রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ২১

0
754

রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

২১
রিদের কল কাটতে না কাটতে সেকেন্ডের ভিতর তৃতীয়বার মতোন কল দিল রিদকে। মায়ার অস্থিরতা বুঝে রিদ হাসলো, বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করে কানে তুলে বলল…

‘ আপনার স্বামীকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে না ম্যাডাম। একটু ধৈর্য্য ধরুন আমাকে অন্তত কলব্যাকটা করতে দিন।

টুটু করে কল কেটে যেতেই রিদ আবারও হাসল। ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে দিকে তাকিয়ে রইল কয়েক পল। সময় নিয়ে আস্তে ধীরে কল দিল মায়াকে। ওপাশ থেকে মায়াও বেশ সময় নিয়ে কলটা রিসিভ করল। বুঝায় যাচ্ছে তখনকার রিদের কথায় লজ্জায় পেয়েছে বেশ। সময় নিয়ে কলটা রিসিভ করে মায়া প্রথমে সুন্দর করে সালাম দিল রিদকে।

‘ আসসালামু আলাইকুম।

রিদ সালামের উত্তর দিয়ে বলল…

‘ ওয়ালাইকুম সালাম।

‘ ভালো আছেন?
‘ জ্বি আছি! আপনি?
‘ জ্বি ভালো।

তারপর? তারপর দুজনই চুপ। রিদ ইচ্ছাকৃত ভাবেই চুপ। মায়া কি বলে সেটা শুনতে চায়। জড়তার মায়া নিজের কথা গুলো গুলিয়ে ফেলে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকল শুধু। কোথায় থেকে শুরু করবে বুঝতে পারল না এক মূহুর্তের জন্য। অন্ধকার বারান্দায় বসে কোলের উপর খালি হাতটা কচলাল মায়া। কি বলবে সেটা ভাবতেই রিদের গলা শুনা গেল তক্ষুনি। রিদ বলল…

‘ কি ম্যাডাম? কথা শেষ আপনার?

জড়তা মায়া আমতাআমতা করে কানের পিছনে চুল গুজে দিতে দিতে লাজুক কন্ঠে বলল…

‘ না আসলে, আমার না কেমন কেমন জানি লাগছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে…

‘ উফফ তাহলে তো কঠিন সমস্যা ম্যাডামের? আমি কি ফোন রেখে দিব?

তাড়াহুড়ো মুখ খুললো তক্ষুনি মায়া। না করে বলল…

‘ এই না না! ফোন রাখবেন না প্লিজ। আমার কথা আছে।

তাড়াহুড়ো রিদের সাথে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেই লজ্জায় পরে গেল মায়া। ফোনের ওপাশে মায়া স্বামী নামক মানুষটা নিশ্চয়ই মায়াকে বেহায়া ভাবছে সেটা ভেবেই মায়ার মন খারাপ হলো। এতো কষ্ট করে স্বামী সামনে নিজের একটা ভালো ভদ্র পার্সোনালিটি প্রকাশ করতে চেয়েছিল মায়া। অথচ নিজের বোকামির জন্য মায়া ধরা না পরে যায় আবার। মায়া নিজের বোকামিকে চাপিয়ে আবারও ভদ্রতা দেখিয়ে ‘সরি বলল…

‘ সরি!

‘ কেন?

‘ আসলে তাড়াহুড়ো ঐভাবে বলতে চায়নি…

‘ কিন্তু আমিতো ঐভাবেই শুনতে চেয়েছিলাম।

রিদের কথা পিষ্টে কথা খুঁজে পেল না মায়া। জড়তায় মায়া এদিকে সেদিক লাজুক দৃষ্টি ঘুরাল। দুজনের বিয়েটা সম্পর্কে কথা বলতে চায় মায়া। কিন্তু কিভাবে শুরু করবে সেটা বুঝতে না পেরে খানিকটা চুপ রইল মায়া। ফোনের ওপাশ থেকে গাড়ির শব্দ পাওয়ায় চট করে মায়ার ঘোর ভাঙলো। এখন রাত প্রায় বারোটা ঊর্ধ্বে। এতোরাতে লোকটা কোথাও যাচ্ছি কি? কৌতূহলে মায়া জানতে প্রশ্ন করল. রিদকে বলল..

‘ গাড়ি শব্দ পাওয়া যাচ্ছে আপনি কি এতোরাতে কোথাও যাচ্ছেন?

রিদ তার সুন্দর চুল গুলোতে হাত চালাতে চালাতে বাহিরে অন্ধকারময় রাস্তায় চোখ ঘুরিয়ে বলল…

‘ বউ টানে তার শহরে যাচ্ছি দেখা করতে।

রিদের সহজ সরল উত্তরটা যেন মায়ার মাথায় বিস্ফোরণ ঘটল। মায়ার স্বামী বিবাহিত কথাটা যেন আকাশ ভেঙে পরার নেয় চমকে উঠলো মায়া। স্তব্ধতা নেয় মৃদু চেচিয়ে বলল…

‘ কিহ? আপনি বিবাহিত?

‘ হ্যাঁ।

‘ মানে কি?

‘ কি মানে কি? বিয়ে করবো না? পুরুষ মানুষ বিয়ে না করে থাকা যায় নাকি? বিয়ের বয়স হয়েছে আমার তাই বিয়ে করেছি।

মায়া অতি ভদ্র সাজার কৌটা তক্ষুনি শেষ হলো। রাগে হিসহিসিয়ে গালি দিয়ে বসল রিদকে। কটমট করে বলল…

‘ অসভ্য লোক বউ রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করিস। তুই জানতিস না তোর বউ আছে? দ্বিতীয় বিয়ে কেন করতে গেলি?

মায়ার হুট করে রেগেমেগে আগুন হয়ে যাওয়াটা রিদের কাছে স্বাভাবিক লাগল। যেখানে তীব্র অধিকার জম্ম নেয় সেখানে রাগে দু-চারটে গালি শুনায় যায়। তাছাড়া রিদ মায়ার কাছে পরিচিত রিদ খান বলে নয় বরং মায়ার স্বামী হিসাবে সে গালি শুনেছে। তাই হুজম করে নিল স্বামী হয়ে। মায়ার রাগকে উস্কে দিয়ে খেয়ালি করে বলল রিদ…

‘ বউ রেখে কোথায় বিয়ে করলাম ম্যাডাম। আমার বউতো নাই। বউ পালাতক। বউ নেই বলেই তো দ্বিতীয় আর তৃতীয় বিয়েটা করতে হয়েছে আমায়। দরকার হলে আরও একটা করবো। ইসলামে চারটে বিয়ের সম্মতি দেয় আমিতো মাত্র তিনটা করছি। আপনাকে পেলে আর একটা করবো। তারপরই শেষ। আর করবো না।

রাগে দুঃখের কেঁদে ফেলল মায়া। এতো কষ্ট করে নিখোঁজ স্বামী খোঁজ করাটায় বোকামি হয়েছে মায়া।সেই দুঃখে মায়া কেঁদে উঠে রিদকে গালি দিতে দিতে বলল…

‘ অসভ্য, ইতর, লচ্চা লোক, এতোগুলা বিয়ে করিস। তোর মতোন জামাই আমার দরকার নাই। আমি তোরে তালাক দিবো। খবরদার যদি কখনো আমার সামনে পরিস তাহলে তোর পা ভেঙে হাতে ধরায় দিবো।

‘ বউয়ের হাতে মার খাওয়ার জন্য হলেও এই বান্দা অবশ্যই হাজির হবে ম্যাডাম…

টুটু! রিদের কথা শুনলো না মায়া রাগে দুঃখের ঝরঝরে করে কেঁদে উঠল বারান্দার ফ্লোরে আঁচড়ে পরে। মায়া সত্যি বিশ্বাস করতে পারেনি ওর স্বামী আবার বিয়ে করে নিবে। মায়ার স্বামীকে ঘিরে ভালোবাসাটা ঝড়া পাতার মতোন খসে গেল মনে। ভালোবাসাটা ভুল মানুষের প্রতি হওয়ায় কান্না বাঁধ ভাঙলো মায়ার। গুমরে উঠা কষ্টে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদল বাকিটা রাত। রিদ বেশ ফুরফুরে মেজাজ ফোনটা পাশে রাখল। সে জানে এখন তার বউ কাঁদবে স্বামীর বিরহে। কাঁদুক! এতে সে মোটেও কষ্ট পাচ্ছে না বরং ভিষণ শান্তি অনুভব করছে। যাক আজকের রাতটা তার শান্তি কাটবে। সামান্য বিয়ে হওয়ার মিথ্যা সংবাদ নিয়ে বউ তার কতোটা ক্ষেপল রিদ উপর। শেষ পযন্ত গালি দিল। ভবিষ্যতে পা ভেঙ্গে ফেলে হুমকি পযন্ত দিল। যদি কখনো এই মেয়ে জানতে পারে রিদ তার স্বামী আল্লাহ জানে তখন কি করে। রিদের হুট করেই খুব ইচ্ছা হলো জানতে বউ তার পরিচয় পেলে কি করবে? এখনকার মতো এতো অস্থির হবে স্বামী জন্য? নাকি পরিচিত রিদ খান ভেবে ভয়ে পিছিয়ে যাবে রিদ থেকে?
~~

চোখ মুখ অন্ধকার করে কলেজ ক্যানটিনে টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে মায়া। সঙ্গে জুই, শ্রেয়া, নাদিয়া বসে। মায়ার মন খারাপের কারণ এতক্ষণে সবার জানা। জুই অবশ্যই এতে বিরক্ত। ওহ আগে থেকেই মায়াকে সাবধান করেছিল যাতে অচেনা স্বামীর চক্রে না ফাঁসে তারপরও ফাঁসলো। এখন লোকটা পূর্ব বিবাহিত হতেই পারে সেটাও অস্বাভাবিক কিছু না। বরং স্বাভাবিক। হয়তো মায়া লোকটার জীবনে পরে এসেছিল। তাছাড়া প্রত্যেকের একটা আলাদা পারসোনাল লাইফ থাকতে পারে। কিন্তু মায়া এতে অস্বাভাবিক ভাবে রিয়েক্ট করায় জুই খানিকটা ক্ষুব্ধ। কোনো ভাবে আরিফের কানে মায়ার কর্মকাণ্ড গুলো পৌঁছালে ওদের দুজনকেই মার খেতে হবে। তাছাড়া মন মরা মায়া আজ ঠিকঠাক পরীক্ষাটাও দিয়েছে কিনা কে জানে। রেজাল্ট খারাপ হলে পরিবারের সবার কানে চলে যাবে বিষয়টা তখন আর রক্ষা নেই দুজনের। কিছুক্ষণ আগে পরীক্ষা শেষ করে ওরা সবাই কলেজ ক্যানটিনে এসে বসেছিল। মায়া তখন থেকে নিশ্চুপ হয়ে বসে। রাতে যে অনেকটা সময় ধরে কেঁদেছিল সেটাও চোখ মুখ ফুলে আছে। শ্রেয়া মায়াকে দেখে বেশ আফসোস করে বলল…

‘ মায়ু থাক আর কষ্ট পাস না বোন। লোকটা তোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না। তুই আরও ভালো কিছু ডিজাভ করিস। আসলে ঐ বদ লোকটার কপাল খারাপ এতো সুন্দরী বউকে না দেখেই রিজেক্ট করল। আহারে আমার তো লোকটার জন্য কষ্ট লাগছে। এতো সুন্দরী বউ ও তার ভালোবাসা কিভাবে পায়ে ঠেলল। আচ্ছা এখন কি করবি? লোকটা তো বিবাহিত। সংসার করার তো আর চান্স নাই তাহলে..

শ্রেয়ার কথার পিষ্ট জুই বলল..

‘ সংসার কি করবে? আমি তো প্রথম থেকেই বলছি লোকটা খারাপ হতে পারে শুনলো না আমার কথা। মন দিয়ে বসলো। এখন স্বামী বিয়ের কথা শুনে দেবদাসী হচ্ছে। কোথাকার কোন লোক এখনো ঠিকঠাক পরিচয় জানে না অথচ বন্ড স্বামীর জন্য সারারাত কেঁদেকুটে সকালে পরীক্ষা খারাপ দিল। আমার তো ইচ্ছা করছে আরিফ ভাইয়ের কাছে ওর মানে বিচার দিতে।

পাশ থেকে নাদিয়া বলল…

‘ আচ্ছা জুই থাকনা। বেচারি এমনই কষ্টে আছে তুই আর কষ্ট বাড়িয়ে দিসনা। আচ্ছা জুই, শুননা লোকটা যদি সত্যি সত্যি বিয়ে করে নেই তাহলে তোদের অবশ্যই বিষয়টা টেনে বড় না করে উল্টো পরিবারের বড়দের জানিয়ে বিষয়টা মিটমাট করে নেওয়া উচিত। বিয়ে ব্যাপার স্যাপার হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। বিয়েটা এক্সিডেন্টেলি হয়ে গেলেও ডিভোর্স কিন্তু এক্সিডেন্টলি হয়না। অনেক আইন কানুন মেনে করতে হয়। ঝামেলা আছে বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা সহজ হবে না।

জুই কিছু বলবে তার আগেই মায়া ধারাম করে উঠে বসল। এতক্ষণের দুঃখ গুছানো মুখটা হুট করেই শক্ত করে বলল…

‘ আমি এতো কিছু জানি না। বুঝি না। বুঝতে চাইও না। আমি ঐ লোকটাকে বিয়ে করেছি সে ভালো হোক কিংবা খারাপ, এতো সহজে আমি তাঁকে ছেড়ে দিব না। অন্তত তার সাথে একবার হলেও মুখোমুখি হতে চায় আমি। তারপর কি হবে তখনেটা তখন দেখা যাবে। আমি প্রেম করে ব্যাকআপ করতে বসিনি। বিয়ে করেছি। এতো গুলাদিন লোকটাকে না দেখে, না জেনে ভালোবেসে এসেছি। আমার ভালোবাসা আমার দায়িত্ব। এতো সহজে হাড় মেনে তাঁকে ছেড়ে দিব না অন্তত। শেষ চেষ্টা অবশ্যই করবো। তাছাড়া আমার মন বলছে লোকটা আমাকে মিথ্যা বলেছে, সে বিবাহিত নয়। হয়তো আমার মন পরীক্ষা করতে এমনটা বলেছে। আমি তাঁকে খুঁজে বের করবো।

মায়ার কথায় হতভম্ব জুই, শ্রেয়া, নাদিয়া। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে স্বামীকে না দেখে কিভাবে অন্ধ বিশ্বাস করা যায় সেটা মায়াকে না দেখতে হয়তো কেউ বিশ্বাস করতো না। মায়া জেদে শ্রেয়া, নাদিয়া হতভম্ব হলেও জুই বেশ রাগে তিল মিলিয়ে উঠে। মায়া নিজের জীবন এমন অচেনা একটা মানুষের পিছনে ছুটে খারাপ করবে সেটা জুই কোনো ভাবে মানতে নারাজ। তাই জুই সিদ্ধান্ত নিলো এবার সেভাবে হোক মায়ার আরও পাগলামো বাড়ার আগে আজকের মধ্যে আরিফের সঙ্গে ওহ এই বিষয়ে কথা বলবে। পরে যা হবার হবে। অন্তত মায়া পাগলামোকে আর শ্রায় দেওয়া ঠিক হবে না বলেই মনে করলো জুই। জুইয়ের ভাবনা চিত্রে মধ্যে শ্রেয়া আহাজারি করতে করতে বলে উঠলো…

‘ মায়ারে আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি তুই জামাই পাগল মাইয়া হবি। বাপরে জামাইকে না দেখে এতো ভালোবাসা যায় তোরে না দেখলে আমিতো বিশ্বাসই করতে পারতাম না বইন। তাই তো বলি জুই কেন তোরে নিইয়া এতো টেনশন করে সবসময়। ভাইরে ভাই টেনশন তো এবার আমারও হচ্ছে। তুই আবার ছেঁকা না খাইয়া বাকা হয়ে যাস জামাইর বিরহে।

জুইয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে মায়া উঠে দাঁড়াল। পরীক্ষার ফাইলপত্র গুছিয়ে কলেজ ব্যাগটা কাঁধে নিল। কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না মায়ার। কেউ হয়তো মায়ার কষ্টটা বুঝতে পারবে না। তাই আর কাউকে বুঝানোর চেষ্টা করলো না ওহ। সোজা গেইট ধরে বাসায় চলে যাবে। আজ কোচিং করতে মন চাচ্ছে না। যদি মন ভালো হয় তাহলে বিকালে কোচিংয়ে যাবে নয়তো না। মায়াকে ব্যাগ নিয়ে উঠতে দেখে শ্রেয়া নাদিয়া দুজনই তাড়াহুড়ো মায়ার পিছন পিছন ছুটলো। কিন্তু জুই গেল না। কারণ ওর ভিষণ মন খারাপ হচ্ছে মায়ার জন্য। মায়ার জেদ কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যায় ওদের আল্লাহ জানে। সবচেয়ে বড় কথা হলো মায়া জেনেশুনে কেন নিজের ক্ষতি করতে চাইছে সেটাও জুই বুঝতে পারছে না। মায়ার চিন্তায় চিন্তায় জুই বেশ কিছুক্ষণ সেইভাবে টেবিলের উপর কপাল ঠেকিয়ে বসে রইল। হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেটর শব্দের ঘোর কাটল। ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই দেখল পরিচিত একটা নাম্বার। মন খারাপ গুলো যেন তক্ষুনি কোথায় ছুটে পালাল জুইয়ের। লাজুক হেঁসে ফোন কানে তুলে সুন্দর করে সালাম দিল…

‘ আসসালামু আলাইকুম।

‘ ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি কোথায় জুই? পরীক্ষা শেষ আপনার?

‘ জ্বী শেষ। আমি কলেজেই আছি!

‘ রাতে কল দিয়েছিলাম জুই। আপনার নাম্বারটা ব্যস্ত ছিল অনেকক্ষণ যাবত! আপনি কি রাতে কারও সাথে কথা বলছিলেন জুই?

রাতে ফোনআলাপে মায়া ছিল সেটা বুঝতে সময় লাগল না জুইয়ের। কিন্তু ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটির কাছে মায়াকে ছোট করতে চাইল না বলে মিথ্যা বলল….

‘ বাসা থেকে ফোন ছিল। কথা বলাছিলাম আমরা।

ফোনের ওপাশের লোকটার হয়তো বিশ্বাস হলো না জুইয়ের কথা। অনেকটা অবিশ্বাস্য নিয়ে ফের প্রশ্ন করে বলল…

‘ এতো রাতে বসা থেকে ফোন?

‘ হুমম।

মায়ার পিছন পিছন শ্রেয়া, নাদিয়া দুজন দৌড়ে পাশপাশি হেঁটে যোগ হলো। শ্রেয়া বেশ উত্তেজনা নিয়েই বলল…

‘ আরে মায়া শুননা। তুই লোকটাকে কিভাবে খুঁজবি? কিছু ভেবেছিস? তোদের তো ফোনে কথা হয়। লোকটাকে সরাসরি বলবি তোর সাথে দেখা করতে?

মায়া হাঁটতে হাঁটতে হতাশায় উত্তর করল…

‘ না।

অধৈর্য্যের নেয় আওড়াল শ্রেয়া….
‘ কেন?

‘ কারণ আমি চাইনা লোকটা আমাকে কোনো ভাবে চিনুক। যদি সে সত্যি বিয়ে করে ফেলে তাহলে আমি এই জীবন তাঁকে আমার মুখ দেখতে দিব না। তাছাড়া স্বামী খোঁজ আমি একা করছি সে আমার খোঁজ করেনি। উনার হয়তো আমার কথা মনেও ছিল না এতোদিন। আমার ফোন করাতে হয়েছে। তাই আমি সেচ্ছায় তার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আর ছোট করতে চায় না। আমি অন্য কোনো ভাবে লোকটাকে খোঁজ নিব লুকিয়ে। তার পরিচয় আমি অন্যভাবে সংগ্রহ করবো।

মায়ার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথায় অধৈর্য হলো শ্রেয়া। আগে নেয় বলল…

‘ কিন্তু কিভাবে? তুই তো কিছুই জানিস না লোকটার সম্পর্কে তাহলে খুঁজবি কিভাবে?

মায়া হাঁটতে হাঁটতে আড়চোখে শ্রেয়া আর নাদিয়া কৌতূহল ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে বলল…

‘ লোকটার নাম আব্রাহাম। ঢাকা থাকেন। তার ফোন নাম্বারটাও আছে আমার কাছে। তাছাড়া হাফেজ সাহেবের ছেলে সুমন বলেছিল লোকটা নাকি অনেক প্রভাবশালী মধ্যে কেউ। নিশ্চয়ই এই ফোন নাম্বারটা দিয়ে উনার তথ্য যোগাড় করতে পারবো আমি।

মায়ার কথার পিষ্টে শ্রেয়া আর কিছু বলার মতোন পেল না। নিরব ভাবুক হয়ে হাঁটতে লাগল মায়ার সঙ্গে। কিছুদূর হেঁটে রাস্তার মাথায় আসতেই দেখল পেল আসিফকে এলাকার একদল ছেলেদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে। হয়তো রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো পরামর্শ দিচ্ছে আসিফ তাদের। ভাবুক শ্রেয়া হুট করেই যেন দারুণ একটা বুদ্ধি পেল। মায়ার সমস্যার সমাধান করে চেয়ে উৎফুল্লতায় বলল…

‘ এইই মায়া! শুন! শুন! আমার মনে হয় তোর আসিফ ভাই থেকে সাহায্য নেওয়া উচিত। উনিও তো ঢাকা থাকেন রিদ ভাইয়ের সঙ্গে। সবকিছু চিনেনও। তোর স্বামীর নাম আর নাম্বারটা আসিফ ভাইকে দিলে উনি, নিশ্চয়ই তোর স্বামীকে খোঁজে বের করতে পারবে। আমার কি মনে হয় জানিস তোর স্বামী তো প্রভাবশলীদের মধ্যে কেউ একজন তাই না, এমনটাও তো হতে পারে আসিফ ভাইয়াদের সাথে তোর স্বামীর পূর্ব পরিচয় আছে? তোর স্বামীর নাম বলাতে আসিফ ভাই চিনে ফেলল?

শ্রেয়ার কথায় মায়ার কাছে যুক্তিসংগত মনে হলো। মানুষ বলে না, বিপদে পরলে বাঘ মহিষ একঘাটে পানি খায়, মায়ার দশাও তেমন হলো। অসহায় মায়া স্বামী খোঁজে খোঁজে দিশেহারা হয়ে আসিফকে উত্তম মনে হলো সাহায্য জন্য। কিন্তু রিদের ভয়ে আমতা আমতা করে বলল…

‘ আসিফ ভাইকে বললে যদি রিস্কে পরে যায়? রিদ খান লোকটা এমনিতেই আমাকে অপছন্দ করে, তারপর আবার এখন উনারা আমাদের নতুন আত্মীয় হয়। যদি কোনো ভাবে আমার বিয়ের খবরটা আপুর কানে ফাঁস করে দেয় তাহলে বিপদে পরে যাবো।

শ্রেয়া অসম্মতি জানিয়ে বলল…

‘ আরেহ বিষয়টা উল্টো ভাবে দেখ। তুই এমনই রিস্কে আছিস। চাইলেও তোকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারবে এমন কেউ নেই। তাছাড়া আমি রিদ ভাইকে চিনি, উনি রাগী গম্ভীর মানুষ হতে পারে, কিন্তু কারও পারসোনাল বিষয়ে উনাকে আমি এন্টারফেয়ার করতে দেখিনি আজ পযন্ত। রিদ ভাই আমার রিলেটিভ হয় সেই সুবাদে আমি ভালো করে চিনি ভাইকে। রিদ ভাই তোর পারসোনাল লাইফে এন্টারফেয়ার করবে না দেখিস। তাছাড়া আমরা শুধু ভাইয়ের কাছে হেল্প চাইব ব্যাস। তারপরও যদি তুই রিস্ক মনে করিস তাহলে আমরা সবাই মিলে রিদ ভাইকে বুঝিয়ে বললো তোর সমস্যার কথাটা। রিদ ভাই অবশ্যই বুঝবে, সাথে তোকে হেল্প করবে দেখিস। চল এবার! আসিফ ভাইকে সামনে দেখা যাচ্ছে। আগে দেখা করি তারপর সাহায্য চাইব। চল! চল!

মায়া যান্ত্রিক ভাবেই মাথা দুলাল। শ্রেয়ার সঙ্গ নিয়ে রাস্তা মাথায় পযন্ত যেতে যেতে বেশ কিছু দামড়া ছেলেপেলে মায়াকে ভাবি ভাবি বলে সালাম ঠুকলো। বিষন্ন মায়া কোনো রকম মাথা দুলিয়ে সালামের উত্তর করে পৌঁছাল আসিফ অবধি। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হওয়ায় সেখানে রিদের সঙ্গে মায়ার দেখা হয়ে গেল হুট করেই। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রিদের সঙ্গে মায়ার দেখা হয়ে যাওয়ায়, মায়া চাচ্ছিল না নিজের সমস্যার কথাটা আসিফকে আর বলতে। যেহেতু সামনে রিদ আছে তাই। মায়া চলে যেতে চেয়ে শ্রেয়াকে ইঙ্গিত করে খোঁচাল। কিন্তু শ্রেয়া মায়া ইঙ্গিতটাকে ভুল বুঝল। মনে করলো মায়া ওকে সবটা দ্রুত বলার জন্য তাড়া দিচ্ছে খুঁচিয়ে। তাই শ্রেয়া আসিফসহ রিদের কাছে ফরফর করে মায়ার নিখোঁজ স্বামীকে খোঁজার জন্য সাহায্য চাইল।

#চলিত….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here