রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
১১
রিদের মুখোমুখিতে জড়সড় অবস্হায় বসে হাফেজ সাহেব। রিদ খান মতো মানুষের বারবার মুখোমুখি হওয়া চারটে খানিক কথা নয়। যেখানে উনি নিজে অপরাধী সেখানে উনার ভয়টাও বেশি। এই মূহুর্তে হাফেজ সাহেব তাই-ই পাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দাপটের লোক রিদ খান। নাম-দামে পরিচয়ে বেশ প্রভাবশালী সে। এমন লোকের সাথে উনার মতোন সাধারণ মানুষের টক্কর নেওয়াটা কতোটা অন্যায় হয়েছে সেটা তিনি বিগত মাস ধরে হারে হারে টের পাচ্ছেন। তাছাড়া প্রথম বার তিনি যখন রিদ খানের মুখোমুখি হয়েছিল তখন বেশ অপদস্তক হয়েছিল উনাদের করা কর্মের জন্য। এরপর থেকে হাফেজ সাহেবের প্রতিটা দিনই ভয়ে কাটে এই ভেবে না জানি আবার কবে হামলে পরে রিদ খান নামক আতঙ্ক। হাফেজ সাহেব বুঝতে পারছেন দেড় বছর আগে সেদিন রাতে উনারা ভুল করেছিল রিদ খানের বিয়ে ঐ অপরিচিত মেয়েটির সাথে দিয়ে। কিন্তু উনার বাবাও বা কি করতো দু’জনের অবস্থায়ই এমন ছিল যে, যেকেউ দুজনকে একসঙ্গে ঐ অবস্থায় দেখলে ভাবতো তারা দুজন নষ্টামি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে পালিয়েছে আহত হয়ে। যেমন ভুলের জন্য হাফেজ সাহেবের বাবা বিয়ে দিয়েছিল দু’জনের। তিনি মনে করে ছিল অপরিচিত মেয়েটি রিদ খানের গার্লফ্রেন্ড হয়তো। কিন্তু কে জানতো তারা কেউ পূর্ব পরিচিত নয়। উনাদের ভুলের জন্য আজ উনি বেশ অনুতপ্ত। রিদের কাছে বেশ কয়েক বার মাফ চেয়েছিল এই নিয়ে, কিন্তু রিদ মাফ করেনি। বরং উল্টো উনাকে হুমকি স্বরুপ বলেছে, ‘ তার বউ চায়। হয় রিদ খানের বউ খোঁজে এনে দিতে নাহয় হাফেজ সাহেবের রক্ষা ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ পযন্ত রিদ খান তার বউকে খোঁজে পাচ্ছে। চক্রের ভেড়া জ্বালে ফেঁসে গেছেন তিনি। ভালো করতে গিয়ে উল্টো খারাপ হলো। এবার রিদ খানের বউকে কোথায় খুজবে কে জানে! নাম-ঠিকানা কিছুই জানা নেই উনার মেয়েটির। তারপর আবার ঐ রাতের দেখা একটু করে মেয়েটির চেহারাটাও ভুলে গেছেন তিনি। অসহায় হাফেজ সাহেবের শেষ রক্ষা আর হচ্ছে না রিদ খানের হাত থেকে। যে মেয়ে বিয়ে করেই অসুস্থ স্বামীকে রেখে পালিয়ে যায়, সে মেয়ে আর যায় হোক না কেন কখনোই রিদ খানের কাছে সেচ্ছায় ধরা দিবে না এতোটা নিশ্চিত। এবার অপরিচিত মেয়েটি যদি সেচ্ছায় স্বামীর খোঁজ না করে তাহলে তাঁকে পাওয়া অনিশ্চিত। এমন হলে তো রিদ খান তার বউকে ইহকালেও খোঁজে পাবে না। আর না উনার শেষ রক্ষা হবে। অসহায় হাফেজ সাহেবের ভিতর মুচড়ে উঠে এলোমেলো চিন্তার ভয়ে। রিদের ভয়ানক হুমকিতে আতঙ্কে আছেন উনি। কি করে রিদ খানের লুকায়িত বউকে খোঁজে বের করা যায় সেই চিন্তায় চিন্তায় বিগত মাস ধরে বাসায় যায় না। বাড়িতেও ঠিকঠাক ফোন করে কথা বলে না। রাজশাহী থাকছে নিজের আম বাগানে। এমনকি হাফেজ সাহেবের ফোনটাও চুরি হয়ে গেছে রিদের বাসায় আসার প্রথম দিনই। কিন্তু চিন্তায় চিন্তায় এখনো নিজের জন্য একটা ফোন কেনা হয়নি উনার আর না রেজিস্ট্রার করা সিমটা উঠানোর হয়েছে। অফিসের ফোন দিয়েই একটু আধটু কথা বলে বাসায় ব্যাস এতটুকুই। কিন্তু এখন আবার কেন রিদ খান দ্বিতীয় বারের মতোন উনাকে ডেকেছেন সেটাও উনি বুঝতে পারছেন। আর সেজন্যই উনি এতোটা ভয়ে আছেন এই নিয়ে যদি রিদ খান নিজের বউকে খোঁজে পাওয়ার কথা জানতে চায় উনার কাছে তাহলে উনি কি উত্তর দিবে? কোথায় থেকে খোঁজে আনবে রিদ খানের লুকায়িত বউকে? এমন পরিচয়হীন বউকে খোঁজে পাওয়া আদৌ সম্ভব কারও পক্ষে? ভিষণ বাজে ভাবে ফেঁসে গেছেন হাফেজ সাহেব। সেই চিন্তায় এসির নিচে বসেও ঘাম ঝড়ছে কার্নিশ বেয়ে। রিদ উনার সামনেই বসে। বেশ শান্ত আর গম্ভীর। হাফেজ সাহেবকে ঘামতে দেখে সোজা হয়ে বসল। টি-টেবিলে উপর কফির মগটা হাল্কা হাতে হাফেজ সাহেবের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ রিলেক্স হাসেজ সাহেব! ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি কিছু করছি? করি নাই তো! আপাতত আপনাকে কিছু করার ইচ্ছেও নেই আমার। তবে বউকে খোঁজে না পেলে অবশ্যই করবো। রক্ষা নেই! নিন এবার কফিটা খান। আর মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনুন। কিছু প্রশ্ন করবো ঠিকঠাক উত্তর দিবেন। তারপর কপাল ভালো থাকলে সুস্থ সবল বাসায় ফিরবেন আর নয়তো আপনি আর ভাগ্য যা আছে তাই।
রিদের হেয়ালি কথায় হাফেজ সাহেবের ভয় আরও জোড়ালো হলো এমন ভয়ানক হুমকিতে উনার গায়ের পশম কাটা দিয়ে উঠল। জড়সড় অবস্থায় বসে থেকেও মৃদু কম্পন দেখা গেল উনার পায়ে। শুকনো গলা হা হা করে করল তৃষ্ণার তুপে তৎক্ষনাৎ। তিনি ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে গিয়েও গলা চেপে আসল অদৃশ্য ভয়ে। রিদ হাত বাড়িয়ে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে পুনরায় গা এলিয়ে সোফায় বসতে বসতে হাফেজ সাহেবের কাছে মনের দুঃখ প্রকাশ করার মতো হতাশ গলায় বলে…
‘ বুঝলেন হাফেজ সাহেব বেয়াদব বউয়ের চক্রে ফেঁসে গেছি আমি। না তাঁকে হাতে পাচ্ছি আর না শান্তিতে থাকতে পারছি। এমনকি শান্তিতে ঘুমাতেও পারছি না প্রচুর ডিস্টার্ব করে স্বপ্নে। আচ্ছা আপনিই বলুন এমন ডিস্টার্বের বউ কি কারও হয়? আপনার বউ কি আপনাকে ডিস্টার্ব করে? আমার বউয়ের মতো বেয়াদব মহিলা?
রিদের হতাশতায় বিস্মিত হাফেজ সাহেব। শক্তপোক্ত রিদ খানও যে কারও জন্য এতোটা ছটফট করতে পারে সেটা তিনি আজ নিজের চোখে দেখলো। এতো হুলুস্থুল করে কেন রিদ খানের বউকে চায় এবার তিনি বুঝতে পারছেন। তারপর মুখে কিছু বললেন না রিদের ভয়ে। শুধু রিদের কথার অসম্মতি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুঝার যার অর্থ উনার বউ বেয়াদব নয় রিদের বউয়ের মতোন। হাফেজ সাহেবের সম্মতিতে রিদের হেয়ালিপনা আরও বাড়ল। দায়সারা গলায় বলল…
‘ এজন্য তো বেয়াদব বউকে লাগবে আমার। স্বামীর দায়িত্ব পালন করবো বউ পিঠিয়ে সভ্য বানাব। আপনি বরং ঝটপট আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।
জড়সড় অবস্থায় কোনো রকম উত্তর করল হাফেজ সাহেব, বলল…
‘ জ্বি!!
‘গুড! তো সোজা কথায় আসি। আপনারা যে মেয়েটির সাথে আমার বিয়ে দিয়েছিলেন মানে আমার বউ! তার কাছে কি কোনো রকম ফোন দেখেছিলেন সেদিন রাতে?? বা কারও নাম শুনেছেন মেয়েটির মুখে???
রিদের প্রশ্নে তৎক্ষনাৎ উত্তর করলো না হাফেজ সাহেব। বরং কপাল কুঁচকে সময় নিয়ে চিন্তা করলো সেদিন রাগে মেয়েটির কাছে তারা কোনো ফোন দেখেছিল কিনা? উনার যতটুকু মনে পরে মেয়েটির কাছে কোনো ফোন ছিল না বরং উল্টো মেয়েটির উনার কাছে ফোনের জন্য সাহায্য চেয়েছিল কোথাও ফোন করতে। তবে মেয়েটির মুখে কারও নাম শুনেনি তিনি। হাফেজ সাহেব সময় নিয়ে অনেকটা ভেবে মনে করতে চেয়ে রিদের প্রশ্নের উত্তরের বললো…
‘ না স্যার। মেয়েটির কাছে কোনো ফোন ছিল না আর না কারও নাম শুনেছি। বরং মেয়েটি আমার ও আমার স্ত্রী কাছে ফোনের জন্য সাহায্য চেয়েছিল কোথাও ফোন করতে। খুব সম্ভবত নিজের পরিবারের কাছে হবে।
‘ আপনারা ফোন দিয়েছিলেন???
‘ জ্বি!!
অধৈর্য্যের নেয় রিদ শুধালো…
‘ মেয়েটি কোথায় ফোন দিয়েছিল শুনেছেন কিছু।
‘ না স্যার! আমি বলতে পারবো না কিছু। আমার ওয়াইফ মেয়েটিকে আমার ফোন দিয়েছিল বাসায় ফোন করতে এবার আমি বলতে পারবো না মেয়েটি সেদিন ফোন দিয়েছিল কিনা?
হাফেজ সাহেবের কথায় তৎক্ষনাৎ কিছুই বললো না রিদ। বরং ধীরই রিদকে গম্ভীর থেকে আরও গম্ভীর দেখাল। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে গম্ভীর গলায় বলল…
‘ আপনার ফোনটা আমাকে দেন।
রিদের গম্ভীর কথায় কাচুমাচু করে হাফেজ সাহেব বলল…
‘ আসলে স্যার আমার ফোনটা চুরি হয়ে গেছে আপনার বাড়িতে প্রথম দিন আসতে গিয়ে। এরপর আর নতুন ফোন কেনা হয়নি। আমার সিমটাও উঠানো হয়নি। এজন্য ফোনটা আপাতত আমার কাছে নেই।
হাফেজ সাহেবের কথায় তৎক্ষনাৎ বিরক্তি ভাজ পরলো রিদের কপালে। একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই যাচ্ছে। কিছুতে সহজ হচ্ছে না বউকে খোঁজা। বিরক্তি নিয়েই রিদ গলা উঁচিয়ে হাক ছেড়ে আসিফকে ডাকল। বাহিরেই ছিল আসিফ, হঠাৎই রিদের হাক ছাড়া ডাকায় তৎক্ষনাৎ দৌড়ে আসল সে। হাফেজ সাহেব রিদকে আসিফকে ডাকতে দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। এক মূহুর্তের জন্য তিনি মনে করেছিল এই বুঝি রিদ আসিফকে ডাকছে উনাকে বন্দী করার জন্য। কিন্তু রিদ তেমন কিছুই করলো না। বরং আসিফ আসতেই রিদ নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি খাঁটিয়ে বলল…
‘ আসিফ! হাফেজ সাহেবকে নিয়ে যা তোর সাথে। প্রথমে উনার রেজিস্ট্রার সিমটা উঠাবি। তারপর ২০১৭ সালের নভেম্বর ২ তারিখ থেকে ৩ তারিখের সকল কল রেকর্ড বের করবি সিম অফিস থেকে। এরপর সময় ধরে নভেম্বরের ২ তারিখ রাত নয়টা পর থেকে নভেম্বরের ৩ তারিখ সকাল ছয়টার পযন্ত, বিগত দশঘন্টার যতো গুলো কল লিস্টে থাকবে সবগুলোর একটা তালিকা করবি। কারণ আমরা হাফেজ সাহেবের বাসায় রাত নয়টার পরে উঠেছিলাম, আর তোর ভাবি আমাকে রেখে পালিয়ে ছিল খুব সম্ভবত সকাল পাঁচটা আগে। মেয়েটি অপরিচিত এলাকায় একাতো পালাতে সাহস করবে না তাই নিশ্চয়ই কেউ নিতে এসেছিল যাকে তোর ভাবি সেরাতে ফোন করে বলেছিল নিতে আসতে। এবার তার নাম্বারও অবশ্যই থাকবে কল লিস্টে। এজন্য আমার শুধু ঐরাতের কল রেকর্ডটা চায়। তুই সেরাতের লিস্টে থাকা নাম্বার গুলোতে একটা একটা করে সবাইকে কল দিয়ে জিগ্যেসা করবি রিক্তা ইসলাম মায়া আছে কিনা? যদি পরিবারের কেউ হয় তাহলে অবশ্য বলবে আছে। আরেকটা কথা লিস্টে যদি কোনো সন্দেহজনক নাম্বার দেখিস যে একই নাম্বার থেকে বেশ কয়েক বার কল আসা-যাওয়া করেছে এমন তাহলে অবশ্যই সেটা আমাকে জানাবি, আমি নিজে কল দিব। মনে থাকবে?
‘ জ্বি ভাই!
আসিফ তৎক্ষনাৎ সম্মতি দিয়ে তাকাল হাফেজ সাহেবের দিকে।
‘ আপনি আমার সাথে আসুন!
বিস্মিত হাফেজ সাহেব ঘোর ভাঙ্গলো আসিফের ডাকে। তিনি বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে ছিল রিদের দিকে। রিদ খানের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পর্কে এতোদিন মানুষের কাছে শুনে এসেছে আজ নিজের চোখে দেখল। হাফেজ সাহেবের তো কখনো মাথায় আসেনি, যে এমন ভাবেও কাউকে খোঁজা যায় সেটি। হাফেজ সাহেব কিছুটা আশ্বস্ত হলো এই ভেবে যে এবার হয়তো মেয়েটির আসল পরিচয় পাওয়া যাবে অবশেষে। যদি মেয়েটি সেরাতে কোথাও ফোন করে থাকে তাহলে অবশ্যই কল লিস্টে থাকবে। আর এতে হাফেজ সাহেব ও রক্ষা পাবে রিদ খানের কবল হতে। কিন্তু অপরিচিত মেয়েটির জন্য বেশ মায়া হলো উনার। আহা বেচারি এখনো জানেই না সে কার হাতে পরেছে। রিদ খান যা মানুষ এই জীবনেও রক্ষা দিবে না মেয়েটিকে। এতো হুলুস্থুল পাকিয়ে বউকে খোঁজে সহজে ছেড়ে দিবে এটা চিন্তা করাও ভুল। অবশ্যই রিদ খান নিজের কাছে রাখার জন্যই এতো অধৈর্য হয়ে বউকে খোঁজছে। তবে আল্লাহ মেয়েটির সহায় হোক। অন্তত রিদ খানকে সারাজীবন হজম করার মতো ধৈর্য দান করুক আমিন। হাফেজ সাহেব আসিফের পিছন যেতে যেতে মনে মনে বেশ করে দোয়া করলো রিদের অপরিচিত বউয়ের জন্য।
~~
সকল তথ্য যোগাড় করতে করতে রাত একটার উর্ধে গেল সময়। হাফেজ সাহেবের সিমের কল রেকর্ডের লিস্ট এখন আসিফের হাতে। সেটাই মূলত রিদকে দেওয়ার জন্যই রিদের বাড়িতে ঢুকলো আসিফ। সারাদিন এই বিষয়ে তথ্য যোগাড় করতে করতে সময় পার হলো তার। তারপরও বিন্দুমাত্র বিরক্তির রেশ দেখা গেল না আসিফের চেহারায়। বরং রিদের দেওয়া কাজ গুলো ঠিকঠাক করতে পেরে সন্তুষ্ট সে। হাতে থাকা কল লিস্টের কাগজটায় পরপর কয়েকবার চোখ বুলাল আসিফ। রিদের কথা মতো ২ তারিখ থেকে ৩ তারিখের রাত থেকে সকাল অবধি, সকল কল রেকর্ডের লিস্ট বের করলো সর্বমোট বিশটার মতো। যার মধ্যে চারটা ছিল হাফেজ সাহেবের অফিস কল। দুটো ছিল পারিবারিক কল! বাকি দুটো ছিল আসিফের নাম্বার দেওয়া রিদের কল, যেটা রিদ ৩ তারিখ সকাল বেলা সাতটার দিকে করেছিল ওকে। কিন্তু বাকি বারোটা কলই ছিল একই নাম্বার থেকে আদান-প্রদান করা। তাও রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচ পযন্ত করা সবগুলো। আসিফের যদি খুব বেশি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে এই নাম্বারের অনুসন্ধান করলেই পাওয়া যাবে তার রিদ ভাইয়ের হারিয়ে যাওয়া বউকে। নিশ্চয়ই মেয়েটি তার কোনো আপনজনদের ফোন করেছিল এই নাম্বার থেকে এমনটাই আসিফের ধারণা। আর এজন্যই আসিফ সন্দেহ ভাজক নাম্বার দেখে রিদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ রিদ ভাই বলেছিল তাকে কোনো নাম্বারে সন্দেহ থাকলে নিয়ে যেতে তার কাছে রিদ নিজে কল করবে সেই নাম্বারে। আর লিস্টে থাকা বাকি নাম্বার গুলোতে আসিফ নিজের কল করে সকল তথ্য যোগাড় করেছে। ভালোভাবেই করেছে। সেই নাম্বার গুলোর মধ্যে কেউই ‘রিক্তা ইসলাম মায়া’ নামে কোনো মেয়েকে চিনে না। এটাও শিওর হয়েছে আসিফ।
‘ ভাই!
কাজে বিঘ্ন ঘটায় মোটা ফাইলের উপর থেকে হাল্কা কপাল কুঁচকে চোখ তুলে আসিফের দিকে তাকায় রিদ। তখনই চোখ পরলো আসিফের ক্লান্ত মুখখানা। এতো রাতে হঠাৎ আসিফের উপস্থিতিটা তখনো বুঝল না রিদ। তাই হাল্কা কপাল কুঁচকে তাকিয়েই থাকল আসিফের দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে। আসিফ রিদের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে আস্তে করে হাতে থাকা কল লিস্টের কাগজটা রিদের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ ভাই আপনার কথা মতো এখানে হাফেজ সাহেব কল রেকর্ড আছে সেদিন রাতের। আপনি একটু চেক করে নিন।
রিদের কুঞ্জিত কপালের ভাজ শিথিল হলো মূহুর্তেই। বুঝতে পারলো আসিফের হঠাৎ মধ্যরাতে আগমনের কারণটা। রিদ মুখে কিছু বললো না। আর না বিরক্তি প্রকাশ করলো। শুধু গম্ভীর হাত বাড়িয়ে কাগজ দুটো নিল নিজের কাছে। কালো গুটি অক্ষরে প্রিন্ট করা নাম্বার গুলোতে চোখ বুলাতেই আসিফ পুনরায় বলে উঠে…
‘ ভাই এখানে টোটাল বিশটা নাম্বারের মতোন আছে সেদিন রাতের। চারটা হাফেজ সাহেবের অফিস কল ছিল। দুটো পারিবারিক কল। আর লাস্ট দুটো কল আপনি আমার নাম্বারে করেছিলেন। আমি সবগুলো নাম্বারেই ফোন করে শিওর হয়েছি, শুধু একটা নাম্বার ছাড়া। কল লিস্টে পরপর বারোটা কল রেকর্ড আছে একই নাম্বার থেকে, তাও রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচ সময়ের করা সেগুলো। আমার মনে হয় কি ভাই! এই নাম্বারেই সেদিন রাতে হয়তো ভাবি ফোন করেছিল কাউকে। আপনি এই নাম্বারে কল করলে হয়তো ভাবির খোঁজ পাওয়া যেতে পা…
আসিফের কথা শেষ করার আগে গম্ভীর গলায় আওয়াজ তুললো রিদ। শক্ত গলায় বললো…
‘ তোর ফোন দে!
‘ জ্বি ভাই! নিন
হাতের ফোনটি তৎক্ষনাৎ রিদের দিকে এগিয়ে দিল আসিফ। ফোন হাতে পেয়েই যেন রিদের গম্ভীরতা আরও বাড়লো। গম্ভীর রিদকে দেখেও আসিফ বুঝতে পারলো না তার মনে অবস্থা। রিদ অনেকটা শান্ত ভঙ্গিতে কল লাগালো কল লিস্টে থাকে সেই সন্দেহপূর্ণ নাম্বারটিতে। অল্প সময়ের মধ্যেই শুনা গেল মেয়েলি সুন্দর কন্ঠে। ‘ এই মূহুর্তে আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পরে আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ! the number is dial can not…
এতটুকু বলতেই অধৈর্য্যে নেয় কল কেটে দেয় রিদ। শান্ত থাকা ফেইসটা খিঁচে মেজাজ চড়ে উঠে তৎক্ষনাৎ। বিরক্তির রাগ নিয়ে অধৈর্য হাতে পুনরায় কল লাগায় একই নাম্বারে। কিন্তু এবারও সেইম কথাটায় বললো ফোনের ওপাশে মেয়েটি। রিদ মেজাজ হারালো রাগে। তাই খিঁচে ঠাস করে ফোনটি সামনে টি-টেবিলে উপর ছুড়ে মারতে মারতে বলল…
‘ আই সোয়ার আসিফ! তোর বেয়াদব ভাবিকে খোঁজে ফেলে আমি তাঁকে আরও দুটো থাপ্পড় বেশি মারবো, আমাকে এতো হেনস্ত করার দায়ে। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে সে! বেয়াদব বউ কোথাকার!
কথা গুলো রাগের মাথায় বলেই রি রি করে উঠে দাঁড়াল মেজাজে। শান্ত থাকা মানুষটা যেন হুট করেই অশান্ত হয়ে উঠলো শেষ আশার আলো নিভে যেতে। শেষ ভরসা ছিল এই নাম্বারটা। এবার এটাও বন্ধ। কোথায় থেকে মেয়েটিকে খোঁজবে তাও বুঝতে পারছে না রিদ। এমন পালাতক বউয়ের খপ্পরে কেউ পরে? উফফ! কোনো ভাবেই যেন রিদ মেয়েটির খোঁজ পাচ্ছে না। যার জন্য রিদকে আরও ব্যাকুল করে তুলছে মেয়েটিকে খোঁজে পাওয়ার। রিদ তিরতির মেজাজে উঠে দাঁড়াল। আসিফকে পাশ ডিঙ্গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল খোলা বাগানের বাংলোতে। ঠোঁট গোল করে পরপর তপ্ত শ্বাস ফেললো স্থির হতে। নিজেকে কতোটা শান্ত করতে পারলো জানা নেই রিদের। তবে তখনই রিদ পুনরায় চেতন গলায় আওড়ালো আসিফের উদ্দেশ্য।
‘ আসিফ! লাস্ট নাম্বারটার সকল ডিটেইলস বের কর সিম অফিসে গিয়ে। রেজিস্ট্রার সিম! তাহলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়া যাবে কলদাতার। আর জাতীয় পরিচয় পত্রের সূত্র ধরে কলদাতার নাম-ঠিকানা, ছবি, বাড়ি-ঘর চৌদ্দ গোষ্ঠীর তথ্য চায় আমার। এই নাম্বারদাতার পরিচয় ধরে অবশ্য মেয়েটি অবধি পৌছানো যাবে। বুঝতে পেরেছিস?
রিদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিতে হতবুদ্ধি আসিফ। এতোটা গভীর ভাবে আসিফের কল্পনাতেও চিন্তা আসেনি যে এভাবেও কাউকে খোঁজে বের করা যায়। হতবুদ্ধি আসিফ রিদের খিঁচে থাকা চেহারাটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় ‘ জ্বি ভাই ‘ বলে। আসিফ জায়গা ছেড়ে প্রস্থান করতেই রিদ পকেটে দু’হাত গুঁজে দাঁড়াল সোজা হয়ে। শক্ত মেজাজে দাঁতে দাঁত পিষে আওড়াল…
‘ অনেক তো পালালেন ম্যাডাম। পারলে এবার আমার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে দেখান। আপনার পায়ের শিকল টানবো আমি। দেখি আপনি আর কতোটা দৌড়াতে পারেন আমার থেকে। যদি আপনি আমার সন্দেহ করা মানুষটা হন? তাহলে আই সোয়ার প্রাণ নিয়ে বাঁচতে পারবন না আপনি! জান খেয়ে ফেলবো তারপরও নিস্তার দিব না।
#চলবে…..