশ ভাঙলো আমার। বুঝতে পারলাম আসিফ নামক রিদের খানের বডিগার্ড লোকটাই আমাদের ইনভাইট করেছিল এখানে আসতে। এবং এখানে আসার পর আরিফ ভাইয়াকে বললো আমাদের নিয়ে ভিতরে যেয়ে বসতে। ইশ কি বিভ্রান্তিকর অবস্থা! যে রিদ খান আমাকে একমাস আগে অপমান করে শাসিয়ে ছিল তার সামনে না পরতে! ভাগ্যের ফেরে আজ আমি সেই রিদ খানের বাড়িতে এসে বসে আছি। না জানি আবার কখন এই লোকটার সামনে পরে যায়। আসিফ যখন এই অনুষ্ঠানে আছে তার মানে রিদ খানও আমার আশপাশে কোথাও আছে। এবার আল্লাহ আল্লাহ করে উনার সামনে না পড়লেই বাঁচি। ভরপুর মানুষের মধ্যে আমি আশেপাশে তাকিয়ে রিদ খানকে খোঁজার চেষ্টা করলাম অস্তিত্বে পরে। এই মূহুর্তে উনার সামনে পরলে খবুই বাজে পরিস্থিতি তৈরি হবে আমার জন্য। যে লোকটা আমাকে অপমানিত করেছিল আজ তার বাসায় খেতে হবে জেনে সেটা অবশ্যই আমার জন্য লজ্জাজনক। আমি পরিস্থিতি বুঝে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝালাম এতো মানুষজনের ভিড়ে আমাকে খোঁজে পাওয়ার রিদ খানের জন্য অসম্ভব। চট্টগ্রামের টাকা-পয়সা ওয়ালা মানুষজনের অনুষ্ঠানে আসলে এই একটা সুবিধা তাঁরা ব্যাপক সমারহ মানুষের আয়োজন করে। এতো মানুষের ভিড়ে নিদিষ্ট একটা মানুষকে খোঁজা মুসকিল এজন্য আমিও খানিকটা নিশ্চিত হলাম রিদ খান আমাকে এই ভরপুর এক-দুই হাজার মানুষের ভিড়ে দেখবে না বলে। তারপরও নিজের সেফটির জন্য মুখে মাক্স লাগিয়ে নিলাম। বলাতো আর যায় না যদিও রিদ খানের সামনে পরে যায় তো? এখানকার অনুষ্ঠানে এসে বুঝালাম আমার কোচিং সেন্টারের স্যাররা শুধু একা আসেনি, আমাদের কলেজে প্রিন্সিপাল স্যার থেকে শুরু করে সকল ডিপার্টমেন্টের স্যার ম্যামরাই এসেছেন সাথে কিছু সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। আচ্ছা যায় হোক! আমি জুইয়ের সাথে রিদ খানের বাড়ির একপাশের পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে রইলাম। কারণ এই পাশটায় মেয়েদের জন্য বসার জায়গায় করা আছে তাই। আর বাড়ির অন্য পাশটায় ছেলেদের আসা যাওয়া রাস্তা। আরিফ ভাইও সেদিকে আছে কোচিংয়ের স্যারদের সাথে দাঁড়িয়ে। আর আমাকে চিঠি দেওয়া রিফাত ভাইকে দেখলাম আরিফ ভাইয়ার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে৷ মোট কথা কেউ বাদ যায়নি এই মেজবানে আসা থেকে। হয়তো সবাইকে দাওয়াত করেছেন উনারা! কিন্তু আমাদের কেন আসিফ নামক লোকটা দাওয়াত করলো? আমাদেরকে তো আসিফ লোকটা তেমন চিনিও না কখনো কথা হয়নি আমাদের। তারপরও আমাকে কিসের ভিত্তিতে দাওয়াত করলো সেটাই বুঝলাম না এখনো? আমার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ একটা মোটাতাজা ছেলে এগিয়ে আসলো আমাদের দিকে। সব মেয়েদের উদ্দেশ্য করে জানাল’ আমরা সবাই খাবার প্যান্ডেলে দিকে যেতে। সবাই উঠে দাঁড়াল সাথে আমিও গেলাম মেয়েদের জন্য বরাদ্দ করা আলাদা প্যান্ডেলে। জুইয়ের পাশাপাশি বসলাম। আমাদের টেবিলে আরও সাত আট জনের মতো মেয়ে মহিলা মিলিয়ে বসল। একের পর একে ওয়েটার এসে আমাদের টেবিল ভরতি খাবার দিয়ে যাচ্ছে। প্লেট নিয়ে সবাই খেতেও শুরু করে দিয়েছে অথচ আমি না মাক্স খুলছি আর না খাওয়া শুরু করছি। শুধু ঘাপটি মেরে বসে রইলাম চেয়ারে। তার কারণ একটাই, রিদ খানের বাসায় কিচ্ছু খাব না আমি। লোকটা আমাকে আগেরবার অপমানিত করেছিল সেজন্য। আমার আত্মাসম্মান এতোটাও ছোট নয় যে একজন অপরিচিত লোকের অপমান সয়ে তার বাসায় খেতে বসে যাব। জুই থেকে শুরু করে আমাদের টেবিলে বসা সব মহিলা পযন্ত আমাকে খাওয়ার আদেশ দিচ্ছে বারবার। ওয়েটার ভাই গুলাও বারবার এসে আমার প্লেটের খাবার তুলে দিচ্ছে আর বিনীত সহিত বলছে খাওয়ার জন্য। আমি বরাবরই সবাইকে বলছি খাব না, শরীর খারাপ লাগছে। আর জুইকে বাহানা দিলাম পেট খারাপের কথা বলে। টেবিলে বসা সবাই খেল আমাকে ছাড়া। একটা সময় জুইয়ের খাওয়া শেষ হতেই ওকে নিয়ে বের হলাম প্যান্ডেলের ভিতর থেকে। আরিফ ভাইয়াকে দেখলাম আশেপাশে কোথায় নেই বুঝলাম ওরা বোধহয় খাওয়ার প্যান্ডেলে আছে। আমি আর মাথা ঘামালাম না। জুইকে নিয়ে সেই পুকুর ঘাটেই বসলাম। আশ্চর্য জনক ভাবে আমি রিদ খানকে দেখলাম না আশেপাশে কোথাও। লোকটাকে কি আজ নিজের বাড়িতে আসেনি নাকি? অবশ্য যে ত্যাড়া মানুষ না আসাটাও অস্বাভাবিক কিছু না। এদিকে ক্ষুধায় সত্যি সত্যি পেট শব্দ করে গুরগুর করছে আমার, সেই সাথে ফ্রীতে মাথাও ঘুরাচ্ছে গরমে। আমার বেশিক্ষণ ক্ষুধা সয্য হয়না বলেই মাথা ব্যথা উঠে যায়। আমার অবস্থা যখন নাজেহাল তখনই হুট করে কোথা থেকে রিফাত ভাইয়া এসে বসলো আমাদের পাশে বেশ হাসি মুখে। উনার হাতে ছিল একটা ঠান্ডা পানির বোতল। আমি প্রথমে রিফাত ভাইয়ের কথা বলতে চায়নি কিন্তু পানির বোতলটা দেখে আর কথা না বলে থাকতে পারলাম না। পানি তৃষ্ণাটা পেয়েছিল অনেক তাই। রিফাত ভাই থেকে পানির বোতলটা চেয়ে নিয়ে মাক্স খুলে ঢগঢগ করে কয়েক ঢুক গিলে গলা ভিজিয়ে নিলাম। এবার পেটে ক্ষুধা সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা নিবারণ হলো। আবারও ক্ষুধা লাগলে পানিটা খেতে পারবো বলে রিফাত ভাইকে আর বোতলটা ফিরিয়ে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলাম। রিফাত ভাইয়া আমাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিতেই সে হঠাৎ পান খাওয়ার অফার করলো আমাদের। খালি পেটে আমি পান খেতে রাজি হলাম না। তারপর আবার মনে মনে জেদ কাজ করছিল রিদ খানের বাসার কিছু খাব না বলে। তাই আমি পান খেতে রাজি না হলেও জুই রিফাত ভাইয়ের কথায় রাজি হলো পান খেতে। মূলত এই অনুষ্ঠানে মিষ্টি পানের আয়োজন করা হয়েছে। জুইকে নিয়ে রিফাত ভাই সেদিকেই গেল আর যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেল ‘এখান থেকে অন্য কোথাও না যেতে। ওরা দ্রুত চলে আসবে। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম ওদের। ওরা চলে গেল। আমি একাই বসে রইলাম পুকুর ঘাটে বেশ কিছুক্ষণ।
‘ কি ম্যাডাম সারাবছরই কি আপনার পেট খারাপ থাকে নাকি??
পরিচিত কন্ঠের কথা শুনে চমকে উপর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম রিদ খানকে। দ্রুততা সঙ্গে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উনার দিকে চোখ রাখতেই দেখলাম উহি(রিদ) পিউর সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে দাঁড়িয়ে আমার সামনে। পাঞ্জাবি হাতা দুটো টেনে ভাজ করা কুইন অবধি। বামহাতে ঘড়ি তো, দুহাতের বড় বড় পশম গুলো ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে হাতের ভাজে। আমি উনার অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতে প্রথমে ভরকে গেলেও এবার বেশ ইতস্তত বোধ করালাম, যখন উনি আমার পেট খারাপ হওয়া নিয়ে কথা বলছে তখন। লজ্জায় মাথাটা আমার নুইয়ে আসল। তবে আশ্চর্যের বিষয়ে হলো এই লোকটা কিভাবে জানলো আমার পেট খারাপের কথাটা? এটা তো জানার কথা না। কারণ আমি জুইকে ছাড়া অন্য কাউকে বলেনি এই কথাটা। তাহলে জুই নিশ্চয়ই আমার কথাটা এই লোককে বলতে যাবে না। তাহলে এই লোক জানলো কিভাবে? আমার অন্যমনস্ক মধ্যে দিয়েই হঠাৎ অনুভব করলাম রিদ খান আমার পায়ের কাছে নুইয়ে হাত দিচ্ছে। আমি চমকে উঠে দ্রুত এক কদম পিছিয়ে যেতেই বুঝলাম, উনি আসলে নুইয়ে আমার পায়ের কাছ থেকে রিফাত ভাইয়ের পানির বোতলটা হাতে নিচ্ছে। বোতলা হাতে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল অর্ধেক খাওয়া পানির বোতলটার দিকে, আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
‘ কি ম্যাডাম? শুকরিয়া আদায় করেছিলেন আপনি আমার পরিচিত নন এজন্য হুমম?
লোকটার কথায় এবার আমি চোখ তুলে তাকায়। লোকটা আগেও একবার বলেছিল উনার পরিচিত নয় বলে আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করতে কিন্তু কেন? আমরা পরিচিত হলে কি এমন হতোই বা? এজন্য পাল্টা প্রশ্নে রিদ খানকে বললাম…
‘ না করেনি। কিন্তু এজন্য শুকরিয়া আদায় করার কি আছে?
উনি বোতল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকাল আমার দিকে। বামহাতে বোতলটা চেপে ডানহাত চালান করলো উনার পুরুষওয়ালী চুলের মাঝে। দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণতা বজায় রেখে সোজাসাপ্টা উত্তরে বলল…
‘ এই যে আপনি ভালো আছেন, প্রেমিকের সঙ্গে বসে আড্ডা দিতে পারছেন, তার পানি পান করতে পারছেন বিনা বাঁধায়, এজন্য অন্তত আপনার শুকরিয়া আদায় করা দরকার!! কারণ আপনি আমার কেউ হলে এতক্ষণে আপনার প্রেমিকের হাত আর আপনার মুখের নকশা দুটোই মানচিত্র হয়ে যেত।
কথা গুলো শেষ করেই ডিল মেরে বোতলটা পুকুরের পানিতে ফেলে দিল উনি। আর আমি লোকটা শান্ত কন্ঠের হুমকিতে গা শীতল হয়ে আসল। আজব লোকের পাল্লায় পরেছি তো সবসময়ই আমাকে এমন গুন্ডামীর করে হুমকি দেয় কেন হুম? তার সাথে কিসের এতো শত্রুতা আমার? এই নিয়ে চতুর্থবারে মতো দেখা আমাদের প্রতি বারই এমন হুমকি ধামকি দিয়ে আমায় অপমান করেছেন লোকটা। আজ উনার বাসায় এসেছি মেহমান হয়ে, আজ অন্তত একটু ভালো ব্যবহার করা যেত আমার সাথে অথচ তার কোনো পরিবর্তন নেই।
#চলিত….